তোমাতে বিভোর পর্ব ৯ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ৯
Sapna Farin

–“রুদ্র এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।আগে অধরার বিয়ে বন্ধ করতে হবে।তারপর আমার বিয়ের কথা হবে।এখানে অধরার বিয়ে সামাল দিতে আমার হিমসিম খেতে হচ্ছে।কিভাবে তার বিয়ে বন্ধ করবো। সে প্লেন বেড় করতে হচ্ছে আমাকে।তারমধ্যে সেখানে আমার বিয়ের কথা জুড়ে দিয়েছে ভাবা যায়!আমার তো কল্পনার বাহিরে ছিলো এমন কথা এখন আমাকে শুনতে হবে।তারজন্য এতো তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসা উচিৎ ছিলোনা।

ঐ আহানের জন্য তো সব হয়েছে।বিশ্বাসঘাতক একটা ইচ্ছে করছে ঐ আহানের বাচ্চা টাকে আস্তো গিলে খেতে।কিন্তু এখন নিজেকে কুল রাখতে হবে।এতো বেশি হাইপার হলে চলবে না।নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হবে।এখন তো সময় জীবন কে উপভোগ করার।জীবন কে ইনজয় করার।এতো দিন পড়াশোনা এবং কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।জীবনকে ভালো করে উপভোগ করতে পেলাম কোথায়।এখন আবার বিয়ের বন্ধনে আব্ধ করতে চাচ্ছে আমাকে।ইম্পসিবল রুদ্র এখন বিয়ে করতে পারবে না।বিয়ের জন্য পুরো জীবন পড়ে আছে।এখন কোন ঝামেলার মাঝে নিজেকে জড়াতে পারবোনা।পারবোনা কোন দ্বায়িত্ব নিতে।হুট করে চিনিনা জানিনা কোন মেয়ের সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে বললেই হলো।তাকে আমার বিয়ে করতে হবে ইম্পসিবল।রুদ্র এখন বিয়ে ফিয়ে করতে পারবে না।”

–কথা গুলো বলতে রুদ্রের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।সে তাড়াতাড়ি করে পানি ভর্তি গ্লাসে চুমুক দিয়ে পুরো পানি খেয়ে নিতে।তার কপাল বেয়ে কয়েক ফোটা ঘাম গড়িয়ে পড়ে।মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।বিয়ের নাম শুনে কেন এতো উদাসীনতা হচ্ছে রুদ্র সে কথা তার বাবা বুঝতে পারছেনা।রুদ্রের অবস্থা দেখে মি. রায়মান সাহেব কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়া বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“রুদ্র তোমার বিয়ের কথা চলছে।এখানে এতো চিন্তার কি আছে।তুমি এমন ঘেমে যাচ্ছো কেন?তারমধ্য এমন ভাবে পানি খাচ্ছো।মনে হচ্ছে তুমি কতো দিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছ।কি হয়েছে তোমার বলোতো?”
–তার বাবার কথা শুনে রুদ্র ভেবাচেকা খেয়ে যায়।সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে রুদ্র।অধরা তো রুদ্র কে দেখে মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।তিশা রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রুশা তার বাবা এবং ভাইয়ার কান্ড দেখছে অবাক হয়ে।রুদ্রের মা রিমিঝিম এবং রুদ্রের ছোট মা মানহা নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করে মুচকি হেসে যাচ্ছে।
–তখন রুদ্র বোকার মতো মুখ করে তার বাবার দিকে তাকিয়ে।করুণ কন্ঠে বলে।

–“আব্বু।আমার বিয়ের বয়স হয়েছে এখন?তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছো।মাত্র পঁচিশ পেড়েয়ে ছাব্বিশ বছরে পা দিলাম।এখনি বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে।আরো কয়েক বছর পড়ে এসব বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে।”
–রুদ্রের কথা শুনে রুশা মুখ টিপে হেসে দিয়ে বলে।
–“ভাইয়া বুড়ো বয়সে তোমার বউ খুঁজে পাওয়া যাবেনা।এখন তো সময় বিয়েটা করে ফেলো।”
–রুদ্র রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–“ছোট হয়েছে ছোট দের মতো থাকো রুশা।বড়দের মাঝখানে কেন কথা বলতে আসো?আম্মু রুশাকে কিছু বলবে।”
–মিসেস রিমিঝিম কি বলবে।ছেলের বোকাবোকা কথা শুনে সে মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে।তখন রুদ্র অভিমানী স্বরে বলে।
–“হয়েছে।বুঝতে পেরেছি সকলে তোমরা আমার বিরুদ্ধে গিয়েছো।তোমাদের সাথে কাট্টি রুদ্র কথা বলবে না।তোমাদের সাথে।”

–তখন মি. রায়মান সাহেব বলে উঠে।
–“ছেলে বড় হয়েছে কিন্তু এখনো তার বাচ্চামো আছে।”
–বাবার কথা শুনে রুদ্র লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।
–তখন রুদ্রের অবস্থা দেখে অধরা খিলখিল করে হেসে ফেলে।সে এমন ভাবে হাসছে তার হাসির মাঝে রুদ্র হারিয়ে যায়।কতো দিন পড়ে মেয়েটার এমন হাসি দেখতে পাচ্ছে রুদ্র।অধরা হেসে যাচ্ছে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সে।সকলে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তখন রুশা অধরা কে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে।
–“অধরা আপু কি করছো তুমি?সকলে দেখছে তো।এভাবে হেসে যাচ্ছো কেন?”
–রুশার কথা শুনে অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে। সবার দিকে তাকাতে দেখে।সকলে তাকে অদ্ভুত ভাবে দেখছে।অধরা লজ্জা পেয়ে কোন রকম পালিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।তখন মি. রায়মান সাহেবের গম্ভীর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে হাসতে হাসতে বলে।

–“দেখছো তোমরা সকলে লুকিয়ে হেসে যাচ্ছিলে।সেখানে অধরা মন খুলে হেসে ফেললো।মেয়েটা সত্যি খুব অসাধারণ তার মন তার মতো সাদাসিধা।কিন্তু সকলে সে কথা বুঝতে পারেনা।আজকে রুদ্র যদি তাকে সহ্য করতে পারতো।তার কালো রঙের পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল চেহারা দেখতে পেতো। তাহলে মেয়েটা কে অন্যের ঘরে যেতে হতো না।আহান খুব ভাগ্যবান যে অধরার মতো মানুষ জীবনে পেয়েছে।”
–কথা গুলো বলতে মি. রায়মান সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
–তখন মিসেস মানহা বলে উঠে।

–“ভাইজান কোন চিন্তা করবেন না।আমার অধরার গায়ের রঙ কালো হতে পারে।কিন্তু তার মনের রঙ দিয়ে সবার মন ঠিক জয় করে নিবে।আমার মেয়ের উপরে আমার বিশ্বাস আছে।”
–কথা গুলো বলতে মিসেস মানহার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।তখন মিসেস রিমিঝিম বলে।
–“ভাবি কতো আশা ছিলো অধরা আর রুদ্র কে নিয়ে।কিন্তু মূহুর্তের মাঝে সব শেষ হয়ে গেলো।ইচ্ছে ছিলো রুদ্র দেশে ফিরলে অধরার সাথে তার বিয়ে দিবো।কিন্তু রুদ্র দেশে ফিরলো ঠিকি।অধরার হবু বর আহান কে নিয়ে।আমাদের ইচ্ছে স্বপ্ন গুলো মূহুর্তের মাঝে শেষ করে দিলো রুদ্র।”
–কথা গুলো বলতে মিসেস রিমিঝিমের চোখ ভিজে গেলো।তখন মিসেস মানহা বলে।
–“ভাবি পুরানো কথা গুলো রাখো।এসব বলে কি হবে।”
–তখম মিসেস রিমিঝিম রুদ্রের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলে।

–“হুম।”
–এসব কথা শোনার পড়ে সকলের নীরবতা।
–রুদ্র,তিশা,রুশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের কথা শুনে।আসলে তারা মূহুর্তের জন্য জানতে পারেনি তাদের মনের কথা।আজকে সকলে আবেগের বসে সব কথ বলে দিলো।তাদের এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মি. রায়মান সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলে।
–“তোমরা সকলে ভাবছো এসব কি?হ্যাঁ সব সত্যি
তাহলে শোন।আমরা আগে থেকে সীধান্ত নিয়েছিলাম রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ে দিবো।রুদ্র স্টাডি শেষ করে দেশে ফিরলে।কিন্তু রুদ্র স্টাডি শেষ করলো তারপর বিদেশে ভালো জব করছে।অধরার কথা বলতে সে এড়িয়ে যেত সব সময়।তারপর যখন শুনলাম হুট করে রুদ্র দেশে ফিরছে।রুদ্র এবং সকল কে সারপ্রাইজ দেবার জন্য রেডি ছিলাম।কিন্তু রুদ্র মূহুর্তের মাঝে আমাদের সারপ্রাইজ করে দিলো।আহানের কথা বলে।হুট করে তখন অধরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আহানের সাথে।আসলে সব ভাগ্য। ভাগ্যের উপর কি কিছু আছে।অধরা এসব কিছু জানানে।আশা করি তোমরা তাকে কিছু বলবে না।”

–তার কথা শুনে সবার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।শুধু রুদ্র বাদে।এসব কথা শুনে সে যেন জমে বরফ হয়ে গেছে।তখন তার বাবা বলে উঠে।
–“এসব পুরানো কথা রাখো।রুদ্র,তিশা,রুশা তোমরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আমার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাবো।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু সেড়ে ফেলবো বিয়ের।”
–সকলের নীরবতা।নীরবতা কাটিয়ে
রুদ্র কিছু বলতে যাবে।তখন তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে করা গলায় বলে।

–“এখানে কারো অযুহাত শুনতে চাচ্ছিনা রুদ্র।সব সময় তো নিজের মন মতো চলো।মাঝেমধ্যে নিজের ফ্যামিলির কথা চিন্তা করো।তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে আসো।”
–তার বাবার কথা শুনে রুদ্র কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়।সে দ্রুত চেয়ার টেনে উঠে সেখান থেকে চলে যায় নিজের রুমের দিকে।তখন মি. রায়মান সাহেব তিশা এবং রুশার উদ্দেশ্যে বলে।
–“তোমরা গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।দেরি যেন না হয়।”
–তার কথা শুনে।তিশা এবং রুশা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত চলে যায়।কারণ মি. রায়মান সাহেবের কথা শেষ কথা।তারা ভালো করে জানে।

–তিশা রুশা সিড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো।তখন রুশা বলে।
–“ভাবি আসলে সবার মনের আড়ালে কোন না কোন কথা লুকিয়ে থাকে।যে কথা গুলো আমাদের কল্পনার বাহিরে থাকে।রুদ্র ভাইয়ার জন্য সব হয়েছে।সব তার দোষ ”
–তখন তিশা বলে।
–“এভাবে বলতে হয় না রুশা।সে তোমার বড় ভাইয়া।
আসলে আমাদের হাতে কিছু থাকেনা।।কি করবো বলো?সব ভাগ্যের ব্যাপার।এখানে ভাগ্য কে মেনে নেয়া ছাড়া কি করার আছে আমাদের।”

–তিশার কথা শুনে রুশা বলে।
–“হুম।”
–তিশা,রুশা রেডি হতে নিজেদের রুমে চলে যায়।রুদ্র রুমে এসে সাজারো দরজা লাগিয়ে দিয়ে।ড্রেসিং টেবিলে সাজারে গুসি মারতে।তার হাত কেটে রক্ত পড়ছে সে দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে ভাঙা আয়নার টুকরো গুলোর মাঝখানে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“রুদ্র সবকিছু শেষ করে দিয়েছ।রুদ্রই সবকিছু ঠিক করে দিবে আব্বু।আহানের মতো বিশ্বাসঘাতক প্রতারকের সাথে।কখনো অধরার মতো নিষ্পাপ মেয়ের বিয়ে কিছুতে হতে পারেনা।রুদ্র হতে দিবেনা।”
–কথা গুলো বলো রুদ্র ফ্লোরে হাটু গেরে বসে চিৎকার করে উঠে।
–অধরা আহানের সাথে শপিংয়ে যাবার কথা বলার জন্য।করিডোর দিয়ে আহানের রুমে যাচ্ছিলো।তখন রুদ্রের চিৎকার শুনে।ছুটে গিয়ে তার রুমের মধ্যে উঁকি দিতে।অধরার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।অধরা ছুটে রুদ্রের পাশে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে।এভাবে নিজেকে কেন আঘাত করছো?চলো তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে অনেক রক্ত বেড় হচ্ছে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখো চলো।”
–কথা গুলো বলে অধরার রুদ্রের হাতে স্পর্শ করতে গেলে।রুদ্র নিজের হাত সড়িয়ে নিয়ে বলে।
–“অধরা আমাকে আমার মতো ছেড়ে দে।রক্ত পড়তে দে আমার শরীর থেকে।আমার মতো জঘন্য খারাপ মানুষের জন্য কেন এতো মায়া হয় তোর?আমি কে তোর।”
–রুদ্রের কথা শুনে অধরা ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ৮

–“তোমাকে তো তোমার মতো ছেড়ে দিয়েছি রুদ্র ভাইয়া।তবে কেন এতো মান অভিমান।তোমার হাতে রক্ত ঝড়লে অধরার হৃদয়ে যে হয় রক্ত ক্ষরণ হয়।সে কথা তুমি বুঝতে পারবেনা কখনো।ইচ্ছে করে খুব দূরে চলে যায় তোমার কাছে থেকে।জানিনা এতো দূরে গিয়ে কেন এতো কাছে চলে আসি বার বার।আর মাত্র কয়েক টা দিন তারপর আহানের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে।তোমাকে অধরার ছায়া সহ্য করতে হবেনা।প্লিজ তুমি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নেও।রক্ত বেড় হচ্ছে।”

–রুদ্র চিৎকার করে বলে।
–“বললাম না লাগবে না।অধরা আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবেনা।”
–অধরা রুদ্রের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে।জোর করে তার হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া কয়েক টা দিন আমাকে কষ্ট করে সহ্য করো।তারপর আহনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলে।অধরার ছায়া তোমাকে দেখতে হবেন না।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১০