তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪০

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪০
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

স্বামী তার স্ত্রীকে ঘরে রেখে অন্য মেয়ের সাথে রাত করে বাইরে ফিরছে, তা কোন স্ত্রীর পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব নয়। যেমনটি রিমির বেলাতেও ঘটেছে। যতই হোক অয়ন তার স্বামী।ঘরে টানটান উত্তেজনা। রিমির তার প্রেমিক পুরুষের বুকে খামচে বসে আছে। প্রেমিক পুরুষটা তাকে আলতো ভাবেই ছুইয়ে দিচ্ছে। আদর করে দিচ্ছে ভালোবাসার সহিত।

রিমি অয়নের বুকে দৃঢ়ভাবে লেপ্টে রয়েছে,যেন একটু আগলা হলেই অয়ন ছুটে বেড়িয়ে যাবে তার থেকে অনেক দূরে! নিস্তবতা ছেঁয়ে গিয়েছে গোটা রুম জুড়ে। শুধু রিমির ফুপানির আওয়াজ বিদ্যমান ঘর জুড়ে। অয়ন রিমিকে আগের মতো ভালোবাসে না। আগের মতে চায়না,কিংবা আগের মতে গুরুত্ব নয়,অথবা রিমির থেকেও ইশা অয়নের জীবনে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন বাজে কিছু বিচ্ছিরি বিক্ষপ্ত চিন্তাভাবনা রিমিকে একপ্রকার ঝেঁকে বসেছে। অয়ন আলতো ভাবে রিমিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছে। রিমির ফুপানির আওয়াজ তীব্র হচ্ছে। অয়ন খানিক্ষন নরেচড়ে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়ন বাসায় আসার পর থেকেই রিমি নিজ থেকে তাকে বলেছিলো,
‘ আপনার বুকে মাথা রাখতে দিবেন? ‘
প্রিয়তমা স্ত্রীর নিঃসংকোচ সিক্ত আবদারে, অয়নের
অধরের কোণে প্রাপ্তি হাসি ফুটে উঠে। রিমিকে কোনপ্রকার উত্তর না দিয়ে,একপ্রকার বুকে টেনে রিমির সমস্ত মুখশ্রীতে আলতোভাবে ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দেয়। অয়নে ভালোবাসা পেয়ে, রিমির মস্তিষ্কে হানা দেওয়া সমস্ত বিচ্ছিরি চিন্তাধারা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।

‘ ইশা আপুর সাথে বেশ মিশবেন না আপনি! আমার বুকটা পুড়ে। বেশ পুড়ে! ‘
রিমির হুট করে বলা কঠোর আবেদন পেতেই,গাঁ কাপিয়ে হেসে উঠে অয়ন। অধরের বেশ বড়সড় দুষ্ট হাসি ঝুলিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ খুব বেশি পুড়ে রিমিপরী? কেন পুড়ে এতো? তবে কি তুমিও সাইকোর প্রেমে পড়ে গেলে? ‘

রিমি যে নিজের অজান্তেই বোকামি করে, তার মনে থাকা তীব্র রাগের কথা অয়নের কাছে প্রকাশ করে ফেলেছে, তা অনুধাবন করতেই, রিমির মুখশ্রী লাজুক হয়ে উঠে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয় সারা শরীর। অয়ন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, রুমের অপরপাশে চলে যায়। হাত নাড়িয়ে পর্দাগুলো টেনে দিতে থাকে। অয়ন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকে। রিমি চোখমুখে উপচে পড়ছে লজ্জার তকমা!

‘ লজ্জা পেলে কি হবে রিমিপরী? কি যেন বলছিলে? আমি ইশার কাছাকাছি থাকলে, তোমার পুড়ে কেন?’
‘ জানিনা বাপু। আপনি যান তো। ‘
রিমি গাল ফুলিয়ে অয়নকে জবাব দিলো। অয়ন হাত ভাজ করে, রিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে, রিমির কাধে নিজের থুত্নি রেখে বললো,
‘ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, তখন তার পাশে নিজের ছাঁয়াকেও সহ্য করা যায় না। তার মানে কি দাঁড়ায় রিমিপরী?

