তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪২

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪২
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

‘ছেলেটি বিবাহিত জেনেও,তুই তাকে পাওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিস?লজ্জা করেনা তোর? এইভাবে আমার মুখ পুড়াতে চাস তুই?’

উক্ত কথাটি বলেই সানার মা সানার গালে কষে থাপ্পড় মেরে দিলেন। আজ যখন সানাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো, তখন সানা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে ফারহানকে ভালোবাসে।একদম কোনরকম জড়তা ছাড়াই সানা কথাটি বলেছিলো। কথাটি শুনে তরতর করে ঘামতে থাকে সানার মা। তার মেয়ে যে বিপথগামী হয়েছে তা তার বুঝতে মোটেও সময় লাগেনা। মায়ের থাপ্পড়ের বিপরীতে সানা ক্ষীন্ন হাসে শুধুমাত্র। কোনরুপ পতিক্রিয়া না করেই বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমি ফারহান স্যারকে ভালোবাসি। ভালোবাসা কোন অন্যায় নয় মা। ‘
মেয়ের নিলর্জ্জ কথায়, সানার মা সানাকে টেনে তুলে, দাপটতার সহিত বলেন,
‘ তুই কি জানতি না? ফারহান বিবাহিত? ‘
‘ জানতাম, কিন্তু হুট করেই শুনি তার স্ত্রী নাকি বেঁচে আছে।আমি মানতে পারছি না মা। কিছুতেই মানতে পারছি ফারহান স্যার অন্য কারো।’

‘ নির্লজ্জ মেয়ে-ছেলে। তোর কি কোন লজ্জা অবশিষ্ট নেই? আরেকটা কথা বললে তোকে আমি মেরেই ফেলবো সানা। তুই জানিস আমি ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ। আমি তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। তোকে এইবার বিয়েটা করতেই হবে। ‘
কথাটি বলে গটগট পায়ে বেড়িয়ে যায় সানার মা।

‘যতই বিয়ে ঠিক করো, আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না। আমি ফারহান স্যারকে ভালোবাসি। ‘
সানা মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ ফারহান স্যার শুধুমাত্র আমার। হ্যা হ্যা আমার। স্যারকে পাওয়ার জন্যে সুমাইয়াকে মেরে ফেলবো আমি। ‘
‘ তার মানে সেদিন হসপিটালে আপনি সুমাইয়াকে মারতে এসেছিলেন মিসেস সানা। ‘
সানা তাকিয়ে দেখে ফারহান রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিমির দেওয়ার চিরকুট টা পড়ে, আনমনে হাসে অয়ন। সযত্নে চিরকুট টা পকেটে ঢুকিয়ে, বাইরের দিকে চলে যায়। রিমি অয়নের দেওয়া মহিলা দেহরক্ষীদের সাথে গাড়িতে উঠছিলো,অয়নকে দেখে থেমে যায়। পার্সে থাকা মোবাইলটি বের করে, অয়নকে দ্রুত মেসেজ করে পাঠায়,

‘ আমি আপানার জন্যে অপেক্ষা করবো ডক্টর এয়ারসি। ‘
‘ যদি না আসি তবে? ‘
ঠাট্টা করে মেসেজ পাঠায় অয়ন। অয়নের মেসেজের বিপরীতে স্লান হেসে রিমি জবাব পাঠায়,
‘ তবুও আমি আপনার পথপানে চেয়ে শেষ রজনী অব্দি অপেক্ষা করে যাবো ডক্টর এয়ারসি। ‘

মেসেজটি পেয়ে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠে অয়নের। যদিও অয়ন জানেনা রিমি আসলে চাইছে টা কী, কিন্তু তবুও সে তার রিমিপরীর অনুরোধ রক্ষা করবে। অয়নের অধরের কোণে লেগে থাকা মিষ্টি হাসিটি প্রমান করে দেয়, সে আজ রাত আসবে, মনের কুঠিরে জমে থাকা সমস্ত অভিমানকে দূর করে অয়ন আসবে। অয়নকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, রিমি চোখের ইশারায় জানিয়ে দেয়,সে বাসায় যাচ্ছে। অয়ন হাত নাড়িয়ে রিমিকে হাসিমুখে বিদায় জানায়। গাড়ি চলতে শুরু করে, রিমি গাড়িতে বসে ভাবতে থাকে, আজ তার সারপ্রাইজটি পেয়ে অয়নের পতিক্রিয়া কেমন হবে?

