প্যারাময় লাভ পর্ব ১৩+১৪+১৫

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৩+১৪+১৫
written Nurzahan akter Allo

মাঝে মাঝে রুহির যুক্তির কাছে মুগ্ধও হেরে যায়!আর এখনও ঠিক তাই হয়েছে এজন্য মুগ্ধ আর কোন কথা না বলে! মুগ্ধ রুহিকে খাওয়াতে থাকে আর রুহি তৃপ্তি সহকারে খাচেছ আর লিখছে….

তারপর দুজনেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে!মুগ্ধও রুহির সব পড়ানো শেষ করে রুহিকে ছুটি দেয়।রুহি মুগ্ধর রুমে থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসে! তারপর ড্রয়ার থেকে চকলেট নিয়ে চলে যায়!রুহি জানে এখানে সবসময় রুহির জন্য চকলেট থাকে।মুগ্ধ কিছু বলে না মুচকি হাসে শুধু….

মুগ্ধ কিছুক্ষন পরে রুমে থেকে বের হয় নিচে এসে দেখে!ড্রয়িং রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে।রুহি আর ওর আম্মু সোফাতে বসে দই খাচ্ছে আর হা করে দুজনেই মুভি দেখছে!মুগ্ধর আম্মু একটা বাটিতে নিয়ে দই খাচ্ছে আর রুহি দইয়ের নাড়টাই ধরে বসে পড়ছে।মুগ্ধ টিভির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ওরা এত মনোযোগ দিতে কি দেখছে??রুহি আর মুগ্ধর আম্মু বসে বসে হরর মুভি দেখছে!মুগ্ধও সোফাতে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো…

রুহি মুভিতে দেখছে ভূতটা একটা মেয়ের পাশে বসে আছে!আর পাশে বসে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর হাসি দিচ্ছে। তখন রুহিরও কেন জানি মনে হচ্ছে ওর পাশের সোফাতে কেউ বসে আছে!রুহি আড়চোখে তাকিয়ে একটা চিৎকুর দিয়ে! মুগ্ধর আম্মুর কোলে উঠে বসে গলা জড়িয়ে ধরে ভূত ভূত করে চিৎকার করছে!মুগ্ধর আম্মুও আশে -পাশে না দেখে রুহির কথা শুনে উনিও চোখ বন্ধ করে ভূত ভূত করে চিৎকার করছে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওদিকে মুগ্ধ ওর বুকের হাত দিয়ে বসে আছে!কারন হুট করে এমন চিৎকারে ও হার্ট এ্যাটাক করছে কি না বোঝার চেষ্টা করছে।মুগ্ধর বাবা দৌড়ে আসে ড্রয়িং রুমে আর লাইট জালিয়ে দেখে!রুহি মুগ্ধর আম্মুর কোলে! আর মুগ্ধ পাশের সোফাতে বসে ওর বুকে হাত দিয়ে আছে।লাইট জালানো পর রুহি আর মুগ্ধর আম্মু চোখ খুলে তার শান্ত হয়ে দুজনেই বসে।হঠাৎ রুহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে! মুগ্ধ আর ওর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রুহি কাদছে কেন???

মুগ্ধর বাবাঃআরে বোকা মেয়ে এগুলো সত্যি না তো!মানুষ এমন ভূত সেজে মুভি করে!কাঁদে না মা এখানে ভয়ে পাওয়ার কিছু নেই তো…
মুগ্ধঃ এত ভয় পাস তো এসব দেখিস কেন?মন চাচ্ছে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারি!আর আম্মু তুমিও ওর সাথে এড হয়ে বাচ্চার মত চিৎকার করছো!!! (রেগে গিয়ে)
মুগ্ধর আম্মুঃভয় সবারই লাগে!বাচ্চা আর বুড়ো বলে কোন কথা নাই।আর মুগ্ধ তুই বা এভাবে ঘাপটি মেরে কখন এসে বসেছিস!!
মুগ্ধঃ ঘাপটি মেরে বসবো কেন??তোমাদের সামনে দিয়ে এসেই তো বসলাম।তোমরা পারোও বটে…..
মুগ্ধর বাবাঃকি হলো এখনো কাঁদছিস কেন রুহি মা!তুই তো আমার সাহসী মেয়ে কাঁদে না মা
রুহিঃ আ আম আমি ভয়ে পেয়ে কাঁদছি না বড় বাবা!আমার সব দই মেঝেতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল!এখন আমি কি খাবো??আমার এখন দই খেতে ইচ্ছে করছে বড় বাবা!এখন যদি আমি দই না খায় তো আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের মুখ দিয়ে লালা পড়ছে শুধু… (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)
মুগ্ধঃদেখছো বাবা কেমন হ্যাংলা একটা মেয়ে!ও এখনও দই খাওয়া নিয়ে পড়ে আছে।
মুগ্ধর বাবাঃ মুগ্ধ বাইক টা বের করো আর রুহিকে নিয়ে গিয়ে দই কিনে দাও!
মুগ্ধঃএত রাতে এখন আমি যেতে পারবো না!কালকে আমি দই এনে দিবো।
রুহিঃনা আমি এখনই খাবো।এখন দই না খেলে আমার ঘুম আসবে না। (মুখ ফুলিয়ে)
মুগ্ধর বাবাঃযাও মুগ্ধ! কোন কথা না….যাও

মুগ্ধর আর কি করা!রুহিকে নিয়ে ছুটলো দই কিনতে।মুগ্ধ পাশে বসে আছে রুহি!রুহি মুগ্ধর কাধে থুতনি রেখে বললো…
রুহিঃএই যে আমার হুঁকোমুখো বরটা!আমি কি আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখতে পারি।
মুগ্ধঃ কেন আপনি আমার কে হন যে আপনাকে আমার কাঁধে মাথা রাখতে দিবো??(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃআপনি আপনার লাল টুকটুকে বউ!
মুগ্ধঃ আপনি ভুল করছেন মিস! আমি এখনো বিয়ে করিনি তাই আমার বউ নেই (দুষ্ট হেসে)
রুহিঃ তাই না দাড়াও দেখাচ্ছি মজা…(মুগ্ধর পেটে চিমটি কেটে)
মুগ্ধঃআউচচচ! চিমটি কাটছিস কেন???উফফ ব্যাথা পাচ্ছি তো।
রুহিঃ ব্যাথা দেওয়ার জন্যই তো চিমটি দিসি (মুগ্ধর কাধে থুতনি রেখে।
মুগ্ধঃ দই খাওয়ার অভিনয় টা না করলেও পারতেন তাই না। (মুচকি হেসে)
রুহিঃ তোমার সাথে আর একটু থাকার লোভটা সামলাতে পারলাম না।তুমি সেই সকালে অফিসে যাও সন্ধ্যায় আসো আমাকে তো সময়ই দাও না এজন্য….
মুগ্ধঃহুমমম এজন্য এত রাতে দইয়ের নাম করে বের
হয়েছেন।
রুহিঃহুমমম! এই সুযোগ ছাড়ার মত বোকা মেয়ে আমি না।

তারপর দুইজন গিয়ে দই কিনলো!মুগ্ধ রুহিকে আলাদা কিনে দিসে আর ওর মায়ের জন্য আলাদা কিনছে!কারন রুহি আর মুগ্ধর মা খুব বেশি দই পছন্দ করে!রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে ছানার মিষ্টি দেখিয়ে দেয়! মুগ্ধ দোকানদারকে দুই জায়গায় ছানার মিষ্টিও প্যাক করে দিতে বলে।তারপর ওরা বাসায় ফিরে যায়!রুহি এক প্যাকেট নেয় আর মুগ্ধ এক প্যাকেট নিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়।তারপর রুহি বেশ আয়েশ করে বসে তৃপ্তি সহকারে প্রাণ দই খায়..আর রাতে জমপেশ একটা ঘুম দেয়।
.

পরের দিন সকালে…
রুহি মুগ্ধদের বাসায় আসে বই নিতে!কালকে রাতে বই গুলো এখানে রেখে চলে গিয়েছিলো!রুহি মুগ্ধদের বাসায় গিয়ে দেখে মুগ্ধর আম্মু কাঁদছে!রুহি দৌড়ে গিয়ে রুহির আম্মুকে ডেকে আনলো!তারপর মুগ্ধর আম্মু কাছে জানতে চাইলো কাঁদছে কেন??মুগ্ধর আম্মু জানালো যে উনার বাবা খুব অসুস্থ কিন্তু মুগ্ধ কে একা রেখে উনি যেতে চাচ্ছে না।মুগ্ধ তখন অফিস জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছিলো তখন মুগ্ধর আম্মু মুগ্ধকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে…

মুগ্ধর আম্মুঃ কতদিন মুগ্ধকে বলছি!মুগ্ধ এবার বিয়েটা করে ফেল বাবা!কিন্তু না কে শুনে কার কথা ওর দুইটা বন্ধু বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে আর আমার ছেলে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আজকে বাসায় একটা বউ থাকলে আমি নিশচিন্তে যেতে পারলাম…..(শুনিয়ে শুনিয়ে)
মুগ্ধঃ আবার সকাল সকাল শুরু করছো!তুমি যাও নানাভাইকে দেখতে আমি কি তোমাকে না করছি??এখন দোষ পাচ্ছো না আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করছো। (ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে)
রুহির আম্মুঃভাবি আপনি নিশচিন্তে যান!মুগ্ধ এই কয়েকদিন আমার বাসায় থাকবে আর আমার বাসায় খাবে।আমরা আছি তো…
মুগ্ধঃউফফ মেজ আম্মু তুমিও! আমি বাচ্চা না যে বাসায় একা থাকে পারবো না।তবে তুমি চাইলে রান্না করে খাবার পাঠিয়ে দিও তাহলেই হবে।
মুগ্ধর আম্মুঃএতদিনে যদি বিয়ে করে ফেলতি তাহলে আমিও নাতি-নাতনীর মুখ দেখতে পেতাম।আমার কি শখ জাগে না!
রুহিঃ আসল কথা কি জানো বড় আম্মু ??তোমার ছেলে কচি থাকতে চাই বুঝলে!এজন্য বিয়ে করতে চাচ্ছে না।বিয়ে করলে তো কোন মেয়ে আর উনার পেছনে পড়ে থাকবে না তাই…
মুগ্ধঃ এই তুই কলেজ যাবি না!যা ভাগ এখান থেকে।উনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরো তেল মারছে…
(তোমার ছেলে যে এই পিচ্চি টাকে খুব ভালবাসে আম্মু!কিছু দিন সময় দাও আমার পিচ্চি বউটা আর একটু বড় হোক তখন না হয় বউ করে আনবো।আর এখন বিয়ে করলে আমাকে আর তোমাকে এমনিতেই জালিয়ে মারে তখন আরো করুন অবস্থা করে ছাড়বে। সময় হোক সব হবে।মনে মনে)

তারপর মুগ্ধর বাবা আর ওর আম্মু চট্টগ্রাম চলে যায়!মুগ্ধও অফিস চলে যায়!রুহিও কলেজে চলে যায়।রুহি আজকে কলেজে গিয়ে জানতে পারে সামনে সপ্তাহ থেকে ওর পরীক্ষা! রুহি পরীক্ষা রুটিন নিয়ে বাসায় চলে আসে!সন্ধ্যায় মুগ্ধ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ওর রুমে শুয়ে ছিলো!তখন রুহি পড়তে আসে।রুহি হুট করে মুগ্ধর উপর শুয়ে পড়ে আর জড়িয়ে ধরে!মুগ্ধ আজকে কিছু বলে না!রুহি মাথা তুলে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে…

রুহিঃচল আমরা বিয়ে করে ফেলি!(মুগ্ধর বুকে থুতনি রেখে)
মুগ্ধঃ বিয়ে করে কি হবে??এখনই যেমন আছি তেমনই তো ভাল আছি।তুই তো একটা প্যারা..
রুহিঃ কি!তুমি আমাকে এটা বলতে পারলে (মুগ্ধর বুকে কিল বসিয়ে)
মুগ্ধঃ কই আমি তো কিছু বলিনি!আর বিয়ে বিয়ে করিস কেন??এখনই লুকোচুরি প্রেম করে তো খুব খুব ভালো আছি…
রুহিঃবিয়ে করলে আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে যাবো আর বড় মা পাবে নাতি-নাতনি!!!
মুগ্ধঃসেসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন মাথায় থেকে! আর পড়াশোনাতে মন দিন।
রুহিঃওহহ একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি!আজকে পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে আগামী সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা। আমার না খুব ভয় লাগছে
মুগ্ধঃআরে ধুর কিসের ভয়!এই উঠ আর পড়তে বস!এখন এই কয়েকদিন ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে…
রুহিঃআর একটু থাকিনা!কতদিন তোমার বুকে মাথা রাখি না।একটু শান্তি দাও না প্লিজ। তোমাকে জড়িয়ে ধরলে এত শান্তি লাগে কেন??মনে হয় আমার সব সুখ তোমার বুকের মধ্যে আছে।আজকে একটা সত্যি কথা বলবে আমাকে??
মুগ্ধঃকি সত্যি কথা শুনি ???
রুহিঃতুমি আমাকে দুরে ঠেলে দাও কেন??তোমার কি আমাকে কাছে পেতে মন চাই না???নাকি আমাকে ভালো লাগে না।
মুগ্ধঃতোকে দুরে সরিয়ে রাখি কারন তুই বেশি কাছে আসলে আমি যদি নিজেকে কনট্রোল করতে না পারি।আমারো তোকে কাছে পেতে মন চাই বাট নিজের মনকে বোঝায় যে এসব এখন ঠিক না বুঝলি রে গাধী।কারন আবেগের বশে কোন ভুল করে সারাজীবন সেই ভুলের মাশুল গুনতে আমি রাজি না।
রুহিঃহুমমম

তারপর উঠে মুগ্ধ রুহিকে পড়ায়! রুহি পড়া শেষ করে দুজনেই রুহিদের বাসায় গিয়ে ডিনার করে নেয়!,মুগ্ধ ডিনার করে ওর বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে।এভাবে কিছু দিন চলে যায় আর রুহির পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে।রুহি এখন সারাদিন বই মুখ গুজে থাকে!পরীক্ষার টেনশনে রুহি জর এসে গেছে!মুগ্ধ অফিস থেকে এসে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর রুহিকে আসতে না দেখে মুগ্ধ রুহিদের বাসায় যায়!আর গিয়ে শুনে রুহির জর এসেছে!

মুগ্ধ রুহির রুমে গিয়ে দেখে রুহি ঘুমিয়ে আছে!মুগ্ধ আস্তে করে রুহির কপালে হাত ছোঁয়াতেই রুহি চোখ পিটপিট করে খুলে মুগ্ধকে দেখে একটা হাসি দেয়।তারপর মুগ্ধর হাতটা ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। রুহির আম্মুর এদিকে আসার শব্দ পেয়ে মুগ্ধ ওর হাত ছাড়িয়ে নেয়!রুহির আম্মু রুহিকে আর মুগ্ধকে খেতে ডাকে!রুহি জেদ ধরে খাবে বলে…মুগ্ধ উঠে চলে যায়।তারপর খাবার এনে রুহিকে জোর করে টেনে তুলে খাবার খাইয়ে দেয় সাথে মেডিসিনও।মুগ্ধও অল্প করে খেয়ে নিলো! এখন ওর না চাইলেও বাসায় যেতে হবে তাই রুহি আর ওর আম্মুকে বলে বাসায় চলে গেল।

রুহির পরীক্ষার দিন মুগ্ধ নিজে রুহিকে কলেজে দিয়ে আসে!রুহি মুগ্ধর পাশে দাড়িয়ে আছে তখন রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…
রুহিঃ একটা কথা বলবো তোমাকে??
মুগ্ধঃহুমমম (ফোনে টিপতে টিপতে)
রুহিঃচারদিকে তাকিয়ে দেখো সবাই কত পড়ছে!বাট আমি কি পড়বো সেটা বুঝতে পারছি না।সত্যি বলতে আমি তো পড়ায় খুজে পাচ্ছি না।
মুগ্ধঃসবাই পড়ছে পড়ুক তোর কি??তুই একটু রিলেস্কে থাক!পড়লেই হয় না মাথা কিছু ধরে রাখতে হয়।আর এখানে যারা পড়ছে তারা বেশিরভাগই লোক দেখানো পড়ছে।নিজের উপর বিশ্বাস রাখ দেখবি তুইও পারবি…. মনের জোর আর বুকে সাহস থাকলে কঠিন কাজকেও সহজ করা সম্ভব।
রুহিঃহুমমম! আচ্ছা আমি যদি ভাল রেজাল্ট করি তো আমাকে তারাতারি তোমার বউ বানাবে তো।নাকি ফাকি দিয়ে অন্য ডালে উড়ে বসবে।
মুগ্ধঃ এসব কথা আজকে থাক!২মিঃ আছে আর যা গিয়ে সিটে বস!

রুহি মায়া ভরা দৃষ্টিতে একবার মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধর একটু কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…
রুহিঃ এই রুহি তোমার জন্য নিজেকে একটু বদলেছে!শুধু তোমাকে ভালবাসে তাই!পরীক্ষা দিচ্ছি রেজাল্টও ভাল আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন যদি বিয়ে না করে আ উ আ য়ু করো তো তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।আমার কাছে তুমি আগে তারপর বাকি সব কিছু… মনে রেখো কথাটা (কানে কানে)

রুহি কথাটা বলে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে একটা ফ্ল্যাইং কিস ছুড়ে চলে গেল।আর মুগ্ধ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো।আর রুহি পরীক্ষা দিতে চলে গেল…

মুগ্ধ বেশ কিছু কাজ সেরে আবার রুহির কলেজে চলে আসে!পরীক্ষা শেষ হতে আর ৩ মিঃ বাকি।মুগ্ধ ওর বাইকের উপরে বসে আছে!পরীক্ষার শেষ ঘন্টাটা বেজে উঠলো একটু পর রুহিও বের হয়ে আসলো।রুহি আর সুমি বের হয়ে দেখে মুগ্ধ বাইকের উপর হিরো সেজে বসে আছে!সুমি আর ইরা চলে গেল।আর রুহি মুগ্ধর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মুগ্ধ রুহির কোশ্চেন টা দেখলো! যা পড়িয়েছে তার মধ্যে সব এসেছে এখন রুহি কি লিখছে সেটা রুহি জানে..মুগ্ধ রুহিকে বললো বাইকে উঠতে!রুহি বাইকে উঠতে উঠতে বললো…

রুহিঃ ওহ ভাইয়া!আমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে তুমি জিজ্ঞাসা করবে না???
মুগ্ধঃনা! কারন পড়াচোর রা খারাপ পরীক্ষা দিয়েও বলে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে!তাই একেবারে রেজাল্টেই দেখবো।কেমন পরীক্ষা দিয়েছেন….

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_14

রুহিঃ পরীক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্ঞাসা করবে না।
মুগ্ধঃনা! কারন পড়াচোর রা খারাপ পরীক্ষা দিয়েও বলে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে।তাই একেবারে রেজাল্টেই দেখবো।
রুহিঃ ওহহ!ঠিক আছে। ইসস কবে যে আমার পরীক্ষা শেষ হবে আর কবে যে তোমাকে আমার বাচ্চার বাবাই বানাতে পারবো।

মুগ্ধ রুহির কথা শুনে সাথে সাথে ব্রেক মারে আর রুহি মুগ্ধর গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।মুগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এই রাস্তায় তেমন কেউ নাই তাই ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রুহির গালে।মুগ্ধ যে রুহিকে থাপ্পড়টা মারলো তাতেও রুহির কোন হেলদোল নাই!মুগ্ধ রুহিকে একটানে বাইক থেকে নামিয়ে নিজেও নামে আর রুহির দিকে তাকিয়ে বলে ….

মুগ্ধঃএসব বলতে তোর লজ্জা লাগে না!
রুহিঃবিয়ে আমি তোমাকেই করবো আর বিয়ে করলে তো বাচ্চার বাবা হবেই! তাহলে এত চ্যাতো কেন??
মুগ্ধঃদিন দিন মুখের লাগাম কি টেনে খুলে ফেলছিস তুই!কোথায় কি বলতে হবে তাও কি এখন তোকে শিখিয়ে দিতে হবে।মাথায় সব সময় দুষ্টুমি বুদ্ধি…
রুহিঃ আমার মুখের লাগাম আমি টেনে খুলেনি!ওটা এমনি এমনি ঠুস করে খুলে কোথায় জানি
পড়ে গেছে…??
মুগ্ধঃ অসভ্য মেয়ে তুই আটো করে চলে যা!তোর সাথে আমি যাবো না। (রেগে গিয়ে)

রুহি মুগ্ধকে একটা ধাক্কা দিলো!মুগ্ধ কয়েক পা পিছিয়ে গেল!রুহি ওর হাতের পরীক্ষার ফাইল মুগ্ধর হাতে ধরিয়ে দিলো তারপর রুহি মুগ্ধর বাইকে বসে বাইক স্টাট দিয়ে মুগ্ধকে রেখে শা করে চলে গেল।মুগ্ধ হাবলার মত তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ আর উপায় না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলো!আজকে রোদের তাপ খুব এজন্য মুগ্ধ রুহির পরীক্ষায় ফাইলটা দিয়ে মুখটা ঢেক হাঁটছে… হঠাৎই খুব দ্রুত একটা বাইক এসে মুগ্ধর সামনে ব্রেক মারে!আর একটু হলেই মুগ্ধর লেগে যেত।মুগ্ধ মাথা উঠিয়ে দেখে এটা তারই লেডি গুন্ডী রুহি।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…

রুহিঃজানু তারাতারি বাইকে এসে বসো তা না হলে রোদে পুড়ে নিগ্রোদের মত ফর্সা হয়ে যাবে।(দুষ্টু হেসে)

মুগ্ধ কিছু আর বললো না রুহির পেছনেই বসে পড়লো।রুহি বাইক চালাচ্ছে আর মুগ্ধ পেছনে বসে আছে!কলেজ ড্রেস পড়ে রুহিকে বাইক চালাতে দেখে রাস্তার মানুষ গুলো কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে!তারপর রুহি মুগ্ধদের বাসায় এসে বাইক থামালো আর মুগ্ধ বাইক থেকে নামতেই রুহি মুগ্ধর প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করে একহাজার টাকার নোট বের করে নিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো…

রুহিঃতোমার মত জলহস্তী’ এত কষ্ট করে বাইকে করে আনলাম তাই এই টাকাটা নিলাম।
মুগ্ধঃবাইক আমার,বাইকের তেল আমার আর আমাকেই আনতে আবার আমার থেকেই টাকা নিচিছস। তা এরকম গুন্ডীগিরি করে কতদিন চলবি..
রুহিঃ আমি হলাম গুন্ডী! আর শুধু মুগ্ধর গুন্ডী!মুগ্ধ যতদিন থাকবে আমি ততদিনই এমন করেই চলবে… গেলাম টাটা (একটু মাস্তানি করে)

ইটুস খানি ডাকো একখান কথা রাখো
ভাল বাসইয়া একবার তুমি বউ কইয়া ডাকো…
রুহি গান বলতে বলতে ওর বাসায় চলে গেল!আর মুগ্ধও মুচকি হেসে ওর বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে দুপুরে ঘুমালো।আর রুহি ওর রুমে গিয়ে উরাধুরা গানের সাথে নাচ শুরু করলো! আর নাচের সাথে ওর গাওয়া রিমিস্ক সং তো আছেই।সাওয়ারে পানি ছেড়ে ভিজে ভিজে নাচানাচি করা ওর একটা রেগুলার কাজ!রুহির আম্মু রুহিকে বার বার নিষেধ করছে ওয়াশরুমে এমন করে না লাফাতে। রুহির আম্মু রুহির রুমে এসে আবার মানা করতে না করতেই রুহি চিটপটাং হয়ে ঠাস করে পড়ে গেল!আর চিৎকুর দিয়ে উঠলো…..

