প্রণয় বিরহ পর্ব ২৩

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৩
অর্ষা আওরাত

কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া বি*শ্রী ঘটনাগুলো মস্তিষ্ক থেকে বাদ দিয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু পরক্ষনেই উপলব্ধি করলাম আমার রুমে তো এখন আরো একজন মানুষ আছে সে ওতো ঘুমাবে। আর আমার এই রুমে কোনো এক্সর্ট্রা খাট বা কোনো রকম সোফা নেই তাই বেড শেয়ার করেই ঘুমোতে হবে। কাল বিলম্ব না করে ওনাকে ডাকলাম,
–“সেহেরিশ ভাইয়া এবার ঘুমুতে হবে ওঠুন? আমি বিছনা গুছিয়ে রেখেছি এবার আপনি এসে শুয়ে পড়ুন।”

ওনাকে বলেই আমি শুয়ে পড়লাম কিন্তু দৃষ্টি পাত করে দেখলাম ওনি সেই আগের ন্যায়ই বসে রয়েছে! মনে হচ্ছে না আমার কোনো কথা ওনার কানে ঢুকেছে। চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে হয়তো কোনো কিছু নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করছেন যার দরুন আমার কথা তার কানে যাচ্ছে না এই মুহুর্তে! কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না যেখানে উনার কথা মতনই আমাদের বিয়ে হলো সেখানে ওনার এতো চিন্তা ঠিক কিসের জন্য? আপাততো এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ওনার কাছে গিয়ে ওনাকে ডাকতে লাগলাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“আপনি কি ঘুমাবেন না? আমি বিছানা করেছি ঘুমাতে আসুন। আর এতো কি চিন্তা করছেন আপনি সর্বক্ষন?”
-“যাক জুঁইফুলের নজরে পড়েছে আমি চিন্তিত আছি। ঘুমাবো একটু পরে তার আগে তোমার কাছে একটি আবদার আছে সেটা রাখবে তো জুঁইফুল?”

-ওনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম না কোন আবদারের কথা বলছেন তিনি। আবার কি বলবে উনি?
–“বেশি কিছু না হিসেব মতন আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত। আমি আমার কথা রাখবো তোমার কাছে যাবো না। শুধু চাই যে আমার সাথে একান্তে একটু সময় কাটাও তুমি! ওই যে দেখো আকাশে মস্ত বড়ো একটা চাঁদ ওঠেছে আজকে। চাঁদের আলোয় আলোকিতো হয়ে আছে চারিদিক। আমি চাই যে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত্রি হিসাবে এই চাঁদটাকে সাক্ষী রেখে তুমি একটু আমার সাথে সময় কাটাও।”

–প্রথমে ভাবলাম যে ওনি যে কান্ড করেছে আমার সাথে তারপরে আর ওনার কোনো কথাই শোনার মানে হয় না কিন্তু পরক্ষণেই ভেবে দেখলাম লোকটা বেশি কিছু তো চায় নি আর শুধু একটু সময় চেয়েছে যা আমি চাইলেই দিতে পারি। ওনার আকুতি ভরা দৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি না করতে পারলাম না উনাকে।
–“ঠিকআছে চলুন তবে। এটুকু আবদার রাখাই যায় আপনার।”

–আমার কথা শুনে সেহেরিশ ভাইয়া মুচকি হেসে বসা থেকে ওঠে আমার সঙ্গে চলতে লাগলো ছাঁদে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ই ওনি হঠাৎ করে বলে ওঠলেন,

–“জুঁইফুল তুমি একটু ছাঁদে গিয়ে দাঁড়াও আমি একটু পাঁচ মিনিটের ভিতরেই আসছি। আসলে একটা জিনিশ আনতে ভুলে গেছি ওটা আনতেই যাবো। আর ভয় পেয়ো না দেখো ছাঁদে আলো জ্বলছে আর আমি তো এই যাবো আর এই আসবো।”
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ নামক সম্মতি দিলাম। ছাঁদে ওঠে দাঁড়িয়ে রয়েছি সেহেরিশ ভাইয়ার অপেক্ষায় কখন তিনি আসবে। এতোক্ষন খেয়াল না করলেও এখন বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি উনি সত্যিই বলেছেন আকাশে কি সুন্দর একটা চাঁদ ওঠেছে। আর সেই চাঁদের কিরনে কি সুন্দর লাগছে সবটা! আমি অভিভূত হয়ে সবটা অবলোকন করছিলাম কিন্তু হঠাৎই আমাকে কেউ পিছন ফিরে ডেকে ওঠে,

–“এই এতো রাত্রে একা একা ছাঁদে কি করছিস জুঁই?”
আমি চমকে ওঠলাম! কারন এই কন্ঠস্বর যে আমার খুব চেনা! এই কন্ঠস্বরের আওয়াজেই নির্ঘুম কেটে যেতো আগে আমার আর আজ এই কন্ঠস্বরের আওয়াজেই বুকের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে কেনো জানি! হ্যাঁ আমি না দেখেই বুঝে গেলাম এটা ইহাদ! উনার কথার প্রতিত্তোরে আমি বললাম,

–“আমি এতো রাত্রে কি করবো সেটার কৈফিয়ত নিশ্চয়ই আপনাকে দেবো না? আপনি যেমন এখানে এতো রাত্রে কি করছেন সেটা আমি জিগেস করিনি তেমনি আপনারো জিগেস করার প্রয়োজন বোধ নেই।”
উনাকে জবাব দিয়ে আমি আবারো মনোযোগ দিলাম সৌন্দর্যে ভরা রাতের আকাশের দিকে। কিন্তু উনি আবারো বললেন,

–” আমি প্রতি রাত্রেই ছাঁদে আসি একটু মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে! প্রিমার সঙ্গে থেকে থেকে যে শ্বা*স নেওয়া বড্ড ক*ষ্টকর হয়ে পড়ছে রে। সেহেরিশকে তো তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিস তাই না বল? নিশ্চয়ই ওর সাথেই তুই সুখে থাকবি। ”

-উনার কথা শুনে বলে দিতে ইচ্ছে হলো সেহেরিশ ভাইয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করে নি আমি। একসময় তো আপনাকে ভালোবেসেছিলাম আমি। কিন্তু মনের কথা মনেই চেপে রেখে আরেক রকম উত্তর দিলাম,
-“আমি কাকে ভালোবাসি না বাসি না সেটা জেনে আপনার কি দরকার? এখন তো আর আপনার কাছে নিজের ভালোবাসার দাবি নিয়ে যাই নি আমি তাহলে এসব বলছেন কেনো আমাকে? হ্যাঁ আপনি যেমন বিয়ে করেছেন তেমনি আমিও সেহেরিশকে বিয়ে করেছি।”

–“প্র*তি*শো*ধ নিলি তাই না? আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বলে আজকে তুই আমাকে ফিরিয়ে দিলি! যদি একবার সেদিন জো*র করে আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতিস বা আমি দেশে আসার পর জোর করে ভালোবাসার দাবি নিয়ে থাকতি তাহলে হয়তো আজকে তুই অন্য কারো হতিস না বা আমি এই প্রণয়ের বিরহে পু*ড়*তাম না জুঁই!”

উনার কথায় আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ! লোকটা বলছে কি? যা খুশি তাই বলেই যাচ্ছে? উনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন আর আমি পিছু পিছু ঘুরবো উনার! রাগান্বিত স্বরে উনাকে বললাম,

–“ভুল সেদিন আপনি করেছিলেন আমি না! সবটা না জেনেই দূরে সরে গেছিলেন আমি না! আর দেশে আসার পরেও আমি আপনার পিছু পিছু ঘুরবো আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবার পরেও এতোটাই স*স্তা আমি! কি ভেবেছেন নিজেকে আপনি? আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে ভালোবাসবেন আবার ইচ্ছে হলেই আমাকে ফিরিয়ে দিবেন আবার ইচ্ছে হলেই আমার কাছে ফিরে আসতে চাইবেন আর আমি সেটা সাদরে গ্রহন করে নিবো তাই না!

এতোটাও মু*ল্য*হীন ভাবি না নিজেকে আমি যে যার কাছে আমার কোনো সম্মান নেই তার কাছে ফিরে যাবো। আপনার এই আমার প্রতি ইচ্ছে অনিচ্ছের খেলায় আজকে আপনি নিজের ইচ্ছেয় প্রিমার সাথে বিয়ে করেও সুখী নন! আর সব থেকে বড়ো কথা আমি এখন বিবাহিতো। আপনাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমাকে এসব কথা দু’বার ও বলবেন না আর!”

এক দমে কথাগুলো বলে দম নিলাম কিছুক্ষণ যাবত! খুব শান্তি লাগছে উনাকে কথাগুলো বলে। কিন্তু এই সেহেরিশ এখনো আসছে না কেনো? কোথায় গেলো আবার? ইহাদ ভাইয়াও আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার কথা শুনে। উনিও প্রতিত্তোরে বললেন,

–“একদম শতভাগ সত্যি বলেছিস তুই জুঁই! আমার কারনেই আজকে এতোকিছু পোহাতে হচ্ছে! হীরে ভেবে কাঁ*চ যখন তুলে নিয়েছি তখন রক্তপাত তো আমারই হবে! তবে হ্যাঁ কেনো জানি এখন তোকে ভালোবাসতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে রে! আ*ফসো*স হচ্ছে কতোই না ভালো হতো যদি সেদিন আমি তোকে ভুল না বুঝে প্রিমার মতন একটা মেয়েকে নিজের জীবন সঙ্গীনী করলাম! ভুল যখন করেছি তাই পস্তাতেও আমাকেই হচ্ছে।”

-উনার কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি উনার উল্টো দিক ফিরে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনার কোনো কথার উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করলাম না! একসময় আমিও পুড়েছি প্রণয়ের বিরহে আজকে উনি বুঝুক সেই দ*হ*ন কীরকম হয়! হঠাৎ আমার কাঁধে কারো হাতের উপস্থিতি পেতেই রেগে গেলাম! পাশ ফিরে দেখি সেহেরিশ ভাইয়া মুখে হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! উনাকে দেখে ভয় হতে লাগলো উনি কিছু শুনেছেন? আমি ওনাকে কিছু বলতে যাবো ঠিক তার আগেই ইহাদ সেহেরিশ কে বললো,

–“এইবার বুঝেছি জুঁই কেনো এতো রাতে ছাঁদে এসেছে! আজ তো তোমাদের বিয়ের প্রথম রাত তাই তোমরা নিশ্চয়ই এখানে এসেছো।”
ইহাদ ভাইয়ার কথায় আমি কিছু বলবো তার আগেই সেহেরিশ বলে ওঠলো,
-“হ্যাঁ একদম ঠিক ধরেছেন আপনি। আমরা এখানে একান্তে কিছু সময় কাটতেই এসেছি তবে আপনার এখানে আসার কারন টা ঠিক বুঝলাম না।”

সেহেরিশ এর কথায় ইহাদ ভাইয়া মুখে জোর করে হাসি এনে বললো,
–“আমি তো প্রায়শই এখানে আসি রাত করে। বেশ ভাল্লাগে রাত্রের আকাশ দেখতে। কিন্তু যদি জানতাম যে তোমরা দু’জন এখানে থাকবে তাহলে আজকে আর আসতাম না। তোমরা সময় কাটাতে এসেছো তো সময় কাটাও আমি মাঝখানে তৃতীয় ব্যাক্তি না হয়ে নিজের রুমে চলে যাচ্ছি।”

ইহাদ ভাইয়া আমার পাশ ঘেঁসে চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি আমি দেখতে পেলাম উনি উনার হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা চোখের পানি মুছছে! চাঁদের আলোয় সেই দৃশ্য আমার চোখ এড়ালো না! আবার উনি পাশ ঘেঁসে যাবার ফলে উনার হাতও আমার হাতের স্পর্শে আসে যা আমি বেশ ভালো করেই টের পেলাম!

বুঝলাম না এতোক্ষণ যখন আমার সাথে কথাও বলছিলো তখন তো কাঁদছিলো না। এখন হঠাৎই সেহেরিশের কথা শুনে কাঁদতে লাগলো কেনো? আর কিছু ভাবার আগেই দেখতে পেলাম সেহেরিশ আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে তার কাছে ডাকছেন আমি ইহাদ ভাইয়ার সমস্ত ভাবনা মাথা থেকে দূরে সরিয়ে কাল বিলম্ব না করে চলে গেলাম সেহরিশ এর কাছে! উনার কাছে যেতেই উনার প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম আমি!

প্রণয় বিরহ পর্ব ২২

–“আমি আসার আগেই ইহাদ এসেছিলো নিশ্চয়ই? নাকি ও আগ থেকেই এখানে ছিলো? কি করছিলে এতোক্ষণ তুমি? নাকি আমি যা শুনেছি তাই সঠিক?”
-সেহেরিশ এর প্রশ্ন শুনে ঘামতে থাকলাম উনি কি কিছু সন্দেহ করছে তাহলে? নাকি কিছু শুনতে পেয়েছে আসার সময়?

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৪