নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৫২+৫৩+৫৪

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৫২+৫৩+৫৪
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত আর রাশেদ কে পুলিশ অফিসার রা দ্রুত ডেকেছে। সেখানে নাকি আব্রাহামের কি কি পাওয়া গেছে। আব্রাহামের বাকি সব জিনিস পাওয়া গেলেও আব্রাহাম কে পাওয়া যায় নি। এখন বাজছে রাত ৩ঃ৪০ মিনিট। পুলিশ কল করেছিলো আইরাতকে। কল করে এটাই বলেছে যে আব্রাহাম কে পাওয়া যায় নি তবে তার কিছু জিনিস পাওয়া গেছে খাদ থেকে। এটা শুনেই তো আইরাতের মাথায় এক প্রকার বাজ ভেঙে পরেছে। এখন এতো রাতে ইলা আর রনিত কে ছেড়ে যেতেও পারছে না। কি আর করার সকাল হওয়া অব্দি সেভাবেই বসে থাকে।

নিজের কান কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। আব্রাহামের সাথে এটা কি করে হলো। আর সব কিছু ভালোই তো ছিলো হঠাৎ করেই সব কেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। এগুলো চিন্তায় যেনো মাথায় ভর করেছে এখন আইরাতের। বুকের ভেতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। আইরাত অপলক হীন ভাবে তাকিয়ে ছিলো টুপ করেই এক ফোটা নোনাজল গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে। এগুলো কে মুছে ফেলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আইরাতের নেই। আস্তে আস্তে সকাল হয়ে যায়,, সূর্য তার আলো ছড়িয়ে পূর্ব আকাশে উঠে পরেছে। সারাটা রাত এভাবে এক ভাবেই বসে কাটিয়ে দিয়েছে আইরাত। একসময় ইলা ঘুম থেকে ওঠে পরে নামাজ শেষ করে হলরুমে আসে। এসে দেখে আইরাত রনিতকে নিয়ে বসে আছে। সে এখনো ঘুম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইলা;; আইরাত, কি হয়েছে? মুখ টা এমন শুকিয়ে আছে কেনো?
আইরাত;; ক ক কিছু না দ দাদি। তুমি রনিতকে দেখো আমি একটু আসছি বাইরে থেকে।
ইলা;; আব্রাহাম কে পাওয়া গেছে তাই না?
আইরাত;; আমি আসি।
আইরাত দ্রুত ইলার সামনে থেকে চলে যায়। খাওয়া-ঘুম যেনো সব লাটে উঠেছে। আইরাত যেই না বাড়ির বাইরে বের হতে যাবে তখনই দেখে রাশেদ আসছে।
রাশেদ;; ম্যাম চলুন আপনাকে সাথে করে নিয়ে যাই।
আইরাত;; চলুন।

আইরাত আর রাশেদ চলে যায়। রাস্তা যতো এগোচ্ছে ভয় যেনো ততোই মন কে গ্রাস করে যাচ্ছে। যেতে যেতে প্রায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। একসময় গাড়ি থামে সেই অভিশপ্ত পাহাড়ি রাস্তাতে। আইরাত নেমে পরে দ্রুত চলে যায়। পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসে। উনি ওভাবে চুপ করে আইরাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে….
অফিসার;;
আইরাত;; এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো। আমার হাসবেন্ড কোথায়?
অফিসার;; স সর, সরি ম্যাম আসলে আমরা গত ২-৩ দিন এই এলাকা আর খাদ টা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু আব্রাহাম স্যার কে পাওয়া যায় নি। তবে….
আইরাত;; তবে কি?
অফিসার;; স্যারের দুটো জিনিস পাওয়া গেছে যা থেকে বুঝা যায় যে স্যারের এক্সিডেন্ট….
আইরাত;; কি কি পাওয়া গেছে?

অফিসার গিয়ে একটা নেভি ব্লু কালারের ধুলায় মাখামাখি একটা জেকেট নিয়ে আসে। সেটা একটা পেকেটে জড়ানো রয়েছে যেনো ফিংগার প্রিন্ট না লাগে তাই। আইরাত পেকেট টা নিয়ে নিলো। কারো কোন কথা না শুনে পেকেট টা একদম ছিড়ে ফেলে। ধুলো দিয়ে জেকেট টা শেষ। আইরাত পাগলের মতো করে জেকেট টা হাতে নিয়ে দেখছে। শ্বাস ঘন হয়ে গেছে, জোরে জোরে দম নিচ্ছে আর ইতোমধ্যে চোখে পানি গুলো জড়ো হয়ে চিকচিক করছে। আইরাত জেকেট টা মেলে দিয়ে সামনে দেখে। সেখানে সুন্দর ডিজাইন করা “A” লিখা আছে। কেননা A দিয়েই আব্রাহাম আইরাতের নাম শুরু। আর আইরাত বেশ ভালোই জানে যে আব্রাহাম কেমন টাইপের কাপড় পরে। আর আব্রাহামের প্রত্যেকটা জেকেটে A মার্ক করা আছে। আইরাতের এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে যে না এই আব্রাহাম না, এটা আব্রাহামের না। তখনই পুলিশ অফিসার আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….

অফিসার;; ম্যাম, আমরা আরো একটা জিনিস খুঁজে পেয়েছি। স্যারের গাড়ির লাইসেন্স।
আইরাত;;
অফিসার;; এখানে স্পষ্ট লিখা “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী”। ইন ফ্যাক্ট স্যারের ছবি পর্যন্ত রয়েছে। আর এটা ছিলো স্যারের ৯ নাম্বার গাড়ি।
আইরাত অফিসারের কথা শুনে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। পা গুলো কাপছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি আর নিজের মাঝে নেই। আইরাত অফিসারের কাছ থেকে লাইসেন্স টা নিয়ে এসে পরে।
আইরাত;; রাশেদ?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম!
আইরাত;; আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম অবশ্যই। চলুন।

আইরাত গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। তার পেছনে রাশেদ। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আইরাতের হাতে আব্রাহামের জেকেট টা। নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে রেখেছে। আব্রাহামের সাথে যে এগুলো হবে তা রাশেদ নিজেও কখনো কল্পনা করে নি। গাড়ির সামনের গ্লাসে তাকিয়ে দেখে পেছনের সীটে আইরাত জেকেট টা নিয়ে বসে আছে। এটা দেখে রাশেদের চোখ থেকেও টুপ করে পানি গড়িয়ে পরে। সাথে সাথে সে তা মুছে ফেলে। বাড়ির সামনে এসে গেলে আইরাত কিছু না বলেই আস্তে আস্তে হেটে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়৷ রাশেদও কিছু বলে না। সিচুয়েশন বুঝতে পারছে সে তাই চলে যায়। আইরাত যখন বাড়িতে ঢুকে তখন ইলা রনিত কে খাওয়াচ্ছিলো। আইরাতের এই হাল দেখে ইলা কপাল কুচকায়। আইরাত কোন দিকে তাকায় না, একমনে সিড়ি বেয়ে ওপরের দিকে যেতে থাকে। সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় আইরাত পরে যেতে ধরলে ইলা উঠে আসে কিন্তু তার আগেই আইরাত নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আইরাত নিজের রুমে গিয়ে দরজা ট লাগিয়ে দেয়।

রনিত;; দাদুমনি!!
ইলা;; হ্যাঁ
রনিত;; আপুর কি হয়েছে?
ইলা;; কিছু না সোনা। তুই খা আমি আসছি।
রনিত;; আচ্ছা।
আইরাত রুমে গিয়েই হাটু গেড়ে ধপ করে নিচে বসে পরে। আইরাত নিজের চোখ ঘুড়িয়ে রুমের চারিদিকে তাকায়। এমন কোন জায়গা নেই যাতে আব্রাহামের ছবি নেই। আব্রাহামের একার ছবি আবার তার আইরাতের সাথে। আইরাত এগুলো দেখছে আর ঘন ঘন দম ছাড়ছে। সে নিজের হাতের দিকে তাকায়। আব্রাহামের জেকেট টা দুই হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে আকড়ে ধরে চিল্লিয়ে ওঠে…..

