ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৭

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৭
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমানের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এখন পর্যন্ত জ্ঞান ফেরে নি তার।মাথায় প্রচন্ড ভাবে আঘাত পাওয়ায় সাথে সাথে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।এজন্য এক মুহুর্ত দেরী না করে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এবং নিউরো সার্জারির সুবিধা আছে এমন হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছে নোমানকে।নোমানকে পাশ ফিরিয়ে উপুড় করে শুইয়ে রাখা হলো যাতে বমি করলে তা ফুসফুসে চলে না যায়।

এবার নোমান কে সাবধানে নড়াচড়া করা হচ্ছে কারণ ঘাড়ে চোট লাগলে বেকায়দায় তা বেড়ে গিয়ে অবস্থা গুরুতর হতে পারে। এদিকে আবার নোমানের তড়কা দিয়ে রক্ত পড়াও শুরু হইছে।ডাক্তার সেজন্য রক্ত পরিষ্কার করে কাপড় চাপা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।এবং যে জায়গা টা থেকে রক্তপাত হচ্ছে সেই জায়গাটা সেলাই করে দিলো।এদিকে স্যালাইন চালানো হচ্ছে,শ্বাসনালিতে নল ঢুকিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হচ্ছে।মাথার ক্ষত জায়গা সেলাই করে ব্যান্ডেজ করা হলো।আপাতত এইরকমই রাখা হলো নোমানকে।নোমানের জ্ঞান ফিরলে বা সে মোটামুটি সামলে উঠলে সিটি স্ক্যান করা হবে।স্ক্যান রিপোর্টের ফলাফল অনুযায়ী ডাক্তারেরা নোমানের চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করে দিবেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এদিকে এক এক করে নোমানের সকল আত্নীয়স্বজন আসা শুরু করলো।সবাই ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছে।তন্নি নোমানের এমন অবস্থা দেখে সে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।কখন যে সে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।তানিশা তো বোবার মতো চুপ হয়ে আছে।তবে তার ভিতরে একদম ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।একটু জোরে জোরে কাঁদতে পারলে কিছুটা হালকা হতে পারবে সে।তানিশা আর তার কান্না চেপে রাখতে পারছে না,সেজন্য বাথরুমে চলে গেলো।আর জোরে জোরে চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো।তার এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে নোমানের কাছে গিয়ে তার পাশে বসে তাকে নোমান নোমান বলে ডাক দিতে।কিন্তু তার যে কোনো অধিকারই নাই নোমানের পাশে বসার।তাকে নোমান নোমান বলে ডাকার অধিকারই নাই আর ছোঁয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

রিশা আর লিরাও তানিশার পিছু পিছু চলে গেলো।তারা তানিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বাথরুম থেকে বের করে আনলো।আর বললো,তানিশা শান্ত হ।প্লিজ তানিশা এভাবে কাঁদিস না।তানিশা তবুও থামছে না।লিরা তখন বললো,এর পরও বলবি তুই নোমানকে ভালোবাসিস না?কেনো লুকাচ্ছিস তোর ভালোবাসার কথা?আমরা জানলে কি ক্ষতি হবে?
তানিশা সেই কথা শুনে লিরার গলা ধরে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।রিশা তখন তানিশাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,তানিশা চুপ কর।কাঁদলেই কি নোমান সুস্থ হয়ে যাবে।নামায পড়ে দোয়া কর আল্লাহর কাছে।

তানিশা সেই কথা শুনে হঠাৎ কান্না থামিয়ে দিলো তারপর অযু করে হাসপাতালের বারান্দায় একটা কাপড় বিছিয়ে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করলো।আর আল্লাহর কাছে নোমানের প্রাণ ভিক্ষা চাইলো।নোমান যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায় সেজন্য দোয়া করতে লাগলো।তানিশার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো।তার কষ্ট কেউই বুঝতে পারছে না।আসলে কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে কখনোই ভোলা যায় না।প্রিয় মানুষের ক্ষতি কেউই সহ্য করতে পারে না।তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হোক সেটা কেউ জীবনেও চাইবে না।আসলে প্রেম সঠিক হলে তাকে ভোলা অসম্ভব ব্যাপার।

তায়েব চৌধুরীরা এতোক্ষণে পৌঁছে গেলো হাসপাতালে। নোমানের এমন অবস্থা দেখে তিনি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলেন না।কিন্তু আমান তায়েব চৌধুরী কে বললো,বাবা চিন্তার কোনো কারণ নেই।এখন নোমানের জ্ঞান ফিরেছে।আরেকটু সুস্থ হলেই সিটি স্ক্যান করা হবে।ততোক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।তায়েব চৌধুরী কিছুতেই মানতে পারছিলেন না।তিনি আমানের গলা ধরে মেয়ে মানুষের মতো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন।
অন্যদিকে তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগমও তায়েব চৌধুরী কে শান্ত্বনা দিতে লাগলেন।তারা বোঝাতে লাগলেন এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

তাহমিনা চৌধুরী তন্নির এমন অবস্থা দেখে খুবই ভয় পেয়ে গেলেন।কারণ তন্নি ভীষণ ভেংগে পড়েছে।সেজন্য তাহমিনা তন্নিকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু তন্নি কিছুতেই গেলো না।সে হাসপাতালেই থাকবে বলে জানালো।
সারাদিন সারারাত সবাই হাসপাতালেই পড়ে থাকলো।কারো চোখে কোনো ঘুম নাই।না আছে ক্ষুধা।সবাই শুধু নোমানের সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছে।তহিদুল সাহেব নিজ দায়িত্বে সবার জন্য হালকা কিছু খাবার কিনে আনলেন।কিন্তু টেনশনে কেউই কিছু খেলো না।তবুও তিনি জোর করেই খাওয়ালেন সবাইকে।তায়েব চৌধুরী এবার তহিদুল সাহেবের গলা ধরে কাঁদতে লাগলেন।নোমানের কষ্ট তিনি সহ্য করতেই পারছেন না।

তিন দিন পর নোমান মোটামুটি নড়াচড়া করলো।তার রক্ত পড়াও বন্ধ হয়েছে।সে তার ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলো।ডাক্তার যখন দেখলো নোমান মোটামুটি অবস্থায় আছে এজন্য ডাক্তার নোমানকে সিটি স্ক্যান টেবিলে শুইয়ে দিলেন।তারপর টেবিলটি বৃত্তাকার একটি স্ক্যানারের মধ্যে নেওয়া হলো।যেখানে এক্সরে টিউব ও সেন্সর থাকে।টিউব ও সেন্সর খুব দ্রুত গতিতে ঘুরতে থাকে,তবে এটি বাইরে থেকে দেখা যায় না।এরপর নোমানকে কন্ট্রাস্ট মেটেরিয়াল ইনজেকশন হিসেবে শিরায় দিয়ে দেওয়া হলো।এসময় নোমানকে নড়াচড়া করতে বারন করা হলো।ইন্টারকমের মাধ্যমে বাহিরে থেকে নোমানের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।একটি স্বচ্ছ জানালা দিয়ে নোমানের উপর নজরও রাখা হচ্ছে।

সিটি স্ক্যান করার পর ডাক্তার জানালো ভয়ের কোনো কারণ নাই।যা ক্ষতি বাহিরেই হয়েছে।ভিতরে সব ঠিকঠাক আছে।মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়েছে কিনা এজন্যই করা হয়েছিলো সিটি স্ক্যান।কিন্তু মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয় নি।অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে।তবে ভবিষ্যতে যেনো এরকম কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
নোমান যখন ভালোভাবে সবাইকে চিনতে পারলো আর কথা বলার ট্রাই করলো সবার আগে তন্নি ছুটে গেলো নোমানের কাছে।সে নোমানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলো।নোমান তখন বললো, এই পাগলি কাঁদছিস কেনো?

আমি তো ঠিকই আছি।তন্নি তবুও থামলো না।সে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।ডাক্তার তখন বললো,কি করছেন?রোগীর সামনে এতো জোরে কাঁদছেন কেনো?এই বলে ডাক্তার বললো,এনাকে প্লিজ বাহিরে নিয়ে যান।তন্নি সেই কথা শুনে বললো না আমি বাহিরে যাবো না।এই বলে সে কান্না থামিয়ে দিলো।তায়েব চৌধুরী, আমান,তাহমিনা চৌধুরী সবাই নোমানের পাশে গিয়ে বসলো।তবে তারা কেউ কোনো কথা বললো না।

