তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪১

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪১
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

অয়ন পরিস্হিতি বেগতিক দেখে,রিমিকে পাজকোলে তুলে নেয় সকলের সামনে। রিমি হাত-পা নাডাচড়া করে যাচ্ছে অনাবরত। হাতে থাকা ফুলদানিখানা ইশার দিকে তাক করে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে থাকে,
‘ ছাড়ুন আমাকে! শাকচুন্নির মাথা আমি আজ ফাটিয়েই দিবো। শাকচুন্নিটার কত্ত বড় সাহস। ‘

ইশা রুহানা চৌধুরী পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে। বেশ ভয় গিয়েছিলো সে। মেয়েটা যে পাগলের মতো তাড়া করে উঠেছিলো, আরেকটু হলেই বোধহয় মাথা ফাটিয়ে দিতো। রুজা চৌধুরী কোমরের ব্যাথায় বসে থাকে। আর্তনাদের সুরে চেচেয়ি উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ মাগো! মরে গেলাম রে বাবা।কেউ আমাকে ধরো। এই মেয়েকে সত্যি জিনে ধরেছে। ‘
রুজা চৌধুরীর আর্তনাদে কিছু সার্ভেন্ট মিলে রুজা চৌধুরীকে ধরে পাশে থাকা সোফায় বসায়। রুজা চৌধুরী গলা এবং কোমড়ে বেশ ব্যাথা৷ নড়ার শক্তিটুকুও তার শরীরে অবশিষ্ট নেই। কোমড়ে হাত রেখেই বিড়বিড় সুরে আওড়াতে থাকে,
‘ সাইকো ফ্যামেলি হয়ে গেছে। জামাই -বউ দুটোই পাগল। একজনের জন্যে গলার অবস্হা খারাপ, আরেকটার জন্যে কোমরটাও শেষ হলো আমার। মাগো!’

অয়ন রিমিকে কোলে করে, সোফায় বসিয়ে দেয়। রিমি রাগে ফুশফুশ আওয়াজ বের করে, রুজা চৌধুরীর দিকে তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ আমাকে জিনে ধরেছে? জিনে ধরেছি তো ওই ইশা শাকচুন্নিকে। কোন ওঝা লাগবে না। আমিই ঝাড়ু দিয়ে ওর মাথা থেকে আমার জামাইয়ের ভূত বের করে দিবো। ‘

রিমি কথাটি বলেই পাশে থাক ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে ইশার দিকে তেড়ে যায়। রুহানা চৌধুরী হতবাক হয়ে থাকেন, তিনি বুঝতে পারছেন না আদোও হচ্ছে টা কী বাড়িতে।
‘ মাগো ‘ বলে ইশা পুনরায় দৌড়াতে দৌড়াতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
‘ অয়ন তোর বউ পাগল হয়ে গেছে। প্লিয সামলা ওকে। ‘

‘ হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। এই সাইকো লোকটার সাথে থাকতে থাকতে আমিও সাইকো হয়ে গিয়েছে। ‘
কথাটি বলে রিমি দৌড়াতে নিলে, অয়ন রিমিকে শক্ত করে চেপে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে, রিমির হাত থেকে ঝাড়ুটা ফেলে দিয়ে, শান্ত গলায় বলে,

‘ কুল ডাউন রিমিপরী। তুমি তো এতোটা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেন? তুমিতো আমাকে ভালোবাসো না তাহলে শুধু শুধু এতো কিসের জেলাসি তোমার? আমার দিকে ইশা নজর দিলেও বা কি তোমার? ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

অয়নের প্রশ্নে রিমি কিছুক্ষন ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়নও কি বুঝেও বুঝতে পারেনা? তার মনে থাকা সিপ্ত সুন্দর এক অনুভুতি বিদ্যমান রয়েছে অয়নের প্রতি,যার মাত্রা অধিকতর তীব্র। অয়ন জানে রিমির তাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে,অফুরন্ত ভালোবাসা বলে যাকে,যা আজকের কান্ডে একদম পরিষ্কার, কিন্তু অয়ন চেয়েছিলো রিমির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি শ্রবণ করবে। কিন্তু তা বোধহয় সম্ভব নয়। রিমির থেকে কোনপ্রকার না উত্তর পেয়ে, রাগের মাথায় কাচের টেবিলটা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। রিমির বাহু চেপে ধরে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠে,

‘ কেন বলো না ভালোবাসি? কেন? আমি কি এতোটাই খারাপ যে, ভালোবাসি শব্দটি আমি ডিসার্ভ করতে পারিনা। আমাকে কি ভালোবাসা যায় না রিমিপরী? ‘
রিমি নিষ্চুপ।অয়ন গম্ভীর মুখে চলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ইশা হতাশ পানে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশা ভেবেছিলো তার কর্মকান্ডে পসেসিভ হয়ে রিমি অয়নকে ভালোবাসি কথাটি বলে দিবে। অয়নের মুখে বিদেশে থাকতেই ইশা শুনেছিলো রিমির কথা। রিমির সম্পর্কে দেশে এসে মোটামোটি ধারণা নিয়েছিলো ইশা। ইশা রিমির আচরণ লক্ষ্য করে বুঝতে পারে রিমি অয়নকে ভালোবাসে, কিন্তু তা প্রকাশ করেনা।

তাই ইশার বুদ্ধি অনুযায়ী, ইশা এবং অয়ন ঠিক করেছিলো রিমিকে জেলাস করিয়ে রিমির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি বের করিয়ে ছাড়বে কিন্তু তারা ব্যর্থ। রিমি খানিক্ষন চুপ থেকে, আনমনেই গেঁয়ে উঠে,