আইরাত;; আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম
ইলা ততক্ষণে আইরাতের রুমের কাছে এসে পরেছে। আইরাতের চিৎকার শুনে ইলা দ্রুত রুমে যায় গিয়ে দেখে আইরাত শেষ, একদম নাজেহাল অবস্থা তার।
ইলা;; আইরাত কি হয়েছে? এমন করছিস কেনো? কি হয়েছে?
আইরাত;; দা দা দাদি আমার, আমার আব্রাহাম। ওরা বলে যে আব্রাহাম নাকি নে নেই। ওকে, ওকে আর খুঁজে পাওয়া যা যায় না। ওরা সব সব মিথ্যা বলছে তাই না। আমি আম জানি তো যে ওরা ওরা সব মিথ্যা বলছে। আমার আব্রাহামের কি কিছুই হয় নি। আব্রাহাম ওমন না, ও ওর সাথে কী করে এমন হবে বলো।

সব শুনে ইলা নিজেও নিচে বসে পরে। সর্বপ্রথম নিজের স্বামী কে হারিয়েছে মহিলাটা, তারপর নিজের মেয়ে নামক ছেলের বউ কে, তারপর নিজের ছেলেকে। আর বাচার একমাত্র আশা এই আব্রাহাম-আইরাত। এখন যদি নিজের নাতি কেও হারিয়ে ফেলে। এর থেকে মরন অনেক শ্রেয়। ইলা নিজের আচলে মুখ গুজে কেদে দেয়।
আইরাত;; আমি এখন, এখন কি করবো আমি। আমি মরে যাই হ্যাঁ। হ্যাঁ আমি মরে যাই।৷ এভাবে জীবন্ত লাশ হওয়ার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো। এতো কিছু আমি সহ্য করতে পারবো না।

অন্তত আমার আব্রাহামের লাশ টাকেও তারা পায় নি। আমি দেখবো না ওকে। ওইযে সেইদিন বের হয়ে গেলো আমি তো দেখিও নি ওকে। কেনো সবাই মিথ্যা বলছে আমাকে। আমি মরে যাবো আমি সত্যি মরে যাবো। এছাড়া উপায় নেই আমার কাছে। আমি শেষ, আমি বরবাদ হয়ে গেছি। আমার কাউকে লাগবে না, ওওও দাদি আমার আব্রাহাম কে এনে দাও না। আমার কাউকে লাগবে না সত্যি আমার আর কাউকে লাগবে না। একটা বার শুধু একটা বার ওকে এনে দাও। আমি চাচা-চাচি কে হারিয়েছি ওকে হারাতে পারবো না। আমি ওকে ছাড়া বাঁঁচবো না। আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো। (হাউমাউ করে কেদে)

আইরাত এগুলো বিলাপ পেরে বলছিলো হঠাৎ আইরাতের প্রচন্ড কাশি শুরু হয়ে যায়। ইলা আইরাতকে ধরে। কিন্তু ততক্ষনে আইরাত অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। ইলা তড়িঘড়ি করে আইরাতকে ধরে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। কেমন মলিন হয়ে গেছে সব। একদম পাগল পাগল হয়ে গেছে আইরাত। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক, চোখের নিচে কালি পরে গেছে। ইলার যেনো এবার আকাশ-পাতাল ভেঙে কান্না আসছে। ইলা দ্রুত আইরাতের রুম থেকে বের হয়ে পরে।

রায়হান নিজের ঘরে বসে বসে ড্রিং করছে। মুখে ঝুলছে বাকা হাসি। তার রাস্তা এখন পরিষ্কার একদম। কোন কাটাই নেই, কোন বাধাই নেই। সে এখন আইরাতকে নিজের করে পাবে।
রায়হান;; যেভাবে আব্রাহাম কে মেরে ফেলেছি তাতে মনে হয় না যে পাওয়া যাবে। আর এতোদিনে তো মনে হয় ওর লাশ পচেও গিয়েছে। না রইলো আব্রাহাম আর না রইলো ওই প্রীতি। এখন আইরাত আমার। আমি খুব দ্রুত ওর কাছে চলে যাবো। তবে যতদিন রাশেদ আছে ততদিন আমি আব্রাহামের সম্পত্তিতে ভাগ জমাতে পারবো না। তাহলে কি এবার রাশেদ কেও মেরে ফেলতে হবে আমার? না থাক। এতো টাও নির্দয় না হই। আমার কাছে যা আছে তাতেই আমার সারাজীবন চলে যাবে। থাক ওরা, আমি শুধু আমার আইরাতকে পেলেই হয়েছে।

এই কথা বলেই রায়হাম ঘটঘট করে এলকোহল খেয়ে ফেলে।
সেইদিনকার পর থেকে আরো কেটে যায় চারদিন। পুলিশরা এর মাঝেও কম খোজাখুজি করে নি। কিন্তু ফলাফল শুন্য। আব্রাহাম নেই। এমনকি কোন রকম কোন মৃত লাশও পাওয়া যায় নি। সব মিলিয়ে পুরো দশ দিন টানা সেই খাদে আর এলাকাতে খুঁজে গিয়েছে কিন্তু কোন কিছুই হয়নি। অবশেষে পুলিশরা আব্রাহাম কে মৃত ঘোষণা করে দেয়। যেইদিন পুলিশরা আব্রাহাম কে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছিলো সেইদিন যেনো আইরাত আর আইরাতের মাঝে ছিলো না। একজন মরে গেছে আরেকজন জীবন-মরণের মাঝে ঝুলছে। বাড়ির এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আব্রাহামের চিহ্ন নেই।

সব জায়গায় আব্রাহাম আছে। এগুলো যেনো আইরাতকে কুড়ে কুড়ে খায়। আইরাত তো এখন পুরো পাগল। খায় না, ঘুমায় না মুখে শুধু একই কথা “” আমার আব্রাহাম কে আমার কাছে এনে দাও””। এখনো তার ব্যতিক্রম নেই। রাত গভীর হয়েছে এখন। আইরাত জানালার কাছে বসে আছে। বাইরে থেকে বাতাস এসে হালকাভাবে গায়ে লাগছে। ওইযে যেদিন পুলিশরা আইরাতকে আব্রাহামের ওই ধুলো মাখা জেকেট টা দিয়েছিলো সেটা আইরাত এখনো তার কাছেই রেখে দিয়েছে। আব্রাহাম আর নেই, আব্রাহাম মারা গেছে।

এই কথা টা মানতে আইরাতের যে কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা কেবল আর কেবল সেই জানে। আইরাতের সবচেয়ে বড়ো দুঃখ হচ্ছে এটা যে সে কিনা এতোই পোড়াকপালি যে শেষ অব্দি সে আব্রাহামের লাশ টাকেও পায় নি। আর ভাবতে পারছে না এগুলো আইরাত। নিজের দুই হাতে মাথার চুল গুলো খামছে ধরে। আর থাকতে না পেরে তার পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ব্যাস টা তুলে ছুড়ে ফেলে। আশে পাশে যতো কাচের জিনিস ছিলো সব আইরাত ছুড়ে ফেলছে। প্রচন্ড রকমের ভাংচুর করছে এক প্রকার। নিজের দুটো হাতই কেটে শেষ করে ফেলেছে একদম। অঝোড়ে কান্না করে যাচ্ছে। পাশে থাকা আব্রাহামের ছবিটা হাতে নিয়ে নিজের ওরনা দিয়ে মুছছে আর কান্না করছে।

আইরাত;; আমি পারবো না থাকতে আপনাকে ছাড়া। আমি মরে গেছি। আমি সত্যি মরে গেছি সেইদিনই যেদিন ওরা বলেছে আপনি আর নেই। আপনি খুব স্বার্থপর। নিজে চলে গেলেন আমাকে একা ফেলে রেখে একটা বার একটাবারও আমার কথা ভাবলেন না। আমি আপনাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো, কি নিয়ে বেচে থাকবো ভাবলেন না।আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম। ফিরে আসুন না আমার কাছে। আমি আর জীবনেও আপনার সাথে ঝগড়া করবো না, জীবনেও রাগ করবো না। আব্রাহাম প্লিজ ফিরে আসুন একটাবার। আপনি যা বলবেন তাই করবো তাই শুনবো।

কোন ছেলের সাথে কথা বলবো না। আপনার কাছ থেকে পালিয়ে যাবো না। আপনাকে আর সাইকো বলেও ডাকবো না। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই থাকবো প্লিজ একটা বার আমার কাছে ফিরে আসুন। আমি মরে যাবো আপনাকে ছাড়া। যখন চলেই যাওয়ার ছিলো তাহলে কেনো এলেন আমার জীবনে? যদি এভাবে মাঝপথে একা করে দিয়ে চলেই যাবেন তাহলে কেনো এসেছিলেন আমার জীবনে? হাত যখন ছেড়েই দেওয়ার ছিলো তাহলে হাত ধরলেন কেনো? জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখে চলে গেছেন আপনি। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম। ফিরে আসুন না। একটাবার। আমার পক্ষে যে আর সম্ভব না এভাবে থাকা। আমি, আম আমি আপনাকে খ খু খুব বেশিই ভাল ভালোবাসি আব আব্রা আব্রাহাম।
এই কথা বলেই আইরাত লুটিয়ে পরে নিচে। অজ্ঞান হয়ে যায়। ঘরের চারিদিকে শুধু কাচ আর কাচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। আর তার মাঝে আইরাত আব্রাহামের ছবিটা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে নিচে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে।

পরেরদিন সকাল হয়। বেলাও বেশ হয়ে গেছে কিন্তু আইরাতের তার রুম থেকে বের হবার নাম নেই। যেখানে আইরাত সকাল সকাল উঠে পরে। ইলার ব্যাপার টা কেমন যেন খটকা লাগে তাই সে আইরাতের রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমের ভেতর দিকে লক করা। ইলার সন্দেহ টা যেন আরো গাঢ় হয়। চিন্তা লাগছে এবার বেশ, আইরাত ইদানীং নিজের হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে। কখন কি করে বসে বলা দায়। তাই ইলা দরজাতে জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলো। যখন দরজা খুলছে না তখন ইলা কয়েকজন স্টাফ কে ডাক দেয়।

তারা এসে দরজা এক প্রকার ভেঙেই ফেলে। দরজা ভেঙে ভেতরে যেতেই দেখে আইরাতের রুমের চারিদিকে কাচ আর সে নিচে ফ্লোরে রক্তমাখা হাত নিয়ে পরে আছে। ইলা আইরাতের নাম ধরে চিল্লিয়ে ওঠে। খুব সাবধানে রুমের ভেতরে গিয়ে স্টাফ দের সাহায্যে আইরাতকে তুলে। দ্রুত স্টাফ দের রুম পরিষ্কার করে দিতে বলে। আর ইলা এদিকে ডাক্তার কে ফোন করে। আইরাতের কাছে ইলা এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে তার হাতে আব্রাহামের ছবি। নিজের চোখের পানি গুলো বিসর্জন করে আইরাতের হাত থেকে আব্রাহামের ছবি টা নিয়ে সরিয়ে রাখে। তার হাতের রক্ত গুলো শুকিয়ে গেছে। ইলা আইরাতের পাশে বসে পরে তার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তার কিছু সময় পরে ডাক্তার আসে। উনি এসে আগে আইরাতের হাতের ব্লাড গুলো মুছে ফেলে। হাতের ভেতরে কিছু কাচের কণা ঢুকে গিয়েছে। সেগুলো খুব সাবধানে বের করে। তারপর হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

ডক্টর;; দেখুন আমি শুনেছি যে আব্রাহাম স্যার আর বেচে নেই। মানুষ মরনশীল, এটা মেনে নিতেই হবে। আজ হোক কাল হোক মানুষ মরে যাবে। হায়াতের মালিক আল্লাহ। এখানে আপনি বা আমি কিছুই করতে পারবো না। সব মেনে নিতে হবে। জানি কষ্ট হয়, উনার তো আরো বেশি। নিজের হাসবেন্ডের লাশ টাও পায় নি উনি। কিন্তু কি আর করার বলুন। এভাবে ভেঙে পরলে হবে না। এভাবে থাকলে একেবারে পাগল হয়ে যেতে উনার বেশি একটা সময় লাগবে না। কন্ডিশন বেশি ভালো না। আপনি আছেন, উনার ছোট ভাই টা আছে।

আব্রাহাম স্যারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, দেখুন আজকাল যুগের মানুষ ভালো না। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে বেশি সময় লাগবে না। তাই উনাকে একটু বুঝান। এটাই জীবনের শেষ পরিণতি না। সামনে জীবন অনেক বাকি। শুনুন উনাকে একা একা থাকতে দিবেন না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। নয়তো সব শেষ। আমি বেশ কিছু মেডসিন দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো সময়মতো খাওয়াবেন। আর হ্যাঁ কোন সমস্যা হলে সবার আগে আমাকে ডাক দিবেন। আর মনে রাখবেন আব্রাহাম স্যারের শেষ স্মৃতি গুলো বাচিয়ে রাখতে বা টিকিয়ে রাখতে হলে আইরাত ম্যাম কেই আবার উঠে দাড়ায়ে হবে। আমি আসি।

ডাক্তার চলে গেলে ইলা তার পেছন ঘুড়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের দিকে তাকিয়েই সে অবাক হয়ে যায়। কেননা আইরাত চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ইলা আইরাতের পাশে বসে পরে।
ইলা;; তোকে কিছু বলার নেই আমার। আমি জানি তোর ওপর দিয়ে ঝড় বইছে এখন। কিন্তু এমন তো আর হয় না। আইরাত হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। আজ নিয়ে বারো দিন আব্রাহাম নেই। জানিস আব্রাহামের সবচেয়ে বড়ো স্মৃতি কি। তা হচ্ছিস তুই নিজে। তুই নিজে ঠিক হয়ে যা সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ইলা এটা বলেই নিজের চোখের পানি গুলো ফেলতে ফেলতে চলে যায়। আইরাত সবই শুনেছে। সবই বুঝে সে। এক্কেবারেই যে পাগল হয়ে গেছে তা না। কিন্তু আব্রাহাম কে ছাড়া তার জীবন অচল। সে একটা মূহুর্ত আব্রাহাম কে ছাড়া ভাবতে পারে না।

এভাবেই দিন যাচ্ছে। আইরাত চুপচাপ থাকে। কথা বলে না কারো সাথে বেশি। আগের যে চঞ্চলতা নিজের মাঝে ছিলো এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। গম্ভীর হয়ে থাকে। একদিকেই তাকিয়ে অনেকক্ষন বসে থাকে। মাঝে মাঝে যখন ভালো না লাগে তখন আব্রাহামের ছবি রুমের সব জায়গায় রেখে নিজে তাদের মাঝখানে শুয়ে থাকে। রাতে যেনো তার এই আব্রাহাম কে না পাওয়ার ব্যার্থতা কাজ করে আরো তীব্র ভাবে। আব্রাহামের ওই হাসি, কথা, আইরাতের সাথে ঝগড়া করা, বালিশ দিয়ে মারামারি করা, আইরাতকে জ্বালানো সব যেনো আইরাতের কানে এসে বাজে। এগুলো যখন মনে পরে তখন মনে হয় এর থেকে সে নিজে শেষ হয়ে যাক। আব্রাহামের ওই “বেবিগার্ল” ডাকটা কত্তোদিন হয়ে গেলো শুনে না আইরাত। আইরাত এগুলোই ভাবছিলো রুমের জানালার কাছে বসে বসে তখনই রনিত দৌড়িয়ে আসে আইরাতের কাছে। পরনে স্কুল ড্রেস।

রনিত;; আপু, আপু, আপু!
আইরাত;; হ্যাঁ।
রনিত আইরাতে গলা জড়িয়ে ধরে।
আইরাত;; কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
রনিত;; একি তোমার গলা ভেঙে গেছে?
আইরাত;; না ঠিক আছি। স্কুল যাচ্ছিস?
রনিত;; হ্যাঁ, দাদুমনি নিয়ে যাচ্ছে।
আইরাত;; হুমম।
ইলা;; আইরাত, আমি রনিতকে স্কুলে নিয়ে যাই। তুই বাসায় থাক।
আইরাত;; যাও।

এই বলেই ইলা আর রনিত গাড়ি দিয়ে স্কুলে চলে যায়। আইরাত আগের মতোই জানালার কাছে বসে থাকে। সময় যাচ্ছে কিন্তু আইরাত আব্রাহামের ভাবনাতেই মগ্ন। তার প্রায় আধা ঘন্টা পর নিচে হলরুমে কোন কিছু ভাংচুরের আওয়াজ আসে। আইরাতের ভাবনাতে ছেদ ঘটে যার ফলে সে চমকে উঠে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। কারো পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট। আইরাত উঠে তার রুমের বাইরে যেতে ধরবে তার আগেই আইরাতের রুমে কেউ একজন আসে। আইরাত কপাল কুচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ব্যাক্তিটি তার মাথা থেকে কালো কাপড় সরিয়ে ফেলে। এই রায়হান। রায়হান কে দেখে আইরাত ভূত দেখার মতো চমকে যায়।

আইরাত;; আপ.. আপনি এখানে?
রায়হান;; আব্রাহাম তো নেই তাই আমাকেই আসতে হলো।
আইরাত;; মানে?
রায়হান;; মানে টা কি এখনো পরিষ্কার করে বলতে হবে তোমাকে। তুমি জানো না যে কেনো এখানে এসেছি আমি!?
আইরাত;;
রায়হান;; বলেছি না ভালোবাসি তোমাকে। এখন তুমি আমার।
আইরাত;; দেখ তুই আমার চাচা-চাচি কে মেরেছিস কিছু বলি নি কেননা তোর মা এসে তোর প্রাণ ভিক্ষা চাইছিলো আব্রাহামের কাছে। এখন তুই যদি কিছু করিস তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
রায়হান;; তুমি? তুমি আমার কি করতে পারবে কিছুই না।
আইরাত;; বের হ এখান থেকে।
রায়হান;; তোমাকে না নিয়ে বের হবোই না।

এই বলেই রায়হান আইরাতের দিকে এগোতে থাকে। আর আইরাত ছুটে দরজার দিকে চলে যায়। কিন্তু রায়হান এসে আইরাতের বাহু ধরে টান দেয়। আইরাত রায়হান কে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আইরাতের পাশে একটা কাচের বোতল ছিলো,, রায়হানের কাছ থেকে বাচার জন্য আইরাত পাশে থেকে তা নিয়ে অর্ধেক বারি দিয়ে ভেঙে আর অর্ধেক রায়হানের দিকে তাক করে ধরে। রায়হান তবুও আইরাতের দিকে এগোলে আইরাত রায়হানের হাত বরাবর এক ঘা দিয়ে দেয়। রায়হানের হাত কেটে যায়। সে তার এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে। এই তো সুযোগ৷

আইরাত রুমের দরজা খুলে বাইরে এসে দরজা পেছন দিক দিয়ে লাগিয়ে দেয়। দৌড়ে নিচে নেমে আসে। আইরাত বাইরে এসে দেখে একটা গার্ডও নেই। তাহলে সব গেলো কোথায়। এখন আইরাত কি করবে কি করবে না কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। আর হলরুমে এসে মনে পরেছে যে সে তার ফোনটা ভুলে রুমেই রেখে এসেছে। পুলিশে ফোন দিবে কীভাবে এখন। আইরাত সারা বাড়িতে ছুটোছুটি করছে। তখনই আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম তার অন্যান্য রুম গুলোতে একটা করে হলেও গান সবসময় রেখে দিতো। আইরাত দৌড়ে গিয়ে আব্রাহামের অন্য আরেক রুমে চলে যায়।

এখানে আব্রাহামের সব পুরানা জিনিস গুলো রাখা। আইরাত দ্রুত রুমের সব জায়গাতে খুজতে লাগলো। কাবার্ডের সব জায়গায় তড়িঘড়ি করে রিভলবার খুজে চলেছে। কিন্তু কিছুই পাচ্ছে না। এতোক্ষনে ওপরে রায়হান এক লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলেছে। সে আইরাতের নাম ধরে চিল্লাচ্ছে আর নিচে নামছে। কিন্তু এদিকে তো আইরাত ভয়ে শেষ। আইরাত আব্রাহামের যে পুরানা একটা রুম ছিলো সেখানেই একটা কোণাতে লুকিয়ে পরে। ভয়ে কেদে একাকার হয়ে গেছে সে।
রায়হান;; আইরাত, ও আইরাত। হায় হায় কতো মেয়ের সাথেই না থেকেছি কিন্তু তুমি আলাদা। কি যে করে দিলে না আমার ওপর। এখন তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোই লাগে না। আমি জানি তুমি এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছো অযথা আমার সাথে লুকোচুরি খেলো না তো জলদি সামনে আসো। আইরাত, আইরাত।

রায়হান এগুলো বলছে আর আইরাতের দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। আর আইরাতের ভয় ততোই বেড়ে চলেছে। রায়হান অন্যদিকে চলে যেতে ধরে কিন্তু ভাগ্য খারাপ। আইরাত যে রুমে লুকিয়ে ছিলো তখন সেই রুমের কোন একটা ভারি বস্তু আপনা আপনিই জোরে শব্দ করে নিচে পরে যায়। রায়হান শব্দের ধারা অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। মুখে ফুটে ওঠে শয়তানি হাসি।
রায়হান;; এইতো পেয়ে গেছি আইরাত। পালিয়ে যাবে কোথায়?

রায়হান দ্রুত পায়ে সেদিকে যেতে ধরে। রুমের ভেতরে চলে যেতেই আইরাত উঠে দাঁড়িয়ে একদম রায়হানের সামনে চলে যায়। রায়হানের দিকে আইরাত রিভলবার তাক করে ধরে। ভাগ্যিস সময় মতো রিভলবার টা পেয়ে গিয়েছিলো তখন। আইরাত রিভলবার তার দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে রায়হানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রায়হান;; নিজেই রুপেই তো মেরে ফেলেছো আর কতো মারবে?
আইরাত;; খবরদার সামনে এগোবি না। আমি কিন্তু শুট করে দিবো।
রায়হান;; ওহহ আচ্ছা তাই। কিন্তু আমি তো এগোবোই।

রায়হান আইরাতের দিকে এগোতে ধরে কিন্তু আইরাত এবার তার চোখ মুখ সব খিচে বন্ধ করে আঙুল দিয়ে রিভলবারের ট্রিগারে চাপ দেয়। বাতাসের বেগে একটা বুলেট বের হয়ে একদম রায়হানের বাহু বরাবর লাগে। রায়হান রাগে দাত কটমট করে আইরাতের দিকে যেতে ধরলে আইরাত তার চোখ খিচে বন্ধ করে আরো একবার ট্রিগারে চাপ দেয়। আরেকটা বুলেট গিয়ে রায়হানের বাহুতে লাগে। রক্তে সব ভিজে গেছে। রায়হান নিচে বসে পরেছে তার বাহু চেপে ধরে। আর আইরাত ভয় পেয়ে চিল্লিয়ে তার হাত থেকে রিভলবার টা নিচে ফেলে দেয়। নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। জীবনে এই প্রথম আইরাত কাউকে শুট করেছে। এখন যেনো সে কাপছে। আইরাত দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আবার দরজা পেছন থেকে লাগিয়ে দেয়।

আইরাত দৌড়ে বাইরে এসে পরেছে। মেয়েটা অনেক ভয় পেয়ে আছে। আইরাতের এতো জোরে ছুটার কারণে একটা টেবিলের সাথে তার পায়ে হোচট খায়। ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকিয়ে ফেলে। পায়ের আঙুল একদম কেটে ভর্তা হয়ে গেছে। আইরাত একটু থেমে তার এক হাত দিয়ে পায়ের আঙুলে চেপে ধরে। আইরাত তার পেছনের দিকে তাকায়। রায়হান কে যেই রুমে লক করে দিয়ে এসেছে সেই দরজাতে আবার জোরে জরে চাপড় পরে। রায়হান ধাক্কাচ্ছে। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত ওপরে নিজের রুমে চলে যায়।

গিয়েই দেখে বিছানার ওপর নিজের ফোন টা রাখা। আইরাত দ্রুত সেখানে যায় গিয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন টা নেই। হাত কাপছে। আর ক্রমাগত ভাবেই ওই রুমের দরজাতে রায়হান একের পর এক ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে। ভাগ্যিস শুট করা হয়েছে ওর দুই বাহুতেই তাই ব্যাথায় বাইরে আসতে পারছে না। আইরাত তার এক হাতের উলটো পাশ দিয়ে বারবার নিজের চোখের পানি মুছছে আর ফোন দিচ্ছে। আইরাত সবার আগে রাশেদ কে ফোন দেয়। রাশেদ তার বাসায় ছিলো। কেননা অফিস নেই। আর আগুন লাগার পর অফিসের সবকিছু আবার নতুন করে ঠিক করা হচ্ছে। এই সময়ে কে ফোন দিলো এই ভেবেই রাশেদ ফোন টা রিসিভ করে। রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে……

আইরাত;; রাশেদ, রাশেদ প্লিজ জলদি আসো। আমার, আমার খুব ভয় লাগছে। যেকোন সময় ও এসে পরবে এখানে। প্লিজ জলদি আসো।
রাশেদ;; ম্যাম, কি হয়েছে ম্যাম? আপনি, আপনি ঠিক আছেন তো? কে আসবে কি হয়েছে?
আইরাত;; রায়হান, রায়হান হুট করেই আমার বাসায় এসে পরেছে। আমার ওকে ভালো লাগছে না। আমি না ওকে, ওকে শুট করে দিয়েছি।
রায়হান;; হুয়াট?
আইরাত;; তো আমি আর কি করতাম ও, ও অসভ্যতামি করতে চাইছিলো। আমাকে নাকি নিয়ে যেতে এসেছে। আমি আমার রুম থেকে পালিয়ে অন্য রুমে যাই তারপর সেখানে আব্রাহামের জেকেটের পাশে একটা রিভলবার পেয়েছি তো আই জাস্ট শুট হিম। বাহুতে করেছি।

রায়হান;; ভুল করেছেন আপনি?
আইরাত;; মা মা মানে?
রায়হান;; ওই হারামির মাথা বরাবর শুট করা উচিত ছিলো। ম্যাম আপনি রুম লক করে থাকুন আমি জাস্ট দুই মিনিটে আসছি।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। নিচে ধপ করে বসে পরে, হাত দিয়ে কপালে এসে পরা চুল গুলো পেছনে ঠেলে দেয়। তখনই নিচে আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসে। আইরাত তার হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে। তার প্রায় কিছুক্ষন পরেই নিচে বেশ কিছু মানুষের সমাগম বোঝা গেলো। আইরাত জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে পুলিশ রা গাড়ি থেকে নামছে আর তাদের সাথে রাশেদও আছে। তারা সবাই মিলে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। আইরাত এটা দেখেই দৌড়ে রুমের বাইরে বের হয়ে পরে। নিচে যেতেই রাশেদের সামনে পরে। আর রায়হান তার মতো করেই দরজা ধাক্কাচ্ছে।
রাশেদ;; ম্যাম ঠিক আছেন?
আইরাত;; ঠিক আছি।

পুলিশ অফিসারদের আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না কেননা রায়হান যে হারে দরজা ধাক্কাচ্ছে তাতেই বুঝা যাচ্ছে যে সে সেই রুমের ভেতরে রয়েছে। আইরাত পাশে থাকা একটা চেয়ারে বসে পরে। পায়ের আঙুল সহ পা অনেক টুকু কেটে গিয়েছে। যন্ত্রণায় যেনো ছিড়ে যাচ্ছে পা। পুলিশ অফিসার রা গিয়ে রায়হানকে কিছুটা রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। রায়হানের হাত গুলো পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেয়। তারপর টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে।
রাশেদ;; তুই এর আগে দু-দুটো মার্ডার করেছিস তারপরও কেস করি নি। এর জন্য বেশি পার পেয়ে গেছিস তাই না। আমার তো পুরো সন্দেহ তোর ওপর যে তুই ই আব্রাহাম স্যারের সাথে কিছু না কিছু করে বসেছিস। চেহারা অব্দি দেখতে মন চায় না তোর। অফিসার প্লিজ এই জানোয়ার কে নিয়ে যান।

রায়হান কে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাওয়ার আগে রায়হান আইরাতকে একটা লুক দিয়ে যায়। যেনো এতো সহজে ছাড়বে না সে। পুলিশ রা চলে যায়। রায়হান কে জেলে ভরা হয়েছে। রাশেদ বাড়ির সব গুলো গার্ড আর স্টাফ কে আচ্ছা মতো ঝাড়ি মেরে দেয়। কতো গুলোকে তো সোজা চাকরি থেকে বেরও করে দিয়েছে। বাড়িতে এতো বড়ো একটা কান্ড হয়ে গেলো আর সবগুলো কি ঘাস কাটতে গিয়েছিলো নাকি। ওদিকে ইলা রনিত কে নিয়ে বাসায়ও এসে পরে। বাড়ির বাইরে এতো গুলো পুলিশ কে দেখে ইলার বুক টা ধক করে উঠে। সে রনিত কে নিয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে রাশেদ বসে আছে আর আইরাতের অবস্থা বেশি ভালো না।

ইলা;; আইরাত কি হয়েছে? বাইরে এরা কেনো আর তোর পা কীভাবে কাটলো। কি হয়েছে রাশেদ?
রাশেদ;; আসলে…
আইরাত;; কিছুনা। কিছু হয় নি। প্লিজ আর একটা কিছুও আমাকে জিজ্ঞেস করো না। আমি কেনো মরে গেলাম না। এভাবে আর আমি পারি না। আমার কিছু জিজ্ঞেস করো না।
ইলা;; রাশেদ?
রাশেদ;; রায়হান এসেছিলো। গুন্ডামি শুরু করে দিয়েছিলো একদম। তখন ম্যাম আমাকে ফোন করে আর আমি অফিসার দের সাথে নিয়ে আসি।
ইলা আর কিছুই বলে না। সে গিয়ে সোজা ফার্স্ট এয়িড বক্স এনে আইরাতের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আইরাত মানা করলেও শুনে না। তখনই কীভাবে যেনো অয়ন আসে।

অয়ন;; আব্রাহাম কে পাওয়া গেছে??
আইরাত;;
অয়ন;; বউমনি কিছু বলছো না?
আইরাত;; বলার কিছুই নেই।
অয়ন;; সরি আমি আগেই আসতাম কিন্তু আমি লন্ডন ছিলাম আর আমার ফ্লাইট মিস হয়ে গিয়েছিলো।
আইরাত;; আমি জানি।
অয়ন;; এখন আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;; আছে তো। ও আছে ও যায় নি কোথাও আর যাবেও না।

রাশেদ অয়নকে ধরে সোফাতে বসিয়ে দেয়। আইরাত তো আব্রাহামে নামে কিছু বলবে না কারণ ও বিশ্বাসই করে না যে আব্রাহাম মারা গেছে। অতঃপর রাশেদ অয়ন কে সব খুলে বলে আর সব শুনে অয়নের যেনো দুনিয়া ঘুরে গেলো।
অয়ন;; এটা হতেই পারে না? এগুলো কীভাবে সম্ভব?
রাশেদ;; নিজেকে শান্ত করুন।

আইরাত সেখানে আর বসে থাকতে না পেরে উঠে নিজের রুমে চলে আসে। এসেই আব্রাহামের ওই নেভি ব্লু জেকেট টা যেটা খাদ থেকে পাওয়া গিয়েছিলো সেটা বের করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আবার হাউমাউ করে কেদে দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি যদি আজকে থাকতেন তাহলে আজ, আজ আমার সাথে এগুলো কিছুই হতো না। না ই রায়হান এখানে আসার সাহস পেতো আর না ই এতো কিছু হতো। আপনি কোথায় চলে গেলেন? আমার যে আর ভালো লাগে না আপনাকে ছাড়া। হয়তো আমার কাছে আবার ফিরে আসুন আর নয়তো আপনি যেখানে আছেন আমাকেও সেখানে নিয়ে চলুন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম।

এভাবেই এক বেলা কেটে যায়। রাশেদ চলে যায় ইলাকে বলে। অয়ন নিজেও অনেক কান্নাকাটি করছিলো ইলা কে জড়িয়ে ধরে। অবশেষে ইলাও তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে একবার গিয়ে আইরাতকে জোর করে ফ্রেশ হতে পাঠিয়েছে। আইরাত সবসময়ের মতো জানালার কাছে দুই পা গুটিয়ে বসে ছিলো। ইলা খাবার নিয়ে যায় কিন্তু আইরাত খায় না। আইরাত আজ তখনকার পর থেকে আর নিচেই নামে নি। রনিত ইলার সাথেই ঘুমায়। সে ঘুমাচ্ছে। আর ইলা এদিকে তার রুমেই পায়চারি করে যাচ্ছে। চোখে নেই ঘুম।

ইলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বাজে ২ঃ৩৫ মিনিট। না জানি আইরাত এখন কি করছে। ঘুমায় তো একটুও না। ইলা আর থাকতে না পেরে আইরাতের রুমের দিকে হাটা ধরে। ইলা গিয়ে দেখে রুমের দরজাটাও চাপানো। ঠিকভাবে লাগায় নি। ইলা রুমের ভেতরে গিয়ে দেখে আইরাত নেই। ইলা সামনে হাটছে আর আইরাতকে খুঁজে চলেছে। ওয়াসরুমে গিয়ে দেখে সেখানে নেই, করিডরে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। তাহলে কোথায় গেলো। হঠাৎ কারো হাসির আওয়াজ কানে আসে ইলার। ইলা কপাল কুচকে তাকায়। খেয়াল করে দেখে যে আরেক রুমের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে। ইলা সেই রুমে যায়। আর যেতেই যা দেখে তাতে ইলা যেনো আরেক দফা ভেঙে যায়।

আইরাত কাবার্ড থেকে এক এক করে আব্রাহামের সব কাপড়-চোপড় বের করেছে। রুমের এমন কোন জায়গা ফাকা নেই যাতে আব্রাহামের কাপড় গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। গাদা গাদা খালি কাপড়। আর তার মাঝে আইরাত বসে আছে। আইরাতের জামার ওপর দিয়েও আব্রাহামের জেকেট। মানে আইরাত আব্রাহামের জেকেট পরে বসে আছে। একদম বাচ্চার মতো লাগছে দেখতে। হাতে আব্রাহামের ঘড়ি। আইরাত বসে বসে কাপড় গুলো মেলে মেলে দেখছে। ইলা যে রুমে এসেছে তার দিকে আইরাতের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত কিছুটা হাসছে। যেনো আব্রাহামের এই জিনিস গুলোতেই সে নিজের সর্বসুখ খুঁজে পাচ্ছে। আইরাত আরেকটা জেকেট নিয়ে নিজের ওপরে মেলে দেয়।

ইলা;; আইরাত..!
আইরাত;; দাদি এসেছো? দেখো না আব্রাহামের কত্তো গুলো কাপড়। আমি গুনেও শেষ করতে পারছি না। আর দাদি দেখো এগুলোতে আব্রাহামের গায়ের গন্ধ লেগে আছে। আব্রাহামের বডির স্মেল লেগে আছে। এগুলো আমার কাছে থাকলে মনে হয় আমার আব্রাহামও আমার কাছেই আছে। দেখো না? আব্রাহামের স্মেল পাওয়া যায়।
ইলা আইরাতের এমন দশা দেখে কেদে দেয়।

আইরাত;; দাদি দেখো এই যে আমাদের, আমাদের বিয়ের ছবি। আব্রাহাম কে কত্তো সুন্দর লাগছে তাই না। আমি জানি তো আমার আব্রাহাম কে সুন্দর লাগে। আচ্ছা দাদি বিয়েতে তো আমরা আজীবন এক সাথে বেধে গিয়েছিলাম তাই না তাহলে আব্রাহাম বাধন ভেঙে চলে গেলো কেনো? আমি কি ভুল কিছু করেছি? আমি কি, আমি কি কম ভালোবাসতাম নাকি ওকে?
ইলা;; আইরাত এমন পাগলামি গুলো করিস না, উঠে আয়।
আইরাত;; না আমি যাবো না। বললাম না কাপড় গুলোতে আব্রাহামের ছোয়া লেগে আছে আমি ওকে ছেড়ে যাবো না। আব্রাহাম শুধুই আমার।
ইলা;; আইরাত..!
আইরাত;; ??
ইলা;; ?

আইরাত একের পর এক কাপড় দেখছিলো পাগলের মতো করে। হঠাৎ সে থেমে যায়। নিজের গা এলিয়ে দেয়। চোখে পানি গুলো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে।
আইরাত;; দাদি কখনো কিছু চাই নি আমি তোমার কাছে। আজ চাচ্ছি আমাকে দিবে?
ইলা;; একবার বলে তো দেখ।
আইরাত;; আমাকে মেরে ফেলো।
ইলা;;

আইরাত;; প্লিজ আমাকে মেরে ফেলো। কারণ এইসব আমাকে বাঁচতে দিবে না। তিলে তিলে শেষ করে দিবে আমাকে। আমার কাছে মনে হয় কেউ আমাকে কেটে তাতে মরিচ ছিটিয়ে দিয়েছে। যেনো আমি ছটফট করতে করতে মরি। আমার যে কেমন লাগে আমি বলতে পারবো না। আমার ঘুম আসে না। বিছানাতে যখন ঘুমাতে যাই তখন পাশের জায়গা টা কেমন ফাকা ফাকা লাগে। আমি সেখানে হাত দিয়ে দেখি কিন্তু কই আমি তো আমার আব্রাহাম কে সেখানে পাই না। আমি আয়নার সামনে দাড়ালেই আগে আব্রাহাম এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতো কিন্তু এখন আর কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে না। আমি এখন আর কাউকে আমাকে চকোলেট এনে দেওয়ার কথা বলতে পারি না।

এটা ওটার জন্য বায়না ধরতে পারি না। কেউ আমাকে নিয়ে এখন আর হুট হাট বাইরে বের হয় না। আব্রাহামের দেওয়া নাম গুলো ধরে এখন সে আমাকে আর ডাকে না। আমি তো মানুষ,, আমারও তো কষ্ট হয়। তুমি বুঝো? আমি যখন মরার কথা বলি আমাকে থামিয়ে দাও তোমরা। আমার যে কেমন লাগে বুঝো তোমরা। কেউ বুঝো না। যে হারায় সে বুঝে। আমি হারিয়েছি। ছোট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার জীবনে কিছুই থাকে নি। কিছুই না। সবাই আমাকে রেখে ছেড়ে চলে যায়। আব্রাহামও চলে গিয়েছে। যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসলাম দিনশেষে কিনা সেই নেই।

মরার কম চেষ্টা করেছি। কত্তো বার, কত্তো বার সুইসাইড করতে গিয়েছি। বাথটাবে পানি ভর্তি করে ডুবে থেকেছি যেনো শ্বাস আটকে মরে যাই। অন্ধকার রুমে নিজেকে একদম একা করে রেখেছি যেনো ভয় পেয়ে মরে যাই। ছাদের একদম কিণারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি যেনো ওপর থেকে নিচে পরে মরে যাই। কাচ দিয়ে হাত কেটেছি, ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকেছি, বিষ খাওয়ার কথাও মাথায় এসেছে। কি না করেছি বলো? কি না করেছি। আমি আব্রাহামের কাছে চলে যাবো। আমি আব্রাহাম কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না ?।আমি বের হতে চাই এই মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু পারি না। সব জায়গায় শুধু আব্রাহাম আব্রাহাম আর আব্রাহাম। আব্রাহাম এখন আমার স্মৃতি তে আছে কিন্তু আমার কাছে নেই, আমার পাশে নেই। আমি ওকে দেখতে পারি না, হাত দিয়ে ছুতে পারি না। ওকে ছাড়া এখন আমি একটা জীবন্ত লাশ। (চিল্লিয়ে অঝোরে কেদে)

আইরাত এই কথা গুলো বলেই চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে থাকে তারপর আবার চোখ গুলো বন্ধ রেখেই বলে ওঠে…
আইরাত;; দাদি যাও।
ইলা;; আইর…..
আইরাত;; দাদি প্লিজ তোমার রুমে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও। আমার মাথায় ব্যাথা করছে অনেক।
এই কথা বলে আইরাত সেখানেই শুয়ে পরে। ইলা মাথা নিচু করে এসে পরে। ইলা নিচে হলরুমে আসে। এসেই সবার আগে চোখে পরে আব্রাহামের হাস্যজ্বল মুখের একটা ছবি। ইলা তা হাতে নিয়ে কেদে দেয়। নিজের আচল দিয়ে চোখ মুছছে আর বিলাপ পারছে….
ইলা;; দাদুভাই রে কোথায় চলে গেলি তুই। এখানে যে আমরা কেউ ভালো নেই তোকে ছাড়া। তোর আইরাত তো তোকে ছাড়া এক বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে।

এভাবেই সেই রাত কেটে যায়। ফজরের আজান দিলে ইলা নামাজ পরে বাইরে আসে। রান্নাঘরে টুকটাক কিছু শব্দ পেয়ে ইলা সেদিকে এগিয়ে যায়। গিয়েই দেখে আইরাত রান্নাঘরে হাতে ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখেই ইলার চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। ইলা দ্রুত আইরাতের কাছে যায়। ইলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত বলে…..
আইরাত;; চিন্তা করো না মরবো না। মরার জন্য ছুরি হাতে নেই নি আমি। সবজি কাটবো তাই।
ইলা;; বাড়িতে কত্তো স্টাফ আছে। ওরা থাকতে তুই কেনো করবি?
ইলার কথা শুনে আইরাত মলিন হেসে তার কাছে যায়।

আইরাত;; আব্রাহাম থাকা কালে সে রান্নাঘরে আসতে বারণ করতো আর এখন তুমি করছো।
ইলা;; বের হয়ে আয় স্টাফ করে দিবে।
আইরাত;; না নিজের হাতেই বানাই।
ইলা আর না করে না আইরাতকে। থাক এতে যদি একটু ভালো লাগে ওর।
আইরাত রান্না শেষ করে টেবিলের ওপর রাখে। আইরাত যখন টেবিলে খাবার রাখতে যায় তখন আব্রাহামের চেয়ার টা আইরাতের চোখে তীর্যক ভাবে বাধে। আব্রাহাম সবসময় এই চেয়ারেই বসতো। এখনো আইরাতের মনে হচ্ছে যে যেনো আব্রাহাম সেই চেয়ারেই বসে বসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইলা রনিত আর আইরাত এসে টেবিলে বসে। আজ কত্তোদিন পর তারা একসাথে বসে বসে খাচ্ছে। কিন্তু তবুও ফাকা। আব্রাহামের জায়গা টা ফাকা। মানুষ টা আজ নেই। আইরাত মাথা নামিয়ে আস্তে আস্তে খাচ্ছিলো। হঠাৎ টুপ করেই তার চোখ দিয়ে পানি পরে যায়। হাফ খেয়ে আইরাত উঠে চলে যায়। রান্নাঘরে গিয়ে জোরে জোরে দম ছাড়ছে। নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ফেলে। আইরাত এসে আবার হলরুমে বসে। তারপর কি যেনো একটা ভেবে রাশেদ কে ফোন দেয়। তবে রাশেদ কে ফোন দিতেই আইরাত যা শুনে তাতে আইরাতের মাথায় আগুন না শুধু একদম আগুনের জুয়ালামুখি ফেটে পরে।

আব্রাহামের অফিস নিলামে উঠেছে। হ্যাঁ আব্রাহামের অফিসের ৪ ভাগের ১ ভাগ নিলামে উঠেছে। রাশেদ আজ সকাল থেকেই এগুলো ঝামেলা তে পরে রয়েছে। আর যখন আইরাত তাকে ফোন দেয় তখন রাশেদ আইরাতকে এই কথাই বলে। আর আইরাতের তো এটা শুনে মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেছে। আইরাত আর কিছু না বলেই সোজা গাড়ির চাবি টা হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে পরে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। আব্রাহামের অফিসের এক ভাগ নিলামে উঠেছে লাইক সিরিয়াসলি?

তীব্র ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আইরাত। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর গাড়ি এসে আব্রাহামের অফিসের সামনে থামে। আইরাত গাড়ির দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। আইরাত ভেতরের দিকে হাটা দেয় কিছুদূর যেতে দেখে অফিসের সামনে বেশ কিছু লোক বসে আছে সারিবদ্ধ ভাবে। আর তাদের সবার সামনে দুই-তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কে দেখতে পেরে রাশেদ তার কাছে আসে। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই সোজা সামনে চলে যায়।
আইরাত;; বন্ধ করুন এইসব কিছু। কি হচ্ছে এখানে?

আইরাতের চিল্লানোতে সবাই তার দিকে তাকায়। তাকে দেখে একজন লোক এগিয়ে আসে। লোকটি আজাদ রহমান অর্থাৎ যে এই নিলাম তুলেছেন আরকি।
আজাদ;; কে আপনি? আর এখানে কি চাই?
আইরাত;; কে আমি? যার অফিস কে নিলামে তুলেছেন তার বউ হই আমি। আর এগুলো কি হচ্ছে? বিনা কারো পারমিশনে আপনার সাহস হয় কি করে আব্রাহামের অফিসের এক অংশ নিলামে তুলার।
আজাদ;; আমাদের কাছে পুলিশের পারমিশন আছে।
আইরাত;; তাই না? পারমিশন, তো সেটা পুলিশ কে মোটা অংকের ঘুষ খাইয়ে তো আমিও নিতে পারবো।
আজাদ;; দেখুন….

আর কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কিছু পুলিশ অফিসার আসে। তারা আসতেই আজাদ বলে ওঠে….
আজাদ;; স্যার দেখুন আমাদের কাছে আপনার পারমিশন থাকা সত্ত্বেও উনি এসে আমাদের কাজ বাধা দিচ্ছেন।
পুলিশ;; মিসেস আইরাত..
আইরাত;; হুয়াট? (চিল্লিয়ে)
পুলিশ;; দেখুন আসলে…
আইরাত;; কিশের ভিত্তিতে আপনারা নিলামে তুলেছেন?
পুলিশ;; দেখুন অফিসে আগুন লেগেছিলো। আর যে অংশে আগুন লেগেছিলো সেখানে কেউ কাজ করে না। কেবিন গুলো পরে আছে। তবে আগুন লাগলেও সেখানে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা গুলো অবৈধ।
আইরাত;; অবৈধ রাইট? তো আগে আপনি আমাকে এটা বলুন যে পুলিশ তো আপনি হয়ে গেছেনই কিন্তু খাবার খেয়ে নাকি গরুর ঘাস খেয়ে হয়েছেন কোনটা?

পুলিশ;; এক্সকিউজ মি।
আইরাত;; এক্সকিউজ মি মাই ফুট। তো এইযে আপনি বলছেন না যে অবৈধ টাকা পাওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে এমন টাকা গুলো আপনার বাড়ি তালাশি করলেও পাওয়া যাবে। তো অযথা এতো প্যাচ লাগানো বন্ধ করুন। মিস্টার আজাদ আপনাকে কতো লক্ষ টাকা দিয়েছি নাকি কোটি দিয়েছে কোনটা। আমি তার থেকে ডাবল দিবো আপনাকে। আপনি এখনই আমাকে মিস্টার আজাদের বাড়ি নিলামে তুলার পারমিশন টা দিয়ে দিন।
পুলিশ;; আপনি ক……..

আইরাত;; আব্রাহাম কেমন মানুষ ছিলো বা কোন জগৎ এর মানুষ ছিলো তা আপনি-আমি সবাই জানি। এখানে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু তাই বলে আব্রাহাম কোন ইলিগ্যাল কাজ করবে তার প্রশ্নই আসে না। টাকারই অফিস। অফিসে টাকার কাজই করা হয় তো টাকা পাওয়া যাবে না আশ্চর্য তো। মানলাম যে কেবিন গুলো তে আগুন লেগেছিলো সেখানে কোন কাজ করা হয় না তাই বলে টাকা থাকবে না এমন কোন কথা আছে নাকি। আর নিলামে তো ওই কেবিন গুলোই তোলা হয়েছে তাই না।

পুলিশ;; আসলে ম্যাম। আচ্ছা আমরা সব আগের মতো করে দিচ্ছে। কোন নিলাম-টিলাম হবে না। সব বন্ধ।
আইরাত;; হ্যাঁ যতো তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিবেন এইসব ততো তাড়াতাড়ি আপনাদেরই ভালো। আর একটা কথা এখানে না এখনো এমন কোন বিজন্যান ম্যান তৈরি হয়নি যে কিনা আব্রাহামের অফিসের এক অংশ তো দূর অর্ধেক অংশও কিনে নিতে পারবে । (আজাদের দিকে তাকিয়ে)
আইরাত;; এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেহারা কি দেখছেন যান এখন থেকে সব। (চিল্লিয়ে)
সবাই সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত নিজেও চলে আসতে নিবে তখন পুলিশ অফিসার ডাক দিয়ে ওঠে….
পুলিশ;; ম্যাম!
আইরাত পেছন ঘুরে তাকায়।

পুলিশ;; ম্যাম সরি টু সে বাট আব্রাহাম স্যার তো এখন আর নেই তাহলে উনার এই অফিস- আন্ডারগ্রাউন্ড বা এই এত্তো সব কিছু কীভাবে কি?
আইরাত;; সেই মাথা ব্যাথা আপনার না আমার। আর হ্যাঁ আব্রাহামের আইরাত এখন মরে নি বেঁচে আছে।
এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত যখন বাইরে আসে তখন রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আইরাত;; কি হলো?

রাশেদ;; ম্যাম সত্যি বলতে আমি এইটা সামলাতে পারতাম না। একদম সিচুয়েশন বিগড়ে যেতো কিন্তু আপনি….
আইরাত;; হয়েছে। আমি বাড়ি যাচ্ছি। আর যত জলদি সম্ভব ওই পুড়ে যাওয়া কেবিন গুলোকে দ্রুত ঠিক করো। আর হ্যাঁ কাল সকাল বেলা অফিসের যতো প্যান্ডিং ফাইল আছে সব কটা আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। এখন থেকেই কাজ করার দরকার নেই। অফিস আগে সম্পূর্ণ রুপে ঠিক হোক তারপর। আপাতত আব্রাহামের ফাইল গুলো বাসায় পৌঁছে দিও।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম আচ্ছা।
তখনই একজন ড্রাইভার কে আইরাতের চোখে পরে। সে অতি দ্রুত কিছুটা লুকিয়েই অফিসের পেছন রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেলো। আইরাতের কাছে ব্যাপার টা কেমন যেনো বাধলো। এই সেই ড্রাইভার টা যে রায়হানের সাথে জড়িত ছিলো। তবে আইরাত তা জানে না আর না ই রাশেদ জানে।
আইরাত;; রাশেদ?
রাশেদ;; জ্বি?

আইরাত;; ওইযে মাত্রই যে ড্রাইভার টা গেলো ও কে? আগে তো দেখি নি।
রাশেদ;; ম্যাম ওর নাম নাফিজ। নতুন ড্রাইভার।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
এই বলেই আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। তারপর ড্রাইভ করে বাড়ি এসে পরে। বাড়ি এসেই দেখে ইলা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? কি হয়েছে?
ইলা;; তুই তখন ওভাবে চলে গেলি কিছু না বলেই। কি হয়েছে আগে তুই বল।
আইরাত;; একটা কথা কি জানো। মানুষ টাকা চিনে। এই কাগজে তৈরি নোট গুলো মানুষের ইমান পর্যন্ত কিনে নিতে পারে। টাকার থেকে বড়ো আর কিছুই না, কিচ্ছু না। কথা গুলো তেতো হলেও সত্য। আর সত্য সবসময় তেতোই হয়।
ইলা;; মানে?
আইরাত;; কিছু না চলো।
ইলা;; তুই রেগে আছিস?

আইরাত;; যার ওপর রাগ করতাম সেই মানুষ টাই যখন আমার কাছে আর নেই তখন রাগ আর কি করে বা কি নিয়েই করবো বলো।
ইলা;; ভেতরে চল।
এভাবেই সেইদিন টা চলে গেলো। পরেরদিন সকালে একজন গার্ড এসে আইরাতের বাসায় অফিসের সব ফাইল গুলো দিয়ে যায়। আইরাত সব ভালোভাবে ফাইলগুলো দেখে। আইরাতের জানা মতে এখানে এখন কোন গরবর নেই। আর আব্রাহাম কখনোই আইরাত কে না জানিয়ে কিছু করতো না। সেটা অফিসের কাজ হোক বা কোন ডিলই সাইন করতে হোক না কেনো সব ব্যাপারেই আইরাতের জানা থাকতো।

আর এটাই যেনো আইরাতের জন্য প্লাস পয়েন্ট হয়ে গেছে। আইরাত ফাইল গুলো যখন ওলট-পালট করে দেখছিলো তখন তাদের মাঝখান থেকে আব্রাহামের ওই সিগন্যাচার প্যান টা বের হয় যা দিয়ে আব্রাহাম সবসময়ই সাইন করতো। আইরাত তা হাতে নিয়ে দেখে। মুচকি হেসে ওঠে। আব্রাহাম যেভাবে প্যান ধরতো সেভাবেই ধরার ট্রাই করে কিন্তু পারে না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করতে করতে হয়ে যায়। একদিন যে আইরাত অফিসে আব্রাহামের কোর্ট, সাইন করা প্যান এইসব নিয়ে আব্রাহাম পার্ট টু হওয়ার ট্রাই করছিলো হঠাৎ করেই তার সেইদিনের কথা মনে পরে যায়। আইরাত তার আনমনেই হেসে ওঠে।

আইরাত এক ক্ষীন দম ছেড়ে ফাইল গুলো নিয়ে বসে পরে। একটার পর একটা ফাইল চেক করে যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে। উঠার নাম নেই। নেই হাত ব্যাথারও নাম। বেশ সময় পার হয়ে যায় কিন্তু আইরাত তার রুম থেকে বের হয় না। আইরাত বের হচ্ছে না দেখে ইলা আইরাতের রুমে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বসে বসে ফাইল দেখছে, চোখে চশমা।
ইলা;; আইরাত!
আইরাত;; হ্যাঁ এসো (ফাইলের দিকে তাকিয়েই)
ইলা;; কি করিস?
আইরাত;; কাজ করি, অফিসের কাজ।
ইলা;; অফিসের কাজ??

আইরাত;; হ্যাঁ আসলে অনেক গুলো ফাইল পরে ছিলো তো ভাবলাম আমি সব করে দেই। তাই রাশেদকে বলে এসেছিলাম তো তাই ফাইলগুলো দিয়ে গেলো।
ইলা;; হুমম মনমরা হয়ে বসে থাকার চেয়ে ভালো কাজে ব্যাস্ত থাক।
আইরাত;; হুমম।
ইলা;; একটা কথা বলবো?
আইরাত;; হুমম।
ইলা;; তোকে আব্রাহামের মতো লাগছে।
আইরাত তার মাথা তুলে ইলার দিকে তাকায়।
ইলা;; আব্রাহাম নিজেও এভাবে চোখে চশমা পরে সামনে ল্যাপটপ নিয়ে গম্ভীর মুখ বানিয়ে কাজ করতো।
আইরাত;; চশমা টা আব্রাহামেরই।
ইলা;; হুমম বুঝলাম।

এভাবেই সেই বেলা চলে যায়। এখন বিকেল বেলা। আইরাত একটু উঠে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। বিকেল যেহেতু তাই আকাশ টা সুন্দর লাগছে আরো বেশি। আইরাত ওপরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ কিছুটা হলুদ-কমলা রঙে রঙ্গিন হয়ে আছে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস এসে আইরাতের চুল গুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর একজন স্টাফ এসে আইরাতকে এক মগ গরম কফি দিয়ে যায়। আইরাত কতোক্ষন এক ধ্যানে কফির দিকে তাকিয়ে থাকে। কেননা এই সেইম কালারের কফির মগ দুইটা ছিলো। একটা আব্রাহামের আর একটা আইরাতের।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৯+৫০+৫১

সবই আছে শুধু মানুষ টা বাদে। আইরাত বড়ো সড়ো একটা দম ছাড়ে। এমন কোন জিনিস নেই যাতে আব্রাহাম বা তার মেমোরি নেই। সবকিছুতেই আছেই। আইরাতের নিজের মাঝেও আব্রাহামের ছোয়া লেগে আছে। আইরাত দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে একবিন্দু অশ্রু। সময় যেতে থাকে। সন্ধ্যাও হয়ে যায় কিন্তু আইরাতের ছাদের ওপর থেকে নামার খবর নেই। হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে। মেঘ করলো না, সাজ করলো না। হঠাৎ করেই তীব্র বৃষ্টি নেমে পরলো। সাথে সাথে এক বিকট শব্দ করে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসে।

আইরাত তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। বৃষ্টির মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকে। নড়াচড়া কিছুই নেই। বৃষ্টিরও যেনো আজ আইরাতের ওপর প্রচন্ড মায়া হয়েছে। তাই তো আইরাতের চোখের পানি গুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সে নিজেও নেমে পরেছে। আইরাত ভিজে একাকার হয়ে গেলো। কেনো জানি না বৃষ্টির সাথে আইরাতের এক আলাদা সম্পর্ক আছে। যখনই আইরাতের মন খারাপ থাকে বা ভেজার ইচ্ছে হয় তখনই বিনা বলে-কয়ে হুটহাট নেমে পরে। তবে এই বৃষ্টি নামলেই আব্রাহামের কথা যেনো আরো প্রবল ভাবে মনে পরে আইরাতের।

প্রায় এক ঘন্টার মতো সেখানে তেকে আইরাত নেমে আসে। নিজের রুমে চলে যায়। বাইরে বিদুৎ চমকাচ্ছে। রুমে আইরাত বসে আছে। সে তার চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পুরো রুমকে দেখছে। শুধু আর শুধুই আব্রাহামের ছবি। কোন ছবিতে হাসছে, কোন ছবিতে বেশ স্টাইল নিয়ে আছে, কোন ছবিতে ভাবলেশহীন। আবার কোনটাতে আইরাতকে পরম আবেশে আলিঙ্গন করে আছে। এগুলো দেখে এখন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

আইরাত আব্রাহামের একটা জেকেট বের করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। আজ এত্তো গুলো দিন পর তার চোখে কিছুটা ঘুম নেমে এসেছে। এত্তোদিন পর যেনো ঘুমপরি আইরাতের চোখের মাঝে কিছুটা উঁকি দিয়েছে। আইরাত আব্রাহামের জেকেট টা নিজের বুকের সাথে একদম লেপ্টে ধরে শুয়ে থাকে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পরে। ঘুমিয়ে পরে এই ভেবেই যে যদি কাল এক নতুন সকালের, নতুন দিনের, নতুন রুপে কিছু ফিরে পায় বা শুরু হয়, যদি!!!
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো চার-চারটে মাস।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৫৫+৫৬+৫৭