প্রণয় বিরহ পর্ব ২০

প্রণয় বিরহ পর্ব ২০
অর্ষা আওরাত

বাড়িতে ফিরেই নিজের রুমে গেলাম সবার আগে ফ্রেশ হতে। রুমে প্রবেশ করা মাত্রই আমার জানলার দিকে নজর পড়তেই দেখতে পেলাম বৃষ্টি আপুকে বসা! আমি চট জলদি আপুর কাছে গিয়ে বসলাম। আপুকে কেমন আগের ন্যায় স্বাভাবিকই দেখাচ্ছে! কিন্তু একটু আগেও তো আপু নিজের রুমে ছিলো দরজা বন্ধ করে। এই কিছুক্ষণের ভিতর কি এমন হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না! আমি কিছু জিগেস করবো আপুকে আপু এর আগে নিজেই বলতে লাগলো,

–“এরকম ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
-“তুমি এভাবে? আমার রুমে এসেছিলো কখন আর কিছু খেয়েছো?”
বৃষ্টি আপু মুখে হাসির রেখা টেনে এনে বললো,
-“হ্যাঁ একটু আগেই ঘুম থেকে ওঠে খাওয়া শেষ করেই তোর রুমে এসেছিলাম তোর সঙ্গে গল্প করবো বলে কিন্তু রুমে এসে দেখলাম তুই নেই তাই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“তুমি এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছো কি করে? একটু আগেও তো দরজা বন্ধ রেখেছিলে।”
বৃষ্টি আপু বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে তার হাত দুটো আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে ওঠলেন,
-“যা হবার তা তো হবেই। তুই বা আমি তো আর আটকাতে পারবো না! তার চেয়ে বরং যে ক’টা দিন এখানে আছি একটু হাসিখুশি থাকতে চাই। মন খারাপ করেই বা কি হবে? মন খারাপ করলে যদি নয়ন কে পাওয়া যেতো তাহলে না হয় একটা কথা ছিলো কিন্তু নয়ন আমার ভাগ্যে নেই। তাই যা আছে তাইই চুপচাপ মেনে নেওয়া ভালো।”

আপুর সকল কথা গুলো আমি এতোক্ষণ মনোযোগ সহকারেই শুনছিলাম। সবশেষে বুঝলাম আপু চুপচাপ প্রকৃতির হলেও যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে এর থেকে এক চুলও নড়বে না। আমারো কোনো কিছুর বলার মুখ নিয়ে আর। বলবো কাকে নিয়ে নয়ন ভাইয়াই তো উধাও! তার চেয়ে ভালো আপু যখন নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলছে সেটাতে আমার সায় দেওয়া। প্রসঙ্গ পাল্টাতে আপুকে একটু আগের ঘটে যাওয়া সমস্ত কথা বললাম। ভেঙে বলিনি শুধু বুঝিয়েছি প্রিমার এই বাড়িতে আসার উদ্দেশ্য আছে সেই ব্যাপারে আমি ১০০%। আমার কথা শুনে আপু বলে ওঠলো,

-“প্রিমা দিনদিন ভয়ানক না হয়ে ওঠে! তুই এক কাজ কর ওর থেকে দূরে দূরে থাকিস সেটাই ভালো হবে।”
আপুর কথায় পাত্তা না দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে একটু গল্প গুজব করে বিকেল কাটিয়ে সন্ধ্যা করে দিলাম। নিচে ড্রয়িং রুমে বসে বসে চা খাচ্ছিলাম ঠিক তখনি আগমন ঘটলো প্রিমা আপুর! এবার যেনো তার পোষাকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে!

