ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৮

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৮
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তায়েব চৌধুরী তানিশার উপর একটু বেশিই মন খারাপ করেছেন।সেজন্য তিনি পরের দিন থেকেই আমানের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে দিলেন।কিন্তু আমান সাফ জানিয়ে দিলো সে এখনি বিয়ে করবে না।আসলে আমানের মনে যে এখনো তানিশার নামই লেখা আছে।এতো সহজে কি করে সে নাম ভুলে যায় সে?অন্যদিকে নোমান তানিশার অপেক্ষায় বসে আছে।কখন এসে তানিশা বলবে আই লাই ইউ নোমান।কিন্তু তানিশা একবারের জন্যও নোমানের কাছে এলো না।না একটা মেসেজ দিলো সে।নোমান সেজন্য ধরে নিলো তানিশা তাকে সত্যি ভালোবাসে না।সে নিছক অপেক্ষা করছে তানিশার জন্য।এখন তানিশার মনে কি চলছে সেটাই দেখার পালা।

আজ তানিশা কলেজ যাবে না বলে রিশা আর লিরাকে
জানিয়ে দিলো।রিশা আর লিরা যখন জানতে চাইলো সে কেনো যাবে না তখন উত্তরে তানিশা বললো,তন্নি দেখা করতে আসবে।সে আমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চায়।
তানিশার কথা শুনে রিশা আর লিরা দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর রিশা আর লিরা বললো,দোস্ত,তন্নি আজ তোকে কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে তা আমরা জানি না তবে তুই আজ অন্তত তন্নিকে তোর ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিস।তুই নিজের মুখে বললে ও নিশ্চয় আর নোমানকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।তোদের ভালোবাসার কথা শুনলে ও আরো খুশিই হবে।একবার বলেই দেখ না?
তানিশা কোনো উত্তর দিলো না।সে চুপচাপ রেডি হতে লাগলো।এদিকে রিশা আর লিরা হোষ্টেল থেকে বের হয়ে গেলো।

তানিশা আজ সুন্দর একটা কচুর পাতা কালারের থ্রি পিচ পড়লো।।যার ওড়না আর পায়জামা পিংক কালারের ছিলো।তানিশা তার লম্বা চুলগুলোকে বেনুনি করে নিলো।তারপর মুখে একটু ক্রিম আর পাউডার লাগিয়েও নিলো।ঠোঁট দুটি তার কেমন যেনো শুষ্ক লাগছিলো সেজন্য হালকা করে একটু পিংক কালারের জেল লাগালো।তারপর কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে হোষ্টেল থেকে বের হলো।

তানিশা প্রথমে একটা রিক্সায় উঠলো তারপর বললো মামা পার্কে চলুন।তানিশাকে ভীষণ চিন্তিত দেখা যাচ্ছিলো।সে নিজেও জানে না আজ কি হতে চলেছে।তবুও সাহস নিয়ে যাচ্ছে সে।আসলে সে নিজেও আজ নোমান আর তার মধ্যকার সম্পর্ক টা নিয়ে তন্নির সাথে আলোচনা করতে চায়।তন্নিকে জানাতে চায় ব্যাপারটা।তন্নির মনোভাব জেনে তবেই সে নোমানকে তার মনের কথা জানাবে।তবে তানিশার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।তন্নি কি আদৌ ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারবে?

তানিশা রিক্সা থেকে নামতেই দেখে তন্নি অনেক আগেই এসেছে।তানিশাকে দেখামাত্র তন্নি নিজেই এগিয়ে আসলো।আর তার হাত ধরে পার্কের ভিতর নিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো।তন্নিকে ভীষণ চিন্তিত দেখা যাচ্ছিলো। তানিশা বুঝতে পারলো না তন্নি কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে যে এতো সকাল সকাল তাকে আসতে বললো?
তানিশা নিজেও কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না।তখন তন্নি বললো তুই এমন মুখ কালো করে আছিস কেনো?কিছু কি বলবি?তানিশা তখন বললো আগে তুই বল।কি জন্য ডেকেছিস আমাকে যা ফোনে বলা যেতো না।
তন্নি তখন বললো আমি তো বলবোই। তার আগে তোর কথা শুনতে চাই।

তানিশা বুঝতে পারছে না কিছু।তন্নি এভাবে তাকে জোর করছে কেনো?তারপর আবার ভাবলো যখন তন্নি তাকে বলতে বলছেই তাহলে এই সুযোগে তার বলা উচিত।
তানিশা তখন তন্নির হাত ধরে বললো, তন্নি তুই তো তোর নোমান ভাইয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসিস কিন্তু তোর নোমান ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে?

তন্নি সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো তোর মনের মধ্যে কি এতোক্ষণ এই কথাটিই ঘুরপাক খাচ্ছে?
তানিশা তখন বললো আমি কিন্তু ফান করছি না।প্লিজ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
তন্নি তখন বললো হ্যাঁ ভালোবাসে।সেইজন্যই তো কাল মামা এনাউন্স করেই দিলো আমাদের বিয়ের।আর দেখলি না নোমান ভাইয়াও কিছু বললো না।

তানিশা তখন বললো, তুই তাহলে বুঝতে পারিস নি ব্যাপারটা।তোর নোমান ভাইয়া যে বললো তোকে উনি বোনের চোখে দেখেন।তোকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবে না সে।শুনিস নি এটা?
এই কথা শোনামাত্র তন্নির চোখ জলে ছলছল করতে লাগলো।সে তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,কিন্তু মামা তো এটাও বললো যে তিনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই শুনতে হবে নোমান ভাইয়াকে।মামার সিদ্ধান্তের বাহিরে নোমান ভাইয়া কিছুতেই যেতে পারবেন না।
তানিশা তখন বললো তাই বলে তুই ওনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করবি?এভাবে জোর করে বিয়ে করে তুই কিন্তু মোটেও শান্তি পাবি না।
তন্নি হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলো এতে তোর কি প্রবলেম?আমি জোর করে বিয়ে করছি না ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করছি?

তানিশা তন্নির এমন রাগান্বিত চেহারা থেকে থ হয়ে গেলো।তন্নিকে তো এখনো সে বলেই নি কিছু আর তাতেই সে যেরকম আচরণ করছে আর যদি সে সত্য টা শোনে তাহলে যে কি করবে ভাবতেই তানিশার শরীর শিউরে উঠলো।
তানিশা এবার তন্নিকে অন্য কৌশলে বলার চেষ্টা করলো।তানিশা তখন বললো তন্নি একটু বোঝার চেষ্টা কর।তোর নোমান ভাইয়া কিন্তু তোকে মোটেও ভালোবাসেন না।তিনি অন্য আরেকজন কে ভালোবাসেন।যদি তুই জানতে চাস উনি কাকে ভালোবাসেন আমি সেটা বলে দিতে পারি।কারণ আমি জানি সেটা।

তন্নি সেই কথা শুনে হঠাৎ একটা কার্ড বের করে বললো,নোমান ভাইয়া কাকে ভালোবাসে সেটা আমার দেখার বিষয় নয় এখন।ওনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে এটাই এখন বাস্তব।
তানিশা কার্ড টা হাতে নিয়ে তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো কিসের কার্ড এটা?
তন্নি তখন বললো খুলে দেখ কিসের কার্ড?
তানিশা সাহস করে খুলেই ফেললো কার্ডটা।সে স্পষ্ট দেখতে পেলো বর আর কনের জায়গায় নোমান আর তন্নির নাম লেখা।

হঠাৎ তন্নি কার্ড টা কেড়ে নিলো তানিশার থেকে।আর বললো,এই জন্যই ডেকেছিলাম তোকে।আর এটাই আমার সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা।নোমান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে। বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হচ্ছে এজন্য তোকে দাওয়াত দিতে পারলাম না।সরি।তাছাড়া তোর উপর আমাদের পরিবারের আর কোনো সদস্যের ইন্টারেস্ট নাই। সবাই ভীষণ মন খারাপ করেছে তোর উপর।মামা তো সেই লেভেলের রেগে আছেন,তিনি তো তোর মুখ আর কোনোদিনই দেখবেন না,অন্যদিকে আমান ভাইয়াও ভীষণ মন খারাপ করেছেন।তিনিও চান না তুই আর দ্বিতীয় বার আমাদের বাসায় আয়।আমাকেও সবাই বারণ করে দিয়েছে যেনো আমি তোর সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখি।তোর সাথে কোনো যোগাযোগ ও না করি।আমি এখন কি করতে পারি বল?পরিবারের কথা না শুনলে বাসায় আর কেউ ঢুকতে দেবে না আমাকে।সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই যখন চাচ্ছে আমরা আর দেখা না করি, আর কোনো যোগাযোগ ও না করি তাহলে সেটাই হবে।এটাই আমাদের শেষ দেখা।ভালো থাকিস।এই বলেই তন্নি চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো।সে আর এক সেকেন্ডও দেরী করলো না।

এদিকে তানিশা তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।তন্নির কথাবার্তা শুনে তো সে একদম বোবা হয়ে গেলো।তন্নি তাকে এসব কি শুনিয়ে গেলো?তানিশা আর এক পাও এগোতে পারলো না।সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পার্কের মধ্যেই পড়ে গেলো।কিন্তু পার্কের আশেপাশে রিশা আর লিরাও ছিলো।তারা সাথে সাথে রিক্সায় করে তানিশাকে হোষ্টেলে নিয়ে গেলো।
আসলে লিরা আর রিশা তানিশার কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলো না।তানিশাকে সারাক্ষণ এভাবে চিন্তিত দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিলো তন্নিকে জানাবে ব্যাপারটা।তন্নি আর তানিশা যেহেতু বেস্ট ফ্রেন্ড নিশ্চয় তন্নি বুঝতে পারবে ব্যাপারটা।যেহেতু নোমান নিজেও তানিশাকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে হিসেবে তানিশার সাথে নোমানের মিল হওয়াটা খুব জরুরি ।যেই ভাবা সেই কাজ।তারা কাল রাতেই তানিশা আর নোমানের মধ্যকার সম্পর্কের কথা বলে দেয় তন্নিকে।রিশা আর লিরা ভেবেছিলো তন্নি বুঝতে পারবে ব্যাপারটা আর সেজন্যই তানিশাকে ডেকেছিলো।কিন্তু তন্নি যে এতো স্বার্থপর একটা মেয়ে সত্যি তাদের জানা ছিলো না।

তন্নি কাল রিশা আর লিরাকে কিছু না বললেও আজ সে পরিষ্কার করে তানিশাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো যে সে নোমানকে কারো হতে দেবে না।নোমান তাকে পছন্দ করুক বা না করুক তবুও সে নোমানকেই বিয়ে করতে চায়।নোমানকে পাওয়ার জন্য তন্নি শেষ পর্যন্ত তানিশার সাথে তার এতোদিনের বন্ধুত্নের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেললো।তাকে স্পষ্ট করে বলে দিলো সে যেনো আর তাদের বাসায় না যায় এমনকি তাদের কারো সাথে কথাও না বলে।
রিশা আর লিরা ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।কারণ এখন পর্যন্ত তানিশার জ্ঞান ফেরে নি।তানিশা তন্নির কথা শুনে ভীষণ শকড পেয়েছে।সে ভাবতেও পারে নি তন্নি এইভাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলবে।
অবশেষে তানিশার জ্ঞান ফিরলো।তবে সে চোখ মেলে তাকাতেই তাড়াতাড়ি করে উঠতে ধরলো।কারণ সে যে তার বিছানায় শুয়ে আছে।কিভাবে সে তার রুমে আসলো কিছুই বুঝতে পারলো না তানিশা।তানিশাকে ওঠা দেখে লিরা আর রিশা বললো,উঠছিস কেনো?শুয়ে থাক।

তানিশা তা শুনে বললো, না আমি ঠিক আছি।তার আগে বল আমি কিভাবে এলাম এখানে?
লিরা আর রিশা চুপ করে রইলো।
তানিশা তখন বললো তোরাও পার্কে গিয়েছিলি?
–হুম।
–কেনো গিয়েছিলি?তানিশা চিৎকার করে বলতে লাগলো।

লিরা আর রিশা তখন তানিশাকে আবার শুইয়ে দিলো আর বললো, দোস্ত শান্ত হ।আমরা তোর কতটা আপন জানি না তবে তোর কষ্টে আমাদেরও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।যদি আমরা তোর মনের আশা পূরণ করে দিতে পারতাম তাহলে খুব ভালো লাগতো।প্লিজ দোস্ত বাস্তবতা বুঝতে শেখ। তুই ওই মেয়ের জন্য কতটা সেক্রিফাইজ করলি আর ও তোকে উলটো বাঁশ দিয়ে চলে গেলো।এখনো সময় আছে নোমানকে তুই সবটা পরিষ্কার করে বলে দে।তা না হলে কিন্তু আমরাই বলে দিবো নোমানকে।

তানিশা তখন রিশা আর লিরার হাত তার মাথায় রেখে বললো,দোহাই লাগে দোস্ত,এই কাজ কখনোই করবি না তোরা।ওদের কে ভালো থাকতে দে।তাছাড়া অনেক লেট হয়ে গেছে।ওদের বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে।এই সময়ে আমি কোনো অশান্তি চাই না।
লিরা তখন বললো কিন্তু নোমান নাকি তোকে ভালোবাসে তাহলে কি করে এই বিয়েটা সে করছে?এটা আবার কোন স্টাইলের ভালোবাসা?ও যদি মন থেকে ভালোবাসতো তোকে তাহলে কখনোই এভাবে বিয়েতে রাজি হতো না।অন্তত আরেকবার তোকে বলতে পারতো বা তার পরিবারকে জানাতো তোর কথা।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আমার কপালে মনে হয় এটাই লেখা ছিলো সেজন্য এরকম হলো আমার ভাগ্যটা।আচ্ছা তোরা বাদ দে এসব কথা এখন।ওদের জন্য দোয়া কর।আমিও ওদের জন্য অনেক অনেক দোয়া করবো।এই কথাগুলো বলতেই তানিশার চোখে জল এসে গেলো।সে হঠাৎ লিরাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো।তার চোখের পানি আজ কিছুতেই বাঁধ মানছে না।সে আজ ইচ্ছা মতো কেঁদে নিলো।তারপর নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনোই নোমানের কথা ভাববে না।নোমান যেহেতু এখন তন্নির হাজব্যান্ড সেহেতু নোমানকে নিয়ে ভাবাও এক ধরনের পাপ কাজ হবে।

রিশা আর লিরা মনে মনে ভাবতে লাগলো হায় রে তানিশা!বুকের মধ্যে কষ্ট জমা রেখে এইভাবে নিজেকে শান্ত্বনা দিচ্ছিস?তুই কি সত্যি নোমানকে ভুলতে পারবি?মনে তো হয় না পারবি।
আসলেই তানিশা এখন পর্যন্ত নোমানকে ভুলতে পারে নি।আজও রাতের পর রাত শুধু তার কথাই মনে হয় তানিশার।নোমানের হয় তো হয় না কিন্তু তানিশা আজও অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে।আজও সেই স্মৃতি তার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে।নোমান তাকে কতবার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছে আর তার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা শুনতে চেয়েছে।কিন্তু তানিশা শুধুমাত্র তন্নির কথা ভেবেই তার ভালোবাসাকে শেষ করে ফেলেছিলো সেদিন।

সেদিনের পর থেকে আর কোনোদিনই নোমান বা তন্নি দুইজনের একজনও তানিশার সাথে দেখা করে নি বা কল করে নি।অন্যদিকে তানিশাও নিজের থেকে কারো সাথে যোগাযোগ করে নি।তাদের সম্পর্কের ইতি এইভাবেই হয়ে যায়।
কে এখন কি অবস্থায় আছে কেউই সেটা জানে না।

পুরনো স্মৃতি মনে হতেই তানিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।সে এতোক্ষণ তার স্বপ্নের জগতে হারিয়ে গিয়েছিলো।
❝কি হলো ডাক্তার ম্যাডাম?কোন জগতে এভাবে হারিয়ে গেলেন?❞
সহকারী ডাক্তারের কথা শুনে তানিশা একদম চমকে উঠলো।সে ভুলেই গিয়েছিলো এখন তন্নির সিজার করা হবে।তন্নির চোখ বাধা ছিলো বিধায় সে তানিশাকে এখনো দেখে নি।
তানিশা সেজন্য তাড়াতাড়ি করে তন্নির অপারেশন শুরু করে দিলো।পুরো অপারেশন কম্পিলিট হতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগলো তার।

অপারেশনের পরপরই তন্নিকে অপারেশন কক্ষের বাইরে অন্য আরেকটা রুমে নিয়ে আসা হয়। এদিকে তন্নির হাজব্যান্ড ইকবাল তার মেয়েকে কোলে নিয়ে একের পর এক গল্প করতে লাগলো।সে ভীষণ খুশি।তবে তন্নির শাশুড়ির মন টা একটু খারাপ।তিনি বোধ হয় ছেলে বাচ্চা চেয়েছিলেন।তন্নির বড় মেয়েও ভীষণ খুশি ছোট বোনকে পেয়ে।আর বাচ্চাটা কি সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে!দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করবে সবার।

তন্নি সজাগই আছে। সেজন্য তার সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া মেয়েকে বুকের দুধ পান করানোর জন্য ইকবাল তন্নির পাশে রাখলো।তন্নিও ভীষণ খুশি মেয়েকে পেয়ে।ইকবাল খুশিতে তন্নির কপালে একটা কিস করলো। তন্নি তখন হেসে বললো,কি করছো সবার সামনে?ইকবাল তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো নিজেরই তো বউ।
ইকবাল আর তন্নিকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারা বেশ সুখে আছে।কি মিল দুইজনের মধ্যে!দুইজনের মুখেই সুখের হাসি!

তাহলে নোমান কোথায়?
তানিশা বুঝতে পারছে না কিছু।আর ইকবালের সাথেই বা তন্নির কিভাবে বিয়ে হলো?নোমানের সাথে কেনো তন্নির বিয়ে হলো না?তানিশা এসব প্রশ্নের উত্তর এখন কার থেকে শুনবে?

তায়েব চৌধুরী তানিশার উপর একটু বেশিই মন খারাপ করেছেন।সেজন্য তিনি পরের দিন থেকেই আমানের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে দিলেন।কিন্তু আমান সাফ জানিয়ে দিলো সে এখনি বিয়ে করবে না।আসলে আমানের মনে যে এখনো তানিশার নামই লেখা আছে।এতো সহজে কি করে সে নাম ভুলে যায় সে?অন্যদিকে নোমান তানিশার অপেক্ষায় বসে আছে।কখন এসে তানিশা বলবে আই লাই ইউ নোমান।কিন্তু তানিশা একবারের জন্যও নোমানের কাছে এলো না।না একটা মেসেজ দিলো সে।নোমান সেজন্য ধরে নিলো তানিশা তাকে সত্যি ভালোবাসে না।সে নিছক অপেক্ষা করছে তানিশার জন্য।এখন তানিশার মনে কি চলছে সেটাই দেখার পালা।

আজ তানিশা কলেজ যাবে না বলে রিশা আর লিরাকে
জানিয়ে দিলো।রিশা আর লিরা যখন জানতে চাইলো সে কেনো যাবে না তখন উত্তরে তানিশা বললো,তন্নি দেখা করতে আসবে।সে আমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চায়।
তানিশার কথা শুনে রিশা আর লিরা দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।

তারপর রিশা আর লিরা বললো,দোস্ত,তন্নি আজ তোকে কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে তা আমরা জানি না তবে তুই আজ অন্তত তন্নিকে তোর ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিস।তুই নিজের মুখে বললে ও নিশ্চয় আর নোমানকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।তোদের ভালোবাসার কথা শুনলে ও আরো খুশিই হবে।একবার বলেই দেখ না?
তানিশা কোনো উত্তর দিলো না।সে চুপচাপ রেডি হতে লাগলো।এদিকে রিশা আর লিরা হোষ্টেল থেকে বের হয়ে গেলো।

তানিশা আজ সুন্দর একটা কচুর পাতা কালারের থ্রি পিচ পড়লো।।যার ওড়না আর পায়জামা পিংক কালারের ছিলো।তানিশা তার লম্বা চুলগুলোকে বেনুনি করে নিলো।তারপর মুখে একটু ক্রিম আর পাউডার লাগিয়েও নিলো।ঠোঁট দুটি তার কেমন যেনো শুষ্ক লাগছিলো সেজন্য হালকা করে একটু পিংক কালারের জেল লাগালো।তারপর কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে হোষ্টেল থেকে বের হলো।

তানিশা প্রথমে একটা রিক্সায় উঠলো তারপর বললো মামা পার্কে চলুন।তানিশাকে ভীষণ চিন্তিত দেখা যাচ্ছিলো।সে নিজেও জানে না আজ কি হতে চলেছে।তবুও সাহস নিয়ে যাচ্ছে সে।আসলে সে নিজেও আজ নোমান আর তার মধ্যকার সম্পর্ক টা নিয়ে তন্নির সাথে আলোচনা করতে চায়।তন্নিকে জানাতে চায় ব্যাপারটা।তন্নির মনোভাব জেনে তবেই সে নোমানকে তার মনের কথা জানাবে।তবে তানিশার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।তন্নি কি আদৌ ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারবে?

তানিশা রিক্সা থেকে নামতেই দেখে তন্নি অনেক আগেই এসেছে।তানিশাকে দেখামাত্র তন্নি নিজেই এগিয়ে আসলো।আর তার হাত ধরে পার্কের ভিতর নিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো।তন্নিকে ভীষণ চিন্তিত দেখা যাচ্ছিলো। তানিশা বুঝতে পারলো না তন্নি কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে যে এতো সকাল সকাল তাকে আসতে বললো?
তানিশা নিজেও কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না।তখন তন্নি বললো তুই এমন মুখ কালো করে আছিস কেনো?কিছু কি বলবি?তানিশা তখন বললো আগে তুই বল।কি জন্য ডেকেছিস আমাকে যা ফোনে বলা যেতো না।
তন্নি তখন বললো আমি তো বলবোই। তার আগে তোর কথা শুনতে চাই।

তানিশা বুঝতে পারছে না কিছু।তন্নি এভাবে তাকে জোর করছে কেনো?তারপর আবার ভাবলো যখন তন্নি তাকে বলতে বলছেই তাহলে এই সুযোগে তার বলা উচিত।
তানিশা তখন তন্নির হাত ধরে বললো, তন্নি তুই তো তোর নোমান ভাইয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসিস কিন্তু তোর নোমান ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে?

তন্নি সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো তোর মনের মধ্যে কি এতোক্ষণ এই কথাটিই ঘুরপাক খাচ্ছে?
তানিশা তখন বললো আমি কিন্তু ফান করছি না।প্লিজ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
তন্নি তখন বললো হ্যাঁ ভালোবাসে।সেইজন্যই তো কাল মামা এনাউন্স করেই দিলো আমাদের বিয়ের।আর দেখলি না নোমান ভাইয়াও কিছু বললো না।

তানিশা তখন বললো, তুই তাহলে বুঝতে পারিস নি ব্যাপারটা।তোর নোমান ভাইয়া যে বললো তোকে উনি বোনের চোখে দেখেন।তোকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবে না সে।শুনিস নি এটা?
এই কথা শোনামাত্র তন্নির চোখ জলে ছলছল করতে লাগলো।সে তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,কিন্তু মামা তো এটাও বললো যে তিনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই শুনতে হবে নোমান ভাইয়াকে।মামার সিদ্ধান্তের বাহিরে নোমান ভাইয়া কিছুতেই যেতে পারবেন না।
তানিশা তখন বললো তাই বলে তুই ওনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করবি?এভাবে জোর করে বিয়ে করে তুই কিন্তু মোটেও শান্তি পাবি না।
তন্নি হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলো এতে তোর কি প্রবলেম?আমি জোর করে বিয়ে করছি না ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করছি?

তানিশা তন্নির এমন রাগান্বিত চেহারা থেকে থ হয়ে গেলো।তন্নিকে তো এখনো সে বলেই নি কিছু আর তাতেই সে যেরকম আচরণ করছে আর যদি সে সত্য টা শোনে তাহলে যে কি করবে ভাবতেই তানিশার শরীর শিউরে উঠলো।
তানিশা এবার তন্নিকে অন্য কৌশলে বলার চেষ্টা করলো।তানিশা তখন বললো তন্নি একটু বোঝার চেষ্টা কর।তোর নোমান ভাইয়া কিন্তু তোকে মোটেও ভালোবাসেন না।তিনি অন্য আরেকজন কে ভালোবাসেন।যদি তুই জানতে চাস উনি কাকে ভালোবাসেন আমি সেটা বলে দিতে পারি।কারণ আমি জানি সেটা।

তন্নি সেই কথা শুনে হঠাৎ একটা কার্ড বের করে বললো,নোমান ভাইয়া কাকে ভালোবাসে সেটা আমার দেখার বিষয় নয় এখন।ওনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে এটাই এখন বাস্তব।
তানিশা কার্ড টা হাতে নিয়ে তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো কিসের কার্ড এটা?
তন্নি তখন বললো খুলে দেখ কিসের কার্ড?
তানিশা সাহস করে খুলেই ফেললো কার্ডটা।সে স্পষ্ট দেখতে পেলো বর আর কনের জায়গায় নোমান আর তন্নির নাম লেখা।

হঠাৎ তন্নি কার্ড টা কেড়ে নিলো তানিশার থেকে।আর বললো,এই জন্যই ডেকেছিলাম তোকে।আর এটাই আমার সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা।নোমান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে। বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হচ্ছে এজন্য তোকে দাওয়াত দিতে পারলাম না।সরি।তাছাড়া তোর উপর আমাদের পরিবারের আর কোনো সদস্যের ইন্টারেস্ট নাই। সবাই ভীষণ মন খারাপ করেছে তোর উপর।মামা তো সেই লেভেলের রেগে আছেন,তিনি তো তোর মুখ আর কোনোদিনই দেখবেন না,অন্যদিকে আমান ভাইয়াও ভীষণ মন খারাপ করেছেন।তিনিও চান না তুই আর দ্বিতীয় বার আমাদের বাসায় আয়।আমাকেও সবাই বারণ করে দিয়েছে যেনো আমি তোর সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখি।তোর সাথে কোনো যোগাযোগ ও না করি।আমি এখন কি করতে পারি বল?পরিবারের কথা না শুনলে বাসায় আর কেউ ঢুকতে দেবে না আমাকে।সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই যখন চাচ্ছে আমরা আর দেখা না করি, আর কোনো যোগাযোগ ও না করি তাহলে সেটাই হবে।এটাই আমাদের শেষ দেখা।ভালো থাকিস।এই বলেই তন্নি চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো।সে আর এক সেকেন্ডও দেরী করলো না।

