তোমাতে বিভোর পর্ব ৮ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ৮
Sapna Farin

–“রুদ্রের দেয়া দাগ গুলো থেকে গেলো।কি করবো বলো?কিছু দাগ যে মনের মধ্যে লেগে যায়।ইচ্ছে করলে মুছে ফেলা যায়না।তবু এতো চেষ্টা করলাম সব দাগ গুলো মুছে ফেলার।কেন থেকে গেলো বুঝতে পারলাম না।”
–কথা গুলো বলতে অধরার চোখ দুটো চিকচিক করছে।অনেক কষ্টে সে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে।আর একটু হলে পড়ে যাবে।
–তখন অধরার কথা শুনে।তিশা তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“অধরা তোমার কোন আত্নসম্মান আছে?এতো কিছুর পড়ে তুমি রুদ্রের হয়ে কথা বলো।তোমার লজ্জা করেনা?তুমি এখনো রুদ্রের পিছনে পড়ে আছো।”
–তিশার কথা শুনে অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে চোখের অশ্রু মুছে।
তিশার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলে।

–“ভাবি আত্নসম্মান কি?আমার কোন ব্যবহার দেখে তোমার মনে হচ্ছে আমার আত্নসম্মান নেই।আমার আত্নসম্মান আছে বলে।বড় আব্বু যখন বললো রুদ্রের সাথে অন্য কারো বিয়ে হবে।সে কথা শোনার পড়ে তাকে নিজের কাছে থেকে মুক্ত করে দিয়েছি।আমার আত্নসম্মান আছে বলে যে মানুষটা কে এতো ভালোবাসি তাকে রেখে আহান কে বিয়ে করার সীদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার আত্নসম্মান আছে বলে কালকে যখন রুদ্র মাতাল হয়ে আমার রুমে এসেছিল।তখন তার সু্যোগ নিতে পারেনি।তারজন্য রুদ্রের ভালোবাসার স্পর্শ আমার শরীরে লাগেনি।লেগেছে শুধু তার হিংস্রতার দাগ।আত্নসম্মান আছে বলে নিজের সত্বীত কে বিলিয়ে দিতে পারেনি রুদ্রের কাছে।আচ্ছা ভালোবাসা কি ভুল?ভালোবাসি বলে আমার আত্নসম্মান হারিয়ে গেলো।কখনো তো আমার ভালোবাসার দাবী নিয়ে রুদ্রের পিছনে পড়ে থাকেনি।তাহলে কেন?অপরাধ করবে রুদ্র।কথা শুনতে হবে আমাকে।কেন আমার কি দোষ।আমিতো শুধু ভালোবেসেছিলাম তার প্রতিদান সে কেন এভাবে দিলো।রুদ্র ক্ষমার যোগ্য না। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–কথা গুলো বলে।অধরে নিজের গায়ে জড়ানো ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে।ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।তিশা অধরার দিকে তাকাতে সে আঁতকে উঠে।তার সামনে অধরার শরীরের ক্ষত বিক্ষত দাগ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।সে দাগ আর যায় হোক এখানে ভালোবাসার কোন ছোয়া ছিলো না।ফুটে উঠেছে রুদ্রের হিংস্রতার রুপ।এসব দেখে তিশা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে।অধরা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
–“বোন আমাকে ক্ষমা করো আমার বোঝার ভুল ছিলো।আমাদের অধরা কখনো কোন ভুল করতে পারেনা।অধরা কালকে রাতে আসলে কি হয়েছিল সবকিছু আমাকে খুলে বলো।”

–তিশার কথা শুনে অধরা বিশ্বাস এবং ভরসা পেলো।সে রাগ অভিমান ভুলে মূহুর্তের মাঝে।তিশাকে আঁকড়ে ধরে রাতের সব ঘটনা খুলে বলে।সবকিছু শুনে তিশার কান গরম হয়ে যায়।তার চোখ গুলো লাল হয়ে যায়।সে অধরার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“অনেক হয়েছে অধরা।চলো আমার সাথে?রুদ্রের মুখোশের আড়ালের চেহারা সবার সামনে আসুক।সে তো নিজেকে নিয়ে বড্ড অংহকার করে।তার আসল রুপ সবার সামনে আসলে দেখা যাবে।তার এমন মিথ্যা অহংকার কোথায় যায়।”

–কথা গুলো বলে তিশা অধরার হাত ধরে টান দিতে।অধরা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে।
–“ভাবি ভুল করে এমন করা ঠিক হবেনা।আমাদের সাথে আমাদের ফ্যামিলির মান সম্মান জড়িয়ে আছে।সবকিছুর জানার পড়ে আহান সাথে আমার বিয়েটা ভেঙে যাবে।রুদ্র ভাইয়ার সাথে আভার বিয়েটা ভেঙে যাবে।সকলে আঙুল তুলবে আমাদের দিকে।কে শুনবে আমাদের কথা কে বোঝার চেষ্টা করবে।রুদ্র ভাইয়া এবং আমাকে নিয়ে অনেক বড় তামাশা হয়ে যাবে।প্লিজ তুমি এমন কিছু করোনা।আমাদের সবার কথা ভেবে।”

–অধরার কথা শুনে।তিশা ফেলফেল ভাবে তার দিকে তাকিয়ে থেকে।তার গালে আলতো করে হাত রেখে বলে।
–“আমাদের ছোট্ট অধরা অনেক বড় হয়ে গেছে।কিভাবে সবকিছু সামলে নিতে শিখেছে।নিজের কষ্ট গুলো আড়াল করে।সবার কথা ভাবতে শিখেছে।সত্যি সে খুব ভাগ্যবান পুরুষ হবে।যে তোমার মতো মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পাবে।”
–কথা গুলো বলতে তিশার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে অশ্রু ভেজা চোখে দ্রুত অধরার রুমে থেকে বেড়িয়ে যায়।তখন আচমকা অভ্রের সাথে দেখা হতে।অভ্র তাকে দেখে বলে।

–“কি হয়েছে তিশা তুমি কান্না করছো কেন।কোন সম্যসা?”
–তিশা আচমকা এখানে অভ্র কে দেখে ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে যায়।চমকে গিয়ে সে।নিজের চোখের অশ্রু মুছে।অভ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–“আমাকে ফ্লো করা হচ্ছে।আজকাল তুমি একটু বেশি গোয়েন্দা হয়ে যাচ্ছো অভ্র।কোথায় কান্না করছি।চোখে কি যেন পড়েছিল।নাস্তা করতে এসো তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।”
–তিশা কথা গুলো বলে চলে যাচ্ছিলো।তখন অভ্র সেখানে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে ভাবতে থাকে।
–“তিশা মনে হচ্ছে আমার কাছে কিছু আড়াল করছে।আজকাল তার ব্যবহার ঠিক লাগছে না।কোন বিষয় নিয়ে কোন সম্যসা থাকলে আমার কাছে বলতে পারে।এভাবে না বললে বুঝতে পারবো কিভাবে।”
–তিশার ডাক শুনে অভ্র ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।
–“কি হলো আসো।এখানে দাঁড়িয়ে আকাশ কুসুম চিন্তা করা বন্ধ করো।অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাবে।”
–“হ্যাঁ আসছি।তোমার জন্য তো নিজের মতো করে ভাবতে পারবো না।তুমিতো আমার ভাবনার মাঝখানে চলে আসো।”
–“অবশ্যই আসবো।এখন তাড়াতাড়ি এসো।”
–“হুম।”
–অভ্র তিশার পিছনে চলে যায়।

–রুদ্র রুমের মধ্যে ছটফট করছে।কোন কাজে সে মন বসাতে পারছে।চোখের সামনে অধরার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে।তখন রুদ্র বিড়বিড় করে বলে।
–“না এভাবে বসে থাকলে হবেনা।আমাকে কিছু করতে হবে।অধরার সাথে অন্যায় করেছি।আমাকে
তার শাস্তি পেতে হবে।অধরা আমাকে যে শাস্থি দিবে মাথা পেতে নিবো।তবু তার সাথে আমার কথা বলতে হবে।নিজের মধ্যে এতো অপরাধ বোধ নিয়ে যে এক মুহুর্তের জন্য শান্তিতে থাকতে পারছিনা।এখন কিভাবে যে তার কাছে মুখ দেখাবো।”

–কথা গুলো বলে রুদ্র অধরার সাথে কথা বলতে চলে যায়।
–অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে।রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে।কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আচমকা কে যেন তার কোমড়টা আঁকড়ে ধরে।তাকে ধরে রেখেছে।অধরা মিটমিট করে চোখ মেলতে দেখে রুদ্র।রুদ্র অদ্ভুত ভাবে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।বাতাসে রুদ্রের চুলগুলো উড়ছে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।অধরা যেন রুদ্রের চোখের মাঝে আটকে গেছে।তার থেকে নিজের চোখ সড়াতে পারছেনা।তখন রুদ্র বিড়বিড় করে বলে।

–“শ্যাম কন্যা তোমার ঐ গায়ের রঙ দূরে তাড়িয়ে দিলো আমাকে।কিন্তু তোমার মনের রঙ?আমাকে যে তোমার কাছে টেনে নিয়ে এলো।তোমার ঐ চোখের দিকে তাকালে ইচ্ছে করে তোমাতে বিভোর হয়ে যায়।কি এমন হলো আমার।”
–রুদ্র কথা গুলো বলে অধরার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।তখন কারো চোখ পড়লো তাদের উপর।দূরে দাঁড়িয়ে আহান তাদের অবস্থা দেখে জ্বলে পুড়ে শেষ।সে রাগে কটমট বিড়ে করে বলে।

–“রুদ্র তুমি তোমার বাবার মতো হয়েছে।বিশ্বাসঘাতকের রক্ত তো বিশ্বাসঘাতকি হবে।তোমার বাবা আমার বাবার সাথে বিশ্বাসঘাতকা করে তাকে সর্ব শান্ত করে দিয়েছি।শেষ করে দিয়েছে আমার পুরো ফ্যামিলি কে।আমাকে আমার বাবার ছায়া থেকে কেড়ে নিয়েছে।তার সাথে বিজনেসে ধোকা করে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমাদের।আমার মা আমার জন্য আমাকে নিয়ে দূরে দেশে চলে গিয়েছিল।সেখানে তীলে তীলে আমাকে বড় করে তোলে।তবে আমার মনে প্রতিশোধের আগুন এখনো জ্বলে কিভাবে মি.রায়মান সাহেব কে সর্ব শান্ত করতে পারবো।তারজন্য এতো প্লেন করে তোমার বন্ধুত হলাম।তারপর তোমার কাজিন অধরা কে বিয়ে করে।তোমাদের এখানে নিজের জায়গা করে নিতে আসলাম।কিন্তু এখন তুমি কি শুরু করেছো?নিজের বন্ধুর হবু স্ত্রীর সাথে নষ্টামি।তোমার সাহস কি করে হয়।তোমাকে তো আমি দেখে নিবো।এতো প্লেন করে তোমাদের বাসায় এসেছি এতো অল্পতে তুমি আমার প্লেন ব্যাস্তে দিতে পারবেনা।অধরার সাথে বিয়ে হলে সময়ের সাথে তুমি আমার আসল রূপ দেখবে রুদ্র।তোমার যা ইচ্ছে করো অধরার সাথে আমার বিয়ে হবে।তুমি আমার কোন প্লেন ব্যস্তে দিতে পারবে না।”

–কথা গুলো বলতে আহানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।
–অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যায়।রুদ্রের দিকে ফিরে তাকায় না।রুদ্র অধরার অবস্থা দেখে ভেবাচেকা খেয়ে যায়।সে অবাক হয়ে অধরার যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“যে অধরা আমার পিছনে লেখে থাকতো সারাক্ষণ!আজ সে অধরার আজকে এমন রূপ।আসলে সময় মানুষ কে পাল্টে দেয়।আগে অধরা কে আমি পাত্তা দিতাম না।এখন অধরা আমাকে।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।

–ডাইনিং টেবিলে বসে সকলে নাস্তা করছে।সকলের নীরবতা।তখন মি. রায়মান সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে।
–“আয়মান।”
–আয়মান সাহেব নীরবতা কাটিয়ে দ্রুত বলে।
–“জ্বি ভাইয়া।”
–“তুমি অভ্র কে নিয়ে অফিসে চলে যাও।আজকে আমার আসতে দেরি হবে।”
–“আচ্ছা ভাইয়া।”
–তখন মি.রায়মান সাহেব আবার বলে উঠে।
–“অভ্র।”
–“জ্বি বড় আব্বু।”
–“অফিসের মিটিংটা তুমি সামলে নিয়ো।তোমাকে তো ভরসা করা যায়।সকলে তো আর রুদ্রের মতো না।যে দ্বায়িত্ব নিতে জানেনা।”
–বাবার কথায় রুদ্র মুখ তুলে তাকালো।সে অনেক লজ্জাবোধ করছিলো।তখন সে উঠে চলে যাচ্ছিলো।তখন তার বাবা তাকে পিছু ডেকে বলে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ৭

–“রুদ্র তোমার সাথে কথা আছে বসো।সব সময় তোমার এতো তাড়াহুড়ো কিসের?”
–বাবার কথা শুনে রুদ্র বাধ্য ছেলের মতো চেয়ার টেনে বসে পড়ে।সকলের স্তব্ধতা।
মি.আয়মান সাহেব এবং অভ্র অফিসের জন্য বেড়িয়ে পড়ে।তখন আহানের ফোন আসাতে সে ফোন রিসিভ করার জন্য উঠে চলে যায়।তখন মি. রায়মান গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–“রুদ্র দ্বায়িত্ব নিতে শিখো অভ্রের মতো।এভাবে আর কতো দিন উড়ে বেড়াবে।আমাদের এতো কিছু থাকতে তোমাকে দেশের বাহিরে কেন জব করতে হবে?শোন আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছে।আমি চাচ্ছিলাম অধরার বিয়ের সাথে তোমার বিয়েটা সেরে ফেলবো।”
–তার কথা শুনে রুদ্রের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।সে বিড়বিড় করে বলে।
–“বিয়ে মানে কিসের বিয়ে।এখানে অধরার বিয়ে আটকানোর জন্য রাস্তা খুঁজে যাচ্ছি।তারমধ্য আমার বিয়ের কথা কোথায় থেকে আসে।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ৯