তোলপাড় পর্ব ৩২+৩৩+৩৪

তোলপাড় পর্ব ৩২+৩৩+৩৪
শান্তনা আক্তার

বিশাল একটা রিসোর্ট এর সামনে গিয়ে নামলো আহসান ও রিমি।আহসান কাউকে ফোনে ওদের আসার কথা বলল।তারপর ওরা একটু সামনে এগোতেই একজন ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা ফুল হাতে ওদের ওয়েলকাম জানালো।আহসান রিমির আশেপাশে কিছু ওয়েটার্স এসে জমা হলো।তারা আহসান আর রিমির গায়ে ফুল ছেটাচ্ছে।ভদ্রমহিলাটি প্রথমে আহসানকে গিয়ে বলল,

-তোরা এখন এলি!আমরা সেই কখন থেকে ওয়েট করছিলাম।
এরপর ভদ্রলোকটা বলে ওঠে,তুমি ওদের কেমন আছে জিজ্ঞেস না করে এটা কি জিজ্ঞেস করলে?
-ওহ সরি,তো কেমন আছো রিমি!এই বলে রিমিকে হাগ করলো।রিমি কাউকে চিনে না বলে বেকুবের মতো দেখে যাচ্ছে সব।
রিমি উত্তর দিল,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?
-হুম ভালো।
-তুই আমাকে আমার ফ্রেন্ড হয়ে আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস না করে শুধু রিমিকে জিজ্ঞেস করলি?That’s not fair Taniya..
-তোকে আর নতুন করে কি জিজ্ঞেস করবো আমরা?আমাদের নতুন ভাবি হচ্ছে মুখ্যঅতিথি।তাই তোর সাথে পরে কথা বললেও চলবে।(ভদ্রলোকটি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-ঠিক আছে তাহলে আমি চলে যাই তোরা তোদের ভাবিকে নিয়েই থাক।
-ওলে ওলে বেস্টু আমার রাগ করেছে বলে আহসানকে আলিঙ্গন করে নেয় ভদ্রলোকটা।তারপর আহসান ওদের সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দেয়।এদিকে রিমি বোবার মতো ওদের কথা শুনে যাচ্ছে।সবটা না বুঝলেও এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে ওরা আহসানের ফ্রেন্ডস।কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তানিয়ার খেয়াল হলো রিমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে।তানিয়া রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল,এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?ভাবছো আমি আর তাহসিন এই ফাজিলটার কি হই।(আহসানকে দেখিয়ে দিয়ে)

রিমি বলল,না সেজন্য না।আমি বুঝেছি আপনারা ওনার ফ্রেন্ড।
তানিয়া ওর একহাত গাল ছুঁইয়ে বলল, ভেরি নাইস।এই ফাজিলটার বউ দেখছি খুব জিনিয়াস।
-এতে জিনিয়াসের কি হলো!আমরা যেভাবে কথা বলছি এতে যে-কেউই বুঝতে পারবে যে আমরা ফ্রেন্ডস।(আহসান)
-আচ্ছা তোরা কি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি,নাকি ভেতরেও যাবি?

তাহসিনের কথায় সবাই সম্মতি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।আহসান তাহসিনের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে তা দেখে রিমির হেবি রাগ হলো।কারণ রিমি এখনো জানে না ওরা এখানে কেন এসেছে।রিমি মুখ কালো করে রেখেছে।তাই দেখে তানিয়া জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার রিমি!তুমি মুখ কালো করে রেখেছো কেন?তোমার বরটাকে আমরা নিয়ে নিয়েছি বলে?
রিমি হালকা হেসে বলল,আরে না।আসলে আমরা এখানে কেন এসেছি সেটা উনি আমাকে বলেনি।তাই কিছুই বুঝতে পারছি না।
-ও এই ব্যাপার তাহলে।ওই ফাজিলটা এমনি।আমি তোমার সব কনফিউশান্স ক্লেয়ার করে দিচ্ছি।ওইযে তাহসিনকে দেখছো না।
-হুম দেখছি।উনি ওতো আপনাদের ফ্রেন্ড?

-হুম,তবে ও আমার ফ্রেন্ড প্লাস হাসবেন্ডও।একবছর হলো আমরা বিয়ে করেছি।আমি আহসান আর তাহসিন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।এখনো আছি।তবে আমি আর তাহসিন একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করি।
-পালিয়ে!মানে লাভ ম্যারিজ।
-হ্যাঁ,লাভ ম্যারিজ তবে বিয়েটা আমাদের পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।যাই হোক মূল কথায় যাওয়া যাক।আমি আর তাহসিন আজকে এই রিসোর্ট ওপেনিং করি।আহসানকে বলেছি তোমাকে নিয়ে সকাল সকাল চলে আসতে কিন্তু ও মাত্র আসলো দুপুর বানিয়ে।
-ও বুঝলাম।আপনি তাহলে ওনাকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন আসার জন্য।
-হুম দুদিন আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম।

-তার মানে উনি ঘুরতে আসেনি।ওনাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে আমাকে নিয়ে এখানে এসেছেন।নিজ ইচ্ছায় না।-মনে মনে।
-কি ভাবছো রিমি?
-না কিছু না।তো তোমরা কবে থেকে একে অপরকে চেনো?
– স্কুল লাইফ থেকে।আমরা কলেজেও একসাথে পড়াশোনা করেছি।কিন্তু তারপর আর একসাথে পড়াশোনা করা হয়নি।আহসান ফরেন চলে যায়।তারপরও আমরা একে অপরকে এখনো সেই আগের মতোই ভালবাসি।জানো আমি তো আগে আহসানকেই লাইক করতাম।ও থাকলে এই তাহসিনকে ছেড়ে ওকেই বিয়ে করতাম।তানিয়ার কথা শুনে রিমি যেন আকাশ থেকে পড়ল।রিমি অস্ফুট স্বরে বলল,আপনি আহসানকে লাইক করতেন!

-হুম খুব।আমি কেন আহসান কলেজের সব মেয়ের ক্রাশ ছিল।কিন্তু আহসান কাউকে পাত্তাই দিত না।আমাকে আর তাহসিনই ওর জীবনের প্রতিটি স্পন্দনে, মুহুর্তে জড়িয়ে ছিলাম।ঠিক সেভাবে আহসান ও আমাদের সব ছিল।এক কথায় আমরা একে অপরের লাইফলাইন ছিলাম।এখন আমাদের মাঝে ব্যস্ততা, কাজ,টাকা রোজগার করা ইত্যাদি চলে আসছে।পুরনো দিন গুলোকে খুব মিস করছি।আফসোস হচ্ছে আমার।এই কাজ কাজ নিয়ে তোমাদের বিয়েতেই যাওয়া হয়নি।
-ও,আচ্ছা উনি ও কি আপনাকে লাইক করতো?

-হুম করতো।আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো?আমি তোমার বড় হতে পারি কিন্তু আমি তোমার বরের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই আমাকে তুমি করেই বলবে।মনে থাকবে?
রিমি খুব টেনশনে আছে আহসান আর তানিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে।রিমির মন চাচ্ছে এখনি আহসানকে গিয়ে এসব কথা জিজ্ঞেস করতে।কিন্তু সেটা করলে তানিয়া ও তাহসিন খারাপ ভাবতে পারে।তাই নিজেকে কোনোমতে কন্ট্রোল করে আছে।যখন আহসানকে একা পাবে তখন দেখা যাবে এই ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করল।তারপর বলল,হুম মনে থাকবে।

-এইতো গুড গার্ল।তুমি বলো তোমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড আছে?
-হুম,স্রুতি।ওই আমার সব থেকে ভালো বন্ধু।
-ওহ,স্রুতিতো আহসানের ফুপির মেয়ে।ওর সাথেই তো আহসানের বিয়ে ঠিক হয়েছিল।তা ওর নাকি কারো সাথে এফেয়ার ছিল?তার সাথেই নাকি পালিয়ে গিয়েছে!
-আপনাকে,,,থেমে গিয়ে আবার বলল,সরি তোমাকে কে বলেছে এতসব?
-আহসান বলেছে।ওর সাথে কথা হয়তো আমার।
রিমি মুখ মলিন করে বলল,ও।
-তো খবর কি শ্রুতির?

-আমি জানি না। সত্যি বলতে,ও যাওয়ার পর আর কোনো যোগাযোগ করেনি আমার সাথে।(মন খারাপ করে)
-কেমন ফ্রেন্ড যে একটা বার জানালো না যে কেমন আছে কোথায় আছে।আহসান অস্ট্রেলিয়া গিয়েও আমার সাথে সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে।আর স্রুতি বাংলাদেশে থেকেও একটা ফোন কলস ও করলো না!অদ্ভুত!
-সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার।আমি ওকে মনে রেখেছি এটাই জানি আর কিছু লাগবে না।তবুও চিন্তা তো হয় ওর জন্য।
-ওর জন্য চিন্তা হয়!যে মেয়ে তোমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেল।তার জন্য চিন্তা হয়!ওর জন্য তোমাকে আর আহসানকে কত বড় sacrifice করতে হলো।না চাইতেও আহসানকে তোমায় বিয়ে করতে হলো।আর তুমিও না চাইতেই বিয়েতে রাজি হলে।কথাটা একদম রিমির হৃদয়ে গিয়ে লাগলো।তবে কথাটা তো সত্যি ই।ওতো জানে আহসান ওকে নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করেনি।মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে রিমি।তানিয়ার সাথে আর কথা বলতে মন চাচ্ছে না ওর।

-এখানে কতক্ষণ থাকবো আমরা?
তানিয়া ভ্রু জোড়া কোচকালো।
-আসতে পারলে না যাওয়ার নিয়ত বানিয়ে ফেললে?
-তা না আসলে আমার মাথাটা ধরেছে একটু।
-ও,আচ্ছা আমি তোমাদের জন্য রুম ঠিক করে রেখেছি।চলো তোমাকে দিয়ে আসছি।
-হুম সেটা করলে ভালো হতো।
-কোথায় ভেবেছিলাম তোমাকে এখানকার কোণায় কোণায় ঘুরিয়ে দেখাবো।তোমার নাকি মাথা ব্যাথা করছে।ধুর সব প্লান গেল মাটিতে।

-কি করার বলো!মাথা ব্যাথা তো বলে কয়ে আসেনা।এবার তাড়াতাড়ি চলো নইলে এখানেই পড়ে যাবো।
-এতোটা সিরিয়াস অবস্থা!আমি আহসানকে ডাকবো কি?
-না থাক।তুমি আমাকে রুম চিনিয়ে দাও তাতেই হবে।উনি অনেক দিন পর বন্ধুকে পেয়েছে।ওনাকে ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হবে না।তাও আবার এই ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে।
-ওকে আমাকে ধরে চলো তাহলে।
-না আমি যেতে পারবো।ধন্যবাদ।

রিমি রুমে এসে সেই লেভেলের কান্না জুড়ে দিল।আর আহসানের গুষ্টিশুদ্ধ উদ্ধার করতে শুরু করলো।কিন্তু বিগত কাহিনি শুনে রিমির এতো খারাপ কেন লাগছে?তানিয়া তো বলল ও আর তাহসিন লাভম্যারিজ করেছে।তাও কেন তানিয়া ও আহসানের অতীতের কথাগুলো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর?কিছুক্ষণ কান্না করে নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করল,আমি এতো কান্না কার জন্য করছি?আহসানের জন্য!কিন্তু কেন?উনি কি করেছে না করেছে অতীতে,তাতে আমার কি যায় আসে?আমি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছি!কেন তানিয়ার মুখের কথাটা আমি মেনে নিতে পারছি না?এটা তো পুরনো কথা তাও কেন মেনে নিতে পারছি না?

আচ্ছা আমি কি কোনো ভাবে জেলাস ফিল করছি?জেলাস!রিমি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, প্রশ্নই ওঠে না।আমি কেন জেলাস হতে যাব?আহসানের কাঁথায় আগুন।উনি আগে ১০ টা প্রেম করে থাকুক বা এখন করুক তাতে আমার কি যায় আসে,হুহ!কিন্তু এই সামান্য কথাটা আমার মন কেন বুঝতেছে না?কেন খামাখা কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে?আমি জানি না আমি আমার মন খারাপের কারণ কিন্ত উনি আমাকে ঘুরতে আসার কথা বলে এইখানে নিয়ে আসলেন তাও আবার কিছু না জানিয়ে।আগে থেকে প্লান করা কিন্তু আমাকে কিছুই বলেনি।আমি তো ভেবেছিলাম ঘুরতে আসার ব্যাপারটা হঠাৎ করে প্লান করেছেন উনি।কিন্তু উনি তো আগে থেকেই এখানে আসবেন বলে ভেবে রেখেছিল।এর জন্য ওনাকে শাস্তি পেতেই হবে।আজ ওনার সাথে একটা তুলকালাম কান্ড বাধিয়েই আমি দম নেব।
আহসান আর তাহসিন রিসোর্টের আঙিনায় বসে এখনো গল্প করে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে তাহিসিন বলে উঠে,

-লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে আহসান।এবার চল ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবি।
-আরেকটু আড্ডা দেই,কতদিন পর দেখা হলো আমাদের।
-আরে তুই শুধু তোর কথাই ভাব।ওদিকে রিমি কি করছে ভেবেছিস?রিমিও মেবি না খেয়ে আছে।
-Oh shit!আমি তো তোর সাথে আড্ডায় এমন ভাবে মেতে উঠেছি যে রিমির কথা মনেই নেই।চল ওর কাছে যাব।দেখি কি করছে।ওকে তো সব কিছু বলিনি আমি।খুব রেগে আছে হয়তো।
-আমি সব বলে দিয়েছি তোর রিমিকে আর চিন্তা করতে হবে না।

আহসান ও তাহসিন বাম সাইডে তাকাতেই তানিয়াকে দেখতে পায়।তানিয়া ওদের কাছে গিয়ে বলল,তোরা কি হুম?লাঞ্চ করার কি কোনো ইচ্ছে টিচ্ছে নেই?এখনো কথাই বলে যাচ্ছিস!আমি খাবার রেডি করে রেখেছি তোরা আসবি, তা না তোরা গসিপিং করেই যাচ্ছিস।খিদে নেই নাকি?আমি তো জানি মেয়েরা তাদের বন্ধুবান্ধব পেলে আড্ডায় মজে যায়।এখন দেখি উল্টো টা হচ্ছে।তানিয়া একটার পর কথা বলেই যাচ্ছে।তাহসিন হালকা রেগে বলল,চুপ করো তো।আমাদের বলার সুযোগ দাও একটু।আমি আর আহসান এখন যাচ্ছিলাম কি তুমি এসে পড়লে।আর শুরু করে দিলে।

-কি!আমি শুরু করেছি?কি শুরু করেছি?লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে তোমরা এখানে বসে বসে গল্প করছো আর আমি সেটা একটু বলেছি কি,আমি শুরু করে দিলাম।এটা বলতে আসা কি আমার ভুল হয়েছে নাকি?
-হুম হয়েছে।
আহসান ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,তোরা এবার থাম।আমাকে একটু বলতে দে।তুই রিমিকে কি বলেছিস?আর ও কোথায় এখন?
-আমি বলেছি আমাদের রিসোর্ট ওপেনিং হয়েছে আজ।তাই তুই ওকে এখানে নিয়ে এসেছিস।ওকে তোদের রুমে দিয়ে এসেছি মাথা নাকি ব্যাথা করছিল তাই।

আহসান আতংকিত হয়ে বলল,রিমির মাথা ব্যাথা করছিল!তুই আমাকে আগে বললি না কেন?চল দেখি গিয়ে কি করছে।
-মাথা ব্যাথা হওয়ার কারণ আছে রে।মনে আঘাত পেয়েছে যে বেচারি।তবে তোর রিমির প্রতি কেয়ার দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।এই তাহসিন টাকেও একটু শেখা বউকে কিভাবে কেয়ার করতে হয়।
-ছাড়তো,আগে বল রিমির মাথা ব্যাথার কারণ কি?
-কারণ হচ্ছে jealousy…

-দেখ বোন ভালো করে বল রিমির কি হয়েছে।আমার খুব টেনশন হচ্ছে ওকে নিয়ে।
-আরে আরে বলছি তো।আমি ওকে একটা মিথ্যে বলেছি আর তাতেই ওর headache শুরু।হি হি হি।
-কি এমন মিথ্যা বললি ওকে?
-বলেছি যে তুই আর আমি কলেজ লাইফে একে অপরকে লাইক করতাম।আর তুই যদি অস্ট্রেলিয়া না যেতি তাহলে আমি তোকেই বিয়ে করতাম।ব্যাস ওর মাথা ব্যাথা শুরু।আমি খুব কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছিলাম।তখন রিমির মুখটা দেখার মতো ছিল।এখনো রিমির সেই জেলাসি ফেসটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

তাহসিন বলল,তোমার অন্যকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে তাইনা?তোমার স্বভাব টা আর গেল না দেখছি।
তাহসিন বলা শেষ করতেই আহসান বলল,তুই এটা একদমি ভালো করিসনি।রিমি না জানি কি না কি ভাবছে আমাকে নিয়ে।
-তুই এটা কেন ভাবছিস না রিমি তোকে ভালবাসে বলেই জেলাস হয়েছে।তুই না বলেছিলি রিমি তোকে ভালবাসে না।কিন্তু প্রমাণ পেলি তো রিমি তোকে কতটা ভালবাসে?ঘটনাচক্রে আমি বুঝলাম রিমি তোকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে না।এটার মানে পিওর লাভ।তুইতো আমাকে বলেছিলি তুই রিমির চোখে তোর জন্য কেয়ার দেখেছিস।তো আমি প্রমাণ করে দিলাম সেটা ভালবাসার কেয়ার।তুই কিনা আমাকে ট্রিট না দিয়ে চোখ রাঙানি দেখাচ্ছিস!এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?খুশি হ।

-আমি ভয় পাচ্ছি কারণ রিমি অল্পতেই অভিমান করে।আর খুব বেশি কষ্ট পেলে ও নিজেকে কষ্ট দেয়।খুব সিক হয়ে যায়।তোর এটা করা উচিত হয়নি।
তাহসিন সায় দিয়ে বলল,একদম ঠিক।আহসান ঠিক বলেছে।তুমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো।
-কোনো বাড়াবাড়ি করিনি।তোমরাও আমার সাথে তাল মেলাও দেখবে রিমি আহসানের প্রতি ওর ভালবাসা খুব শীঘ্রই উপলব্ধি করতে পারবে।আহসান তুই বিলিভ কর রিমির কিছুই হবে না।রিমি উল্টে তোর কাছে ধরা দেবে।আসলে কি বলতো,ভালবাসার আরেক নাম হিংসা।রিমি সেই পথেই হাঁটছে এখন।

-কি জানি তবে আমি এখন রিমিকে দেখতে চাই।ও কি করছে,কেমন আছে,সেটা নিজের চোখে না দেখা অবধি আমার শান্তি নেই।আমি অস্থির হয়ে আছি প্লিজ বল রিমি কত নাম্বার রুমে আছে?
-ওএমজি!হায় কি পেয়ার,কি মহব্বত,কি ইস্ক,কি প্রেম তোদের মাঝে।
-এখন আহসান না আমি তোমাকে দুটো মারবো গালে।তাহসিনের কথা শুনে তানিয়া চুপ হয়ে গেল।আর আহসানকে নিয়ে রিমিকে যেই রুমে রেখে এসেছিল সেখানে গেল।রিমি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।আহসান পেছন থেকে বলল,রিমি তোমার নাকি মাথা ব্যাথা করছে?

রিমি আহসানের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার মুখ সরিয়ে নিল।আহসানের কথার কোন উত্তর দিল না।
-এতোক্ষণ পর এখন আসছে!কথাই বলবো আপনার সাথে।যে কাজে মগ্ন ছিলেন সেই কাজেই যান।রিমিকে একা একা বিরবির করতে দেখে আহসান রিমির কাছে গেল।
-কি বলছো বিরবির করে?

রিমি অভিমানী স্বুরে বলল,কিছু না।আপনি কি করতে আসলেন এখানে?যান গিয়ে আপনার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করুন।এখানে এসে সময় নষ্ট করার মানেই হয়না।আহসান রিমির গালে হাত রেখে বললো,কি হয়েছে তোমার?এভাবে কেন বলছো?রিমি আহসানের এমন কাজে খানিকটা কেঁপে ওঠে।আহসানের চোখের দিকে তাকাতেই ওর ওর সব অভিমান যেন ধূলোয় মিশে গেল।আহসান আবারও জিজ্ঞেস করলো,আমি এখানে আসার কথা আগে থেকে বলিনি বলে রাগ করেছো?আচ্ছা আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে।তুমিতো জানোই আমি বিগত কদিন খুব বিজি ছিলাম।তার উপর ওই ডিভোর্স এর ব্যাপারটা।

সব মিলিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম এই বিষয়টা।তাছাড়া তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে কিছু বলিনি।এখানে এমন এমন সব জিনিস আছে,তুমি দেখলে খুব খুশি হয়ে যাবে।এই ভেবে বলা হয়নি।যেদিন তাহসিন আমাকে ইনভাইট করেছিল, ওইদিন ভেবেছিলাম আসবো না এখানে।তবে আজ ভোরে যখন আমাদের মধ্যে সব কিছু মিটমাট হয়ে গেল ঠিক তার কিছুক্ষণ পরই তানিয়ার এসএমএস পেলাম।ওর এসএমএস টা দেখা মাত্র আমি প্লান বানিয়ে ফেলি এখানে আসার।এখানে আসার পর সবটা বলবো ভেবেছি কিন্তু তাহসিনের সাথে আড্ডা করতে বসে যাই।ফলে আর তোমাকে বলা হয়নি।সবটা শোনার পর রিমি ওর গাল থেকে আহসানের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল,আপনার বন্ধুদের কাছেই যান।এতক্ষণ আমি ভালোই ছিলাম।আপনি এখানে না আসলেও চলবে।
তখনই তাহসিন এসে বলল,বন্ধু তো বছরে দু একবারের ভাগিদার,

কিন্তু বউ তো সারাজীবনের।আমি যদি আগে জানতাম তাহলে আহসানের উপর ভাগই বসাতাম না।তাহসিনের কথায় রিমি নিজেকে বেশ অপরাধী মনে করলো।
-আমি সেটা বলতে চাইনি ভাইয়া।আসলে আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিল তাই,
-তাই নিজের বরকে পাশে না পেয়ে অভিমান হলো তাইতো?(তানিয়া)
-সেটাও না।তোমরা ভুল বুঝছো আমাকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমাদেরই ভুল।এখন লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে।আমি ওয়েটারদের বলে এসেছি আমাদের লাঞ্চ এখানে দিয়ে যেতে।তো তুমি আর আহসান যত ফাস্ট সম্ভব ফ্রেশ হয়ে এসো।
-আমি খাবো না আপু।ইচ্ছে করছে না খেতে।

আহসান ধমক দিয়ে বলল,কেন খাবে না?কি হয়েছে এমন যে খাবে না।
তাহসিন আহসানকে চুপ করিয়ে বলল,তোকে কিছু বলতে হবে না আমি বলছি।দেখো রিমি,তুমি যদি আমাদের সাথে লাঞ্চ না করো তাহলে আমরা ভাববো তুমি আহসানের উপরে নয়,আমার আর তানিয়ার উপর রাগ করে আছো।এবার তুমি ভাবো কি করবে।
তানিয়া বলল,একদম ঠিক কথা বলেছো তাহসিন।
রিমি আর কোন উপায় না পেয়ে বলল,আমি আপনাদের উপর বিন্দুমাত্র রেগে নেই বলে দিলাম।ঠিক আছে আমি খাবো আপনাদের সাথে।

-তারপর কিন্তু আমরা একটু রেস্ট নিয়ে পুরো রিসোর্টে ঘুরবো।আমি আর তাহসিন এখনো ঘুরিনি কিন্তু।একসাথে ঘুরবো খুব মজা হবে।
-না ভাইয়া আমি এটা পারবো না।আমার ভালো লাগছে না।মাথা ব্যাথা করছে খুব।
-আমি মাথা ব্যাথার জন্য স্প্রে দিয়ে দেব।ঠিক হয়ে যাবে।(আহসান)
-হুম ঘরেই ডক্টর থাকতে এতো চিন্তা কিসের তোমার?আমরা কিছু শুনতে চাইনা আমরা চারজন আজ একসাথে ঘুরবো এটাই ফাইনাল।

-কিন্ত আপু আমার ভালো লাগছে না বললাম তো।
-আচ্ছা তাহলে আমি আহসান আর তাহসিনই বরং ঘুরবো।রাইডে চড়ার সময় আহসান তুই কিন্তু আমার পাশে বসবি।এই তাহসিন টাকে দিয়ে কোন ভরসা নেই।ভীতু একটা আমাকে ফেলে দিতে পারে।
কথাটা শুনে রিমি ওর নাক ফুলিয়ে ফেলল।এক মুহুর্ত দেড়ি না করে বলে দিল,আমিও যাব তোমাদের সাথে এই বলে ওয়াশরুম চলে যায়।রিমি চলে যাওয়ার পর তানিয়া আর তাহসিন হো হো করে হেসে ওঠে।তবে আহসান ছাড়া।আহসান বেশ রেগে বলল,তুইও না পারিস খুব। এভাবে বললি কেন?একটু কম কথা বলতে পারিস না?

-না পারি না।তোর বউকে রাগাতে খুব ভালো লাগছে আমার।আজ ওর মুখ থেকে তোকে ভালবাসার কথাটা বের করিয়েও ছাড়বো।আমি এটা বুঝলাম না,আমি কিনা তোর উপকার করছি আর তুই আমাকেই বকছিস?হুহ ভালো মানুষের দামই নেই দেখছি।তুই খালি দেখে যা আর সবটা আমার উপর ছেড়ে দে।আমি বলছি রিমি কিছু করবে না।শুধু ভাব তোর আর রিমির মিল হয়ে গেলে আমাকে তুই কি গিফট দিবি।

-তুই যদি রিমির মুখ থেকে আমাকে ভালবাসে এই কথাটা বলাতে পারিস তাহলে তুই যা চাইবি তাই দেব।কিন্তু যদি না পারিস তাহলে তুই তোর ফেভারিট স্ট্রবেরি আইসক্রিম ১মাস পর্যন্ত খাবি না।এটা তোর পানিশমেন্ট।
-ঠিক আছে।আর যদি পারি তাহলে এক মাস তুই রোজ আমার বাসায় স্ট্রবেরি আইসক্রিম পাঠাবি।
আহসান বলল,ওকে ডান।এখন দেখা যাক সামনে কি হয়।এখন শুধু রিমিকে নিয়ে চিন্তা।রিমির কপালে কি আছে জানি না তবে আমি নিশ্চিত তুই খুব বড়সড় একটা ব্লাস্ট করতে চলেছিস।আর সেটা রিমি কিভাবে নেবে সেটাই ভাবার বিষয়।

বেলা ৩টের পর ওরা বেরিয়ে পড়ে রিসোর্ট ভ্রমণে।তানিয়া খুব বেশি কথা বলছে আহসানের সাথে।ননস্টপ কথা বলেই যাচ্ছে।বিষয়টা রিমির খুব বেশিই বিরক্ত লেগেছে।কোনোমতে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রিমি।ওরা সর্বপ্রথম যেখানে বিভিন্ন প্রকারের রাইড ছিল সেখানে গেল।রোলার কোস্টারের কাছে যাওয়ার পর তানিয়া বলে ওঠে,
-চলো রোলার কোস্টারে আগে ওঠা যাক।আহসান ও তাহসিন দুজনই সন্মতি দিল তবে রিমি ছাড়া।ও বলল,তোমরা চড়লে চড়ো আমি এর মধ্যে নেই বলে রাখলাম।

-থাক ওর মাথা এমনিতেই ব্যাথা এটাতে চড়লে চক্কর দিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে উপর থেকে।
আহসানের কথায় তানিয়া ও তাহসিন সায় মেলালো।তানিয়া রিমির হাতে একটা ক্যামেরা দিয়ে বলল ওদের পিক তুলতে।তারপর রিমিকে রেখেই ওরা রোলার কোস্টারে উঠে গেল।আহসান আর তানিয়া একসাথে বসেছে।রোলারকোস্টার চালু হতেই ওরা হাওয়ায় চিল্লাতে শুরু করল।ওরা খুব এঞ্জয় করছে।আর রিমি রাগে ফুসছে।

-একবার বলেছি চড়বো না তাই বলে জোর করলো না কেউ!আমার কি সত্যি সত্যি মাথায় ব্যাথা করছিল নাকি!আমি তো এমনি বলেছিলাম রাগ হচ্ছিলো কোনো উপায় না পেয়ে ওটাই বলে দিয়েছিলাম।কেমন হাসবেন্ড আমার?বিবাহিত একটা মহিলার পাশে বসে রাইড এঞ্জয় করছে।ওনাকে তো আদালতে যত মামলা আছে সব কিছুর উত্তরাধিকারী বানানো উচিত।এক নাম্বারের ৪২০ উনি।খুবই পঁচা উনি।পিক তুলবো তাইনা?ঘোড়ার ডিম তুলে দেব আমি এই বলে ক্যামেরাটা হাতেই ধরে রাখলো।৫ মিনিট পর আহসানরা নিচে নেমে রিমির কাছে আসলো।

এসেই আহসান রিমিকে বলল,তুমি না গিয়ে কতো কিছু যে মিস করলে বোলার বাহিরে।
রিমি মুখ বাকিয়ে বলল,থাক আমার এসব ভালো লাগেনা।আপনারাই মজা করুন।
তানিয়া বলল,চল এবার হর্স রাইড করি।
-নাহ আর না অনেক হয়েছে এতো রাইডে চড়লে পেটের ভেতর যা আছে সব জায়গা বদল করে নেবে।
-তুমি আসলেই একটা ভীতুর ডিম।আহসান চল তুই আর আমি যাই।
-হুম চল এই বলে আহসান আর তানিয়া চলে গেল হর্স রাইড করতে।

তাহসিন আর রিমি গেল না।রিমির মন চাচ্ছে রিসোর্টের রুমে চলে যেতে কিন্তু আহসানকে তানিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়ে যেতেও পারছে না।রিমি আরেক ধাপ অবাক হলো তাহসিন কে দেখে।ওর বউ অন্য একজনের সাথে রাইডে চড়ছে এতো বেশি হাসাহাসি করছে আর ও কিনা হাসি মুখে সব মেনে নিচ্ছে।এমনকি ছবিও তুলছে আহসান ও তানিয়ার।রিমির মন চাচ্ছে তাহিসিনকে দু চারটা কথা শোনাতে।কিন্তু সেটাও পারলো না।কারণ ওর বর ওতো একই কাজ করছে।আহসান আর তানিয়া হর্স রাইড শেষ করল।এরপর আহসান তানিয়াকে জিজ্ঞেস করল,এবার কোনটায় চড়বি?

তানিয়া উত্তর দিল,গলা শুকিয়ে গেছে চিল্লাতে চিল্লাতে।চল আমরা আইসক্রিম খাই।
-এখন আবার হোটেলে ফিরে যাবো আমরা?
আহসান কথাটা শেষ করতেই রিমি বলে ওঠে,হুম এটাই বেস্ট হবে।আমরা বরং হোটেলেই ফিরে যাই।
-আমাদের কোথাও যেতে হবে না।এখান থেকেই আইসক্রিম খাব আমরা।
আহসান আর রিমি যেন বুঝতে পারলো না তাহসিনের কথা।তাই ওরা দুজন একসাথে জিজ্ঞেস করে ওঠে,কিভাবে?

তানিয়া চোখ মেরে বললো, চল আমাদের সাথে দেখতে পারবি কিভাবে।তানিয়া আর তাহসিন পাশেই একটা আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে গেল ওদের।সেখানে ঢুকে রিমির চোখ ধাধিয়ে গেল।আইসক্রিম পার্লারের ভেতরের চারিদিকে হরেকরকম আইসক্রিমের ছবি আর্ট করা।যারা যারা আইসক্রিম বিক্রি করছে তারা সবাই আইসক্রিমের ডিজাইনের ড্রেস পড়া।তারা ওদের দেখে ওয়েলকাম জানালো।এই ওয়েলকাম পর্বটা সেই যে শুরু হয়েছে,এখনো শেষ হচ্ছে না।না হওয়ারই কথা।তাহসিন আর তানিয়া এই রিসোর্টের মালিক।ওরা রিসোর্টের যেখানেই যাক না কেন সম্মান তো পাবেই।আর ওদের গেস্ট হচ্ছে আহসান ও রিমি।তাই ওদের সাথেও সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলছে।অন্যান্য লোকজনদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলেও মালিক ও তাদের গেস্টরাই সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার।রিমির আইসক্রিম অসম্ভব ভালো লাগে।আইসক্রিম দেখে ওর মন আচমকাই খুশিতে ভরে ওঠে।রিমি ওর পছন্দের চকলেট আইসক্রিম নিয়েছে।আহসান ও চকলেট আইসক্রিম নিয়েছে।যদিও আহসানের

চকলেট আইসক্রিম পছন্দ না।তবুও রিমি নিয়েছে বলে আহসান ও নিল।
তাহসিন আহসানকে উদ্দেশ্য করে বলল,কিরে তুই চকলেট আইসক্রিম নিলে কেন?তুইতো ভানিলা ফ্লেভার লাইক করিস।
আহসান রিমির দিকে তাকিয়ে বলল,প্রিয় মানুষের পছন্দ টাই নিজের পছন্দে পরিণত হয়ে যায়।তখন নিজের পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকে না।রিমি আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত আহসানের কথা তাই ওর মাথায় গেল না।সবাই আইসক্রিম খাচ্ছে এমন সময় তানিয়া আহসানের গালে আইসক্রিম লাগিয়ে দিল।তারপর আহসানও তানিয়ার পুরো মুখে আআইসক্রিম লেপ্টে দিল।তাহসিন ও ওদের সাথে যোগ দিল।আর রিমি নাক ফুলিয়ে ওদের কান্ড দেখে যাচ্ছে।

-কি লাগিয়ে রেখেছে এই তানিয়া মেয়েটা!একটুও কি লজ্জা বলতে কিছু নাই ওর?হতে পারে ও আহসানের বেস্টফ্রেন্ড কিন্তু আমি যে ওর ওয়াইফ সেটা তো জানে।আমার সামনে এসব কি লাগিয়েছে!আমি অনেক টিকটিকি দেখেছি কিন্তু এই তানিয়ার মতো গায়ে পড়া টিকটিকি আজ প্রথম দেখলাম।হুহ!হঠাৎ রিমির চোখ গেল কিছু মানুষের দিকে।তারা আইসক্রিমের ড্রেস পড়ে বাচ্চাদের সাথে মজা করছে।বাচ্চাদের আইসক্রিম দিতে গিয়েও দিচ্ছে না।বাচ্চারা কতো চেষ্টা করছে আইসক্রিম নিজের কব্জায় নেওয়ার জন্য।কিন্তু পারছেই না।রিমি কাছে গিয়ে বাচ্চাদের হয়ে খেলতে শুরু করে দিল।রিমিও পেরে উঠছে না তাদের চালাকির সাথে।

বেশ কয়েকবার ট্রাই করার পর রিমি সফল হলো আইসক্রিম নিজের দখলে নিতে।রিমির সাথে সব বাচ্চারা খুশি হয়ে গেল।গিফট হিসেবে রিমি এক বক্স আইসক্রিম পেল।সব আইসক্রিম রিমি বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করে দিল।ওদিকে আহসানের দুটো চোখ শুধু রিমিকেই দেখে যাচ্ছে অপলক দৃষ্টিতে।তাহসিন আহসানের মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই আহসান ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো।

-নিজের বউয়ের দিকে নজর দিস কেন রে!এভাবে আড়চোখে না তাকিয়ে নিজের মনের কথা বলে দিলেই তো পারিস।
-কিভাবে বলি বল,আমি তো জানি না রিমি আমাকে নিয়ে কি ভাবে।আমি যদি বলে দেই তাহলে ও যদি আমাকে ভুল বোঝে!তাই আমি চাই রিমি আগে ফিল করুক ও আমাকে ভালবাসে,তারপর আমি বলবো।

-ফিল করবে কি,ও তোকে ভালবাসেই বাসে।দেখছিস না কিভাবে জ্বলছে তোকে আর আমাকে একসাথে দেখে।(তানিয়া)
-কিছুই হচ্ছে না।বরং আমার মনে হচ্ছে রিমি আমাকে খারাপ ভাবছে।ও হয়তো ভাবছে আমি কিভাবে একটা ম্যারিড মেয়ের সাথে এতো ক্লোজলি কথা বলছি।তাইতো এখনো ওর মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা বের হচ্ছে না।কারণ ওর মনে আমার জন্য যতটাই রেস্পেক্ট ছিল সব শেষ হয়ে গেছে।সব হয়েছে তোর এই নাটকটার জন্য।আমি আর তোর কোনো প্ল্যানে ইনভলভ থাকতে পারছি না।
-একদম ঠিক বলেছিস আহসান।আমারও তাই মনে হচ্ছে।(তাহসিন)

তোলপাড় পর্ব ২৯+৩০+৩১

-তোমরা আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও আমি এবার রিমির মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা বলিয়েই ছাড়বো।প্লিজ আরেকটা সুযোগ দাও।আহসান ও তাহসিন দুজনেই বলল,ওকে জাস্ট একটা সুযোগ।
-ওকে,আজ সন্ধ্যার পার্টিতেই আমি আমার লাস্ট প্ল্যান এপ্লাই করবো।আর এইবার বাজিমাত করবোই করবো।
-অপা,আহসান কোথায়?ওকে দেখছি না কেন?(রান্না ঘরের দিকে আসতে আসতে বলল রঞ্জিত।
অপা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো হাত মুছতে মুছতে।তারপর বলল,বউমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেল বাহিরে।
কথাটা শুনে রঞ্জিতের চোখ কপালে উঠে গেল।রাগে বিস্ফোরিত হয়ে বলল,কখন গেল?আমাকে কেন বলে গেলনা?

-এটা কি বলে যাওয়ার বিষয়?নিজের বউকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এতে বলার কি আছে?চিন্তা করো না আজ রাতের মধ্যেই চলে আসবে বলেছে।তুমি একটু বসো গিয়ে আমার রান্না হয়ে এসেছে।
-এই বাড়িতে কি আমার কোনোই দাম নেই?আমি যে এই বাড়ির মেইন কর্তা তাকি তোমরা মানো না?আমি আহসানের বাবা।ও কোথায় যাবে না যাবে সেটা সম্পুর্ণ আমার উপর ডিপেন্ড করে।

-এভাবে কেন বলছো।এটা সিম্পল একটা বিষয়।সিম্পল ভাবেই নাও।আহসান তো এখন বড় হয়েছে।নিজের ডিসিশন নিজেই নিতে পারে।ভালো মন্দ বোঝে।আমাকে যাওয়ার সময় বলেছে ওরা বেরুচ্ছে।আমার পারমিশন ও নেয়নি।এতে কি আমি রাগ করেছি?না একদমই রাগ করিনি।কারণ এটা রাগ করার বিষয়ই না।তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা করো প্লিজ।
রঞ্জিত এই বিষয় টা নিয়ে আর কথা বাড়ালো না।মুখ ভাড় করে সোফায় গিয়ে বসে রইলো।

তোলপাড় পর্ব ৩৫+৩৬+৩৭