এবার শর্ট একটি ড্রেস পড়েছে একদম হাঁটু অব্দি দেখা যাচ্ছে! এই ড্রেসের কি ছিড়ি এক হাতা ফুল তো আরেক হাতা নেই! চুলগুলো পাগলের মতন স্টাইল করে বেঁধেছে কিসব ঝুটি করে পেচিয়ে পেচিয়ে! হাতে পার্স আর ফোন এই বিচ্ছিরি মার্কা লুক নিয়ে তিনি সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে হেঁটে নিচে নেমে আসছে! তাকে দেখে এমনিতেই বিকেলের ঘটনা মনে পড়তেই মনে হচ্ছে ঠাটিয়ে দু’টো চ*ড় মেরে দিই গিয়ে! উপস্থিত সকলের চক্ষু চড়কগাছ এই পোষাকে দেখে তাকে!

ঝেঠু তো লজ্জায় ড্রয়িং রুম থেকে উপরেই চলে গেলেন কিন্তু এই বে*শ*রম মহিলার তো ল*জ্জা শর*ম কিছুই নেই! ইহাদ ভাইয়াও ড্রয়িং রুমেই ছিলেন তারও নয়নযুগল বেশ থমকে গেছে তার প্রিয়তম স্ত্রীকে দেখে! ঝেঠিমা বলে ওঠলেন প্রিমা আপুকে,

–“তুমি এসব কি ড্রেস পড়েছো! এগুলো কি কোনো ভদ্র বাড়ির বউয়ের ড্রেসের কাতারে পড়ে আদৌ? আর তুমি কিনা এসব পড়ে বাহিরে যাবার জন্য অগ্রসর হচ্ছো!”
প্রিমা আপুর বোধহয় ঝেঠিমার কথা পছন্দ হয়নি। সেটা তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো স্পষ্ট। তিনি ও পাল্টা জবাবা দিলেন,

–“এটা খারাপের কি দেখলেন আপনি? এটা ওয়ের্স্টান ড্রেস এ যুগে হর হামেশা এগুলো সবাই পড়তেই পারে। আপনি কোন যুগে পড়ে আছেন যে এখনো ভাবছেন আমি ওই শাড়ি কাপড় পড়ে মাথায় ঘোমটা টেনে থাকবো সিরিয়াসলি? এটা আধুনিক যুগ বুঝলেন? আপনার ধ্যান ধারনা এখানে ম্যাচিং করবে না!”

এই প্রিমার কথা শুনে আমার, মা, কাকীমা, কাকা, সকলের মুখ হা হয়ে গেছে একেবারে! আমাদের এই জয়েন ফ্যামিলিতে মূল কর্তা আর কর্ত্রী হলো আমার ঝেঠু ঝেঠিমা আর এই প্রিমা দু’দিন এসেই তাদের এভাবে অপমান করছে! ঝেঠিমা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে ইহাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর ইহাদ ভাইয়া রাগান্বিত স্বরে প্রিমাকে বলে ওঠলো,

-“প্রিমা মুখ সামলে কথা বলো! তুমি কি ভুলে যাচ্ছো কার সাথে কি বলছো? আর মা কি এমন ভুল করেছে যে তুমি মা’কে এতোগুলো কথা শোনাতে এসেছো? চারদিকে চোখ মেলে দেখো আর পাঁচটা বিবাহিত নারী কীভাবে চলাফেরা করে। সেক্ষেত্রে তুমি কি করছো? এসব ড্রেস পড়ে বাহিরে যাচ্ছো? নুন্যতম লজ্জাও কি নেই তোমার মধ্যে?”
ইহাদ ভাইয়ার কথা শেষ না হতেই প্রিমা আপু পাল্টা জবাব দিলো,

-“ইহাদ চুপ করো তুমি! আমি কি এমন খারাপ ড্রেস পড়েছি? এটা যথেষ্ঠ শালীন! আর তোমার মা’কেও আমি কিছু ভুল বলিনি। ওনি চাচ্ছেন আমি এখন ওনার মতন সারাজীবন রান্না ঘরেই কাটিয়ে দিই। আরে জীবন তো একটাই সেখানে ইনজয় করবে শুধু। এসব ধ্যান ধারনা নিয়ে আমি বসে থাকতে পারবো না। আর হ্যাঁ এতঁ কথা বলতে পারবো না আমি অলরেডি আটটা বেজে যাচ্ছে আমার জন্য সবাই ওয়েট করছে আমি পার্টিতে যাবো এখন। আমাকে লেট করিয়ে তোমার আর তোমার মায়ের ফালতু লেকচার শুনিয়ে লাভ নেই!”

