প্যারাময় লাভ পর্ব ১০+১১+১২

প্যারাময় লাভ পর্ব ১০+১১+১২
written Nurzahan akter Allo

রুহিঃ আমাকে রেখে রেখে কোথায় গিয়েছিলে! আমাকে যদি কেউ কিডন্যাপ করতো তখন কি হতো?? (জড়িয়ে ধরে)
(ভাইয়া জড়িয়ে ধরার জন্য বাহানা করলাম!কিছু মনে করো না। মন চাচ্ছিলো খুব জড়িয়ে ধরতে তাই তোমাকে আসতে দেখেই কাঁদছিলাম। মনে মনে)

মুগ্ধ রুহিকে কাঁদতে নিষেধ করে!তারপর রুহির ধরে বাস থেকে নিচে নামায় আর ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে।রুহি বাস থেকে নেমে দেখে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাস থামানো!রুহি কে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে মুগ্ধ খাবার অর্ডার করে!রুহি ওয়াশরুম থেকে এসে চার-পাশে চোখ বুলিয়ে মুগ্ধ কে খুজে! মুগ্ধ চুপচাপ বসে রুহির কান্ড দেখছিলো!রুহি মুগ্ধকে দেখে বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে মুগ্ধর কাছে গেল!মুগ্ধ তাকিয়ে দেখলো রুহি চোখ মুখে পানি দিয়ে মুখটাও মুছে নি!রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…

রুহিঃতোমার কাছে টিস্যু হবে???থাকলে ধার দাও তো…
মুগ্ধঃহুমম!ভেজা মুখে টিস্যু দিয়ে মুছলে টিস্যু মুখে লেগে যাবে!এটা দিয়ে মুছে নে (ওর রুমাল দিয়ে)
রুহিঃতুমি কি এটা দিয়ে মুখ মুছে ছো আমার আগে।
মুগ্ধঃহুমম! কেন??? (ভ্রু কুচকে)
রুহিঃনা মানে তোমার রুমাল দিয়ে মুখ মুছলে যদি আমারোও তোমার মত খোঁচা খোঁচা দাড়ি বের হয় তাই।
(উফফ জানু আমি তো এটাই চাইছিলাম!মন চাচ্ছে এখুনি তোমাকে চটাস করে একটা আদর করে দেয়।আমার জানু সত্যি অনেক ভালো। মনে মনে)
মুগ্ধঃ আবার শুরু করলি!যাইহোক আমার খুধা লাগছে তারাতারি খাওয়া শুরু কর।এখন পরোটা আর গরুর মাংস, ডাল,সবজি খা আর তা না হলে বিরিয়ানী অর্ডার দে!আমি বিরিয়ানী খাবো না… (খেতে খেতে)
রুহিঃহুমমম!আমার আবার এসব পরোটাতে ঠিক পোষায় না।ওহহ ওয়েটা ভাইয়া কাম কাম…
ওয়েটাঃজি ম্যম কিছু বলুন??
রুহিঃগরুর মাংসের বিরিয়ানী জলদি নিয়ে আসেন!সাথে একটা দই,একটা মাউন টেন ডিউ,সালাদ,আর চিকেন ফ্রাই….তারাতারি
রুহিঃওকে ম্যম..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুগ্ধ আর রুহি খাওয়ার শেষ করে বাইরে এসে দাড়ালো!রুহি পেছনে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধ নাই।রুহি চারপাশে চোখ বুলিয়ে তাকিয়ে মুগ্ধকে খুঁজছে! ঠিক তখনই মুগ্ধ পেছনে থেকে এসে রুহির দিকে ওয়ান টাইম কাপে চা এগিয়ে দেয়!রুহি রাগী চোখে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ কিছু বলার আগেই…
রুহিঃ আমাকে রেখে দুমদাম করে কোথায় উবে যাও তুমি!আমি বলে যেতে কি সমস্যা হয় তোমার??(রেগে গিয়ে)
মুগ্ধঃতখন বাস থামতেই আবিরকে বাসের সামনে দাড় করিয়ে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম!আর এখন চা খাওয়ার জন্য চা আনতে গিয়েছিলাম।আর এখানে এত রাগের কি আছে??এই নে চা খা ভালো লাগবে।
রুহিঃ বা* খাবে!তোমার চা তুমিই খাও!
মুগ্ধঃ তোকে বলিনি এসব ভাষা না বলতে!এবার শুনলে সত্যি মার খাবি তুই।আচ্ছা তুই তো খাবি না তাহলে আমিই খায়… (রুহির দিক থেকে তাকিয়ে)

মুগ্ধ দুই কাপেই চুমুক দিচ্ছে! রুহি সেটা আড়চোখে দেখে নিলো!তারপর মুগ্ধর হাত থেকে একটা কাপ নিয়ে রুহি খেতে শুরু করলো!মুগ্ধ কোন রকম নিজের হাসিটা চেপে আবার ওর কাপে চুমুক দিতেই রুহি এই কাপের চা নিয়ে ওর কাপটা মুগ্ধর দিকে এগিয়ে দিলো!মুগ্ধ ভ্রু কুচকে কিছু বলার আগেই রুহি বললো..
রুহিঃ ওই কাপে চিনি কম তাই!(কথাটা বলে ওখানে থেকে সরে গেল)
মুগ্ধঃআর কত কি দেখতে হবে কে জানে??তুই পারিসও বটে…

মুগ্ধ রুহির জন্য আরো কিছু খাবার এনে রুহিকে দিলো!তারপর সবাই বাসে উঠে বসলো আর বাস আবার চলতে শুরু করলো!রুহি সারারাতে অনেক ঘুমিয়েছে তাই আর ওর ঘুম পাচ্ছেনা!ভাঙা রেকর্ডের মত মুগ্ধর কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছে!মুগ্ধ রুহিকে বাসের জানালা দিয়ে এটা-ওটা দেখাচ্ছে !সবাই সবার মত আনন্দ করছে!মুগ্ধও রুহির সাথে গল্প করছে!রুহি মুগ্ধকে বার বার রাগিয়ে দিয়ে নিজেই খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ছে মুগ্ধর গায়ে।

তারপর ওরা সাজেকের রাস্তায় ঢুকতেই মনোরম দৃশ্য দেখে রুহি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে!চারদিকে সবুজ গাছপালা আর উপরে নীল আকাশ! আর আঁকাবাকা রাস্তা! রুহি বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে প্রকৃতির অপরুপ সুন্দর প্রকৃতির দেখতে ব্যস্ত।রুহির চোখ মুখ বলে দিচ্ছে রুহি ঠিক কতটা খুশি!আর সাজেকের এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।

তারপর বাস থামলো ওদের সবার থাকার জন্য ঠিক করা রিসোর্টের সামনে!এত লং জার্নি করে সবাই টায়ার্ড হয়ে পড়ছে!তিনটা রুম মিলে থাকবে মেয়েরা আর তিনটাতে থাকবে ছেলেরা।মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে!মুগ্ধ রুহিকে ওর সাথে আসতে বললো।মুগ্ধ রুহির জন্য পরে আলাদা করে রুম বুক করছিলো!মুগ্ধ রুহিকে সেই রুমে নিয়ে গেল!তারপর মুগ্ধ রুহিকে সাওয়ার নিতে বললো। রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…

রুহিঃআমি কি এখানে একা থাকবো??
মুগ্ধঃহুমম!আমাকে না বলে রুমে থেকে বের হবি না।যদিও আমি তোকে রুমে লক করে রেখেই যাবো।
রুহিঃতুমি সাওয়ার নিয়ে তারপর যাও!আর ওখানে যেয়ে কি করবে??
মুগ্ধঃতোকে ভাবতে হবে না!তুই যা আগে সাওয়া নিয়ে নে।

রুহি ওর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল!তারপর রুহি সাওয়ার নিয়ে বের হলে মুগ্ধও সাওয়ার নিলো।তারপর দুজন দুপুরে খেয়ে আসলো!রুহী মুগ্ধকে যেতে দেয় নি তাই মুগ্ধও রুহির পাশেই শুয়ে পড়লো!কারো মুখে কোন কথা নাই!দুজনেই ঘুমিয়ে গেল!রুহির ঘুমের মাঝেই মুগ্ধর গায়ে পা তুলে দিলো!মুগ্ধ সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেল!মুগ্ধ আস্তে করে রুহির পা টা ওর উপর থেকে সরিয়ে উঠে বসলো!তারপর বাইরে থেকে রুম লক করে দিয়ে চলে গেল।

মুগ্ধ ওর বন্ধুদের সাথে কাছে আড্ডা দিতে যায়!আজকে যেহেতু সবাই টায়ার্ড এজন্য কেউ আর দুরে কোথাও যায়নি বরং আশে-পাশে ঘুরছে। অনেকটা সময় আড্ডা দিয়ে মুগ্ধ রুহির কি করছে দেখার দেখার রুহির রুমে গেল।মুগ্ধ রুমের লক খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে রুহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! রুহি মুগ্ধকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলো।মুগ্ধ রুহির কাছে গিয়ে বললো…

মুগ্ধঃকি রে বুচি??এভাবে চোখের পানি আর নাকের পানি এক করছিস কেন??(রুহির মাথায় টোকা মেরে)
রুহিঃ….
মুগ্ধঃআমি কিছু বলছি??তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না।
রুহিঃকি শুনবো হ্যা?কি শুনবো তুমি জানো না একা রুমে আমি ভয় পায় তারপরেও ডোর লক করে চলে গেলে কেন??
মুগ্ধঃতুই তো ঘুমাচ্ছিস এজন্য ডোর করে দিয়ে গেছি!এখানে কান্না করার কি হলো???যাইহোক এবার কান্না থামা যা চোখ মুখে পানি দিয়ে আয়!
রুহিঃ হুমমম!এবার যদি আমার এভাবে বন্দী করে যাও তো আমি বড় বাবা বলে দিবো আর তোমাকে বকবে…
মুগ্ধঃহুমম কথা শেষ হয়ে থাকলে এবার যা..
রুহিঃতার আগে আমাকে প্রমিস করো যে আমাকে এই কয়েকদিন আর মারবেও না বকবেও না।
মুগ্ধঃতুই কি যাবি নাকি আমিই চলে যাবো.!!!
রুহিঃ রাম গরুদের ছানা!হাসতে তাদের মানা..ওয়েট করো আমি আসছি। (মুখ ভেংচি দিয়ে)

মুগ্ধ বসে বসে ওর ফোন টিপছিলো! রুহি ওয়াশরুম থেকে এসে মুখ মুছে মুখে ক্রিম দিলো! তারপর চুল গুলোকে কাটা দিয়ে বেধে নিলো আর ঠোঁট লিপবাম দিলো।তারপর দুইজনে হাঁটতে বের হলো!রুহি আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আর মুগ্ধ রুহির পায়ের তলায় ইট পড়ছে কি না??সেটা খেয়াল করছে কারন রুহি নিচে তাকিয়ে হাটে না উপরে দিকে তাকিয়ে হাটে এজন্য উষ্টা খায় বেশি…

মুগ্ধ আর রুহি একটা পাহাড়ে উঠলো!এখান থেকে সূর্যাস্থ ভালো ভাবে দেখা যাবে!চারদিকে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে!অদ্ভুত সুন্দর একটা রং ধারণ করছে সূর্য টা! সবুজ বনের মধ্য সূর্যটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে! আস্তে আস্তে সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে। মুগ্ধ রুহিকে রিসোর্টে ফিরতে বলছে বাট রুহি এখন কিছুতেই যাবে না।রুহি এখনো সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আছে!রুহি মুগ্ধর দিকে না তাকিয়ে বললো…

রুহিঃআমি যদি এই সূযটার মত লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বউ সাজি তাহলে আমাকে দেখতে কেমন লাগবে ভাইয়া?? (সূর্যের দিকে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃহুমম ভালো লাগবে!!!(রুহির দিকে তাকিয়ে)
রুহিঃআমাকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে দাও না ভাইয়া??
মুগ্ধঃতোর বিয়েতে তোকে লাল শাড়ি গিফ্ট করবো কেমন!এখন চল..এখানে তারাতারি সন্ধ্যা নেমে আসে।আর বন্য প্রাণীদের উপদ্রপ খুব..
রুহিঃ তোমার বউ বানাবে…(অসাবধানতায়)
মুগ্ধঃকাকে?? (ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকিয়ে)
রুহিঃ কাউকে না চল যায়!
মুগ্ধঃহুমমম!

রুহি মুগ্ধকে এতবার করে ওর মনের কথা বোঝানোর চেষ্টা করে বাট মুগ্ধ বুঝেও না বোঝার ভান করে।আর যে বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে তাকে কখনোই কিছু বোঝানো সম্ভব না।সন্ধ্যার পরে সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে!সামনে আগুন জালানো আর আগুনের চারপাশে সবাই গোল হয়ে বসে আছে।তাপর হুট করে একজন মুগ্ধ হাতে গিটার ধরিয়ে দিয়ে বললো একটা গাইতে…অনেক জোরাজুরিতে মুগ্ধ গিটারের সুর তুললো….

তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়!
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ওই উদাস পুরের বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনায় (।।)

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_11

তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়!
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ওই উদাস পুরের বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনায়!!
অভিমানি মন আমার চাই তোকে বারে বার
তাই বলি আয় রে ছুটে আয়।
তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়!
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ওই উদাস পুরের বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনায়!!
(এতটুকু মুগ্ধ গাইলো তারপর একবার রুহির দিকে তাকালো!রুহি এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ রুহির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার গান গাইতে শুরু করলো!আর গানের মাধ্যম কথা গুলো দিয়ে রুহিকে হয়তো কিছু বোঝাতে চাচ্ছিলো।)
তোর রিদয় আঙিনায় থাকতে আমি চাই
তুই ছাড়া বাচার নেই রে উপায়
কি ভাবে ওরে!তোকে ছেড়ে
একাকি আমি জীবন কাটায়
অভিমানি মন আমার! চাই তোকে বারে বার
তাই বলি আয় রে ছুটে আয়।
তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়!
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ওই উদাস পুরের বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনায়!!
(মুগ্ধ আবার রুহির দিকে তাকাতে দুজনের চোখ চোখ পরে যায়!আজকে মুগ্ধর চোখে অন্য কিছু বলছে…)
শুধু তোকে ঘিরে শত সপ্নের ভিরে!
এখন আমার বসবাস
তুই এলে জীবনে!পাবো বাচার মানে
পাবো সুখেরই আভাস…
অভিমানি মন আমার! চাই তোকে বারে বার
তাই বলি আয় রে ছুটে আয়।
ওই উদাস পুরের বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনায়!!
তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়!

মুগ্ধ গান শেষ করতেই সবাই হাত তালি দিলো!আজকে অনেকদিন পর মুগ্ধ গান গাইলো।রুহি এতক্ষণ গালে হাত দিয়ে খু্ব মনোযোগ দিয়ে গান শুনছিলো!সবাই যেহেতু পিকনিকে এসেছে তাই এক পাশে রান্নার কাজ চলছে!এখানে সবাই যে যার বফ-গফ এজন্য সবাই কেউ কারো কাঁধে মাথা দিয়ে আছে,কেউ কারো হাতের ভেতর হাত ঢুকিয়ে বসে আছে,কেউ কাউকে একদিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।এসব দেখে রুহি মনে মনে ভাবছে…

রুহিঃ সবার একটা করে খুঁটি আছে!শুধু আমারটা থেকেও নাই।ইসস নিজেকে এখন বন্দি বিড়াল ছানার মত লাগছে!এই শালা উগান্ডা মুগ্ধটা কি সত্যি আমাকে বুঝবে না! আর ভাল লাগছে না। আমার এখন মন চাচ্ছে এই মুগ্ধর মাথায় ঘোল ঢেলে কান ধরে উঠ-বস করায়। (মনে মনে)
মুগ্ধঃকি রে মুখটা এমন করে রাখছিস কেন??রুহি! এই রুহি!!!!! (ধাক্কা দিয়ে)
রুহিঃউফফ শুনতে পাচ্ছি তো!ষাড়ের মত চেচাঁমেচি করছো কেন??
মুগ্ধঃকি বললি তুই???(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ ক ক ক কই আমি তো কিছু বলিনি!তুমি মনে হয় ভুল শুনছো কিছু!
মুগ্ধঃএভাবে বসে আছিস কেন??শীত লাগছে তো রুম গিয়ে চাদর আনতে কি খুব কষ্ট হচ্ছে??
রুহিঃতুমি চলো আমার সাথে!আমি একা যেতে ইচ্ছে করছে না।
মুগ্ধঃচল

মুগ্ধ ওর জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটছে! রুহিও দুম করে মুগ্ধর পকেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মুগ্ধ গাতে মুঠোয় ওর হাত গুজে দেয়!মুগ্ধ ভ্রু রুহির দিকে তাকিয়ে বলে..
মুগ্ধঃআমি এর আগে বলি নি রাস্তা ঘাটে এসব না করতে!হাত বের কর বলছি!!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃএকটু হাতটা রাখলে কি এমন ক্ষতি হবে শুনি!একটু রাখি না প্লিজ (করুন সুরে)
মুগ্ধঃ না একটুও না।হাত বের কর
রুহিঃ পাঁচ টাকার হাত রাখি!প্লিজ (অনুরোধের সুরে)

মুগ্ধ আর কিছু বলতে পারলো!মুগ্ধ রুমে এসে লক খুলে দুজনই রুমে ঢুকলো!রুহি হুট করে মুগ্ধর পায়ের উপর উঠে মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
রুহিঃএখানে যারা আছে সবাই বফ-গফ। আমরা যদি সবার মত হয় তো সমস্যা হবে না মে বি!!
মুগ্ধঃ গলা ছাড় ! আর এই কথা যদি আর একবার শুনি তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম!! (গম্ভীর কন্ঠে)
রুহিঃ কেন বলবো না!আমি তোমাকে ভালবাসি!তুমি সব বুঝেও কেন বার বার আমাকে ইগনোর করো আমাকে!কি নেই আমার মাঝে যে আমাকে একটু ভালবাসতে পারো না।(দুই হাত দিয়ে মুগ্ধর মুখটা ধরে আবেগী সুরে)
মুগ্ধঃরুহি এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে! লিমিট ক্রস করিস না। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহি মুগ্ধকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে দেয়! আর মুগ্ধ বেডে পড়ে যায়।মুগ্ধর বুকের উপর রুহি উঠে বসে আর মুগ্ধর কলার ধরে বলে…
রুহিঃ এতদিন অনেক বুঝেছি কিন্তু তুমি বুঝেও অবুজের মত করছো!আর না! আমি জানি নিজের ভালবাসা কিভাবে আদায় করে নিতে হয়?তুমি ভুলে যেও না আমি কি পরিমান ঘাড়ত্যাড়া!তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি ঠিক ঠিক করতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
মুগ্ধঃ ঠাস্!অনেক সহ্য করছি আর না।তুই আসলেই অসভ্য একটা মেয়ে।(বুকের উপর থেকে সরিয়ে)
রুহিঃহ্যা আমি অসভ্য! যা বলবে আমি মেনে নিবো তাও বলো একবার আমাকে ভালবাসো! “ভালবাসি”এই কথা শুধু একবার বলো না প্লিজ। (মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে)
মুগ্ধঃআমি তোকে ভালবাসি না!ভালবাসি না আমি তোকে!এবার শুনলি তুই। আমি তোকে কোনদিন ভালবাসিনি আর ভালবাসবোও না।(ধাক্কা মেরে)

মুগ্ধ আর কিছু না বলে রাগে হনহন করতে করতে চলে যায়!রুহি বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে।মুগ্ধ রাগে ওর হাতে আঘাত করতে থাকে!মুগ্ধ ভাবেনি রুহি এমন পাগলি করে বসবে।কারন রুহি যদি এমন পাগলি করতে থাকে তো মুগ্ধ নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে না কিছুতেই।

পরেরদিন সকালে…
মুগ্ধ রুহির রুমে এসে দেখে রুহি নেই!মুগ্ধ রুহিকে পাগলের মত হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে।কোথায় খুঁজে না পেয়ে মুগ্ধ পাগলপ্রায় অবস্থা! মুগ্ধ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলো তাদের মধ্যে একজন বললো রুহিকে সামনে রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের দিকে যেতে দেখছে!মুগ্ধ দৌড়াতে শুধু করলো। মুগ্ধ দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাছের দিকে চোখ গেল সেখানে লিখা রুহি +মুগ্ধ!নাম দুইটা লিখে লাভ আঁকানো। মুগ্ধ বুঝলো এটা কিছুক্ষণ আগের লিখা!মুগ্ধ আরো সামনে এগোতে থাকলো। মুগ্ধ এবার রুহিকে দেখতে পেলো!রুহি পাহাড়ের কিনাড়ায় দুই হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে বলছে…
আই লাভ ইউ মুগ্ধ! আই রিয়েলি লাভ ইউ!!!!!!!!!!

রুহির বলা কথা গুলো বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছে! মুগ্ধ খেয়াল করলো রুহি চোখ বন্ধ করে পাহাড়ের দিকে আরো এগিয়ে যাচ্ছে! আর দুই ধাপ দিলো রুহি পাহাড় থেকে ছিটকে পড়বে!মুগ্ধ এবার প্রাণপণে দৌড়ে রুহির হাত ধরে একটু দুরে সরিয়ে আনে!আর ঠাস্ করে একটা থাপ্পড় মারে।রুহি থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়!মুগ্ধ রুহির সামনে বসে হুট করে শক্ত করে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরে!রুহিও মুগ্ধকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!রুহি মুগ্ধর বুকে বুকে কান পেতে শুনছে মুগ্ধর হার্ট অনেক দ্রুত বিট করছে।হয়তো চিরতরে হারানো ভয় টা মুগ্ধর মনে ঢুকে গেছে।রুহির মুখে হাসি ফোটে…..

রুহিঃআমাকে যখন ভালবাসো না তাহলে বাঁচালে কেন??আমি মারা গেলে তোমার কি শুনি??? (অভিমানি সুরে)
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃ এবার তো বলো আমাকে ভালবাসো!
মুগ্ধঃ এমন পাগলামি কেউ করে!কেন এমনন করিস তুই??এখন যদি সত্যি সত্যি কোন অঘটন হয়ে যেত তাহলে আমার কি হতো??আর কখনও এমন কিছু করবি না!তোর কিছু হলে আমি মারা যাবো রে পাগলি (দুই হাত দিয়ে রুহির গাল ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
রুহিঃ আমাকে একটু ভালবাসলে কি হবে?? তুমি যদি আমাকে ভালবাসো আমি সত্যি সত্যি নিজেকে শেষ করে দিবো। (শান্ত কন্ঠে)
মুগ্ধঃঠাস্! সবকিছু নিয়ে পাগলি করা ঠিক না।কেন বার বার অবুজের মত করিস তুই!সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। (থাপ্পড় দিয়ে জড়িয়ে ধরে)
রুহিঃ আমি খালি হাতে ফিরবো না বাসায়! তোমার ভালবাসা নিয়ে ফিরবো নইতো লাশ হয়ে!আমাকে ছাড়ো তুমি!আমি তোমাকে ভালবাসি আর তোমাকে আমার হতেই হবে! সেটা যেটা কোন মূল্যে….(নিজেকে মুগ্ধর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে)

রুহি মুগ্ধর থেকে নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে আবার পাহাড়ের দিকে হাটা ধরে!মুগ্ধ রুহি হাত টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আর রুহির কপালে একটা আদর দিয়ে বলে।
মুগ্ধঃ ভালবাসি সেটা মুখে কেন বলতে হবে?? বুঝে নিতে যদি না পারিস তাহলে এই কেমন ভালবাসা তোর। (রুহির চোখে তাকিয়ে)
রুহিঃ এত কিছু বুঝি না!এবার বলো আমাকে তুমি ভালোবাসো কি না??
মুগ্ধঃহুমম রে খুব ভালবাসি!নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি মারা যাবো আর না হলে পাগল হয়ে যাবো!প্লিজ এমন পাগলামি করিস না।জানিস তোকে পাহাড়ের কিনারায় দেখে আমার হার্টবিট চলাচল বন্ধ করে দিসিলো আমার দম আটকে গিয়েছিলো।(ছলছল চোখে)
রুহিঃহুমম আর এমন পাগলামি করবো না!তোমাকে তো পেয়ে গেছি! এখন থেকে তুমি শুধু আমার।
(আমাকে মাফ করে দিও মুগ্ধ! তুমি হয়তো জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।আর আমার ভালবাসার মানুষটাকে আমার করে পেতে যা যা করার লাগে আমি তাই করবো।এই অভিনয়টা না করলে তোমার মুখ থেকে ভালবাসার কথাটা বের করতে পারতাম না।আজকে থেকে আমাদের ভালবাসার প্রথম ধাপ এগোলো। মনে মনে)

মুগ্ধ আর রুহি রিসোর্টে ফিরলো!আজকে দুজনের মুখেই প্রশান্তির হাসি!এতদিন না বলা ভালবাসার কথা আজকে দুজন দুজনকে বলতে পেরেছে!তারপর সকালে ব্রেক ফাস্ট করে নেয় দুজন মিলে!মুগ্ধর কাছে ফোন আসে যে অফিসে কি সমস্যা হয়েছে তাই তারাতারি ওকে জয়েন্ট করতে বলছে!রুহির মনটা খারাপ হয়ে গেল কারন মনমত ঘুরতেই পারলো না।মুগ্ধ একথাটা সবাইকে জানালো তারপর রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো!তারপর বাসের টিকিট কেটে দুজনেই বাসে উঠে বসলো…

মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখলো রুহি মন খারাপ করে বসে আছে!মুগ্ধ মুচকি হেসে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো…
মুগ্ধঃআমরা আবার বেড়াতে আসবো!মন খারাপ করিস না।
রুহিঃ হুমমম! (মন খারাপ করে)
মুগ্ধঃরুহি তোকে একটা কথা বলার ছিলো!কথাটা তুই সিরিয়াস ভাবে নিস প্লিজ।
রুহিঃহুমম বলো! (মুগ্ধর কাধে মাথা রেখে)
মুগ্ধঃআমি চাচ্ছি না আমাদের রিলেশনে কথা এখন কেউ জানুক!আমাকে একটু সময় দে আমি তোকে খুব তারাতারি আমার বউ করে আনবো!তার আগে তুই প্লিজ বেশি বুঝে সবকিছু ঘেটে ঘ করিস না!আর বাসায় গিয়ে এমন কোন বিহেভ করবি না যাতে কেউ আমাদের ডাউট করুক!
রুহিঃ আমার জানা মতে ভালবাসা তো ভালকাজ!তাহলে কি এখন আমার তোমাকে চোরের মত ভালবাসা লাগবে????আমি তো চোর না! আমি তো ডাকাত তাহলে চোরের মত এখন তোমাকে আমি ভালবাসতে যাবো কেন???

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_12

রুহিঃ আমার জানা মতে ভালবাসা তো ভালকাজ!তাহলে কি এখন আমার তোমাকে চোরের মত ভালবাসা লাগবে????আমি তো চোর না! আমি তো ডাকাত তাহলে চোরের মত এখন তোমাকে আমি ভালবাসতে যাবো কেন???
মুগ্ধঃ সবকিছু নিয়ে দুষ্টুমি আমার একদম ভালো লাগে না!যা বলছি তাই করবি তা না হলে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো।
রুহিঃ এখনও তুমি আমাকে মারবে!আমি না এখন তোমার জানু (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
মুগ্ধঃএখন তো আরো বেশি মারবো!কোন কথা হবে না কারন তোকে মারের উপর না রাখলে তুই ঠিক হবি না।তোকে সব সময় এজন্য আমি মারের উপরেই রাখবো..
রুহিঃ আচ্ছা যত খুশি মারো বাট পরে আদর করে দিও তাহলেই হবে।দেখি এখন হাত সরাও আমি এখন তোমার বুকে শান্তির একটা ঘুম দিবো। নো নড়ন চড়ন নো ডাকাডাকি,,,, অনলি ঘুম আর ঘুম।
মুগ্ধঃরুহি এখন তো দিনের বেলা সবাই দেখতে পাবে! এখন বুকে মাথা দিয়ে ঘুমালে সবার খারাপ ভাববে।তুই আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমা কেমন।বাসায় গিয়ে তোকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো।
রুহিঃ সত্যি তো!!
মুগ্ধঃহুমমম

তারপর রুহি ঘুমিয়ে গেল!মুগ্ধও কিছু একটা ভাবতে ভাবতে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেল।তারপর অনেক লং জার্নি শেষ করে ওরা বাসায় ফিরলো!মুগ্ধ রুহিকে ওর বাসায় যেতে বলে নিজেও ওর বাসায় চলে গেল।মুগ্ধর আম্মু মুগ্ধকে জিজ্ঞেস করলো এত তারাতারি চলে আসলো কেন??মুগ্ধ বললো ওর অফিসে নাকি ওকে দরকার তাই ইমিডিয়েট ওকে জয়েন্ট করতে বলছে….

পরেরদিন সকালে…
আবার সেই প্রানবন্ত রুহি হয়ে গেছে!সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে আড়মোড়া ভেঙে সামনে তাকাতেই দেখলো মুগ্ধ ওর বারান্দায় লাগানো ফুলের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে! মুগ্ধ দেখছে যে রুহি বারান্দায় তারপরেও না দেখার ভান করে গাছে পানি দিয়েই যাচ্ছে। রুহি অনেক ইশারা করলো বাট মুগ্ধ ওর দিকে একবারো তাকায় নি…বরং তারাতারি করে গাছে পানি দিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

রুহি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে ডায়নিং টেবিলে বসে!রুহি খাবার খাচ্ছে আর হুট করে ওর বাবাকে বলে উঠলো..
রুহিঃবাপি একটা কথা বলার ছিলো??
বাপিঃহুমম মামনি বলো!!!তোমার কিছু লাগবে??
রুহিঃনা বাপি আমার কিছু লাগবে না!বাট…
বাপিঃহুমমম বাট কি???
রুহিঃআজকে থেকে আমি পড়াশোনাতে মনোযোগ হবো!ইনশাআল্লাহ ভাল রেজাল্টও করবো।তারপরে আমি যা চাইবো আমাকে কিন্তু তাই দিতে হবে।
বাপিঃহুমম কি চাই বলো??তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দিবো।
রুহিঃআমার যাকে পছন্দ হবে আমি তোমাকে জানাবো!আর তুমি তাকেই আমার সাথে বিয়ে দিবে।যদি রাজি থাকো তো ১ চাপো!আর রাজি না থাকো তো বলে দাও আজকে থেকে এমন গুন্ডামি শুরু
করবো মিনিটে মিনিটে তোমার কাছে রিপোর্টে আসবে।(খেতে খেতে)
আম্মুঃআমি আসলেই রত্নগর্ভা রে মা!কারন কোন মেয়ে যে তার বাবার সাথে এমন ডিল রাখতে পারে আমার তো জানাছিলো না।কি কপাল আমার!এটাও দেখার বাকি ছিলো!!!!
রুহিঃ আম্মু এটা ডিজিটাল যুগ!বিয়ে করবো আমি,সংসার করবো আমি। তাহলে কাকে বিয়ে করবো এই ডিসিশন টাও তো আমাকে ঠিক করতে হবে তাই না।যাই হোক আগে ভদ্র মেয়ে হয়ে দেখায় তারপর না হয় সেসব পরে ভাবা যাবে।আমি উঠলাম বাপি! আমার আবার কলেজে যেতে হবে….

বাপিঃতারমানে আমার মেয়ের মনে কেউ আছে!কেউ আমার মামনির মন চুরি করছে!কে সেই রাজকুমার আমি কি জানতে পারি??
রুহিঃহুমম ওই আর কি!!!আর সময় হলে আমি তোমাদের নিজেই সবকিছু জানাবো।(মাথা চুলকে দৌড়ে চলে যায়)
আম্মুঃসেই হতভাগা কে?? কে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে সেই হতভাগাকে আমার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।এভাবে নিজের বিপদ নিজে কেউ ডেকে নেয়..
বাপিঃএভাবে বলো কেন??আমার মেয়ে কোনদিন থেকে কম শুনি.???
আম্মুঃতোমার মেয়ে সব দিকে থেকেই কম বাট দুষ্টুমিতে শুধু পিএইচডি করা।
বাপিঃ এখন ছোট মানুষ বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে!এসব নিয়ে চিন্তা করো না।
আম্মুঃহুমম আর বড় হতে হতে তোমার মেয়ে, আমাদের সহ সেই হতভাগার জীবন ন্যাতান্যাতা করে দিবে।
বাপিঃ আরে না!রুহি এত দুষ্টুমি করলে আমার বিশ্বাস রুহি তার লাইফ পাটনার চুজ করতে ভুল করবে না।
আম্মুঃওই আশাতে বসো থাকো! একটা সময় দেখবে কোন বখাটে নেশাখোর কাউকে না এনে বলে একেই আমি বিয়ে করবো।
বাপিঃ আমার মেয়ে দুষ্টু হতে পারে বাট তার চয়েজ একটা নিম্নমানের হবে না।

তারপর রুহি কলেজে চলে যায়!আর আজকে সব ক্লাস গুলো করে আর খুব মনোযোগ দিয়ে!ইরা,আর সুমিকেও বলছে আজকে থেকে কলেজ মিস করবে না।এর মধ্যে একটা গুড নিউজ যে ইরা আর রাহাত সত্যি সত্যি রিলেশনে জড়িয়েছে!সত্যি বলতে রাহাত ইরাকে খুব পছন্দ করতো!আর সুমি তো আরিয়ানের সাথে রিলেশন আছে।রুহি রাহাত আর আরিয়ানকে বলে ট্রিট দিতে তারপর রুহি বাসায় এসে সাওয়ার নিয়ে বসে বসে মুগ্ধ দেওয়া পড়াগুলো রেডি করে।তারপর মুগ্ধকে ফোন করে! তিন বারের বেলায় মুগ্ধ ফোন ধরে বলে…
মুগ্ধঃকি রে এই সময় ফোন দিলি কেন??কোন সমস্যা??
রুহিঃ না কোন সমস্যা না!তুমি কি দুপুরে খেয়েছো??
মুগ্ধঃনা একটু পর খাবো!ওয়েট ওয়েট আসল কাহিনী কি বলতো??
রুহিঃ ইয়ে মানে আমার খুব বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে করছে!আসার সময় আনবে প্লিজ
মুগ্ধঃওহহ তাই তো বলি আজকে সূর্য কোনদিকে উঠছে।আর মনে থাকলে আনবো..একটু বিজি আছি এখন।বাই
রুহিঃহুমম বাই

তারপর রুহি মুচকি হেসে ফোন কেটে দেয়!তারপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে একটু ঘুমিয়ে নেয়!৫টার দিকে রুহি ঘুম থেকে উঠে ওদের বাগানে একটু হাটাহাটি করে।এই ফাকে মুগ্ধ দের বাসার ছাদে উঠে করমচা চুরি করে সব সাবাড় করে দিসে।কেউ টেরও পায় নি। তারপর ওর রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে বার বার দেখতে থাকে!আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে…
রুহিঃ এখন থেকে আমার নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে!আমি দেখতে খারাপ হয়ে গেলে মুগ্ধ যদি আমাকে আর ভালো না বাসে।না না কালকে থেকে নিজের যত্ন নেওয়া আমি শুরু করবো।বাট কি করলে সুন্দর হবো???ধুর ছাতা কিছু মাথায় আসছে না… (চিন্তিত হয়ে)

মুগ্ধ অফিস থেকে ফিরে সাওয়ার নিয়ে কেবল বসেছে!ঠিক তখনই রুহি মুগ্ধর রুমে তিরিং বিরিং করে নাচতে নাচতে আসে আর দুম করে মুগ্ধর কোলে বসে পড়ে!মুগ্ধ চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে।মুগ্ধর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে রুহি মুগ্ধ গালে কিস করে বসে!মুগ্ধ তারাতারি করে রুহিকে ওর কোল থেকে নামাতে যায়!তখন রুহি মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে থাকে।

মুগ্ধঃ রুহি নাম বলছি!হুট করে কেউ চলে আসবে তো
রুহিঃআসুক তাতে আমার কি??দেখলে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে ভালোই তো হবে।
মুগ্ধঃ এমন করলে আমি তোকে আর পড়াবো না বলে দিলাম।(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ তুমি আসলেই একটা করলার রস!আন রোমান্টিক ছেলে একটা….
মুগ্ধঃআজকে যা করলি এমন ভুল যেন আর না হয়!যদি তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।আমার ভালবাসার যেমন পবিএ!তেমনি ভালবাসার মানুষটাকেও আমি পবিএ রাখতে চাই।বিয়ের আগে এসব যাতে আর না দেখি…মাইন্ড ইট।
রুহিঃ আমি মেয়ে ভয় পাইনা আর তুমি ছেলে হয়ে এত ভয় পাও কেন বলো তো???
মুগ্ধঃ সেটা যদি বুঝতি তাহলে গাধীর মত এই কথাটা বলতি না।
রুহিঃ শোন এত ভয় পেও না আমি আছি তো!তোমার বাবা মা যদি আমার সাথে বিয়ে না দেয় তো দরকার পড়লো তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো তারপরেও তুমি ভয়ে পেও না।
মুগ্ধঃ হুমমম তোকে আমি আর পড়াবো না।তুই যা আর কালকে থেকে আর পড়তে আসার দরকার নাই।
রুহিঃ এই না না! আমি তো ফান করছিলাম।আর বকবক করবো না।
মুগ্ধঃআর হাজিবাজি দুষ্টু বুদ্ধি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল! কারন কেউ যদি দেখে তো আমাদের নিয়ে কটু কথা বলবে! আর আমি ছেলে আমার কিছু না হলেও বাট তোর গায়ে বদনাম নামক কালিটা এসে লাগবে।এজন্য বলছি দুষ্টুমির মাঝে এমন কিছু করিস না! যেটা করলে আমার তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে…

প্যারাময় লাভ পর্ব ৭+৮+৯

মুগ্ধর চিন্তা ভাবনা রুহিকে বার বার মুগ্ধ করে!আজকেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।রুহিও মুগ্ধ কথা মেনে নিয়েছে। তারপর রুহি সুন্দর করে বসে পড়তে শুরু করে!একটা পড়া মুগ্ধ রুহিকে খুব সুন্দর করে পড়া বুঝাতে থাকে বাট রুহির কিছু বুঝতে পারছে না।
মুগ্ধ বার বার বোঝানোর পরেও রুহির মাথায় পড়াটা ঢুকছে না! মুগ্ধ ঠাস্ করা একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে।
মুগ্ধঃআমার দিকে হা করে না তাকিয়ে থেকে যা বোঝাচ্ছি সেটা বোঝার চেষ্টা কর।(দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহি মার খাওয়ার পর গালে হাত দিয়ে এবার সত্যি সত্যি পড়াতে মনোযোগ দিলো আর বুজেও গেল!মুগ্ধর থাপ্পড় রুহির কাছে সব সময় মেডিসিনের মত কাজ করে।এজন্য মার খাওয়ার পর সব বুঝে গেছে।
এর মধ্যে মুগ্ধর আম্মু দুজনের জন্য বিরিয়ানী নিয়ে আসে!মুগ্ধর আম্মু রুমে এসে দেখছে রুহি লক্ষী মেয়ের মত পড়ছে! আর মুগ্ধ ওর অফিসের কাজ করছে।মুগ্ধর আম্মু চলে যাওয়ার পর! রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…

রুহিঃ জড়িয়ে ধরার আবদার করলাম না,আদর করার আবদারও করলাম না,কিন্তু যাকে ভালবাসি তার হাতে খেতে চাওয়ার আবদার টাতো করতেই পারি তাই না…
মাঝে মাঝে রুহির যুক্তির কাছে মুগ্ধও হেরে যায়!আর এখনও তাই হয়েছে এজন্য মুগ্ধ আর কোন কথা বলেনা! মুগ্ধ রুহিকে খাওয়াতে থাকে আর রুহি তৃপ্তি সহকারে খাচেছ আর লিখছে….

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৩+১৪+১৫