তোলপাড় পর্ব ৪১+৪২+৪৩

তোলপাড় পর্ব ৪১+৪২+৪৩
শান্তনা আক্তার

চলে গেল দুটো দিন। রঞ্জিত এখন অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতাল থেকে আজ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। অপা স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে রঞ্জিতকে। রঞ্জিত নির্বাকের মতো খেয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে টু শব্দও করছে না। আহসান এসে বিছানার এক কোণে বসতেই রঞ্জিত হাত দিয়ে ইশারা করে তার কাছে যেতে বলে। অপা রঞ্জিতের পাশ থেকে উঠে বসলে আহসান রঞ্জিতের পাশে গিয়ে বসলো।
রঞ্জিত খুব আস্তে করে বলল,আমাকে হসপিটালে কেন নিয়ে গিয়েছিলে? আমি তো আদর্শ বাবা নই। তাহলে আমাকে কেন বাঁচালে?

-আমার কথায় তুমি হার্ট হয়েছো। তার জন্য আমি সরি। তুমি এখনো সিক। বেড রেস্ট নাও। কয়েকদিন আমি হসপিটাল সামলে নিতে পারবো।
-আমি জানি তুমি পারবে। তোমার সেই এবিলিটি আছে। কিন্তু নিজের শরীর ভালো না থাকলে কিভাবে পারবে? যতই যোগ্যতা থাকুক না কেন, অসুস্থ শরীরের কাছে হার মেনে যাবে। তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারছি তুমি রাতে ঘুমাও না।
-আমি ঠিক আছি বাপি। তুমি চিন্তা করো না। আমি পারবো।
-তুমি যতদিন না ওই মেয়েটাকে ভুলে থাকবে ততদিন কিছুই পারবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে ভুলে যাও। পারলে ডিভোর্স দিয়ে দাও কয়েক দিনের মধ্যে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-বাপি আমি,,,,,,আহসান ওর কথাটা সমাপ্ত করার আগে অপা ওকে থামিয়ে দেয়।
-আহসান তুই এ নিয়ে কোন কথা বাড়াস না। যা হবে পরে দেখা যাবে। চেষ্টা করবি তোর বাপি যা বলে শুনে চলতে। এখন আর একটা কথাও না বলে নিজের রুমে যা বলে দিলাম। অপা বেশ কড়া গলায় কথাটা বললেন। আহসান অপার কথা মতো চলে যায় নিজের রুমে।কিছুক্ষণ পর অপা আহসানের রুমে আসলো। আহসান মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। অপা গিয়ে আহসানের পিঠে হাত রাখতেই আহসান নড়েচড়ে ওঠে।

-আমার কথায় কি তুই রাগ করেছিস বাবা?
-না মম। আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা। বাবাকে এই মুহুর্তে উত্তেজিত করা চলবে না। আমি ভেবেছি বাপি যাই বলুক না কেন,আমি সহ্য করে চলবো। কিন্তু বাপি এমন এক একটা কথা বলে যে আমি জবাব না দিয়ে থাকতে পারি না। তুমি ভালো করছো আমাকে থামিয়ে দিয়ে। কিন্তু মম,আমি রিমিকে ডিভোর্স দিতে চাইনা।
– আমিও চাইনা তুই রিমিকে ডিভোর্স দে। কিন্তু কি করবো বল? এখন তোর বাপি যা বলে আমাদের শুনে চলতে হবে। আমি চাইনা ওনার কোন ক্ষতি হোক।

-আমি এখন কি করবো মম?
-রিমিকে বোঝা। আর একটু অপেক্ষা কর। তুই তোর বাপির কথাও শুনবি আর রিমিকেও ধরে রাখবি।
-তুমি কি বলছো?রিমি কি বুঝবে?
-হুম বুঝবে। সামান্য অভিমান করেছে মেয়েটা। মানিয়ে দেখ ঠিক বুঝবে। কল দে রিমিকে।
-আসলে মম,আমার কাছে রিমির নাম্বার নেই। কখনো ফোনে কথা হয়নি আমাদের।

অপা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, এটা কেমন কথা বললি তুই? তোরা কেমন দম্পতি? যাই হোক,আমার কাছে আছে তুই কথা বল।
গভীর ভাবনায় মগ্ন রিমি। মুখে উদাসীনতার ছায়া। এলোমেলো চুল। আগের মতো নিজের যত্ন নেয়না সে। সেই মন মানসিকতা আর নেই। মন ভালো না থাকলে ভালো কথাও খারাপ মনে হয়। পাওয়ারের চশমাটা চোখ থেকে খুলে টেবিলে রাখল। অকস্মাৎ রিমির ফোনে রিং বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার টা পর্যবেক্ষণ করছে রিমি।

-এটা আবার কার নাম্বার? এ সময়ে কে কল দিল আমাকে? রিসিভ করবো কি? এসব ভাবনার মাঝে কল কেটে গেল। যাক কেটে গেছে। Wrong নাম্বার হবে হয়তো। রিমি ওর ফোনটা রাখতে যাবে কি আবার সেই নাম্বার থেকে কল আসলো। এবার রিমি রিসিভ করলো।

-হ্যালো কে বলছেন? রিমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। সাড়া শব্দ না পেয়ে বেশ রাগ হলো ওর। কে আপনি? দেখুন কথা বললে বলুন নইলে এভাবে কাউকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না। আমার আজাইরা সময় নেই। কল কেটে দিলাম। রিমি কল কাটবে কি ওপাশ থেকে শুনতে পেল, কেমন আছো রিমি? রিমির ভেতর টা বারি দিয়ে ওঠে কন্ঠস্বর শুনে। বুঝতে পারে কে কল দিয়েছে। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করার পর রিমি বলে ওঠে,কল দিয়েছেন কেন?
-কথা বলবো বলে। তোমার মন পাষাণ বলে কি আমার টাও পাষাণ?

-আপনার সাথে আমি কোন কথাই বলতে চাইনা। কল না দিলে খুশি হবো এই বলে কেটে দেয় রিমি। আহসান বেশ কয়েকবার কল দেয় কিন্তু রিমি রিসিভ করে না।না পেরে ফোন অফ করে রাখল রিমি। চোখ ভরে আসলো তার। কান্নাজড়িত গলায় বলল,আপনি কি বোঝেন না আমি কতটা কষ্টে আছি আপনাকে ছাড়া? প্রতি মুহুর্তের জমানো কথাগুলো বার্তা হয়ে কি পৌঁছায় না আপনার কাছে? কথাটা বলেই বালিশে মুখ চেপে কান্না করে মনের ব্যাথা হালকা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রাতের বেলা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব পড়েছে। রিমি ফ্যান অফ করে গায়ে একটা শাল জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। পরিবেশে একটা ভেজা গন্ধ ছড়িয়ে আছে। রিমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সেই ভেজা গন্ধটা অনুভব করছে। বৃষ্টির সময় চলছে তাই রাস্তাঘাট সবকিছুই ভেজা ভেজা। টানা কদিন সূর্য না ওঠায় রাস্তাঘাট আর শুকায়নি। আজও মেঘলা আকাশ। পরিবেশ টা খুব ভালো লাগছে রিমির কাছে। তাই ক্যামারায় কিছু দৃশ্য বন্দী করতে মজে গেল। চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই বড়সড় একটা শক খেল। বারান্দার পাশেই একটা গলি। সেখানে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

গাড়ি টা দেখে রিমির একটু চিনতে অসুবিধা হয়নি যে ওটা আহসানের গাড়ি। আহসানকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে রিমির মনের ভেতরটা ধক করে কেঁপে ওঠে। আহসান রিমির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের কি যেন করলো। রিমি উপর থেকে আহসানের কাজ দেখে যাচ্ছে। আচমকাই রিমির ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। আহসানের নাম্বার থেকে এসেছে ম্যাসেজ। সেখানে লেখা, নিচে নেমে এসো কিছু কথা আছে। ম্যাসেজ দেখে রিমির মেজাজ পুরো বিগড়ে গেল।

রিমি রিপ্লাই দিল, যাব না নিচে। তারপর আহসানের দিকে রাগি লুকে তাকালো। আহসান আবারও ম্যাসেজ দিল, তাহলে ডোর খুলে রাখো আমি উপরে আসছি। রিমি রিপ্লাই দিল, না দরকার নেই। বাড়ি চলে যান।
আহসান আবার ম্যাসেজ দিল, বাড়ির জামাই আমি। তুমি কে আমাকে আমার শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার? চুপচাপ দরজা খুলো নইলে ভালো হবে না বলে দিলাম।

রিমি এবার আর কোন রিপ্লাই দিল না। ডিরেক্ট রুমের ভেতর ঢুকে গেল। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে রিমি রুমের ভেতর এসেছে।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ির কাটা ১০ টায় গিয়ে ঠেকেছে।
– উনি বোধয় চলে গেছেন। গিয়ে দেখি। রিমি পুরোপুরি বারান্দায় না গিয়ে কিছুটা দূর থেকে নিচে তাকালো যাতে আহসান ওকে দেখতে না পায়। রিমি দেখলো গাড়ি টা এখনো আগের জায়গাতেই আছে। কিন্তু আহসান আশেপাশে নেই। রিমি অস্ফুট স্বরে বলল, উনি কোথায় গেলেন? গাড়ির ভেতর আছে কি? রিমির ফোনে আরেকটা ম্যাসেজ আসলো, উঁকি মারো কেন হুম? টিচার হয়ে উঁকি মারো, তাহলে তোমার স্টুডেন্টসরা কি শিখবে তোমার থেকে? রিমি ম্যাসেজটা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। রিমি বুঝতে পারলো ও আহসানকে না দেখলেও আহসান ঠিকই ওকে দেখতে পারছে। এভাবে অনেক সময় পাড় হয়ে গেল। রিমি আহসানের কথা শুনছে না। আর আহসানও নাছোড়বান্দা। এক চুলও নড়ছে না।

-আজ আমিও দেখবো দরজা না খুলে যাও কোথায়।
ওদিকে রিমি বলছে, প্লিজ গড,বৃষ্টি যেন না নামে। বৃষ্টি নামলে বার বার বারান্দায় গিয়ে ওনাকে আর দেখতে পারবো না।
রিমি মনে মনে চাচ্ছে আহসান উপরে আসুক কিন্তু উপরে উপরে প্রকাশ করতে পারছে না। ওদিকে রাত গভীর হয়ে আসছে। রাস্তায় কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। ইতোমধ্যে কুকুরের দল ঘেউঘেউ শুরু করে দিয়েছে। রিমি এবার দৌঁড়ে গেল বারান্দায়। গিয়ে দেখলো আহসানের চারপাশে কুকুর আর কুকুর। রিমি ভয় পেয়ে আহসানকে কল দিল।

-আপনি বাড়িতে চলে যান। কুকুরের কামড় খাওয়ার সাধ জেগেছে নাকি?
-বাড়িতেই তো যেতে চাচ্ছি। দরজা টা খুলে দাও আমি চলে আসছি।
-পারবো না।
-তাহলে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
-আশ্চর্য! গাড়ির ভেতর যান। রাস্তা ঘাটের হিংস্র কুকুর এগুলো।
-না যাবো না। যা হয় হোক আমার।
-উফফ মহা বেকায়দার লোক আপনি। আসুন উপরে।

রিমি দরজা খুলে দিতেই আহসান রিমির পাশ কেটে সোজা রিমির রুমের দিকে গেল। এদিকে রিমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
-অদ্ভুত! রিমিও গেল আহসানের পিছে। আপনি কি করতে এসেছেন এখানে? কি চাই?
-দাঁড়াও আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে ডেকে আনছি। তারপর বলছি কি চাই।
-কোনো দরকার নেই। আপনি এখানে থাকুন আমি অন্যরুমে যাচ্ছি। রিমি চলে যাচ্ছিলো আহসান রিমির হাত ধরে হ্যাচকা টান দিতেই রিনি আহসানের বুকের উপর গিয়ে পড়ে।

-কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে?
-অসভ্য লোক। ছাড়ুন বলে রিমি আহসানের দিকে তাকালো৷ ভালো করে খেয়াল করলো আহসানকে। রিমি যেন ফ্রিজড হয়ে গেল আহসানকে দেখে। আহসানের চোখে কালো দাগ বসে আছে। নাক মুখ শুকনো। ঠোঁট ফ্যাকাসে। তাই দেখে রিমির সমস্ত রাগ উবে গেল। রিমি আহসানের গালে হাত রেখে বলল,এক রাতেই আপনার চেহারায় এতো পরিবর্তন কিভাবে ঘটলো? কিছু খান নি?
– মম সকালে জোড় করে খাইয়ে দিয়েছিল। তারপর আর বাড়ি যাওয়া হয়নি।

-ওহ, বসুন আপনি আমি আসছি। রিমি এক প্লেট ভাত আর একটা ডিম ভেজে আনলো। তারপর বলল, তরকারি সব ফ্রিজে রাখা। আজকে যেসব তরকারি রান্না হয়েছে তা আপনি খেতেন না তাই গরম করিনি। ডিম ভেজে এনেছি। খাবেন কি?
-তুমি খাইয়ে দিলে অবশ্যই খাবো।
-আমার ওতো সময় নেই।
-তাহলে রেখে দাও। তোমাকে দেখেছি আর কিছু লাগবে না। কাল সারাদিন অবধি চলার মতো এনার্জি পেয়ে গিয়েছি। তারপর রাতে আবার আসবো এনার্জি নিতে।

-যা তা আপনি। আর পারলাম না আমি। এই বলে রাগে গিজগিজ করতে করতে আহসানের সামনে গিয়ে বসলো। তারপর আহসানের মুখের সামনে ভাত ধরে বলল, নিন খান।
রিমি আহসানকে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত আর আহসান রিমিকে দেখতে। অকস্মাৎ আহসানের ফোন বেজে ওঠে। কে ফোন দিয়েছে সেটা না দেখেই আহসান বারবার কল কেটে দিচ্ছে।
-আজব! আপনি কল রিসিভ কেন করছেন না?
-কারণ আমি রোমান্টিক মুমেন্টে ডিস্টার্বেন্স পছন্দ করি না।
-কিসের রোমান্টিক মুমেন্ট? রিমির নাক ফুলিয়ে বলল।

-তুমি নাক ফুলিয়ে কথা বললে আমি ঘায়েল হয়ে যাই জানো না সুইটহার্ট?
-অসভ্য লোক। বাজে কথা না বলে দেখুন কে ফোন দিয়েছে। ইম্পর্ট্যান্ট কল হতে পারে হাসপাতালের।
-আমি আজকের ডিউটি শেষ করেই এসেছি। তবে আমার সুইটহার্ট যখন বলছে, তখন দেখি কে দিল ফোন। আহসান কললিস্টে যেতেই চমকে ওঠে। অপার নাম্বার উপরে। অপার নাম্বার দেখে আহসানের চেহারায় নিমিষেই টেনশনের আভা ফুটে উঠে। আহসান কিছু একটা ভেবে কল বেক করলো।

-হ্যালো মম, কল দিয়েছিলে?
-হ্যাঁ তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি আয়। তোর বাপি বুঝতে পেরেছে তুই হসপিটালে নেই। তুই যে রিমির কাছে আছিস সেটা বোঝার আগেই বাড়ি চলে আয়। নইলে তোর বাপি একটা তুলকালাম কান্ড বাধাবে। যার ইফেক্ট তার অসুস্থ শরীরে পড়বে।
-ওকে মম আমি আসছি।

রিমি এটা তো বুঝতে পেরেছে আহসান অপার সাথে কথা বলছে। কিন্তু কি নিয়ে কথা বলছে সেটা আন্দাজ করতে পারছে না। তাই আহসানকে জিজ্ঞেস করল, আপনি মার সাথে কি নিয়ে কথা বলছেন?
-কিছু না। আমি আজ গেলাম। কাল কিন্তু আবার আসবো। জেগে থেকো আমার জন্য। এই বলে চলে আসে আহসান।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিমি একটা চরম সারপ্রাইজের মুখোমুখি হলো। ওর আপু রিমলি এসেছে বাড়িতে। এসেই রিমির রুমে গিয়ে রিমির কানের কাছে ফোন নিয়ে গান ছেড়ে দিল। রিমি ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে রিমলিকে দেখতে পায়। আর দেখেই মহাখুশি হয়ে যায়।

-আপুইইইই এই বলে রিমলিকে হাগ করে।
রিমলি বলল, হয়েছে আর আপুকে আদর করতে হবে না। এখানে এসেছিস জানিয়েছিস কি আমায়?
-জানানোর সুযোগ হয়নি রে আপু। পরে সব বলবো। তুই বল কেমন আছিস? রিফাত ভাইয়া কোথায়?
-আমি ভালোই আছি। আর তোর রিফাত ভাই আমাকে এখানে দিয়ে আবার চলে গেছে। কাজের চাপ বলে আসতে পারবে না। কিন্তু কদিন পর আমাকে নিতে আসবে বলেছে।

-তার মানে তুই কদিন এখানে থাকবি! ইয়াহু! আবার তোর সাথে মারামারি, ঝগড়াঝাটি করতে পারবো আগের মতো।
-ঝগড়াঝাটি অবধি ঠিক আছে। কিন্তু এখন আর আমি আগের মতো মারামারি করতে পারবো না।
রিমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, কেন পারবি না?
-কেন আবার! তোর ভাগ্নে বা ভাগ্নি ব্যাথা পাবে বলে।
-কিহ! সত্যি বলছিস?
-হুম সত্যি। এইতো কদিন আগে জানতে পারলাম।
-কদিন আগে জানলি আর আজ বললি?

-সারপ্রাইজ দেব বলে বলিনি। ফোনে বললে তোর আর বাবা মার খুশি সরাসরি দেখতে পেতাম না। তাই বলিনি আমি। আর রিফাতকেও বলতে মানা করেছি।
-একদম ভালো করেছিস এসে।
-হুম, আর একটা কারণ আছে আসার পেছনে।
-কি সেটা?
-ডাক্তার দেখাতে যাব। তুইতো জানিস আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি গ্রামে থাকে আর আমরা ঢাকায়।
-হুম তো?
-রিফাত দিনের বেলা বাসায় আসে না। তাই ডাক্তারের কাছে কার সাথে যাব? মার থেকে শুনলাম তুই এখানে এসেছিস তাই চলে আসলাম। সারপ্রাইজ দেওয়াও হলো, তোর সাথে কটাদিন হাসি মজা করে কাটাতেও পারবো।

-ভালো কাজ করেছিস।
-হুম, কিন্তু তোরজন কোথায়?
-মানে?
-মানে আহসান কোথায়? ছবিতেই দেখেছি আহসানকে। তোদের বিয়েতে তো আসা হয়নি। হঠাৎ করেই সব হয়ে গেল। কত কি ভেবেছিলাম তোর বিয়ে নিয়ে। কিছুই হলো না। যাই হোক যা হয়েছে হয়ে গেছে। আহসান কি আসেনি এখানে?
-না তবে,,,
-তবে কি?
-তোকে সব বলবো পরে। আর আহসান রাতে আসতে পারে তখন দেখে নিস। এখন আমি কলেজে যাব সামনে আমার কলেজের স্টুডেন্টসদের পরীক্ষা। লেট করলে চলবে না অনেক কাজ আছে। আমি রেডি হতে গেলাম রে।
-এই তুমি এখন রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

-হসপিটালে।
-তুমি কিন্তু এখনো সুস্থ হওনি পুরোপুরি।
-আমি সুস্থ হয়েছি কি না সেটা আমি তোমার থেকেও ভালো জানি অপা।
-আহসান কিন্ত মানা করেছে।
-আহসান দুদিনের ডাক্তার। ওর এক্সপেরিয়েন্স আমার তুলনায় খুব বেশিই কম। আমাকে আটকিয়ো না। জরুরি কাজ আছে। এই বলে বেরিয়ে পড়ে রঞ্জিত।
-মে আই কাম ইন?
-হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ! এতো বড় ডক্টর আমার এই ছোটমোটো ক্লিনিকে পা রাখলো যে।তোকে পারমিশন নিতে হবে না। সোজা চলে আয়।
-তুই যে কি বলিস না তারেক। ছোটমোটো ক্লিনিক বলছিস কেন? ভালোই তো চলছে তোর এই ক্লিনিক। বলতে বলতে চেয়ারে গিয়ে বসলো রঞ্জিত।

-তোর বিরাট হসপিটালের তুলনায় তো খুবই ছোট। তা এতো বড় এমবিবিএস ডক্টর আজ আমার চেম্বারে পা রাখলো যে?
-তুই কিন্তু মার খাবি বলে দিলাম। আমি আজ খুব অসহায় হয়ে তোর কাছে এসেছি। একটা হেল্প লাগবে আমার।
-বল তোর জন্য সব করতে পারি আমি। আফটার অল উই আর বেস্ট ফ্রেন্ডস।
-আসলে তারেক,,
-নিঃসংকোচ এ বলে ফেল।
-একদিন তুই আমাকে একটা অফার দিয়েছিলি মনে আছে?
-কি বলতো?
-তুই চেয়েছিলি আমার আহসানের সাথে তোর মেয়ে নাদিয়ার বিয়ে দিতে চাস।

-ও হুম, কিন্তু তুই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলি। তুই চেয়েছিলি তোর বোনের মেয়ে কি যেন নাম? স্রুতি না কি যেন। তার সাথে তোর ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলি।
-হুম কিন্তু তারপর কি থেকে কি হয়ে গেল তাতো তুই জানিসই।
-হুম তো এখন কি হেল্প চাস তুই?
-আমি তোর সেই অফারটা আজ এক্সেপ্ট করতে চাই। আহসানের সাথে নাদিয়ার বিয়ে দিতে চাই।
-কি বলছিস তুই? তোর ছেলের তো বউ আছে।

-ছিল তবে কদিনের মধ্যে ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। আমার আহসান ওই মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়েটাকে একটুও সহ্য করতে পারে না। আমি চাই আমার ছেলেটা ভালো থাকুক। নতুন ভাবে বাঁচুক। কিন্তু তার জন্য আমার তোর সাহায্য চাই দোস্ত।
-ওকে আমি নাদিয়াকে কনভিন্স করানোর চেষ্টা করছি। ও যদি মেনে নেয় তাহলে আমি রাজি।
-ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস তারেক। আমি তোর উত্তরের আশায় থাকবো। আই হোপ আমি নিরাশ হবো না।
-ইনশা আল্লাহ।
-আমি তাহলে উঠি।
-কফি বা কিছু না খেয়েই?

তোলপাড় পর্ব ৩৮+৩৯+৪০

-খাবো তো। কফি কেন পেটপুরে খাবো তোর বাড়িতে গিয়ে। কিন্তু আমি যেন সেদিন বেয়াই হিসেবে যেতে পারি তোর বাড়ি।
– অবশ্যই। রঞ্জিত চলে গেলে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে তারেক রহমান। আমি ভাবিনি রঞ্জিত, তুই আমার কাছে হাত পাতবি। একদিন আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে আমার সাজানো সব প্ল্যানে পানি ঠেলে দিয়েছিলি। কিন্তু দেখ! আবারও আমি সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম। বিখ্যাত এমবিবিএস তুই তাইনা? তোকে রাস্তায় নামিয়ে তোর সব নাম যশ যদি ধূলোয় না মিশিয়েছিনা, তাহলে আমার নামও ডক্টর. তারেক রহমান নয়। আর আগের বারের মতো এবারও আমার তুরুপের তাস হচ্ছে তোর ছেলে আহসান। হা হা হা হা,,,,,,
-সব শুনলি তো আপু। এবার তুই বল আমার কি করা উচিত?

-সব অভিমান ভুলে আহসানকে মেনে নে। তোর ভালবাসায় ছেলেটার কতটা পরিবর্তন ঘটেছে। আমার মতে মাফ করে দিলেই ভালো হবে। তাছাড়া দোষ তোর খারুস শ্বশুর করেছে। আহসান নয়। তাই আমি চাই তুই সব অভিমান সাইডে রেখে আহসানকে নিজের মনের কথা বলে দে। কি সুন্দর করে প্রপোজ করেছে তোকে। ওয়াও আমি তোর জায়গায় থাকলে এক সেকেন্ড ও দেড়ি না করে হ্যাঁ বলে দিতাম।তুই আসলে মাথামোটা। কিন্তু তোর হিরো আহসান এখনো আসছে না কেন? কটা বাজে দেখেছিস?
-কালতো এই সময়ে এসে গিয়েছিল কিন্তু আজ কেন আসছে না? মনে হচ্ছে আজ কাজ বেশি ওনার।
-হুম তাই হবে হয়তো। কিন্তু আজ যত রাতই হোক না কেন, আমি তোর আহসানকে দেখেই ছাড়বো এই বলে রাখলাম।

তোলপাড় পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