–“তুমি পার্টিতে যাবে তাও এসব ড্রেস পড়ে! আর তুমি ফালতু বলছো আমার মা’কে আর আমাকেও! তোমার সাহস তো খুব বাড়ছে দিনদিন। তোমার কোথাও যেতে হবে না মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ঘরে যাও চুপচাপ।”
ইহাদ ভাইয়ার কথা প্রিমা আপু কিছুতেই শুনবে না সেটা আর কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝেছি। আমার ধারনা সঠিক প্রমান করে দিয়েই প্রিমা আপু বললো,

–“সিরিয়াসলি ইহাদ? তোমার আমাকে কি মনে হয় বলোতো? আগের বার আমি তোমার মন রাখতে স্যরি বলেছি কিন্তু এবার আমি তোমার মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাইবো! তাও যদি কোনো ভুল করতাম আমি। না করেছি কোনো ভুল আর না করেছি কোনো কিছু তা সত্বেও আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এটা আমি কোনোদিনই করতে পারবো না। না মানে না-ই থাকবে।”

আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিমা আপু ড্রয়িং রুম থেকে সোজা বাহিরে চলে গেলেন! সবাই তার যাবার পানে তাকিয়ে আছে নিরশ ভঙ্গিতে! ইহাদ ভাইয়া কতোবার পিছু ডাকলো কিন্তু প্রিমা তাতে বিন্দুপরিমান ও কর্নপাত না করে নিজ গন্তব্য স্থলে চলে গেলো! ইহাদ ভাইয়া করুন দৃষ্টিতে ঝেঠিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“মা আমি হাতজোর করে ক্ষমা চাইছি তুমি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
ঝেঠিমা বললো,

-“বিয়ের দেড় মাস না গড়াতেই এই অবস্থা যদি হয় তাহলে বাকি জীবন কীভাবে কি হবে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে! তোমার ভালোবেসে বিয়ের করুন পরিনতি তোমার সামনে আগত আর হ্যাঁ তার জন্য প্রস্তুত হয়ে থেকো। নিজের পায়ে কুড়োল তুমি নিজেই মেরেছো। এখানে আমাদের কারোর কিচ্ছু এসে যাবে না। তোমাকে সেদিনই বলেছিলাম প্রিমা সুবিধার নয় তুমি বলেছিলে তুমি তাকে মানিয়ে নিবে ঠিক। গৃহিণী করে তুলবে কিন্তু দেখো এখন কি হচ্ছে আর ভবিষ্যতে কি হয়!”
ঝেঠিমা উপরে চলে গেলেন। একে একে সবাই ড্রয়িং রুম থেকে প্রস্থান করলেন। আমিও চলে গেলাম। একরা দাঁড়িয়ে রইলো শুধু ইহাদ ভাইয়া! কিছুই করার নেই এখানে কারোর ঝেঠিমা ঠিকই বলেছে সে নিজের পায়ে কুড়োল নিজেই মেরেছে

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৯

#বিঃদ্রঃ- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ ২৩ নাম্বার পর্বটা একটু স্পেশাল পর্ব থাকবে। যার ফলে এখন একটু প্রিমার কাহিনীটা বেশি আসবে। আমি সময়মতনই প্রিমার কাহিনী আস্তে আস্তে তুলে ধরতাম কিন্তু পাঠকদের আগ্রহ থাকছে না তেমন তাই জুঁইকে নিয়ে স্পেশাল পর্ব খুব শ্রীঘই আসবে। আর হ্যাঁ এতে সেহেরিশকে দেখতে পাবেন তবে একটু কম।

প্রণয় বিরহ পর্ব ২১