নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৯

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৯
লেখিকাঃ Tamanna Islam

শুভ সকাল!! আইরাত তো মনের আনন্দে ঘুম আসছে। হয়তো এখনো সে স্বপ্নের রাজ্যে বসবাস করছে। তাই তো চোখ না খুলেই ঘুমের মাঝেই কেমন মিটমিট করে হেসে চলেছে। কিন্তু “বাড়িতে তোর বিয়ের কথা চলছে” এই কথা টুকু যেন হুট করেই কানে এসে ধাক্কা খেলো। ব্যাস হয়ে গেলো। আইরাত ধরফর করে ঘুম থেকে ওঠে পরে। উঠেই দেখে সবকিছু ঠিকঠাক আছে আর সে বিছানাতে। বুকে হাত দিয়ে একটু দম ছাড়ে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা বাজে ৯ টার কাছাকাছি। আজ শনিবার অফিস ছুটি। আর আব্রাহাম একদিনের জন্য কাজে আউট অফ সিটি গিয়েছে। গতকালই আইরাতকে বলে রেখে গেছে৷ আর ভার্সিটি যেতে মন চাইছে না। আইরাত এগুলোই ভেবে ভেবে বসে ছিলো। তখনই রুমের দরজা তে কড়া নাড়ে। আইরাত গিয়ে খুলে দেয়। রেখে রনিত হাতে কি যেন একটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই রনিতের পেছনে আইরাতের চাচি কলি দাঁড়িয়ে পরে। তারা রুমের ভেতরে যায়। আইরাতের চাচি গিয়েই বিছানার ওপর শাড়ির এক প্রকার দোকান বসিয়ে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কলি;; দেখ তো কোনটা ভালো লাগে?
আইরাত;; এই শাড়ি টাড়ি দিয়ে আমি কি করবো?
কলি;; অনেক কিছু করার আছে৷ এবার জলদি দেখ তো কোনটা ভালো লাগে!
আইরাত;; কি মানে আজ কি কোন ওকেইশন আছে নাকি?
কলি;; তোকে দেখতে আসছে।
কলির কথায় আইরাত বাকা হেসে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়৷
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা।
কলি;; হুম, এবার যেটা ভালো লাগে সেটা পর। পরতে পারবি নাকি আমি পরিয়ে দিবো?
আইরাত;; না আমি পরে নিবো, জানি না কীভাবে পরবো কিন্তু পরে নিবো। তুমি যাও।
কলি;; আচ্ছা।

কলি চলে গেলো কিন্তু রনিত না। কলি চলে যেতেই রনিত তার ৩২ টা দাত বের করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।
আইরাত;; তাকিয়ে আছিস কেন?
রনিত;; হিহিহিহিহিহিহিহি
আইরাত;; হেহেহেহেহেহেহেহে,, মুখ বন্ধ কর গরু।
রনিত;; ?
আইরাত;; শোন যাবি না এখানেই বসে থাক কথা আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
রনিত;; আচ্ছা।
আইরাত রনিত কে বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। রনিত সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি করছে। কিছুক্ষণ পর আইরাত এসে পরে। এসেই রনিত কে আগে ঘুষ হিসেবে এক বক্স চকোলেট দিয়ে দেয়।
রনিত;; কি করতে হবে জলদি বলো!
আইরাত;; আরে ওয়াহহ বুঝে গেছিস।
রনিত;; হুম বলো…

আইরাত রনিত কে সব বলে বুঝিয়ে দিলো। তারপর রনিত রুম থেকে দৌড়ে চলে যায় ডিম আনতে। হ্যাঁ ডিম আনতে। এবার আইরাত নিজের সামনে ফোন অন করে ইউ টিউবে গিয়ে শাড়ি পরার টিউটোরিয়াল ভিডিও অন করে দিলো। ওরা যেভাবে যেভাবে শাড়ি পরছে আইরাত ইচ্ছে করেই ঠিক তার উলটো ভাবে শাড়ি পরছে। বেশকিছুক্ষন পর হুট করেই আবার দরজাতে নক পরে। আইরাতের চাচি চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
কলি;; হলো তোর। দশ টা বাজে ওরা এগারো টার দিকে এসে পরবে।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ প্রায় হয়ে গেছে। তুমি যাও আমি আসছি।

