পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৪
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
আজকে আর কলেজে যাওয়া হয়নি। কলেজের ‘ক’ উচ্চারণ করতেই উনি আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। এই দৃষ্টি উপেক্ষা করে আর কলেজে যাওয়ার কথা বলার সাহস আমার হয়নি।সারাদিন রুমে শুয়ে বসে কাটানো যায় নাকি। উনার বুক সেলফে হাত দেওয়া হয়নি কোনোদিন। উনি বারণ করেছেন তেমনটা নয় কিন্তু। সময়ের অভাবে কখনো বুকসেলফটা দেখা হয়নি।
আমি বই প্রেমি হওয়া সত্ত্বেও থাকে থাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা বইগুলো কখনো ছুঁইয়ে দেখা হয়নি। বিছানায় বসে ডিসাইড করছিলাম কোন বইটা পড়া যায়। এখানের বেশির ভাগের বই-ই মেডিক্যালের বই। সাইন্স ফিকশন। পৃথিবীর বিখ্যাত অমর মনীষীদের আত্নজীবনী আর বিজ্ঞান ভিত্তিক বই। এতো এতো বইয়ের মাঝে আমার নজর আটকে গেলো এক কোণে থাকা হুমায়ূন আহমেদ কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাসের বইটাই। আমি বরাবরই উপন্যাস প্রেমী।
বইটা নেওয়ার জন্য বুকসেলফের কাছে গেলাম। বইটা সবার উপরে থাকে থাকায় কিছুতেই হাত গিয়ে নাগাল পাচ্ছি না। একটা চেয়ার নিয়ে এসে চেয়ারে ওঠে বইটা হাতে নিলাম। বইটা হাতে নেওয়ার পর পরই কেমন যেনো একটা প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে। এই উপন্যাসটা পড়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। কিন্তু আম্মুর জন্য পড়া হয়ে ওঠেনি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
বেলকনিতে রাখা ডিভানে আরামসে শুয়ে পড়লাম। বইটা ওপেন করতেই বইয়ের ভিতর থেকে কিছু কাগজ বেরিয়ে এলো। কাগজ বললে ভুল হবে ছবির মতো লাগছে। কৌতূহল বশত ছবিগুলো হাতে নিলাম। ছবিগুলো আমার চক্ষুগোচর হওয়া মাত্রই দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো। চোখ দুটো অশ্রুতে টই টম্বুর হয়ে ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে। মাথা ভন ভন করছে।
একটা মেয়ের সাথে রুদ্রর কিছু হাস্যজ্জ্বল ছবি। জানি মেয়েটা রুদ্রর প্রাক্তন প্রেমিক অরি আপু। অরি আপু দেখতে মাশাল্লাহ। উনার রুপের প্রশংসা যতই করি ততই কম হবে। এই জন্যই হয়তো রুদ্র অরি আপুর প্রেমে পাগল ছিল। অরি আপু যতই রুদ্রর প্রাক্তন হোক না কেনো আমি তো রুদ্রর সাথে উনাকে মানতে পারছি না। আমি ব্যতীত অন্য কাউকে আমি রুদ্রর পাশে কল্পনাও করতে পারি না। আমি বরাবরই নিজের জিনিস নিয়ে পজেসিভ। যা আমার তা আমারই। তার দিকে কারো নজর আমি সহ্য করতে পারি না। আর যদি সেটা হয় আমার প্রিয় জিনিস তাহলে সেটার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি সহ্য করতে পারি না।
এই মুহূর্তে রুদ্রর পাশে আমি অরি আপুকে সহ্য করতে পারছি না। তাদের এই ক্লোজ ছবিগুলো আমার অন্তর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। বুকের ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে সবকিছু আমার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে ইচ্ছে করছে।
একটা লাইটার নিয়ে এসে এক এক করে ছবিগুলো জ্বালিয়ে দিতে লাগলাম। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে পুড়ছে রুদ্র আর অরি আপুর ভালোবাসাময় স্মৃতিগুলো। সেই সাথে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে আমার।
কোনো মেয়েই তার হাজবেন্ডের পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। সেখানে আমি কী করে পারবো? ডাক্তারবাবু আপনার এই হাসি আমার বুকের মাঝখানটাই গিয়ে লাগছে। কই আমি তো কোনোদিন আপনার এই স্নিগ্ধ হাসি দেখিনি। এই স্নিগ্ধ হাসি কী শুধু অরি আপুর জন্যই বরাদ্দ নাকি এই স্নিগ্ধ হাসির মালিকানা শুধু অরি আপুর নামে? যে অরি আপু চলে যাওয়ার সাথে সাথে হাসিটাও নিয়ে গেছে। আমি কী আপনার এক টুকরো স্নিগ্ধ হাসির কারণ হতে পারি না? নাকি সেই অধিকার আমার নেই? হিংসা জিনিসটা বরাবরই আমি ঘৃণা করতাম। আজকে আমার ভীষণ হিংসে হচ্ছে অরি আপুকে। আপনার ভালোবাসার একমাত্র ভাগীদার কেনো অরি আপু হলো? আপনার একটু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার কী আমার নেই? অন্তদহনে অনেক জ্বলেছি। এবার আপনাকেও অন্তদহনে জ্বলতে হবে। এতোদিন রিয়ার ভালোবাসা দেখেছেন এখন থেকে রিয়ার ইগ্নোরেন্স দেখবেন ডাক্তারবাবু।
রুদ্রর ডাকে হুশ এলো। ছবিটা প্রায় পুড়ে গিয়েছিল। হাতে লাগার আগেই রুদ্র ছবিটা হাত থেকে ফেলে দিয়েছেন। হাতে হালকা একটু ছ্যাকা লেগেছে। কিন্তু এই ব্যথা উপলব্ধি হচ্ছে না। কারণ এই ব্যথার থেকেও মনের ব্যথা আজ প্রখর।
তুমি এতোটা কেয়ারলেস কী করে হতে পারো? আমি যদি এখন না আসতাম কী হতো ভাবতে পারছো? এই সব কী পুড়াচ্ছিল? আগুন এখনি তোমার উড়নায় লেগে যাচ্ছিল। যদি উড়নায় লেগে যেতো তাহলে…….
তাহলে আর কী হতো আমি আগুনে ঝলসে যেতাম। আমার কোনো অস্তিত্ব থাকতো না।
শাট আপ। আরেকটা কথাও বলবে না। মৃত্যুকে তুমি হেলাফেলা মনে করো। হাত দেখি দাও।
দেখতে হবে না।
উনি আমার কথা শুনলেন না। জোড় করে হাত টেনে নিলেন। হাত লাল হয়ে গেছে।
হাতের কী অবস্থা করেছো দেখতে পাচ্ছো? আসো অয়েনমেন্ট লাগিয়ে দেই।
আমি ঝাড়া মেরে উনার কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।
লাগবে না অয়েনমেন্ট। আমারটা আমি বুঝে নিব। আমি নিজের খেয়াল রাখতে জানি। আপনাকে আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না।
কথাগুলো বলে এক দন্ড উনার সামনে দাঁড়ালাম না। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি উনার সাথে তো এমন বিহেইভ করতে চাইনি। হুট করে আমার কী হলো আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না। আজকে উনি হসপিটাল থেকে অনেক আগেই এসেছেন। হয়তো আমার জন্যই। সারাদিন উনার আশেপাশে যায়নি। উনার সাথে টু শব্দও করিনি। উনি অবশ্য আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি পাত্তা দেয়নি।
ডিনার করার পর পাক্কা দুই ঘন্টা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখেছি। অবশ্য ডিনার করার সময় উনি আমাকে প্রচুর জ্বালিয়েছেন। আমি উনার বিপরীত মুখী হয়ে বসায় বার বার পা দিয়ে খোঁচাচ্ছিলেন। দুই ঘন্টা পর মামুনি এসে টিভি অফ করে দেয়। আমাকে বকাঝকা দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিল।
রুমে এসে দেখি উনি বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন। আমি উনাকে না দেখার মতো করে গিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে এসে উনার সামনে ঘুরঘুর করছি। কিন্তু উনি একবারের জন্যও আমার দিকে তাকালেন না। আমার রাগ হলো ভীষণ রাগ। আমি ঠাস করে রুমের লাইট অফ করে দিলাম। উনিও সাথে সাথেই ল্যাপটপটা অফ করে বেড সাইড টেবিলে রেখে দিলেন।
আমি বিছানায় শুতে গেলেই উনি আমার হাত টেনে ধরেন। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি ধমক দিয়ে বলে ওঠেন,
একদম না। একদম হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করবে না। সারাদিন ধরে তোমার অনেক ভাব দেখেছি।
উনি এক বার বাম দিকে তাকালেন। তারপর আমার দুই গালে উনার দুই হাত রেখে শান্ত স্বরে জিঙ্গেস করেন, কী হয়েছে? এমন করছো কেনো?
আমি আবার উনার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই উনি এক হাত দিয়ে আমার কোমর চেপে ধরেন। আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরেন।
একদম দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। সারাদিন অনেক দূরে দূরে থেকেছ। এখন সময় কাছাকাছি থাকার। বাই এনি চান্স তুমি আমার কাছে থাকার জন্য এরকম করছো না তো? আই মিন তুমি দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর আমি তোমাকে কাছে টেনে নিব।
পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪৩
আমি নাক ফুলিয়ে উনার দিকে তাকাই। আমার নাক ফুলানো দেখে উনি হেসে দিলেন।
কুল কুল এতো রাগার কিছু হয়নি। আমি তো যাস্ট মজা করছিলাম। রাগলে কিন্তু তোমাকে মন্দ লাগে না। এই ধরো রাগলে তোমার নাকটা লাল হয়ে যায়।
ছাড়ুন তো আপনি আমাকে।
একদম ছাড়ব না। পারলে তুমি নিজেকে ছাড়িয়ে নাও। কী হয়েছে তোমার? বলবে না আমায়? কেউ কিছু বলেছে তোমায়? তুমি কী কোনো কারণে আমার ওপর রেগে আছো?
Apu aktu taratari por ar part golo diban.plz??
Next part ar jonno wait korche??…
Apu ato late hocha kno?? Onak wait korche to story tar jonno ????
Apu ar kotodin wait korbo?? Taratrai next part ta dan..??