এদিকে তানিশা তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।তন্নির কথাবার্তা শুনে তো সে একদম বোবা হয়ে গেলো।তন্নি তাকে এসব কি শুনিয়ে গেলো?তানিশা আর এক পাও এগোতে পারলো না।সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পার্কের মধ্যেই পড়ে গেলো।কিন্তু পার্কের আশেপাশে রিশা আর লিরাও ছিলো।তারা সাথে সাথে রিক্সায় করে তানিশাকে হোষ্টেলে নিয়ে গেলো।
আসলে লিরা আর রিশা তানিশার কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলো না।তানিশাকে সারাক্ষণ এভাবে চিন্তিত দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিলো তন্নিকে জানাবে ব্যাপারটা।তন্নি আর তানিশা যেহেতু বেস্ট ফ্রেন্ড নিশ্চয় তন্নি বুঝতে পারবে ব্যাপারটা।যেহেতু নোমান নিজেও তানিশাকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে হিসেবে তানিশার সাথে নোমানের মিল হওয়াটা খুব জরুরি ।যেই ভাবা সেই কাজ।তারা কাল রাতেই তানিশা আর নোমানের মধ্যকার সম্পর্কের কথা বলে দেয় তন্নিকে।রিশা আর লিরা ভেবেছিলো তন্নি বুঝতে পারবে ব্যাপারটা আর সেজন্যই তানিশাকে ডেকেছিলো।কিন্তু তন্নি যে এতো স্বার্থপর একটা মেয়ে সত্যি তাদের জানা ছিলো না।

তন্নি কাল রিশা আর লিরাকে কিছু না বললেও আজ সে পরিষ্কার করে তানিশাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো যে সে নোমানকে কারো হতে দেবে না।নোমান তাকে পছন্দ করুক বা না করুক তবুও সে নোমানকেই বিয়ে করতে চায়।নোমানকে পাওয়ার জন্য তন্নি শেষ পর্যন্ত তানিশার সাথে তার এতোদিনের বন্ধুত্নের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেললো।তাকে স্পষ্ট করে বলে দিলো সে যেনো আর তাদের বাসায় না যায় এমনকি তাদের কারো সাথে কথাও না বলে।
রিশা আর লিরা ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।কারণ এখন পর্যন্ত তানিশার জ্ঞান ফেরে নি।তানিশা তন্নির কথা শুনে ভীষণ শকড পেয়েছে।সে ভাবতেও পারে নি তন্নি এইভাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলবে।
অবশেষে তানিশার জ্ঞান ফিরলো।তবে সে চোখ মেলে তাকাতেই তাড়াতাড়ি করে উঠতে ধরলো।কারণ সে যে তার বিছানায় শুয়ে আছে।কিভাবে সে তার রুমে আসলো কিছুই বুঝতে পারলো না তানিশা।তানিশাকে ওঠা দেখে লিরা আর রিশা বললো,উঠছিস কেনো?শুয়ে থাক।

তানিশা তা শুনে বললো, না আমি ঠিক আছি।তার আগে বল আমি কিভাবে এলাম এখানে?
লিরা আর রিশা চুপ করে রইলো।
তানিশা তখন বললো তোরাও পার্কে গিয়েছিলি?
–হুম।
–কেনো গিয়েছিলি?তানিশা চিৎকার করে বলতে লাগলো।

লিরা আর রিশা তখন তানিশাকে আবার শুইয়ে দিলো আর বললো, দোস্ত শান্ত হ।আমরা তোর কতটা আপন জানি না তবে তোর কষ্টে আমাদেরও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।যদি আমরা তোর মনের আশা পূরণ করে দিতে পারতাম তাহলে খুব ভালো লাগতো।প্লিজ দোস্ত বাস্তবতা বুঝতে শেখ। তুই ওই মেয়ের জন্য কতটা সেক্রিফাইজ করলি আর ও তোকে উলটো বাঁশ দিয়ে চলে গেলো।এখনো সময় আছে নোমানকে তুই সবটা পরিষ্কার করে বলে দে।তা না হলে কিন্তু আমরাই বলে দিবো নোমানকে।

তানিশা তখন রিশা আর লিরার হাত তার মাথায় রেখে বললো,দোহাই লাগে দোস্ত,এই কাজ কখনোই করবি না তোরা।ওদের কে ভালো থাকতে দে।তাছাড়া অনেক লেট হয়ে গেছে।ওদের বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে।এই সময়ে আমি কোনো অশান্তি চাই না।
লিরা তখন বললো কিন্তু নোমান নাকি তোকে ভালোবাসে তাহলে কি করে এই বিয়েটা সে করছে?এটা আবার কোন স্টাইলের ভালোবাসা?ও যদি মন থেকে ভালোবাসতো তোকে তাহলে কখনোই এভাবে বিয়েতে রাজি হতো না।অন্তত আরেকবার তোকে বলতে পারতো বা তার পরিবারকে জানাতো তোর কথা।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আমার কপালে মনে হয় এটাই লেখা ছিলো সেজন্য এরকম হলো আমার ভাগ্যটা।আচ্ছা তোরা বাদ দে এসব কথা এখন।ওদের জন্য দোয়া কর।আমিও ওদের জন্য অনেক অনেক দোয়া করবো।এই কথাগুলো বলতেই তানিশার চোখে জল এসে গেলো।সে হঠাৎ লিরাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো।তার চোখের পানি আজ কিছুতেই বাঁধ মানছে না।সে আজ ইচ্ছা মতো কেঁদে নিলো।তারপর নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনোই নোমানের কথা ভাববে না।নোমান যেহেতু এখন তন্নির হাজব্যান্ড সেহেতু নোমানকে নিয়ে ভাবাও এক ধরনের পাপ কাজ হবে।

রিশা আর লিরা মনে মনে ভাবতে লাগলো হায় রে তানিশা!বুকের মধ্যে কষ্ট জমা রেখে এইভাবে নিজেকে শান্ত্বনা দিচ্ছিস?তুই কি সত্যি নোমানকে ভুলতে পারবি?মনে তো হয় না পারবি।
আসলেই তানিশা এখন পর্যন্ত নোমানকে ভুলতে পারে নি।আজও রাতের পর রাত শুধু তার কথাই মনে হয় তানিশার।নোমানের হয় তো হয় না কিন্তু তানিশা আজও অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে।আজও সেই স্মৃতি তার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে।নোমান তাকে কতবার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছে আর তার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা শুনতে চেয়েছে।কিন্তু তানিশা শুধুমাত্র তন্নির কথা ভেবেই তার ভালোবাসাকে শেষ করে ফেলেছিলো সেদিন।

সেদিনের পর থেকে আর কোনোদিনই নোমান বা তন্নি দুইজনের একজনও তানিশার সাথে দেখা করে নি বা কল করে নি।অন্যদিকে তানিশাও নিজের থেকে কারো সাথে যোগাযোগ করে নি।তাদের সম্পর্কের ইতি এইভাবেই হয়ে যায়।
কে এখন কি অবস্থায় আছে কেউই সেটা জানে না।

পুরনো স্মৃতি মনে হতেই তানিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।সে এতোক্ষণ তার স্বপ্নের জগতে হারিয়ে গিয়েছিলো।
❝কি হলো ডাক্তার ম্যাডাম?কোন জগতে এভাবে হারিয়ে গেলেন?❞
সহকারী ডাক্তারের কথা শুনে তানিশা একদম চমকে উঠলো।সে ভুলেই গিয়েছিলো এখন তন্নির সিজার করা হবে।তন্নির চোখ বাধা ছিলো বিধায় সে তানিশাকে এখনো দেখে নি।
তানিশা সেজন্য তাড়াতাড়ি করে তন্নির অপারেশন শুরু করে দিলো।পুরো অপারেশন কম্পিলিট হতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগলো তার।

অপারেশনের পরপরই তন্নিকে অপারেশন কক্ষের বাইরে অন্য আরেকটা রুমে নিয়ে আসা হয়। এদিকে তন্নির হাজব্যান্ড ইকবাল তার মেয়েকে কোলে নিয়ে একের পর এক গল্প করতে লাগলো।সে ভীষণ খুশি।তবে তন্নির শাশুড়ির মন টা একটু খারাপ।তিনি বোধ হয় ছেলে বাচ্চা চেয়েছিলেন।তন্নির বড় মেয়েও ভীষণ খুশি ছোট বোনকে পেয়ে।আর বাচ্চাটা কি সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে!দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করবে সবার।

তন্নি সজাগই আছে। সেজন্য তার সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া মেয়েকে বুকের দুধ পান করানোর জন্য ইকবাল তন্নির পাশে রাখলো।তন্নিও ভীষণ খুশি মেয়েকে পেয়ে।ইকবাল খুশিতে তন্নির কপালে একটা কিস করলো। তন্নি তখন হেসে বললো,কি করছো সবার সামনে?ইকবাল তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো নিজেরই তো বউ।
ইকবাল আর তন্নিকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারা বেশ সুখে আছে।কি মিল দুইজনের মধ্যে!দুইজনের মুখেই সুখের হাসি!

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৭

তাহলে নোমান কোথায়?
তানিশা বুঝতে পারছে না কিছু।আর ইকবালের সাথেই বা তন্নির কিভাবে বিয়ে হলো?নোমানের সাথে কেনো তন্নির বিয়ে হলো না?তানিশা এসব প্রশ্নের উত্তর এখন কার থেকে শুনবে?

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ১৯