তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৭

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৭
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারো জানা সত্ত্বেও,তার প্রতি ভালোবাসার স্হানটি আজীবন রয়ে যায়। আমানের বেলাও তা হয়েছে। আজ রিমির মেহেংদী অনুষ্টানে লুকিয়ে এসেছে সে। পরশুদিন রিমির বিয়ে,সেদিনই দেশ ছেড়ে দিবে আমান,কিন্তু নিজের প্রিয়তমার মেহেদী রাঙ্গা হাতটুকু দেখার লোভটুকুও সামলাতে পারলো না আমান। তাই এতোটা কড়া পাহারের মাঝেও,প্রেয়সীকে এক ঝলক দেখতে ছুটে এসেছে চৌধূরী বাড়িতে।

কিছুক্ষন এর মাঝেই, বিশাল এক গাড়ি থেমে যায়। সেই গাড়ি থেকে এক এক পা করে রিমি বেড়িয়ে যায়। সামনে বিশাল কার্পেটে তার পা বাড়িয়ে হাটতে থাকে সামনে। পিছনে রয়েছে মহিলা দেহরক্ষীগণ! আমান আড়াল থেকেই দেখতে পায়, তার রিমিপাখিকে আজ কতটা মোহনীয় লাগছে। লাল টুকটুকে লেহেংগা যার ভার আনুমানিক বেশ হবে। লাইট হাল্কা ম্যাকেপের সঙ্গে রিমিকে মানিয়েছে সবলিমিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উপর থেকে গোলাপ ফুলের বর্ষন করা হচ্ছে,রিমির উপর।চারিদিকে সাংবাদিকের ছড়াছড়ি ডক্টর এয়ারসি অর্থাৎ রুহানা চৌধুরীর একমাত্র নাতীর মেহেংদী সন্ধ্যা বলে কথা।এতো মানুষের মাঝে রিমির আখিজোড়া শুধু তার ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে চলেছে। রুহানা চৌধুরী এবং রুজা চৌধুরী ততক্ষনে চলে আসেন। রুহানা চৌধুরী রাজকীয় ভাবে উপস্হিত হয়। সমস্ত মিডিয়ার ক্যামেরা রুহানা চৌধুরীর দিকে চলে যায়। চারদিকে এতো আলো, এতো ক্যামেরার মাঝে রিমির বেশ অস্বস্হি হচ্ছে। রিমির পরানপাখি তো শুধু অয়নকে খুঁজে চলেছে প্রতিক্ষন।হুট করে রিমির গাঁয়ে সাদা সিল্ক কাপড় উপর থেকে ফেলে হয়। রিমিকে অবাক করে দিয়ে, অয়ন রিমিকে পিছন থেকে এসে কোলে তুলে নেয়।৷

অয়নকে দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, সামলে নেয় রিমি নিজেকে। অয়নের পড়নে রিমির সাথে মেচিং করে ডায়মন্ড স্টনের পাঞ্জাবি, সাথে কালো কোর্ট। অয়নের ফর্সা মুখস্রীতে আলতো হাসি, অয়নকে প্রতিক্ষনে সুদর্শন পুরুষে পরিনত করে তুলছে। অয়ন রিমির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
‘ আমার রিমিপরীকে শুধুমাত্র আমিই দেখবো। কোনপ্রকার দুনিয়ার আঁচ আমার পরীর গাঁয়ে লাগতে দিবো না। আমার বউ একান্তাই আমার। ‘

রিমি অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে, মুচকি হাসে। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে, তাদের উপর বর্ষিত হতে থাকে ফুলের বর্ষন। আমান দূর থেকে দেখে যাচ্ছে সবকিছু। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। আহা কি বেদনাদায়ক দৃশ্য! ভালোবাসার মানুষ অন্য কেউ ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে উঠে আমানের।
মেঘ ও দৌড়ে ছুটে আসে। সকলে মুগ্ধ হয়ে দেখতে রিমি এবং অয়নকে। মেঘ রুহানা চৌধুরীর কাছে গিয়ে, উৎফল্ল হয়ে বলে,

‘ দেখো গ্রেন্ডমা! কত্ত কিউট লাগছে দুজনকে। ‘
মেঘের কথায় মুচকি হেসে রুহানা চৌধুরী অয়ন এবং রিমির কাছে যায়। ইশাও মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। অয়ন রিমিকে কোলে করে স্টেজের নীচে নামায়। রুহানা চৌধুরী রিমির থুত্নি উচু করে, হেসে বললেন,
‘ মাশা-আলাহ। দুটিকে কি সুন্দর মানিয়েছে। দোয়া করি যেন,কারো নজর যেন না লাগে। ‘
রুহানা চৌধুরীর কথার প্রতিউত্তর অয়ন রিমির হাতজোড়া শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে,
‘আমি থাকতে,কাউকে নজর লাগতে দিবো না। তুমি চিন্তা করো না গ্রেন্ডমা। ‘

অয়ন রিমির হাত ধরেই, স্টেজে গিয়ে বসিয়ে দেয়। রিমিও বসে পড়ে। শহরের নামি দামি মানুষেরা উপস্হিত হয়েছে অয়ন এবং রিমির মেহেংদী উৎসবে। চারদিক থেকে ছবি তুলে যাচ্ছে সাংবাদিকগন। রিমির মাথায় লম্বা করে অয়নের দেওয়া সাদা ঘোমটি। রিমির মায়াবী মুখস্রী পর্দার আড়াল থেকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছে অয়ন এবং মুচকি মুচকি হাসছে। অয়নের হৃদয়কাঁপানো হাসিত বুকটা ধরফর করছে রিমির।লোকটা এতো সুন্দর করে হাসে কেন? লোকটা হাসলে মনে হয় স্বয়ং এক ফালি চাঁদ এসে কিরণ ছড়াচ্ছে চারদিকে। রিমিকে মেহেদী পড়ানোর জন্যে মেয়েরা রিমির কাছে আসতে চাইলে বাঁধা দেয় অয়ন। কিছুটা কঠোর স্বরে বলে,

‘ আপনারা রিমিপরীকে মেহেংদী পড়াবেন না। ‘
অয়নের এমন কঠোর কথায়, রুজা চৌধুরী অবাক হয়ে অয়নকে প্রশ্ন করে,
‘ তাহলে? উনারা না পড়ালে কে পড়াবে? উনারা শহরের বেস্ট মেহেংদী ডিজাইনার। তাইতো উনাদের হাইয়ার করা হয়েছে। ‘
অয়ন কিছুক্ষন চুপ থেকে উঠে চলে যায়। রিমি অবাক হয়ে হতবাক দৃষ্টিতে অয়নের কার্যকলাপ লক্ষ্য করে, আসলে অয়ন চাইছে টা কী?

সানা জেলের এক অন্ধকার রুমে ঠায় বসে আছে। নেত্রকোনে বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে অনাবরত। সে জানে না এই অন্ধকার কুঠির থেকে তার আদোও মুক্তি আছে? যদিও সে নিজেই এই অন্ধকার কুঠিরকে বেঁছে নিয়েছে। পুলিশ যখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো, তখন জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে অভিমানে, রাগে, জেদে সানা বলে দেয়, সে সুমাইয়াকে মারতে সেদিন হসপিটালে গিয়েছিলো।

সানার সিকারক্তিতে, পুলিশ তার যথাযথ স্টেপ নেয়। সানাকে তৎক্ষনাৎ গ্রেফতার করা হয়। সায়েদ বর্তমানে টিয়ারপি থানার নতুন ইয়াং ইন্সপেক্টর! সদ্য জয়েনিং হয়েছে তার। বেশ বিচক্ষন তিনি। তার বিচক্ষনতার জন্যে প্রশংসায়িত হয়েছেন বহুবার। সানার ক্যাসটি তিনি দেখছেন। সানার ঘটনাটি শুনে, তার মনে হচ্ছে সানা মিথ্যে কথা বলছে। তিনি বিষয়টি খুটিয়ে দেখার জন্যে, সানার কাছে যায়। সানা মাথা নিচু করে বসে ছিলো। কারো পায়ের শব্দে মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখে, পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিত একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে কিছুটা তাচ্ছিল্য সুরেই প্রশ্ন করে সানা,

‘ আমি তো সবকিছু স্বীকার করেছি, আর কি জানার জন্যে এসেছেন আপনি? ‘
সায়েদ কিছুটা নড়েচড়ে উঠে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে সানার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ আপনি আমাকে আগে বলুন, আপনি কি আদোও কাজটি করেছেন? দেখুন এইটা কিন্তু অনেক সেন্সিটিভ ইস্যু, যে অন্যায় করেছে সে কিন্তু আপনার একটা ভুলের জন্যে বেঁচে যাবে। ‘
সানার পুনরায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

ফারহান সুমাইয়ার কেবিনে বসে আছে। নিষ্পলক চেয়ে রয়েছে সুমাইয়ার ঘুমন্ত মুখের পানে। ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও সুমাইয়ার জ্ঞান ফিরছে না। তা নিয়ে ডক্টরসহ, ফারহান সবাই বেশ চিন্তিত। ফারহানের ফোন হুট করে বেজে উঠে। ফোন হাতড়ে তাকিয়ে দেখে রুহানা চৌধুরীর ফোন। রুহানার নাম দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় ফারহানের। আজ রুহানার চৌধুরীর জন্যেই তার সুমু এতোটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। পুনরায় ফোন বেজে উঠলে, কিছুটা তিক্ততা নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে ফারহান। ফোনের অপাশ থেকে রুহানা চৌধুরী বলেন,

‘ আজ তোমার ছোট ভাইয়ের মেহেংদী অনুষ্টান। আজ অন্তত তুমি বাইরে থেকো না ফারহান। ‘
‘ আমি কি করবো না করবো তা তুমি ঠিক করে দিবে না, গ্রেন্ডমা! রাখছি আমি। ‘
কথাটি বলেই ফোন বন্ধ করে দেয় ফারহান। রুহানা চৌধুরী আশাহত হয়।

অপরদিকে, অয়ন তার হাতে মেহেদীর প্যাকেট নিয়ে আসে। অতঃপর হাটু গেড়ে রিমির কাছে বসে। রিমির হাতজোড়া নিজের হাটুতে রেখে, রুজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ আমার রিমিপরীকে মেহেদী আমি পরিয়ে দিবো, অন্য কেউ নয়। ‘
‘ কিন্তু তুমি কি পারবে অয়ন? ‘
রুজা চৌধুরীর কথার মাঝেই, রিমি তাকে থামিয়ে দিয়ে স্মিত হেসে বললেন,
‘ উনি যা চাইছেন তাই হোক। আমি হাতে আমার স্বামী মেহেদী পরিয়ে দিবে, এর থেকে সৌভাগ্য আর কি হতে পারে বলুন? ‘

রুজা চৌধুরী থেমে যায়। অয়ন রিমির হাত ধরে পরম যত্নের সাথে মেহেদী পড়িয়ে দিতে থাকে। রিমিসহ সবাই অয়নের হাতের নিপুন কাজ দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। কেননা অয়ন একজন প্রফেশন ডিজাইনারের মতো রিমির হাতে মেহেদীর ডিজাইন করে দিচ্ছে। রিমিকে অবাক হতে দেখে, অয়ন মুচকি হেসে বলে,
‘ আমার রিমিপরীকে নিজ হাতে মেহেদীর রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তুলবো আমি। সেই অধিকার শুধুমাত্র আমার। তাইতো আগে থেকেই ইউটিউব দেখে শিখে রেখেছিলাম। ‘

রিমি মুগ্ধ হয় অয়নের কথা শুনে। লোকটার ভালোবাসা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। অয়ন রিমির হাতে সুন্দর করে ‘ অয়ন ‘ নামটি লিখে দেয়। রিমি নিজের হাত দেখে মুচকি হাসে। অয়ন রিমির পাশে বসে বলতে থাকে,
‘ আমার নামটি তোমার হাতে লিপিবদ্ধ করে দিলাম, এই নাম কখনো মুছতে পারবে না তুমি রিমিপরী। ‘
প্রতিউত্তরে রিমি উত্তর দেয়,

‘ আমি কখনো মুছতে চাইও না। ‘
কিন্তু হুট করে রিমির হাত পাশে থাকা সোফার কাপড়ে লেগে লেপ্টে যায়। রুজা চৌধুরী হায় হুতাশ করে বললেন,
‘ একি হলো? বিয়ের আগে বরের নামটাই মুছে গেলো। এতো ভালো লক্ষন নয়, তাহলে কী বিয়েতে কোনপ্রকার বাঁধা আসবে? ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৬

অয়ন কথাটি রাগে গজরে উঠে একপ্রকার। রাগে চিৎকার করে বলে,
‘ জাস্ট স্টপ ইট রুজা চৌধুরী। এইসব কিচ্ছু হবে না। আমাদের বিয়েতে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না, কেউ না। ‘
কথাটি বলেই অয়ন রিমির হাত ধরে একপ্রকার টেনে উপরের দিকে নিয়ে যায়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৪৮

5 COMMENTS

Comments are closed.