নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৬

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৬
Mousumi Akter

বেলকনিতে সোজা স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক চৌধুরী। প্যান্টের এক পকেটে হাত গোজা তার। আরেক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। তার দৃষ্টিতে যে গম্ভীর কোনো সেটা দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে তার সিগারেট খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায়।

মাত্র কয়েক মিনিটে একের পর এক সিগারেট টানছে আর শেষ করছে। তার অভিজ্ঞ ব্রেইনে এটা কিছুতেই ঢুকছে না তারই বাড়িতে তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর দিকে কে বাজে দৃষ্টি দিবে? এত সাহস কার? যে বাইরে থেকে এসে প্রান্তিক চৌধুরীর স্ত্রীর দিকে কু-দৃষ্টি দিবে। এ বাড়িতে অন্ত আর শ্রাবণ আর তার বাবা ছাড়া তৃতীয় কোনো পুরুষ মানুষ পার্মানেন্ট থাকেনা। বাগানের কাজ করতে মাঝে মাঝে তরিকুল নামের ছেলেটা আসে। তাদের ব্যবসায়িক কাজেও কিছু মানুষ আসে। এদের মাঝে কি কেউ ব্যবসার নামে কেউ তার শত্রু হয়ে প্রবেশ করছে এ বাড়িতে। প্রান্তিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের কপালে নিজেই আঘাত করল। যতক্ষণ না ওই চোখজোড়া সে তুলে ফেলতে পারছে ততক্ষণ তার শান্তি নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ একজনের অভিশাপ মনে পড়ে বুকে অজানা ভয় বাসা বাঁধল। সেই অভিশাপ কি তাহলে সত্য হবে।জাহাঙ্গীরনগন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এক মেয়ে তাকে অভিশাপ দিয়েছিল সারা পৃথিবীর মেয়ে তোমার জব্য পা-গ-ল প্রান্তিক চৌধুরী সেই সুযোগে তুমি কোনো মেয়ের আবেগের মূল্যায়ন করতে জানোনা।এইযে তুমি বলো এইসব ভালবাসার অনুভূতি তোমার আসেনা। সৃষ্টিকর্তার অদ্ভুত এক নিয়মে তুমিও একদিন কাউকে ভালবাসবে।

এত ভালবাসবে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকবে। সেই মেয়ের ভালবাসা হারানোর ভয় তোমার রাতের ঘুম কেড়ে নিবে। তোমাকে ভালবাসবে না সেই মেয়ে।আর যদিও তোমাকে ভালবাসে আমি অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছি সেই মেয়ের যেন মৃত্যু হয় তোমার মত নিকৃষ্ট মানুষকে ভালবাসার জন্য। কেউ না কেউ যেন তোমার থেকে তাকে কেড়ে নেয়, কেড়ে নিয়ে তোমাকে নিঃস্ব করে দেয়।ভালবাসার যন্ত্রণা একদিন তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে প্রান্তিক চৌধুরী।তোমাকে ভালবাসা মেয়েটা মরে যাক।
প্রান্তিক সেদিন বাঁকা হেসে বলেছিল,” কে মরল আর কে বাঁচল আই ডোন্ট কেয়ার। কোনো মেয়ের জন্য আমার জীবন অন্তত থেমে থাকবেনা।কোনো মেয়ের সেই ক্ষমতা নেই আমাকে দূর্বল করে তুলবে।”

এরপর দিন ই মে মাসের ১০ তারিখ নিকৃষ্ট একটি ঘটনা ঘটে যায়। প্রতি বছর এই তারিখটা প্রান্তিক ডিপ্রেশন এ ভোগে। কিন্তু ভাগ্যর এক নির্মম পরিহাসে এ বছর মে মাসের ১০ তারিখ ই প্রান্তিকের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন।তার আর রজনীর বিয়ে হয়েছে৷ এই তারিখেই কেনো হতে হল? এটা কি কাকতালীয় কোনো ঘটনা। নাকি কারো চক্রান্ত। কে বা রজনী আর তার ছবি গ্রামে ছড়িয়ে দিল। তাহলে কি এই তারিখের সাথে সংযোগ করে কেউ এটা করেছে। কিন্তু কেউতো সে ঘটনা জানেনা।জানার কথা ও নয়। প্রান্তিক শতভাগ নিশ্চিত কেউ জানেনা।
হঠাৎ এত দুঃচিন্তার মাঝে তার একমাত্র মানসিক শান্তির কারণ রজনী উপস্থিত হল। রজনী পেছনে দাঁড়িয়ে মিহি কন্ঠে বলল,

” শুনুন না।”
প্রান্তিকের হৃদয় শীতল হল রজনীর কন্ঠে। সমস্ত দুঃচিন্তা দূরে ঠেলে পেছন ফিরে তাকাল যেন ঝড়ের গতিতে। রজনী নিচে তাকিয়ে দেখল ১৫-২০ টা সিগারেটের খেয়ে ফেলা অংশ। এখনো হাতে একটা জলন্ত সিগারেট রয়েছে। রজনী বিরক্ত হল তীব্র ভাবে। এত সিগারেট এক সাথে একটা মানুষ কীভাবে খেতে পারে। প্রান্তিক বুঝতে পারল রজনী বিরক্ত হয়েছে। হাতের সিগারেট টা দূরে ফেলে দিয়ে আচমকা রজনীকে জড়িয়ে ধরল। একদম ই বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। কিছুক্ষণ আগের ককল্পনাতীত কথাগুলো তার মনে পড়ল। সে রজনীর কিছুই হতে দিবেনা। এইভাবেই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখবে আজীবনকাল।প্রান্তিক রজনীর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

” আমি তোমার কিচ্ছু হতে দিবনা রজনীগন্ধ্যা। কিচ্ছুনা। তুফান আসুক,মহাপ্রলয় ঘটে যাক, তবুও তোমাকে আমি আগলে রাখবই।”
রজনী হঠাৎ এমন আচরণে কিছুটা অবাক হলেও প্রান্তিক কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বলল, ” সিগারেট বেশী খেয়ে কি মাথায় সমস্যা হয়েছে?”
“তোমাকে দেখার পর থেকে তো মাথায় আমার এমনিতেই সমস্যা হয়ে গিয়েছে।”
“সব দোষ আমার?”

“হ্যাঁ তুমি আমার মাথা খে’ য়ে ‘ছে। চোখে কি বশিকরণ করা তাবিজ পরো।আমি তাকালেই শেষ হয়ে যায়।”
“আমার ভাবতেই ঘেন্না লাগে একজন সিগারেট খোর আমার বর।”
“ঘেন্না লাগে?”
“হ্যাঁ লাগে।” কথাটা রজনী মনের বিরুদ্ধে বলল। প্রান্তিকের অভিজ্ঞ দৃষ্টি স্পষ্ট দেখতে পেল রজনীর চোখে কোনো ঘৃণা নেই। সে সিগারেট খেয়েছে বলেই রজনী রেগে এসব বলছে।
প্রান্তিক রজনীর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ দেখে বলল,

“কি ঘৃণা লাগে রজনীগন্ধ্যা আমাকে নাকি সিগারেট। ”
“আপনার উচিৎ ছিল সিগারেট বিয়ে করা। আপনার জীবনসঙ্গী হিসাবে সিগারেট ই উত্তম ছিল।”
“উফফফ মেয়েটা বলে কি! জড়বস্তু বিয়ে করে কি ফায়দা পেতাম।”
“আমাকে বিয়ে করে কি ফায়দা পেলেন।”
প্রান্তিক দুষ্টু হেসে বলল, “শুনতে চাও।”
” হ্যাঁ। ”

“ভয়ানক লজ্জা পাবে কিন্তু।” বলেই প্রান্তিক রজনীর একদম কাছে গিয়ে ঝুঁকল। কানের সাথে ওষ্ট মিশিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলে ঠোঁট কামড়ে হাসল।রজনী সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।সেই লজ্জা লুকাতে চোখ পাকিয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি এত নির্লজ্জ কেনো ছিঃ।এইসব মুখে আনেন কীভাবে? আপনার লজ্জা করেনা। আপনার সাথে আর কথা বলব না।” বলেই রজনী হাঁটা দিল। প্রান্তিক রজনীর হাত টেনে ধরে আবার ও বুকের সাথে মিশালো।মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
” তোমাকে বারবার আদর করে কাছে টানব বলেই তো রাগিয়ে দিই বুঝনা কেনো তুমি? রাগ ছাড়া ভালবাসার গভীরতা বাড়েনা। একদম পানসে হয়ে যায়। পুরুষ মানুষের জন্ম হয়েছে বউকে রাগিয়ে দিয়ে সরি বলে ভালবাসার জন্য। বউ এর কাছে মাথানত করলে ইজ্জত যাবেনা।”
“আপনি ছাড়ুন আমাকে। খুব খারাপ আপনি।”

“পিচ্চি একটা মেয়ে বিয়ে করেছি। আমার হাঁটুর বয়সী। যা বলি তাতেই রেগে যায়। ইহকালেও মনে হয়না আর বাবা ডাক শুনতে পাবো।”
“আবার বাজে কথা বলছেন আপনি।”
“আচ্ছা আর বলব না। এইবার বলো আমাকে ডাকছিলে কেনো?”
“আমি গোসল করব বলে।”
“আমার সাথে গোসল করবে?তুমি এত্ত রোমান্টিক আগে জানতাম না।সাওয়ারে কিন্তু দারুণ রোমান্স হয়।”
“না আমি একা গোসল করব।”

“বিয়ের পরেরদিন সকালে নববধু গোসল করবে? কারণ কী?”
“বাইরে যারা ছিল ওরা বলল, আমি যেন গোসল করি।”
“শুধু শুধু মানুষের দোষ দিচ্ছো ক্যানো? আমি ঘুমিয়ে গেলে কোনো ফায়দা নাওনিতো। নেওয়া টা উচিৎ। বিকজ এমন হ্যান্ডসাম বর যার সে কীভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।”
রজনী প্রান্তিকের থেকে খানিকটা দূরে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজেবাজে কথার একটা লিমিট থাকে।আপনি শুধু লজ্জা দেন আমাকে।আপনাদের এখানে পুকুর নেই, টিউবওয়েল নেই। আপনার গোসলখানা আমি কীভাবে ব্যবহার করব বুঝতে পারছিনা।”
“তোমাকে সব বুঝানোর জন্য আমি আছিতো। টেনশন নিওনা।”

প্রান্তিক রজনীর হাত ধরে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। কারো ওয়াশরুম যে এত বড় হয় আর সুন্দর হয় রজনীর ধারণার বাহিরে ছিল।একটা ওয়াশরুম দেখেই রজনীর ধারণা হয়ে গিয়েছে প্রান্তিক অঢেল টাকার মালিক। সে গোসলের কথা ভুলে গিয়েছে। চারদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।বেডরুমের মতই প্রায় একটা ওয়াশ রুম।সেখানে একটা বাথটাব যার ভেতরে গোলাপ আর রজনীগন্ধ্যার পাপড়ি ভাসছে।প্রান্তিক রজনীকে পাজা কোলে তুলে বাথটাবে নিয়ে সুইয়ে দিল।

রজনী চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই সাবানের ফেনা হয়ে গেল পুরা বাথটাব।প্রান্তিক নিচে বসে আছে পানিতে একহাত ভিজিয়ে। তার সামনে একটা জলপ”রী সুয়ে আছে। প্রান্তিক কোনভাবেই চোখ সরাতে পারছেনা। চোখে নেশা হয়ে গিয়েছে। সাবানের সাদা ফেনার মাঝে রজনী সুয়ে আছে তার সমস্ত শরীরে গোলাপের পাপড়ি। এত সুন্দর মুহূর্তটা প্রান্তিক মিস করতে চাইছেনা।সে বুদ হয়ে রইল রজনীর দিকে তাকিয়ে। রজনীর দারুণ কিছু অনুভব হচ্ছে। সে চোখ মেলে তাকাল।তাকিয়ে দেখল প্রান্তিক তাকিয়ে আছে তার দিকে।নিঁখুত দৃষ্টিতে একরাশ মুগ্ধতা। রজনী প্রান্তিকের দিকে পানি ছুড়ে মারল। এক পশলা বৃষ্টির মত পানির ছেটা প্রান্তিকের মুখে গিয়ে লাগল।তবুও প্রান্তিকের চোখের দৃষ্টি সরছেনা।

রজনী লজ্জারাঙা চোখে তাকিয়ে বলল, ” আপনি এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার লজ্জা করছে। প্লিজ বাইরে যান।”
“এত সুন্দর দৃশ্য জীবনে প্রথম দেখলাম। তুমি কি আমায় এই প্রথম দেখা সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করতে চাও?”
“এইবার আমার আরো লজ্জা করছে। প্লিজ যান।”
“তাহলে আমাকে একটা কিস করো যাচ্ছি।”
“না, এটাও পারব না।”
“তোমাকে দেখতে দিবেনা, কিস করবেনা, তাহলে কি করবে?”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৫

রজনী লজ্জায় আরো বেশী লাল হয়ে গেল। বাইরে থেকে প্রিয়তা ডাকছে রজনীর গোসল শেষ হল কীনা? প্রান্তিক আচমকা রজনীর ওষ্টে ওষ্ট ডুবিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।রজনীর খারাপ লাগেনি। লজ্জা লেগেছে। ক্যানো জানি প্রান্তিকের স্পর্শ তার দারুণ ভাল লাগছে। সে কাছে আসলে লজ্জায় এলোমেলো করছে। তবে অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করছে। প্রিয় পুরুষের স্পর্শতে কি যাদু থাকে।এর আগে তো কোনো পুরুষের স্পর্শ তার সহ্য হয়নি।

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৭