ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৪+১৫

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৪+১৫
মৌমি দত্ত

আজকে আজাদ গ্রুপের সাথে ডিল বলেই একটু চাপে আছে ইনায়াত আর আফিম। আফিম চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তখনই পিয়ন এসে বললো
– স্যার নিচে ওদের গাড়ি চলে এসছে।
আফিম উঠে দাঁড়িয়ে নিজের কোটের হাতা ঠিক করলো। ইনায়াতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো ইনায়াত বারবার চোখ বন্ধ করছে আর খুলছে। আফিমের মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো,,
– ইনায়াত কি অসুস্থ?? আমি একনার জিজ্ঞেস করি??
কিন্তু পরমুহুর্তেই নিজেই নিজেকে শাসিয়ে ডেকে উঠলো,,
– ইনায়াত!! লেটস গো!!

ইনায়াত আফিমে ডাক শুনে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়লো। হাতে ফাইলগুলো নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। নিচে এসে স্পন্দন আজাদ,, তার পিএ কামালকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আফিম আর ইনায়াত। আফিম এগিয়ে গেলো।
– হ্যালো মিস্টার স্পন্দন আজাদ!! আমি আফিম আহসান।
– হ্যালো!!
স্পন্দন অস্থির ভাবে কোনমতে আফিমের সাথে হাত মিলিয়ে এগিয়ে গেলো ইনায়াতের দিকে।
– হ্যালো বেবি সিস্টার!!
একটা ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো,,,
– এটা তোমার জন্য!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পুরো তোড়াটার বাউন্ডারি ফুল দিয়ে এবং মাঝখান ভর্তি সব চকলেট দিয়ে সাজানো একটা তোরা। ইনায়াত অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে৷ স্পন্দন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো,,
– আসলে,, তুমি আমার বোনের মতোই দেখতে অনেকটা। তাই নাও প্লিজ!!
ইনায়াত একবার আফিমের দিকে তাকালো। আফিম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অনেকটাই দূরে থাকায় বেচারা আফিম কোন কথা শুনতে পায়নি। শুধুই দেখেছে স্পন্দনকে বুকে দিতে। ইনায়াতের ভালো লাগলো স্পন্দনের কথা বলার ধরন। তার ভাই থাকলে সেও হয়তো এভাবেই চকলেটস নিয়ে আসতো তার জন্য ভেবেই হাসিমুখে স্পন্দনের হাত থেকে বুকেটা নিয়ে নিলো। আফিমের রাগ এবার সপ্তম আসমানে। আফিম দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে ইনায়াতের হাত চেপে ধরে ভিতরে হাঁটা দিলো। স্পন্দন প্রথমে অবাক হলেও পরে রেগে গেলো।

– এই ছেলে কোন সাহসে আমার বোনের হাত এভাবে চেপে ধরে। আমার বোনেএ হাত এটা!! বাজারের মুলা তরকারি না।
মৃদু স্বরেই বললো কথাগুলো। কামাল তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে বললো,,
– স্যার,, শান্তি!! বোন এখনো জানেনা বোন আপনার বোন হয়। তাই শান্তি!!
কামালের এমন কথা শুনে বোকা বনে তাকালো স্পন্দন কামালের দিকে। কি বুঝলো না বুঝলো তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানিয়ে অনুসরন করলো আফিমকে।

দিনগুলো কেটে যাচ্ছে নিজের মতো। জানলার ধারে বসে সময় কিভাবে কেটে যায় তা দেখার সময় শুধু একজনেরই আছে। ইরশাদ সাহেব ইদানীং খাওয়াদাওয়া করেন না। জানলার ধারে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাহজিব খুব চিন্তায় আছে এখন। কি করা যায় এই ভদ্রলোককে নিয়ে?? এভাবে চললে এখানেই পঁচে গলে যাবে উনি মরে। আজকেও খাওয়ানো গেলো না তাকে জোড় করে। ইরশাদের রুমের দরজা যেভাবে নিঃশব্দে খুলেছিলো তাহজিব। সেভাবেই নিঃশব্দে টেনে দিলো। নিচে নেমে এলো সিড়ি বেয়ে। রান্নাঘর থেকে খাবারের বাটি এনে রাখছে রুহি ডাইনিং টেবিলে। কিভাবে যেন ১০ দিন হয়ে গেছে এই মেয়েকে চিনবার।

নেয়েটা এখন প্রায় সময় এখানেই থাকে। নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ায় তাহজিবকে। যে তাহজিব আগে অগোছালো ছিলো। সে তাহজিবকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রেকফাস্ট,, লাঞ্চও ডিনার সময়মতো করে সে এখন। রুহি তার কাপড় প্রেস করে রাখে। রুম গুছিয়ে রাখে। ঘুম না হলে অনেকদিন রাতে নিজে বসে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সকালে ঘুম থেকে ডেকে দেওয়ার কাজও এই মেয়ে করে। আরভিদ সাহেব ১০ দিনের জন্য কোন এক মিশনে গেছিলেন। তাই রুহির এখানে আসা যাওয়াটাও যেন আরো সহজ হয়ে গেছে। এতোদিনে রুহির সাথে সময় খুব হাসি খুশী আর ভালোই কেটেছে তাহজিবের। কিন্তু ইনায়াত??

তার চিন্তা এখনো তাড়া করে তাহজিবকে?? মেয়েটা এমন কোথায় আছে যে মেয়েটার খোঁজ পেলো না তাহজিব?? মেয়েটাকে এখনো ভালোবাসে। কিন্তু এদিকে রুহি তাহজিবের মাঝে জায়গা করে নিতে না পারলেও,,, তাহজিবের জীবনটা সুন্দর করে দিয়েছে না চাইতেই। কিন্তু এই মেয়েকে কোন ভাবে যে রাজী করানো সম্ভব হচ্ছে না তাহজিবের পক্ষে। তাহজিব এতোদিনে এটুকু বুঝে গেছে যে রুহি এই রোগটা নিয়ে মন থেকে খুব কষ্টে আছে। তাই সে এতো চঞ্চলতা নিয়ে থাকে। যাতে তার চঞ্চলতায় সবার চোখ আটকে যায়,, কেও যেন গভীরটা না জানে। আর রুহি যে আসলেই বাস্তববাদী এবং সত্যিই তাহজিব কে ভালোবাসে। তাও জানা হয়ে গেছে তাহজিবের। আকর্ষন নাহয় তাহজিব কাটিয়ে দিতো। কিন্তু এই ভালোবাসা কিভাবে ভাঙ্গবে?? সেও তো একজনকে ভালোবেসে পাচ্ছে না।

– কি ভাবছো??
রুহির গলার স্বর শুনে ভাবনার জগতের জাল চিড়ে বের হয়ে এলো তাহজিব। মৃদু হেসে রুহির হাত টেনে একটা চেয়ারে বসালো নিজের পাশে।
– কিছু না। চলো খেয়ে নিই। তোমার কিন্তু অনেকদিন স্কুল মিস যাচ্ছে।
রুহি তাচ্ছিল্য হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে জাবার বেড়ে দিতে লাগলো তাহজিবের প্লেইটে। হঠাৎই মাথায় তীব্র যন্ত্রনা বোধ করলো রুহি। ঘাবড়ে গেলো সে খুব। এখন তাহজিবের সামনে অসুস্থ হতে চায় না সে। তাহজিব এমনিই ইনায়াতকে নিয়ে চিন্তায় থাকে। এর উপর সে যখন রুহিকে নিয়েও চিন্তায় পড়ে যায় তা ভালো লাগে না রুহির।

তাহজিবকে কোনমতে খাবার বেড়ে দিয়ে রুহি সড়ে আসতে চাইছিলো। কিন্তু তা হলো না। চলে আসার সময়েই তাহজিবের চোখে পড়লো নাক বেয়ে পড়তে থাকা রক্তের ধারা। তাহজিব দ্রুত চেয়ার ঠেলে উঠে রুহির কাছে এসে রুহির কাঁধ চেপে ধরলো। রুহি ভয় পেয়ে গেলো। কি মিথ্যা বলবে এবার তাই ভাববার জন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। কিন্তু তাহজিব সেই সুযোগ দিলেই তো।
– আসিফ?? আসিফ?? এক্ষুনি আরভিদের সাহেবের বাসায় যা। আলমারি ঘেটে রুহির যতো ফাইলপত্র পাবি নিয়ে আসবি।
আসিফকে ডেকে নির্দেশনা দিয়েই রুহিকে কোলে তুলে নিলো তাহজিব।
– আনিইইই!! আমি হাসপাতালে যাবো না। নামাও আমাকে,,, আমি যাবো না।
রুহি হাত পা ছুটাছুটি করতে লাগলো। তাহজিব পাত্তা দিলো না। ইদানীং রুহির শরীর খারাপের বিষয়টা সে অনেক লক্ষ্য করেছে। শুধু হাতেনাতে ধরার জন্য চুপ ছিলো। রুহি যখন দেখলো কোনভাবেই তাহজিব থামছে না। তখনই রুহি বলে উঠলো,,,

– আচ্ছা!! আমি চেঞ্জ করে আসি?? প্লিজ??
তাহজিব বাঁকা হেসে রুহির দিকে তাকালো।
– চেঞ্জের নাম করে রুমের দরজা আটকে বসে থাকার পদ্ধতি পুরোনো হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে। ইদানীং তোমার শরীর ও ভালো নেই তেমন। এর উপর ছোটাছুটি কমে না।
আসিফ এদের কথার মাঝেই মৃদু হেসে বের হয়ে পড়লো। ইদানীং ভালোই লাগে তার রুহিকে। তাহজিবকে ভালোর দিকে অনেকটা পালটে দিয়েছে রুহি তাহজিবের অজান্তেই। ইনায়াত তো তাহজিবকে ভালোবাসে না। তাহজিব ইনায়াতকে ভালোবাসে। তাই তাহজিবের প্রতি এতো চিন্তা ইনায়াত কখনোই করতে পারতো না বলে বিশ্বাস করে আসিফ। তাহজিব যেমন ইনায়াতকে ভালোবাসে বলে সব করতে পারে। রুহিও তেমনি তাহজিবকে ভালোবাসে বলে সব করতে পারে।

– এনিথিং সিরিয়াস ডক্টর??
– রুহি?? তুমি একটু বাইরে বসবে??
রুহি তাহজিবের দিকে তাকালো। তাহজিব অপ্রস্তুত হাসলো।
– একটু বাইরে বসো। প্লিজ?? আমি এক্ষুনি আসছি।
রুহি মুচকি হেসে বাইরে চলে এলো চেম্বারের। একটু আগেই তাহজিবের সাথে হাসপাতালে এসেছে সে। আসিফ তাদের বাসায় সব ফাইল নিয়ে এসছে। ডাক্তারের কাছে তা জমা দিতেই ডাক্তার কিছু প্রশ্ন করলেন। রুহি সবগুলোর উত্তর দিলো। এরপরেই ডাক্তারের মুখ থমথমে হয়ে গেলো।
রুহি বাইরে এসে দেখলো আসিফ মাথা নিচু করে বসে আছে। রুহি সোজা হেঁটে আসিফের পাশে এসে বসলো।
– ডাক্তার কি বলেছে বোন??
– আমি বেশিদিন নেই।
আসিফ ঝট করে মাথা তুলে তাকালো রুহির দিকে। রুহি হেসে ফেললো,,
– আমার সামনে বলেনি। কিন্তু এটাই বলবে আমি জানি।
রুহিকে রেগে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই রুহির মোবাইলে কল এলো। রুহি কলটা রিসিভ করলো।

– হ্যালো!!
——
– হ্যাঁ,,,, কেন??
——
– তুই শিউর??
——
– আচ্ছা আমি আগে একবার চেক করে দেখি। লিংক পাঠা!!
——
– থ্যাংক্স দোস্ত!! বাই

রুহি ফোনটা কেটে দিলো। আসিফ চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইলো রুহির দিকে। মেয়েটা এতো গাছাড়া স্বভাবের কেন বুঝে পাচ্ছে না আসিফ। তখনই রুহির মোবাইল টুং করে আওয়াজ হলো। রুহি কোন একটা ছবি জুম করে খুঁটিয়ে দেখলো বেশ কিছু সময়। তারপর চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরলো। আসিফ ঝটকা খেলো।
– বোন? খারাপ লাগছে তোমার??
রুহি তাচ্ছিল্য হেসে মাথা থেকে হাত নামিয়ে ফেললো।
– আমার মতো ইনায়াত আপু খেয়াল রাখবে তো উনার?? তুমি দেখে রাখবে তো উনাকে??
আসিফ বুঝলো না হঠাৎ এই কথার কারণ কি??

– হঠাৎ এসব কি বলছো রুহি?? তুমি আছো তো!! তুমি থাকবে। দেখবে স্যার তোমাকে ভালোবাসবে!!
তাহজিব তখনই থমথমে মুখে এসে দাঁড়ালো এলোমেলো পায়ে রুহির কাছে। রুহির সামনেই মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো। রুহি জানতো এমন কিছুই হবে। আসিফ ছুটে গিয়ে ধরলো তাহজিবকে। তাহজিবের হুশ ফিরলো সে কি করছে। তাহজিব দ্রুত নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ালো। রুহি উঠে এগিয়ে এলো।
– বাসায় চলুন। আজকের দিনটা আপনি কোথাও যাবেন না। কাল থেকে আটকাবো না প্রমিজ।
রুহি এই বলেই পিছন ফিরতে চাইলেই তাহজিব হাত ধরে আটকে দিলো। রুহিকে নিয়ে বসালো চেয়ারে। রুহির সামনে মাটিতে বসলো তাহজিব।

– রুহি?? আমি এখন যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবে। একটা কথাও বলবে না। ওকে??
রুহি মিষ্টি হাসলো। তাহজিব শুকনো ঢোক গিলে বললো,,
– আমি যদি তোমাকে মেনেও নিই। সমাজ তো মানবে না। তোমার অনেক সুন্দর একটা ভবিষ্যত হতে পারবে তুমি চাইলেই। আমার মতো মাফিয়ার না হয়ে তুমি কোন ভালো মানুষের স্ত্রী হতে পারবে। ভেবে দেখেছো ব্যাপারটা?? কেন জেদ করছো রুহি?? আমি ইনায়াতকে ভালোবাসি। ওকে পেলেও বাসি,,, না পেলেও ভালোবাসি আর বাসবো। আমি আর কাওকে নিজের সাথে জড়াতে চাই না,, পারবো না আমি। প্লিজ জেদ ছাড়ো। বিদেশে যেতে রাজী হয়ে যাও। তোমার অবস্থা ভালো না রুহি। তবে ইমিডিয়েট ব্যবস্থা নিলে তুমি অনেক দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। প্লিজ রুহি?? আমাকে ভালোবাসার দাবী করো যখন,, আমার এই ইচ্ছেটাও পুরণ করো।
আসিফ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে তাহজিবের দিকে। তাহজিব এমন নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে?? এই ১০ টা দিন কি মায়ায় বাঁধেনি তাহজিবকে?? রুহি তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো। চোখ বন্ধ করে নিলো। টুপ করে গড়িয়ে পড়লো এতোক্ষন ধরে রাখা চোখের জল। রুহি চোখ খুলে হাসলো মিষ্টি করে।

– যাবো!! চিকিৎসাও করাবো। তবে তোমার আর ইনায়াত আপির বিয়ের জন্য।
তাহজিব বুঝলো না রুহির কথার অর্থ। ইনায়াত কোথায় তাই তো জানা নেই তাহজিবের। তাহলে বিয়ে কিভাবে সম্ভব?? রুহি তাহজিবের অবস্থাটা বুঝলো।
– আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডসদের ইনায়াত আপুর ছবি দিয়ে খুঁজতে বলেছিলাম। একটু আগেই একজন কল করে জানালো তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
তাহজিবের চোখ খুশীতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।
– সত্যি?? কোথায় আমার ইনায়াত?? কেমন আছে??

রুহি মিষ্টি করে হেসে তাহজিবের দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেলো চোখ বন্ধ করে। তাহজিবও চোখ বন্ধ করে ফেললো। রুহি তাহজিবকে সড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আসিফের নাম্বারে সেই ছবিটা দিলো যেখানে আফিমের বার্থডে পার্টিতে শাড়ি পড়া ইনায়াতকে দেখা যাচ্ছে। আফিমের সব ডিটেইলসও দিয়ে দিলো আসিফকে।
– আসিফ ভাই!! বাবার ফিরতে সময় আছে। আমি বিদেশ যেতে রাজি। তবে বাবাকে নিয়ে না। তাই তুমি ব্যবস্থা করো। ব্যবস্থা হলে জানিয়ে দিও।
এই বলেই রুহি চলে আসছিলো। তাহজিব হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।
– কোথায় যাচ্ছো রুহি??
– আমার পথে,,,
তাহজিবের এতোক্ষনে হুশ হলো সে কি ব্যবহারটাই না করেছে ইনায়াতের কথা শুনে। তাহজিব অস্থির হয়ে ভাবতে লাগলো রুহিকে কি বলে আটকাবে।

– তুমি একা থাকতে পারবে না। তুমি অসুস্থ!!
রুহি তাকালো না তাহজিবের দিকে। না তাকিয়েই বললো,,
– বাবাকে প্রায়ই এখানে সেখানে যেতে হয়। আমাকে একা থাকা শিখে নিতে হয়েছে,, আর একাই থাকতে হবে।
রুহি এক পা আগালো। তখনই তাহজিব আবারও বলে উঠলো,,,
– আমার কি হবে?? আমার খাওয়াদাওয়া,, ঘুম,,, ঘর গুছানো,, খেয়াল রাখা??
রুহি এবার ফিরে তাকালো। মৃদু হেসে বললো,,
– এই সবগুলো কাজ এখন নতুন কেও করে দেবে। নতুন হবে তার কাজের ধরন। এতো নতুনের মাঝে পুরান অভ্যেস তুমি ঠিক ভুলে যাবে। নিজের খেয়াল রেখো।
রুহি বের হয়ে এলো চোখের সীমানা ছাড়িয়ে। তাহজিব চেয়ারে বসে পড়লো। একদিকে ইনায়াতের খোঁজ পাবার আনন্দ আর অন্যদিকে রুহির জন্য চিন্তা।

ওহ ভাইরে ভাই!! রুহিই হবে তাহজিবের নায়িকা। একটু সবুর শুধু!! পিলিজ!! আর ইরশাদের পার্টও আসবে। শান্তি করেন পিলিজ!!
আফিম ঘুম থেকে ধীরে সুস্থে উঠে বসলো। আজও ইনায়াত তাকে ডাকতে আসেনি দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এলো তার। আসবেই বা কেন?? আজাদ গ্রুপের সাথে তার মিটিংয়ের ১১ টা দিন পার হয়ে গেলো। ইনায়াত এখন স্পন্দন বলতেই পাগল। আর স্পন্দনও বোন বোন করে ইনায়াতকে পাগল করে দেয়। ইদানীং বেশির ভাগ সময় তারা দুজন একসাথেই কাটায়। আফিমের কথা যেন ভুলেই গেছে ইনায়াত। অবশ্য এতে আফিমের দোষ শত ভাগ। আজ থেকে ১১ দিন আগে নিজের জন্মদিন আফিমই ইনায়াতকে বলেছিলো মুখ না দেখাতে। মুখ তো দেখতেই হয়। কিন্তু আগের ইনায়াত হারিয়ে গেছে। আফিম মদ খেলে রাগ করে না,,, সকালে ঘুম থেকে উঠায় না,, ব্রেকফাস্টের জন্য জোড় করে না,,লাঞ্চ বা ডিনার না করলে মাথা ঘামায় না। প্রফেশনাল হয়ে গেছে ইনায়াত খুব। লাবিবা আর জোসেফকে আংকেল আন্টি ডাকে না।

ইনায়াত জন্মদিনের পর সকালে বাসায় এসেছিলো শেষ বারের মতো। গত ১১ দিনে আর আসেনি। আফিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাওয়েল হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। ইনায়াতকে সে বড্ড মিস করে। করবে নাই বা কেন?? মেয়েটা তার জীবনে কোথায় নেই?? সকালের ঘুম ভাঙ্গা,,, ফ্রেশ হওয়া,, কি জামা পড়বে তা নিয়ে ভাবনা,,, রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করা,,, ইনায়াতের সাথে অফিস যাওয়া,,,, ইনায়াতের হাতের চা আর কফি,,, লাঞ্চের জন্য তাড়া দেওয়া,,, অফিস শেষে বাসায় এসে ইনায়াতের সাথে টুকটাক কথাবার্তা,,, রাতে ডিনার করানো জোড় করে,, মদের বোতল নিয়ে কাড়াকাড়ি,,, এই সবের মাঝেই ইনায়াত আছে। ইনায়াত ছাড়া একটা কিছুও এই ঘরে অবশিষ্ট নেই।

আফিম গম্ভীর মুখে বের হয়ে রেডি হয়ে নিলো অফিসে যাওয়ার জন্য। এই ১১ দিনে সে অসংখ্যবার ইনায়াতের সামনে ছিলো। কিন্তু মুখ ফুঁটে কেন যেন একবারও সরি বলতে পারেনি। তবে আজকে সে সরি বলবে বলে কড়া সিদ্ধান্ত নিলো। আজকে ইনায়াতকে ডিনারে ডাকিয়ে আফিম সরি বলবেই। এমন মনস্থির করে নিচে নেমে এলো। লাবিবা আর জোসেফ কিছু নিয়ে কথা বলছিলো খাওয়ার টেবিলে,, আফরাও ছিলো সেখানটায়। তখনই আফিম নামছে দেখে তিনজনই কথা থামিয়ে দিলো। আফিমের গম্ভীর মুখ দেখে তিনজনেরই হাসি পাচ্ছে। জোসেফ আর লাবিবা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারায় হাসাহাসি করলো। ছেলে যে ভালোবাসার রঙ্গে ডুবে গেছে নিজের অজান্তেই তা বুঝতে কষ্ট হলো না তাদের। অবশ্য এর পুরো ক্রেডিট যায় আফরাকে। জহুরির চোখ বলতে হবে আফরার। কিভাবে সে প্রথমদিন এসে ইনায়াতকে ভাবী বলে ফেললো?? এখন আফিমের হাব ভাবে নিশ্চিত মনে হচ্ছে যেকোন ভাবে তা সত্যি হতে পারে।

স্পন্দন রেডি হচ্ছে দ্রুত। আজকে ইনায়াতের বাসায় ব্রেকফাস্ট করবে স্পন্দন। একেই হয়তো বলে মনের সম্পর্ক। ইনায়াত এখনো জানেনা স্পন্দন আসলেই ওর ভাই। অথচ এর মধ্যেই আপন করে নিলো স্পন্দনকে। কামাল স্পন্দনের পিছনে দাঁড়িয়ে একটা ভাইয়ের তার বোনের জন্য করা পাগলামি দেখছে।
– কামাল!! বোনুর চকলেটস নিয়েছো তো??
– হ্যাঁ স্যার!! ম্যামের প্রিয় চকলেটগুলোই নিয়েছি তাও বেশ করে।
– গুড!! আচ্ছা ইরশাদের কি খবর?? আর তাহজিব??
– স্যার!! ইরশাদ সাহেব ইদানীং কেন যেন একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া করেন না,, কথা বলেন না। আই থিংক উনার অনুশোচনা হচ্ছে।

– সম্ভব না কামাল!! উনার দ্বারা অনুশোচনা সম্ভব না। নজর রাখো উনার উপর। আমার মন বলছে উনি কিছু করবেই।
– ওকে স্যার!! আর তাহজিব খান এতোদিন রুহিকে নিয়ে ভালোই ছিলো। ইনায়াত ম্যাম সম্পর্কে অনেকটাই ভুলে থাকতো। কিন্তু,,
– কিন্তু কি কামাল??
– কালকে রুহি তাহজিবকে ইনায়াতের ঠিকানা দিয়েছে। রুহির লিউকেমিয়া তা তো জানাই আছে। ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্টের জন্য যদি বিদেশ না যায় তাহলে বাঁচবে না। তবে যায় হোক না কেন স্যার!! মেয়েটা আসলেই তাহজিবকে ভালোবাসে।

– ভালোবাসার এটাই নিয়ম কামাল!! কেও পায়,, কেও পায় না!!
– স্যার আপনার ভালোবাসা?? আপনি বিয়ে করবেন না??
অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেললো কামাল নিজের মনের কথা। গলার টাঁই বাঁধতে থাকা হাত দুটো থেমে গেলো মূহুর্তের জন্য। চোখের সামনে ভেসে উঠলো আবছায়া একটা মুখ। তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো স্পন্দন।
– যে মনের ঘরে উঁকি দেয়,, বাস্তবে সে আমাকে নাও মানতে পারে।
স্পন্দন আর কিছু বললো না। কামালও আর ঘাটালো না।

ইনায়াত পুরো ঘর গুছিয়ে রেখেছে কাল রাতে। এখন খুব যত্নে ওভেন থেকে কেক বের করে আনছে। ফ্রিজে হাই ভোল্টেজে রেখে দেবে। তাই ভাই আসছে বলে খুশী যেন ধরছেই না তার। মাঝে মাঝে ইনায়াতের খুব বড় প্রশ্ন জাগে মনে। কি এমন হতো যদি এই ছেলে তার আপন ভাই হতো?? ভালোবাসাটা আরো দ্বিগুন হতো। ইনায়াত চলে গেলো স্নান করতে। জোসেফের থেকে সে ছুটি নিয়ে নিয়েছে আজকের। কিন্তু আফিমকে বলা হয়নি। আফিমের ব্যবহার দিনকে দিন অদ্ভুত ঠেকতে ইনায়াতের কাছে। কেমন এক ছটফট ছটফট ব্যাপার!! গম্ভীর,, মুডি আর রুড আফিমটাকে ভালোই চেনা আছে ইনায়াতের। কিন্তু চোখে চোখ রাখা,,, ইনায়াতের পছন্দের কাজ কর্ম করা আর স্পন্দনকে নিয়ে বিরক্ত হওয়া আফিমকে একদমই চিনতে পারছে না ইনায়াত।
– কে জানে স্যার ঠিক আছেন কিনা?? আই থিংক উনি খুব শোকে পাগল হয়ে গেছেন।
নিজেকেই নিজে এই বুঝ দিয়ে দ্রুত পায়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো।

আসিফ রুহির বাসায় এসেছে। রুহি হাসি হাসি মুখে চা নাস্তা এনে আসিফের সামনে রাখলো।
– ভাইয়া,, খাওয়া ধরো জলদি। এখন না খেলে সারাদিনে খাওয়া হবে না তোমাদের।
আসিফ মৃদু হেসে চায়ের কাপটা তুলে নিলো। এক চুমুক দিয়েই কাপটা আবারও নিজের জায়গাতে রেখে বললো,,
– আমিও তোমার সাথে যাবো বোন। মানা করো না প্লিজ। বিদেশে তুমি কিভাবে একা একা সামাল দেবে?? তুমি এডাল্ট না। অনেক কাজে অভিভাবক লাগবেই।
রুহি চুপ করে রইলো। মাথা নিচু করে থেকে বললো,,
– ঠিক আছে। তুমি আমার সাথে যেতে পারো ভাইয়া নিঃসন্দেহে। তবে দুইটা শর্তে!!
আসিফের চোখ চকচক করে উঠলো খুশীতে।

– কি শর্ত বলো বোন!!
– এক,, আমাকে আপন বোনের মতো তুই করে বলবে এখন থেকে।
রুহির এমন শর্ত শুনে হাসি ফুটলো আসিফের মুখে।
– ঠিক আছে।। আমার বোন হিসেবে তোকে তুই করেই বলবো। আরেকটা শর্ত কি বোন??
– আমার আর তোমার ঠিকানা,,, খোঁজ যেন কেও না জানে। এমনকি তোমার বস আর আমার বাবাও না।
অবাক হলো আসিফ।
– কিন্তু??
– প্লিজ ভাইয়া?? বোনের জন্য এটুকু করে। ৬/৭ মাসেরই তো ব্যাপার!! আমি একটু আলাদা থাকতে চাই সবার থেকে।
আসিফ চুপ করে রইলো কিছুক্ষন।
– ঠিক আছে!! সব রেডি হতে ১৫/২০ দিন লাগবে। এরপরেই আমরা রওনা দেবো।
আসিফ চায়ের কাপটা শেষ করে উঠে চলে আসছিলো। তখনই পিছু ডাকলো রুহি।
– উনি সকালে খেয়েছে ভাইয়া??
আসিফ অবিশ্বাস দৃষ্টিতে তাকালো রুহির দিকে। রুহির মাথা নিচের দিকে করা। আসিফ উত্তর না দিয়েই বের হয়ে এলো।
পৃথিবীতে হাতে গোণা কিছু মানুষ ভালোবাসা পায়। অথচ কেও তা চিনে না,, কেও চিনেও মানতে চায় না।

অফিসে এসেছে অনেকক্ষন আফিম। কিন্তু এখনো এলো না ইনায়াত। বিরক্তি ও রাগে ভ্রু কুঁচকে এলো আফিমের। হচ্ছে টা কি এসব??
– যথেষ্ট হয়েছে।
টেবিলে এক হাত দিয়ে স্বজোরে আঘাত করলো আফিম রাগে। গাড়ির চাবি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বেরিয়ে এলো অফিস ছেড়ে আফিমের গাড়ি। গন্তব্য হয়তো ইনায়াতের বাসা।
ইনায়াতের বাসার ঠিকানা জানা ছিলো আফিমের। কিন্তু কখনোই আসা হয়নি। আজকে সে প্রথম যাচ্ছে। গাড়ি এসে থামলো দুইতলা বাড়িটার সামনে। গাড়ি থামিয়ে দাড়োয়ানের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো আফিম।
– ইনায়াত কতো নাম্বার ফ্লোরে থাকে??
– একদম ছাদে স্যার!! কাঁচের বাসাটা।
আফিম চোখে সানগ্লাস পড়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো। ছাদে উঠেই পা দুটো থেমে গেলো আফিমের। ছাদের ভিতরে আর প্রবেশ করতে পারলো না। ছাদের ঠিক মাঝখানে ইনায়াত মেঝেতে বসে স্পন্দনের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। আর স্পন্দন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ইনায়াতকে। আফিমের হঠাৎই সব কেমন যেন রঙ্গহীন আর খাপছাড়া লাগছে। কেন লাগছে এমন?? কেন??
আফিম তবুও কোনমতে টেনে পা দুটো নিয়ে গেলো ইনায়াত পর্যন্ত। ইনায়াত চুপটি মেরে বসে থেকেই জড়িয়ে আছে স্পন্দনকে। ফুঁপিয়ে যাচ্ছে রীতিমতো। স্পন্দন কাওকে আসতে দেখে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো আফিম। আফিমকে কেমন যেন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে তার কাছে।

– হ্যালো আফিম!! তুমি এখানে??
অবাক হয়ে জানতে চাইলো স্পন্দন। আফিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের বুকে থাকা ইনায়াতের দিকে। ইনায়াত আফিমের নাম শুনে অবাক হয়ে স্পন্দনের বুক থেকে হালকা মাথা তুলে তাকালো অবাক হয়ে আফিমের দিকে।
– আফিম??
স্পন্দন এবার জোড়েই ডাকলো আফিমকে। আফিমের হুশ ফিরলো। কোনমতে হেসে বললো,,
– না না,,, কিছু না।
বের হয়ে এলো ইনায়াত আর আফিমের চোখের সীমানার বাইরে। নিচে নেমে এলোমেলো পায়ে উঠে বসলো গাড়িতে। হাতিগুলো স্টিয়ারিংয়ের রাখতে গিয়ে বুঝলো অস্বাভাবিক কাঁপছে তা। একবার হাতগুলো তুলে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও স্টিয়ারিংটা ধরলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে লাগলো ফাঁকা রাস্তায়।
স্পন্দন আর ইনায়াত যখন অবাক হয়ে আফিমের চলে যাওয়া দেখছিলো। তখনই বরফ কাপড়ে গুঁজে নিয়ে এলো কামাল।

– এই নিন স্যার!!
বরফ সহ কাপড়টা এগিয়ে দিলো স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন কাপড়টা নিয়ে ইনায়াতের পায়ে দিতে দিতে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,,
– এটা কি ছিলো বোনু?? এভাবে কেও লাফায়,, ছুটাছুটি করে?? পেলি তো ব্যাথা?? বেশি ব্যাথা লাগছে??
ইনায়াত ঠোঁট উলটে অন্যদিকে ফিরে বললো,,
– তুমিও বকছো ভাইয়া?? আমি তো তোমার জন্য কিনে রাখা গিফট আনতে দৌড়ে যাচ্ছিলাম। মাঝেই যে এভাবে পড়ে যাবো কে জানতো??
ইনায়াতের ঠোঁট উলটে বলা কথার ধরনে মিছে রাগও ধরে রাখা গেলো না স্পন্দনের। স্পন্দন মিষ্টি হেসে বললো,,

– এত্তো দেখতে পারিস কেন আমাকে বোনু?? আমি তো তোর নিজের ভাই না। নিজের ভাই হলে কি করতি??
ইনায়াতকে যাচাই করতে বললো কথাটা। ইনায়াত পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে। পরমূহুর্তে হেসে ফেললো।
– আমি তো বাপি আর মার একটা মাত্র সন্তান। নিজের ভাই কিভাবে আসবে?? তবে আমি কিন্তু তোমাকে নিজের ভাই ডাকি আর ভাবি। তাহলে নিজের ভাই না মানে কি হ্যাঁ??
– স্যার!! ম্যামকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ভালো হতো না??
– হ্যাঁ ঠিক বলেছো কামাল।
– এইইই!! কি ঠিক বলেছো?? আমি একদম ঠিক আছি। আরো একশটা আছাড় খেতে পারবো আমি। দেখবে??
ইনায়াতের এমন বাচ্চা বাচ্চা কথায় হেসে ফেললো কামাল আর স্পন্দন।
– না মহারাণি,, আছাড় খেয়ে দেখাতে হবে না। চলুন বাসার ভিতরে যাই।
ইনায়াতকে ধরে ধরে বাসার ভিতর নিয়ে গেলো স্পন্দন।

আফিম সোজা চলে এলো বাসায়। বাসায় এসেই ঘরের সব কিছু তছনছ করতে লাগলো আফিম। নিচে আওয়াজ পৌছাতেই দৌড়ে এলো আফরা আর লাবিবা। আফিমকে উন্মাদের মতো আচরণ করতে দেখে আফরা ছুটলো নিজের ফোন আনতে জোসেফ সাহেবকে কল দেবে বলে। লাবিবা দ্রুত সময় পিছন থেকে হাত চেপে ধরলো আফিমের।
– কি হচ্ছে আফিম এসব??
আফিম লাবিবার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। এরপরেই লাবিবাকে মেঝেতে বসিয়ে লাবিবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
– দেরি হয়ে গেছে আম্মু!! অনেক দেরি হয়ে গেছে।
লাবিবা ছেলের কথা কিছুই বুঝলো না।
– কি বলছিস এসব??

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১২+১৩

আফরা সবে কল করে এসেছে ভাইয়ের রুমের সামনে।
– আবারও ভালোবাসলাম মা আমি। ঠিক আগের মতো,,,, না না,, আগের থেকেও অনেক বেশিই ভালোবাসলাম মা। তবে আবারও ভুল মানুষকেই ভালোবাসলাম।
আফিম লাবিবা কোলে মাথা রেখেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।

– ইনায়াত তো অনেক ভালো ছিলো। ওকে ভালো ও বেসে ফেললাম নিজের অজান্তে। কিন্তু পেলাম না মা। পাবো কিভাবে?? আমি তো নিজ হাতে ওকে দূর করেছি নিজ থেকে। আমি কি করতাম মা?? আমি যে খুব ভয়ে থাকতাম আবারও ভালোবাসার ভয়ে। আর আমি যে জিনিসটার জন্য ওকে দূরে করেছি। ঐ ভুল,, ঐ একই ভুল আমি করে ফেলেছি মা। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
লাবিবার মুখে ফুঁটে উঠলো হাসি। শেষমেশ কি তাহলে তার ছেলে তার মনের ইচ্ছা পুরণ করবে??
আফিম তো লাবিবার কাছে বলেই ফেললো নিজের অনুভুতি। কিন্তু ইনায়াত আর স্পন্দনের মধ্যে খিঁচুড়ি তৈরি হচ্ছে ভাবা আফিম কিভাবে ইনায়াতের মন জয় করবে?? আর স্পন্দন ও আফরার মিল কিভাবে হবে??? রুহি কি বিদেশে চলে যাবে সত্যি?? তাহজিব এর কি হবে?? ইরশাদের অন্ত কি??

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৬+১৭