তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৯

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৯
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ভালোবাসার মানুষটি বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও, তাকে
অঢেলা ভালোবাসা অন্যায়। শুধু অন্যায় নয়,তা এক জঘন্য পাপ। সানা স্পষ্ট জানে ফারহানের স্ত্রী জীবিত রয়েছে, তবুও ফারহানকে ভালোবাসার মতো পাপ করে বসেছে সানা। সানা ধীর পায়ে হেটে টেবিলে পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে। পাশেই ফারহানের ছবিখানা সাদা ফ্রেমে বাধাই করা। কালো ফরমাল পোষাক পরিহিত ২৮বছরের যুবকের প্রেমে বার বার পড়ে যাচ্ছে সানা। মানুষটা বোধহয় প্রেমের জাদু করে ফেলেছে সানা,নাহলে এতো মানুষ থাকা সত্ত্বেও সানার কেন এতো আকর্ষন ফারহান নামক যুবকটির প্রতি? অনুরুপভাবে ফারহানেরও কেন এতো আকর্ষন তার অসুস্হ স্ত্রী সুমাইয়ার প্রতি?

সানা তো দেখতে বড্ড সুন্দর। হ্যা রুপের দিক থেকে
সুমাইয়ার থেকে বেশ কয়েকধাপ এগিয়ে সানা।
কলেজ জীবনে হাজারো যুবকের রাতের ঘুম কেড়ে নিতো সানা। শুধু রুপেই এগিয়ে? উহু একদমই নয়। সানা একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বটে,যার ফলে আজ সে বড় কম্পানির বড় একটি পদে চাকরী করছে। সানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো, নিজের খুঁত খুজতে চাইলো, কিন্তু পেলো না। সানার মনে হলো সে যোগ্য ফারহানের, সুমাইয়া নয়। রাগে মাথায় আগুন ধরে গেলো পরক্ষনেই। সানা মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলো,
‘ মেরে ফেলবো আমি সুমাইয়াকে। একদম শেষ করে দিবো। সুমাইয়া স্যারের যোগ্য নয়। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুহানা চৌধুরীর কথায় অয়নের ললাটের বলিরেখায় বেশ সুক্ষ্ম চিন্তার রেশ পড়ে গেলো। রুহানা চৌধুরীর চোখ-মুখে উপচে পড়ছে অনুতাপের ছাঁয়া। রুহানা চৌধুরী বেশ আফসোসের সুরেই বললেন,
‘ আমি নিজের কম্পানির স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম অয়ন। পায়েলের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, তোমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও,কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা ভুল ছিলাম। ‘

অয়ন কোনরুপ জবাব দিলো। শক্তমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে, রুহানা চৌধুরীকে পাশ কাটাতে নিলে, রুহানা চৌধুরী অয়ন কাধে হাত রেখে নিচু গলায় বললেন,
‘ আমি যখন উপলব্ধি করতে পারলাম আমার নিজের স্বার্থের জন্যে, আমার নাতী আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তখন আমি ঠিক করি তোমাদের আমি পুনরায় বিয়ে দিবো। অনেক ধুমধাম করে। আমি আর কয়েকটা দিন বাঁচবো বলো দাদুভাই? মরে যাওয়ার আগে তোমাদের সুখে দেখি চলে যেতে যাই। ‘

কথাটি বলেই নেত্রপল্লবে জমে থাকা জলগুলো মুছে নিলেন রুহানা চৌধুরী। অয়ন রুহানা চৌধুরীর শেষের কথাটি শুনে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। পিছনে ঘুড়ে রুহানা চৌধুরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। যতই হোক বাবা -মায়ের পর তো রুহানা চৌধুরীকেই সবথেকে বেশি ভালোবাসে অয়ন। রুহানা চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে এমন দৃশ্য দেখে ক্রোধান্তিত হয়ে উপরে চলে যায়। রিমি ইশার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, অয়ন এবং রুহানা চৌধুরীকে দেখে মুচকি হাসে। অবশেষে মান-অভিমান এবং সমস্ত ঝগড়ার সমপ্তি হলো নাতী এবং দাদুর মাঝে। রিমির বেশ ভালো লাগলো দৃশ্যটি। রুহানা চৌধুরী অয়নকে ছাড়িয়ে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে কাছে ডাকলো। রিমিও ধীর পায়ে রুহানা চৌধুরী সামনে দাঁড়ালো। রুহানা চৌধুরী রিমিকে অয়নের পাশে দাঁড় করিয়ে, তৃপ্তির সুরে বললেন,

