প্রণয় বিরহ পর্ব ২২

প্রণয় বিরহ পর্ব ২২
অর্ষা আওরাত

পুরো বাড়ি জুরে নিস্তব্ধতা! এই ভর দুপুরবেলাও কোনো সাড়া শব্দ নেই বাড়ির কোনো জায়গায়। সবার মুখশ্রীতে কিয়ৎক্ষন পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির জন্য বিস্ময় লক্ষ্যনীয়! মুখ থমথমে হয়ে আছে সবার! মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখলাম আব্বু কেমন নিথর দৃষ্টিকে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! তার এই দৃষ্টি নিক্ষেপ আমার হৃদয়ে তী’রে’র ন্যায় আঘাত হানলো!

আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি আব্বু মেনে নিতে পারছে না যেটা তার নিথর দৃষ্টি ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে! কিন্তু আমিও যে নিরুপায় হয়েই আছি। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবার চোখমুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে কেউ এই ঘটনাটি মেনে নিতে পারেনি কিন্তু যা হবার তা কেউ খন্ডাতে পারবে না! হৃদয়ে ভয়ের প্রকোপ ক্রমাগতো বেড়েই চলেছে! হা’র্ট’বি’ট ফাস্ট হয়ে গেছে সবার মুখশ্রী আর নিস্তব্ধতা দেখে! এ যেনো ঠিক ঝ’ড়ে’র আগ মুহুর্তের পূর্বাবাস!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি ভয়ে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি নিজের মনের গহীন কোনে কিন্তু সেটা প্রকাশ করাও দায় হয়ে পড়ছে! মনে বারংবার একই প্রশ্ন উঁকি মারছে কি হবে এখন? আদৌও কি ঝেঠু বা আমার আব্বু আম্মু কেউ এই বিয়েটা মেনে নিবে? নাকি আমার উপর রেগে গিয়ে আমাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে সবাই? হ্যাঁ সেহেরিশ ভাইয়া আমার পাষে বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি ওনার বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছি! আমাদের বিয়ের প্রমান হিসাবে রেজিস্ট্রি পেপার আর কাজী রয়েছে। সকলের সব প্রমান দেখা হয়ে গিয়েছে যার জন্যই এরকম নিস্তব্ধতা ময় পরিবেশ! বিয়েতো হলো কিন্তু এখন কি হবে? মনে যখন হাজার রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনি সোফায় বসে থাকা আমার আব্বুর কোমল স্বরে বলে ওঠলো,

–“তোমার যখন বিয়ের বয়স হতো তখন আমরাই তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিতাম সুপাত্র দেখেশুনে। তোমার কি নিজের পড়াশোনাটা শেষ হওয়া অব্দি তড় সইলো না জুঁই?”

আব্বুর কথায় হৃদয়ের কাপন আরো বেড়ে গেলো এক ধাপ! মনে হচ্ছে এমনটা না হলেও পারতো।আব্বু আমাকে কখনোই তুমি করে বলেনি। হ্যাঁ বলতো যখন আমার উপর ভীষন রে’গে যেতো ঠিক তখনি আর আজ হয়েছেও ঠিক তাই আব্বু প্রচন্ড রে’গে আছে আমার উপর তা সে যতোই শান্ত স্বরে কথা বলুক না কেনো তার কথার ধরন দেখেই আমি বুঝে গেছি ঠিক কতোটা পরিমান রেগে আছে!

আর রেগে থাকাই স্বাভাবিক এই মুহুর্তে! আমি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছি সেহেরিশ ভাইয়ার পাশে। মূলত ওনার জন্য এখনই এই পরি’স্থি’তি’র শি’কা’র আমি। আমি হাতে হাত ঘষছিলাম ঠিক তখনি গালে থা’প্প’ড় খেয়ে তাকিয়ে দেখি আমার নিজের মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে! বুঝতে বাকি রইলো না থা’প্প’ড়টি তিনিই মেরেছেন আমাকে। মা’কে থামাতে আমার ঝেঠিমা বলে ওঠলো,

–“ছোটো কি করছিস তুই? এতোবড়ো মেয়েকে কেউ মারে?”
–“ভাবী তুমি ঠিকই বলেছো ও তো অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে তাই জন্যই তো বিয়ে করে সোজা বাসায় চলে এসেছে!”
এবার আমি না চাইতেও অশ্রু কনারা আমার গাল বেয়ে টলমল করে বেয়ে পড়তে লাগলো! আমার যে মুখ নেই কোনো কিছু বলার কাউকে! এরই মাঝে সকলের একই প্রশ্ন আমি কেনো কাউকে কিছু না জানিয়ে সেহেরিশকে বিয়ে করে বসলাম! আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে সকল প্রশ্ন শুনে যাচ্ছি কেবল কিন্তু কোনো কিছুর উত্তর দেওয়ার মতন সাহস নেই আমার। সকলকে চুপ করতে বলে ঝেঠু বলে ওঠলো,

–“তুমি কেনো করলে এই বিয়ে? তাও এভাবে লুকিয়ে আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে?”
ঝেঠুর কথায় আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না বিধায় ঝেঠু সেহেরিশ ভাইয়াকে প্রশ্ন করলেন,
–“তোমাকে আমি সেই শুরু থেকেই ভালো জেনে এসেছি তুমি কি করে এইরকম একটা কাজ করতে পারলে সেহেরিশ।”
–“ঝেঠু ভরসা করে দেখতে পারেন আমি কোনোদিনও জুঁইকে অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না আর না আপনাদের কাউকে। আমি আর জুঁই দু’জনের ইচ্ছেই এই বিয়েটা করেছি।”

-কি চটপটে উত্তর ওনার! যেখানে আমি মুখ খুলতেই ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে তিনি কি সুন্দর করে গুছিয়ে এক গাঁদা মি’থ্যা বললেন আমাদের দু’জনের ইচ্ছেয় বিয়ে হয়েছে! ঝেঠু কিছু বলবে এর আগে ঝেঠিমা বলে ওঠলো,
-“আমার মনে হয় ওদের এই বি’য়ে’টা মেনে নেওয়া উচিত আমাদের সকলের কারন সেহেরিশকে তো আর কম দিন হলো চিনি না বলো? ও যথেষ্ট ভ’দ্র আর ভালো ছেলে আর ও প্রতিষ্ঠিত একজন পু’রুষ।”
ঝেঠিমার কথায় ঝেঠুও তাল মিলিয়ে বললো,

-“আমিও তোমার কথায় একমত। সেহেরিশ আমার ছোটোবেলার বন্ধুর ছেলে যেমন আবার একদিক দিয়ে ওকে আমরা চিনেছি, জেনেছি এ বাড়ির সকল কাজ কর্মে, যাই বলো না কেনো ও আমাদের পাশে থেকেছে।”
ঝেঠুর কথায় আমার বাবা বলে ওঠলেন,

–“তা কেমন ভ’দ্র ছেলে সেটা তো আজকেই দেখিয়ে দিলো ভাই? সবকিছুই ঠিকআছে কিন্তু তাই বলে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করা এটা কোন ভ’দ্র’তার খাতিরের মধ্যে পড়ে?”
–“হয়তো আবেগের বশে ভুল করে ফেলেছে। আর যাই করেছে দু’জনে মিলে করেছে বি’য়ে’টা। কিন্তু বি’য়ে’টা তো হয়েছে সেই সকল প্র’মা’ন আমাদের সামনে তাই এই বি’য়ে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই! আমি সেহেরিশ এর বাবা মাকে ফোন করেছি ওরা এখন আসতে পারবে না বলেছে একটু সমস্যা আছে ওরা কালকে আসবে।”

–“বেশ তাহলে আমার আর জুঁইয়ের মা’য়ের একটি শ’র্ত আছে?”
আব্বুর মুখ থেকে শ’র্তের কথা শুনে এবার আমার ভয়ে হাত পা কাঁ’পা’কা’পি করছে এমন অবস্থা! এতোক্ষণ ধরে অনেক কিছু সহ্য করেছি এই সেহেরিশ ভাইয়ার জন্য কিন্তু এখন কি শ’র্ত দিতে চায় আব্বু? আমাকে আবার এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে বলবে না তো? আমার ভাবনার মাঝেই আব্বু বলে ওঠলো,

–“আমরা জুঁইয়ের বাবা মা আমরা দু’জনেই চাইছি যে জুঁই এখনি সেহেরিশ এর বাড়িতে যাবে না! জুঁইয়ের এইচএসসি পরিক্ষা কমপ্লিট করলে তারপর আমরা অনুষ্ঠান করে লোক জানাজানি করে ওদের বিয়ে দিবো ততদিনে না হয় ওদের বিয়ে লুকোনো থাকবে সকলের কাছে আমরা হাতে গোনা ক’জন ছাড়া জানবে না কেউ ওনা বিবাহিতো। আর এতে সময় পাওয়া যাবে এটা দেখার জন্য যে জুঁই আর সেহেরিশ এর সং’সা’র কেমন টিকে! এটা ওদের জন্য একটা পরিক্ষা হবে বলতে পারো এই পরিক্ষায় যদি ওরা টিকে তাহলেই মন থেকে আমরা দু’জনেই এই বি’য়ে’টা মেনে নিবো।”

আব্বুর কথা শুনে ঝেঠু কিছু বলবে ঠিক এর আগেই মেজো কাকু মানে বৃষ্টি আপুর বাবা বললেন,
–“হ্যাঁ ভাই নাজমুল ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমি মনে করি। এতে আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই বরং আমরা সহমত নাজমুল আর ওর বউয়ের সিদ্ধান্তে।”
কাকার কথা শেষে আমার বাবা বললেন,

–“ভাই? সেহেরিশকে আমরা চিনি, জানি ও কেমন তবুও বি’য়ে’টা সারাজীবনের ব্যাপার তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মেয়ে যখন নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করেছে ঠিক আছে কিন্তু গার্জিয়ান হিসেবে সেটা আমাদেরও যাচাই করার পুরো অধিকার রয়েছে। কালকে সেহেরিশ এর বাবা মা আসলে এই বিষয় নিয়েও কথা হবে।”
ঝেঠিমাও তাল মিলালো বাবার কথায় নিরুপায় হয়ে ঝেঠুও উত্তর দিলো,

–“বেশ সকলে যখন এটাই চাইছো তখন তাই হবে। এখানে জুঁই বা সেহেরিশ এর কোনো কথা থাকবে না কারন ওরা বিয়েটা করেছে না জানিয়ে সুতরাং এখন আামাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে ওদের। কালকে সেহেরিশের বাবা মা চলে আসবে তাই এখন আর সেহেরিশকে ওই বাড়িতে যেতে হবে না তুমি গিয়ে জুঁইয়ের রুমে যাও জুঁইয়ের সঙ্গে ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হও।”

সকলের কথা শেষ হতেই আমি চটজলদি করে আমার রুমে গেলাম আমার পিছু পিছু সেহেরিশ ও আসলো। সেহেরিশ ভাইয়া রুমে আসতেই দরজায় খিল এটে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন! ওনাকে দেখেই আমার রাগের মাত্রা তী’ব্র হয়ে ওঠলো। ওনার কাছে গিয়ে ওনার শা’র্টে’র ক’লা’র ধরে বললাম,
–“এসব কেনো করলেন আপনি? আপনার জন্য আমি নিচে কতোগুলো কথা শুনলাম! কখনো আমার বাবা, মা, কাকা, কাকীমা, ঝেঠু, ঝেঠিমা আমার সঙ্গে এতোটা রেগে কথা বলেনি যতোটা আজ বলেছে! আর আমার মা তো আপনার জন্য থা’প্প’ড় মেরেছে! সবকিছুর মূলে আপনি।”

-“-ভুল বললে জুঁইফুল! সবকিছুর মূলে তুমিই আছো সেটা আজ নয় কাল ঠিকই জানতে পারবে। আর এখন তো আমি তোমার স্বামী! স্বামীর সঙ্গে এরম ব্যবহার কেউ করে বলো?”
–ওনার শেষোক্ত কথাটি শুনে আমার রাগ এবার সপ্তম পর্যায়ে! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি কেনো সবকিছুর মূলে হতে যাবো? সবকিছুতো উনিই করলেন এই বিয়েটা করলেন কেনো?

ভেবেছিলাম প্রিমার মুখোশ খুলবো কিন্তু এই সেহেরিশ এর জন্য সবাই রেগে আছে আমার উপর যার দরুন এখন অপেক্ষা করতে হবে দু’ একদিন! পরিবেশ ঠান্ডা হলে বলবো। সেহেরিশ তখন আমাকে কোনো কিছু বলতে দিলো না। কিছুই বুঝতে পারছি না আমি সবটা কেমন ধোয়াশার মধ্যে রেখে দিয়েছেন উনি। কিন্তু ক’দিন আগেও তো উনার সবকিছুই ঠিক ছিলো তাহলে আজ কেনো এসব কিছু? আমার ভাবনার মাঝেই তিনি আমার সামনে এসেে দাঁড়ালেন আমাকে বললেন,

–“কীরকম বউ তুমি? স্বামীর সেবা যত্ন কিছুই করছো না! তোয়ালে টা তো দিবে নাকি বলো? এরকম করলে কিন্তু ভালো হবে না জুঁইফুল।”
শেষোক্ত কথাটি উনি আমার বেশ নিকটে এসে বললো যার দরুন আমি ঘাবড়ে গিয়ে ওনাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে রুম থেকে বাহিরে চলে আসছিলাম ঠিক তখুনি ওনার কথা কানে বেজে ওঠলো,

–“এটা ঠিক করলে না জুঁইফুল! আমি কিন্তু এখন তোমার স্বামী বুঝলে?”
ওনার কথা পাত্তা না দিয়ে আমি ছাঁদে চলে আসলাম একটু ফুরফুরে হাওয়া খেতে যাতে এতোক্ষণ ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি একটু মস্তিষ্ক থেকে দূরে সরে আমার মাথাটা একটু ঠান্ডা হতে পারে! তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো আপাততো আমার রুম জুড়ে দ’খ’ল করে আছে সেহেরিশ ভাইয়া উপস আমার স্বামী বলে পরিচিতো যিনি!

প্রণয় বিরহ পর্ব ২১

বিঃদ্রঃঃ- এটাই ছিলো ধামাকা জুঁই আর সেহেরিশ এর বিয়ে! কিন্তু এখনো খোলসা হয়নি সেহেরিশ কেনো এমনটা করলো সেটা কালকের পর্বে প্রকাশ হবে এক পর্বে এতোটা বোঝানো সম্ভব নয় তাই ওদের বিয়ের কাহিনী টা বুঝতে একটু সময় দিবেন সকলে আশা করি। আর ওদের বিয়ে কিন্তু দিয়ে দিলাম সবাইকে দাওয়াত ছাড়া!?। পর্ব বড়ো করেই দিয়েছি গঠনমূলক মন্তব্য করবেন

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৩