প্রণয় বিরহ পর্ব ২১

প্রণয় বিরহ পর্ব ২১
অর্ষা আওরাত

রাত্রি এখন মধ্যপ্রহরে। ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে জানান দিচ্ছে বার একটা বাজে এখন। চারিদিকে সবাই গভীর ঘুমে। নিকষ কালো অন্ধকার হয়ে আছে পুরো বাড়িতে একটুও আলোর রেখে নেই চারিদিকে। অন্ধকারের মাত্রা এতোই তীব্র যে নিজের হাতের ছায়াও দেখা যাচ্ছে না!

রুমের লাইট অন না করে টর্চ লাইটের সাহায্য বিছানা থেকে ওঠলাম। পানি পিপাসা লাগতেই ঘুম ভেঙে যায় একটু আগে। সামনে টেবিলের জগে একটুও পানির ছিটেফোঁটা ও নেই মানে একদম শুন্য জগ! কিন্তু পানির পিপাসা যখন পেয়েছে তখন পানি না খাওয়া অব্দি আমার ঘুম আসবে না। সেই উদ্যোগেই নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই আমি। ইহাদ ভাইয়ার রুম ক্রস করে সিঁড়ির কাছে যাবো ঠিক তখনি কানে ভেসে আসে কারো কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর কন্ঠস্বর টা যে প্রিমা আপুরই তা বুঝতে আমার বাকি রইলো না! আমিও এবার এই বি’চ্ছি’রি মহিলার পর্দা ফাঁস করেই ছাড়বো! সে জন্যই পা টিপে টিপে হাতে থাকা টর্চ বন্ধ করে ঘর থেকে চুপিসারে ফোনটা নিয়ে অডিও রের্কডিংটা চালু করে দিলাম!

এই অন্ধকারে ভিডিও করলে কোনো কিছুই দেখা যাবে না তার চেয়ে ভালো এই অডিও রের্কডিংটাই। সিঁড়ির একটু কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে রেখে ফোন ধরে রেখেছি আর কান পেতে শোনার চেষ্টা করছি মহিলা কি বলে,
–“দেখো তানভীর আজকে বাড়ির সবাই-ই আমার প্রতি একটু ক্ষেপে আছে আর ইহাদ তো আমাকে তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে অব্দি বলেছে জানো তুমি! যেটা আমি কোনোদিনই করতে পারবো না।”

ওপাশে ফোনে থাকা ব্যক্তিটি কি বললো জানি না কিন্তু তার উত্তরেই প্রিমা আপু বললো,
–“ঠিকআছে এবারের মতন আমি চেষ্টা করবো ইহাদকে মানিয়ে নিতে। কিন্তু কি বলোতো যেদিনই আমাদের মূল উদ্দেশ্য মানে এই বাড়ির সব সম্পত্তি হাসিল করা হয়ে যাবে সেদিন দেখো এই বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষদের আমি কী ভাবে নাচাই! তখন আমাকে দিয়ে এই পা ধরে ক্ষমা চাওয়ানো ইহাদের এই এতো বড়ো বড়ো কথা সবকিছুর প্রতিশোধ আমি কীভাবে তুলি সেটাই দেখো।”

আবারো ফোনে থাকা অপর ব্যক্তিটির কথা শুনে আপু বললো,
–“আরে কোনো চিন্তা করো না তো তুমি! আগের বারের মতন যেভাবে ইহাদকে নিজের প্রেমের ফাঁ*দে ফেলেছি ঠিক সে-রকম ভাবেই এবারো ওই গা’ধা টাকে আরো গা’ধা বানাবো। আচ্ছা শোনো তাহলে তোমার ওই ম্যাডামের কথা—
আর কিছু শুনতে পেলাম না! এর আগেই পিছনে কাঁধে কেউ হাত দিতেই চমকে ওঠে জোরে চিৎকার করে “কে” বলে ওঠলাম!

আর যার দরুন প্রিমা আর কোনো কিছুই না বলে তড়িঘড়ি করে ফোনটা কেটে দিলো আর আমি কিছু শুনতে পেলাম না! কিন্তু আমিই বা কি করতাম? এই এতো রাত্রে অন্ধকারের মধ্যে কেউ যদি আমার কাঁধে হাত দেয় আমার তো ভয় পাওয়া টাই স্বাভাবিক নয় কি? পিছন ঘুরে দেখতে পেলাম বৃষ্টি আপু দাঁড়িয়ে রয়েছে! আমাদের দু’জনকে দেখে প্রিমা আপু বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে! নিশ্চয়ই তার মনে এখন সন্দেহ ঢুকে গেছে তার পিছনে আমরা দু’জনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি কেনো? আর হলোও তাই তিনি প্রশ্ন করলেন আমাদের দু’জনকে,

–“বৃষ্টি, জুঁই তোমরা দু’জনে এই এতো রাত্রে আমার পিছনে কি করছিলে?”
বৃষ্টি আপু চুপ করে রয়েছে হয়তো কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু আমার কাছে যথাযথ কারন আছে আমিও নিজের মুখ খুললাম,
–“আপু তুমি তো জানোই বৃষ্টি আপুর আর ক’দিন পর বিয়ে মন ভালো নেই আপুর তাই তো এই কদিন আমার সাথে ঘুমাবে।”

আমার কথা শেষ না করতে দিয়ে প্রিমা বলে ওঠলো,
–“হ্যাঁ সেটা তো জানিই। কিন্তু বৃষ্টির তোমার রুমে থাকুক বা না থাকুক আমার তো প্রশ্ন অন্য জায়গায়? আমি যা বলেছি সেটার উত্তর দাও তুমি?”

–“এই দেখো আমার হাতে খালি জগ রয়েছে! আমি পানি খেতে ওঠেছিলাম কিন্তু জগ খালি থাকার কারনে নিচে নামছিলাম পানি নিতে নিচে নামবো ঠিক তখনি সিঁড়ির কাছে কারো অবয়ব দেখতে পেয়ে ভয়ে আমার জান যায় যায় অবস্থা জানো তো? আমি তো ভাবলাম কোন ভুত পেত্নি হবে বোধহয়। ঠিক সেই রকম ভুতের সিনেমার মতন মেয়েটি সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি সিঁড়ির কাছে সাদা কাপড় পড়ে কাউকে বসে থাকতে দেখা যায়। তারপর মেয়েটি যখন সাহস করে ওই অবয়বটির কাছে যায় তখন দেখতে পেলো,

আমার কথা শেষ না হতেই প্রিমা আপু বলে ওঠলো,
-“কি দেখতে পেলো বলো এরপর?”
মহিলার কথা শুনে ভালোই বুঝতে পারলাম বেচারি ভয় পেয়ে যাচ্ছে আমার মুখ থেকে ভুতের কথা শুনে আমিও কায়দা বুঝে ওনাকে আরো ভয় দেখাতে বললাম,

–“তখন দেখতে পেলো মু’*ন্ডু*বি’হী’ন এক নারীকে! যার মা*থা নেই কিন্তু পরক্ষনেই আবার মা’থা জোরা লেগে যাচ্ছে! চোখ গুলো কোটর থেকে বাহিরে এসে লা*ফা*চ্ছে! মা*থা*য় চু’লের জায়গায় কতোগুলো কালো কুচ*কুচে সা*প রয়েছে! হি হি হি করে চিৎকার করে হেঁসে যাচ্ছে আর তার সাদা রঙের দাতের জায়গায় লাল র*ক্তে রাঙা দাত গুলো দেখা যাচ্ছে! হাতের আঙুল গুলো একটা অনেক অনেক লম্বা লম্বা শুধু তাই-ই নয় নখগুলো ছু*ড়ির মতন ধা*রা*লো! পা দু খানা নেই হাওয়ায় বসে আছে! আবার কিছুক্ষনের ভিতরেই মা*থা খানা গা*য়ে*ব করে ওই লম্বা লম্বা নখ দ্বারা মেয়েটি কাছে যেতেই ওই অবয়বটি মেয়েটির গ*লা ছিড়ে!

–” থামো! আর বলো না কিছু চুপ করে যাও। এই এতো রাত্রে এসব ভয়া*নক কথাবার্তা কেউ বলে নাকি?”
আমার তো বেশ হাসি পাচ্ছে এই মহিলার কথা শুনে। বেশ ভয় পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে চোখমুখ দেখে কিন্তু নিজের হাসি চেপে রেখে বললাম,
–“কেনো ভাবি? তুমিই তো জানতে চেয়েছিলে তারপর ঠিক কি হয়েছিলো আমি তো তাই-ই বলেছি বলো?”
–“তোমার আর কিছু বলতে হবে না। তুমি জগে পানি ভরতে এসেছো তো? তাই করো পানি নিয়ে নিজের রুমে চলে যাও।”

–প্রিমা বিশ্বাস করেছে আমার কথা সে চলে যেতেই বৃষ্টির আপুর প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম আমি,
–“প্রিমাকে না হয় ভুতের গল্প শোনালি কিন্তু আমাকেও বল কি কারনে এসেছিস তুই?”
আপুর বিয়ে কিছুদিন পর তাই আমি চাই না এসব নিয়ে মন খারাপ হউক। তাই আপুর কাছ থেকে আপাততো সবটা লুকিয়ে রাখবো। মুখে হাসি এনে বললাম,

–“আরে তুমি কি বলছো? এই দেখো আমার হাতে সত্যি সত্যিই জগ রয়েছে! আমি আসলেই পানির জন্য নিচে যাচ্ছিলাম আর তখুনি দেখি এই মহিলা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো কথা বলছিলো কারো সাথে।”
-আমার কথা শুনে আমার চটপটে উত্তর,
–“কি বলছে? কার সাথে বলছে কিছু কি শুনতে পেয়েছিস তুই?”
–“আরে না কিছুই শুনতে পারি নি তার আগেই তো তুমি চলে এসেছিলে। তুমি এসব বাদ দিয়ে রুমে যাও তো আমি জগে পানি ভরে আনছি।”

–আমার কথা মোতাবেক আপু রুমে চলে গেলো আমিও পানি খেয়ে রুমে দিকেই যাবো ভাবছিলাম কিন্তু ওই ব’জ্জা’ত মহিলার এই বাড়িতে আসার উদ্দেশ্য জানতে পেরে মনটা কেমন জানি বিষিয়ে গেলো! ছাঁদে গেলাম ফুরফুরে হাওয়া খেতে ছাঁদে আলো জ্বলছে বিধায় আমার কোনো ভয় করলো না! খোলা তারা ভর্তি আকাশের দিকে চেয়ে আছি কতো সুন্দর লাগছে রাত্রের তারা ভর্তি আকাশটাকে। মনে হচ্ছে কাছ থেকে একটু ছুঁয়ে দিতে পারতাম যদি। কিন্তু আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো ইহাদ ভাইয়া! পিছন থেকে তিনি ডাকলেন আমায়,

–“এই এতো রাত্রে ছাঁদে কি করছিস জুঁই?”
আমিও উত্তর দিলাম,
–“আপনি কি এই এতো রাত্রে ছাঁদে এসেছেন আমাকে বলে? যে আমি আপনাকে বলতে যাবো বলুন?”
–“কি করবো বল? রুমে ভালো লাগছিলো না আমার! বারবার প্রিমার ব্যবহারগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিলো রে তাই ছাঁদে এসেছি।”

আমি ইহাদ ভাইয়ার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়েই নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার হাতের মুঠোয় এখন সব প্রমান রয়েছে কিন্তু এগুলো সব আমি কালকে বিকেলে ঝেঠু যখন বাড়িতে ফিরবে ঠিক তখুনি সবার সামনে প্রকাশ করবো! সবাই সবটা দেখবে নিজের চোখে সাথে ইহাদ তার প্রিমার আসল রুপটাও দেখতে পাবে! আমার চোখ গেলো ওনার হাতে থাকা জ্ব*ল*ন্ত সিগারেটের দিকে! মানে উনি স্মো*কিং করছিলেন এতো রাত্রে! উনি বলে ওঠলেন,

–“আমার কেনো জানি বার বার মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি প্রিমাকে বিয়ে করে! ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি। জানিস এখন তো মনে হয় প্রিমা আমাকে ভালোইবাসে না! আমাদের রুমের চার*দেয়ালে মধ্যে কখনো ও আমার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলেনি। অথচ আগে কতো রাত অব্দি কথা বলতাম আমরা। এখন মনে হচ্ছে ভালোবাসা মরে গেছে ওর আমার জন্য। জানিস ওর সাথে আর পাঁচটা স্বা*মী স্ত্রী*র মতন সম্পর্ক

–“থামুন! অনেক বলেছেন এতোক্ষণ ধরে! কিন্তু আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না তো সেখানে আপনার স্ত্রী আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করে আপনাতের সম্পর্ক কি রকম সেগুলো আমাকে বলছেন কেনো হঠাৎ করে? আমি এগুলো শুনবোও না!”

–“বলছি কারন আমার মনে হয় না এই সম্পর্কটা বেশিদিন টিকবে। আর তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাই না বল? তাহলে তো কোনো বাঁধাই নেই। চল নতুন করে শুরু করি সবটা? আমি জানি তুই প্রিমার মতন নস।”
ওনার কথার মানে আমার মাথায় ঢুকছে না! কি বলতে চাইছেন উনি? আমি জিগেস করলাম,
–“আপনি যা বলছেন স্পষ্ট করে বলুন।”

–“আমি চাচ্ছি প্রিমাকে ডির্বোস দিয়ে তোর সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে তোকে বিয়ে করে! তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাই আশা করি আর কোনো আপত্তি নেই বল? আর প্রিমা? সে তো এমনিই দু’দিন পর চলে যাবে বোধহয়!”
আমি বিস্ময়ে খানিক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম! ওনি ভেবেছে কি আমাকে আমি কি খেলার পু*তুল? উনি যা বলবেন যখন ইচ্ছে সেটাই শুনবো!

–“প্রথমতো কান খুলে শুনে রাখুন আমি আপনাকে ভালোবাসতাম এখন বাসি না কিন্তু! সুতরাং অতীত আর বর্তমান এক করবেন না। আর আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে যাক বা থাকুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না! আর ছেড়ে গেলেও কোনোদিনও আমি আপনাকে বিয়ে করবো না! যে আগে আমাকে বুঝে নি সে এখন বুঝবে আমাকে! এসব লোক হাঁসানো কথা বার্তা না বলে চুপ থাকুন। আর হ্যাঁদিত্বীয় বার এসব বলার চেষ্টাও করবেন না!”

ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি নিচে নেমে আসলাম! লোকটা পেয়েছে কি? যখন ইচ্ছে হবে কাছে টানবে আবার দূরে ঠেলে দিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার করে দু’দিন পর আবার আমাকে কাছে ফেরত আসতে চাইবে এইরকম টা তো হয় না! আর যাই হউক মরে গেলেও আর আমি ওনার সঙ্গে বিয়ে করবো না!

প্রণয় বিরহ পর্ব ২০

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব অনেক বড়ো করে দিয়েছি সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আজকের পর্বে সেহেরিশ নেই বলে কিছু বলবেন না প্লিজ কারন পর্বটাই এভাবে সাজানো ছিলো।প্রিমার সত্যি অর্ধেক জানলেন বাকিটা গল্পে দেখা যাবে আস্তে ধীরে। আর হ্যাঁ কালকেই ধামাকা পর্ব আসছে।

প্রণয় বিরহ পর্ব ২২