তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৪

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৪
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

অয়ন রিমিকে শপিংমল থেকে টানতে টানতে বাড়িতে এনে সোফায় সকলের সামনে ছুড়ে ফেলো দিলো। রিমি হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলো। পাশে থাকা কাঠের সাথে মাথায় বারি খেলো। ব্যাথায় কুকড়ে উঠলেও, টু শব্দটিও করলো না। শুধু হতবাক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে রইলো।রুহানা চৌধুরী এবং রোজা চৌধূরী সোফায় বসে ছিলো। অয়নের কান্ডে তারা দুজনেই বিস্ময় নিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে বসলো। অয়ন ক্রোধান্তিত হয়ে রিমির দিকে একপ্রকার তেড়ে গিয়ে, রিমির গাল চেপে ধরে বলে,

‘ কটা ফোন করেছি আমি? একটাও রিসিভ করেছো তুমি? ‘
ইশাও পিছন পিছন বাড়িতে প্রবেশ করে। রিমি কোনরকম কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,
‘ আস..লে ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো তাই আর কি। ‘
রিমির কথার মাঝেই, দ্বিগুন চিৎকার করে, অয়ন রিমির গালে চেপে ধরে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমার অনমতি ব্যাতিত, বাইরে যাওয়ার সাহস কী করে হয় তোমার রিমিপরী? এন্সার মি ড্যাম ইট। ‘
অয়নের প্রকোট চিৎকারে রিমি ভয়ে জোরসোর হয়ে গুটি মেরে বসে থাকে। অয়ন লাত্থি দিয়ে সামনে থাকা কাচগুলো ভেঙ্গে ফেলে। রাগে তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। বিকট শব্দ হয় মুহুর্তেই। ইশাকে দেখে রাগ আরেকদফা বেড়ে যায়। ইশার দিকে এগিয়ে, একপ্রকার শাসিয়ে বলে,

‘ আমার অনমতি ব্যতীত আমার রিমিপরীকে নিয়ে গেয়েছিলে কেন? বল? ‘
‘ আসলে আমি বুঝতে পারেনি যে,তুই এতোটা রেগে যাবি। ‘
‘ জাস্ট সাট আপ ইশা। একদম কথা বলবি না তুই। স্টুপিড একটা! ‘

ইশা মাথা নত করে ফেলে, সে ভাবতেও পারেনা সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে অয়ন এতোটা রেগে যাবে।
অয়ন পুনরায় রিমির হাত ধরে টানতে টানতে উপরে যেতে নিলে, রুহানা চৌধুরী তাতে বিঘ্ন ঘটিয়ে বলে,
‘ এইভাবে রিমিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো অয়ন? ওদের কি দোষ বলো তো? কয়েকদিন পর তোমাদের বিয়ে। তাইতো তাইতো ওরা শপিং এ গিয়ে ছিলো। ‘,

রুহানা চৌধুরীর কথার বিপরীতে অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে জবাব দিয়ে বলে,
‘ এতোই যদি শপিং করার ইচ্ছে থাকতো, তাহলে আমাকে বলতো আমি নিয়ে যেতাম, কিংবা গার্ডসদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিতাম কিন্তু ওরা তো তা করলো না বরং আমাকে না জানিয়েই চলে গেলো। এতো সাহস কে দিয়েছে ওদের? ‘
অয়নের কথার বিপরীতে রুহানা চৌধুরী দমে গেলেন, কিচ্ছুটি বললেন না। অয়ন রিমিকে নিয়েই উপরে চলে গেলো। রিমিকে নিজের ঘরে এনে, দরজা বন্ধ করে দিলো সশব্দে।

রিমি অয়নের থেকে দূরে সরে গিয়ে, আখিজোড়ার পল্লবে জমে থাকা জলটুকু মুছে, রুখে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আমি তো শুধুমাত্র শপিং এ গিয়েছিলাম ইশা আপুর কথায়, আমি বুঝিনি আপনি এতোটা রেগে যাবেন। ‘
রিমিকে পুনরায় চেপে ধরে, দাঁতে দাঁতে চেপে ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ তোমাকে আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি তোমার জীবনের সব বিষয়ে, সব সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আমি নিবো। তুমি শুধু আমার রিমিপরী। আমাকে না বলার যাওয়ার সাহস কি করে হলো তোমার? আজ তুমি যা করেছো তার শাস্তি তুমি পাবে রিমিপরী। আজ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত তুমি বাইরে যেতে পারবে না। ‘

কথাটি বলেই হন্তদন্ত হয়ে নিজ কক্ষ ত্যাগ করলো অয়ন। রিমি স্তব্ধ হয়ে রইলো। কাল পর্যন্তও তো সব ঠিক ছিলো, কিন্তু আজ হঠাৎ অয়নের কি হলো? তাকে না বলে শপিং মলে যাওয়ার মতো সামান্য এক ভুলে, এতোটা ক্ষিপ্ত হলো কেন অয়ন? এতোটা ঘর্হিত অপরাধ তো রিমি করেনি তবে? রিমি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ললাটের কোণে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। রিমির নেত্রপল্লবে বৃষ্টিপাতের ন্যায় গড়গর করে জল গড়াতে লাগলো। রাগে,দুঃখে, অপমানে ব্যাথিত হলো হৃদয়। সামান্য একটি ভুলের কারনে অয়ন তাকে সকলের সামনে অপমান করলো? রিমির কি তবে সামান্যটুকু স্বাধীনতাও প্রাপ্য নয়? মেঘ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো রিমির ঘরে। রিমিকে দেখে হাফাতে হাফাতে বললো,

‘ রিমিপু! জানো আজ সকালে অফিসে কি হয়েছে? ‘
রিমি দ্রুত নিজের চোখের জল মুছে, মেঘকে প্রশ্ন করে করলো,
‘ কেন কি হয়েছে? ‘
‘ আজ তো ভাইয়া অফিসে গিয়েছিলো, হসপিটালে না গিয়ে, একটি জরুরী মিটিং থাকায়। ‘
‘ তো কি হয়েছে সেখানে? ‘
মেঘ কিছুক্ষন নিরব থাকলো। মেঘের নিরবতা রিমির ভিতরে অস্হিরতা সৃষ্টি করলো ক্ষনে ক্ষনে। রিমি ফের পাল্টা প্রশ্ন করলো,
‘ কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো। ‘

মেঘ নিরবতা ভেঙ্গে বলতে লাগলো অফিসের ঘটনা। আজ অফিসে বাইরের দেশ থেকে কিছু লোক এসেছিলো প্রযেক্টের ব্যাপারে। মিটিং এর মাঝে হুট করে তাদের সাথে অয়নের কথা কাটাকাটি লেগে যায়। অয়ন এতোটাই রেগে গিয়েছিলো যে, লোকগুলোকে মারতে শুরু করে দিয়েছিলো। বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। যখন কয়েকজন দেহরক্ষী অয়নকে আটকাতে যায়, তখন রেগে গিয়ে তাদের হাতে গুলি করে দেয় অয়ন। পুরো অফিসে একপ্রকার ধংসলিলা ঘটায়। আশরাফ চৌধুরী কোনরকম ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়, যদিও অনেকেই আহত হয়ে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। সবকিছু শুনে রিমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। সে ভাবতে পারছে না অয়নের হুট করে কি হলো? অয়ন তো প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠছিলো তবে আজকে কি এমন হলো যার কারণে এতোটা পরিবর্তন অয়ন।

অয়ন তার বারে বসে একের পর এক ওয়াইনের বোতল শেষ করে দিচ্ছে। মাথাটা ধরে যাচ্ছে তার। সকাল থেকেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে তার। যার ফলে আজ সে একপ্রকার হিতাহিতশূন্য হয়ে পড়েছে। হুট করে রিমির কপালে সেই দাগের কথা মাথায় চলে আসতেই, কাচের বোতলে সজোড়ে বারি মারে। আজ তার কি হয়েছে, সে নিজেও বুঝতে পারছে না, সে নিজের অজান্তেই তার রিমিপরীকে আঘাত করে ফেলেছে, ভাবতেই বুকের ভিতরটা ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে অয়নের, কিন্তু সে বা কি করবে?

রিমি কি জানে না?অয়নের চিন্তা হতে পারে তার জন্যে। অফিসে ঝামালার মাঝে যখন অয়ন তার সার্ভেন্টদের মাধ্যমে জানতে পেলো, রিমি তাকে না জানিয়েই বেড়িয়েছে তখন মাথা বিগড়ে গিয়েছিলো অয়নের। শপিং মল থেকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে এসেছিলো রিমিকে। অয়ন ওষুধ টা দ্রুত বের করে খেয়ে নেয়, তবুও যেন মাথা ব্যাথা কমছে না তার। অয়ন চুল খামচে বসে থাকে।

গভীর রাতে রিমি ঘুমন্ত অবস্হায় অনুভব করে কেউ তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পুরুষের হাতের শীতল স্পর্শে ধরফরিয়ে উঠে বসে রিমি। অয়নকে নিজ কক্ষে উপস্হিত দেখে,প্রশ্ন করে,
‘ আপনি এতো রাতে এখানে কেন? ‘
অয়ন উত্তর দেয় না। হাতে থাকা ওষুধটা রিমির ক্ষত স্হানে লাগিয়ে দেয় পরম যত্নে। অতঃপর খানিক্টা নরম গলায় বলে,
‘ বেশি ব্যাথা পেয়েছো। ‘

রিমি মুখ বেকিয়ে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ নিজে ব্যাথা দেয় আবার নিজেই ওষুধ লাগিয়ে দেয়। সাইকো লোক একটা। ‘
হুট করে অয়ন রিমিকে জড়িয়ে, কান্নার সুরে বলে,
‘ তুমি আমার এক বিশাল দূর্বলতার জায়গা রিমিপরী। তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে সর্বদা তাড়া করে বেড়ায়। তুমি আমার প্রতিটি রন্ধে রন্ধে মিশে রয়েছো। তুমি যে আমার প্রখর নেশা। ‘
রিমির অয়নের ভালোবাসা মিশ্রিত কথার বিপরীতে কিছু বলে না। শুধু অয়নের বুকে লেপ্টে থাকে। রিমি শুধু বুঝতে পারছে না, হঠাৎ অয়নের আচরণ আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কেন? নিশ্চই এর পিছনে কোন কারণ আছে।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৩

আমান ব্যাগ গুছাচ্ছিলো, দুইদিন পর তার ফ্লাইট তাই এখনি সব গুছিয়ে রাখতে হচ্ছে। আমানের দরজায় কেউ নাড়লে, আমান তার কাজ রেখে, দরজা খুলে দেখে পায়েল …………

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৫

2 COMMENTS

Comments are closed.