আইরাতের চাচি সেখান থেকে চলে যেতেই আইরাত দ্রুত ফোন টা নিয়ে দিয়া কে ফোন করে। দিয়া হয়তো তখনো ঘুম থেকেই উঠে নি। তিন বার ফোন দেয় আইরাত কিন্তু সে ধরে না। চার বারের সময় দিয়া ফোন ধরে আর ফোন ধরতেই….
আইরাত;; দিয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!!
দিয়ার ঘুমের মা-বোন এক্কেবারে এক হয়ে গেছে এমন চিল্লানিতে।
দিয়া;; কি হইছে ভাই?
আইরাত;; এদিকে আমার হাওয়া টাইট হইয়া যাইতে আছে আর তুই বজ্জাত মাইয়া ঘুমাস। এই তোর ঘুমের খেতা পুড়ি। জলদি আমার বাসায় আয়। দশ মিনিটে আসবি।
দিয়া;; আরে বাবা হয়েছে কি?

আইরাত;; জানু আজকে আমার সুন্দর মুখমণ্ডল খানা দর্শন করিবার জন্য অতি প্রাণপ্রিয় পুত্রপক্ষরা আসিতেছে ?।
দিয়া;; এই তোর সংস্কৃত বুঝি না, বাংলা ক।
আইরাত;; দিয়া আমায় দেখতে আসছে ছেলেরা। ছেলে কেমন, কি করে, নাম কি, কোথায় থাকে। আই জাস্ট ডোন্ট নো। আমি তো ভাবছি যে চাচ্চু পর্যন্ত আমাকে কিছু বললো না৷ আচ্ছা যাই হোক। দেখতে আসছে আসুক। আমিও কম না,, এইখনে কি মামার বাড়ি মোয়া পেয়েছি নাকি। আসতে দে ওদের তারপর বুঝাবো। আর শোন প্লিজ তুই জলদি আয়।
দিয়া;; এইতো উঠে পরেছি। দশ টা মিনিট টাইম দে আমাকে।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। ওদিকে দিয়াও জলদি উঠে পরে। আর প্রায় ২০ মিনিট পর আইরাতের শাড়ি পরা শেষ হয়েছে। আল্লাহ জানেন এটা শাড়ি পরা হয়েছে নাকি অন্য কিছু। কুচি গুলো ঠিক নেই, এলোমেলো, আচল ছোট হয়েছে। বলা যায় শাড়ি কে এক প্রকার ওরনার মতো করে নিজের চারিদিকে শুধু পেচিয়ে গেছে। এই হলো আইরাতের শাড়ি পরা। তবে আইরাত আজ খুশি কেননা দেখতে তাকে তেমন ভালো লাগছে না। আরে ভালো ভাবে পরাই হয় নি তাহলে ভালো দেখতে আর কীভাবে লাগবে। ওদিকে দিয়া হাওয়ার বেগে আইরাতের বাসায় আসে। এসেই দেখে হলরুমে ইকবাল সাহেব বসে আছেন৷ আর আইরাতের চাচি রান্না করছে। দিয়া কে আসতে দেখেই ইকবাল সাহেব বলেন…

ইকবাল;; আরে দিয়া মা যে এসো এসো। কেমন আছো?
দিয়া;; জ্বি চাচ্চু ভালো আছি।
কলি;; আরে দিয়া ভেতরে এসো। অনেক দিন পর আসলে আজ।
দিয়া;; না মানে চাচি এমনেই আর কি।
কলি;; আচ্ছা ভালোই হয়েছে এসেছো। আইরাত একা একা ছিলো। যাও ওর রুমে যাও।
দিয়া;; আচ্ছা।

দিয়া এই বলেই দ্রুত আইরাতের রুমে চলে যায়। ঠাস করে আইরাতের দরজা খুলে ফেলে। খুলেই দেখে আইরাত ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দিয়া মুখ কে ভেটকিয়ে দিয়ে আইরাতের আপাদমস্তক সব দেখে নেয়। গোপাল ভাড় যেমন ধূতি পরে আইরাতের শাড়ি পরাও ঠিক সেইম। আইরাত দিয়া কে দেখে কপাল কুচকায়। দিয়া মুখ চেপে হাসছে। আইরাত দিয়ার সামনে গিয়ে একটা ঘুরান্টি মেরে বলে…..
আইরাত;; এই হারামি ক কেমন দেখা যাচ্ছে আমাকে?

