তোলপাড় পর্ব ১৪+১৫+১৬

তোলপাড় পর্ব ১৪+১৫+১৬
শান্তনা আক্তার

আচমকা আহসান রিমিকে ওর সামনে প্রকট হতে দেখে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে গেল।আহসান কিছু জিজ্ঞেস করবে কি রিমি বলে ওঠে,আপনার সাথে আমার খুবই জরুরি একটা কথা আছে।আহসান রিমির সাইট কেটে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,আমি জানি তুমি কি বলবে।
-জানেন মানে?কি জানেন?নিশ্চয়ই ওরা আপনাকে বলে দিয়েছে?
-কারা কি বলবে?
-আমি বুঝতে পারছি না আপনার কথা।আপনি বললেন আপনি সব জানেন কিন্তু কি জানেন?আপনাকে ওরা কেউ কিছু বলেনি তাহলে কে বলেছে?আমি তো আর কাউকে কিছু বলিনি।

-Don’t talk rubbish…আমি যে সকালে তোমায় বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম ওই বিষয়টা বলেছি যে আমি জানি।
-ওহ হ্যাঁ তাইতো।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম কথাটা।তো বলুন আমাকে আপনি বিছানায় কেন এনেছিলেন?
-তুমি রোজ সকালে আমার ওঠার সাথে সাথে উঠে পড়ো কিন্তু আজ যেহেতু ওঠোনি তাই বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিলাম যাতে কেউ না দেখে তুমি সোফায় ঘুমাও।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-ওও,কেউ দেখলো কি না দেখলো তাতে আপনার কি যায় আসে?বাড়ির সবাই জানে আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না।তাহলে এই বিষয়টা জানলে এমন কোনো তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবেনা।আর আপনি আমাকে কোলে নেওয়ার সাহস কোথা থেকে পেলেন শুনি!আপনাকে না বলেছি আমাকে টাচ করবেন না।
-আমি ছুঁলে অন্যায় হয়ে যায় নাকি?
-হুম যায়।খুব বড় অন্যায় হয়ে যায়।আপনি একটা অসভ্য অসহ্যকর একটা লোক।আপনার রাইট নেই আমাকে টাচ করার।
-আমার রাইট না থাকলে কার থাকবে হুম?আমি টাচ করলে অসহ্য লাগে, আর জিসান করলে ভালো লাগে তাইনা?(দাঁতে দাঁত চেপে)
-মুখ সামলে কথা বলুন।কার সাথে কিসের তুলনা করছেন আপনি!মাথা ঠিক আছে আপনার?

-সবই ঠিক আছে আমার।শুধু তুমি ছাড়া।
-মানে!আমি কি করলাম আপনাকে?
-ওয়েট বোঝাচ্ছি বলে রিমির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আহসান।

আহসানকে এগিয়ে আসতে দেখে রিমি পিছিয়ে যেতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,আপনি আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন?কি করছেন কি?আমি কিন্তু,,রিমি দেয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকে গেল।ভয়ে রিমির কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে লাগলো।আহসান রিমির গালে একহাত রেখে বলল,আমি খুবই অসহ্যকর তাইনা!খুবই অসভ্য।তাহলে একটু অসভ্যতামি করি এই বলে রিমির ঠোঁট জোড়া জোর করে দখল করে নিল।রিমি চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে আহসানের দিকে।

এমন কিছুর স্বীকার হতে হবে ভাবেনি কখনো।রিমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আহসানের হাত থেকে বাঁচার কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারছে না।প্রায় ৮ মিনিট পর আহসান রিমিকে ছেড়ে দিল।ছাড়া পেয়ে রিমি রাগে ঘৃণায় ওর ঠোঁট মুছতে লাগলো।বিষয়টি আহসানের মোটেও পছন্দ হলো না।আহসান প্রচুর ক্ষোপ নিয়ে আবারও রিমির ঠোঁটে হামলা বসালো।এবার পুরো ১৫ মিনিট পর রিমিকে ছাড়লো তবে ছাড়ার সময় বেশ জোড়ে কামড় বিসিয়ে দিল রিমির ঠোঁটে।

রিমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে।তারপর হাত দিয়ে দেখলো ঠোঁট বেয়ে রক্ত পড়ছে।আহসান রিমির ঠোঁটে রক্ত দেখে আবারও রিমির ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়লো।রিমির ঠোঁটের সব রক্ত চুষে বলল,আমাকে অসভ্য বলার ফল দেখলে তো!আর কখনো যেন তোমার মুখে না শুনি এই অসভ্য ওয়ার্ডটা।তাহলে কিন্তু এর থেকেও ভয়াবহ কিছু উপহার পাবে বলে রাখলাম।এই বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।রিমি ওভাবেই ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।তারপর কিঞ্চিৎ চিৎকার দিয়ে বলল,আপনি খুব খারাপ খুবই জঘন্য।শুধু ঘেন্না করি আমি আপনাকে।মাত্র কয়েক দিনেই আমার মনটা ভেজে পুড়িয়ে দগ্ধ করে দিয়েছেন।আপনার মতো মানুষ কখনোই কারো মনে অনুশোচনা পাওয়ারও যোগ্য নয় কথাটা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে রিমি।

আহসান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো রিমি ফোন ঘাটছে খুব মনোযোগ দিয়ে।আহসান রিমির কিছুটা কাছে গিয়ে বলল,কি করছো এতো অ্যাটেনশন দিয়ে!
-আপনাকে দেখতে হবে না।আপনি আপনার কাজে মন দিন।
আহসান রিমির কথায় তেমন রিয়েকশন দিলনা কারণ ওর মনোযোগ রিমির ফুলে যাওয়া ঠোঁটের দিকে।মনে মনে নিজেকে খুব বকাবকি করলো ও।আর কখনো রিমিকে কষ্ট দেবনা এই ভেবে রিমিকে শান্ত গালায় বলল,সরি রিমি।আমি তোমার সাথে খুব রুড বিহেভিয়ার করে ফেলেছি।এর জন্য আমি অনুতপ্ত।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।চাইলে আমাকে যা ইচ্ছে শাস্তি দিতে পারো।তোমাকে যতগুলো আঘাত করেছি তার চেয়ে বেশি আঘাত তুমি আমায় করতে পারো।

-ভুতের মুখে কি শুনি এটা?এটা মেবি ওনার নতুন কোনো প্লান আমাকে কষ্ট দেওয়ার।না আমি ওনার ফাদে পা রাখবো না বাবা।নাকি সত্যি উনি ওনার কাজে অনুতপ্ত?যদি তাই হয় তাহলে একটা কাজ করা যাবে।রিমি মনে মনে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছে।
-কি ভাবছো তুমি?
-না কিছু না।আমি যদি আপনার কাছে একটা জিনিস চাই দেবেন?
-হুম দেব কিন্তু ডিভোর্স ছাড়া।
-আমি এটা চাইবো না।অন্য কিছু।
-কি?তুমি চাইলে আমি তোমাকে হিরের নেকলেস কিনে দেব কিন্তু তার বদলে আমাকে forgive করতে হবে।
রিমি নাক ফুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,সবসময় টাকার গরম দেখাবেন না।আমার ওসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।আমি সেসব কিছুই চাইবো না।

আহসান ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,তাহলে?
-পারমিশন।
-কিসের পারমিশন?
-আমি জব করতে চাই তার পারমিশন লাগবে।
-তোমার কিসের অভাব যে জব করবে!
-আত্মসম্মানের অভাব।আমি মনে করি এর থেকে বড় অভাব আর কিছুই নেই এই দুনিয়ায়।
-আমি পারমিশন দিতে পারবো না।
-তাহলে আমি আপনাকে ক্ষমাও করবো না বলে মুখ ফিরিয়ে নিল রিমি।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি জব করতে পারো।তবে একটা কন্ডিশনে।
-কি সেটা?

-তুমি আজ থেকে সোফায় নয় বিছানায় শোবে।
-কেন?আপনি তো দেখছি দুই রকম কথার মানুষ!একবার বলেন আমি আপনার বিছানায় না শুই।আবার আপনিই বলছেন বিছানায় শুতে।খুব অদ্ভুত।
-হুম বলছি কারণ তোমার পরাপর দুদিন খিচুনি উঠেছিল।তোমার ভাগ্য ভালো আমি দেখেছি নইলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেত।
-কি বলছেন আপনি!আমি তো জানিই না এসব।
-হুম তাইতো বলছি বিছানায় শুতে।চিন্তা করো না আমি তোমার শরীরে ভুলেও টাচ করবো না।আমি এতো নড়াচড়াও করি না।তোমার অসুবিধা হবে না।প্রমিস করলাম।

