নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৯+৫০+৫১

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৯+৫০+৫১
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আব্রাহাম-আইরাতের দিন গুলো ভালোই কাটলেও গতো দুই দিন যাবত কেমন একটু অগোছালো প্রকৃতির হয়ে গেছে। অর্থাৎ আইরাত কি যেনো নিয়ে বেকার চিন্তা করে। অযথা মনমরা হয়ে বসে থাকবে, কাজে খেয়াল থাকবে না। না জানি কিসে ডুবে থাকে। আব্রাহাম ব্যাপার টা বুঝতে পারে না। আব্রাহাম অফিসে, আজ রনিতের স্কুলে পেরেন্ট”স মিটিং ছিলো। তাই রনিতের সাথে আইরাত স্কুলে গিয়েছিলো। বাড়ি ফিরে আসে তারা। বাড়ি ফিরেই আইরাতের আগে রনিত দৌড়ে চলে যায় ইলার কাছে। ইলা রনিতের স্কুল ব্যাগ আর টাই টা খুলে দেয়। আইরাত তাদের বসতে বলে নিজে ওপরে চলে যায়। কানের ঝুমকো টাতে একটু টান পরেছে তাই তা ঠিক করতে করতে আইরাত ওপরে রুমের ভেতরে চলে গেলো। তবে ভেতরে যেতেই অবাক। আব্রাহাম রুমে বসে আছে।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি? (কপাল কুচকে)
আব্রাহাম;; _________________
আইরাত;; অফিস থেকে এতো জলদি এসে পরেছেন যে? কাজ শেষ নাকি কিছু হয়েছে?
আইরাতের ফোনটা আব্রাহামের কাছে। আব্রাহাম আইরাতকে অন্য আরেকটা ফোন দিয়েছে তবে মেইন টা আব্রাহাম নিজের কাছে রেখেছে। আব্রাহাম আইরাতের ফোনটা আইরাতের দিকে এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; কি করবো ফোন দিয়ে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম;; তোমার ফোনে গত তিনদিন যাবত লাগাতার আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে।
আইরাত;; কিন্তু তা আমি কি করে জানবো। ফোন তো আপনার কাছে ছিলো তাই না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ ছিলো কিন্তু ফোন আমি নিজের সাথে নিয়ে ঘুড়ি না। ড্রয়ারে ছিলো, বাসায় ফাইল ভুলে গেছি তা নিতে এসেছিলাম এসে দেখি ফোন বাজছে। আমি রিসিভ করার আগেই কেটে গেছে।
আইরাত;; আমি জানি না কিছুই।
আব্রাহাম;; রায়হান ছিলো।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; অবশ্যই রায়হান ছিলো। কেননা এই কাজ রায়হান ছাড়া আর কেউ করতেই পারবে না।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ মাথা ঠান্ডা করুন।
আব্রাহাম এসে সোজা আইরাতকে জড়িয়ে ধরে।
আব্রাহাম;; তুমি আমার।
আইরাত;; হ্যাঁ ?।

আব্রাহাম;; আচ্ছা শুনো কোন কারণে, মানে যেকোন কারণেই হোক না কেনো তুমি কি আমায় বিন্দু পরিমানও ঘৃণা করো? মানে আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক বার অনেক কিছু করেছি। হ্যাঁ হার্টও করেছি সেগুলোর জন্য বিন্দু পরিমাণ হলেও কি তুমি আমায় ঘৃণা করো?
আইরাত;; আব্রাহাম আপনি কি বলছেন কি এইসব। মাথা ঠিক আছে আপনার। আমি ঘৃণা না ভালোবাসি আপনাকে।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; হুমমম

আব্রাহাম;; তাহলে তুমি মনমরা হয়ে কেনো থাকো বলতো? কিসের এতো চিন্তা তোমার?
আইরাত;; কিছুর চিন্তাই নেই আমার।
আব্রাহাম;; আমি বাইরে গেলাম।
আইরাত কে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে আব্রাহাম চলে যায়। আইরাত বুঝলো যে আব্রাহামের মুড অফ। আব্রাহাম ইলা আর রনিত কে দেখে চোখে সানগ্লাস টা পরে দ্রুত বাইরে বের হয়ে পরে। আইরাত ছুটে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ায় আর তখনই আব্রাহাম সাই করে চলে গেলো।

আইরাত;; ব্যাটা খবিশ একটা বার তাকালো না পর্যন্ত। দাড়াও চান্দু তোমার মুড ঠিক করতাছি।
আইরাত সোজা চলে গেলো রান্নাঘরে। রান্নাঘরে গিয়েই বিরিয়ানি রান্না করা শুরু করে দিলো। ওইযে ওই মহান বিরিয়ানি যেটা অন্য কেউ মুখেও তুলতে পারে না আর সেটা কিনা আব্রাহাম পুরো শেষ করে ফেলে। আইরাত আগে থেকে এখন ভালো ভাবে রান্না পারলেও সে ইচ্ছে করেই ওমন আজগুবি মার্কা বিরিয়ানি রান্না করছে। সেম সেইদিনের মতো। না তার থেকে বেশি আর না তার থেকে কম। আইরাতকে এভাবে রান্না করতে দেখে ইলা কাশতে কাশতে রান্নাঘরে আসে।

ইলা;; কিরে কি করিস তুই?
আইরাত;; বিরিয়ানি রান্না করি ?‍♀️।
ইলা;; আয় হায় এটা তো সেদিনকার মতো হয়েছে।
আইরাত;; হ্যাঁ ওমন করেই রেধেছি।
ইলা;; কিন্তু কেনো?
আইরাত;; তোমার নাতির মুড অফ। তাই রান্না করে ফেললাম, এখন এটা নিয়ে অফিসে চলে যাবো।
ইলা;; হায়রে। আমি কি কিছু করে দিবো?

আইরাত;; এই না না তুমি বাইরে যাও। আর এছাড়াও আমার রান্না প্রায় শেষ।
ইলা চলে আসে। তার কিছুক্ষন পর আইরাতের দি মোস্ট গজামিল মার্কা খাবার ওরফে বিরিয়ানি রান্না শেষ হয়। আইরাত গাড়ি বের করে সোজা আব্রাহামের অফিসে চলে যায়। আইরাত তো টুটু করে অফিসে এসে পরেছে। আইরাতকে অফিসে দেখে সবাই সালাম দিচ্ছে, হাই-হ্যাল বলছে। আইরাত রোদেলা কে দেখে। দুজনেই হেসে দেয়। আজ কত্তোদিন পর তাদের দেখা হলো।
রোদেলা;; ওই হয় আমাদের বসের বউ।
আইরাত;; হাহাহাহা, কেমন আছো?
রোদেলা;; বেশ ভালো। তুমি?
আইরাত;; হ্যাঁ এইতো।

রোদেলা;; মানে ভাবা যায় আগে বান্ধুবি বললেও এখন কিনা ম্যাম বলে ডাকতে হয়। আমার আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো তোমার আর স্যারের ওপর।
আইরাত;; আরে ধুর কে বলেছে ম্যাম বলে ডাকতে। যা ইচ্ছে ডাকতে পারো।
রোদেলা;; তো হঠাৎ কি মনে করে অফিসে?
আইরাত;; জামাইজানের মুড অফ তাই বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি।
রোদেলা;; আহা ভালুপাসা, যাও যাও কেবিনে যাও।
আইরাত;; আচ্ছা থাকো তাহলে।

আইরাত সোজা আব্রাহামের কেবিনের ভেতরে চলে যায় আর অবশ্যই পারমিশন ছাড়া। তবে আইরাত গিয়েই থেমে পরে। কেননা একজন মেয়ে কলিগ আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুকে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। এটা দেখেই তো আইরাতের মেজাজ ৪৪০°। আইরাতকে এভাবে ধিরিম করে আসতে দেখে আব্রাহাম খুশি হবে না কি করবে বুঝে না। সবাই জানে আব্রাহাম-আইরাত কাপল। তাই আইরাতকে দেখে মেয়েটা দ্রুত আব্রাহামের কেবিন থেকে চলে যায় আইরাতের পাশ কাটিয়ে। মেয়েটার যেতেই আইরাত চোখ ছোট-ছোট করে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; তুমি আবার এখানে আসতে গেলে কেনো। কিছু লাগলে আমায় ফোন করতে আমি গার্ড দের বলে দিয়ে আসতাম।

আইরাত রাগে আস্তে আস্তে পা ফেলে আব্রাহামের টেবিলের সামনে আসে।
আইরাত;; কিছু নিতে না দিতে এসেছি।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; এটা।
আইরাত খাবারের বক্স টা আব্রাহামের টেবিলের ওপর রাখে। বক্সের মুখ খুলে দিতেই গরম গরম ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি সামনে পরে। আব্রাহাম যেনো এখানে গলে গেলো একদম মোমের মতো।
আব্রাহাম;; বিরিয়ানি!! এটা কি আমার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো নাকি বেবিগার্ল। থ্যাংক ইউ সো সো মাচ।
আব্রাহাম হাতে চামচ নিয়ে সোজা খাওয়া শুরু করে দেয়। আর আইরাত টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে সরু চোখে আব্রাহাম কে দেখছে।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? পছন্দ হইছে আমারে?
আইরাত;; পছন্দ দেখেই তো বিয়ে করেছি।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এছাড়াও ভালো ছেলে আজকাল পাওয়াই যায় না। আমি তো ভালো বিয়ে করে ফেলেছো ভালো ছেলে দেখে তাই ভালো করেছো।
আইরাত;; আহা, এটা ভুল ভালো কেউই থাকে না। আর জামাই রা তো একদমই না। মেরে-পিটে ভালো বানিয়ে নিতে হয়।

আব্রাহাম;; আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে এই বিরিয়ানি খাওয়ার পর আমার কপালে মাইরও খাওয়া জুটবে।
আইরাত;; অবশ্যই।
আব্রাহাম;; কিন্তু কেনো? আমি কি করলাম?
আইরাত;; মেয়ে টা কে ছিলো?
আব্রাহাম;; আরে নতুন একটা মেয়ে, কাজ বুঝছিলো না তাই বুঝিয়ে দিলাম।
আইরাত;; ওহহ তাই না। নতুন মেয়ে? তো নতুন তো আমিও ছিলাম কই আমাকে তো কখনো এভাবে বুঝিয়ে দেন নি।
আব্রাহাম;; তোমাকে কি কি করেছি তুমি তা নিজেও ভালো করে জানো। মানে লাইক সিরিয়াসলি তুমি বলছো এই কথা। যেখানে আমি তোমার কেবিন আমার কেবিনে শিফট করে দিয়েছি। তাকিয়ে দেখো তো এখনো তোমার টেবিল টা আমার কেবিনেই রয়েছে। আর তোমাকে তো হাতে-কলমে আর না জানি কতো ভাবে করে বুঝিয়ে দিয়েছি তাই না, তুমি তা জা……………….

আইরাত;; এই না না থাক হয়েছে, আর বলতে হবে না। আপনি গিলেন।
আব্রাহাম খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। নাহ, মেয়েটা ভারি রাগ করেছে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল?
আইরাত;; কি হইছে?
আব্রাহাম;; হুম।
আব্রাহাম খেতে খেতে একটা মাঝারি আকাড়ের বক্স আইরাতের দিকে দিলো।
আইরাত;; এটা কি?
আব্রাহাম;; খুলেই দেখো না।
আইরাত বক্স টা খুলে ফেলে। দেখে প্রায় ১৩ ডজনের মতো চুড়ি আর ৭ সেট ঝুমকো। আইরাত তো এগুলো দেখে খুশিতে পাগল। কিন্তু সে খুব চেষ্টা করছে যেনো হেসে না দেয়, হেসে না দেয়। দাতে দাতে কামড়ে হাসি আটকে রেখে রাগি রাগি একটা ভাব আনতে চাইছে।

আইরাত;; আহাম, আহাম।
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে (খেতে খেতে)
আইরাত;; আব…হুম হুম।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ??
আইরাত;; ????। এত্তো গুলা আলাভু। এত্তো গুলা চুম্মা, লাপ্পিউ লাপ্পিউ লাপ্পিউ। ইইইইইই আল্লাহ এতো সুন্দর সুন্দর চুড়ি & ঝুমকা। এইই জামাইজান থাংকুউউউউ।

আব্রাহাম;; আচ্ছা এগুলো তে এমন কি আছে? মানে এগুলো পেলে মেয়েরা এত্তো খুশি কেনো হয়?
আইরাত;; ওয়েট একটা ডেমো দেই। এই যে ধরুন আপনি রিভলবার, নাইফ, হ্যান্ডগান, ব্লেক ওয়াচ এগুলো পেলে যেমন খুশ হন ঠিক তেমন আমিও। এগুলো মেয়েদের প্রথম ভালোবাসা বুঝলেন। ইন ফ্যাক্ট এমন কোন মেয়েই নেই যে এগুলো পছন্দ করে না। তবে এগুলো ছাড়াও আমার আরেকটা ভালোবাসা আছে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি।
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; হুয়াট?

আইরাত;; আপনার ওই ঘন চাপদাড়ি গুলো, আপনার হাতের ওই ফুলো ফুলো রগ গুলো, আপনার সিল্কি চুলগুলো আর আপনার ভুড়ি। ওহহহ সরি সরি আপনার তো ভুড়িই নেই। আসছে রে বডি ওয়ালা।
আব্রাহাম;; হুম বুঝলাম।
আইরাত গিয়ে আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে। তারপর আব্রাহামের গালে কষে একটা চুমু দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; হুম আমার খাওয়া শেষ। এবার তুমি বাড়ি যাও রাশেদ কে বলে দিচ্ছি আমি।
আইরাত;; আরে না আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি। একাই যেতে পারবো।
আব্রাহাম;; সিওর?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।
আইরাত আব্রাহাম কে বলে আর নিজের গিফট গুলো নিয়ে এসে পরে।

অন্যদিকে রায়হান-প্রীতি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসছে। প্রীতির প্ল্যান মুতাবিক আগে দেশে ফিরতে হবে।
রায়হান;; দেশে কাল সকালের মাঝেই পৌঁছে যাবো।
প্রীতি;; হুমম। তারপর কি?
রায়হান;; আব্রাহামের অফিসে ঝামেলা করতে হবে।
প্রীতি;; কি? খবরদার আব্রাহামের সাথে কিছু করবে না।
রায়হান;; চিল প্রীতি বেবি, কষ্ট করলে তেষ্ট মিলে। আব্রাহামের একটু ক্ষতি না করলে না আইরাত আমার হবে আর না ই আব্রাহাম তোমার।

প্রীতি;; দেশে গিয়ে এরপর কি করবে তাই বলো?
রায়হান;; আব্রাহামের একটা ড্রাইভার আছে যা আমার সাথে রয়েছে। কিন্তু এটা আব্রাহাম জানে না। বেশি না মাত্র কয়েকদিন হবে নতুন ড্রাইভার টা গিয়েছে। তার সাথেই গোলমাল লাগাতে হবে।
প্রীতি;; আব্রাহামের বেশি কিছু যাতে না হয়। নয়তো তোমাকে দেখো আমি কি করি। তোমার আইরাতকেও মেরে ফেলবো আমি।
রায়হান;; আগে এটা বলো যে আব্রাহামের জন্য কি কি করতে পারবে তুমি?
প্রীতি;; মানে?

রায়হান;; মানে এই যে তুমি তো আব্রাহামকে অনেক ভালোবাসো তাই না। তো এখন বলো যে এই ভালোবাসায় তুমি আব্রাহামের জন্য কি কি করতে পারবে?
প্রীতি;; সব, সব করতে পারবো আমি সব। এমনকি জীবন নিতে বা দিতেও আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না।
রায়হান;; না না, জীবন দিতে হবে না। শুধু একটু এক্টিং করতে হবে। আর এছাড়াও তুমি তো তাতে এক্সপার্ট।
প্রীতি;; খুলে বলো।
রায়হান;; তোমাকে আইরাত হতে হবে প্রীতি।
প্রীতি;; কিহহ, কেনো?