দিয়া;; ঝাক্কাস আফা।
আইরাত;; থাংকু।
দিয়া;; আচ্ছা মানে এভাবে হুট করেই ছেলে দেখেতে কেন আসছে?
আইরাত;; আর বলিস না। কাল রাতে রনিত আমায় বলেছিলো একবার আমি ভেবেছি মজা করছে হয়তো। কিন্তু না আজ সকাল বেলা চাচি এসে বলে এই যে শাড়ি রেডি হো ছেলেরা আসবে৷ আমি তো অবাক।
দিয়া উকি দিয়ে আইরাতের বিছানার দিকে তাকায়। দেখে শুধু শাড়ি আর শাড়ি। কিন্তু এক একটা শাড়ি হেব্বি সুন্দর। দিয়া আইরাতের দিকে তাকায়৷

দিয়া;; আরে ধুর এত্তো সুন্দর সুন্দর আর ভালো শাড়ি গুলো রেখে তুই কি এই ফ্যাকাসে কালারের শাড়ি টা পরেছিস রে!?
আইরাত;; তোর কি মনে হয় আজ আমি ভালো ভাবে চলবো। দাড়া না ছেলেপক্ষ কে কীভাবে বিদায় করতে হয় তা আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে। আর এমন ভাবেই বিদায় করবো না যে আর জীবনে এই বাড়ির আঙিনা পেরোবে না৷
দিয়া;; এই রনিত কোথায় রে?
আইরাত;; দেশি পচা ডিম আনতে পাঠিয়েছি।
দিয়া;; ছিঃ কেন?
আইরাত;; কাজ আছে বাবু কাজ আছে।

আইরাত এর মধ্যেই দিয়া কে যা যা করতে হবে সব A-Z বুঝিয়ে দেয়। দিয়ার হাসতে হাসতে পেটে খিচ ধরে গেছে।
দিয়া;; এই তোর বিয়া ভাংার বুদ্ধি৷ বইন টিস্যু দে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়া পানি বাইর হইয়া গেছে।
আইরাত টিস্যুর বক্স টা দিয়ার মাথায় বারি মেরে দিয়ে দেয়। দিয়া স্বাভাবিক হয়ে বলে ওঠে..
দিয়া;; আচ্ছা এগুলো কি আব্রাহাম স্যার জানেন?

আইরাত;; কি কইলি। ভাই আমি অকাল মৃত্যু মরতে চাই না। আব্রাহাম যদি জানে এগুলো তাহলে প্রথমত ওই ছেলেকে খুন করে সে দুই সেকেন্ডেই গুম করে দিবে যা ওর জন্য কোন ব্যাপারই না। আর তারপর আমাকে যে কি করবে আল্লাহ৷ আমাকে একদম মেরে কেটে টুকরো টুকরো করবে। কিন্তু আমি ওকে জানতেই দিবো না। তার আগেই আমি সব মিটমাট কিরে নিবো।
দিয়া;; হুমমম বুঝলাম।

দিয়া আর আইরাতের কথা বলার মাঝেই রনিত চলে এলো৷ হাতে কমপক্ষে ২০-২২ টা পচা ডিম।
আইরাত;; আহহ ময়না আইছো তুমি।
রনিত;; হ্যাঁ এসেছি। এখন এগুলো ধরো আগে কি বিশ্রী গন্ধ।
দিয়া কোন রকমে গিয়ে ডিম গুলো নেয়।
রনিত;; জানো আপু, দোকানদার কে যখন গিয়ে বলি যে দেশি পচা ডিম দিন। তখন কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আইরাত;; তাকবে না, মানুষ বেছে বেছে ভালো ডিম নিয়ে আসে আর তুই টাকা দিয়ে কিনে বেছে বেছে পচা ডিম গুলোই নিয়ে এসেছিস।
রনিত;; আচ্ছা শুনো আমি বাসায় আসার সময় বাইরে একটা সাদা গাড়ি দেখে এসেছি মনে হয় ওরা এসে গেছে।
দিয়া;; এই ছেলে কে দেখেছিস রনিত?
রনিত;; না তো। তবে হ্যাঁ চকচকে একটা টাক মাথা আমি দেখেছি। কি সুন্দর সূর্যের আলোতে চিকচিক করছিলো টাকম
আইরাত-দিয়া;; ??

কয়েক মিনিট পর নিচ থেকে কিছু মানুষের আওয়াজ কানে এলো। তার মানে ছেলেরা এসে গেছে। তারপর আইরাতের চাচি এসে গেলো। চাচিকে দেখে দিয়া দ্রুত ডিম গুলো লুকিয়ে ফেলে।
কলি;; আইরাত তুই রেডি তো?
আইরাত;; আবার জিগায়,, একদম রেডি।
কলি;; আচ্ছা চল তাহলে।
দিয়া;; আ আব.. চাচি আপনি যান আমি আইরাত কে নিচে নিয়ে আসছি।
কলি;; আচ্ছা।

কলি এই বলে চলে যেতে নিলে আবার থেমে যায়। আইরাতের দিকে ঘুড়ে তাকিয়ে আইরাতকে সম্পূর্ণ একবার দেখে নেয়।
কলি;; কিরে এমন লাগছে কেন তোকে?
আইরাত;; ধুরু কি যে বলো না কি কেমন লাগছে আমাকে। বলো সুন্দর লাগছে দেখতে।
কলি;; হুম জলদি নিচে আয়।
আইরাত;; তা তো আসতেই হবে।
কলি চলে যায়। আইরাত আরো একটু আয়নাতে নিজেকে দেখে নেয়। তারপর শাড়ির আচল টা মাথায় তুলে নিতে ধরলেই দিয়া বলে….

দিয়া;; কিরে চুল গুলো তো কমছেকম আচড়িয়ে নে।
আইরাত;; আহা, চুল এমনই থাকবে এলোমেলো। এর জন্যই তো সেই সকাল থেকে চুল আচড়াই নি।
দিয়া;; ?‍♀️।
রনিত উকি দিয়ে দেখে আসে তিনজন এসেছে। দুইজন মধ্যবয়স্ক আর ঠিক তাদের মাঝেই চিকনা চাকনা করে ডাবল ব্যাটারি ওয়ালা একটা ছেলে বসে আছে। মানে ছেলেটা চশমা পরে আর কি। দিয়া আর আইরাত নিচে চলে যায়। দিয়া আইরাত কে নিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামছে। মানে ফির্মালিটি পালন করা আর কি। হাটতে হাটতে আইরাত ফিসফিস করে দিয়া কে বলে ওঠে….
আইরাত;; আচ্ছা দিয়ু…!
দিয়া;; বল

আইরাত;; আমার না এতো সাতি-সাবিত্রি ওয়ালা লুক ভালো ঠেকছে না। নিজের ফুল ফর্মে এসে পরি?
দিয়া;; এই না না এখন না। কোন্ট্রল বইন কোন্ট্রল।
আইরাত;; এক কাজ করি র‍্যাম্প ওয়ার্ক করা শুরু করে দেই।
দিয়া;; আরে হারামি চুপ কর।
আইরাত;; এএ ভাই সামনে তাকাইয়া দেখ একটু।
আইরাত আর দিয়া সামনে তাকায় দেখে যে ঠিক যেন একটা মরাচিকা এমন ছেলে বসে আছে। আইরাত আর দিয়া ফিক করে হেসে দেয়।
দিয়া;; ওয়াহহ রে জামাই।
আইরাত;; এই চুপ কর হালি। আমি কুমারী মরতেও রাজি বাট এমন জামাই। ভাই আমি মাফও চাই দোয়াও চাই। লাগবো না৷

দিয়া আইরাত কে সবার সামনে নিয়ে যায় তারপর বসিয়ে দেয়৷ আইরাতের কেমন যেন এই শাড়িতে গা কুটকুট করছে। তবুও নিজেকে দমিয়ে রাখছে। আইরাত দিয়া কে ইশারা করতেই প্ল্যান অনুযায়ী দিয়া আর রনিত ছাদে চলে যায়। আর এদিকে শুরু হয় পরিচয়পত্র……
ইকবাল;; এই যে আমার মেয়ে আইরাত। একটাই মেয়ে আমাদের।
উর্মি (ছেলের মা);; বাহ বাহ মেয়ে তো মাশআল্লাহ ভারি সুন্দর দেখতে।

আইরাত তাকিতে দেখে যে যেই লজ্জা এই মূহুর্তে তার পাওয়া উচিত সবার সামনে সেই লজ্জা টা এখন এই ছেলে পাচ্ছে। মনে হয় আইরাতই পাত্র আর তাকে দেখতে আসছে। আইরাতের এখন এগুলো দেখে ঠিক কি রিয়েকশন দেয়া উচিত সে তা ভুলে গেছে। যাই হোক অনেক কথা বার্তা হয়। সবাই কুশল বিনিময় করে। আর আইরাত হু হা ব্যাস এই পর্যন্তই উত্তর। তবে ছেলের বাবা গোমড়া মুখো একজন মানুষ। আর ছেলের মা তো বলতে গেলে আইরাতের ইন্টারভিউ ই নিলো।

আইরাতের একবার বলতে ইচ্ছে করছিলো যে “” কেনো গো আন্টিজ্বি আপনি কি আমাকে কোন সরকারি চাকরি দিবেন নাকি যে এতো প্রশ্ন করে যাচ্ছেন “”। কিন্তু এটা বলতে চেয়েও আইরাত বললো না। আইরাতের চাচি কলি বেশ কিছু মিষ্টি প্লেটে এনে তাদের সামনে দিলো। কিন্তু আইরাত এবার ইচ্ছে করেই নিজে আগে মিষ্টি গুলো খেতে শুরু করলো। অর্থাৎ মিষ্টি গুলো রাখার সাথে সাথে নিজে ঝাপিয়ে পরেছে। নয়তো এই মিষ্টি জিনিস আইরাতের একদমই পছন্দ না। আইরাতের দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মানে এমন অদ্ভুত আচরণ করলে তো তাকিয়ে থাকবেই। সবাই অবাক। তারই মাঝে অন্তু মানে ছেলে আর কি ভেটকাতে ভেটকাতে বলে ওঠে….

অন্তু;; হেহেহে,, আব.. আমার না আসলে পেটুক মেয়েই পছন্দ৷
অন্তুর এমন কথা শুনে আইরাতের মুখের মিষ্টি সব উলটে আসার উপক্রম। শালার যেন খারাপ আর বেয়াদপ ভাবে তাই করতে যাচ্ছিলো কিন্তু উলটো পছন্দ হয়ে গেলো৷ ধের ছাতার মাথা। ওহ হ্যাঁ ছেলের নাম অন্তু মাহমুদ। বাবার বিজন্যাস আছে তা দেখা শোনা করে। বড়ো একজন বোন আছে সে বাইরের দেশে থাকে। তাই আসতে পারে নি। আইরাত বুঝলো যে ভাগ্য ভালো বড়ো ঝামেলা মানে বড়ো বোন আসে নি। নিয়তো ইন্টারভিউ মায়ের সাথে সাথে মেয়েও নিতো। যাক অনেক কথা বলার পরে আইরাত নিজেই বলে ফেলে….

আইরাত;; চাচ্চু!
ইকবাল;; হ্যাঁ মা।
আইরাত;; আব না মানে বলছিলাম কি যে অন্তুর সাথে কি একা একটু কথা বলা যায় না!
উর্মি;; এমা যাবে না কেন। আলবাদ যবে, অবশ্যই যাবে।
কলি;; আইরাত অন্তু কে নিয়ে ওপরে যাও। বাড়ি টা দেখাও। যাও যাও নিয়ে যাও।
আইরাত উঠে চলে গেলো আর তার পেছন পেছন অন্তু ব্যাটারিও। আর ওদিকে বড়োরা সবাই কথা বলতে থাকলো। আইরাত অন্তুকে তার রুমে নিয়ে গেলো। অন্তু শুধু আইরাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসে আর একটু পর পর নিজের চশমা ঠিক করে। আইরাত অন্তু কে নিয়ে করিডরে যায়। এবার আইরাত একটু নিজের রুপে আসে। মাথা থেকে শাড়ির আচল দেয় সরিয়ে।

অন্তু আইরাতের দিকেবতাকায়। আর এবার আইরাত তার চোখ দুটো ইচ্ছে করেই একদম ট্যারা করে ফেলে। মানে অটিস্টিক দের চোখ যেমন ট্যারা থাকে ঠিক তেমন। আইরাতের এমন চাহনি দেখে অন্তু কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে৷ তারপর আইরাত ঠিক করে নেয় তার চোখ গুলো আর মুখে হাত দিয়ে হাসছে।
আইরাত;; তো এতো হাবলা কেন আপনি?
অন্তু;; (হা করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে)
আইরাত;; এই যে হ্যালো। মুখে মশা যাবে মুখ বন্ধ করেন। আর বলেন কি সমস্যা আর কোন মাইয়া পাইলেন না, মানে আমাকেই কেন?

অন্তু;; না মানে আম্মু বললো একটা সুন্দর মেয়ে আছে৷ তার জন্য বিয়ের কথা বার্তা বলতে হবে তাই এসে গেলাম। (চশমা ঠিক করে)
আইরাত;; এহহহহহ আইছে রে সুন্দর মাইয়া আছে, আম্মু বলছে। হাহ ওলে আম্মুর দুলাল লে।
অন্তু;; নিচে এক রকম ওপরে আরেক রকম।

আইরাত;; না না বাচ্চু আরো অনেক রকম আছি দেখাইলে নাকের পানি চোখের পানি এক হবে৷ যেই অবস্থা আপনার।
অন্তু;; আসলে ছোট বেলা থেকেই আমি অনেক ভীতু রকমের। সবাই অনেক ক্ষেপায় আমায়। বন্ধুরাও অনেক ঠাট্টা-তামাশা করেছে। এখনো করে। কিন্তু কি করবো বলুন। আমি এমনই আল্লাহ বানিয়েছেন এমন করে।
আইরাতের কেন জানি খুব বেশিই খারাপ লাগে অন্তুর কথায়। আসলেই এমন করা টা ঠিক না। কারো উইকন্যাস নিয়ে মজা করা, এটা ভালো না।

আইরাত;; এই দুনিয়া তে যে যতো বেশি উইক তাকে মানুষ ততো বেশি আরো নিচে দাবানোর চেষ্টা করে। এখানে এক মানুষ আরেক মানুষের পিঠে পারা দিয়ে ওপরে ওঠে। এখানে এতো হাবলা হতে নেয়। চালাক হতে শিখুন। চালাক না হলে মানুষ যাতে আপনাকে না ঠকায় সেই কায়দা শিখুন। নয়তো অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবার আশংকা থেকেই যাবে।
অন্তু;; আপনি আসলেই অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। (একটু ভেটকি দিয়ে)
অন্তুর এমন হাসি দেখে আইরাত নিজেও হেসে দেয়। তবে এভাবে ভুলে গেলে হবে না। কাজের কাজ করতে হবে। আইরাত গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; আপনাকে আমার কিছু বলার ছিলো!
অন্তু;; জ্বি বলুন না।
আইরাত;; আমার একটা না না বেশ কিছু সমস্যা আছে।
অন্তু;; আমায় বলুন।
আইরাত;; আমার ওপর জ্বিনের আছর আছে।
অন্তু;; কি বলেন ?, হায় আল্লাহ
আইরাত;; হ্যাঁ গো হ্যাঁ, এই ধরেন রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে একা একাই হাটা। ছাদের ওপর নূপুর পরে দৌড়াদৌড়ি করা। আবার ঠাকুমা ঝুলির সেই সবুজ শাকচুন্নির মতো কিটকিটিয়ে হেসে ওঠা। সব ট্যালেন্টই আছে আমার মাঝে।
অন্তু;; ট্যালেন্ট?
আইরাত;; ইয়ে মানে ভৌতিক আচরন আর কি।
অন্তু;; ওঝা কে দেখান নি?

আইরাত;; না দেখেয়েছিলাম তো। কিন্তু পরেরদিন ওঝা সেই মরে গেছে । আরে শুধু তা না তা না নিচে যাকে দেখলেন মানে আমার চাচা উনি তো খাবার খান না।
অন্তু;; হ্যাঁ খাবার খান না। তাহলে বেচে আছেন কীভাবে?
আইরাত;; উনি তো অনেক আগেই মরে গেছেন।
(নায়ুজুবিল্লাহ আল্লাহ মাফ করো,, মনে ননে)
অন্তু;; কি বলেন তাহলে ন ন নিচে যা যা যাকে দে দেখলাম স সে ক কে?
আইরাত;; আত্না।
অন্তু;; আম্মু….

আইরাত;; এই আস্তে, এই রইলো আমার চাচা। আমার চাচির খবর তো জানেনই না। উনি রাত-বিরাতে সাদা কাপড়ে বাইরে ঘুড়েন৷ আর যাকেই দেখেন তাকেই টাস করে ঘাড় মটকে দেন। আমাকেই মটকে দিতো যদি না আমি তাদের মতো না হতাম তো।
অন্তু;; এই কি বলেন৷ মানে কি?
আইরাত;; মানে এই যে আমিও ভূত। ওইযে বললাম জ্বিনের আছড় আছে।
অন্তু;; এখন উপায়?
আইরাত;; কাছে আসেন মিয়া।
অন্তু;; হ্যাঁ??
আইরাত;; আরে একটু এদিক আসেন কানে কানে একটা কথা বলি।
অন্তু;; জ্বি বলেন।

আইরাত;; সোজা কথায় আসি, বিয়ে কইরেন না আমাকে। যত দ্রুত সম্ভব চইলা যান নিজের আম্মু আর ওই টাক কে নিয়ে ধুর মানে আপনার আব্বু কে নিয়ে।নয়তো সবাই মরবে। আর বিয়ে হলে আপনাকে তো আমি বাসর রাতে সবার আগে মারমু।
অন্তু;; আল্লাহ না প্লিজ বইন আমি মাফ চাই প্লিজ। আমি চলে যাবো। বিয়ের নিকুচি করেছে। আমি চলে যাবো।
আইরাত;; আরেক কথা এই বাড়িতে যে আসে তাদের কিন্তু আমরা চিনে রাখি পরে তাদের কেই আগে খুন করি। তো অন্তু বেবি এখন তুমি কি করবে বলো তো………
অন্তু;; আম্মু ?
এই বলেই অন্তু চলে যায় ধরফর করে নিচে। অন্তু কে এভাবে নিচে নামতে দেখে সবাই অবাক। কিন্তু তবুও অন্তু একটু স্বাভাবিক হয়ে তার মা কে বলে ওঠে….

অন্তু;; আম্মু আম্মু এখান থেকে যেতে হবে আম্মু। থাকা যাবেনা। জলদি চলো।
এগুলো বলেই অন্তু তার বাবা মাকে নিয়ে চলে যায় কোন রকমে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু অন্তুর হাল বেগতিক দেখে অন্তুর বাবা মা চলে যান। আর ওদিকে আইরাতও দৌড়ে ছাদে চলে যায়। অন্তুর বাবা মা বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। বাড়ির বাইরে এসে যেই না গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই ছাদের ওপর থেকে শুরু হয় “” মিশন পচা ডিম হামলা “”।

বাপরে বাপ ওপর থেকে ডিম সব তাদের গায়ে পরছে। ডিম গুলো গায়ে লেগেই ফেটে যাচ্ছে আর তাদের ভেতর থেকে কালো কালারের পচা কুসুম বের হচ্ছে। ইশশশ গন্ধ কি বাজে। প্রায় সব ডিম শেষ। এবার দিয়া রনিত আর আইরাত যার যার হাতে লাস্ট একটা করে ডিম নেয়। রনিত আর দিয়া ডিম ঢিল দিয়েছে তা অন্তু আর তার মায়ের গায়ে লেগেছে। কিন্তু আইরাত,, আইরাত তার হাতের সেই লাস্ট ডিম টা দিয়ে মেরেছে এক ঢিল আর তা সোজা গিয়ে লেগেছে অন্তুর বাবার টাক মাথার ওপর।

ইশশশশ সেই চকচকে টাক মাথার ওপর গিয়ে পচা ডিম টা লেগেছে। অন্তুর বাবা প্রথমে বুঝে নি কিন্তু পরে মাথায় হাত দিয়ে দেখে পচা দেশি ডিম। ওপরে ছাদে তাকাতেই আইরাত, দিয়া আর রনিত দ্রুত নিচে ঝুকে পরে। যার ফলে ওপরে কাউকেই দেখা যায় না। রাগে-দুঃখে তারা আইরাতের বাড়ি থেকে চলে আসে। আর অন্যদিকে ছাদে ওরা তিনজন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে হাসছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৮

দিয়া সারাদিন আইরাতের বাসাতেই থাকে৷ আর আইরাত এক জটকায় এইসব শাড়ি টাড়ি খুলে ফ্রেশ হয়ে সুন্দর হয়ে আসে। এই যেন আইরাতের আসল চেহারা দেখা যাচ্ছে। আইরাত, দিয়া আর রনিত রুমে বসে বসে ইচ্ছে মতো চকোলেট খাচ্ছে আর এগুলো বলে হাসছে। তখন কলি আইরাতের রুমে আসে। ভেবেছিলো আইরাতকে কিছু বলবে কিন্তু এসেই দেখে সবাই চকোলেটের মাঝে ডুবে গেছে তাই আর কিছু বলে না চলে যায়। দিয়া বিকেলের দিকে চলে যায় তার বাসায়।

কিন্তু সেই রাতেই হঠাৎ করে কলির মা অর্থাৎ ইকবাল সাহেবের শাশুড়ী অনেক গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। তাই বাধ্য হয়ে তাদের মানে আইরাতের চাচা চাচি আর রনিত কে চলে যেতে হয় সেখানে। তার ঘন্টা খানেক পর দিয়ার ফোন আসে আইরাতের কাছে৷ দিয়া বললো কিছু নোটস আছে তার কাছে ভার্সিটির। তাই আইরাত যেন তার বাসায় এসে পরে। আইরাত ভাবলো বাড়িতেও কেউ নেই। তার চেয়ে ভালো দিয়ার বাড়িতেই চলে যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত বাড়ির সব দরজা জানালা অফ করে চাবি নিয়ে দিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে।

আব্রাহামের সকল কাজ শেষ। বাইরে গিয়েছিলো এর ফলে আইরাতকেও দেখতে পারে নি সে। এখন যেন নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। আইরাতকে লাগবে তার। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর আইরাতের কথা গুলোই মাথায় নিয়ে ঘুরছে। ড্রাইভ করতে করতেই হঠাৎ আব্রাহামের গাড়ির সামনে ঠাস করে ধাক্কা লাগে কিছু একটা । মনে হয় এক্সিডেন্ট। ও গড। আব্রাহাম জীবনে ভূল করেও কখনো এক্সিডেন্ট করে না আর এখন কিনা। আব্রাহাম দ্রুত ব্রেক কষে গাড়ি থামায়। তারপর গাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। বের হতেই দেখে……………………….।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩০