তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৬

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৬
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

পায়েল ছু/ড়িখানা নিয়ে রিমির দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে, রিমি অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছে না। রিমি হাত বাড়িয়ে নিজের ফোন খুঁজে অন্ধকারের মাঝে,কিন্তু ব্যর্থ হয়। রিমি হাক ছেড়ে পার্লারের স্টাফদের ডাকতে চাইলেও, পারেনা তার আগেই রিমির মুখ শক্ত করে চেপে ধরে ফেলে। রিমি ভরকে যায়। ছুটার জন্যে ছটফট করতে থাকে অনবরত কিন্তু পারেনা। অন্ধকারের জন্যে কিচ্ছু দেখার সাধ্যি নেই তার।

সে বুঝতে পারছে না কে তার মুখ ধরে আছে কিন্তু, সে এইটুকু পারছে সে এক ভয়ংকর বিপদের সমখীন হয়ে পড়েছে। মনে মনে মহান আল্লাহ তায়ালাকে স্বরং করছে। পায়েল ধারালো ছু/ড়িটি রিমির গলা বরাবর ধরে। নিজের গলায় ছু/ড়ির অস্তিস্ব টের পেয়ে, রিমির বুঝতে বাকি থাকে না,রিমির হাতে সময় নেই। হয়তো এখুনি তাকে মে/রে ফেলা হবে। রিমির চোখে ভেঁসে উঠে অয়নের হাসিমাখা মুখস্রী। রিমি দু ফটো চোখের জল ফেলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়নের সাথে বোধহয় তার পথ এইটুকুই ছিলো। পায়েল মনে মনে কুটিল হাসে হাসে। রিমি মৃত্যুর দারপ্রান্তে। রিমিকে মে/রে সে তার সমস্ত প্রতিশোধ নিবে। রিমিকে মে/রে ফেললেই অয়ন পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে। কথাটি ভেবেই পায়েল রিমির গলায় ছুরির আঘাত করতে নিলে, পিছন থেকে পায়েলকে কেউ টেনে নিয়ে যায় বাইরের দিকে। পায়েলের হাত থেকে ছু/ড়িটা পড়ে যায়। ঘরটা মুহুর্তেই, আলোকিত হয়ে উঠে। রিমি উঠে দাঁড়ায় তৎক্ষনাৎ।

পাশে ছু/রি পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে মুখে হাত দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অয়ন এবং তার দেহরক্ষীরা উপস্হিত হয়। রিমিকে ভয় পেতে দেখে অয়ন ছুটে গিয়ে রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিমিও ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অয়নকে শক্ত করে চেপে ধরে। নেত্রকোণ বেয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। অয়নকে দেখে রিমি যেন তার ভরসার জায়গা খুঁজে পেলো। এখন তার কোন কিছুতেই ভয় নেই। রিমি খানিক্টা ফুঁপাতে ফুপাতে কম্পিত গলায়,

‘ কেউ এসেছিলো আমাকে মারতে, আমার গলায় ছু/রি বসিয়ে দিয়েছিলো একপ্রকার। কিন্তু তাকে আমি দেখতে পাইনি। আরেকটু হলে বোধহয় আমাকে মে/রেই ফেলতো। ‘
রিমির সম্পূর্ন কথা বলার পূর্বেই, রিমির মুখ হাত দিয়ে অয়ন অতি শান্ত কন্ঠে বলে,
‘ ম/রার কথা একদমি উচ্চারণ করবে না রিমিপরী। তুমিতো আমার অসিস্ত্বে বিচরণ করো, তোমাকে আমি কিছুতেই নিজের থেকে হারাতে দিবো না। ‘

অয়ন পরম যত্নে রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে রিমিকে শান্ত করার প্রচেষ্টা করে। অতঃপর শান্ত কন্ঠে অধরের কোণে বাকা হাসি ঝুলিয়ে আস্তে করে অয়ন রিমিকে বলে,
‘ যে কিংবা যারা তোমাকে আমার থেকে দূরে করার চেস্টা করে যাবে, তাদের অসিস্ত্ব আমি বিলিন করে দিবো। ‘

রিমি থমকে যায়। অয়নের কথার মূল ভাবটি বুঝার প্রয়াস করার আগ মুহুর্তে, অয়ন রিমিকে সামনে থাক চেয়ায়ে বসিয়ে দেয়। অয়নের চোখ যায় রিমির গলায় দাঁগের দিকে। পায়েল ছু/ড়ি যখন রিমির গলায় ধরেছিলো, তখন রিমির গলায় ছু/ড়ির সামান্য ধারে রিমির গলার নীচের দিকে সামান্য চামড়া ছিলে গিয়ে, র/ক্তখনন হয়। রিমির র/ক্ত দেখে মাথা বিগড়ে যায় অয়নের। অয়ন রিমির গলার দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে স্টাফদের ডাকতে শুরু করে। অয়নের ডাকে সকলে তৎক্ষনাৎ ছুটে আসে। অয়ন রাগে গর্জাতে গর্জাতে জিজ্ঞাসা করে,

‘ এতোক্ষন লাগে কেন? একটা কাজ যদি ঠিক মতো হয়। আমার রিমিপরীর খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলাম, পেরেছিলে তোমরা? ব্লাডি অল। ‘
সব স্টাফরা নীচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন তাদের দিয়ে ওষুধ আনিয়ে, রিমির ক্ষ/ত স্হানে ওষুধ লাগিয়ে দেয়। অয়নের চোখ ছলছল করছে রিমির সামান্য ব্যাথায়,যেন ব্যাথা রিমির নয় তার লেগেছে। রিমি প্রাপ্তির হাসি হাসে। সে সত্যি ভাগ্যবতী। সে জানে এসব নতুন কিছু নয়, কিন্তু মাঝে মাঝে সে অবাক হয় বটে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসতে পারে?

অতঃপর রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
‘ ভয় পেয়ো না, আমি আছি তো। ‘
রিমির স্মিত হেসে,অয়নের বলিষ্ট হাতজোড়া নিজেত গালের সাথে আলতো করে মিশিয়ে, অয়নের আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আপনি শুধু আমার ভালোবাসার মানুষ নন, আপনি আমার বিশাল এক ভরসার জায়গায়। ভালোবাসি। ‘
অয়ন হেসে উঠে তার রিমিপরীর কথায়। অয়নও রিমির কথার বিপরীতে, রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দেয় শুধু।
‘ আমি তাহলে উঠি। তুমি রেডি হয়ে নাও। দেখা হচ্ছে সন্ধ্যায়। ‘

কথাটি বলে অয়ন তার পড়নে তার সাদা পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে চলে যেতে যায়,কিন্তু বাধা দেয় রিমি। হাত পেচিয়ে অয়নের হাত ধরে। নেত্রপল্লবে স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে অভিমান। তার ভালোবাসি কথার উত্তর না পাওয়ার গভীর অভিমান। অয়ন রিমির হাত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে,অত্যান্ত শীতল ভালোবাসার সহিত বলে,

‘ মনে রয়ে যায় অনেক কথা, সেসব কথাগুলোর প্রতিটি মালায় গেঁথে রয়েছে ভালোবাসি শব্দের প্রতিটি গভীর শব্দ। তুমি কি অনুভব করতে পারছো রিমিপরী? ‘
রিমি উত্তর দেয় না। মুচকি হেসে আখিজোড়া বুজে রাখে।

পায়েলকে মুখ-হাত পা বেধে টেনে হিচড়ে কিছু মহিলা দেহরক্ষীগন ফেলে দেয় সেই বিশাল কক্ষটিতে। পায়েল পড়ে যায়। মহিলা গুলো পায়েলের আখিজোড়া খুলে দেয়। সামনে শশরীরে অয়নকে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে ছিটকে দূরে যেতে নিলে, অয়ন পায়েলের হাত ধরে নিজের দিকে টেনে, পায়েলের দিকে ঝুঁকে যায়। অতঃপর সেই ধারালো ছু/ড়িটি পায়েলের সমস্ত মুখস্রীতে ছুঁইয়ে দিতে দিতে বলে,

‘ এই ছু/ড়ি দিয়ে তুমি আমার রিমিপরীকে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলে, তাইনা পায়েল ডার্নিং! ‘
পায়েল অয়নের কথার উত্তর দেয় না। ভয়ে কাঁপতে থাকে, কেননা সে বুঝে গিয়েছে, তা কতটা ভয়ংকর পরিনতি হতে পারে!

‘ আচ্ছা তুমি আমাকে কতটা বোকা মনে করো পায়েল বেবস? তুমি আমার রিমিপরীকে মে/রে ফেলতে চাইবে, অথচ আমি অয়ন চৌধুরী বসে থাকবো। এতোটা সাহস তোমার হয় কী করে? এন্সার মি! ড্যাট ইট। ‘

অয়নের হুংকারে হৃদয় কেঁপে উঠে পায়েলের। অয়ন রিমির প্রতিটা কাজে নজর রেখে দিয়েছিলো। এমনকি রিমি যেখানেই যায়, সেখানেই সিটি টিভি ক্যামেরা রেখে রিমির সমস্ত কাজ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিলো অয়ন, তাই পায়েল যখন রিমিকে মা/রতে যায় পার্লারে, সেই ঘটনাটি এড়ায় নি অয়নের চোখে। তখন পায়েলের স্পর্ধা দেখে রেগে গেলেও, শান্ত থাকে অয়ন। মনে মনে নানা কষ কষতে থাকে। অতঃপর বাঁকা হাসি দেয়।

পায়েলর আর্তনাদে অতীত থেকে ফিরে আসে অয়ন। পায়েল অয়নের পা ধরে, অনুরোধ করে বলে,
‘ এইবারের মতো ছেড়ে দাও অয়ন। আমি কখনো তোমাদের মাঝে আসবো না। ‘
‘ সেই সুযোগ দিলে তো। তুমি এখন চাইলেও আমাদের মাঝে কখনো ঢুকতে পারবে না। সেই ব্যবস্হা আমি করে দিবো। ‘
অয়ন কথাটি বলেই, সিগারেটের প্যাকেট বের করে, তা ঠোট চেপে ধরে, অতঃপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে,
‘ আগের বার বেঁচে গিয়েছিলে পায়েল, কিন্তু এইবার তুমি পার পাবে না। তুমি আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছো, তার বিনিময়ে এইবার তোমাকে নিজের জানকে কোরবানী দিতে হবে। ‘

পায়েল কাঁদতে কাঁদতে অয়নের পা ধরে পুনরায় মিনতির সুরে বলে,
‘ আমাকে মে/রো না অয়ন। আমি বাঁচতে চাই। ‘
অয়ন পা দিয়ে পায়েলকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলে। অতঃপর মহিলা গার্ডদের কিছু একটা ইশারা করে, মহিলা গার্ডরা পায়েলকে ধরে পিছনের ঘরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। সেখানে খাঁচায় এক ক্ষুধার্ত বাঘ বন্দী আছে। তাকে দেখে ভয়ে হাত -পা ঘামতে শুরু করে পায়েলের। অয়ন ছু/ড়িটা ফেলে, পায়েলের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘ তুমি আমার কাছে বরাবরই স্পেশাল। তাই তোমার মৃ/ত্যু টাও একটু স্পেশাল হয়ে যাক! কি বলো? ‘
পায়েল অয়নকে কিছু বলার পূর্বেই, মহিলা দেহরক্ষীগুলো পায়েলকে খাঁচায় ফেলে ছুড়ে দেয়। ক্ষুধার্ত বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়েলের উপর। অয়ন গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। পায়েলের আর্তনাদ চারপাশেই সীমাবদ্ধ থাকে। অয়ন ঘাড় কাত করে বাঁকা হেসে বলে,

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৫

‘ পায়েলের গেইম ইজ ওভার নাও! নাও নেক্সট ইজ। ‘
অয়ন উচ্চস্বরে হেসে উঠে। পায়েলের দেহ বাঘটা খুবলে খুবলে ছি/ড়ে খেতে থাকে। অয়ন সিগারেট ধোঁয়া ছাড়তে থাকে।

[ অসুস্সতা + পরীক্ষার প্রেশারে?আমার নাজেহাল অবস্হা। গল্পটা তাই প্রতিদিন দিতে ব্যর্থ আমি। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্যে। ফি আমানিল্লাহ্ ?]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৭

1 COMMENT

Comments are closed.