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রঙ দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
অয়ন দাঁড়িয়ে যায়। রিমির গান শুনে পিছনে ঘুড়ে যায় দ্রুত। রিমি অয়নের আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে গাইতে থাকে,
হ্যাঁ, প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই

সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে, ও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
আর দু’টি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও তোমাকে

অয়ন মুগ্ধ হয়,রিমির গান শুনে। রিমির গানে প্রতিটি লাইনে রয়েছে অয়নের প্রতি একরাশ ভালোলাগা, ভালোবাসার সিক্ত অনুভুতি। অয়নের মুখস্রী দেখে তার ভিতরের অবস্হা বুঝে উঠার সাধ্যি নেই। অয়ন পুনরায় গম্ভীর মুখে উপরে চলে যায়। রিমি অসহায় পানে তাকিয়ে থাকে অয়নের যাওয়ার পানে। ইশা রিমির কাছে ধীর পায়ে হেটে এসে প্রশ্ন করে,

‘ দেখতে পারছো? তোমার মুখে ভালোবাসি ডাকটি শুনার জন্যে কতটা বেকুল হয়ে উঠেছে অয়ন, তুমি যে অয়নকে ভালোবাসো তা তোমার প্রতিটি গানে স্পষ্ট। তাহলে ভালোবাসি বলে দিতে দ্বিধা কিসের? ‘
‘ ভালোবাসি কথাটি বলার চেয়ে তা অনুভব করানোর মাঝে আলাদা এক সুখ লুকিয়ে রয়েছে। ‘
কথাটি বলে রিমি সামান্য মুচকি হাসে,যে হাসির অর্থ বুঝতে পারেনা ইশা।

ফারহান সুমাইয়ার কেবিনে সামনে পায়চারী করে যাচ্ছে অনাবরত। সুমাইয়াকে কে বা কারা মারতে চাইছে? মেয়েটাই বা কে? নানা প্রশ্ন ফারহানের মাথায় ঝটলা পাকাচ্ছে। ফারহান আজকের ঘটনার মধ্য দিয়ে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে সুমাইয়াকে যারা মারতে চেয়েছিলো তারা ইতিপূর্বে জেনে গিয়েছে সুমাইয়া বেঁচে আছে। যার কারণে সুমাইয়ার জীবনের বেশ ঝুঁকি রয়েছে, তাই ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের সামনে কঠোর পাহারা বসিয়েছে। সুমাইয়ার কেবিনের বাইরে এসে, ডক্টর দেখতে পায় ফারহান চিন্তিত মুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ডক্টর এগিয়ে এসে ফারহানের কাধে হাত রাখে। অতঃপর দৃঢ় কন্ঠে আস্বস্ত দিয়ে বলে,

‘ তুমি চিন্তা করো না ফারহান। আগের মতে ভুল হবেনা পুনরায়। ‘
ফারহান কিছুক্ষন চুপ থাকলো। অতঃপর কঠোর গলায় বললো,
‘ দ্বিতীয়বার ভুল আমি হতে দিবোও না। কালকের মধ্যে সুমাইয়ার অপারেশন এর ব্যবস্হা করুন।’
‘ কালকেই? ‘

‘ হ্যা কালকেই। আপনি ডক্টরদের কাল সন্ধ্যার মধ্যে আসতে বলুন। ‘
‘ দেখো ফারহান এতে কিন্তু সুমাইয়া জীবনের রিস্ক আছে। ‘
‘ বড় কোন সাফল্য পেতে হলে, মাঝে মাঝে বড় বড় ঝুঁকির মোকাবেলা করতে হয় ডক্টর। ‘

ফারহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে ডক্টর ফারহানের কাঁধে চাপড় মেরে চলে যায়। ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। সুমাইয়া শুয়ে ছিলো। ফারহান সুমাইয়ার হাতখানা ধরে আলতোভাবে চুমু খেয়ে, সুমাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে, সিক্ত কন্ঠে বলে,
‘ তুমি সুস্হ হয়ে উঠবে সুমাইয়া। তোমার ফারহান থাকতে কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। ‘

রিমি ফাঁকা ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করছে, তার সামনে বরাবর অয়ন দাঁড়িয়ে লেকচার দিচ্ছে। অয়নের আদেশ অনুযায়ী রিমিকে একাই ক্লাস করতে হয়, যদিও কালকে থেকে অয়ন বেশ দূরত্ব নিয়ে আছে রিমির থেকে। ঠিকমতো কথাও বলে না। সবকিছুই অভিমান, কিন্তু অয়ন কি বুঝেনা? অয়নের কঠোর অভিমান রিমির ভিতরটাকে ছাড়খাড় করে দেয় প্রতিনিয়ত, তা কি বুঝে অয়ন? অয়ন লেকচারের মাঝে খেয়াল করছে রিমি তাকে আড়চোখে দেখছে। অয়ন গলা খাকারি দিয়ে, রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪০

‘ আপনাকে কয়েকটা নোটস দিয়েছিলাম। আপনার নোটস গুলো হয়েছে মিসেস চৌধুরী? ‘
অয়নের মুখে ‘ আপনি ‘ ডাকটি শুনে বিস্মিত হয়ে যায় রিমি। অয়নের অভিমান কতটা তীব্র তা অয়নের আপনি ডাক শুনেই বুঝা যায়। রিমি উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের হাতে নোটস গুলো দিয়ে, চোখ মেরে মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়। অয়ন রিমির কান্ডে হা হয়ে, বসে নোটসগুলো দেখতে গিয়ে খেয়াল করে,নোটস এর ভিতরে লেখা,
‘ ডেয়ার সাইকো বর, আজ রাত ১০টায় ড্রিম নাইট গাডেনে চলে আসিয়েন।’

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪২