তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৫

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৫
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

‘তোমার ভালোবাসার মানুষটির কয়েকদিন পর বিয়ে অন্যকারো সাথে, আর তুমি? দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছো? এইটা তো ঠিক নয় আমান। ‘
উক্ত কথাটি বলেই একপ্রকার ঠেলে আমানের ঘরে ঢুকলো পায়েল। পায়েলের কথা শুনে আমানের মনটা তিক্ততায় ভরে উঠলো। পায়েলের কথাটি যেন কাটা গায়ে নুনের ছিঁটের মতো ঠেকলো আমানের কাছে। আমান ভ্রু কুচকে তিক্ততার সহিত পায়েলকে প্রশ্ন করলো,

‘ আপনি হঠাৎ আমার বাড়িতে এইসব কথা বলছেন কেন? আপনাকে তো অয়ন চৌধুরী খুঁজে বেড়াচ্ছে। ‘
‘ তা তো আপনাকেও খুঁজে বেড়াচ্ছে, তাইতো ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছেন আপনি। ‘
আমান পায়েলের কথা ক্ষিপ্ত হয়ে, পায়েলের কাছে গিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ অয়ন চৌধুরীর ভয়ে নয়, রিমিপরীকে যেন কখনো ফেস করতে না হয় সেজন্য চলে যাচ্ছি। রিমিপরী এখন অন্যকারো স্ত্রী, অন্য কাউকে ভালোবাসে। আমি দেশে ফিরেই এসেছিলাম রিমিপরীর জন্যে, এখন যখন রিমিপরী অন্য কারো সাথে সুখে আছে, তখন আমি কেন শুধু শুধু দেশে পড়ে থাকবো? ‘
পায়েল পাশে থাকা চেয়ারে আরাম সহকারে বসে। আমান তা দেখে বলে,
‘ আপনাকে আমি বসতে বলিনি। ‘

‘ দাঁড়িয়ে থাকলেও তো বলেন নি। তাই বসলাম। যতই হোক আমি আপনার বাড়ির অতিথি। বসতে তো পারিই তাইনা? ‘
আমানও পাশে থাকা চেয়ারে বসে তাচ্ছিল্যতার সুরে সুধায়,
‘ আমান শিকদার যে কেউ হতে পারে না। অন্তত্য আপনার মতো মানুষ তো নয়ই। ‘

আমানের ঠান্ডা মাথায় বলা অপামানে রাগ হলেও, দমে যায় পায়েল। এখন তাকে মাথা ঠান্ডা করতে হবে। উত্তেজিত হয়ে গেলে চলবে না। পায়েল কিছুটা কুটিল হেসে, ফের প্রশ্ন ছুড়ে আমানের উদ্দেশ্যে,
‘ ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো সাথে দেখতে কষ্ট হয় না? ইচ্ছে করেনা তাকে নিজের করে পেতে। আপনি চাইলে কিন্তু আমি আপনার সাহায্য করতে পারি…..’

পায়েলকে সম্পূর্ন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, আমান অত্যান্ত ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়,
‘ আমি জানি আপনি এখানে কেন এসেছেন। আপনি চাইছেন আমাকে ব্যবহার করে রিমিপাখি এবং অয়ন
চৌধুরীর বিয়েতে বাঁধা সৃষ্টি করবেন, বাট ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন। আপনার এই জঘন্যতম ইচ্ছেটি কখনোই পূরণ হবেনা। ‘
আমানের কথা শুনে পায়েল দমে যায়। আমান তার পাশে থাকা টেবিল থেকে পানির গ্লাসটি নিয়ে, তা পান করতে করতে বলে,

‘ ভালোবাসার একটি অন্যতম সূত্র হলো,
ভালোবাসার মানুষটির সুখের মাঝেই, নিজের প্রকৃত সুখ খুঁজে পেতে হয়। রিমিপরী ভালো আছি তাই রিমিপরীর সুখে আমিও সুখি। ‘
কথাটি বলেই, পরক্ষনেই মুখশ্রী শক্ত করে পায়েলের দিকে তিক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

‘ যদিও এইসব কথা আপনার মতো লেইম মেয়ের মাথায় ঢুকবে না। আপনি এখন আসতে পারেন। ‘,
আমানের কথা শুনে, পায়েল রেগে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আমান যে ঠান্ডা মাথায় বেশ ভালো ভাবেই অপমান করেছে, তা বুঝতে পায়েলের তেমন কোন সমস্যা হয় না। পায়েল রাগে অপমানে গটগট করে বেড়িয়ে যায়। আমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে, পুনরায় নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রিমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে আছে। মেঘ জমেছে আকাশে, ক্ষনিকের মেঘ। কিছুক্ষনের মাঝে বিশাল আকাশের মেঘগুলো অভিমান করে, কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। সূর্যি মামার দেখা মেললো। কড়া রোদে চারিপাশ টা আলোকিত হয়ে উঠেছে মুহুর্তেই। রিমি চায়ের কাপে ঠোট দেয়। তৎক্ষনাৎ রিমির ফোন বেজে উঠে।রিমি হাত বাড়িয়ে, ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে। ফোনের অপাশ থেকে নিজের মায়ের কন্ঠ শুনে, খুশিতে আবেগপ্রবণ হয়ে প্রশ্ন করে,
‘ মা! তুমি আমায় ফোন করেছো? কি খবর তোমার মা? আর মামা, আমার বোনেরা কেমন আছে? ‘

‘ তুমিতো এখন নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের খবর জেনে কি করবে তুমি? ‘
নিজের মায়ের অভিমান বুঝতে ক্ষীন্ন সময়টুকুও নিলো না রিমি। কয়েকটা দিন সে বেশ ব্যস্ত থাকা বিধায় নিজের মাকে ফোনটুকু দিয়ে খবর দেওয়ার সময়টুকুও পায় নি। তাইতো মায়ের এতো অভিমান!
রিমি অত্যান্ত শান্ত হয়েই বলে,

‘ বুঝেছি তোমার ঢের অভিমান হয়েছে। ‘
মেয়ের কথায়, অধরের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসির ফুটিয়ে, রিমির মা বললেন,
‘ না, না আমার আবার কিসের অভিমান? বিয়ের পর মেয়েরা পর হয়ে যায়। এইটাই তো নিয়ম তাইনা?’
‘ মা আসলে….

রিমির কথার মাঝে, রিমিকে থামিয়ে রিমির মা রিমিকে প্রশ্ন করলেন,
‘ থাক আমি আর কোনরকম এক্সকিউজ শুনতে ইচ্ছুক নই। তা শুনলাম তোমার নাকি ঘটা করে আবারোও বিয়ে হচ্ছে। কিছুই তো বললে না। মানুষের মুখে আমাকে শুনতে হয়,আমার মেয়ের বিয়ের কথা। ‘
রিমি তার মায়ের কথার বিপরীতে কিচ্ছুটি বললো না চুপটি করে রইলো, সে জানে সিলেটে অয়ন তার পরিবারের সাথে যা করেছে, তারপর থেকে রিমির মায়ের এক ক্ষোভ রয়েছে অয়নের প্রতি। তাইতো বিয়ের কথাটি এখুনি বলেনি রিমি, তার মাকে। রিমির মা কিছুক্ষন চুপ করে ফের বললেন,

‘ অয়ন চৌধুরী আমাদের যা করেছে,তা নিশ্চয় তুই ভুলে যাসনি। দেখ অয়ন কিন্তু স্বাভাবিক না। এমন অস্বাভাবিক মানুষের সাথে তুই কীভাবে থাকবি? আরেকবার ভেবে দেখ মা। জীবন কিন্তু একটাই। পারলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দে। ”
রিমি তার মায়ের কথায় অবাক না হয়ে পারলো না। সে জানে অয়ন স্বাভাবিক নয়, কিন্তু সে তো অয়নকে ভালোবাসে। তবে কীভাবে তার কথাটি বললো? রিমি তার মায়ের কথার বিপরীতে কিছু বলতে যাবে,তখনি পিছনে ভেঙ্গে যাওয়ার কোন শব্দ শুনে পিছনে ঘুড়ে দেখে অয়ন রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশেই পড়ে আছে ভাঙ্গা টপটা। রিমি দ্রুত ফোনটা কেটে দেয়। ফোনটা স্পিকারে ছিলো বিধায়, অয়ন সব শুনে ফেলেছে। অয়ন রিমির কাছে দ্রুত এসে, রিমির কাঁধ চেপে হুংকার ছেড়ে বলে,

‘ কি বললো তোমার মা? আবারোও ডিভোর্সের কথা কেন বললো? উনার সাহস কি করে হয় এই কথাটি বলার? ‘
রিমি জানে অয়ন বেজায় চটে আছে। অয়নকে শান্ত করতে হবে কোনভাবে, নাহলে কোন অনিষ্ট করে ফেলবে। রিমি অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে বলে,

‘ আপনি দয়া করে রাগ করবেন না। আমাকে আপনার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি৷ কোথাও ছেড়ে যাবো না। কেউ আমাকে আপনার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন রিমিকে শক্ত করে চেপে, বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ কেউ যদি কেড়ে নিতে চায়, সে যেই হোক আমি তাকে শেষ করে দিবো আজীবনের জন্যে। ‘
অয়ন কথাটি বিড়বিড় করে বললেও, রিমি ঠিক শুনতে পেলো। ভয়ে শিউরে উঠলো সর্বোঙ্গ।

রিমি এবং অয়নের আজ মেহেংদী। শহরের এক নাম্বার নামি-দামি পার্লারে রিমিকে নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে যে তাকে একদম সুন্দর করে সজ্জিত করে তুলা হবে। পার্লারের বাইরে মহিলা দেহরক্ষীরা দাঁড়িয়ে আছে। রিমিকে বিভিন্ন লেহেংগা দেখাচ্ছে স্টাফরা।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৪

পায়েল দূর থেকে রিমিকে দেখে যাচ্ছে। সেদিন হসপিটালে লোকগুলোকে পাঠিয়ে রিমিকে মেরে ফেলতে পারেনি,তবে আজ তা করবেই। রিমিকে সাঁজানো হচ্ছিলো, তখনি হুট করে লোড শেডিং হয়। পায়েল পিছনে ছুড়ি হাতে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। লোড শেডিং হওয়ায়, সকলে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায়। রিমি তার নিজের স্হানেই বসে আছে। সকলকে বেড়িয়ে যেতে দেখে, পায়েলও রিমির কক্ষে প্রবেশ করে। হাতে তার ছুরি। আজ সে রিমিকে শেষ করে দিবে। অয়ন তার ক্যারিয়ার শেষ করেছে, তাই পায়েল অয়নের থেকে তার সবথেকে দামী রিমিপরীকে কেড়ে নিবে।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৬

2 COMMENTS

Comments are closed.