ফারহানকে এই মুহুর্তে নিজ কক্ষে উপস্হিত দেখে বেশ বিম্মিত হয়ে যায় সানা। সানা আমতা আমতা করে আওড়াতে থাকে,
‘ স্যা…র আপ..নি এই মুহুর্তে? ‘
ফারহান চোয়াল শক্ত করে আগুন্দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সানার দিকে এগোতে এগোতে বলে,

‘ সেদিন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম বিধায়, নিজের ভিতরে বেশ অনুশোচনা হতে লাগলো আমার। ভালোবাসা কোন অন্যায় কিন্তু অন্যায় হচ্ছে সে অন্যকারো জেনেও তাকে ক্রমাগত পাওয়ার জন্যে পসেসিভ হয়ে যাওয়া। আজকে এখানে না এলে তো জানতামই না আপনি একজন খুনি! ‘
‘খুনি ‘ শব্দটি কাটার মতো বিঁধে যায় সানার সর্বাঙ্গে। হ্যা সে চায় সুমাইয়াকে মেরে ফেলতে, কিন্তু সে তো খুন করেনি। তাহলে তাকে খুনি অপবাদ দিচ্ছে কেন ফারহান?

‘ আপনি সুমাইয়াকে নিজের পথের থেকে সরিয়ে ফেলার জন্যে, সেদিন হসপিটালে গিয়েছিলেন তাইনা? আমি ভাগ্যক্রমে চলে আসায় আপনি পালিয়ে যান। ‘
সানা ভয়ে থরথর করে কাপতে কাপতে বলে,
‘ হ্যা স্যার। আমি সুমাইয়াকে মারতে চাই,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি সেদিন হসপিটালে যাইনি। আমি তো বাসা থেকেই বের হয় না এক সপ্তাহ ধরে। ‘

‘ জাস্ট সাট আপ মিস সানা। ‘
ফারহানের বজ্রে কন্ঠে বলে উঠা ধমকে থেমে গেলো সানা। নেত্রপল্লবে অবাধ্যের ন্যায় অশ্রু গড়াতে লাগলো। ফারহানের চিৎকার শুনে, সানার মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন। ফারহানকে দেখে প্রশ্ন করে বসেন,
‘ বাবা তুমি? তুমি এখানে কেন? ‘

ফারহান জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। রাগে কপালের মাঝবরাবর বেশ বড়সর ভাজ পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। ফারহান সানার মায়ের দিকে তাকিয়ে, সানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আপনার মেয়ে আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়িয়েছে,কিন্তু আপনার মেয়ে জানেনা ফারহান চৌধুরীর ভালোবাসার দিকে হাত বাড়ানোর পরিনতি কতটা কঠিনতম। ‘
কথাটি বলেই পুলিশের নাম্বারে ডায়াল করে, ফোন দেয় ফারহান। সানা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটিই তাকে বিশ্বাস করছে না। কত সহজে ‘খুনির’ তকমা লাগিয়ে দিলো।

অয়ন গাড়ি পার্ক করে ড্রিম নাইট গাডেনের সামনে। একদম যথেষ্ট স্টাইল নিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে সে। পড়নে তার সাদা শার্ট তার সাথে ব্লাক ব্লেজার। ঘন সিল্কি চুলগুলো এক হাত দিয়ে নাড়িয়ে, অপর হাত দিয়ে সানগ্লাস টা বের করে পড়ে নিলো অয়ন। অতঃপর সামনের দিকে এগোতে থাকে। পুরো গাডেনের চারদিকে ঘোর অন্ধকার। কারো কোন সাডা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশেই দেহরক্ষীরা দাঁড়িয়ে ছিলো। দেহরক্ষীদের কাছে গিয়ে গম্ভীর সুরে অয়ন প্রশ্ন করে,

‘ রিমিপরী কোথায়? ‘
দেহরক্ষীরা জানিয়েছে, রিমির তাদের সাথেই গাডেনে প্রবেশ করলোও, বাকিটুকু পথ রিমি একাই কোথায় যেন চলে গেছে। অয়ন ফোন বের করে রিমিকে ফোন করে যাচ্ছে, কিন্তু রিসিভ করছে না। অয়নের মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে, তার রিমিপরী কোথায়? গাডেনে কোথায় দেখা যাচ্ছে না কেন? তবে কি তার রিমিপরীর কোন বিপদ হলো? অয়নকে চিন্তিত দেখে,একজন দেহরক্ষী এগিয়ে এসে বললেন,

‘ স্যার! ম্যাম বোধহয় ভিতরে আছেন। আপনি আরেকটু ভিতরে যান। ‘
দেহরক্ষীর কথায় অয়ন ভিতরের দিকে যায়। সামনেই দেখতে পায় সুবিশাল সুইমিংপুল। চাঁদের আলো এসে সুইমিংপুলটাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এখানে অন্ধকার নয়, বরং চারদিকে ক্যান্ডিলের আলোয় পরিপূর্ন আলোকিত হয়ে রয়েছে। চারপাশে ছোট ছোট টেবিলে ছড়িয়ে আছে। সাদা পর্দায় মুড়িয়ে আছে টেবিলের উপরটা।

সবমিলিয়ে অসাধারণ এক পরিবেশ। অয়ন মুগ্ধ হয়ে, চারপাশের পরিবেশ এক পলক তাকিয়ে, রিমিকে হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে,কিন্তু রিমির সাড়া নেই। সামনের দিকে এগোতে নিলে, পাশেই ছোট্ট সাদা টেবিলে রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো এক চিরকুট পায় অয়ন। তাতে লেখা,

‘ আরেকটু এগিয়ে আসুন ডক্টর এয়ারসি। ‘
চিরকুট টা পড়ে সামনের দিকে এগোতেই, থমকে যায় অয়ন।
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম

সুইমিংপুলের পাশে ছোট্ট সাদা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে, রিমি বেলি ফুলের গাজরা নিজের খোপায় পড়ছিলো এবং উক্ত গানটি গাইছিলো। অয়ন এগিয়ে এসে, পিছন থেকে রিমির খোপায় আলতো করে ভালো করে গাজরাটি লাগিয়ে দিতে দিতে গাইতে থাকে,

ভালোবেসে আমি বারে বার
তোমারি ওই মনে হারাবো
এ জীবনে আমি যে তোমার
মরনেও তোমারি রবো
তুমি ভুলোনা আমার নাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।

গানটি গেঁয়ে অয়ন রিমিকে নিজের দিকে ঘুড়ায়। রিমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। অয়ন প্রতিদিনের তুলনায় আজ খানিকটা দ্বিগুনভাবে ভালোবাসাড সহিত তার রিমিপরীকে দেখছে। রিমির পড়নে কালো সুতির শাড়ি। গাঁয়ে হাল্কা গয়না। মুখে নেই কোন আলাদা সাঁজ। ফর্সা মুখশ্রীর আখিঁজোড়া জায়গায় করে নিয়েছে ঘন কালো কাজল। তাতেই কি স্নিগ্ধ লাগছে অয়নের রিমিপরীকে। অয়ন রিমির হাত ধরে মুগ্ধতা নিয়ে বলে,

‘ ওহে মায়াবতী কন্যা, তোমার আখিজোড়ায় কাজল দিও না। আমার বড্ড মায়া হয়। তোমার কাজল কালো আখিজোড়ার মায়াতে মরে যেতে ইচ্ছে করে বারংবার, প্রতিনিয়ত। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪১

[ভ্যকসিন দিয়ে হাতের অবস্হা যেমন খারাপ, তেমন জ্বরে ভুগছি আমি?সবাই এই অসুস্হ লেখিকাটার জন্যে দোয়া করবেন। পারলে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য প্রেরণ করবেন?]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৩

1 COMMENT

  1. Outstanding ekta story. Ami bora bori e story pagol vishon valo laghe story porte. Thank you so much eto sondor eka story gift dewar jonno?❤??

Comments are closed.