ওদিকে তানিশা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।সে না পারছে নোমানের কাছে আসতে না পারছে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে।সে যে নোমানের কেউই হয় না। নোমানের পাশে গিয়ে বসার বা তাকে ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞেস করার কোনো অধিকারই নাই তার।তানিশার এসব মনে হতেই চোখে জল চলে এলো।সে তখন মনে মনে ভাবতে লাগলো নোমান যখন তার কেউ হয় ই না তাহলে তার জন্য এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে তার?ব্যাথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া তার বিপক্ষে চলে গেছে।

নোমান হঠাৎ তানিশাকে খেয়াল করলো।সে তানিশাকে দেখামাত্র আর চোখ ফিরিয়ে নিতে পারলো না।নোমানের এমন তাকানো দেখে তানিশা চোখ মুছতে মুছতে নোমানের কাছে চলে এলো।বাট নোমানের পাশে বসার সাহস পেলো না। বা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ও সাহস হলো না তার।অন্যদিকে নোমান মনে মনে বললো,কি দরকার ছিলো এখানে আসার?তোমাকে দেখলে আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবো।তার চেয়ে বরং চলেই যাও।এই ভেবে নোমান এবার তার চোখ ফিরিয়ে নিলো।

নোমান তানিশার বাবা মাকে দেখে বললো,আংকেল,আন্টি আপনারাও এসেছেন?
–জ্বি বাবা।তোমার দূর্ঘটনার খবর শুনে আর এক মুহুর্ত থাকতে পারলাম না।এই বলে তারাও নোমানের কাছে চলে গেলো।আর সে এখন কেমন আছে সেটা জিজ্ঞেস করলো।

এদিকে তন্নি নোমানকে খাওয়ানোর জন্য স্যুপ রেডি করে আনলো।তারপর নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।।নোমান খাচ্ছে আর তানিশার দিকে তাকাচ্ছে।এবার নোমান বললো,তন্নি ভালোভাবে খাওয়া।
তানিশা এই দৃশ্য দেখে আর রুমের ভিতর থাকতে পারলো না।সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তানিশাকে চলে যাওয়া দেখে নোমান মনে মনে হাসতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো তাহলে এই কাহিনী!
এদিকে তানিশাকে বাহিরে যাওয়া দেখে রিশা আর লিরাও চলে গেলো।তার তানিশার হাত ধরে বললো,নোমান কি তোকে ভালোবাসে? না তুই একাই নোমানকে ভালোবাসিস?

তানিশা চুপচাপ থাকলো।
লিরা তখন বললো, রিশা তুই চুপ থাক তো।ও যখন বলতে চাচ্ছে না তখন কেনো জোর করে শুনতে চাচ্ছিস?
তানিশা এতোক্ষণে মুখ খুললো।সে সমস্ত কথা তাদের সাথে শেয়ার করলো।তারপর বললো,এখন তোরাই বল আমার কি করা উচিত?
রিশা তখন বললো, কি করা উচিত মানে?আলবত নোমানকে তোর ভালোবাসার কথা জানানো উচিত।আগে নিজের চিন্তা তারপর পরের চিন্তা।

লিরা তখন বললো, তুই কি সহ্য করতে পারবি যখন নোমান তন্নিকে সত্যি সত্যি বিয়ে করবে?
তানিশা সেই কথা শুনে লিরার দিকে তাকালো।লিরা তখন তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তন্নি সামান্য স্যুপ খাওয়াচ্ছে আর সেটাই তোর সহ্য হলো না,তুই বাহিরে চলে আসলি।আর সারাজীবন যখন সে নোমানকে নিজের করে নিবে তখন কিভাবে সহ্য করবি?

তানিশা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,তাহলে সারাজীবন আমি তন্নিকে কাঁদিয়ে ওর চোখের সামনে একই বাড়িতে কি করে থাকবো?ওর মনের অবস্থা তখন কি হবে?আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে ঠিক ওর ও তো এমন কষ্টই হবে?
লিরা তখন বললো, থাক তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি কথা বলবো তন্নির সাথে।আর নোমানকেও বলবো।
–না,না।লিরা এ কাজ কখনোই করবি না তুই।প্লিজ তোর দুটি পায়ে পড়ি।তন্নি সহ্য করতে পারবে না।দেখলি না নোমানের এক্সিডেন্ট হওয়াই সে কত টা ভেংগে পড়েছিলো।
রিশা তখন বললো, তুই ও তো ভেংগে পড়েছিস।

–বাদ দে এসব কথা।চল আমরা এখন চলে যাই হোষ্টেলে।তন্নি জিজ্ঞেস করলে বলবি পরীক্ষা আছে।তা না হলে আমাকে আবার তন্নি জোর করেই ওদের বাড়ি নিয়ে যাবে।
এই বলে তানিশা আবার নোমানের রুমে ঢুকলো।গিয়ে দেখে তন্নি নোমানকে পানি খাওয়াচ্ছে।
নোমান তানিশাকে দেখে বললো,তন্নি মুখ টা মুছে দিলি না?
তন্নি সেই কথা শুনে হাত দিয়ে নোমানের মুখটি মুছে দিলো।

তন্নির এমন সেবা করা দেখে তায়েব চৌধুরী ভীষণ খুশি হলেন।আর মনে মনে ভাবলেন যাক অবশেষে নোমানের দেখাশোনা করার লোক পাওয়া গেলো।তন্নি খুব যত্ন করে নোমানকে দেখে রাখবে।
তানিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তায়েব চৌধুরী বললেন, মা তানিশা এখানে এসে বসো।
–না মামা।আমি এখন বসবো না।আমাকে হোষ্টেলে যেতে হবে।
–না,আজ আর হোষ্টেলে যাও না।তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় থাকবে আজ।তোমার মা এই প্রথমবার এলো আমাদের এখানে।সেজন্য তুমিও থাকবে ওনাদের সাথে।

–কিন্তু মামা আমার খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা পরীক্ষা আছে।আমাকে যেতেই হবে হোষ্টেলে।
আমান সেই কথা শুনে বললো, আমি রেখে আসবো কলেজে।কোনো সমস্যা হবে না।
নোমান তখন হঠাৎ করেই তানিশাকে বললো,
হ্যাঁ ভাবি, থেকে যান।ভাইয়া যখন নিজের মুখে বলছে তখন আর না কইরেন না।কলেজে সময়মতো রেখে আসবেন ভাইয়া।
আমান সেই কথা শুনে নোমানকে বললো, কি বলছিস এসব সবার সামনে?
নোমান তখন তানিশার দিকে তাকিয়ে বললো,খারাপ কি বললাম?ভাই এর বউ তো ভাবিই হয়।
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,আপনি কি করে বুঝলেন যে আমার সাথেই আপনার ভাই এর বিয়ে হবে?

নোমান তখন বললো,কেনো তুমি জানো না কিছু?পুরো পরিবার রাজি,ভাইয়া রাজি,তোমার পরিবার রাজি।তাহলে তো ভাইয়ার সাথেই বিয়ে ফাইনাল তোমার।
–আমি রাজি কিনা সেটা তো বললেন না?
নোমান তখন হাসতে হাসতে বললো,আমি নিশ্চিত তুমিও রাজি।আর সেজন্যই তো,,,,,। নোমান হঠাৎ থামিয়ে গেলো।সে আর বললো না কিছু।সে বলতে চেয়েছিলো তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করবে দেখেই আমার প্রপোজ এক্সসেপ্ট করো নি।আমাকে মুখের উপর না করে দিয়েছো।
তানিশা এবার নোমানের সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করলো না।সে তায়েব চৌধুরী কে বললো,মামা আমি একটা কথা বলতে চাই।
–কি কথা মা?

–আমি আমান ভাইয়াকে সবসময় ভাই এর চোখে দেখে আসতেছি।তাকে কখনোই আমি আমার স্বামী ভাবতে পারবো না।প্লিজ মামা আমাদের সম্পর্ক টা এভাবে শেষ করবেন না।আমি আমান ভাইয়াকে কখনোই বিয়ে করতে পারবো না।প্লিজ মামা বোঝার চেষ্টা করুন।এভাবে জোরজবরদস্তি করে কখনোই বিয়ে হয় না।
তায়েব চৌধুরী একদম হা করে তাকিয়ে রইলো তানিশার দিকে।তানিশা এসব কি বলছে?এরকম উত্তর তিনি কখনোই আশা করেন নি।অন্যদিকে তানিশার বাবা মাও অবাক।

আমান তানিশার কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ করলো। সেজন্য সে রুম থেকে চলে যেতে ধরলো।তখন তানিশা বললো,ভাইয়া দাঁড়ান প্লিজ।আগেই যাবেন না।আমার কিছু কথা প্লিজ শুনে যান।
আমান তখন বললো কি আর শুনবো তোমার কথা?তুমি তো বলেই দিলে আমাকে বিয়ে করবে না।আমি কোনো মন খারাপ করি নি। কারণ এসব প্রেম ভালোবাসা বিয়ে কখনোই জোর করে আদায় করা যায় না।আমি একপাক্ষিক ভাবে শুধু ভালোবাসলেই তো হবে না।অপরজনকেও তো ভালোবাসতে হবে।এই বলে আমান চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তানিশা বুঝতে পারলো আমানের সত্য টা মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু আজ যদি তানিশা সত্য টা না প্রকাশ করতো তখন আমান হয় তো তার পথ চেয়েই বসে থাকতো সারাজীবন।
আমান সত্যি তানিশাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু কিছুই করার নাই তানিশার।সে কখনোই আমানকে বিয়ে করতে পারবে না।আমানকে স্বামী হিসেবে ভাবতেই তার পুরো শরীর শিউরে ওঠে।

হঠাৎ তাহমিনা চৌধুরী তার ভাই এর হাত ধরে বললো,ভাই তানিশা তো আমানকে বিয়ে করবে না বলে না করে দিলো।এখানে তো কারো কিছু করার নাই।এখন তাহলে তন্নি আর নোমানের বিয়েটা এনাউন্স করে দাও।তা না হলে দেখা যাবে নোমানও মুখের উপর না করে দিয়ে বলবে, আমি তন্নিকে বিয়ে করতে পারবো না।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তানিশা আমার আপন কেউ হয় না।সেজন্য ওর উপর আমি জোর খাটাতে পারলাম না।কিন্তু তানিশা যদি আমার নিজের কেউ হতো অবশ্যই ওকে আমি রাজি করাতাম।সে কখনোই আমার মুখের উপর না করতে পারতো না। কিন্ত নোমান আমার ছেলে আর তন্নিও আমার আপন ভাগ্নি।এদের কে আমি যা করতে বলবো এরা তাই করবে।আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস এদের জীবনেও হবে না।
নোমান তার বাবার কথা শুনে বললো,বাবা কি বলছো এসব?তন্নির সাথে আমার বিয়ে মানে?
–হ্যাঁ তন্নির সাথে তোমার বিয়ে আমি অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছি।তুমি সুস্থ হলেই শুভকাজ টা তাড়াতাড়ি সারতে চাই আমি।

–কিন্তু বাবা আমার তো পড়াশোনা এখনো শেষ হয় নি।পড়াশোনা কম্পিলিট না হতেই কিসের বিয়ে?তাছাড়া তন্নি আমার বোনের মতো।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে চিৎকার করে বললো, স্টপ!আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস কই পেলি?তুই তানিশা নস,যে কিছুই বলবো না।ভুলে যাস না।

তুই আমার ছেলে।আমি যা ডিসিশন নিবো সেটাই ফাইনাল।এই বলে তায়েব চৌধুরী রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
তায়েব চৌধুরী আসলে তানিশার উপর রাগ ঝাড়তে না পেরে সেই রাগ নোমানের উপর ঝাড়লেন।তায়েব চৌধুরী ভীষণ মন খারাপ করেছেন তানিশার উপর।তানিশা যে তার স্বপ্নটাই ভেংগে চুরমার করে দিয়েছে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৬

নোমান বুঝতে পারলো না কিছু।সে কি করবে এখন?তানিশা যদি তাকে আশ্বাস দিতো তাহলে তার কথা সে তার বাবাকে বলে দিতো।এখন নোমান যদি তার বাবাকে বলে সে তানিশাকে ভালোবাসে কিন্তু তানিশা যদি আবার বলে সে ভালোবাসে না নোমানকে তখন তো তার বাবা আরো ভীষণ ভাবে রেগে যাবেন।সেজন্য নোমান পুরো সিদ্ধান্ত তানিশার উপর ছেড়ে দিলো।তানিশা যদি নিজের মুখে এসে নোমানকে বলে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি।প্লিজ তন্নিকে বিয়ে করবেন না তবেই নোমান তানিশার কথা তার বাবাকে জানাবে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৮