রিমি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,ঠিক আছে তবে তাই হোক।এই বলে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায় রিমি।
-কেমন মেয়ে এটা!এতো ফাস্ট কেউ কিভাবে ঘুমাতে পারে!
রিমি রাতভোর আহসানকে জ্বালিয়েছে।ঘুমের মাঝে কখনো দু পা আহসানের পেটের উপর উঠিয়ে দিয়েছে,কখনো পেট বরাবর ঘুষি মেরেছে আবার কখনো লাথিও মেরেছে।আহসান রিমির হাত থেকে বাঁচতে বিছানার একেবারে কর্ণারে চলে এসেছে।এমন সময় রিমি দিল এক লাথি আহসান গিয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে।

-উহ,এই মেয়ের জন্য ঠিক করে ঘুমাতে পারবো না দেখছি।কি যে করি?নিজেই নিজের জন্য খাল কেটে crocodile নিয়ে আসলাম মনে হচ্ছে।আমি সব কিছু পারবো তবে ঘুম নিয়ে কখনোই কম্প্রোমাইজ করতে পারবো না।এখন নিজের মাথার চুল একটা একটা করে ছিড়তে মন চাচ্ছে আমার।কি এক অশান্তিতে পড়লাম!নাহ একটা উপায় বের করতে হবেই।কি করা যায়?আহসান কিছুক্ষণ ভেবে বলল,আইডিয়া!আমি রিমিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই তাহলে ও আর হাত পা ছুটাছুটি করতে পারবে না।যেই ভাবা সেই কাজ।আহসান রিমিকে ওর বুকের সাথে পেচিয়ে শুয়ে পড়ে।সকালে জানালার ফাক দিয়ে ভোরের আলো আসতেই রিমি চোখ খুলে ফেলল।চোখ খুলে বেশ বড় আকারের একটা শক খেল ও।

-একি!আমি নড়তে পারছি না কেন?মাথা হালকা উঁচু করতেই আহসানের থুতনির সাথে বাড়ি খেল।রিমি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করল।কি জানি কি ভেবে জোড়ে চিল্লিয়ে বলল,ছাড়ুন আমাকে।এতোটাই শব্দ হলো যে আহসান লাফিয়ে উঠে বসে।রিমি আহসানের টি-শার্টের কলার চেপে বলল,কি বলেছিলেন আপনি হুম?কি কথা ছিলো আমাদের?লম্পট লোক,লুচু কোথাকার।এইজন্যই আপনি আমাকে বিছানায় শুতে বলেছেন তাইনা!আহসান রিমির হাত ওর কলার থেকে ছাড়িয়ে বলে,এর জন্য রেসপন্সিবল আমি না আপনি নিজে ওকে?

রিমি ওর মুখটা হা করে বলল,উল্টা চোর কোটওয়াল কো ডাটে!আমি কি আপনাকে বলেছি আমাকে জড়িয়ে ধরে শোন?
আহসান রিমির কিছুটা কাছে গিয়ে বলে,বলোনি তবে বাধ্য করেছো।পুরোটা রাত তুমি আমাকে ঘুমোতে দাওনি।হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আমার ঘুমের ১৩টা বাজিয়েছো।
-আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হচ্ছে তাইনা?(কোমড়ে হাত গুজে)
-শাক, মাছ,অপবাদ এসব কি বলছো!(মুখ বিকৃত আকার করে)
-এসব বোঝেন না তাইনা!আপনি তো ফিডার খান এখনো!
-ওই শোনো আমার সাথে ত্যাড়া কথা বলতে আসবে না।আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না।বুঝেছি তোমাকে ফুটেজ না দেখালে হচ্ছে না।

-কিসের ফুটেজ?
আহসান রিমির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ল্যাপটপ বের করে রিমিকে একটা ভিডিও দেখালো।রিমি ভিডিও টা দেখে চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো।
-কি এবার ট্রাস্ট হলো তো!
-তার মানে এই ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে?
-আগে ছিলো না ২ দিন হলো লাগিয়েছি।
-কিহ!আপনি আমার উপর নজর রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন?কিন্তু কখন লাগালেন?
-লাগিয়েছি এক ফাঁকে।তাছাড়া আমি যদি সিসি ক্যামেরা না লাগাতাম তাহলে আজ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারতাম না।তাই মন থেকে এই সিসি ক্যামেরাকে থ্যাংকস জানাচ্ছি।

