তোলপাড় পর্ব ১১+১২+১৩

তোলপাড় পর্ব ১১+১২+১৩
শান্তনা আক্তার

-তুমি তো শুধু আমার কথাই জিগ্যেস করে গেলে,এবার তোমার পালা।
রিমির কথায় জিসান লজ্জা পেয়ে বলল,কি বলবো!
-আমি বলতে চাইছি কি করো জব নাকি স্টাডি?তুমি কথাটা কোথায় নিয়ে গেলে?
-ওহ,না এখনো কিছু করিনা।স্টাডি কমপ্লিট করেছি। তোমাদের সাথেই মাস্টার্স এর এক্সাম দিয়েছি।ভাবছি ড্যাডের বিজনেস দেখাশোনা করবো।

-তুমি কি একা!মানে ভাই বোন,
-হুম একা।এই জেনারেশনে আমাদের রিলেটিভদের সবার একটা করেই সন্তান।আমার ড্যাড আর তোমার mother in law দু ভাই বোন।আর তোমার father in law ও স্রুতির আম্মু দুই ভাই বোন।এনাদের একটা একটা পিস যেমন আমি,ভাইয়া,স্রুতি আরও রিলেটিভদের ও সেম একটা করেই।তোমরা?
-ভালো।আমার বড় আপু আছে বিয়ে হয়ে গেছে।
-ওহ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-হুম,তো তুমি যেটা ভাবলে সেটা শুনি এবার।রিলেশন করো কিনা?না বলতে চাইলে থাক আমি ওতো ইইন্টারেস্টেড নই।
-হুম সে আর বলতে!সময় করে একদিন তোমার সাথে দেখা করাবো তার সাথে।
-দরকার নেই,এই দেখাদেখির চক্করে সবসময় ফেঁসে যাই আমি।আর কখনো কারো বিষয়ে নাক গলাবো না।খুব বড় শিক্ষা পেয়েছি আমি।
-As your wish..
-তা মেয়েটার নাম কি?
-রুশা(লজ্জা পেয়ে)
-ছেলেরাও যে এভাবে লজ্জা পায় জানতাম না।আচ্ছা এখন অনেক গল্প করা হয়েছে আমার আর ভালো লাগছে না।মুখ লেগে এসেছে কথা বলতে বলতে।অন্য সময় আড্ডা দেব এখন মাথা ধরেছে।

-ওকে,একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে ভাবি!
-কি?
-আমরা আজ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে?
-আমি তোমার বড় ভাবি।বেস্ট ফ্রেন্ড কিভাবে সম্ভব!
-চাইলেই সম্ভব।তাছাড়া আমি আর স্রুতি সমবয়সী।তাহলে তুমি আর আমিও সমবয়সী।সো প্রবলেম কি?যদিও একটু আধটু ছোট হই তাতে কি?কোথাও তো লিখা নেই যে বয়সে বড় হলে বেস্টফ্রেন্ড বানানো যায়না।
-বেস্টফ্রেন্ড হতে গেলে খুব প্যারা নিতে হয়।আমি আর পারবো না।
-প্লিজ মেনে নাও।আর আমি স্রুতি নাকি হুম!আমি তোমাকে ডেঞ্জারে ফেলবো না কথা দিলাম।
-মনে থাকবে তো?পরে আবার ভুলে যেওনা যেন!

-ওকে মনে থাকবে।তাহলে আমরা BFF আজ থেকে।
রিমি ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করে,এটা কি?
-Best Friend Forever..(বলে ডান হাত বাড়িয়ে দিল)
-ওওও,ওকে রিমিও ওর হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে।এই অবস্থায় আহসান রুমে প্রবেশ করে আর সব দেখে ফেলে।আহসান সাথে সাথে ওর মুখ গোমড়া করে বলে উঠে,কি হচ্ছে এখানে!
-কিছু না ভাইয়া।আমরা তো gossiping করছিলাম।(জিসান)

-আমি প্রায় 3 hours হয়েছে বাহিরে গিয়েছি এতোক্ষণ কেউ gossiping করে!
জিসান এখনো রিমির হাত ধরে আছে।রিমি ওর হাত ছাড়িয়ে বলল,জিসানের কোনো দোষ নেই আমিই বেশি বকবক করছিলাম।
-জিসান তুই এখন তোর রুমে যা আমি রেস্ট করবো।(দাঁত কামড়ে)
-ওকে ব্রো,আমি এখন চলেই যাচ্ছিলাম এই বলে চলে যায় জিসান।
জিসান চলে গেলে আহসান রিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপর ব্যঙ করে বলে,আমি জানতাম তুমি মিডিলক্লাসের তবে তুমি যে লোক্লাসের সেটা জানতাম না।

রিমি যেন চরম অবাক হলো আহসানের কথায়।বেশ রেগেও গেল ও।
-আপনি আমাকে লো ক্লাসের কেন বললেন?আমি এমন কি করেছি যার জন্য আপনি আমাকে লোক্লাস বললেন?
-আমি তোমার মতো মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই এখন আমার সামনে থেকে সরে যাও।তোমার মুখ দেখলে রাগ হয় আমার।এই বলে গলার টাইটা খুলে বিছানায় ছুড়ে মারে।রিমি আর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে নিচে চলে যায়।
এভাবে বেশ কয়দিন চলে যায়।আহসান যখনি জিসান আর রিমিকে এক সাথে দেখবে তখনই রিমির সাথে রুডলি বিহেভ করবে।আজ রাতে আহসান হসপিটাল থেকে এসে দেখে রিমি ঘরে নেই।আশে পাশে কোথাও রিমিকে দেখতে না পেয়ে অপার রুমে গেল।গিয়েই বলল,মম রিমি কোথায়?

-রিমি আর সম্পা ছাদে গেছে।জিসান গান গাচ্ছে অপার পুরো কথা শোনার আগেই আহসান চলে যায়।
-চলে গেল ছেলেটা।ভালো মন্দ কিছু যে জিজ্ঞেস করবো তার ও সময় হয়না ওর কাছে।ইশ ওর বাপির কথা জিজ্ঞেস করতে তো ভুলেই গেলাম।শান্তি মতো দাঁড়ালে তো জিগ্যেস করবো!আমার হয়েছে যত জ্বালা এই বাবা ছেলেকে নিয়ে বলে নিজের কাজে মন দিল অপা।
আহসান রাগি মুডে ছাদে গেল।গিয়ে দেখলো জিসান গান গাচ্ছে,রিমি আর সম্পা রেলিং পাশে বসে জিসানের গান শুনছে।আহসান গিয়ে রিমির হাত শক্ত করে ধরে নিল।আচমকা এমন কিছু হওয়ায় সবাই বেশ চমকে উঠে।কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে আহসান রিমিকে টানা শুরু করে।রিমি,জিসান আর সম্পা আহসানকে নানান প্রশ্ন করে কিন্তু আহসান ওদের প্রশ্নের তোয়াক্কা না করে রিমিকে টানতে টানতে রুমের ভেতর এনে দরজা লাগিয়ে দেয়।তুমি গান শুনবে তাইনা!এই বলে রিমিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল।আহসান আলমারি খুলে একটা গিটার বের করে রিমির পাশে গিয়ে বসে।

-আপনি কি করতে চাইছেন বলবেন প্লিজ।
আহসান রিমির ঠোঁটের উপর একটা আঙুল রেখে বলল,হুশশ।আমি গান গাইবো তুমি শুনবে বলে গিটারের তার টেনে গান ধরলো।
♪Mujhko barsaat banalo
Ek lambi rat banalo
♪Apne jajbaat banalo janaa….
♪Mujhko alfaj banalo
Geherasa raj banalo
♪Dilki awaz banalo jana….
❤️Nasha hu main,behekne do❤️
Mere katil ?Mujhe jine ka hak to do?
♪Mujhko barsaat banalo
Ek lambi rat banalo
♪Apne jajbaat banalo janaa….
♪Mujhko alfaj banalo
Geherasa raj banalo
♪Dilki awaz banalo jana….

আহসান গান গাচ্ছে আর রিমি অবাক দৃষ্টিতে আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎই রিমির চোখ গেল আহসানের আঙুল গুলোর দিকে।অতিরিক্ত প্রেশার ক্রিয়েট করায় গিটারের তার ছিড়ে গেছে সাথে আহসানের হাত ও কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হচ্ছে।রিমি আহসানের হাত ধরে থামিয়ে চিল্লিয়ে বলল,থামুন আপনি।হাত কেটে গেছে এবার তো পাগলামো বন্ধ করুন।রিমির চিৎকারে আহসান স্ব জ্ঞানে ফিরে আসল।আহসান কিছু বলবে কি রিমি ফ্রাস্ট্রেড বক্স এনে আহসানের হাতে মেডিসিন লাগাতে লাগলো।রিমি খুব যত্ন করে আহসানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল।আহসান রিমির চোখের কোণের পানি বাম হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল,গান শুনেছো!নাকি আরও শুনবে?রিমি আহসানের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,

-আর পারছি না আমি আপনাকে নিতে।কি শুরু করেছেন আপনি?অকারণে খুব বেশি হাইপার হয়ে যাচ্ছেন আপনি।কিন্তু কেন?কি চাইছেন আপনি?আপনি কি মেন্টালি সিক বলুন তো!
আহসানকে মেন্টালি সিক বলায় প্রচুর রেগে যায় ও।কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিল রিমির গালে।রিমি গালে হাত দিয়ে বলে,মুক্তি দিন আমায়।ছেড়ে আসুন আমার বাবার বাসায়।যে যা বলুক আমি সয়ে নেব তাও এই বাড়িতে আর এক মুহুর্তও থাকবো না।প্লিজ লিভ মি।
এবার আহসান রিমির গলা চেপে ধরল।

-আমার থেকে মুক্তি চাইছো তাইনা?আমি তোমায় খুন করে মুক্তি দিচ্ছি বলে আরও শক্তি দিয়ে চেপে ধরল।রিমি অনেক চেষ্টা করছে আহসানের থেকে বাঁচার কিন্তু ওর শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।ইতোমধ্যে হাত পা ছড়িয়ে ছটফট করতে লাগলো রিমি।চোখ উল্টে যাচ্ছে ওর।এই অবস্থা দেখে আহসান রিমিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।ছাড়া পেয়ে রিমি গলায় হাত দিয়ে কাশতে শুরু করে।আরেকটু হলে বোধয় মরেই যেত।আহসান এতোক্ষণ হুশে ছিলো না বলতে গেলে।রিমির এই করুণ অবস্থা দেখে আহসান নিজেই নিজের কাজে অনুতপ্ত হচ্ছে।ও গিয়ে রিমির মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে কাশি থামানোর চেষ্টা করল।কিন্তু রিমি আহসানের হাত ওর শরীরে পরতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে কাশতে কাশতে বলল,একদম আমাকে ছোঁবেন না।ঘৃণা করি আপনাকে আমি।সরে যান বলছি নইলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো।আহসান কিছু না বলে রিমির দিকে এক ঝলক চেয়ে বাহিরে চলে যায়।আহসান চলে গেলে রিমি বালিশে মুখ লুকিয়ে মন ভরে কাঁদতে লাগলো।

জিসান আর সম্পা আহসানের রুমে যায়নি ভয়ে।জিসান ভেবেছিলো এমনি কোনো জরুরি কাজ আছে তাই হয়তো আহসান এরকম করেছে।তবে সম্পার মুখে যখন শুনলো আহসান রিমিকে দেখতে পারেনা।মারধর করে তখন আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে আহসানের আম্মু মানে অপার কাছে গিয়ে সবটা বলল।খবর পেয়ে তরিঘরি করে আহসানের আম্মু আহসানের রুমে আসলো।সাথে জিসান সম্পাও।রিমিকে উবুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে অপা রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,কি হয়েছে রিমি মা!রিমি লাফ দিয়ে উঠে পরে।ওনাদের সবাইকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।রিমির থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে অপা আবার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?

রিমি মিথ্যা হাসি টেনে বলে,কিছু হয়নি মা।পাশ থেকে সম্পা বলে উঠে,আপনি মিছা কতা ক্যান কইতাছেন?ছোটসাহেবে আপনারে মারছে আমি জানি।সম্পা বলা শেষ করতেই জিসান বলল,ভাবি তুমি সত্যিটা খুলে বলো ফুপিকে।ভাইয়া কি সত্যি তোমাকে মেরেছে?
-সেরকম কিছুই হয়নি বললাম তো।(কড়া গলায়)
-সেরকম কিছু না হলে তোমার চোখ মুখ ফুলে আছে কেন?ইদানীং তোমার হাত পায়ে এতো কাটা ছেড়া কেন?(অপা)
-মা আমি ভালো আছি।

-চুপ,কিছু ভালো নেই।আহসান কোথায়?আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।কি ভাবে নিজেকে ও?বাপটার জন্য কখনো মার খায়নি আমার হাতে।সবসময় ছেলের ভুলগুলোকে আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলে এসেছে
উনি।তাইতো আজ ছেলে এতো বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে।
-প্লিজ মা আপনি ওনাকে কিছু বলবেন না।আমি হাত জোড় করছি।
-ওকে কিছু না বললে যে আরও পাগলামি করবে মা!তুমি বুঝতে চাইছো না কেন?
-জাস্ট এবারের মতো মাফ করে দিন ওনাকে।আমি হাত জোড় করে বলছি।
-আচ্ছা শুধু তোমার জন্য ছেড়ে দিলাম আজ।কিন্তু নেক্সট টাইম কিন্তু আর শুনবো না তোমার কথা।তো ও কি জন্য রাগ দেখালো আজ?

-আমি জানি না সেটা।(মাথা নিচু করে)
-বুঝেছি ও মনে হয় তোমাকে মেনে নিতে পারছে না।কিন্তু তাই বলে এমন আচরণ করবে!ছি আমার ছেলে বলতেও লজ্জা করছে ওকে।আমার এই ৩২ বছরের সংসারে আজ অবধি মার কি জিনিস বুঝলাম না।আর তুমি তো কদিন হলে আসছো।না খুব কষ্ট হচ্ছে এটা মানতে আমার।তোমার মতো সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়েকে আঘাতের পর আঘাত করা ঠিক হচ্ছে না।আমি সত্যিই মানতে পারছি না।
-আপনি চিন্তা করবেন না মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।

-হুম,তুমি একটা ব্যাথার ট্যাবলেট খেয়ে নিও।আর ঘুমিয়ে পড়ো।আহসান কোথায়?
জিসান বলে,আমি ভাইয়াকে বাহিরে যেতে দেখেছিলাম।হয়তো আবার হসপিটালে গিয়েছে।
-ওও,আচ্ছা মা তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।আমরা গেলাম বলে অপা জিসান ও সম্পাকে নিয়ে চলে গেল।ওরা চলে গেলে রিমি বিছানা ছেড়ে সোফায় গিয়ে শোয়।প্রায় আধ ঘন্টা পর আহসান আসে।তারপর ধিরু পায়ে রিমির কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে।আহসান রিমির মুখটার দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকলো।তারপর রিমির গায়ে চাদরটা ভালোভাবে টেনে দিয়ে বেলকনির দিকে গেল।

নিস্তব্ধ আহসান এবার মুখ খুলে বলে,আমার কি হয়েছে জানি না আমি।কিন্তু আমার পাষাণ হৃদয় যে গলতে চাইছে এটা বেশ বুঝতে পারছি।খুব অহংকারি আমি!আসলে আমি বুঝতে পারছি না আমি কি চাচ্ছি।আমার মন এক দিকে যাচ্ছে আর আমি অন্য দিকে।কদিন ধরে নিজেকে বদ্দ উম্মাদের মতো লাগছে।মনটা বেশ উতলা হয়ে উঠেছে।হৃদয়ে জমা সব ময়লা বৃষ্টির পানি হয়ে ধুয়ে দিতে মন চাচ্ছে।আচ্ছা এর পেছনে কি রিমি আছে?ওর জন্যই কি আমি আমার মধ্যে এতটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি!আমি কেন ওকে জিসানের সাথে দেখতে পারি না?কেনোই বা ওকে আঘাত করার পর আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ঝলসে যায়?

ওর মায়া ভরা মুখ দেখলে কেন আমার মনের ভেতর সুনামি শুরু হয়ে যায়?এসব কি ভালবাসার syndromes!বাই এনি চান্স রিমিকে কি আমি ভালবাসতে শুরু করেছি?ওহ নো এটা আমি কি ভাবছি?আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আর নিতে পারছি না।প্রচুর টেন্সট আমি।রেস্টের প্রয়োজন আমার।এই বলে রুমের ভেতর চলে আসে আহসান।খুব ভোরে উঠে হসপিটালে চলে যায় আহসান।রিমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় টের পায়নি আজ।রিমির ঘুম ভাঙে জিসানের ডাকে।রিমি ঢুলু ঢুলু শরীরে উঠে বসলো।তারপর বলল,কি হয়েছে ডাকছো কেন?

-তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো কেন!ব্রেকফাস্ট করবে না?
-এখন কটা বাজে বলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৮টা বেজে ১০ মিনিট।এমা অনেক বেলা হয়ে গেছে এই বলে উঠবে কি আরেকটা জিনিস দেখে অবাক হলো।একি আমি বিছানায় কিভাবে আসলাম!
-বিছানায় কিভাবে আসলে মানে!কি বলছো ভাবি?
-আসলে আমি বলতে চেয়েছি এতো বেলা হয়েছে আর আমি এখনো বিছানায় কেন?(কথা ঘুরিয়ে বলল)
-ওহ,ঠিক আছে চলো তাড়াতাড়ি আমি তোমার জন্য ওয়েট করে আছি একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো বলে।
-তুমি গিয়ে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-কতক্ষণ লাগবে?
-১০ মিনিট।

-ওকে আমি যাচ্ছি ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে।এই বলে চলে যায় জিসান।এদিকে রিমি ভাবছে ও বিছানায় কি করে আসলো!কে আনলো?আহসান কিনা?ইত্যাদি ইত্যাদি।
রিমি আর জিসান খাবার টেবিলে বসে আছে ব্রেকফাস্ট করবে বলে।এমন সময় রঞ্জিত ওর রুম থেকে বের হতে হতে বলল,অপা কফি দাও আমায়।তবে টেবিল অবধি এসে ওনার মেজাজ বিগড়ে গেল।রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুমি এখানে কি করছো?রিমি কিছু না বলে মাথা নুইয়ে রাখলো।জিসান বলল,কি আবার? ব্রেকফাস্ট করবে আংকেল।

-কেন আজ সম্পা ওর রুমে ব্রেকফাস্ট দিয়ে আসেনি?(মেজাজ দেখিয়ে)
-না আমি মানা করেছি।আমি চেয়েছি ভাবি আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করুক।
রঞ্জিত জিসানের সাথে তর্ক না করে অপাকে ডাকতে লাগলো।অপা কফি নিয়ে এসে বলল,এইতো কফি আনছি।
-রাখো তোমার কফি।এই মেয়েটা এখানে কেন?তোমাকে না বলেছি ও যেন আমার সামনে না পড়ে।
-থাকনা এমন করে বলোনা।বাচ্চারা একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে করুক।

-করুক তবে আমার সামনে কেন আসবে?এই মেয়েকে দেখলে আমার রাগ হয় তোমাকে বলেছি না!
রিমি রঞ্জিতের কথায় খুব আঘাত পেল।অপমানিতও হলো।তাইতো অঝোরে কেঁদে চলেছে।জিসান রিমিকে কান্না করতে দেখে রঞ্জিত কে বলল,আংকেল তুমি এভাবে ভাবিকে ইনসাল্ট করতে পারোনা।ভাবি কিন্তু এ বাড়ির বউ হয়।
-বউ মাই ফুট!ওকে আমি আমার পুত্রবধূ হিসেবে মানিই না।যতসব মিডিলক্লাস,গরীব কাঙালির মেয়ে।রঞ্জিতের শেষ কথাটা শুনে রিমি আর এক মুহুর্তও সেখানে বসে থাকতে পারলো না।দৌঁড়ে রুমে চলে আসলো।

-এটা তুমি খুব বড় ক্রাইম করলে আংকেল।মানুষ হয়ে মানুষের সাথে এমন বিহেভিয়ার করা একদমই ঠিক নয়।এই বলে জিসান ও চলে আসে।এসে দেখে রিমি হাটু ভাজ করে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।জিসান রিমিকে শান্তনা দিতে বলে,Don’t cry ভাবি।দেখবে আংকেল একদিন ঠিক তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে মর্যাদা দেবে।
রিমি মাথা উঁচু করে বলল,তুমি আমার একটা কাজ করবে জিসান?
-কি কাজ ভাবি?
-একটা সিভি এনে দেবে?
-সিভি দিয়ে তুমি কি করবে?

-জব।এখানে দিনরাত অপদস্ত হওয়ার থেকে জব করবো।এতে কারো চোখের সামনে পড়ে থাকতে হবে না।
-তুমি দেখো আংকেল তোমাকে মেনে নেবে জব করার চিন্তা ভুলে যাও।
-না জিসান,তুমি শুনলে না কিভাবে আমার বাবাকে গরীব কাঙালি বলল!আমার অপমান আমি সইতে পারি কিন্তু আমার বাবার অপমান আমি কখনোই সইবো না।আমি কাজ করবো বসে থাকবো না।আজকে আমার একটা ভাই নেই যে বাবা মাকে দেখবে।তাদের দেখাশোনা তো আমাকেই করতে হবে।

খুব কষ্ট করে আমাকে আর আমার আপুকে মানুষ করেছে আব্বু আম্মু।আমি কিভাবে তাদের অপমান সহ্য করতে পারি বলতে পারো?আজ আমি নিরুপায় বলে এখানে পড়ে আছি নইলে বিয়ের প্রথম দিনই চলে যেতাম।দাঁত কামড়ে পড়ে আছি আমি।আমাকে কি পেয়েছে তোমার ভাইয়া আর ফুফা?আমি কি পুতুল যে লাথি চড় খেলে আমার ব্যাথা লাগবে না?দুজনে সমানে আমাকে অপমান করে আসতেছে।আর না এবার থেকে আমি নিজে কিছু করে তাদের দেখিয়ে দেব যে আমরা গরীব হলেও নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে জানি।রিমি কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে।

-You are right ভাবি।আমি তোমাকে সিভি এনে দেব।তুমি এখন কিছু খেয়ে নাও।আমি সম্পাকে বলছি তোমার খাবার দিয়ে যেতে।
-আমারে কইতে হইবো না।আমি আইয়া পড়ছি।সম্পা ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমে আসলো।খাবারগুলো রিমির সামনে রেখে বলল,নেন ভাবি খাইয়া লন।বড়সাহেবের কথার গুল্লি মারেন।আর কান্দাকান্দি থামান।
-আমি কিছুই খাবনা তুনি নিয়ে যাও এগুলো।
-প্লিজ ভাবি খেয়ে নাও।আমি তোমার কথা রাখবো বলেছি,এবার তুমি আমার কথা রাখো।(জিসান)
-প্লিক জিসান জোড় কোরো না ভাই।
-ভাই বলছো কিন্তু ভাইয়ের কথা শুনছো না?তোমাকে খেতে হবেই।তুমি না খেলে কিন্তু আমিও খাবনা।
-আর আমিও না।সবাই তাকিয়ে দেখলো অপা এসেছে।অপা রিমির কাছে গিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,তুমি না খেলে আমিও কিন্তু খাবনা।

তোলপাড় পর্ব ৯+১০

-মা আপনি কেন আমার জন্য না খেয়ে থাকবেন?
-এইযে মা বলে ডেকেছো তাই।মেয়ে খাবেনা মা কি করে খাবে?
-তোমরা আমাকে খাইয়েই ছাড়বে বুঝলাম।আচ্ছা আমি খাব কিন্তু মা আপনাকে একটা কথা রাখতে হবে আমার।
-সব কথা রাখবো বলো।

-আমি জব করতে চাই। আপনি আপনার ওই বদরাগী স্বামী আর ছেলেকে একটু ম্যানেজ করতে পারবেন?
-আমি আমার স্বামীকে ম্যানেজ করতে পারবো কিন্তু ছেলেটাকে পারবো না বাবা।তুমিই ওকে বলো কেমন?
-আমি বললে যদি না মানে?
-হাসবেন্ড তোমার।তাই তেমার প্রতি তার অধিকার আছে।এজন্য আমি ওকে কিছু বলতে পারবো না তুমিই বলো।বুঝলাম না তুমি জব কেন করবে?

-কি করবো আপনিই বলুন!বাসায় থাকলে আপনার স্বামী ছেলের চোখের বালি হয়ে থাকতে হবে।তাছাড়া আমি পড়াশোনা করেছি বসে থাকার জন্য তো নয়!
-আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এখন খেয়ে নাও পরে দেখা যাবে।অপা নিজ হাতে রিমিকে খাইয়ে দিয়ে তারপর চলে গেল।রিমি খাওয়ার পর সবাই খেয়ে নিলো।রাতে আহসান বাসায় আসলে রিমি আহসানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপর,,,,,,,,,,,

তোলপাড় পর্ব ১৪+১৫+১৬