তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৩

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৩
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্যে ফারহানের স্ত্রীকে খুন করতে চাওয়ার মতো জঘন্য প্রচেষ্টা করেছে সানা। সানার প্রতি ঘৃনায় শরীরটা রি রি করে উঠছে ফারহানের। সানা দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ও চলে এসেছে। ফারহানের অভিযোগ শুনে পুলিশ তদন্তের জন্যে সানাকে নিয়ে যেতে চাইছে। সানার মা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, তার মেয়ে এতোটা ঘৃণ্য কাজ করতে পারে না,কিন্তু কেউ তার কথা শুনলো না।

সানা নির্বিকার হয়ে ফারহানকে দেখে যাচ্ছে একদৃষ্টিতে। সে দেখতে পারছে তার ভালোবাসার মানুষটির চোখে কতটা ঘৃণা শুধুমাত্র তারই জন্যে। ভালোবাসার মানুসষটির চোখে নিজের জন্যে ঘৃণা দেখতে পাওয়া কতটা যে বেদনাদায়ক তা হারে হারে উপলব্ধি করতে পারছে সানা। কয়েকজন মহিলা কন্সটেবল সানাকে ধরে নিয়ে যায়। সানাও প্রতিবাদ করেনা শুধুমাত্র চলে যাওয়ার আগে, আক্ষেপের সুরে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আজ না হয় কাল, আপনাকে আফসোসের মতো কঠিনতম গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে। ‘
ফারহান সানার কথাটি গুরুত্ব দেয় না। সানাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় অতিদ্রুত।

নিজের স্বামীকে ভালোবাসা কথাটি বলতে গিয়েও,একপ্রকার জড়তা কাজ করছে রিমির মাঝে। অয়ন হাত ভাজ করে, রিমির দিকে ঝুঁকে অধরের কোণে আলতো হাসি ফুটিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ এতো আয়োজনের উৎস তো কি রিমিপরী? আজকে কি স্পেশাল কিছু? ‘

রিমি তার শাড়ির আচলটা বার বার নাড়াতে থাকে। লজ্জায় লাল টুকটকে হয়ে উঠেছে তার স্নিগ্ধ মায়াবী মুখশ্রী। অয়ন নামক যুবক তার প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মায়াবী চেহারার প্রেমে আরেকদফা পড়ে যায়। হাত নাড়িয়ে রিমিকে ছুঁতে চাইলে, রিমি দূরে সরে আসে। নিঃশ্বাস ঘন ঘন হতে থাকে প্রতিক্ষনে, সেই নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিকই ঠাওর করতে পারছে অয়ন। রিমি নিজের মধ্যে ক্ষীন্ন সাহস জুগিয়ে অয়নের দিকে এগোতে এগোতে বলে,

‘ ভালোবাসা দুই ধরনের। নিজের ভালোবাসাকে পাখির মতো উড়তে দাও,নাহলে তাকে বন্দিনী করে আজীবন নিজের কাছে আকড়ে ধরে বাঁচো। ‘
অয়ন রিমির কথা শুনে, রিমির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই, রিমি পুনরায় মাথা নত করে বলে,

‘ আমি সবসময় চাইতাম পাখির মতো স্বাধীনতা নিয়ে উড়তে। আপনার অতিরিক্ত ভালোবাসা আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত ডক্টর এয়ারসি,কিন্তু একটা সময় আমি উপলব্ধি করি আপনার সমস্ত পাগলামো,সব তো আমাকেই ঘিড়ে। আমাকে হারানোর ভয় সবসময় আপনাকে তাড়া করে, তাইতো এতোটা পসিসিভ আপনি তো আমার জন্যেই হয়ে উঠেছেন, এবং একটা সত্যি কথা কি জানেন ডক্টর এয়ারসি? আপনার উম্মাদময় ভালোবাসার প্রেমেই আমি পড়ে গিয়েছি। ‘

অয়ন হতবাক হয়ে শ্রবণ করে যাচ্ছে রিমির প্রতিটা কথা।
রিমি তার কথা শেষে হাটু গেড়ে বসে পড়ে রিমি। অতঃপর টকটকে লাল গোলাপ টা বের করে, অয়নের সামনে ধরে নিয়ে খানিকটা ধীর কন্ঠে বললো,

‘ আপনি বলেছিলেন গোলাপের থেকে সুন্দর আমি, আজ আমি বলছি গোলাপের থেকেও অধিক সুন্দর আপনার বিশুদ্ধ ভালোবাসা। যে ভালোবাসা অন্যন্য, অন্যতম। ভালোবাসার সঠিক ব্যাখা আমার কাছে নেই তবে, আমার কাছে ভালোবাসা মানেই আপনি ডক্টর এয়ারসি। ভালোবাসি। ‘

রিমির ‘ ভালোবাসি ‘ শব্দটির সাথে মিশে ছিলো এক সুমদ্র আবেগ, এক সমুদ্র ভালোবাসা, এক সমুদ্র অনুভুতি। অয়ন কিছুক্ষন অনুভুতিশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নেত্রজোড়া তার অনিমেষ,পলকহীন। মুখস্রীতে ফুটে উঠেছে দাম্ভিকতা। রিমির মনে নাড়া দিয়ে উঠলো অদ্ভুদ ভয়। তবে কি অয়ন তার ভালোবাসা প্রত্যাখান করবে? রিমির ভয়ার্থ মুখশ্রী অয়নকে বড্ড তৃপ্তি দিচ্ছে। রিমির মুখে নিজের প্রতি ‘ভালোবাসি’ শব্দটি যেন অয়নকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দিচ্ছে। এই দিনটির অপেক্ষাতেই তো ছিলো অয়ন। অয়নকে আরেকদফা চমকে দিয়ে, রিমি হাটু গেড়েই কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

‘ ইউল ইউ মেরি মে এগেইন? ‘
অয়ন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার রিমিপরী তাকে বিয়ের প্রস্তাব নিজ থেকে দিচ্ছে। অয়ন রিমির থেকে ফুলখানা নিয়েই, রিমিকে পাজকোলে তুলে উচ্ছসিত হয়ে, অত্যাধিক আনন্দের সাথে রিমিকে কোলে তুলে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে,

‘ ইয়েস রিমিপরী! আই ইউল মেরি ইউ! ‘
রিমিও হেসে উঠে। অয়নের মুখে উপচে পড়ছে বিশ্বজয় করা আনন্দ। অয়নের আনন্দে রিমির চোখদুটোও ভরে উঠে। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে, সুইমিংপুলের পাশের সোফায় আলতো করে বসিয়ে দিয়। অতঃপর রিমির হাতে গভীরভাবে চুমু খেয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,

‘ থ্যাংকস রিমিপরী। আজকের দিনটা এতোটা স্পেশাল করে তুলে দেওয়ার জন্যে। ‘
‘ এর বদলে আমারোও তো গিফট পাওনা রয়ে যায়। আমার গিফট দিন এখন। ‘
কিছুটা মজের ছলে বলে রিমি। অয়ন কিছু একটা ভেবে,রিমির দিকে ঝুঁকে নেশাক্ত গলায় বলে,
‘ আমার রিমিপরী আমার কাছে চেয়েছি, আমাকে তো এখন দিতেই হবে। ‘

রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, অয়ন রিমিকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। অতঃপর রিমির অধরে গভীরভাবে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে, রিমিও শক্ত করে আকড়ে ধরে অয়নের ব্লেজার। চাঁদের আলোয় উজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশের। অয়ন খানিক্টা অবাধ্য হতে চাইলো, কাছে টেনে নিতে চাইলো নিজ স্ত্রীকে ঘনিষ্টভাবে। রিমি অয়নের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে,দ্রুত অয়নের থেকে দূরে সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অয়ন রিমির দিকে এগোতে এগোতে দুষ্টু হেসে বলে,

‘ আজকে তবে কি আমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারবে তুমি রিমিপরী?’
রিমি অয়নের থেকে পিছাতে পিছাতে বলে,
‘ এতো সহজে আপনাকে ধরা দিচ্ছি না আমি হু। ‘

কথাটি বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে রিমি। অয়নও হাসতে থাকে, তার রিমিপরীর মিষ্টি হাসিখানা। দূর থেকে অয়নের এবং রিমির এমন সুন্দর মুহুর্ত দেখে যাচ্ছিলো আমান। বুকটা যেন তার ফেঁটে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। রাতের আধারে নাইট ড্রিম গার্ডেনে নিজের অজান্তেই চলে এসেছিলো আমান। দূর থেকে অয়ন এবং রিমিকে দেখে সে থমকে যায় আমান। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। ঠোটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে, অবশেষে তার রিমিপাখিও ভালোবেসে ফেললো অয়ন চৌধুরীকে। আমানের অজান্তেই আরেকজনও ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে অয়ন এবং রিমিকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। সে আর কেউ নয় পায়েল। পায়েল দ্রুত বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।

সুমাইয়াকে সবেমাত্র অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়েছে। বাইরে থেকে বিখ্যাত ডক্টরদের আনানো হয়েছে সুমাইয়ার জন্যে। ফারহান বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে অনবরত। তার মনে শুধু এক্টাই ভয়, তার সুমাইয়ার জীবনে কোনপ্রকার ঝুঁকি হবে না তো? প্রায় পাঁচঘন্টা যাবত অপারেশন চললো। অপারেশন শেষে, ডক্টর হাসিমুখে বেড়িয়ে ফারহানের কাধে চাপড় মেরে বললেন,

‘ অভিনন্দন ফারহান চৌধুরী। অপারেশন সাকসেসফুল। ‘
কথাটি শুনে ফারহানের নেত্রপল্লবে জল চলে আসে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না, তার সুমাইয়া সুস্হ হয়ে উঠেছে, আগের মতো ফারহানের সাথে কথা বলবে, আগের মতো ভালোবাসবে। ফারহান হাটু গেড়ে বসে পড়ে, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায়। ডক্টর জানান, সুমাইয়াকে আপাতত কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার আগে তার জ্ঞান ফিরবে না।

অয়নকে একপ্রকার না জানিয়েই, ইশার অনুরোধে রিমি এবং ইশা বিয়ের কয়েকটি শাড়ি কেনাকাটা করতে শপিং এ এসেছে। রিমির কিছুটা ভয় করছে বটে, দেহরক্ষীকে না নিয়ে আসায় অয়ন যদি রাগ করে? তখন?
‘ রিমি সামনে চলো। সামনে অনেক গুলো শাড়ির কালেকশন আছে। ‘

রিমি চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে তার হাত কেউ ধরে ফেলে। রিমি পিছনে ঘুড়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ইশা এবং রিমির দিকে তাকিয়ে আছে। রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, রিমির হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে রিমিকে নিয়ে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে যায়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪২

[ রিচেক করি নাই তাই অনেক ভুল পাবেন?এক সপ্তাহ পর আমার এক্সাম অথচ আমাদের কালকে জানানো হয়। তার মধ্যে আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট?ফোন একদমই হাতে পাচ্ছি না। আমি বুঝতে পারছি না কেম্নে কি করবো।?]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৪