রিমি অয়নের দিকে ঘুড়ে, আড়ষ্ট কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ অতশত জানিনা আমি। ভালোবাসা কিনা সেইটাও জানিনা, তবে আপনার পাশে অন্য মেয়েকে দেখলে
আমি খুব পুড়ে। ভিতরটা ছাড়খাড় হয়ে যায়। ‘
‘ তুমি তো আমায় ভালোবাসো না, তাহলে আমি ইশার পাশে থাকলেও তোমার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমি বরং যাই ইশা কি করছে দেখি আসি। ‘

কথাটি বলে অয়ন চলে যেতে নিলে, রিমির মাথায় আগুন ধরে যায়। একরাশ রাগ নিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সেই দৃষ্টি বেশ উপভোগ করে, চলে গেলো অয়ন। রিমি প্রায় বাচ্চাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না ডক্টর এয়ারসি। আপনি বাজে লোক। প্রেমিক হওয়ার যোগ্যতা আপনি হারিয়েছিন। ‘
রিমি প্রায় বাচ্চাদের মতোই নাক টেনে টেনে কথাগুলো বললো। তৎক্ষনাৎ কেউ টিস্যু ধরলো রিমির সামনে। রিমি তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। রিমি অবাক পানে তার দিকে তাকাতেই, মহিলাটি সরলভাবে হেসে বললেন,

‘ অয়ন স্যার পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে নিষেধ করেছেন যেন আপনি কান্নাকাটি না করেন। ‘
রিমির কান্নার বেগ বাড়লো। কটমট দৃষ্টিতে টিস্যু হাতে নিয়ে নেয়। অতঃপর দরজার কাছে গিয়ে, টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে,

‘ আগে তো নিজে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিতেন। আমার চোখের জল সহ্য করতেই পারতেন না।আর এখন…..’
হুট করে অয়ন রিমির সামনে দাঁড়ায়। রিমি চুপ হয়ে যায়। অয়ন রিমিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, তার বলিষ্ট হাতজোড়া রিমির কোমড় চেপে ধরে বলে,

‘ খুব অভিমান না আমার প্রতি? আমি চোখ মুছিয়ে দিলে খুব কষ্ট হয়? ‘
‘ খুব অভিমান হয় ডক্টর এয়ারসি। সেই অভিমানগুলো পাহাড়সম ধারণ করছে প্রতিনিয়ত। ‘
‘ কেন এতো অভিমান? যদি ভালোই না বাসো। ‘
রিমি ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠলো,

‘ কিছু কিছু অভিমানের কারণ থাকেনা। তা মনের অভ্যন্তরীন থেকে হুট করে চলে আসে। ভালোবাসি কিনা জানিনা, তবে যার প্রতি অধিকার থাকে, তার প্রতি অভিমান আসে। ‘
অয়ন মুচকি হেসে রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দিলো গভীর ভালোবাসা নিয়ে। রিমি কান্না হুট করে থেমে গেলো, আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো সে।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

ফারহান ডক্টরের কেবিনে বসে সুমাইয়ার বিষয়ে কথা বলছে। ডক্টর জানিয়েছেন, ফারহানের কথামতো মালেশিয়া থেকে সবচেয়ে সেরা কয়েকজন ডক্টীরদের দিয়ে সুমাইয়ার অপারেশন করানো হবে। যদি অপারেশনটা সাফল্য হয় তাহলে সুমাইয়া বেঁচে যাবে, কিন্তু অসফল হলে সুমাইয়ার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। যদিও ফারহানের তা নিয়ে বেশ চিন্তা। সুমাইয়াকে সে কোন কিছুর বিনিময়ে হারাতে চায় না। ডাক্তার সাহেব ফারহানের মনের অবস্হা বুঝতে পেরে, ফারহানকে ভরসা দিয়েছেন, যেন ফারহান শক্ত থাকে। ফারহান ডক্টরের কেবিনের বেড়িয়ে ঠিক করে সুমাইয়ার কেবিনের দিকে এগোয়। উদ্দেশ্য প্রেয়সীকে মন ভরে দেখার বাসনা।

ফারহান কেবিনে ঢুকেই দেখতে পায়, সুমাইয়ার বিছানার কাছে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে ঘুড়ে থাকায় বিধায় তার চেহারা দেখতে পারেনা ফারহান।
‘ কে আপনি? ‘