রুহিঃওরে আম্মু রে আমি পড়ে গেলাম রে!কেউ আমাকে টেনে তোলে রে..আহ রে…
আম্মুঃরুহি তুই কি পড়ে গেছিস?কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস???লাগে নি তো…রুহি দরজা খোল
রুহিঃ পড়ে গেলে আবার লাগবে না!আর কোথায় লেগেছে কি করে যে বলি??লজ্জাও তো লাগে (ওভাবে শুয়ে শুয়েই বললো)
আম্মুঃতুই দরজা খোল!দেখি কোথায় ব্যাথা
পেয়েছিস???(দরজা নক করে
রুহিঃ আম্মু গো তোমার মনে হয় আর নাতি-নাতনি দেখা হবে না গো আম্মু!আমি শেষ…. ওহ আম্মু গো আমি মনে হয় সারাজীবন কুঁজো হয়েই থাকবো গো আম্মু। (চিৎকার করে)
আম্মুঃআগে তুই তো বেঁচে ফিরে আয় মা! তারপর না হয় তোর বাচ্চার কথা তুই চিন্তা করবি।

রুহি খোঁড়াতে খোঁড়াতে দরজা খুলে রুমে আসলো!অনেক কষ্টে ও ড্রেস বদলে নিলো!তারপর ওর আম্মু ওর মাথা মুছে দিলো!কোমরে আর পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই ওর আম্মু ব্যাথার স্প্রে করে দিলো!তারপর রুহিকে ওর আম্মু খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেল।রুহিও আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল!

বিকাল বেলা রুহি ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেল!বেশ কয়েকদিন ধরে কুট্টুশকে বের করা হয়নি!প্রায় দেড় মাস আগেই কুট্টুশের তিনটা বাচ্চা হয়েছে!রুহি কুট্রুশকে তুললেই কিছু একটা বুঝলো!তারপর কুট্টুশের বর তুমুলকে কোলে নিয়ে মুগ্ধর বাসার দিকে হাটা দিলো!মুগ্ধ তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বসেছে! ড্রয়িং রুমে মুগ্ধর বাবা, মুগ্ধর আম্মু আর মুগ্ধ বসে ছিলো।রুহি হনহন করতে করতে করতে মুগ্ধর সামনে যায়!মুগ্ধ দেখে রুহি তুমুলের কান ধরে ঝুলিয়ে রাখছে!রুহি মুগ্ধর কোলে তুমুলকে একপ্রকার ছুড়ে মারে আর রাগে গজগজ করতে করতে বলে….

রুহিঃকুট্টুশের কেবল ৪০ দিন হলো তিনটা বাচ্চা হয়েছে!তোমার তুমুলের কাজ কাম নাই সারাদিন ঘরে বসে থাকে! আর সুযোগ পেলেই আমার কুট্টুশের সাথে আকাম করে আর বার বার কুট্টুশকে পেগনেন্ট করে দেয়।দুইটি বাচ্চার বেশি নয় একটি হলে ভালো হয়!সেখানে কুট্টুশের তিনটা বাচ্চা হয়ে গেছে।এখন তোমার তুমুল আবার আমার কুট্টুশকে পেগনেন্ট করে দিসে!যত্তসব লুচু খরগোশ আমার কপালেই জুটছে!তোমার তুমুলের সাথে আমার কুট্টুশের ডিবোস করাই দিবো!আর কোনদিন যেন তোমার তুমুলকে আমার কুট্টুশের আশে পাশে না দেখি…..(একদমে কথাগুলো বলে হনহন করতে করতে চলে গেল)

মুগ্ধর বাবা-মা সামনে বসা।উনারা অবাক হয়ে রুহির কথা গুলো শুনছে!আর মুগ্ধ এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না!নিজের বাবা মায়ের সামনে ওভাবে অপদস্থ হতে হবে সেটা মুগ্ধ কল্পনাও করে নি!রুহি হয়তো তুমুলকে বলছে! বাট কথাগুলো মুগ্ধর বাবা মায়ের সামনে বলাতে মুগ্ধর এখন কেন জানি খুব লজ্জা লাগছে…মুগ্ধ কোন উপায় না পেয়ে তুমুলকে নিয়ে ওর বাগানে চলে গেল।মুগ্ধ তুমুলকে ছেড়ে দিলো! তুমুল এখন বসে বসে ঘাস খাচ্ছে….
মুগ্ধ মনে মনে ভাবছে…

মুগ্ধঃরুহি তোর কি সত্যি কেন বুদ্ধি হবে না!আর ও এসব কি বলে চলে গেল?আমি কি তুমুলকে শিখিয়ে দিয়েছি যে কুট্টুশকে পেগনেন্ট করতে।আল্লাহ এই মেয়ের মাথায় একটু বুদ্ধি দাও!আর কত নিজের ইজ্জতের ফালুদা হতে দেখবো।(কপাল চাপড়ে)

ওদিকে রুহি কুট্টুশকে ডায়নিং টেবিলে উপর বসিয়ে আপেল কেটে দিচ্ছে আর কুট্টুশ মনের সুখে কুচকুচ করে আপেল খাচ্ছে। রুহি আপেল কেটে ডায়নিং টেবিলে দুই রেখে গালে হাত দিয়ে বসে কুট্টুশের আপেল খাওয়া দেখছে!রুহির আম্মু এসে রুহির মাথায় একটা ঠুয়া মেরে বললো..

আম্মুঃএই খরগোশ টাকে না খাইয়ে তুই খেলেও তো পারিস!!
রুহিঃবলছি না ওর নাম খরগোশ না!ওর নাম কুট্টুশকে আর আমি আপেল খাবো কেন??আমি কি
কুট্টুশের মত পেগনেন্ট নাকি যে এখন বসে বসে আপেল খাবো আমি।
আম্মুঃএই খরগোশ টার না কিছুদিন আগে বাচ্চা হলো!আবার পেগনেন্ট।আমার বাসা তো দেখি খুব তারাতারি খরগোশের বাসায় পরিণত হবে।তারাতারি এই আপদ বিদায় কর। (রেগে)
রুহিঃ কুট্টুশের কোন দোষ নাই! মুগ্ধর তুমুল ই আমার এই কুট্টুশকে বার বার পেগনেন্ট করে দিচ্ছিলো।তাই ওকে মুগ্ধর কাছে রেখে আসছি আর আপদও বিদায় করছি।
আম্মুঃ মুগ্ধ কি তোর ছোট নাকি যে নাম ধরে ডাকছিস?মুগ্ধ ঠিকই বলে তোকে মারের উপর রাখলেই তুই ঠিক হবি। অসভ্য মেয়ে…
রুহিঃ ছোট হলে তো ল্যাটা চুকে যেত!সারাদিন কান ধরে দাড় করি রাখতাম ওই উল্লুকটাতে..
(না হবু বরের নাম ডাকবো না তো ওরে বাবা বলে ডাকবো!তোমরা কেন যে বুঝো না আমার বাচ্চার বাবাই হবে ওই শালা উগান্ডার বানর! তাহলে ওরে ভাইয়া ডাকি কি করে??)
আম্মুঃ তুই আর মানুষ হবি না!(বিরক্ত হয়ে)
রুহিঃহুমম আমি তো মানুষ না!আমি তো বুনো বিড়াল।এবার তুমি খুশি তো…

রুহির আম্মু কিছু বললো না!বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল!রুহি বসে বসে কুট্টুশকে খাওয়াতে থাকলো!তারপর সন্ধ্যার আজানের পর হালকা কিছু নাস্তা করে মুগ্ধর বাসায় চলে গেল পড়তে!মুগ্ধর আম্মু তখন মন খারাপ করে বসেছিলো কারন তার তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেছে!এখন লবণ কমাবে কি করে সেই চিন্তা এখন উনি বেশ চিন্তিত। রুহি মুগ্ধর আম্মুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলো।তখন মুগ্ধর আম্মু বললো…

মুগ্ধর আম্মুঃকত সুন্দর করে গরুর মাংস রান্না করলাম! কিন্তু এখন টেস্ট করে দেখি লবণ বেশি হয়ে গেছে।
রুহিঃ এককাজ করো মাংসের মধ্যে টমেটো আর ধনেপাতা দিয়ে দাও তাহলে দেখবে লবণ কমে গেছে।
মুগ্ধর আম্মুঃ তাহলে কমবে তো!বাট মাংসের মধ্যে এখন টমেটো দিলে ভালো লাগবে তো।
রুহিঃ এখন মানুষ সাপ,ব্যাঙ, ইজি, বিজি সব খেয়ে ওয়াও ওয়াও করছে! আর তুমি পড়ে আছো মাংসতে টমেটো দিলে ভালো লাগবে কি না???
মুগ্ধর আম্মুঃ মুগ্ধ যে খুঁতখুঁতে যদি না খায় তখন কি হবে??
রুহিঃ মুগ্ধ খাবে না মুগ্ধর বাবা-মা খেলেই হবে।আর খাওয়ার আগে সেই রাজকুমারকে না বললেই হয়।যাইহোক তুমি তোমার কাজ করো! আমি গেলাম নয়তো তোমার জলহস্তী’ ছেলে মেরে গাল লাল করে দিবে।
মুগ্ধর আম্মুঃ আচ্ছা তুই যা…

রাতে রুহি পড়া শেষ করে মুগ্ধদের সাথে খেতে বসে!মুগ্ধর আম্মুর মুখে হাসি কারন উনার সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
মুগ্ধর আম্মুঃরুহির মত আমার যদি একটা ছেলের বউ থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো…
রুহিঃ আমি ফ্রি আছি! তুমি চাইলে আমি তোমার ছেলের বউ হতে পারি।(মাংসের হাড় চিবুতে চিবুতে)
মুগ্ধ এই কথাটা শুনে এমন ভীষম খেয়েছে যে ওর কাশতে কাশতে জান শেষ!…..

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_15

রুহিঃ আমি ফ্রি আছি! বড় আম্মু তুমি চাইলে আমি তোমার ছেলের বউ হতে পারি।(মাংসের হাড় চিবুতে চিবুতে)
মুগ্ধ এই কথাটা শুনে এমন ভীষম খেয়েছে যে ওর কাশতে কাশতে জান শেষ!মুগ্ধ চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আর মুখটা লাল হয়ে গেছে।পানি খেয়েও কাশি কমছে না!রুহি উঠে মুগ্ধর মাথায় আর পিঠে ফু দিতে শুরু করলো!ফু দিয়ে কাশি যখন থামলো না তখন মুগ্ধর মাথায় আর পিঠে থাবড়ানো শুরু করলো!মুগ্ধর কাশি আর রুহির থাবড়ানোতে মুগ্ধর অবস্থা আরো খারাপ…. মুগ্ধর কাশি দেখে সবাই কি নিয়ে কথা বলছিলো সেটাই ভুলে গেছে।

রুহিঃবড় আম্মু কাশি কমছে কেন তুমি ঝাড়ুটা নিয়ে এসো!ঝাড়ু টা মারলে মে বি কাশি কমবে
মুগ্ধর আম্মুঃ আমার আদরের ছেলেকে কি না ঝাড়ু দিয়া মারবো!!!
রুহিঃ কাশি না কমলে ঝাড়ু কেন দরকার পড়লে বাঁশ দিয়াও মারা লাগবে।
মুগ্ধঃ লাগবে না! আমার কাশি কমে গেছে।আমি ঠিক আছি (কাশতে কাশতে)

মুগ্ধ অনেক কষ্টে কাশি থামিয়ে অল্প করে খাবার খেয়ে ওর রুমে চলে যায়!রুহিও তারাতারি করে খেয়ে ওর বাসায় চলে গেল।মুগ্ধ ওর রুমে গিয়ে ভাবছে…

মুগ্ধঃ তোর বিয়ে করার শখ তাই না!দাড়া তোর বিয়ের শখ মিটাচিছ!ফাজিল মেয়ে একটা! কোথায় ওর পরীক্ষা চলছে পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করবে তা না।উনি বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।আর সব সময় আমাকে সবার সামনে লজ্জাতে না ফেললে হয় না।কোন মেয়ে যে নিজের বিয়ের জন্য এত লাফালাফি করে সেটা এই অসভ্য মেয়েটাকে না দেখলে বুঝতাম না।সবার সামনে দুম করে এটা কি বলে দিলো…

১মাস পর…..
রুহির সব পরীক্ষা শেষ! তাই এখন সে মুক্ত পাখির মত উঠে বেড়াচ্ছে।আগের তুলনায় রুহি ওর দুষ্টমির মাএা বাড়িয়ে দিয়েছে!সারাদিন সবাই কে জালিয়ে মারে কাউকে বাদ রাখে না।একদিন মুগ্ধ অফিস থেকে বাসায় এসে দেখে রুহির বাবা-মা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।রুহির বাবা মুগ্ধকে বললো ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে জুরুরি কথা আছে!মুগ্ধ মুচকি হেসে জি আচ্ছা বলে উপরে ফ্রেশ হতে চলে গেল!মুগ্ধর কেন জানি মনে হচ্ছে! ওর আর রুহির বিয়ের কথা বলবে মনে হয়!মুগ্ধ ফ্রেশ নিচে নেমে আসে….

রুহির আব্বুঃ আমি চাচ্ছিলাম রুহির বিয়ে দিতে!কারন মেয়ে যখন জন্মেছে তখন বিয়ে তো দিতেই তাই না…
মুগ্ধর বাবাঃ তা তুমি কি রুহির জন্য ভাল কোন ছেলের খোঁজ পেয়েছো???
রুহির বাবাঃহুমমম! আমার বিজনেস পার্টনারের ছেলে আব্রাহাম পরশ! অনেক ভাল একটা ছেলে আমার মনে হয়েছে রুহির জন্য একদম পারফেক্ট..
মুগ্ধঃ এত তাড়াহুড়োর কি আছে??পড়াশোনা করছে করুক!আগে নিজের পায়ে দাড়াক।এত তারাতারি বিয়ে দেওয়ার কোন কারণই তো আমি দেখছি না।
রুহির বাবাঃ না আব্বু! আমি পরশ ছেলেটাকে হাতছাড়া করতে চাই না।তাই আমি ওদের এনগেজমেন্টটা করে রাখতে চাই।(মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে)
রুহিঃ ব ব ব বাপি!এসব কি বলছো???(পেছন থেকে)
রুহির আম্মুঃ তুই এখানে কি করিস??যা আমরা বড়রা কথা বলছি তো।(রুহিকে উদেশ্য করে)
রুহিঃ ওকে!আমার আর কিছু বলার নাই তবে তোমরা যা করবে ভেবে করবে!পরে যাতে আফসোস করে মরতে না হয়।জানোই তো আমি কি করতে পারি?? (মুগ্ধকে শুনিয়ে কথাটা বলে গেল)
রুহির বাপিঃ ওর কথা বাদ দাও!আমরা যা করবো তাই হবে।
মুগ্ধর বাবাঃহুমমম!কারন বাবা হিসেবে যোগ্য পাএ দেখে তোমার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার অধিকার আছে।এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই।
মুগ্ধঃমেজ বাবা আমাকে কি রুহির দায়িত্ব দেওয়া যায় না?যাকে ছোট থেকে ভালবেসে আগলে রেখেছি তাকে অন্য কারো হতে দেয় কি করে??আর আমি এতটাও দয়াবান না যে আপনারা বলবেন রুহি কে অন্য কারো বিয়ে দিবেন! আর আমি তা মেনে নিবো!কারন আমার জীবন কোন সিনেমা না যে, যাকে ভালবাসি তার বিয়ে হওয়া দেখবো,আড়ালে কাঁদবো, নিজে নিজে কষ্ট পাবো, আর সব শেষে উদর মনের পরিচয় দিতে গিয়ে আমার ভালবাসাটাকে হারাবো।তাহলে বলবো আপনারা ভুল জানেন! আর আমি এতদিন কাউকে কিছু বলিনি যাতে রুহির পড়াশোনা থেকে মনোযোগটা না সরে যায়! যেটা আমি চাই নি।এখন আপনারা ভেবে দেখেন আমাদের সাপোর্ট করবেন! নাকি অন্য পথ খুঁজবেন! যদি তাই করে থাকেন! তাহলে আমরাও অন্য পথ অবলম্বন করবো আর তখন বলতে পারবেন না যে! আমরা আপনাদের জানায় নি।তবে রুহি কেমন আর কি করতে পারে সেটা আপনাদেরও সবার জানা!আমার যা বলা আমি জানিয়ে দিলাম!আর এভাবে কথা বলার জন্য আমি দুঃখিত!মেজবাবা আমি এবার উঠলাম! এবার আপনারা বড়রা যা করবেন ভেবে করবেন।
রুহির বাবাঃতাহলে তুমি রুহিকে বিয়ে করতে চাচ্ছে তাই তো???
মুগ্ধঃহুমমম!আর আমি নিজে ভাল একটা জব করি।মেজবাবা আমি মনে করি আপনার মেয়ের দায়িত্বটা আমি নিতে সক্ষম।আর আমি ছেলে হিসেবে কেমন সেটা আপনাদের থেকে কেউ ভালো বলতে পারবে না।

মুগ্ধ উঠে হনহন করতে করতে ওর রুমে চলে যায়!মুগ্ধর বাবা-মা সাথে রুহির বাবা-মা মুগ্ধর কথা অবাক হয়ে শুনছিলো!যদিও দুই বাড়ির সবাই জানে যে ওরা দুজন দুজনকে প্রান দিয়ে ভালবাসে! রুহির বাবা আর মুগ্ধর বাবা দুই ভাই দুজনের দিকে তাকিয়ে হো হো হাসতে শুরু করে!কারন রুহির বাবা দেখতে চেয়েছিলো মুগ্ধ কি করে??যদিও রুহির বাবা জানতেন মুগ্ধ কিছুতেই এটা মেনে নিবে না তাও একটু পরীক্ষা করে নিলো! রুহির বাবা মুগ্ধর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে…

রুহির বাবাঃভাইয়া তোমার ছেলে যেটা আমাকে এখন যেটা দিয়ে গেল বলো তো এটাকে কি বলো??
মুগ্ধর বাবাঃ কি বলে তুই বলতো???
রুহির বাবাঃইহাকে বলে ঠান্ডা মাথার বাঁশ দেওয়া !তোমার ছেলে আগে, পরে,বতমানে,আর ভবিষ্যাতে কি হতে পারে সব কিছু ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। হা হা হা হা
মুগ্ধর বাবাঃহুমম তাই তো দেখলাম!তবে আমার ছেলের বুকে সাহস আছে! তা না হলে বাবা মা আর হবু শশুড়-শাশুড়ির সামনে এভাবে কেউ এমন ভাবে কথা বলতে পারে!বুকে সাহস না থাকতে এতোক্ষণে
কাল ঘাম ছুটে যেত।
রুহির আম্মুঃহা হা হা! তোমরা মুগ্ধর কথার কাছে দুই ভাই কুপোকাত।

বড়রা আলোচনা শেষ করে যে যার বাসায় চলে যায়!ওদিকে রুহি ওর রুমে বসে পায়চারি করছে আর রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।মুগ্ধ নিশ্চিত মনে অফিসের কাজ করছে!রুহি তো মুগ্ধর উপর রেগে বোম হয়ে আছে!আর রুহি ওর বিখ্যাত গালি গুলো দিচ্ছে!রুহি মুগ্ধকে ফোন দিলো আর বললো…

রুহিঃ ভাইয়া! কালকে আমার পরীক্ষা পর আমাকে একটু সময় দিতে পারবে??
মুগ্ধঃআগে ভাইয়া বলা বন্ধ তারপর কথা বল!আর কালকে কি সময় দিতেই হবে???
রুহিঃহুমম দিতেই হবে!আর না শব্দ টা শোনার মুডে আপাতত নাই।তাই না বলে মেজাজ গরম করে দিও না।
মুগ্ধঃবড় বড় কথা ছাড়েন আর ঘুমিয়ে পড়েন!আর .কি হয়েছে সেটা তো বলবি???
রুহিঃকিছু হয়নি তুমি আসবে ব্যস্!আমি কিছু জানিও না কিছু বুঝিও না।
মুগ্ধঃ কালকে আমার অনেক কাজ আছে! আমি যেতে পারবো না।
রুহিঃতোমাকে আসতে হবে!আচ্ছা বাপিরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে???
মুগ্ধঃ মনে হয়!কারন আমি তুই যাওয়ার পর উপরে চলে এসেছি তাই নিচে মেজবাবারা কি করছে জানিনা???
রুহিঃতুমি কিছু বলো নি???
মুগ্ধঃকি বলবো??আর যেখানে বড়রা কথা বলছে তাহলে আমি আর কি বলবো?
রুহিঃহুমম তাই তো তুমি আর কি বলবো??তোমার তো কিছু বলার থাকতেই পারে না।
মুগ্ধঃআর কিছু বলবি???
রুহিঃহুমমমম!তাহলে কালকে আসবে তো??
মুগ্ধঃহুমম।

পরেরদিন সকালে রুহি রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে মুগ্ধ কে নিয়ে একটা নদীর পাড়ে চলে গেল।নদীর পাড়টা মনোরম আর মন ভাল করার মত জায়গা! অনেক বড় কৃষ্ণচুড়া গাছের ডালপালা ছড়িয়েছে আছে! মাটিতে অনেক কৃষ্ণচুড়া ফুল পড়ে আছে!কৃষ্ণচুড়া ফুলের গাছে গোড়াতে সুন্দর করে বসার জায়গা করা!মুগ্ধ আর রুহি সেই বসার জায়গাতে বললো!ওরা বসতেই!হুট করে কয়েকজন এসে মুগ্ধর মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো! আর হাতও বেঁধে দিলো।মুগ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারন যারা মুখটা বাধছে তারা হলো সুমি,ইরা,রাহাত আর আরিয়ান….ওরা ওদের কাজ শেষ করে চলে গেল।

প্যারাময় লাভ পর্ব ১০+১১+১২

রুহি শান্ত দৃষ্টিতে নদী দেখছে!রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে একটা হাসি দিলো যেন এটা হওয়ারই ছিলো!মুগ্ধ চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।রুহি মুচকি হেসে ওর ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করলো!এগুলো সেই সিগারেট যে সিগারেট দিয়ে রাহাতকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলো!রুহি সিগারেট দুইটাতে আগুন জালিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকায়! মুগ্ধ চোখে হাজারো প্রশ্ন দেখতে পাচ্ছে রুহি!

রুহি আবারো মুগ্ধর দিকে মুচকি হেসে ওর বাম হাতে সিগারেট টা চেপে ধরে!আর চোখ মুখ -কুচকে নেয়!আর সাথে সাথে রুহির চোখে জল দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে!সিগারেটের ছ্যাকা লাগাতে রুহির হাতে প্রচন্ড জ্বলতে শুরু করছে!আর মুগ্ধ মাথা নাড়িয়ে বার বার রুহিকে এসব করতে না করে!রুহি মুগ্ধর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলতে থাকে…

রুহিঃ এই সামান্য ব্যাথা সহ্য করে নিতে পারবো!বাট তোমাকে হারানোর ব্যাথা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নই মুগ্ধ!!!!!!!
মুগ্ধঃ…….
রুহিঃ আমি এত কিছু জানিও না বুঝিও না!আমাকে আজকে এখন এই মুহূর্তে যদি বিয়ে না করো তো! এর থেকে খারাপ কিছু দেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুুত করো (আবার সিগারেট চেপে ধরে)

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