রায়হান;; প্রীতি জানো তো ধোকা খুব খারাপ জিনিস আর তা যদি হয় নিজের সবথেকে আপনজনের কাছ থেকে তাহলে সেই মানুষ টা তো জীবন্ত লাশ হয়ে যায়।
প্রীতি;; হ্যাঁ তবে এর সাথে আমার আইরাত হবার কি কানেংশন? আর আমি আইরাতই বা হবো কেনো?
রায়হান;; যদি তুমি আইরাত না হও তাহলে কিছুই হবে না কিচ্ছু না। হুবাহু আইরাত হতে হবে তোমার। তার মতো করে কথা বলতে হবে, তার মতো হাটতে হবে, আর সবচেয়ে বড়ো কথা চেহারা তা পাল্টাতে হবে তোমার তবে তা ক্ষনিকের জন্য।

রায়হান সবকিছু প্রীতি কে বুঝিয়ে দিলো। ধাপে ধাপে সব করতে হবে।
প্রীতি;; মানুষ বলতো খালি মাথা শয়তানের কারখানা। আজ দেখেও নিলাম। তোমাকে।
রায়হান;; সে যাই বলো। তো আইরাত পার্ট 2, বি রেডি।
প্রীতি;; আই এম।
আব্রাহামের আজ অনেক বড়ো একটা ডিল সাইন করতে হবে। ফরেইন থেকে কিছু ক্লাইন্ট আসবে। আর এটা আব্রাহাম + তার কোম্পানির জন্য অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। আব্রাহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পরছে। তার দুচোখ যেনো আইরাতকেই খুঁজে চলেছে কিন্তু আইরাত ঘরে নেই সে নিচে হলরুমে।
আব্রাহাম;; আইরাত! আইরাত!

আব্রাহাম;; আইরাত! আইরাত! আইরাত!
তখনই রুমে একজন স্টাফ আসে হাতে কফি নিয়ে।
স্টাফ;; স্যার আসবো?
আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়?
স্টাফ;; স্যার ম্যাম তো নিচে মানে কাজ করছে আর কি।
আব্রাহাম;; ওকে যে আমি এখানে ডাকছি তার কি? (রেগে)
স্টাফ;; স্যার আ আপনার ক কফি।
আব্রাহাম;; রেখে যাও।

স্টাফ কফি টা রেখে দ্রুত চলে যায় রুম থেকে। এদিকে আইরাত ইলা আর রনিত কে নাস্তা বেরে দিচ্ছে। আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নেমে আসে। আইরাত সেদিকে তাকায়।
আইরাত;; এসেছেন আপনি আস………
আব্রাহাম;; কফিটা আমি তোমার হাতে রুমে নিয়ে যেতে বলেছিলাম।
আইরাত;; হ্যাঁ কিন্তু আমি এখানে একটু কাজ করছিলাম তাই……
আব্রাহাম;; কফি রুমে দিয়ে আসতে বেশি একটা সময় ব্যয় হতো না নিশ্চয়ই।
আইরাত;; আচ্ছা কি হয়েছে? স্টাফ দিয়ে এসেছে না কফি। একই তো হলো।
আব্রাহাম;; না এক না। সবসময় আমার সাথে তোমার ত্যাড়ামি না করলে চলে না তাই না।
আইরাত;; আরে আজব।

আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম গুলো ফেলে হলরুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর আইরাত অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; বুঝলাম না এইটুকু কথায় এতো রাগ করার কি আছে। আমি কি খালি বসে আছি নাকি কাজ করছি তো। একজন দিয়ে এলেই তো হবে, আমার হাতেই কফি খেতে হবে নাকি। রাগ যেনো নাকের ডগায় থাকে, আজাইরা।
ইলা;; তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?
আইরাত;; আরে না দাদি কিছুই না। শুধু কফি টা আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসি নি দেখে এমন করছে।
ইলা;; জানিসই যে ছেলে টার রাগ মাত্রাতিরিক্ত, কাজ আমি করতাম তুই গিয়ে দিয়ে আসতি।
আইরাত;; আরে ছাড়ো তো একটু পরই ভালো হয়ে যাবো।

আব্রাহাম গাড়িতে করে যাচ্ছে তবে অফিসে না। মিটিং টা হবে কোন এক ফাইভ স্টার হোটেলে। কানে এয়ার পড আব্রাহামের সেটা দিয়েই কথা বলছে।
আব্রাহাম;; সবকিছু রেডি আছে?
রাশেদ;; জ্বি স্যার সবই রেডি। শুধু আপনি ওখানে যাবেন। ক্লাইন্ট গুলোও এসে পরেছে।
আব্রাহাম;; ওকে।
রাশেদ;; স্যার আপনি বললে আমিও ওখানে যাই?
আব্রাহাম;; না থাক। তুমি ওইদিক টা সামলাও আর আমি এখানে দেখছি।
রাশেদ;; আচ্ছা স্যার।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। হোটেলে যেতেই আব্রাহামের সময় লাগে প্রায় আধ ঘন্টা। আগে থেকেই সব এরেঞ্জ করা আছে। কেননা সবাই জানে আব্রাহাম আসবে। আব্রাহামের যেতেই কতোগুলো বিদেশি লোক এগিয়ে আসে। তারপর তারা ভেতরে চলে যায়।

অন্যদিকে আজ একদম সকাল বেলাই রায়হান & প্রীতি বাংলাদেশে এসে পরেছে। রায়হান প্রীতি কে নিয়ে নিজের দুই নাম্বার বাড়িতে চলে যায়। সেখানেই বসে আছে। প্রীতি ওয়াইন খাচ্ছিলো তখন হঠাৎ বলে ওঠে….
প্রীতি;; এখন কি করবে?
রায়হান;; এখন না যা করার রাতে করতে হবে।
প্রীতি;; তুমি আসলে করতে কি চাচ্ছো বলতো?
তখনই ভেতরে ২-৩ জন লোক আসে। প্রীতি তাদের দেখে বেশ অবাক হয়।
প্রীতি;; এরা কে?
রায়হান;; এখনই বুঝে যাবে, ওয়েট।
প্রীতি খেয়াল করে দেখে লোক গুলোর হাতে বিভিন্ন ধরনের সারজিক্যাল জাতীয় জিনিস। প্রীতির মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। অবশেষে রায়হান বলে ওঠে….

রায়হান;; বলছিলাম না আইরাত হতে হবে।
প্রীতি;; এখন কি সার্জারি করবো নাকি?
রায়হান;; না। এটা পরতে হবে। আর সম্পূর্ণ কালো কালারের কাপড় পরবে। লাইক হুডি। আইরাত আর তোমার হাইট প্রায় মিলে যায়। মুখে মাস্ক তো পরেই থাকবে।
প্রীতি;; ওয়েট তুমি ফেইক আইরাত হতে বলছো আবার মাস্কও পরতে বলছো কেনো।
রায়হান;; লিসেন মানুষের চামরা দিয়েই অর্থাৎ অনেক সময় মৃত মানুষের চামড়া দিয়ে বা প্লাস্টিক দিয়েই অন্যের মতো হুবাহু মাস্ক বানানো যায়। এখন জমজ তো আর সবাই হয় না তাই না। তাই একই রকম দেখার জন্য এই প্লাস্টিকের মাস্ক গুলো পরা হয়। ফর এক্সাম্পাল আমরা মুভি তে অনেক সময় দেখি যে একটা মানুষের ডাবল রোল করতে হচ্ছে কিন্তু এখানে তো আর সত্যি সত্যি প্লাস্টিক সার্জারি করা হয় না তাই না। তো তখন এই প্লাস্টিকের লুক এ লাইক মাস্ক গুলো ইউজ করা হয়।

(The face mask phenomenon,, a mask which is made by plastic… Reconstructive procedures correct defects on the face or body… The main fact is It’s temporary not permanent… It’s the specialty of this plastic mask… Anyone can give this mask”s structure as his/her wish and he/she can remove this plastic mask at any time..But it take a lots of time to put properly on Someone’s face,, কারো মনে কোন প্রশ্ন থাকলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন)

অতঃপর অনেক সময় ব্যায় করে মাস্ক লাগানো হয়। এতোক্ষন প্রীতিকে ইচ্ছে করেই আয়না দেখানো হয় নি। আর যখন সে দেখলো প্রীতির চোখ গুলো তার কোটর থেকে খুলে আসার উপক্রম। হুবাহু প্রীতিকে আইরাতের মতো লাগছে। রায়হাম প্রীতির পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রীতি আয়নাতে নিজেকে দেখছে আর গালে নাকে মুখে হাত দিয়ে দেখছে। তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

প্রীতি;; লাইক সিরিয়াসলি? মানে আমি আইরাত। কীভাবে কি। এই এই আমি হবো না খুলো এই প্লাস্টিক মুখ থেকে।
রায়হান;; এতো ওভার রিয়েক্ট করার দরকার নেই। তোমার ফেইস টা জাস্ট ওর মতো করা হয়েছে যেনো সব প্ল্যান মুতাবিক হয় আর কিছুই না। পুরো ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে। আর শুনো চেহারা এক হয়ে গেলেও কোন লাভ নেই। তোমার যে কথা বলার স্টাইল বা এমন আচরণ না আব্রাহাম তাতে তোমাকে এক সেকেন্ডই চিনে ফেলবে।

প্রীতি;; এখন কি আমাকে এই আইরাতের মতো বেহেন জ্বি হতে হবে নাকি?
রায়হান;; না শুধু একটা ভদ্রতা আর সভ্যতা শিখতে হবে।
প্রীতি;; হবে যাবে। তারপর কি?
রায়হান;; আগুন লাগাতে হবে?
প্রীতি;; কোথায়?
রায়হান;; এখন আপাতত অন্য কিছুতে লাগাই তারপর না হয় মানুষের জীবনেও লাগিয়ে দিবো।
রায়হানের সাথে আব্রাহামের যেই ড্রাইভারের কানেকশন আছে রায়হান সোজা তাকে ফোন দেয়।

রায়হান;; হ্যালো।
ড্রাইভার;; হ্যালো, স্যার ভালো খবর আছে।
রায়হান;; কি?
ড্রাইভার;; আব্রাহাম স্যার অফিসে নেই। উনি বাইরে কোন কাজে গিয়েছেন।
রায়হান;; বাহ, গুড। তোকে কি কি করতে হবে জানিস তো?
ড্রাইভার;; জ্বি জ্বি আমি জানি।
রায়হান;; তো আর দেরি কিসের লেগে পর।
রায়হান ফোন কেটে দেয়।
রায়হান;; আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।
প্রীতি;; কখন?
রায়হান;; একটা সু সংবাদ আসবে তারপরেই।

এখন সন্ধ্যার সময়। আর এই ড্রাইভার গিয়ে আব্রাহামের অফিসের একদম শেষ কেবিনের দিকে হাটা ধরে। এই কেবিন গুলোতে সাধারণত কোন স্টাফ কাজ করে না। তাই এখানে মানুষ জনও তেমন বেশি একটা নেই। এগুলোই যেনো তার কাজটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। খুব লুকিয়ে চুরিয়ে ড্রাইভার সেই কেবিন গুলোর দিকে চলে যায়। যেহেতু এটা পুরো অফিসের একদম শেষ জায়গা তাই এখানেই কাজ টা করতে হবে। কাজ বলতে আগুন লাগিয়ে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ড্রাইভার টা তার পেছন থেকে একটা বড়ো সড়ো পেট্রোলের বোতল বের করে।

কেবিনের চারিদিকেই ইচ্ছে মতো পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। পুরো কেবিনেই পানির মতো পেট্রোল পরে আছে। ড্রাইভার টা সেই কেবিন থেকে বের হয়ে এসে পরে। কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে শয়তানি এক হাসি দিয়ে নিজের পকেট থেকে লাইটার টা বের করে জ্বালিয়ে ছুড়ে মারে কেবিনের একদম ভেতরে। চোখের পলকে যেনো ফ্লোরে আগুন ধরে গেলো। আগুনের ধারা যেতে যেতে পুরো রুমে দাও দাও করে আগুন ধরে গেলো।

আর এই দিকে সেই ড্রাইভার টা ওখান থেকে দ্রুত পালিয়ে গেলো। রায়হান কে ফোন করে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে যে আব্রাহামের অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আর ভাগ্য ভালো যে কেবিনে যে কটা সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো তাও জ্বলে গেছে। রায়হানের কলিজাতে যেনো এবার শান্তি পরেছে। অফিসে রেড সিংনাল আছে। আগুন লাগলে তা আপনা আপনিই বেজে ওঠে। রেড সিংনালের তীব্র শব্দ অফিসের চারিদিকে বেজে ওঠলে সবাই যেনো ভয়ে পেয়ে যায়। রাশেদ কথা বলছিলো একজন স্টাফের সাথে তখনই অফিসের পিয়ন ছুটে আসে।

পিয়ন;; রাশেদ স্যার, ও রাশেদ স্যার। অফিসে তো আগুন লাইগা গেছে।
রাশেদ;; কি বলছেন কি এইসব?
তখনই বেশ কিছু মানুষের চিল্লা পাল্লার আওয়াজ শোনা যায়। সবাই ছুটে আসছে এইদিকে। অবস্থা বেশি ভালো না বুঝতে পেরে রাশেদ এক ফ্লোরে বাইরের গ্লাস দিয়ে অন্য ফ্লোরে দেখে। সেদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না শুধু কালো ধোঁয়া আর ধোঁয়া। রাশেদ দ্রুত সবাইকে বাইরে বের হয়ে যেতে বলে। সবাই ছুটোছুটি করে বাইরে বের হয়ে এসেছে।

রাশেদ অন্য গার্ড গুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফায়ার সার্ভিস দের ডেকে নিয়ে আসতে বলে। সবাই এই মূহুর্তে অফিসের বাইরে। তার খানিক পর দুটো ফায়ার সার্বিসের গাড়ি আসে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে আগুন নিভানোর। কিন্তু আগুন প্রায় ওই কেবিনের সাথে সাথে বাকি কয়েকটা কেবিনেও ছড়িয়ে পরেছে। রাশেদের চিন্তায় ভালো লাগছে না। এটা হলো কি করে। কেননা অফিসের ভেতরে আগুন লাগবে এমন কোন জিনিস রাখাই হয় নি। আর কেউ স্মোক করলে তো তাকে সোজা বাইরে বের করে দেওয়া হবে। তাহলে হলো কি করে এটা?
রাশেদ দ্রুত আব্রাহাম কে ফোন করে….

আব্রাহাম;; So if we invest thirty seven lakh rupees on this project then we can be successful…..
আব্রাহাম মিটিং এ ছিলো তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। আর স্বাভাবিক ভাবেই আব্রাহাম বেশ বিরক্ত হয়। তাকিয়ে দেখে রাশেদ ফোন করে। আব্রাহাম প্রথমে তা কেটে দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর রাশেদ আবার ফোন দেয়। আব্রাহাম এবার সিরিভ করে…
আব্রাহাম;; Excuse me plz…!
আব্রাহাম দূরে গিয়ে ফোন টা কানে ধরে কিছুটা রাগি ভাবেই বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; রাশেদ তুমি জানো যে আমি মিটিং এ কেনো ফোন ক………
রাশেদ;; স্যার অনেক বড়ো একটা বিপদ হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে গলা এমন কেনো তোমার?
রাশেদ;; স্যার অফিসে আগুন লেগেছে।
আব্রাহাম;; What? কি যা তা বলছো এগুলো?

রাশেদ;; স্যার বিশ্বাস করুন। ওই পেছনের কেবিন গুলোতে আগুন লেগে গেছে। আর আমরা সবাই এখন বাইরে। ফায়ার সার্ভিস এসেছে তনে আগুন নিভছে না। এখন আরো একটা গাড়ি এসেছে তারাও নিভানোর চেষ্টা করছে।
আব্রাহাম;; ওহহ গড, কখন এগুলো হলো আর আমাকে আগে বলো কি কেনো? আর তোমরা সবাই সেইফ আছো তো?
রাশেদ;; স্যার আপনার মিটিং ছিলো সেই জন্যই আমি ফোন দিচ্ছিলাম না আর হ্যাঁ আমরা ঠিক আছি।
আব্রাহাম;; আমি এক্ষুনি আসছি।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।

আব্রাহাম;; Hay guys, i am really very sorry… I have go now immediately and the meeting is postponed..
আব্রাহাম এই বলেই দ্রুত চলে আসে। বাইরে আসতেই দেখে ড্রাইভার আব্দুল দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তার কাছ থেকে চাবি টা নিয়ে নেয়।
আব্দুল;; আব্রাহাম বাবা এতো জলদি মিটিং শেষ হইয়া গেলো?
আব্রাহাম;; চাচা অফিসে আগুন লেগে গেছে। রাশেদ মাত্র ফোন করে বললো আমায়।
আব্দুল;; হায় হায় কও কি।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, এখন আমাকে যেতে হবে।
আব্দুল;; চলো আমি নিয়া যাই।
আব্রাহাম;; না না চাচা শুনো এখানে কিছু কাজ আছে। মানে ভেতরে গেলেই আমার মিটিং এর কিছু ফাইল আসবে বুঝলে সেগুলো নিয়ে তুমি বরং পরে এসে পরো আমি এখন যাই।
আব্দুল;; আইচ্ছা কিন্তু আমরা এখানে যেই রাস্তা দিয়ে আসছি ওই রাস্তা তো বন্ধ। মানে কিছু সমস্যার জন্য বন্ধ করে দিছে।

আব্রাহাম;; আমরা যখন দুপুরের দিকে এখানে আসলাম তখন না ঠিকই ছিলো!!
আব্দুল;; কিন্তু এখন বন্ধ। অফিসে গেলে অন্য রাস্তা দিয়া যাইতে হবো। কিন্তু এই রাস্তা টা একটু পাহাড়ি রাস্তা আর কি।
আব্রাহাম;; আরে সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো এখন তুমি ভেতরে যাও। আমি গেলাম।
আব্দুল;; আইচ্ছা।
আব্রাহাম গাড়িতে উঠে উলটো রাস্তা দিয়ে যেতে ধরলো। আব্রাহামের সেখান থেকে চলে যেতেই যেই ড্রাইভার টা আব্রাহামের অফিসে আগুন লাগিয়েছে সেই আব্দুলের কাছে ফোন করে।
আব্দুল;; হ্যালো
ড্রাইভার;; হ্যাঁ আমি, আব্রাহাম স্যার কোথায়?
আব্দুল;; আব্রাহাম বাবা তো অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। অফিসে নাকি আগুন লাগছে।
ড্রাইভার;; হ্যাঁ, আচ্ছা আমি রাখি তাহলে আর আপনার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আব্দুল;; আচ্ছা।

ওই ড্রাইভার টা ফোন রেখে দিয়েই সোজা রায়হান কে ফোন দেয়।
ড্রাইভার;; স্যার, আব্রাহাম স্যার অফিসে আসার জন্য বেরিয়ে পরেছে। আর ওই আগের রাস্তা কিন্তু বন্ধ তাই সে উলটো রাস্তা দিয়ে আসছে।
রায়হান;; হুমম বুঝলাম।
ড্রাইভার;; স্যার স্যার আমার টাকা টা!
রায়হান;; পেয়ে যাবি।

রায়হান ফোন কেটে দেয়। আইরাত ওরফে প্রীতির দিকে তাকায়।
রায়হান;; কিছুক্ষন পর আমাদের ওহ না তোমার বের হতে হবে।
প্রীতি;; আমি একা কেনো?
রায়হান;; কারণ এই কাজ টা আপাতত তোমার পরের টা আমার।
প্রীতি;; আব্রাহাম কোথায়?
রায়হান;; আব্রাহাম অন্য রাস্তা দিয়ে অফিসে আসছে। তবে আসতে পারবে না।
প্রীতি;; আব্রাহামের…..
রায়হান;; গাড়িতে গরবর করা আছে।
প্রীতি;; মানে কি করেছো তুমি?

রায়হান;; তা তো গেলেই বুঝতে পারবে। এবার চলো। শুনো যে করেই হোক সেই রোডে আমাদের আব্রাহামের আগে পৌঁছাতে হবে। আর আগেই পৌছাবো আমরা কেননা আব্রাহামের গাড়ির ব্রেকে আগে থেকেই কিছুটা তালগোল আমি পাকিয়ে রেখেছি এই ড্রাইভার কে বলে। সো জলদি বের হও। আর শুনো বিহেভ ইউরসেল্ফ। কোন ভাবেই যেনো আব্রাহাম টের না পায় ওকে।
প্রীতি;; বললাম না চিন্তা করতে হবে না সেই ব্যাপারে তোমাকে। আমি সব করতে পারবো।
রায়হান আর প্রীতি বের হয়ে পরে। ১৫-২০ মিনিটের মাথায় তারা দুইজন সেই পাহাড়ি রোডে এসে পরে।
প্রীতি;; আচ্ছা আব্রাহাম এখানে কখন আসবে তা আমরা জানবো কি করে?
রায়হান;; চিন্তা করো না আব্রাহামের গাড়ির পেছনে ট্রান্সমিটার রাখা আছে।

প্রীতি;; হুমম।
রায়হান তার গাড়ির ভেতর থেকে একটা ট্যাব বের করে যাতে রেড লাইট আছে আর সেটাই বলে দেয় যে আব্রাহাম এখন কোথায় আছে।
রায়হান;; প্রীতি গেট রেডি, আব্রাহাম আমাদের খুব কাছে এসে পরেছে। আমি গাড়ি নিয়ে অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো আর তুমি কি করবে জানো তো?
প্রীতি;; হ্যাঁ।
রায়হান;; প্রীতি আই রিপিট আব্রাহাম যেনো টের না পায় যে তুমি আইরাত না প্রীতি ওকে। চেহারা যেহেতু এখন আইরাতের মতো তাই আসলেই আইরাত হবার চেষ্টা করো। আর আমাদের জন্য আরো একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এই অন্ধকার রাস্তা ওকে।
প্রীতি;; ওকে।
রায়হান কিছুটা দূর চলে যায়।

তবে ওদিকে আব্রাহামের চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। আর এই রাস্তা টা অনেক বড়ো। সহজে শেষই হতে চায় না। রাস্তা গুলো অনেক ভাঙা চোরা,, উঁচু নিচু অনেক। রাস্তার অবস্থা একেবারেই বাজে। আব্রাহাম দেখে সামনে বেশ ভাঙা একটু জায়গা আছে। তাই আব্রাহাম ব্রেক কষার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রেক হচ্ছে না কোন ভাবেই। আব্রাহাম বেশ কয়েকবার ট্রাই করে ব্রেক করার কিন্তু কোন ভাবেই হচ্ছে না।

আব্রাহামের কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ব্রেক হচ্ছে না, আর গাড়ি এদিকে সামনে এগিয়েই যাচ্ছে। এক সময় গাড়ি ওই ভাঙা জায়গা টার সাথে বারি খায়। আব্রাহাম গাড়িটা ঘুড়াতে চাইলে গাড়ি ব্রেকলেস হয়ে অন্য দিকে ঘুড়ে যায় আপনা আপনিই। গাড়ি গিয়ে একটা বেশ বড়ো গাছের সাথে জোরে ধাক্কা খায়। ধাক্কা টা এতোই জোরে লেগেছে যে গাড়ির ফ্রোর্ন্ট গ্লাস টা ভেঙে সব কাচ ভেতরে টুকরো টুকরো হয়ে এসে পরেছে। আব্রাহামের হাত কেটে গেছে অনেক টুকু। কপালে চোট পেয়েছে। ব্লাড যাচ্ছে অনেক। কপালের পাশ দিয়ে রক্ত যাচ্ছে।

গাড়ির ঠিক ওপরে গাছের একটা ডাল ভেঙে পরেছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে বের হবার মতো কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে খুব কষ্টে আব্রাহাম গাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। তবে গাড়ি থেকে বের হতেই সে তার মাথা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ মুখ সব কুচকে ফেলে। মাটিতে লুটিয়ে পরে সে। কেমন যেনো মাথা টা ঘোড়াচ্ছে। মাথায় আঘাত পাওয়ার ফল এটা। চোখের সামনে নিজের সবকিছু ঝাপসা ভাবে দেখছে। আব্রাহাম আধো আধো চোখে সামনে তাকায় দেখে কেউ একজন কালো হুডি পরে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে সে আব্রাহামের একদম কাছে এসে পরে। এক হাটু ভাজ করে আব্রাহামের সামনে বসে পরে। আব্রাহাম নিভু নিভু চোখে সামনে তাকায়। কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছুই। কারণ ব্যাক্তি টা সম্পূর্ণ কালো পোশাকে জড়ানো আর মুখেও কালো মাস্ক।

আব্রাহাম;; ক ক্ক ক কে?
প্রীতি;; আমাকে চিনলে না আব্রাহাম। তোমার বেবিগার্ল কে তুমি চিনলে না।
আব্রাহাম;;
প্রীতি;; আমি আব্রাহাম। তোমার আইরাত।
আব্রাহাম;;

প্রীতি;; এখন তোমার মনে হাজার প্রশ্ন আসবে যে আমি এখানে কি করে এলাম। কি করছি? হাহ তুমি কি ভেবেছো যে আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি ভালোবেসে তোমায় বিয়ে করেছি। জীবনেও না। আমি শুধু ঘৃণা করি তোমাকে শুধুই ঘৃণা আর কিচ্ছু না। আমাকে কম জ্বালাও নি তুমি। এমনকি আমার চাচা-চাচি ও তোমার জন্যই মরেছে। কীভাবে জানো, না ই তুমি আমার জীবনে আসতে।

না এতো ঝামেলা হতো না রায়হামের মনে জেদ উঠতো আমাকে নিতে আর না ই আমার চাচা চাচি কে মারতো সে। সবকিছুর মূল তুমি। সব আমার এক্টিং ছিলাও সব। তোমাকে ভালোবাসি বলা, এমনকি বিয়ে করা। সব ঢং ছিলো। তোমাকে আজ মেরে ফেলতেও আমার বাধবে না। আর আজ এই যে তোমার এক্সিডেন্ট হলো না তাও আমিই করিয়েছি। মনে রেখো আমি মরে যাবো তাও তোমার মতো মানুষ কে ভালোবাসবো না। আমি ঘৃণা করি তোমাকে। শুধুই ঘৃণা। আমিই মেরেছি তোমাকে।

আব্রাহাম;; ন ন না ত ত তু তুমি আ আই আইরাত না না। তুমি আ আ আইরাত না।
প্রীতি;; দেখবে আমায়?
প্রীতি তার মুখ থেকে মাস্ক টা খুলে ফেলে। আব্রাহামের ওকে দেখে তার মাথায় যেনো আকাশ টা ভেঙে পরেছে। এই আইরাত। এই আব্রাহামের সেই আইরাত। আইরাত আব্রাহাম কে মেরে ফেলার জন্য এগুলো করেছে। এতোই ঘৃণা করে তার আইরাত তাকে। আব্রাহামের মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। সে আর চোখ খুলে রাখতে পারছে না।
প্রীতি;; মরো।

এই কথা বলেই প্রীতি ঘুড়ে এসে পরে। কিন্তু এদিকে আব্রাহামের যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না এই আইরাত। আইরাত কীভাবে তার সাথে এগুলো করতে পারলো। তাহলে এতোদিন যাই ছিলো সব কি মিথ্যা। প্রীতি চলে যেতে লাগলো। আব্রাহাম উঠে দাড়াতে পারছে না খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোন রকমে আব্রাহাম উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহামের মাথার পেছনে ভারি শক্ত কোন বস্তু দিয়ে তীব্র আঘাত হয়। আব্রাহাম তার দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। রক্ত ঝরছে মাথার পেছন দিয়ে। টাস করে একটা শব্দ এসে প্রীতির কানে লাগে। প্রীতি থেমে যায়। পেছন ঘুড়ে দেখে রায়হান আর তার হাতে একটা ভারি লোহা। সেটা দিয়েই আব্রাহামের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছে। সাথে সাথে আব্রাহাম মাটিতে লুটিয়ে পরে।

কিন্তু প্রীতি তো অবাক। সে দ্রুত রায়হানের কাছে যায়।
প্রীতি;; রায়হান এই কি করলে আব্রাহাম কে মারলে কেনো। এটা আমাদের কথা ছিলো না।
রায়হান;; রিলেক্স বেশি কিছু হয় নি মরে নি।
প্রীতি;; কিন্তু
রায়হান;; চুপ।
রায়হান আব্রাহাম কে তার গাড়িতে তুলে খুব কষ্টে। তারপর গাড়ির দরজা জানালা সব দিক থেকে বন্ধ করে দেয়।
প্রীতি;; তুমি কি করতে যাচ্ছো?
রায়হান;; খুন।

আব্রাহাম যে গাড়ির ভেতরে ছিলো রায়হান সেই গাড়ি টাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। আর গাড়ি তার কন্ট্রোল হারিয়ে পাহাড়ের একদম ওপর থেকে নিচে পরে যায়। এই পাহাড়ের ওপর থেকে চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন জঙ্গল আর জঙ্গল। কেউ একবার এখানে পরলে আর সাধ্য নেই বেচে ফেরার। আর রায়হান সেই পাহাড় থেকেই আব্রাহাম কে ফেলে দিয়েছে। আব্রাহামের গাড়িটা নিচে পরে যায়। বিকট শব্দ তো হয়েছেই তবে গাড়িটা এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর দেখা যায় নি। তবে এইবার প্রীতি যেনো আর থাকতে পারলো না।
প্রীতি;; এই রায়হান ****** কি করলি এটা তুই। আমি বলেছিলাম যে আইরাত তোর আর আব্রাহাম আমার। তুই ফেলে দিলি কেনো ওকে ****।

রায়হান;; চিন্তা করো না তোমার আব্রাহাম যেখানে গিয়েছে এখন তুমিও সেখানেই যাবে বেবি।
এই বলেই রায়হান প্রীতির গলা চেপে ধরে। প্রীতির শ্বাস যেনো আটকে গেলো। চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। রায়হানের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রায়হান প্রীতি কে দেয় এক ধাক্কা যার ফলে প্রীতিও একটা গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে সেই পাহাড়ের খাদে পরে যায়। শেষ দুই কাহীনি।

রায়হান;; কি ভেবেছিলি তুই। আব্রাহাম কে আমি বাচিয়ে রাখবো। বাচিয়ে রাখলে তো সে আইরাতের পিছু ছাড়বেই না যার ফলে আমিও আইরাত কে পাবো না। আর এখন তুইও বেচে থাকলে আমার রাস্তার কাটা হয়ে দাঁড়াবি। তাই তুইও মর।
এই বলেই রায়হান তার গাড়ি নিয়ে দ্রুত সেই জায়গা ত্যাগ করে। আর অন্যদিকে রাশেদ আব্রাহাম কে ফোন করে করে হয়রান কিন্তু আব্রাহামের খোঁজ নেই। আর না পেরে রাশেদ নিজেই ঠিক করে যে সে নিজে গিয়ে আব্রাহামের খোঁজ করবে। কিন্তু আসলে তো ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে গেছে।

পরেরদিন সকাল হয়ে যায় কিন্তু আব্রাহামের কোন খবর নেই। যে হোটেলে আব্রাহাম তার মিটিং এটেন্ড করছিলো রাশেদ গাড়ি নিয়ে সেই হোটেলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আবহাওয়া প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ থাকার কারণে আর যাওয়া হয় নি। সব রাস্তা-ঘাট বন্ধ পরে আছে। যার ফলে রাশেদ যেতে পারে নি। ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছে আব্রাহাম কে, মেসেজ করছে কিন্তু নো রেসপন্স। অফিসের আগুন নিভে গেছে। প্রায় ৪ টা কেবিনের মতো সব জ্বলে পুড়ে গেছে। তবে কেবিন গুলো বেকার আর তাতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না থাকায় বেচে গেছে। রাশেদ অফিসেই আছে, অফিস পুরো পুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সকল স্টাফ দের আসা নিষেধ করে দিয়েছে। সবাই আব্রাহাম কে খুঁজে চলেছে। সবার কথা যার অফিসে আগুন লেগেছিলো তার নিজেই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ দেখলো আব্দুল গাড়ি নিয়ে বাইরে এসে পরেছে। তাকে দেখে রাশেদ দ্রুত ছুটে যায়।

রাশেদ;; আপনি এসেছেন?
আব্দুল;; জ্বি।
রাশেদ;; স্যার কোথায়? স্যার কে এত্তো ফোন দিচ্ছি, মেসেজ, ই-মেইল কোথায় উনি?
আব্দুল;; কি বলছেন এইসব। আব্রাহাম বাবা তো গতকাল রাতেই এখানে আসার জন্য রওনা দিয়েছেন।
রাশেদ;; কি? তাহলে এখনো আসলো না কেনো। আর রাস্তা-ঘাট…..
আব্দুল;; না না রাস্তা-ঘাট কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত বন্ধ ছিলো এখন তো খোলাই।
রাশেদ;; আরে আশ্চর্য তাহলে স্যার কোথায়?
আব্দুল;; তা তো জানি না। আব্রাহাম বাবা আমাকে ফাইল নিয়ে পরে আসতে বলে সে এখানে এসে পরেছিলো। এই দেখুন গাড়ি টাও আলাদা। আমি বাবা কে যেই গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলাম ওটা দিয়ে বাবা একাই এসে পরেছে। তারপর আমি অন্য গাড়ি দিয়ে আসি।
রাশেদ;; তো এভাবে বলা নেই কওয়া নেই কোথায় গেলেন স্যার? অফিসে এতো বড়ো একটা কান্ড হলো তা জেনেও তো এভাবে স্যার কখনোই বসে থাকবেন না।
এবার যেনো চিন্তার পাহাড় মাথায় এসে পরলো।

অন্যদিকে আইরাতের মন-মেজাজ খুব বেশি খারাপ। কাল দুপুরের দিকে বের হয়ে গেলো আব্রাহাম, আইরাতের সাথে কিছুটা কথা কাটাকাটি করেই। রাতে কমপক্ষে আইরাত ১০০ বারের ওপরে ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ মেসেজ দিতে দিতে হাত ব্যাথা ব্যাথা হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম তো বাইরে আইরাতকে ছাড়া কখনোই থাকবে না। আর যদি কোন কারণ বশত থাকতেও হয় তাহলে অন্তত একটা মেসেজ করে হলেও আইরাতকে জানিয়ে দিতো। সারারাত ঘুম নেই আইরাতের চোখে। আইরাত হলরুমে পা গুটিয়ে বসে ছিলো আব্রাহামের অপেক্ষায় কিন্তু সে নেই। সকাল হলে ইলা হলরুমে এসে দেখে আইরাত গালে হাত দিয়ে বসে আছে।

ইলা;; কিরে এভাবে বসে আছিস যে আর এতো সকালে উঠে পরেছিস?
আইরাত;; আব্রাহাম আসে নি।
ইলা;; কি?
আইরাত;; হ্যাঁ
ইলা;; আব্রাহাম তো কখনোই বাইরে থাকে না তাহলে আজ?
আইরাত;; বুঝতে পারছি না। এত্তো ফোন দিচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না।
ইলা;; গেলো কোথায়?
আইরাত;; দাদি শুনো তুমি রনিত কে দেখো আমি অফিসে যাচ্ছি।
ইলা;; একা যাবি?
আইরাত;; হ্যাঁ একাই যাবো আর এখনই যাবো। তুমি থাকো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
আইরাত উঠে শুধু হাতে নিজের ফোনটা নিয়ে চলে যায়। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর আইরাত অফিসে চলে যায়। কিন্তু অফিসের নকশা কিছুটা ভিন্ন। আইরাত কপাল কুচকে ভেতরে যায়। যেতেই দেখে রাশেদ এক দৌড়ের ওপরে আছে।

আইরাত;; রাশেদ!
রাশেদ;; ম্যাম আপনি?
আইরাত;; আব্রাহাম কোথায়?
রাশেদ;; বাড়িতেও নেই উনি?
আইরাত;; বাড়িতেও নেই মানে কি? মিটিং ছিলো ওর রাইট?
রাশেদ;; ম্যাম আসলে গতকাল জানি না কীভাবে আগুন লেগে যায় অফিসের পেছনের কেবিন গুলোতে। সেই সব কেবিনে কাজ হয় না খালি পরে আছে তবে আগুন কি করে লাগলো তাই জানি না।
আইরাত;; আব্রাহাম মিটিং থেকে ফিরে নি। অফিসে আগুন লেগে গেছে এটা জানার পর অবশ্যই সে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

রাশেদ;; স্যার কে কোথাও পাওয়াই যাচ্ছে না। আমি ফোন করেছি কিন্তু নেই। আব্দুল চাচা যে ছিলো উনি পর্যন্ত এসে পরেছেন কিন্তু স্যার নেই।
আইরাত;; কি বলছেন কি এইসব? এখন চিন্তায় আমার কিছু ভালো লাগছে না। মানুষ টা তাহলে কোথায় গেলো?
রাশেদ;; ম্যাম প্লিজ চিন্তা করবেন না। আমি গার্ড দের আর পুলিশ অফিসার দের সেই রাস্তার সবদিকে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা খুজছে।
আইরাত;; আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

আইরাত তারপর অফিসেই থেকে যায়। বাড়িতে ফোন দিয়ে কয়েকবার ইলা আর রনিতের খবর নিয়েছে। কিন্তু সময় সময়ের মতো যেতে থাকে তবুও আব্রাহামের আসার নাম নেই। সময় যতো দ্রুত এগোচ্ছে আইরাতের চিন্তা ততোই যেনো বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশ রা আব্রাহামের ফোন লাস্ট কখন আর কোথায় সুইচ অফ হয়েছিলো তা ট্রেক করে। আর ভাগ্য ক্রমে সেই পাহাড়ি রাস্তায় আব্রাহামের ফোন ট্রেক করে পাওয়া যায়। লাস্ট সেখানেই বন্ধ হয়েছিলো। পুলিশ রা সেখানে যায়। রাস্তায় কিছু একটা থাকলে অবশ্যই পেতো।

এখানে রাতের বেলা যেমন গাড়ি-ঘোড়া কম চলাচল করে দিনের বেলা ঠিক তার দ্বীগুন হারে যাতায়াত করে। তাই রাস্তায় কিছু হলে অবশ্যই কারো না কারো নজরে তো পরতোই। চারিদিকে বেশ গাছ পালা। পুলিশ অফিসার রা খেয়াল করে দেখে যে নিচে গভীর খাদ। কোন ক্রমে এখানে কিছু একটা হয়নি তো। নিচে জঙ্গল টা গভীর হলেও সার্চ করতে হবে। এই জঙ্গলে যাওয়ার অনেক রাস্তাই আছে তবে বেশ উঁচু নিচু। খোঁজ চালানোর জন্য একদল পুলিশ ফোর্স কে সেই জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘন্টা খানেক তালাশি করার পর কেউ তো কোন মানুষ কে খুঁজে পায় নি তবে গাড়ির কিছু অংশাবিশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। গাড়িটা খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেছে। পুলিশ রা দ্রুত রাশেদ কে ফোন করে।

অফিসার;; হ্যালো
রাশেদ;; হ্যালো অফিসার কিছু খোঁজ পেলেন?
অফিসার;; আসলে আমরা তো আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি তেমন কিছুই পাই নি তবে আবার পেয়েছিও। এখানে একটা গাড়ির প্রায় অনেক গুলো টুকরো পেয়েছি। যেনো ওপর থেকে নিচে খাদে এই গাড়ি টাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে এমন।
রাশেদ;; কি আবল-তাবল বলছেন এইসব। আপনারা ভালো করে দেখুন।
অফিসার;; জ্বি আসলে আমি জানি ব্যাপার টা অদ্ভুত কিন্তু যা পেয়েছি তাই বললাম।
রাশেদ;;

অফিসার;; জঙ্গল তো গভীর তাই সেখানে আমাদের গিয়ে খোজাখুজি করা সম্ভব না আরো ভালো ভাবে খোজার জন্য মেশিন আনা হয়েছে। এখন আপনারা যদি এখানে একটু আসতেন তাহলে সুবিধে হবে।
রাশেদ;; জ্বি আসছি।
রাশেদ এই বলেই ফোন কেটে দেয়। রাশেদের মুখ টা কালো দেখে আইরাত বলে ওঠে….
আইরাত;; কি হয়েছে? আব্রাহাম কে পাওয়া গেছে?
রাশেদ;; ম্যাম আমাদের একটু বাইরে যেতে হবে।
আইরাত;; চলো।

রাশেদ আর আইরাত গাড়িতে বসে পরলো। পথ টা দূরে তাই যেতে যেতে প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছিই লেগে গেলো। রাশেদ কে গাড়ি একটা পাহাড়ি রাস্তায় থামাতে দেখে আইরাত কপাল কুচকে তার দিকে তাকায়।
আইরাত;; আমরা এখানে কেনো এলাম?
রাশেদ;; ম্যাম এখানেই স্যারের ফোন লাস্ট সুইচ অফ হয়েছিলো আর এখানেই সব পুলিশ অফিসার রা আছে।
আইরাত;; মানে কি এখানে ফোন বন্ধ হয়েছিলো মানে। আর পুলিশ রা কেনো?
রাশেদ;; ম্যাম চলুন।

আইরাত দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে। বাইরে এসেও দেখে প্রায় অনেক পুলিশ। তারা বেশ বড়ো সড়ো সার্চ মেশিন দিয়ে খাদের ভেতরে খোঁজার চেষ্টা করছে। আইরাতের মনের ভেতরে এগুলো দেখে ১০১ টা হাতুড়ি পেটাতে শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ অফিসার রাশেদ কে দেখে এগিয়ে যায়।
রাশেদ;; কি হচ্ছে এইসব?
অফিসার;; সরি টু সে মিস্টার রাশেদ তবে খবর বেশি ভালো না।
রাশেদ;; কি হয়েছে?

অফিসার কিছু বলতে যাবে তার আগেই খাদ থেকে মেশিন দিয়ে একটা আধা ভাঙা গাড়ি তোলা হয়। গাড়িটা দেখেই আইরাতের শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে। এটা আব্রাহামের গাড়ি।
আইরাত;; অফিসার কি বলতে চাচ্ছেন?
অফিসার;; ম্যাম আসলে সরি। কিন্তু আব্রাহাম স্যারের এক্সিডেন্ট হয়েছে অনেক বাজে ভাবে। কেননা এটা উনারই গাড়ি। আব্রাহাম স্যারের ভাঙা ফোনটাও আমরা পেয়েছি। (আইরাতের দিকে একটা ফোন এগিয়ে দিয়ে)
আর এখানে যেই বড়ো খাদ মনে হয় না কেউ একবার পরলে বেচে ফিরতে পারবে।
আইরাত;; মুখ বন্ধ করুন। এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। আব্রাহাম করবে এক্সিডেন্ট, জীবনেও না। ওর ড্রাইভিং একদম নিখুঁত। এক্সিডেন্ট হবার প্রশ্নই আসে না আর সেখানে কিনা এতো বড়ো………

অফিসার;; কিছু স্যাম্পাল পাওয়া গেছে। আসুন।
রাশেদ আর আইরাত অফিসারের সাথে চলে যায়। অফিসার আর কিছু না বলেই একটা ঘড়ি, সানগ্লাস, আর একটা ওয়ালেটও পেয়েছে যাতে আইরাতের ছবি ছিলো। বাকি গুলো যেমন তেমন। আইরাত যখন ওয়ালেট টা দেখলো আর তার ভেতরে নিজের ছবি তখন যেনো আইরাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। এগুলো পুলিশরা অনেক খোঁজাখুজির পর পেয়েছে। আইরাতের হাত কাপছে। এটা কি আদৌ সম্ভব? আব্রাহামের এক্সিডেন্ট। কীভাবে হলো? কি থেকে কি হচ্ছে।
অফিসার;; ম্যাম আমাদের মাফ করবেন সেই সকাল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু খাদে কোন মানুষ তো দূর মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। আর এখানে বন্য প্রাণি রাও রয়েছে। আব্রাহাম স্যারের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সন্ধ্যারাতে আর পুরো রাত পেরিয়ে এখন এতো সময় হয়ে গেছে।

আইরাত;; এখন বলতে কি চাইছেন আপনারা?
অফিসার;; ম্যাম মনে হয় স্যার মারা…..
আইরাত;; চুপ করুন। ক ক কি য যাতা ব বলে য যাচ্ছেন। ভ ভুলেও এমন ক কথা ম মুখে আনবেন না। আ আ আপনার সা সাহস হয় কি করে এমন ব বলার। আব্রাহামের কিছুই হয় নি। আপনারা একদিন খুজেই এমন বলছেন। কি ফাউল পুলিশ অফিসার আপনারা। খুজুন আব্রাহাম কে। খুজতে থাকুন। আব্রাহামের কিছুই হয় নি। এক্সিডেন্ট মানুষের হয় না। হয় ই তো তাই বলে কি সে…….. আরো খুজুন। কিছুই হয় নি আব্রাহামের।

রাশেদ;; ম্যাম প্লিজ একটু শান্ত হন। আপনি বাড়ি যান।
আইরাত;; না আমি আমার আব্রাহাম কে ছাড়া বাড়ি যাবো না। আমার আব্রাহাম কে নিয়েই যাবো। ওকে চাই আমার। আর আপনি (অফিসার) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ কি দেখছেন যান খুজুন।

আইরাত রেগে আছে অনেক। মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তার। পুলিশ অফিসার অবস্থা বুঝতে পেরে চলে গেলেন। আইরাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তাই সে হাটা দিলো। এসে গাড়ির ভেতরে বসে পরে। পাশে থাকা পানির বোতল টা নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলে। হাত পা রীতিমতো কাপছে। বারবার আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। যা ভাবছে সে তা যেনো না হয় কোন ভাবেই যেনো না হয়। এমন কিছু হবার আগে আইরাত মরে যাক কিন্তু প্লিজ এমন কিছু যাতে না হয়।
সেইদিন টা এভাবেই কেটে যায়। আইরাত তো আসতেই চাইছিলো না সেখান থেকে কিন্তু রাশেদ আর বাকিরা অনেক বুঝিয়ে বাড়ি পাঠায় তাকে। পুলিশ অফিসার রা নিজেদের ঘুম হারাম করে আব্রাহাম কে খুজছে। আইরাত বাড়ি চলে এলে ইলা তাকে ঝাপটে ধরে।

ইলা;; কিরে কোথায় ছিলি তুই? আর একা এসেছিস কেনো আব্রাহাম, আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;;
ইলা;; কিরে কিছু বল
আইরাত;; আব্র আব আব্রাহামের এ এক্সিডেন্ট হ হয়েছে।
ইলা;; কি?
আইরাত;; অফিসের পেছন সাইটে আগুন লেগেছিলো। রাশেদ আব্রাহাম কে ফোন করে আসতে বলেছিলো আব্রাহাম আর আসে নি। আজ যখন অফিসে যাই তখন রাশেদ আমাকে এক পাহাড়ি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেক পুলিশ অফিসার রা ছিলো। আব্রাহাম গতকাল রাতে সেখান দিয়েই আসছিলো তবে তার এক্সিডেন্ট হয় আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার গাড়িটা পাওয়া গেছে যা ভেঙে একাকার। ফোন, ওয়াচ আর ওয়ালেট পাওয়া গেছে যাতে আমার ছবিও ছিলো।

আইরাত মূর্তির মতো করে কথা গুলো বলে গেলো। আর ইলা আইরাতের কথা শুনে সোফার ওপর ধপ করে বসে পরলো। ইলার আহাজারি শুরু করে গেছে। আব্রাহামের সাথে এমন হয়েছে তা যেনো কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। কিন্তু যা যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে এটাই স্পষ্ট যে আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়েছে আর সে খাদে পরে গেছে। কেননা যাই পাওয়া গেছে সেগুলো সবকিছু খাদ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

আইরাত কাউকে কিছু না বলেই সোজা নিজের রুমে চলে যায়। চোখে পানি গুলো যেনো চিকচিক করছে। আইরাত রুমের ভেতরে গিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পরে। দুইহাত দিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো চেপে ধরে। জোরে জোরে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আব্রাহামের সাথে এটা হতেই পারে না। কীভাবে হলো? আইরাতের এই প্রশ্ন টাই যেনো মাথায় আসছে। তখনই আইরাতের মাথায় রায়হানের কথা টাও আসে। রায়হান কিছু করে বসে নি তো আবার। কিন্তু রায়হান তো লন্ডনে সে সেখান থেকে কীভাবে কি করবে ও।

আইরাত তো আর এইটা জানে না যে রায়হান দেশে ফিরেছে তাই সে তায়হানের কথা টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আর এছাড়াও এখন এই মূহুর্তে তার মাথায় আব্রাহাম ছাড়া আর কারো কথা আসছেও না। আইরাত হাউমাউ করে কেদে দেয়। দিনটা এভাবেই যায়। আইরাত সারাদিনে এক ফোটা পানি পর্যন্ত মুখে দেয় নি। ইলার শরীর ভালো না তাই বাধ্য হয়েই আইরাত ইলা কে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে। আইরাত রনিতকে নিজের কোলে নিয়ে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।

ঘুমিয়ে পরেছে ও, ছেলেটাও আজ আব্রাহাম কে না দেখতে পেরে বেশ অনেক বার তার কথা জিজ্ঞেস করেছে। আইরাত কোন রকমে বুঝিয়ে রেখেছে। এক ফোটা ঘুম নেই আইরাতের চোখে। আব্রাহামের কথা গুলো কানে বাজছে। চেহারা টা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। রাত যখন প্রায় তিন টার কাছাকাছি তখন হঠাৎ আইরাতের ফোনে ফোন আসে। যদি আব্রাহামের কোন খবর হয় তাই আইরাত দ্রুত ফোন টা রিসিভ করে। আর আইরাত যা শুনে তাতে আইরাতের আত্নার পানি পুরো শুকিয়ে গেছে। হাত থেকে ফোনটা তার আপনা আপনিই নিচে পরে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৫২+৫৩+৫৪