মেয়েটি হুট করে ফারহানের ডাক শুনে হচকিয়ে যায়। মাথার কাপড় টেনে দ্রুত সামনে গিয়ে ফারহানকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। ফারহান বাইরে বেড়িয়ে চিৎকার করে সিকিউরিটিকে ডাক দেয়, মেয়েটিকে ধরার জন্যে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। ফারহান পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায় সুমাইয়ার বিছানার পাশেই ছুড়িখানা পড়ে আছে। ছুড়িটা দেখে ফারহানের বুঝতে বাকি থাকেনা, সুমাইয়াকে কেউ মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই হসপিটালে এসেছিলো।

রিমি এবং ইশা পাশাপাশি বসে আছে। ইশা রিমিকে এবং তার বন্ধুত্বের গল্প শুনাচ্ছে, যদিও রিমি তা শুনতে মোটেও আগ্রহী নয় তবুও তাকে শুনতে হচ্ছে। ইশার ভাষ্যমতে অয়ন শুধুমাত্র ইশার সাথেই মিশতো, কথা বলতে। অয়নের মতো রুড ছেলে সকলের থেকে দূরত্ব বজিয়ে চললেও, ইশার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। সকলে তো তাদের এতো ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব দেখে ভাবতো তারা বোধহয় প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। রিমি ইশার কথা শ্রবণ করছে, এবং রাগে তরতর করে ফুশছে। মনে হচ্ছে একটু হলেই মেরে ফেলবে। ইশা রিমির আরেকটু কাছে গিয়ে, ফিসফিস সুরে বলে,

‘ জানো? একদিন আমাদের মেডিকেলে বড় একটা অনুষ্টান হয়েছিলো, সেখানে আমি এবং অয়ন কাপল ডান্স দিয়েছিলাম। আমি একটা সাদা গ্রাউন পড়েছিলাম এবং অয়ন একটা সাদা ব্লেজার। ইসস কত্ত কিউট লাগছিলো অয়নকে এন্ড জানো? অয়নের হাত ছিলো আমার কোমড়ে। জাস্ট ইমাজিন রিমি কত্ত কিউট লাগছিলো আমাদের। ‘
ইশার কথা শুনে রিমি একপ্রকার ঘোরে চলে যায়। সামনে ভেসে উঠে অয়ন এবং ইশার সেই নাচের মুহুর্ত। ইশা অয়নের কাধে হাত রেখেছে এবং অয়নের হাত ইশার কোমড়ে। ব্যাস রিমিকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। দ্রুত উঠে ইশার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।রিমির সেই ভয়ংকর দৃষ্টি দিকে ইশা চটজলদি দাঁড়িয়ে। রিমি রাগে ফুশতে ফুশতে বলে,

‘ শাকচুন্নি! আমার বরের কাধে হাত রেখে নাচা? আবার সেই গল্প আমাকেই শুনাচ্ছিস? তোকে তো….’
কথাটি বলেই রিমি ফুলদানিটি হাতে নিয়ে ইশার পিছনে দৌড় লাগায়। ইশা ‘ মাগো বাঁচাও ‘ বলে চেচাতে চেচাতে রিমির থেকে বাচতে দৌড়াতে থাকে। রুজা চৌধুরী কেবলমাত্র ড্রইংরুমে ঢুকেছিলো। রিমিকে ফুলদানি নিয়ে এগোতে দেখে, নিজেও ভয় পেয়ে ইশার সাথে দৌড়াতে থাকে।

রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বললেন,
‘ কেউ ঐঝা ডাকো। এই মেয়েকে জিনে ধরেছে। ‘
রিমিও পিছনে তাড়া করতে করতে বলে,

‘ হ্যা হ্যা৷ ডাকো। ওই ইশা শাকচুন্নির মাথা থেকে আমার জামাইয়ের ভূত তারাতে হবে। ‘
অয়ন এবং রুহানা চৌধুরী সদর দরজা দিয়ে কেবল ঢুকছিলেন। বাড়ির এই অবস্হা দেখে তারা হতবাক হয়ে যায়। রুজা চৌধুরী দৌড়াতে দৌড়াতে পিছলে পড়ে যায়।
লেগেছে লেগেছে আগুন………

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৯

[রিমির রাগটা কেমন লাগলো??]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪১