ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৬

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

গভীর রাতে হঠাৎ করেই তানিশার ঘুম ভেংগে গেলো। তার কিছুই ভালো লাগছে না।কেনো জানি ভীষণ মন খারাপ লাগছে তার। এজন্য তানিশা একটা বই নিয়ে পড়তে বসলো। হার্টের রাইট করোনারী আর্টারী কোন দিক দিয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে,রাইট এট্রিটামে কি কি ফিচার পাওয়া যায় এগুলো জোরে জোরে পড়তে লাগলো তানিশা।তানিশা এতো জোরে জোরে পড়ছিলো যে রিশা আর লিরার ঘুম ভেংগে গেলো।

তারা তখন চোখ ডলতে ডলতে বিছানায় বসে বললো,তানিশা!কি হয়েছে তোর?আজ হঠাৎ এতো জোরে জোরে পড়ছিস কেনো?তানিশা ওদের কন্ঠ শুনে থেমে গেলো।আসলে তানিশা কিন্তু কখনোই সবার সামনে এতো জোরে জোরে পড়াশোনা করে না।কিন্তু যখন দেখে কেউ নাই বা তার পড়াশোনায় মন বসছে না ঠিক তখনি এতো জোরে জোরে আওয়াজ করে পড়াশোনা করে সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রিশা এগিয়ে এসে বললো,তানিশা!এতো রাতে পড়ছিস যে?কাল তো ছুটির দিন।আজ একটু রেস্ট নি।তানিশা সেই কথা শুনে বই রেখে শুয়ে পড়লো।যদিও তার ঘুম আসছে না তবুও ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
পরের দিনও ঠিক এই সময়েই তার ঘুম ভেংগে গেলো। কিন্তু আজ আর তার পড়তে ইচ্ছে করলো না।কারণ জানালার ফাঁক দিয়ে বড় একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে দেখে সে পর্দা টা সরিয়ে দিয়ে জানালার রেলিং এ মুখ লাগিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।তারপর তার কিছু একটা মনে হলো, সেজন্য সে খাতা আর কলম নিয়ে বসে পড়লো।সে একবার বাহিরে তাকাচ্ছে তো আরেকবার খাতায় লিখছে,

জ্যোছনা রাতে একা বসে তোমার কথা ভাবি,
এই হৃদয়ের আঙ্গীনাতে তোমার ছবি আঁকি।
বিরহতে ভালোবাসা,অশান্তিতে মন,
দিবানিশি তোমাকে ভাবি সারাক্ষণ।
নিচে ছোট্র করে মনের অজান্তে লিখলো নোমানের নাম।নামটি লিখে সে যেনো অন্য রকম এক শান্তি অনুভব করলো।সেজন্য আবার লিখলো নোমানের নাম।তানিশা বুঝতে পারছে না এমন কেনো হচ্ছে তার।সেজন্য সে বার বার নোমানের নামটি লিখতে লাগলো।
হঠাৎ লিরা উঠে এলো।সে ওয়াশরুমে যাবে বলে উঠেছিলো।কিন্তু তানিশার পড়ার টেবিলের বাতিটা জ্বালানো দেখে এগিয়ে এলো।

–কি রে তানিশা! কি করছিস এতো রাতে?
তানিশা যেনো একদম চমকে উঠলো।আর খাতা টা তাড়াতাড়ি করে ভাজ করে লুকিয়ে রাখলো।
লিরা তানিশার এমন পরিবর্তন দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না।তানিশা কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়েছে আজকাল।তার আচরনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।মনে হয় সে কোনো কিছু নিয়ে ভীষণ চিন্তিত আছে।লিরা তানিশাকে জিজ্ঞেস করলো এই তোর কি হয়েছে?তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
তানিশা তখন হেসে উত্তর দিলো না তো।তোরা অযথাই চিন্তা করছিস আমাকে নিয়ে।

পরের দিন কলেজে টিফিন পিরিয়ডে আজ সবার আগে ক্যান্টিনে চলে গেলো তানিশা। যে যার মতো খাবার খাচ্ছে।তানিশার বান্ধুবীরাও খাচ্ছে।কিন্তু তানিশা খাওয়া বাদ দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ নোমান আর তার বন্ধুরা প্রবেশ করলো ক্যান্টিনে।কিন্তু নোমান একবারের জন্যও তানিশার দিকে তাকালো না।নোমান সোজা বেঞ্চে বসে তার খাওয়া শুরু করে দিলো।নোমান বই পড়ছে আর খাচ্ছে।অন্যদিকে তার তাকানোর সময় ই নেই।কিন্তু তানিশা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলো নোমানকে।সে আজকাল নোমানের দিকে তাকিয়ে থাকতেই বেশি আনন্দ পাচ্ছে।সারাজীবন এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারলে তার জীবনটা মনে হয় ধন্য হতো।তানিশা কিছুতেই নোমানকে ভুলতে পারছে না।কি করে সে ভুলবে নোমানকে এসব ভাবতে ভাবতেই টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলো।তানিশার আর কিছু খাওয়া হলো না।

এদিকে নোমান টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার ক্লাসে চলে গেলো।কিন্তু তানিশা তখনো সেখানেই রয়ে গেলো।তানিশার বান্ধুবীরা বুঝতে পারছে না কিছু।হঠাৎ তানিশার হলো টা কি?ইদানীং সে বেশ অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে।আগের মতো আর যখন তখন বই হাতে নিয়ে বসে থাকে না।কেমন যেনো হয়ে গেছে সে।আজ খাবার টাও খেলো না।

ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র প্রতিটা মেয়ে হোস্টেলের দিকে যেতে লাগলো।হঠাৎ নোমানের সাথে মুখোমুখি দেখা তানিশার।দুইজন দুইজনকে দেখামাত্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর যে যার মতো চোখ ফিরিয়ে নিলো।অথচ এক সময় দুইজন দুইজনকে দেখার জন্য একদম অস্থির হয়ে ছিলো অথচ আজ দেখা হওয়ার পরও কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।তারা কি কথা বলবে বা কিভাবে শুরু করবে সেটাই তো জানে না।মনে হচ্ছে তারা কখনোই কাউকে দেখে নি।কত অচেনা তারা!অথচ মনে মনে দুইজনই কথা বলার জন্য পাগল হয়ে আছে।
হঠাৎ রিশা বললো,হাই ভাইয়া,হাউ আর ইউ?

নোমান ছোট্র করে উত্তর দিলো ফাইন।তারপর সেখান থেকে চলে গেলো।
তানিশা কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।তবে পিছন ফিরে তাকানোর সাহস হলো না।তবুও সে অল্প একটু তার ঘাড় বাঁকা করে দেখলো।কিন্তু তানিশা সাথে সাথে আবার তার ঘাড় ঘুরালো।কারণ নোমান এদিকেই তাকিয়ে আছে।তানিশা বুঝতে পারলো নোমান যতই অভিমান করুক না কেনো সে এখনো তাকে ভুলতে পারে নি।নোমানের চাহনি দেখে তানিশার বুকের ভিতর টা ধক করে উঠলো।তার চোখে জল পর্যন্ত এসে গেলো।তানিশা আর থাকতে পারলো না সেখানে।দৌঁড়ে হোস্টেলের দিকে চলে গেলো।

এদিকে রিশা আর লিরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলো।কারণ তারা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।এক পর্যায়ে তারাও তাড়াতাড়ি করে হোস্টেলে চলে গেলো আর তানিশার কাছে এসে বললো,
তানিশা!তুই কি নোমান কে পছন্দ করিস?বা তোদের মধ্যে আবার প্রেম টেম কিছু হলো নাকি?
তানিশা নোমানের ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো,তোদের মাথা সত্যি গেছে।আমার কি প্রেম করার সময় আছে নাকি?পড়েই কুল পাই না।কখন প্রেম করতে যাবো?

অন্যদিকে নোমান তানিশাকে যতই দেখছে তার বুকের ভিতর ভালোবাসার আগুন ততই দাউদাউ করে জ্বলছিলো।কিন্তু তার যে ভয়ংকর রকমের ইগো।সে আর কখনোই নিজের থেকে কিছু বলতে যাবে না,একবার বলেই তানিশার কাছে সে ভীষণ ভাবে অপমানিত হয়েছে।আর মরে গেলেও নিজের থেকে কিছু বলবে না সে।নোমানের কথা তানিশা যদি সত্যি তাকে ভালোবাসে তাহলে নিজের থেকেই সে ফিরে আসবে।আর তাকে ভালোবাসার কথা বলবে।নোমানের এখনো প্রতিটা সেকেন্ডে শুধু তানিশার কথায় মনে হচ্ছে সে মনে মনে ভাবছে তানিশা কি একবারও তার ভালোবাসা ফিল করতে পারছে না।এতোটা হৃদয়হীনা সে!

পরের দিন সকালবেলা রুম ঝাড়ু দিতে গিয়ে রিশা সেই পেজ টা খুঁজে পায় যেটাতে তানিশা নোমানের নাম লিখেছিলো।নোমানের নাম দেখামাত্র রিশার আর বুঝতে বাকি রইলো না।সে তখন সরাসরি পেজটা দেখিয়ে বললো,তানিশা!
এখনো বলবি যে তুই নোমানকে ভালোবাসিস না?
তানিশা সাথে সাথে পেজ টি কেড়ে নিয়ে বললো, হ্যাঁ বলবো।যে আমি নোমানকে ভালোবাসি না।
লিরা তখন বললো তাহলে পেজে নোমানের নাম লিখেছিস কেনো?
তানিশা তখন বললো এটা তন্নির জন্য লিখেছি।ও নোমানকে নিয়ে লিখতে বলেছিলো।
লিরা আর রিশা দুইজনই অবাক।এই মেয়ে বলে কি?তন্নি আবার কোথা থেকে এলো মাঝখানে?

তানিশা তখন বললো, তোরা এভাবে অবাক হচ্ছিস কেনো?সত্যি বলছি আমি।তন্নি আর নোমানের বিয়ে ঠিক হইছে।সেজন্য তন্নি নোমানকে নিয়ে কিছু একটা লিখে তাকে দিতে চায়।আমাকে বলেছিলো লিখতে তাই লিখেছি।এই বলে তানিশা সেখান থেকে চলে গেলো।তবে তার চোখের কোনে জমে থাকা জল আর আড়াল করতে পারলো না সে।রিশা আর লিরা এতোক্ষণে সবকিছু পরিষ্কার বুঝে গেলো।কিন্তু তারা আর এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইলো না।কারণ যেখানে তাদের বান্ধুবী এ নিয়ে কিছু বলছে না সেখানে এ ব্যাপার নিয়ে তাদের আলোচনা করা মোটেও শোভনীয় নয়।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তন্নির সাথে তানিশার কথা হয় না।তন্নিও কল দেয় না।আবার তানিশাও দেয় না।কিন্তু আজ হঠাৎ তন্নি কল দিলো।তানিশা রিসিভ করার সাথে সাথে তন্নি বললো,

কংগ্রাচুলেশনস।
তানিশা বেশ অবাক হলো।তন্নি হঠাৎ কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছে কেনো?
সেজন্য তানিশা বললো বুঝতে পারলাম না।কিসের জন্য কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছিস?
তন্নি তখন হাসতে হাসতে বললো আমাদের আমান ভাইয়া পুলিশ অফিসার হয়েছেন।খুব শীঘ্রই জয়েন করছেন তিনি।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,তোর আমান ভাইয়াকে না জানিয়ে আমাকে কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছিস কেনো?
তন্নি তখন হাসতে হাসতে বললো, ও তুই বুঝবি না।সামনের কাল মামা যাচ্ছে তোদের বাড়ি।রেডি থাকিস।এই বলে তন্নি হি হি হি করে হেসে উঠলো।

তন্নির কথা শুনে তানিশার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো।এমনিতেই তার মন ভালো নেই তার উপর তন্নি এটা কি নিউজ শুনালো।কারন তানিশা বুঝতে পারছিলো তার মামা কেনো যাচ্ছে তাদের বাড়ি।
হঠাৎ তন্নি বললো, কাল একবার আসতে পারবি বাসায়?কাল আমাদের বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করেছেন মামা।ভীষণ মজা করবো দুইজনে।
–না আসতে পারবো না।অনেক পড়া বাকি আছে।আর কলেজ যেতেই হবে রেগুলার।এখন একটা ক্লাসও মিস দেওয়া যাবে না।এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।

তন্নি বেশ অবাক হলো।তানিশা ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞেস না করেই এভাবে কল কেটে দিলো কেনো?
এদিকে তানিশা তন্নির কল কেটে দিয়ে সাথে সাথে তার বাবাকে কল দিলো।
তহিদুল সাহেব কল রিসিভ করতেই তানিশা বললো,বাবা আমি কিন্তু এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।
তহিদুল সাহেব তখন হাসতে হাসতে বললেন,হঠাৎ বিয়ের কথা বলছিস কেনো মা?আর কে তোকে বিয়ে দেবে এখন?
তানিশা তখন বললো আগেই জানিয়ে রাখলাম।যত ভালো কোনো ঘর আসে না কেনো ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করবো না।

–ঠিক আছে,ঠিক আছে।বিয়ে নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবে না।তুই মন দিয়ে শুধু পড়াশোনা কর।
তানিশা তখন বললো আচ্ছা বাবা আজ তাহলে রাখি,এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।তহিদুল সাহেব তানিশার কথা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলেন।হঠাৎ তানিশা তার বিয়ের কথা কেনো বললো?
কিছুক্ষণ পরেই তায়েব চৌধুরী ফোন দিলো তহিদুল সাহেব কে।আর জানিয়ে দিলো তিনি কাল আসছেন তানিশাদের গ্রামে।কিন্তু কেনো আসছেন সেটা বললেন না।তহিদুল সাহেব তো বেজায় খুশি সেই কথা শুনে।কারণ তায়েব চৌধুরী নিজেই আসতে চাচ্ছেন তাদের বাসায়।এর চেয়ে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে?

কথামতো পরের দিনই তায়েব চৌধুরী রওনা দিলেন তানিশাদের বাসায়।সাথে তাহমিনা চৌধুরী ও আছেন।হরেক রকমের মিষ্টি আর ফলমূল নিয়েছেন তারা।মনে হচ্ছে বিয়ে হয়েও গেছে।তায়েব চৌধুরী এতোটা আশা নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে।আজ আর তন্নি, আমান বা নোমানকে নিলেন না।
তহিদুল সাহেব তায়েব চৌধুরী কে রিসিভ করার জন্য অনেক আগেই মেইন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন।আর বার বার ফোন করতে লাগতেন।সেজন্য তায়েব চৌধুরীদের বাড়ি চিনতে বেশি কষ্ট হলো না।তারা সহজেই তানিশাদের বাড়ি পৌঁছে গেলো।

তানিশার মা শিউলি বেগম হরেক রকমের পিঠা আর তাদের নিজস্ব গাছের ফলমূল দিয়ে বানানো জুস নিয়ে হাজির হলেন।সবার আগে তিনি সালাম দিলেন তায়েব চৌধুরী কে।তায়েব চৌধুরী সাথে সাথে উত্তর দিয়ে নানা বিষয় এ গল্প করতে লাগলেন।
হঠাৎ রুমে সোহান আর তানিয়া প্রবেশ করলো।কারণ তারাও কাল এসেছে বাড়িতে।
তানিয়াকে দেখামাত্র তায়েব চৌধুরী বললো, মাশাল্লাহ মা,তুমি মনে হয় তানিশার বোন তাই না?
তানিয়া সেই কথা শুনে সালাম দিয়ে বললো,জি মামা।আমি তানিয়া।আর ইনি আমার হাজব্যান্ড। সোহান ও সালাম দিলো সবাইকে।

এদিকে তাহমিনা চৌধুরী শুধু ফুঁসছেন।তিনি মোটেও থাকতে চাচ্ছিলেন না।শুধু ভাইয়ের মন রক্ষার্থে চলে এসেছেন।কিছুক্ষণ গল্পসল্প করার পর তায়েব চৌধুরী আমানের কথা বললেন।সে যে পুলিশ অফিসার পদে জয়েন করছে সেটা শুনে সবাই বেশ খুশি হলো।তহিদুল সাহেব বলেই ফেললেন বাহঃ আমান বাবা পুলিশ অফিসার হবে এখন!ভালোই তো।

হঠাৎ তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেবের হাত ধরে বললো,আমি একটা কথা বলতে চাই রাখতে হবে কিন্তু।
–কি কথা?বেশ আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলেন তহিদুল সাহেব।
তায়েব চৌধুরী তখন নির্ধিদ্বায় বললো, আমি তানিশাকে আমার বাড়ির বড় বউ হিসেবে চাচ্ছিলাম।যদি আপনারা সবাই রাজি থাকেন।
তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু তানিশা তো এখন কিছুতেই বিয়ে করবে না।সে ডাক্তার হবে তারপর বিয়ে করবে।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আমার আমান খুব পছন্দ করে তানিশাকে।সে তাকে বিয়ে করতে চায়।যদি তানিশা রাজি না থাকে বিয়ে করতে অন্তত রেজিস্ট্রার করে রাখা যায় আপাতত।
তহিদুল সাহেব ভীষণ বিপদের মধ্যে পড়ে গেলেন।তিনি বুঝতে পারলেন সেজন্য কাল তানিশা হঠাৎ বিয়ের কথা বললো।কিন্তু তানিশা যদি রাজি থাকতো তাহলে তো এভাবে বারণ করে দিতো না।এখন তহিদুল সাহেব কি উত্তর দেবেন বুঝতে পারলেন না।

তহিদুল সাহেব কে চুপচাপ থাকা দেখে তায়েব চৌধুরী বললেন,এতো কিসের চিন্তাভাবনা করছেন?আপনি মা তানিশার সাথে কথা বলে তবেই আমাদের জানিয়েন।তানিশা যদি রাজি থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি রাজি না থাকে তাহলে কারো কিছু করার নাই।তবে আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট ওকে যদি একটু রাজি করাতেন খুব ভালো হতো।কারণ আমার ছোট ছেলের সাথে তন্নির বিয়েটাও দিতে চাই এখুনি।সেজন্যই এতো বেশি রিকুয়েষ্ট করছি।দুই বান্ধুবি এক বাসায় থাকলে খুব ভালো হবে।
তহিদুল সাহেব কথা দিলেন না।তবে বললেন তিনি তানিশার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে তবেই ফাইনাল উত্তর দিবেন।

তায়েব চৌধুরী আর তাহমিনা চৌধুরী বেশ কিছুক্ষণ থাকলো তানিশাদের গ্রামে।তায়েব চৌধুরীর ভীষণ ভালো লেগেছে গ্রামটা।সেজন্য তিনি ঘুরেফিরে একটু দেখতে চাইলেন।এরই মধ্যে তন্নি ফোন দিয়ে জানালো নোমান এক্সিডেন্ট করেছে।নোমানের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তায়েব চৌধুরী আর এক সেকেন্ড দেরী করলেন না।তাড়াতাড়ি করে রওনা দিলেন। অন্যদিকে তানিশার বাবা আর মাও নোমানের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তায়েব চৌধুরীর সাথেই চলে আসলেন শহরে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৫

আমান আর তানিশার বিয়ের কথা শুনে নোমান নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলো না।সেজন্য রাগে দুঃখে আজও গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো।কিন্তু আজ আর সে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসলো না।হঠাৎ পিছন দিক থেকে অন্য আরেকটা গাড়ি ধাক্কা মারায় নোমান গাড়িসহ খাদে পড়ে যায়।তখন স্থানীয় লোকেরা তাকে হাসপাতালে এডমিট করায়।নোমানের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাসায় শুধু তন্নি একাই আছে।সে একদম পাগলের মতো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।অবশেষে কোনো উপাই না দেখে সে তানিশাকে ফোন দেয়।তানিশা নোমানের এক্সিডেন্টের কথা শুনে আর এক সেকেন্ড দেরী করলো না।দৌঁড়ে হাসপাতালে চলে আসলো।তানিশার সাথে তার বান্ধুবী রিশা আর লিরাও এসেছে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৭