রিমি দুম করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর মুখ ফুলিয়ে বলল,আপনার সাহস কি করে হলো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর?কখন কি করি না করি কে জানে অতসব মনেও নেই আমার।জানলে তো সাবধানে থাকতে পারতাম।
-কেন তুমি এমন কি করেছো যার জন্য সাবধানে থাকার কথা বললে?
-কিছু করিনি কিন্তু,,,,
-কিন্তু কি?
-কিছু না বাদ দেন।আগে থাকতে জেনে গিয়েছি ভালো হয়েছে বাবা।
-কিভাবে হলো ভালো টা?
-আপনি বড্ড প্রশ্ন করেন।হসপিটালে কি যাবেন না আজ?
-যাব তো।কিন্তু ফয়সালা করে।
-কিসের ফয়সালা?

আহসান একটা বালিশ কোলে নিয়ে বলল,আমাকে লম্পট আর কি কি যেন বললে তার।
-আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি?মুখ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল আমার(বোকা হাসি দিয়ে)
-বাহানা টা একদমই ডিসলাইক করলাম।তুমি যদি বলতে যে না জেনে ভুল করে বলে ফেলেছো তাও ভেবে দেখতাম শাস্তি টা কম করা যায় কিনা।কিন্তু তুমি তো ডাহা মিথ্যা কথা বললে।
-ওই একটা হলেই হলো সেম টু সেম।
-সম্পার আর জিসান জোকারটার সাথে মিশতে মিশতে একদম ফুল ওদের কপি হয়ে গেছ।
-একদম জিসানকে জোকার বলবেন না বলে দিলাম।
-ওয়াও,ওকে কিছু বললেও দেখছি তোমার খারাপ লাগে!
-আপনি কি বলতে চাইছেন?

-নাথিং বলে আহসান মন খারাপ করে চলে গেল।
এদিকে রিমি ভাবনায় পড়ে গেকে আহসানের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে।আহসান চলে গেলে জিসান রিমির রুমে আসলো।
-গুড মর্নিং ভাবি।আমি তোমার সিভি নিয়ে চলে এসেছি।
রিমি জিসানের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল,তাই!খুব ভালো করেছো।আজকের মধ্যেই কিন্তু সব ফর্মালিটিস শেষ করতে হবে আমাদের।

-হয়ে যাবে সব তুমি চিন্তা করো না।
-হুম,আমি তো খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি।যদি সব কিছু ভালোই ভালোই হয়ে যায় আমি যে কি খুশি হবো জানো না তুমি।
-কিন্তু আমার তো ভয় করছে তুমি কলেজের শিক্ষিকা হয়ে যদি আমাকে পানিশমেন্ট দেওয়া শুরু করে দাও!!
-উমম,সেটা তোমার আচার আচরণের উপর নির্ভর করবে।কাজ পছন্দ না হলে দু এক ঘা পড়তেও পারে হিহিহি।
সন্ধ্যার পরে অপা আহসানের রুমে আসলো।রিমি তখন মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিল।অপাকে দেখে বইটা সাইডে রেখে দিল।

-মা আপনি!বসুন।
অপা গিয়ে রিমির পাশে বসলো।
-কি পড়ছিলে?
-একটা উপন্যাস পড়ছিলাম।আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন?
-হুম,তোমার বাবার ফোন এসেছিলো কিছুক্ষণ আগে।
বাবার কথা শুনে বেশ খুশি হয়ে গেল রিমি।মস্ত এক হাসি দিয়ে বলল,কি বলেছে বাবা?
-বলেছে তোমায় আর আহসানকে তাদের বাড়িতে কদিন বেড়াতে।
-কিন্তু বাবা তো রেগে আছে আমার উপর!

-রাগ কি সবসময় থাকে পাগল!রাগ নিবারণ হয়েছে বলেই তো কাছে ডাকছে।এসব কথার মাঝে আহসান চলে আসে।এসেই বলে,কে রাগ করেছে মম?
-ভালোই হয়েছে তুই এসেছিস।তোর শ্বশুরমশাই তোকে আর রিমিকে কদিনের জন্য যেতে বলেছেন তাদের বাসায়।
কথাটা শুনেই আহসানের মেজাজ যেন বিগড়ে গেল।
-রিমি একা গেলে যাক আমি যাবনা।আমিতো ফ্রি বসে নেই।হসপিটালে কতো কাজ আছে আমার।(বিরক্তিকর মুখ করে)
-এভাবে বলছিস কেন?তুইতো গাড়ি নিয়ে যাবি তাহলে প্রবলেম টা কোথায়?ওখান থেকেই হসপিটালে যাবি নাহয়।
-মম তুমি বুঝতে পারছো না,বাপি খুব রেগে যাবে কথাটা শুনে।

-কেউ রাগবে না।আমি সব ম্যানেজ করে নেব।ও হ্যাঁ ম্যানেজ থেকে একটা কথা মনে পড়লো।আমি তোমার শ্বশুরকে মানিয়ে ফেলেছি তোমার জব করার বিষয়টা নিয়ে।(রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মা।
অপা রিমির গালে একহাত রেখে বলে,ধন্যবাদ দিতে হবে না।তো তোমরা কবে যাচ্ছো সেখানে?
-কালই গেলে ভালো হয় মা।কারণ আমি যদি জবটা পাই তো ১ তারিখ থেকে জয়েন করবো কলেজে।পুরো ৮ দিন আছে আমার হাতে তাই কাল গেলেই বোধয় ভালো হয়।

রিমির কথা শুনে আহসান বলে উঠে,তোমার যাওয়ার হলে তুমি যাও আমি যাবনা,Never…
-আচ্ছা মা আমি তাহলে জিসানকে নিয়ে যাই এতে আমার সময় ও কেটে যাবে আড্ডা দিয়ে।(আহসানকে রাগানোর জন্য বলল)
আহসান রিমির দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বলল,মম আমি যাব এই বলে শাওয়ার নিতে চলে গেল।আহসান আচমকাই রাজি হয়ে যাওয়ায় অপা যেন বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়।
-কিভাবে মেনে নিলো ছেলেটা!হুট করে মুডটা কিভাবে চেঞ্জ হলো?
-আমার মনে হয় আপনার ছেলের মাথায় গন্ডগোল আছে।কখন কিভাবে ওনার মুড পাল্টে যায় তা উনি নিজেও জানেন না হয়তো হা হা।

-এভাবে বলতে নেই ও তোমার স্বামী।স্বামী যেমনই হোকনা কেন যতদিন বেঁচে থাকবে নারীর অলংকার হয়ে থাকবে।যখন একটা মেয়ের জীবন থেকে স্বামী নামক মানুষটা হারিয়ে যাবে তখন সে শ্বশুরবাড়ি হোক বা বাপের বাড়ি,দু জায়গাতেই অবহেলিত।যতই সে নারী উচ্চশিক্ষিত হোকনা কেন।
-আমি বুঝতে পেরেছি মা।
-গুড,আচ্ছা আমি এখন উঠি অনেকক্ষণ হয়েছে এসেছি।এই বলে চলে যায় অপা।
আগামীকাল সকালের ডিউটি করে আহসান রিমিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।আহসানের জন্য প্রথম শ্বশুরবাড়ির যাত্রা এটা।আহসান গাড়ি চালাচ্ছে রিমি ওর পাশের সিটে বসা।রিমি কিছুক্ষণ পর পর আহসানের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে মিটিমিটি হাসছে।
আহসান বিষয়টা লক্ষ্য করে বলল,আর ইউ স্ক্রাব!হাসছো কেন এভাবে!

-আপনাকে কিভাবে রাজি করিয়েনিলাম বলুন!আমি তো খুব জিনিয়াস।রিমি ওর পিঠ থাপড়ে বলল,সাব্বাশ রিমি সাব্বাশ।
-তুমি কিন্তু আমাকে ব্লেকমেইল করে কনভিন্স করেছো।That’s not fair ok!
-আমি ব্লেকমেইল করলে আপনি রাজি কেন হবেন হুম?আপনি আমাকে একটা কথা বলুন,জিসান এমন কি করেছে যার আপনি ওকে দেখতে পারেন না?।
-Don’t talk rubbish…জিসান আমার ছোট ভাই।ওকে আমি কেন দেখতে পারবো না?
-সেটা তো আপনি জানেন,কি ক্ষতি করেছে জিসান আপনার।

-আমি কিন্তু খুব জোরজবরদস্তি করে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখছি এখন।তাই প্লিজ আমাকে আগের রুপ ধারণ করতে বাধ্য করো না।নইলে গাড়ি থেকে নামার সুযোগ ও দেবনা,ডিরেক্ট ধাক্কা দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেব।রিমি আহসানের কথায় ভয় পেয়ে যায় প্রচুর।কারণ রিমি জানে আহসান কতটা ভয়ংকর।তাইতো ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপচাপ কথা না বলে বসে থাকে।গাড়ি গিয়ে থামে একটা চারতলা বাড়ির সামনে।অবশ্য রিমি আহসানকে গোলি দেখিয়ে এই অবধি নিয়ে এসেছে।রিমি বলল,এইতো আমরা চলে এসেছি।রিমিরা গাড়ি থেকে নামলে নাজমুল হোসেন ও আম্বিয়া ওদের ঘিরে ধরলো।রিমি অনেকদিন পর বাবা মাকে দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়ে।আহসান রিমির বাবা মাকে সালাম দিল।

হালচাল জিজ্ঞেস করার পর্ব শেষ হলে সবাই বাড়ির ভেতর গেল। রিমি আগে যেই রুমটায় থাকতো সেখানে ওদের জিনিসপত্র নিয়ে গেল।আহসান রুমের ভেতর গিয়ে বলল,তোমরা এতোটুকু একটা ফ্ল্যাটের মধ্যে কিভাবে থাকো হুম?
রিমি আহসানের প্রশ্নে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।

-কি বললেন আপনি?এটা ছোট ফ্ল্যাট?জানেন এই ফ্ল্যাটটা কিনতে আমার বাবা মা কতটা কষ্ট করেছে!সেটা আপনাকে বলে কি হবে আপনি তো কষ্ট কি জীবনে চোখেও দেখেননি।আপনার মতো সবাই আলিশান প্রাসাদের মালিক নয় বুঝলেন?
-হয়েছে হয়েছে এতো জ্ঞান দিতে হবে না আমায়।খুব গরম লাগছে এখানে।একটা এয়ার কন্ডিশন ও দেখছি নেই।
-আপনি কি এখানে আমার পরিবারকে অপমান করতে এসেছেন?যদি তাই করতে এসে থাকেন তাহলে আপনি এখনি চলে যেতে পারেন আমি আটকাবো না।(কড়া ভাবে)

তোলপাড় পর্ব ১১+১২+১৩

-কিছু বলাও যাবেনা দেখছি ধুর।তুমি কি ফ্যানটাও ছাড়বে না নাকি?
-ওহ সরি বলে রিমি ফ্যান ছেড়ে দিল।এরই মাঝে আম্বিয়া এসে বললো,কি করছো বাবাজীবন?তোমার এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
-না আন্টি,জাস্ট একটু গরম অনুভব হচ্ছে এই আরকি।আহসান রিমির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও চোখ গরম দিয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর বলল,আমি আপনার মাকে মা ডাকি আপনি আন্টি কেন ডাকছেন?

-আহা চুপ করনা।তুই সর্বদাই বড্ড বেশি কথা বলিশ।আহসান বাবার যা ইচ্ছে হবে আমাকে ডাকুক।তোর কি?আমি যাই একটা জালি ফ্যান এনে দিচ্ছি তোমাদের রুমে তাহলে গরম কম লাগবে।এই বলে চলে যাচ্ছিলো কি রিমি আটকে নিল।
-আম্মু তোমাকে যেতে হবে না আমি নিয়ে আসছি।
-আমি যাচ্ছি তো।আর তোমরা এখন খেতে আসো।আম্বিয়া আহসানের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমাদের আসার কথা শুনে তোমার শ্বশুরমশাই সেই সকাল বেলা উঠে বাজারে গিয়ে বাজার করে এনেছেন।খুব খুশি হয়েছেন উনি তোমরা আসায়।নিজ হাতে পরিবেশন করে খাওয়াবে বলে বসে আছে টেবিলে।তোমরা এসো আমি ফ্যান এনে আসছি।

খাবার টেবিলে খাবারের আইটেম গুলো দেখে আহসান বেশ অবাক হয়।কারণ প্রতিটি খাবার ওর পছন্দের।নাজমুল খুব যত্ন করে মেয়ে জামাইকে খাওয়ালেন।খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে রিমি ও আহসান রুমে চলে আসলো।আহসান কিছুক্ষণ রেস্ট নিলো।তারপর হসপিটাল থেকে কল আসায় ইমার্জেন্সি আছে এই বলে তরিঘরি করে বেড়িয়ে পড়ল।

তোলপাড় পর্ব ১৭+১৮+১৯