‘ আহা কি সুন্দর লাগছে দুটিকে। কি বলো ইশা? ‘
ইশার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই,ইশার ধ্যান ফিরে। সে যেন অন্য এক জগতে বিভোর ছিলো এতোক্ষনে। প্রশ্নের সমক্ষীন হতেই, চটজলদি অধরের কোণে জোড় করে হাসি টেনে, উত্তর দিয়ে বলে,
‘ হ্যা, হ্যা! অনেক সুন্দর মানিয়েছে। ‘
‘ হ্যা এইবার দুটির চারহাত এক করতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত।’

কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী অয়নের হাতের উপর হাত রেখে দেয়। অয়নও শক্ত করে রিমির হাত ধরে, রিমির কানের কাছে গিয়ে আলতো সুরে বলে,
‘ এইযে তোমার হাতখানা ধরে রাখলাম। আজীবন শক্ত করে ধরে রাখবো তোমার হাতটা। তুমি চাইলেও কখনো ছাড়বো না। ‘

‘ মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল ডক্টর এয়ারসি। জীবনের মোড় হুট করে বদলে যেতে পারে, কখনো হয়তো আমার হাত আপনিই ছেড়ে যাবেন পরিস্হিতির স্বীকার হয়ে। ‘
‘ জীবনে হাজারো কঠিন পরিস্হিতি আসবে রিমিপরী, হয়তো সাময়িক সময়ের জন্যে আমরা আলাদা হয়ে গেলেও, ঠিকই আবার এক হয়ে যাবো।

দিনশেষে রিমিপরীকে অয়নের দারপ্রান্তে এসেই দাঁড়াতে হবে। মনে রেখো। ‘
অয়নের কথায় অবাক না হয়ে পারলো না রিমি। লোকটাকে সে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা বললো, তবুও লোকটা আগের মতো রেগে না গিয়ে, শান্তভাবে তাকে উত্তর দিয়ে দিলো। রিমি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে, পুনরায় বিয়ের কথা শুনে অয়নের চোখমুখে আলাদা এক আনন্দ কাজ করছে, কিন্তু রিমি? সে কি আদোও খুশি?
[ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

আমানের কথায় মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না, আমান তার অপ্রাপ্তিময় ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছে। আমান এখনো রিমিকে তীব্রভাবে ভালোবাসে, তা আমানের কথায় স্পষ্ট। মেঘ কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,
‘ আপনি কি এখনো রিমিপুকে ভালোবাসেন? ‘
‘ হ্যা। এখনো ভালোবাসি। আজীবন ভালোবেসে যাবো। ‘

আমানের নিসংকচ জবাব। মেঘের ভিতরটা যেন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। কান্না পাচ্ছে কিশোরীর। কিশোরী বয়সে প্রথম ভালোলাগার মানুষটি হচ্ছে আমান, কিন্তু সেই ভালো লাগার মানুষটির মনে অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা দেখে বেশ রাগ হয় কিশোরীর। কিশোরী বেশ রাগ নিয়েই বলে,
‘ যে এখন অন্যকারো, তাকে ভালোবাসা কি অন্যায় নয়? আপনার উচিৎ তাকে ভুলে যাওয়া।”
মেঘের কথায় অদ্ভুদ ভাবে বিদ্রুপে হাসি হাসলো আমান। তা দেখে রাগ নাকের ঢগার চলে গেলো মেঘের। আমান আলতো হেসে শরীর হেলিয়ে বললো,

‘ তুমি এখনো বেশ ছোট মেঘ। তাই এমন কথা বলছো। ‘
‘ আমি ছোট নই। বেশ বড় হয়েছি আমি। ১৬ তে পা দিলাম, আর দুইবছর পর বিয়ের উপযোগী হয়ে যাবো। ‘
গাল ফুলিয়ে বেশ রাগ নিয়েই কথাটি বললো মেঘ। আমান পুনরায় হেসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ প্রথম প্রেম এবং প্রথম ভালোবাসা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর এক অনুভুতি। প্রথম ভালোবাসাকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না, তাকে মনের গহীনে সুপ্ত করে লুকিয়ে রাখতে হয়। প্রথম ভালোবাসা অসমাপ্তি নামক গল্পের পাতায় নাম লেখালেও, তা এক সুন্দর অনুভুতি হিসেবেই আজীবন থেকে যায়। ‘

আমানের কথাটি শুনে মুহুর্তেই সব রাগ উবে গিয়ে, একরাশ মুগ্ধতা ঘিড়ে ধরলো মেঘকে। কথাগুলো সত্যিই বড্ড মোহনীয়। মেঘ আনমনে প্রশ্ন করে বসলো,
‘ আপনি কি কাউকে জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো ভালোবাসবেন না? ‘
আমান খুব বিচক্ষন্নতার সহিত বললো,

‘ মানুষ বার বার প্রেমে পড়বে, এইটাই স্বাভাবিক। হয়তো আমার জীবনেও দ্বিতীয়বারের প্রেম আসবে,কিন্তু প্রথম প্রেমকে কখনো ভুলবো না আমি। ‘
কথাটি বলেই চলে যায় আমান। মেঘ ও তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে হাটতে শুরু করে। আমানের কথায় প্রথমে রাগ হলেও, বেশ মুগ্ধতা কাজ করছে মেঘের।

রিমি তার ঘরে কাপড় ভাজ করছে। ঘড়িতে প্রায় রাত দশটা ছুইঁছুই। এখনো অয়নের আসার নাম নেই। সেই সাতটার দিকে ইশাকে সঙ্গে নেই কোথায় যেন বেড়িয়ে গিয়েছিলো এখনো আসেনি। রিমির রাগ হচ্ছে, যা সময়ের সাথে প্রখরভাবে বেড়েই চলছে। রিমিকে না বলেই ইশার সাথে বেড়িয়ে গেলো অয়ন অথচ রিমিকে বলার প্রয়োজন করলো না। সময় গড়াচ্ছে তার সাথে বেড়ে চলছে রিমির ভিতরের অস্হিরতা। এখন ঘড়িতে রাত প্রায় ১টা ছুইছুই। এখনো অয়ন আসেনি। অন্য একটি মেয়ের সাথে এতোক্ষন বাইরে করছে টা কী অয়ন? প্রশ্নটি মাথায় ঘুড়পাক খেতেই, রিমি গলা ফাটিয়ে কান্না আসে। সঙ্গে সঙ্গে মনে দখল করে নেয় একদল অভিমান। পরক্ষনে রিমি নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে বসে,

‘ আচ্ছা! আমি তো ডক্টর এয়ারসিকে ভালোবাসি না। তবে কেন এতো রাগ হচ্ছে আমার? কেন এতো অভিমান হচ্ছে আমার? ‘
রিমির প্রশ্নের মাঝেই, অয়ন প্রবেশ করে। গলার টায় নাড়াতে নাড়াতে, রিমির কাছে এসে। অতঃপর রিমির গাল ধরে, আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,

‘ রিমিপরী তুমি খেয়েছো? আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছিলাম, তুমি যেন সময়মতো খেয়ে নাও। আমার আজকে দেরী হবে। তুমি তো আবার আমার বকা না খেলে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো না। ‘
রিমি অয়নের কথায় হাতের কাপড়গুলো বিছানায় রাখতে রাখতে অভিমানের সুরে বলে,

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৮

‘ বেলা পেরিয়ে যাওয়ার পরে, আমি খেয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করতে এসেছেন? এতোক্ষন তো ইশার আপুর সাথেই ছিলে। এখন আমার খবর নিতে এসেছেন কেন?’
অয়ন খানিক্ষন চুপ থেকে আনমনে হেসে, রিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ বেলা পেরিয়ে গেলেও, বেলা শেষে আমি তোমারই হয়ে থাকবো রিমিপরী। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪০