তোলপাড় শেষ পর্ব 

তোলপাড় শেষ পর্ব 
শান্তনা আক্তার

দিনকে দিন আহসান আর রিমির সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়ে উঠছে। রঞ্জিত চেয়েও কিছু করতে পারছে। আর সহ্যও করতে পারছে না। রঞ্জিত নাদিয়া আর তারেকের সাথে মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আহসানকে নাদিয়ার প্রতি দুর্বল করার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছে না। নাদিয়া যতবার আহসানের সাথে কথা বলতে গিয়েছে, আহসান ততবারি নাদিয়াকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারেক তার মেয়ের সাথে মিলিত হয়ে রঞ্জিতের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এটা সম্পর্কেও রঞ্জিত এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত।

সে বুঝতেও পারছে না তার জন্য কতো বড় ষড়যন্ত্র রেডি হয়ে আছে। এদিকে রিমি তার লক্ষ্যে সফল হয়েছে। সামির এবার পাস করে গেছে। শুধু পাস নয়, প্রত্যাশার চেয়েও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এর পেছনে রয়েছে সামিরের নিরলস পরিশ্রম সাথে রিমির অক্লান্ত প্রচেষ্টা। আগের তুলনায় এইচএসসি তে এবার পাসের হার বেশি। প্রিন্সিপাল বড় করে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কলেজে। সেখানে রিমিকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাথে প্রিন্সিপাল তার কথা অনুযায়ী রিমিকে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের পদ প্রদান করেছেন। প্রিন্সিপাল সকলের সামনে সেটা ঘোষণা দিয়েছেন। রিমি আজ খুব খুশি। জীবনের বড় কোনো এক লক্ষ্য জয় করে ফেলেছে সে। রিমিকে নিজস্ব একটা ক্যাবিন দেওয়া হয়েছে। রিমি ওর ক্যাবিনে গিয়ে সর্বপ্রথম বাবা মায়ের সাথে ওর খুশি ভাগ করে নিল। তারপর আহসানকে কল দিল। আহসান বিজি থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেনি। রিমি দু একবার কল দিয়ে আর দিলনা। কারণ ও বুঝতে পেরেছে আহসান বিজি আছে। তারপর একে একে অপা, রিমলি, জিসান, স্রুতি সকলের সাথে কথা বলে কলেজের কাজে মন দিল। কিছুক্ষণ পর,,,

-আমি কি আসতে পারি ম্যাম?
-কে? রিমি দেখলো দরজার সামনে সামির দাঁড়িয়ে আছে। রিমি হালকা করে হেসে বলল, ইয়েস।
সামির একটা র‍্যাপিং করা বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলল, থ্যাঙ্কিউ ম্যাম। আপনার জন্য আমি এ যাত্রায় পাস করে গেলাম। তাই আপনার জন্য ছোট একটা গিফট আনলাম। এক্সেপ্ট করলে খুশি হবো।
-আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি কেবল। তার জন্য উপহার দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
-প্লিজ ম্যাম।

-আমি তোমাকে আগেও মানা করেছিলাম সামির।
-জানি তবে এই গিফট টা স্পেশাল। তাছাড়া আপনাকে আমি কিছু বলতে চাই। যেটা বলার জন্য আমি এতদিন ধরে ওয়েট করছিলাম। আজকেই সঠিক সময়।
-কি এমন বলবে?
-আগে গিফট টা খুলে দেখুন তারপর বলছি। প্লিজ
ম্যাম। আমার কথাটা রাখুন।
রিমি গিফট খুলে দেখলো সেখানে একটা শাড়ি আছে। শাড়ি দেখে রিমির মুড একেবারেই বিগড়ে গেল। রিমির মুখে কান পঁচে যাওয়ার মতো এক্সপ্রেশন ফুটে উঠেছে।

-তুমি শাড়ি গিফট দেওয়ার সাহস কোথায় পেলে? আমি কি তোমার ফ্রেন্ড লাগি নাকি?
-ম্যাম আমি আপনাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ওইদিনই আপনাকে ভালো লেগে যায়। আপনি যদিও বিবাহিতা। তবুও আমি আপনাকে এক্সেপ্ট করতে পারবো। কারণ আমি জানি ভালবাসা ছোট- বড়, ধনী-গরিব, কালো-ফর্সা দেখে হয়না। ভালবাসা মন দিয়ে হয়। আমি সেই মনটাই আপনাকে উৎসর্গ করেছি। হয়তো এটা সমাজের চোখে খারাপ। আপনাকে নিয়ে আমার ভাললাগা,ভালবাসার বিষয়টি জানলে লোকে নানান কথা বলবে।

কিন্তু আমি সেটা নিয়ে ভাবিনা। আমি জানি আমি শুধু আপনাকে ভালবাসি। তাইতো যেই আমি কখনো বই ধরে দেখি না কেমন। সেই আমি কিনা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠেছি। ফলে ফেইলিয়ারের তকমা থেকে রেহাই পেয়েছি। সবই আপনার কারিশমায়। আপনি আমার লাইফে আসার পর থেকে আমি আমার প্রতিটি বদ অভ্যাস ত্যাগ করেছি। ভালো হয়ে গিয়েছি। পিতামাতার বাধ্য সন্তান হয়ে গিয়েছি। তাই এগুলোকে বিচার বিবেচনা করে আমি বলতে চাই, আমার জীবনে আপনার গুরুত্ব সত্যি অত্যাধিক। আমি চাই আপনি সারাজীবন আমার পাশে থাকুন। আমি আর কিছুই চাইনা। আপনি শুধু আমার প্রপোজাল গ্রহণ করুন শুধু। তারপর আমি পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করে হলেও আপনাকে নিজের করে রাখবো। সামির চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলে দিল। তারপর আস্তে আস্তে চোখ মেলতেই দেখলো রিমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে। রিমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে সামিরের দিকে। একটুও রাগ নেই রিমির চোখে মুখে। রিমি খুব শান্ত গলায় বলল,

-আর কিছু বলবে?
-ম্যাম, আপনি কোনো রিয়েকশন করলেন না যে?
-হুম করিনি। কারণ এটা রিয়েকশন করার বিষয় না। এটা খুবই সিম্পল একটা বিষয়।
সামির খুশি হয়ে বলল, তার মানে আপনি রাজী!
-আগে আমার কথাটা শোনো মনোযোগ দিয়ে। তারপর বলছি রাজী কি, রাজী না।
-ওকে ম্যাম।

-তুমি তোমার জায়গায় ঠিক। একজন মানুষের একজন মানুষকে ভালো লাগতেই পারে। ভাললাগার কাজটা কারো হাতে থাকে না। এটা কেবল মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মন যার প্রতি দুর্বল হবে তাকেই ভালো লাগবে। একইভাবে মন যার প্রতি ক্ষিপ্ত হবে তাকে ঘৃণা করবে। আর এই ভাললাগা বা মন্দলাগার বহিঃপ্রকাশ করবে আমাদের শরীর। আমরা যেকারোর প্রতি ভাললাগা মন্দলাগা পোষণ করতে পারি। এক্ষেত্রে বয়স, ধর্ম, স্বভাব,চরিত্র বিচারের কোনো উপায় নেই। একটা মানুষকে ভাললাগা অথবা ভালবাসার পর এগুলো কখনোই বাধা সৃষ্টি করে না।

ভালো লাগলে রাস্তার কুকুরকেও সুন্দর দেখায়৷ সে যতই নিকৃষ্ট আর নোংরা হোকনা কেন। তোমার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। আমি বিবাহিতা, তোমার থেকে একটু হলেও বয়সে বড়। তুমি যতই ভেবে থাকোনা কেন, তুমি বেশ কয়বার ফেল করেছো বলে তুমি আমি সেম বয়সের। কিন্তু তবুও তুমি আমার থেকে বড় কেন, আমার সমবয়সীও নও। তো গেল সেটা। আর একটা বিরাট কারণ হলো আমি তোমার টিচার। কি কি প্রসঙ্গ দাঁড়ালো তাহলে? বয়সে বড়,বিবাহিতা এবং টিচার। সবগুলো প্রসঙ্গে আমি তোমার থেকে সিনিয়র। আমার লেভেল আর তোমার লেভেল পরীক্ষা করেছ কখনো? আমার মতে করোনি।

তাইতো আমাকে খুব সহজে প্রস্তাব দিয়ে দিলে। তুমি ভাললাগা থেকে গড়ে ওঠা ভালবাসাকে গুরুত্ব দিলে, কিন্তু আমার লেভেল আর তোমার লেভেলকে একটা বালি সমানও গুরুত্ব দিলে না। এটা কেমন? তুমি যদি গভীর চিন্তা করতে, তোমার আর আমার মাঝের দূরত্বটা মেপে দেখতে তাহলে আই সোয়ের, তুমি আমাকে প্রপোজাল কেন, আমাকে নিয়ে সামান্য পরিমাণ ভাললাগার অনুভূতিটুকু ফিল করতে না। বয়সে বড় বা টিচারের কথা নাহয় বাদই দিলাম। আমি শুধু বিবাহিতা হওয়ার প্রসঙ্গ তুলি। আমি আমার হাসবেন্ডকে নিঃসন্দেহে ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। তো আমি কোন সাহসে তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবো বলতে পারো? তোমার বিন্দুমাত্র সেন্স থাকলে আজ এই কথাটা তুমি আমায় বলতে পারতে না। তুমি কতটা নির্বোধ সেটা তুমি নিজেই জানোনা।

জানলে আগে বিচার করতে তারপর আমার সামনে এসে ভালবাসার কথা বলতে। আজ আমি চাইলে তোমার সাথে চিৎকার চেচামেচি করতে পারতাম। তোমার বাবা এমনকি পুরো কলেজের সামনে অপমান করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। তার কারণ এসব করলে তুমি বুঝবে না কিছুই। বরং উল্টো হিতে বিপরীত হতো। তোমার মনে হিংস্রতা জন্ম নিত। আমি অনেক আগেই বুঝেছিলাম তুমি আমার প্রতি ইনটারেস্টেড। আমি অবুঝ নই। কোন স্টুডেন্ট এর মনে কি চলছে তা আমি তার চোখ,আকার-আকৃতি,ভাব-ভঙ্গি দেখেই বুঝে যাই। তোমার ব্যাপার টাও বুঝে গিয়েছিলাম।

কিন্তু আমি কিছুই বলিনি। কারণ আমি আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি সবসময় মানি, চিল্লাচিল্লি করে কখনো কাউকে ভালোর পথে আনা যায়না। যে ভালো হতে চাইবে সে দুটো শান্ত গলার ভাষা শুনেই মুগ্ধ হয়ে ভালো হয়ে যাবে। কাউকে ভালো করতে শাস্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে মনের ক্ষেত্রে কখনোই শাস্তি বা প্রতিশোধ নামক টোটকা কাজে লাগে না। লাগে ধৈয্য, সঠিক সময়। আশা করেছি তুমি বুঝতে পেরেছো আমার কথাটা। আজ তোমার চুপ করে থাকাটাই অনেক কিছু বলে দিচ্ছে তুমি কতটা অনুতপ্ত। সামির গিয়ে রিমির পা জড়িয়ে কান্না করে দিয়ে বলল,

-ম্যাম আমাকে মাফ করে দিন। আমি সত্যি অনেক জঘন্য একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি খুবই লজ্জিত আমার কাজে। আমার মরে যাওয়া উচিত। আপনি আমাকে শাস্তি দিন নাহলে এই মুখ নিয়ে কখনোই আর আপনার সামনে এসে দাঁড়াতে পারবো না।
রিমি ধমকের সুরে বলল, পা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও বলছি। দাঁড়াও!

সামির সোজা হয়ে দাঁড়ালে রিমি আবার বলল, প্রায়শ্চিত্ত করতে হলে মরার প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষমা চেয়ে মন থেকে তওবা করে আলোর পথে ফিরে আসলেই হয়। তাহলেই প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায়। আমি তোমার থেকে এটাই আশা করেছিলাম। তাইতো কিছু বলিনি এতোদিন। আমি খুব খুশি হলাম। আর তোমাকে মাফও করে দিলাম। এবার থেকে আর কারো সাথে এমন কাজ করবে না। যেভাবে আমি বলি সেভাবে চলো দেখবে জীবনের মানে খুঁজে পাবে।

-তাই করবো ম্যাম। আজ থেকে আপনি আমার অভিভাবক। আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। আর একজন ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হয়ে দেখাবো।
-আই লাইক ইওর স্পিরিট। এভাবেই এগিয়ে যাও নিজের গন্তব্যের দিকে। মনোবল দৃঢ় রাখো। আমি সবসময় আছি তোমার মতো সকল স্টুডেন্টসদের পাশে।
আহসান ফ্রি হয়ে রিমিকে কল দিল। রিসিভ হতেই আহসান বলে ওঠে,

-সরি আমি বিজি ছিলাম বলে তোমার ফোন ধরতে পারিনি।
-ইট’স ওকে। আই ক্যান আন্ডার্স্ট্যান্ড। আগে একটা গুড নিউজ শোনেন ।
-কি গুড নিউজ?
-আমি এখন থেকে এই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। আর আমার স্টুডেন্টসরা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে এইচএসসি তে।
-ওহ গ্রেট! তাহলে তো আমাকে ট্রিট দিতে হবে।
-আপনাকে আমি কি ট্রিট দেব বলেন?

-এই কথাটা কেন?
-আমি মিডিলক্লাস ফ্যামিলির সাধারণ একজন মেয়ে। আমার কি ক্ষমতা বলুন?
-এই কথাটা আর কত বলবে বলো তো? আমি কতবার সরি বলবো বলতে পারো?
-আমি আপনার উদ্দেশ্যে কথাটা বলিনি।
-তাহলে? হুম বুঝেছি। তুমি চিন্তা করোনা বাপিও একদিন বুঝবে। আমি গিয়ে বলি বাপিকে গুড নিউজ টা।
-না থাক। আপনি কিছুই বলতে যেয়েন না। তাহলে আরও রেগে যাবে। কাজের মধ্যে ওনাকে ডিস্টার্ব করবেন না। আমি মাকে বলেছি উনি কোনো না কোনো ভাবে জেনে যাবে। কিন্তু আপনার মুখে শুনলে ব্যাপার টা উনি অন্যভাবে নেবে।

-ওকে তাই হবে। আমি এখন ফ্রি আছি তুমি কখন বের হবে কলেজ থেকে?
-আমার আজ সময় লাগবে।
-ও, তাহলে আমি বাড়ি যাচ্ছি তাহলে।
-সেটাই ভালো হবে।
আহসান বাড়িতে গিয়ে ওর রুমে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে অবাকের শেষ সীমান্তে পৌঁছে গেল৷ মেয়েটি আর কেউ নয় নাদিয়া। আহসান নাদিয়ার সামনে গিয়ে বলল, আপনি এখানে কি করছেন? আপনার এতো বড় আস্পর্ধা কি করে হয় আমার বাড়িতে, আমার বেডরুমে ঢোকার?

-আঙ্কেল আসতে বলেছে। সকাল থেকে আমি এখানেই আছি আন্টির সাথে।
-হোয়াট! মম আপনাকে অ্যালাউ কিভাবে করলো বলে আহসান ওর মাকে ডাকতে লাগলো। দু থেকে তিনবার ডাকার সাথে সাথে অপা চলে আসে।
-আহসান তুই কখন আসলি?
-যখনই আসি। মম তুমি এই মহিলাকে আমার রুমে ঢোকার পারমিশন কিভাবে দিলে?
-আমি তো দেখিনি। ওকে তো বলেছি ড্রইং রুম নইলে আমাদের রুমে থাকতে। এই তুমি আহসানের রুমে কেন এসেছো? আমি মানা করেছিলাম না?

-আসলে আন্টি আমি বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এখানে এসে দেখছিলাম। তাছাড়া কিছুদিন পরতো এটা আমারও রুম হয়ে যাবে। তাই,, নাদিয়া ওর পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আহসান নাদিয়ার গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিল। আরেকটা মারবে কি অপা আহসানকে থামিয়ে দিল।

-মম তুমি আমাকে না আটকে এই মহিলাকে এখান থেকে চলে যেতে বলো। নইলে আমার হাত থামবে না।
-নাদিয়া মা, তুমি দয়া করে বাড়ি যাও। আর ঝামেলা পাকিয়ো না। আহসানের হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি। নাদিয়া গালে হাত দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে গেল। নাদিয়া চলে গেলে অপা আবার বলল, তুমি একজন মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারোনা আহসান। নাদিয়া একটা মেয়ে ভুলে যেওনা।
-আমি অনেকদিন নিজেকে কন্ট্রোল করে এসেছি মম। আজ আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারলাম না। তাই হাত তুলে ফেলি।
-এটা খুব খারাপ করেছো। কিন্তু মেয়েটাও গায়েপড়া,ঘাড়ত্যাড়া। আমি বারবার বলেছি তোর রুমে না আসতে। শুনলো না আমার কথা। আমি এখন কি যে করি? তোর বাপিকে নিয়ে আমার ভয় করছে। মেয়েটা যদি ওর বাবাকে সব বলে দেয়। তাহলে তোর বাপির সাথে তুলকালাম কান্ড বাধাবে দেখে নিস।

-আজ বাপির সাথে আমারও ফাইনাল ফয়সালা করতে হবে।
-এতো সব কিছু হয়ে গেছে আর আপনি আমাকে আজ জানালেন বিষয় টা!
-সরি রিমি। আসলে আমি চাইনি তুমি টেনশন করো তাই বলিনি। তবে আজ আর পারলাম না আমি। বাধ্য হয়ে নাদিয়ার গালে চড় মেরে দেই।
-আপনি যে কি? ঝামেলা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিলেন চড় মেরে। এখন আপনার বাপি যদি ব্যাপার টা জানতে পারে, তাহলে কি হবে ভেবেছেন?
-হুম ভেবেছি।
-কি ভেবেছেন?
-আমি বাপির মুখোমুখি হবো। আর আজ একটা ফাইনাল ডিসিশনে যাবো। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে ভাবাচ্ছে জানো?
-কি সেটা?

-আমি নাদিয়াকে মেরেছি বিকেলে। এখন রাত হয়ে গিয়েছি। বাপি এখনো কেন আমাকে একটা ফোন দিয়ে বকাবকি করলো না? নাদিয়া কি বলেনি?
-সত্যি, এটা ভাবার বিষয়।
-হুম যাই হোক কংগ্রাচুলেশনস। তোমার নতুন পদক্ষেপের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। বলে রিমির হাতে জোড়া শক্ত করে ধরলো।
-ধন্যবাদ। আজ আমি আপনার পছন্দের খাবার রান্না করেছি। অবশ্য মা আমাকে সামান্য হেল্প করেছিল। অনেক লেট হয়েছিল কলেজ থেকে আসতে তাই আরকি। নইলে সব নিজ হাতেই করতাম।
-বুঝলাম। কিন্তু আমি তো আমার ট্রিট পাইনি।
-কি চান বলুন আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আহসান বাকা হেসে ওর ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে ইশারা করলো।
-যানতো, আপনি যাতা একজন লোক।

-কোথায় যাব? বলে একটানে রিমিকে ওর বুকে ফেলে দেয়। তারপর ওর ট্রিট উসুল করে ছাড়ে। রিমি আহসানের থেকে কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে ভোঁ দৌড় লাগিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর অপার কল আসে আহসানের ফোনে। আহসান কথা বলে তরিঘরি করে বেরিয়ে পড়ে। আহসানের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। আহসান চলে যাচ্ছিলো রিমির ডাকে দাঁড়িয়ে পড়ে,
-আপনি না খেয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
-আমাকে ইমিডিয়েটলি বাড়িতে যেতে হবে। পুলিশ এসেছে বাড়িতে।
-পুলিশ! কিন্তু কেন?
-বাপি আর আমার রুমে নাকি অবৈধ ড্রাগস আর প্রাণঘাতী মেডিসিন পাওয়া গেছে।
-কি বলছেন এসব?

-আমি তো বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে সম্ভব হলো। আমাদের রুমে এসব আসলো কোথা থেকে! তুমি বিশ্বাস করো রিমি, বাপি বা আমি এসব কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।
-আমি জানি। তাছাড়া আমি ওই বাড়িতে ছিলাম। এরকম কোনো কিছু আমি কখনো দেখিনি। আমার মনে হয় কেউ আপনাদের ফাঁসাতে চাইছে।
-সেটা গেলে বুঝতে পারবো।
-আমার খুব ভয় করছে। আপনি যেয়েন না আজ।

-যেতে তো হবে। পুলিশ বাপিকে যা নয় তাই বলছে। আমি থাকতে সেটা কিভাবে মেনে নেই বলো?
-তাও ঠিক। আপনি যান তাহলে। আর বুঝে শুনে কথা বলবেন। উত্তেজিত হয়ে রাগারাগি করবেন না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করবেন।
তারেক ও নাদিয়া ইন্সপেক্টর সাহেবকে ওদের বাড়িতে দেখে চরম আকারে চমকে ওঠে। সেই সাথে চমকে ওঠে রঞ্জিত আর আহসানকে দেখে। তারেক ও নাদিয়া ওদের দেখে বিপদের আচ করতে পারছে। ইতোমধ্যে ওদের শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম পড়তে লাগলো। তারেক যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,

-আপনারা এখানে? আর রঞ্জিত তুই এতো বড় জঘন্য কাজ কি করে করতে পারলি?
রঞ্জিত গিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল তারেকের গালে। তারপর বলল, জঘন্য কাজ আমি করেছি? নাকি তোরা বাবা মেয়ে মিলে আমাদের ফাঁসিয়েছিস!
-কি যা তা বলছিস? আমরা কি করলাম? নিজেদের দোষ আমার আর আমার মেয়ের উপর চাপাতে এসেছিস নাকি?
-কে কার উপর দোষ চাপাচ্ছে সেটা তো এই সিসিটিভি ফুটেজই বলে দেবে। বলে ইন্সপেক্টর সাহেব সিসিটিভি ফুটেজ তারেক ও নাদিয়ার সামনে তুলে ধরলো। ফুটেজ দেখে তারেক নাদিয়া দুজনই ঢোক গিলছে। দুজনে রীতিমতো কাঁপছে। রঞ্জিত তারেকের কলার চেপে ধরে বলল, বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে এসেছি তোকে। তুই তার কি প্রতিদান দিলি? কি ক্ষতি করেছি তোর বলতে পারিস? কেন করলি তুই এমনটা? তারেক রঞ্জিতের হাত ছিটকে ফেলে দিল।

-যা করেছি বেশ করেছি। খুব অহংকারী তুই। বিখ্যাত এমবিবিএস ডক্টর বলে আমার মেয়েকে তোর ছেলের বউ করতে চাসনি তুই। আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলি। বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেই ফ্যামিলি রিলেশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই আমাকে বুঝিয়ে দিলি তুই আমার থেকে যোগ্যতায় বড়।
-তুই কি বলছিস এসব? আমি কখনো ছোট বড় ভেবে তোকে ফিরিয়ে দেইনি। আমরা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমার বোনের মেয়ে স্রুতির সাথে আহসানের বিয়ে দেব। ঠিক এই কারণেই আমি রাজি হইনি। তোকে তো এটা কতবার বলেছি। আমি ভাবতে পারিনি তুই কিনা অন্য মতলব পুষে রেখেছিস মনে!

-তোর কথা বিশ্বাস করি না। বোনের মেয়ের দোহাই দিয়ে আমাকে কাটিয়েছিস তুই। আসলে তোর নিয়ত ছিলো বড় কোনো পরিবারে ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার। আর তোর বোনের হাসবেন্ড তো তোর মতোই বিত্তবান। তাই আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছিস।
-তুই ভুল ভাবছিস। আমি সেসব কিছুই ভাবিনি। আমার কাছে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার থেকে তুই কম খ্যাতিমান, তা আমি কখনোই ভাবিনি। এসব ভেদাভেদ কখনোই আমার মনে আসেনি।
-হাহা, হাসালি তুই রঞ্জিত। তুইযে ছোট বড় ভেদাভেদ করিস তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হচ্ছে তোরই পুত্রবধূ রিমি। ওতো এখানেই আছে। ওকে জিজ্ঞেস কর তোর উত্তর পেয়ে যাবি।

রঞ্জিত নিশ্চুপ সাথে রিমিও বিষয় টা অনুভব করলো। তবুও রিমি বলল, ক্ষমা করবেন কাকু। আমার আর আপনার ব্যাপার পুরোটাই আলাদা। আপনি বেস্ট ফ্রেন্ড। আর আমি অজানা একজন। আপনি তো তাও বড় ক্লাসের মধ্যে পড়েন৷ আর আমি পড়ি মিডিলক্লাসের মধ্যে। তাই আপনার সাথে আমার তুলনাটা সাজে না। যাই হোক, আপনি যে কাজটা করলেন তাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে। কি দরকার ছিল এসব করার? রিজেকশনের জন্য এতোটা ভয়াবহ হয়ে গেলেন? নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে ধোঁকা দিলেন!
-হ্যাঁ দিয়েছি তো?

-তো আঙ্কেল, আপনি এখন আমার আর আমার বাপির চিন্তা বাদ দিয়ে আপনার মেয়েকে নিয়ে জেলের ভাতের স্বাদ নিয়ে আসুন।
আহসান কথাটা শেষ করতেই নাদিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে ওঠে, ড্যাড আমি জেলে যেতে পারবো না। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানতে পারলে আমাকে আর মেনে নেবে না। তুমি কিছু একটা করো প্লিজ।
নাদিয়ার কথায় রঞ্জিতসহ আহসান রিমিও আশ্চর্য হয়ে গেল।
-শ্বশুরবাড়ির লোকজন মানে? তোর মেয়ে কি বিবাহিত?

-হ্যাঁ বিবাহিত।
-তুই কেন বলিসনি আগে?
-তোকে শাস্তি দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে ইচ্ছে হয়নি।
-এখন শাস্তি কে পাবে? তুই না আমি?
-এখন আমি হাসিমুখে সকল শাস্তি মাথা পেতে নেব। কারণ কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও তোকে আমি মরণযন্ত্রণা দিতে পেরেছি। জেলে পুরে ছেড়েছি।
-আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে যে তোকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছি। স্যার আপনি ওকে নিয়ে যান আমার সামনে থেকে। ওর মুখ আর দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

পুলিশের একটা গাড়ি তারেক ও নাদিয়াকে নিয়ে গেল। আরেকটা দিয়ে আহসানদের সবাইকে ওদের বাড়িতে দিয়ে আসলো। পুরো রাস্তা রঞ্জিত কল্পনা করতে করতে এসেছে যে উনি রিমির সাথে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে। আজ মুখ ফুটে ক্ষমা চাওয়ারও সাহস হয়ে উঠছে না। এমনকি মাথাটাই উপরে তুলতে পারছে না রঞ্জিত। কিন্তু ক্ষমা তো তাকে চাইতেই হবে। এই ভেবে ভেবে বাড়ি অবধি আসলো। আর ইতস্তত না করে রঞ্জিত রিমির কাছে গিয়ে বলেই ফেলল, আমাকে কি শাস্তি দিতে চাও তুমি মা?
রিমিসহ সবাই বিস্মিত হয়ে যায় রঞ্জিতের মুখে মা ডাক শুনে। রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে রঞ্জিত আবারও বলে ওঠে,
-বলো মা, তুমি চাইলে আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইতে পারবো। আমার অসুবিধা হবে না।

-ছি ছি, আপনি এভাবে কেন বলছেন? আপনি আমার থেকে বয়সে বড় আপনি যদি আমার পায়ে ধরেন তাহলে মনে হবে আমার বাবা আমার পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছে। এভাবে বলবেন না। আপনি ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।
-আমার প্রায়শ্চিত্ত করা প্রয়োজন। তুমি তাহলে আমাকে কঠিন কোনো পানিশ দাও।
-না তার দরকার নেই। কেউ অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে সেটাই তার সবচেয়ে বড় শাস্তি বলে আমি মনে করি। কারণ সে শুধু অনুতপ্তই হয়না, সাথে তার মনে এক প্রকার ব্যথা অনুভব করে। যে ব্যথা অদৃশ্য হয়েও খুবই কষ্টদায়ক। আপনি আজ সেটা অনুভব করছেন। তাই আলাদা করে কোনো শাস্তির প্রয়োজন নেই।

-তুমি এতোকিছুর পরও আমাকে মাফ করে দিলে তাও আবার এতো সহজে?
-হুম কারণ আমি বিশ্বাস করি ধৈর্য ধরে ক্ষমা করাই প্রকৃত প্রতিশোধ। আমি এটাকে প্রতিশোধ বলে সম্মোধন করলাম কারণ ক্ষমা এমন এক প্রতিশোধ যা খারাপ থেকে খারাপ মানুষের মনেও অনুশোচনা নামক শব্দকে জাগিয়ে তোলে। আর এর ফল সর্বদা সুমধুর হয়।
-আমি মুগ্ধ হলাম তোমার ক্ষমা করার গুণে। আসলে এর শ্রেয় তোমার বাবা মাকে যায়। রঞ্জিত নাজমুলের মুখোমুখি হয়ে বললেন, জানেন বেয়াই সাহেব, আমার ছেলে একদিন আমাকে বলেছিল রিমির বাবা একজন আদর্শ বাবা।

সেদিন ওই কথাটা শুনে আমি এতোটাই আঘাত পেয়েছিলাম যে আমি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি। যে ছেলের সুখের জন্য সারাজীবন এতো পরিশ্রম করলাম, টাকার পেছনে ছুটলাম। সেই ছেলের মুখে ওই কথাটা শুনে সত্যি সেদিন হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ছেলে আমার ঠিকই বলেছিল৷ আমি আদর্শ বাবা নই। আপনি আপনার মেয়ের মাধ্যমে আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে আমি সত্যি কোনো বাবার কাতারে পড়ি না। ভালো খাবার, ভালো পোশাক পড়ালেই কেউ বাবা হয়ে যায়না।

আর ভালো রেজাল্ট করলেই কেউ জ্ঞানী হয়ে যায়না। ভালো বাবা হতে লাগে প্রকৃত জ্ঞান। যে জ্ঞান সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যবহারযোগ্য। যা আমার নেই। তবে আপনার আছে। তাইতো এমন মেয়ের বাবা আপনি। আমাকে মাফ করে দিয়েন আপনিও।
-আমার কাছে মাফ চেয়ে লাভ নেই। যার সাথে অন্যায় করেছেন সেই আপনাকে ক্ষমা দিয়েছে। এটাই আসল। আর আমি জানি আমার মেয়ে আমার গর্ব। আলাদা করে না বললেও আমি জানি। এখন কথা সেটা না। এখন কথা হচ্ছে আপনি তো এখনো পর্যন্ত আমার মতো মধ্যবিত্ত বেয়াইয়ের বাড়ি পা রাখলেন না। তাই যদি আপনার খেদমত করার সুযোগ পেতাম।

-এভাবে বলে আর আমার পাপের বোঝা বাড়াবেন না। আপনি আমার থেকেও অনেক উঁচু পর্যায়ের মানুষ বলে নাজমুলের সাথে আলিঙ্গন করলেন। ওদিকে আহসান ওর কপালে হাত ছুঁইয়ে রিমিকে Salute জানালো। রিমি মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর বলল, আচ্ছা আপনারা কি এখন না খেয়ে থাকবেন, নাকি আমাদের বাড়ি যাবেন?
-তুমি থাকতে না খেয়ে থাকবো কেন? যাও গিয়ে রান্না করো। আজ তোমার হাতে রান্না খাই। তারপর কাল সকালে যাব বেয়াই বাড়ি। বেয়ানের হাতের রান্না খেতে। তারপর আড্ডা দিয়ে একেবারে তোমার শ্বাশুড়িকে নিয়ে আমরা আমাদের বাড়ি চলে আসবো। আর তার পরের দিন দাওয়াত দেওয়ার পালা আমাদের।

রঞ্জিতের কথায় সকলের মুখে হাসির ঝলক।
রিমি বলল, ঠিক আছে বাবা। রিমি রান্না করে সকলকে খাওয়াতে রাত ২টো বেজে গেল। নাজমুল তার বেয়াই বাড়িতেই থেকে গেল আজ। রঞ্জিত আর নাজমুল একসাথে ঘুমিয়েছে আজ। অবশ্য রঞ্জিতই বায়না ধরেছে দুই বেয়াই আজ একসাথে ঘুমাবে। এদিকে চারটা চোখ এখনো পর্যন্ত জেগে আছে। বারান্দায় বসে নিশি দেখছে। রিমি আহসানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছে। কেউ কিছুই বলছে না। আজ ওরা স্বাধীন। কেউ নেই ওদের মাঝে যে ওদের বাঁধা দেবে। নীরবতা ভেঙে আহসান বলে ওঠে, কিছু বলবে না আজ?

-না, আজ আপনার বুকে মাথা রাখার প্লান শুধু। আজ কোনো ভয় নেই আমার মনে। নিশ্চিন্তে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারবো আজ থেকে।
-সব তোমার জন্য হয়েছে। আমি তোমাকে যত ধন্যবাদ দেব ততই কম পড়বে।
রিমি সোজা হয়ে বসে বলল,
-আর একটাও ধন্যবাদ শুনতে চাইনা আমি। এই শব্দটা শুনে রাগ হচ্ছে আমার এখন। আর আপনি আমাকে ধন্যবাদ কেন দিচ্ছেন? উল্টো ধন্যবাদ আমার দেওয়া উচিত আপনাকে।
আহসান ভ্রু উঁচিয়ে বলল, কেন আর কিভাবে?

-আপনি যদি আমাকে আর জিসানকে নিয়ে সন্দেহ করে খুফিয়া ক্যামেরা না লাগাতেন তাহলে এতোক্ষণে আপনারা বাপ ব্যাটা হাওয়ালাতের হাওয়া খেতেন।
-কথাটা ঠিক তবে আমি যদি কৃতজ্ঞতার ভাগীদার হই, তাহলে জিসানও। ও আমাদের বাড়িতে না আসলে তো আমার মাথায় সিসি ক্যামেরার বিষয় টা আসতোই না।
-হুম ঠিক।
-কিছুই ঠিকনা।
-কেন?
-আমার বয়স ৩০+ হয়ে গেছে।
-তো?
-আমার বয়সী ছেলের বাচ্চারাই কলেজে পড়ে।
রিমি ঠোঁট উল্টে বলল, হুম তো?
-তো আর কি? বলে রিমিকে পাজকোলে নিয়ে নেয়। রাতটা আরও একবার স্বাক্ষী হয়ে যায় ওদের ভালবাসার স্মৃতি হিসেবে।

~~~~~২ বছর পর~~~~~
পুরো বাড়িতে হই হুল্লোড়। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। আজ জিসান ও তার জিএফ রুশার বিয়ে। আহসান খুব ব্যস্ত। ভাইয়ের বিয়ের সব কিছু নিজ হাতে সামলাচ্ছে। ওদিকে রিমি দু দন্ডও নিচে নামতে পারছে না ছেলের জন্য। আহসান রিমির ছেলের বয়স এক বছর প্রায়। রিমি ছেলের নাম রেখেছে আহনাফ। দুদিন ধরে আহনাফের জ্বর ঠান্ডা বলে রিমি জিসানের বিয়ের কোনো কাজেই হাত লাগাতে পারছে না। এখন অবশ্য জ্বর নেই শুধু ঠান্ডা কাশি আছে সামান্য। রিমির বড় বোন রিমলির মেয়ে হয়েছে। স্রুতিরও মেয়ে হয়েছে। রিমলি ও স্রুতির মেয়ে দুই মাসের ছোট বড়। স্রুতির পরিবারও এসেছে জিসানদের বাড়িতে। স্রুতি বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে রিমির রুমে আসলো। এসেই বলল, কিরে তুই এখনো রেডি হচ্ছিস না কেন? কিছুক্ষণ পর গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।

-ছেলেটা এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। কিভাবে রেডি হই বল?
-তাও ঠিক তবে জিসান আর রুশা তো সাফ সাফ বলে দিয়েছে ওদের হলুদ সন্ধ্যা শুরু হবে তোর আর আহসানের নাচ দিয়ে।
-হুম কিন্তু আহনাফকে দেখবে কে?
-কে দেখবে মানে? ওদের দাদা দাদি আছে কি করতে? রিমি দেখলো রঞ্জিত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।
-বাবা আপনি পারবেন না ওকে সামলাতে। খুব জেদি ছেলে আহনাফ।

-তো কি হয়েছে? আমি আর তোমার শ্বাশুড়ি মিলে ঠিক সামলে নেব। তুমি আমার দাদুভাইয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস সম্পাকে দিয়ে আমাদের রুমে পাঠিয়ে দাও। আর আমার দাদুভাইকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি। ওকে দিয়ে তুমি রেডি হও তাড়াতাড়ি।
-কিন্ত আপনি আর মা যাবেন না নিচে?
-না ওসব গান বাজনা আমার ভালো লাগে না। মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তোমার মায়েরও একই অবস্থা। তার থেকে আমরা আমাদের দাদুভাইকে নিয়েই থাকি।

তোলপাড় পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯

-পারবেন তো সামলাতে?
-তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার শ্বশুর এমবিবিএস ডক্টর। তার থেকে বড় কথা আমি দাদা। চুপচাপ আমি যা বলছি শোনো। যাও গিয়ে মজা করো সকলের সাথে।
-ঠিক আছে বাবা।
রিমি আর আহসান হলুদ কালারের ড্রেস পড়েছে। রিমি হলুদ লেহেঙ্গা পড়েছে আর আহসান হলুদ পাঞ্জাবি। জিসান রুশার কথা মতো আহসান ও রিমিকেই ডাকা হলো প্রথম পারফরম্যান্স এর জন্য। আহসান রিমি স্টেজে উঠে। আহসান রিমির কানের কাছে আলতো করে বলল, তো শুরু করা যাক। রিমি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, হুম চলুন। মিউজিক ছাড়া হলো। আহসান নাচা শুরু করে দিল।

Tere ghar aya, main aya tujhko lene..
dilke badleme, dilka nazrana dene..
meri har dhadkan kya bole hai sun sun sun sun..
sajan ji ghar aye, sajan ji ghar aye..dulhan qui sarmaye, sajan ji ghar aye..

আহসান থেমে গেলে রিমি নাচ শুরু করলো,
aye dil chalega,ab na koyi bahana..
gori ko hoga, ab sajan ke ghar jana..
mathe ki bindiya, kya bole hai sun sun sun sun..
sajan ji ghar aye, sajan ji ghar aye..dulhan qui sarmaye, sajan ji ghar aye..
আহসান রিমির নাচে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সকলে খুব আনন্দের সাথে ওদের চিয়ারআপ করে উৎসাহ দিচ্ছে।

( লেখাঃ শান্তনা আক্তার ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন