প্যারাময় লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮
written Nurzahan akter Allo

মুগ্ধ ছটফট করতেই আছে আর রুহি ওর হাতে ছ্যাকা দিতে আছে!মুগ্ধর চোখে ছলছল পানি দেখে রুহি মুগ্ধর মুখ থেকে কাপড়টা খুলে নেয় আর হাতটাও খুলে দেয়!মুগ্ধ সাথে সাথে রুহিকে একটানে তুলে শরীর সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়!রুহি ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়!মুগ্ধ রুহি কে মাটি থেকে তুলে আবার আরেকটা থাপ্পড় মারে তারপর রুহিকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে! মুগ্ধ রুহিকে ছেড়ে দৌড়ে পাশে দোকানে যায় আর ঠান্ডা পানি এনে রুহি হাতে ঢালতে থাকে!মুগ্ধ ওর রুমাল ভিজিয়ে রুহির হাতে জড়িয়ে দেয়! রুহি মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ রুহিকে বললো…

মুগ্ধঃ আজকে তোকে বিয়ে করতে হবে তাই তো??ওকে আমি রাজি!নিজেকে এভাবে তাহলে কষ্ট দিলি কেন অসভ্য মেয়ে!একবার আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই এভাবে বার বার কষ্ট দেওয়ার মানে কি??আমাকে কি তোর কাপুরুষ মনে হয় যে আমি ভয় পাবো। আমাকে তোর বিশ্বাস হয় তাই তো! ওকে আজকে আমাদের বিয়ে হবে।(চোখ লাল করে)

রুহি সুমি, ইরাদের ডেকে নেয় তারপর কাজি অফিসে চলে যায়!মুগ্ধ কবুল বলে সাইন করে দেয় আর রুহি থম মেরে বসে আছে!মুগ্ধ কলমটা তুলে রুহির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে…
মুগ্ধঃএতদূর এসে পিছিয়ে যাওয়ার কোন মানেই হয় না!আর এখন যদি তুই পিছিয়ে যাস তো আমি তোকে পিছাতে দিবো না।সাইন কর…

রুহি কাঁপা হাত আর দুরুদুরু বুক নিয়ে কবুলও বললো আর সাইনও করলো।তারপর মোনাজাত করে কাজি অফিস থেকে বের হয়ে গেল।তারপর সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। সুমি,ইরা,রাহাত আর আরিয়ান আলাদা টেবিলে আর মুগ্ধ আর রুহি এক টেবিলে।মুগ্ধ রাহাতদের কাছে গিয়ে বললো…

মুগ্ধঃতোমাদের যা ইচ্ছে হয় খাও! আমি তোমাদের ট্রিট দিলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুগ্ধ রুহির আর ওর জন্য বিরিয়ানী,চিকেন ফ্রাই,সালাড,আইসক্রিম, দই ,অর্ডার দিলো!মুগ্ধ রুহির সামনে চেয়ারে বসলো। রুহি মাথা নিচু করে আছে!মুগ্ধ রুহির বামহাতটা টেনে রুমালটা খুলতে খুলতে বললো…
মুগ্ধঃ বিয়ে করলি তাহলে মুখটা ভার করে আছিস কেন??এখন তো তোর খুশিতে নাচানাচি করার কথা…
রুহিঃ না কিছু না!তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো??
মুগ্ধঃনা!রাগ করার কি আছে??
রুহিঃ এই বিয়ের কথা এখন কাউকে জানানোর দরকার নাই!দেখি এবার বাপিরা মিলে কি ঠিক করে?তোমাকে হারানো ভয়ে এমন কাজটা করতে বাধ্য হলাম।তবে আমার মনে কোন আফসোস নাই…
মুগ্ধঃহাতে কি এখনো জ্বালা করছে??
রুহিঃনা!
মুগ্ধঃ রুহি এমন বোকামি আর করিস না!একটা কথা মনে রাখিস! যে যেতে চাই তাকে হাজার চেষ্টা করে আটকে রাখা যায় না!আর যে থাকতে চাই তাকে বার বার লাথি দিলেও দেখবি তোর কাছেই ফিরে আসবে।আমিও তোকে চাই বাট এভাবে পেতে চাইনি।আর ইসলাম ধর্ম মতে বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে বিয়ে গ্রহনযোগ্য হয় না!আর যতদিন না আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের আবার বিয়ে দিচ্ছে ততদিন আমি তোকে আমার কাছে টানবো না।
রুহিঃহুমমম!এখন তুমি যা বলবে আমি তাতেই রাজি কারন আমার মনে তোমাকে হারানো ভয় আর নাই।

মুগ্ধ নিজেও খাচ্ছে আর রুহিকেও খাইয়ে দেয়!তারপর সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।সুমিরা সবাই চলে যায়!রুহি মুগ্ধর তাকিয়ে বলে…
রুহিঃ এই যে মিঃ হাজবেন্ড তোমার বিয়ের ট্রিট দাও
মুগ্ধঃতাহলে এখন কি দিলাম??
রুহিঃ এখন তো পেট ভরালে এবার মন ভরানোর ট্রিট দাও।
মুগ্ধঃমন ভরানোর জন্য আবার কি ট্রিট লাগবে শুনি??(ভ্রু কুচকে)
রুহিঃ তুমি এখন আমাকে নিয়ে বাইকে নিয়ে ঘুরবে!আজকে আমার মন খুব ভালো তাই আজকে অনেক অনেক ঘুরবো…
মুগ্ধঃ ঘুরতেই হবে??
রুহিঃহুমম!ঘুরতেই হবে!আজকে অনেক দুরে চলো যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ থাকবে না।যেখানে প্যা পু ভ্যা ভু এরকম কোন শব্দ থাকবে না।যেখানে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবো!যেখানে গেলে তোমাদের কাঁধে মাথা রাখতে পারবো…
মুগ্ধঃতাহলে মেজ আম্মুকে বল তুই আমার সাথে আছিস!তা না হলে চিন্তা করবে।

রুহি মুগ্ধকে বাসায় যেতে বললো!মুগ্ধও রুহি কথামত রুহিকে বাইকে বসিয়ে বাইক স্টাট দিলো!কারন কলেজ ড্রেসে ঘুরতে যাওয়ার মানেই হয় না!মুগ্ধকে দাড়াতে বলে রুহি একদৌড়ে ওর বাসায় চলে গেল!তারপর ঝটপট সাওয়ার নিয়ে কলাপাতা কালার একটা থ্রিপিস পড়ে নিলো আর মুখটা ধুয়ে মুখে ক্রিম লাগালো আর ঠোঁট চ্যাপষ্টিক।চুল গুলোকে ছেড়ে দিলো আর ছোট একটা ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে নিলো!আর কিছু চুল সামনে দুইপাশে এনে রাখলো!সাদা পাথরের ছোট একটা টিপ দিলো কপালে।তারপর চুরিদারে পায়জামার কুচি গুলো ঠিক করতে করতে ওর আম্মুকে ডাকলো!

রুহিঃ আম্মু আমি তোমার মেয়ের জামাইয়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি !আজকে সারাদিন ঘুরবো তাই আসতে লেইট হবে..
আম্মুঃকার সাথে ঘুরতে যাচ্ছিস???(ভ্রু কুচকে)
রুহিঃ আমি মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি !কানের মাথা খাইছো নাকি ভুলভাল শোনো।
আম্মুঃতুই তো বললি…!
রুহিঃআমি কিছু বলিনি! যা বলছি ভুলে বলছি।শোন মুগ্ধ ভাইয়া কোন বন্ধু ওয়াইফের বাচ্চা হয়েছে তাই দেখতে যাচ্ছি। বাই
আম্মুঃ আচ্ছা…
মুগ্ধঃ তোর কি মাথায় ঘেলু বলতে কিছু আছে??আমাকে এতক্ষণ দাড়িয়ে রাখার কোন মানে হয় (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃযা থাকার সব আছে!সময় হলো দেখতে পাবে। এবার তো চলো (বাইকে উঠে বসে)

রুহি ওর ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে মুগ্ধকে দিলো!মুগ্ধ আর রুহি বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হলো।মুগ্ধ বার বার বাইকের গ্লাসে তাকিয়ে রুহিকে দেখছে!আজকে কেন জানি মুগ্ধর কাছে রুহিকে দেখে মনে হচ্ছে রুহির মাঝে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য এসে ভর করছে!মুগ্ধ রুহিকে বললো…

মুগ্ধঃএত সাজগোজ করছিস কেন??তোকে না বলছি সাজগোজ করবি না আর চুল ছেড়ে বাইরে বের হবি না।
রুহিঃ কই সাজগোজ করলাম???তোমার বিয়ের দিন সাজবো।মুগ্ধর লাল টুকটাক বউ সাজবো আমি।
মুগ্ধঃ…..

মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে একটা শপিংমলে এসে জুয়েলারি শপে গেল!তারপর রুহিকে একটা রিং আর নোজপিন কিনে দিলো।নোজপিন রুহি নিজে ইচ্ছে করে কিনছে!শপেই মুগ্ধ নিজে হাতে রুহির অনামিকা আঙ্গুলে রিং পড়িয়ে দিয়েছে।আর রুহির নাক ফুটা করা নাই এজন্য রুহি যত্ন করে নোজপিনটা ওর কাছে রেখে দেয়।তারপর আবার ওরা বাইকে বসে আর মনের আনন্দে মুক্ত পাখির মত এক জন আরেকজনের সাথে সময় কাটাতে থাকে….

ঘুরতে ঘুরতে মুগ্ধ একটা গ্রামের মধ্যে ঢুকে!গ্রামটা অনেক সুন্দর!ফসলের মাঠগুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে,সরিষার ক্ষেতের দিকে তাকালে চারদিকে হলুদ আর হলুদ!সরিষার ফুল গুলো হালকা বাতাসে নড়েচড়ে উঠছে।বাতাসে যখন সরিষার ফুল গুলো নড়ছে তখন সেই ফুলে রাখা মৌমাছি রাও নড়ে উঠছে।মুগ্ধ বাইক থামিয়ে এতক্ষণ এত মনোরম সৌন্দর্য টা উপভোগ করছিলো!মুগ্ধ ওর পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি নেই।মুগ্ধ আশে পাশে তাকিয়ে রুহিকে খুঁজতে থাকে!মুগ্ধ রুহিকে দুইবার ডাকলো…

মুগ্ধ তিনবার যখন ডাকতে যাবে!তখন রুহি পাশের গর্ত থেকে মুগ্ধকে ডেকে উঠলো!মুগ্ধ ওর পেছনে ঘুরে রাস্তার দাড়িয়ে একটা নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখলো একটা ছোট্ট গর্তের মধ্য রুহি বসে।মুগ্ধকে দেখে রুহি কাঁদো কাঁদো হয়ে ডাকলো…

মুগ্ধঃকি রে?? তুই ওখানে বসে আছিস কেন???
রুহিঃআমি পড়ে গেছি! আমাকে টেনে তোলো রে…
মুগ্ধঃওয়েট….আমি আসছি।
রুহিঃতারাতারি এসো।
মুগ্ধঃএখানে আসলি কি করে???
রুহিঃ সরিষা ক্ষেতে পিক তুলতে গিয়ে গোবরের উপর পা তুলে দিছিলাম।ঘাসে গোবর মুছতে গিয়ে হড়হড় করে নিচে পড়ে এই গর্তে এসে আটকে পড়ছি।
মুগ্ধঃইয়াক!ছিঃ!ছিঃ! রুহির তোর পায়ে গোবর লেগে আছে।ইয়াক কি গন্ধ????
রুহিঃইয়াক ইয়াক করা বন্ধ করে আমাকে তোলো তারাতারি!

মুগ্ধ রুহিকে টেনে তুলছে!মুগ্ধর কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে! মুগ্ধ এতক্ষণ হাসিটা কনট্রোল করছিলো বাট রুহির মুখের আকৃতি দেখে হো হো করে হাসতে শুরু করলো!মুগ্ধ হাসি দেখে রুহির রাগে কটমট করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে।রুহির পায়ে গোবর নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাটছে আর মুগ্ধ রুহির পেছন পেছন আসছে আর হাসছে!রুহি এমন ভাবে পায়ে গোবর লাগছে যে! রুহির পা দেখে মনে হচ্ছে কেউ রুহিকে গোবরের জুতা পরিয়ে দিয়েছে।ওদের পাশ দিয়ে দুইটা বাচ্চা যাচ্ছিলো বাচ্চা দুইটাও রুহির অবস্থা দেখে হাসছে!মুগ্ধর কেন জানি আজকে হাসি থামছে না!মুগ্ধ ওর পেট ধরে হাসতে হাসতে ঘাসের উপর বসে পড়ছে।

রুহি মুগ্ধকে অনেকপর পর এভাবে হাসতে দেখলো!রুহি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে মুগ্ধর হাসি দেখছে।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো…
রুহিঃ ইসসস রে এভাবে কেউ হাসে!জানেমান তোমার হাসি দেখে মন চাচ্ছে এখনই তোমাকে কামড়ে খেয়ে ফেলি!আর ছেলেদের যে এভাবে হাসতে নেই!ছেলেদের মুচকি হাসিতেই বেশি মানায়!আর এভাবে হাসলে যে ঘায়েল হয়ে যাবো রে টুনটুনির বাপ ।তবে এখন এই গোবরটাকে আমার ধন্যবাদ দিতে মন চাচ্ছে!কারন এই গোবরটার জন্য আমি আমার মুগ্ধর মনখোলা হাসিটা আজকে অনেকদিন পর দেখলাম।তবে একটা কথা না বললেই নয়,আর সেটা হলো….
গোবরের জুতা পড়ে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়!তাহলে তো বার বার এই জুতা পড়াই ভালো….?

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_17

গোবরের জুতা পড়ে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়!তাহলে তো বার বার গোবরের জুতা পড়াই ভালো….?

মুগ্ধ আর রুহি একটা বাসায় যায়!মুগ্ধ একটা বাসায় ঢুকে আর একজন মহিলাকে দেখতে পায়।মুগ্ধ ওই মহিলাটির সামনে গিয়ে বলে…
মুগ্ধঃআসসালামু আলাইকুম আন্টি..
মহিলাটিঃওয়ালাইকুম সালাম!আপনাদের তো ঠিক চিনবার পারলাম না।আপনারা কেডা???
মুগ্ধঃআমরা এই গ্রামে ঘুরতে এসেছি!আপনাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর! গ্রামটার নামটা কি জানতে পারি???
মহিলাঃএই গ্রামের নাম সরিষাবাড়ী
মুগ্ধঃবলছিলাম যে আন্টি একটু পানি দেওয়া যাবে।ওর পায়ে গোবর লাগছে পা টা ধোঁয়ার জন্য… (রুহিকে উদেশ্য করে)
মহিলাটিঃহেতি আপনার কেডা (সন্দেহের চেখে)
মুগ্ধঃআমার বউ

মহিলাটি পানি আনতে গিয়ে বেশ কয়েকজন লোকজনকেও ডেকে আনে!সবাই ওদের একপ্রকার ঘিরে ধরে!মহিলা পানি দিলে রুহি আগে ওর পা টা ধুয়ে ফেলে সাবান দিয়ে।তারপর রুহি পা ধোয়া হয়ে গেলে মুগ্ধ সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে যাবে! ঠিক তখন ওই লোকগুলো পথ আটকে দাড়ায়।মুগ্ধ আর রুহি ভ্রু কুচকে ওনাদের দিকে তাকায়…. তখন একজন মুরব্বী মত লোক বলে উঠে…

মুরব্বীঃআমাগো হক্কলকে গেরামের মানুষ ভাইবা!মনে করছো আমরা তোমাগোর মতিগতি বুঝবার পারুম না।
মুগ্ধঃমতি গতি মানে কি???কিসের মতিগতি এসব কি বলছেন??(ভ্রু কুচকে)
মহিলাটিঃআমরা সব বুঝবার পারছি!আপনারা বাড়ি থেইকা পালাইয়া আইছেন।আর না হইলে প্রেম পিরিত করার লাইগা এইহানে আইচেন!শহরের পোলা গুলারে খুব ভালা মত চিনা আছে….
মুগ্ধঃও আমার বউ!আমি ওকে নিয়া পালাবো কোন সুখে!আজিব কথা বলছেন কেন??রাস্তা ছাড়ুন আর আমাদের যেতে দেন।
মুরব্বীঃহেতি যদি আপনের বউ হয় তো! হেতির নাকে নাকফুল নাই!হাতে চুরি নাই!আর মাইয়াডাকে দেখে মনে হইতাছে না হেতির বিয়া হইছে।
রুহিঃ বিয়ে হলে পেছনে পোষ্টার লাগিয়ে ঘুরবো নাকি!কি সব ফালতু কথা বলছেন.??
মুরব্বীঃকে আছিস??এদের দড়ি দিয়া বাইন্ধা রাখ।এই মাইয়ার লাগে এই পোলার বিয়া না দেওয়া পযন্ত এদের ছাড়ান যাইবো না।
মুগ্ধঃ এসব কি বলছেন??আমরা কি খারাপ কিছু করছি যে আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নিচেছন।বলা নেই কওা নেই জোর করে বিয়ে দিবেন মানে কি??আর বিয়ে করা বউকে আবার বিয়ে করবো কেন??
মহিলাটিঃএত কিছু বুঝবার পারি না!আমাগো
গেরামে এমন অনাসৃষ্টি কান্ড আমরা বাপু সহ্য করবার পারুম না।
রুহিঃতাই বলে বিয়ে দিয়ে দিবেন!আপনাদের জন্য কি রেজিস্ট্রিপেপার সাথে নিয়ে ঘুরবো নাকি!এসব আবাল মার্কা কথা ছাড়েন!
একটা ছেলেঃওই মাইয়া এত কথা কও ক্যান!প্রেমিকের লগে ঘেষাঘেষি করে ঘুরবার সময় মনে আছিলো না।
রুহিঃ ওই শালা কালা কাউয়া!ফালতু কথা বললে তোর কানের নিচে ধাপ করে এমন একটা দিবো না।কেউ তোর বাবার নাম জিজ্ঞাসা করলে মায়ের নাম বলবি…
ছেলেটিঃমাইয়া মানুষের গতরে এত তেজ ভালা না!
রুহিঃঠাস্!ঠাস্!ঠাস! আর একটা দিলাম না।হিসু করে দিতি।মুখের ভাষা ঠিক কর তা না হলে তিন নাম্বার পায়ে এমন কিক মারবো। বাবা হতে পারবি না
(তিনটা থাপ্পড় মেরে!ছেলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে )

রুহি ছেলেটার কানে আর গালে থাপ্পড় গুলো মেরেছে! এজন্য ছেলে কানে পো পো আওয়াজ হচ্ছে। ছেলেটা বেআক্কেলের মত রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ কিছু বললো না! কারন মুগ্ধ জানে রুহি ঠিক তার জবাব দিবে।মুগ্ধ তো আর সবসময় রুহির সাথে থাকবে না।ওখানে আরো গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে গেল!কেউ ওদের কোন কথা না শুনছে! আর না বিলিভ করছে।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখছে মুগ্ধ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে!রুহি মনে মনে বলছে…..
রুহিঃ কি করতে যে এই ঠাডা পরা গ্রামে ঘুরতে এলাম।এখন নাকি বিয়ে দিবে তাহলে পরীক্ষা দিয়ে সাথে সাথে এই গ্রামে চলে আসাই তো ভালো ছিলো!ধুর একটা মিসটেক হয়ে গেল!আর এখন এ কোন বিপদ এসে পড়লো!আর ধুর, ভুল কথা বলি ক্যারে! বিপদ তো আসে নি আমাদের কাছে! আমরাই তো মরতে মরতে এই বিপদের কাছে হেটে এসেছি!একেই মে বি সবাই বলে……
খাল কেটে কালা কুমির ডাকে আনা…

মুরব্বীঃতোমরা এহনই হেতিগোর বিয়ার দেওয়ার ব্যবসথা করো।আমাগো গেরামে কোন মাইয়া বা পোলা এভাবে কারো সাথে ঘুরতে বাইর হয় না।তাই তোমাগোর বিয়া দিয়া দিবো…
উপস্থিত সবাইঃ হ হ তাই করা হোক!

এই মুহূর্তে মুগ্ধ আর রুহি ১২০০ বাইশ ভোল্টেজের শক খেয়ে হাবলার মত দাড়িয়ে আছে!মুগ্ধ অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে বাট উনাদের কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না!গ্রামের কিছু কিছু মানুষ এরকম উনারা যা বুঝবো ওইটাই ঠিক!মুগ্ধ আর রুহিকে বিয়ে দেওয়ার একজন জন্য মসজিদের ডাকতে চলে যায়!তারপর গ্রামের ইমাম এসে বিয়ে পড়ায়।
ইমামঃ বলো মা আলহামদুলিল্লাহ কবুল
রুহিঃ কবুল!কবুল!কবুল!
ইমামঃএকবার বলতে বলছিলাম!(রুহির দিকে তাকিয়ে)
রুহিঃতিন বার কবুল বলতে হবে এটা আমি জানি! তাই আপনাকে কষ্ট করে বার বার বলতে যাতে না হয় তাই একেবারে বলে দিসি।
ইমামঃওহহ!বাহ। তা বাবা তুমি কবুল বলো…(মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃকবুল!কবুল!কবুল

এরপর সবাই ওদের জন্য মোনাজাত করলো!ইমাম যা যা বলছে রুহি জোরে জোরে বলছে আমিন।মুগ্ধ রাগী চোখে চোখ কটমট করে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে!কারন রুহি এত জোরে আমিন বলছে যে সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তারপর বিয়ের সম্পূন করে।একই দিনে দুইবার বিয়ে করে ওরা কি বলবো সেটাই বুঝতে পারছে না।বিয়ে দেওয়ার পর মহিলাটি রুহিকে উদেশ্য করে বললো…

মহিলাঃওই মাইয়া!তুমি এহন থেইকা হাতে চুড়ি,নাকে নাকফুল আর মাথার সোজা সিথি করবা।
রুহিঃসোজা সিথি মানে???
মহিলাঃ চুলের মাঝখানে সিথি করবা!তাহলে সোয়ামির মঙ্গল হইবো!সোয়ামির যাএাপথ সোজা হইবো!আর চুরি পড়া ছাড়া তুমি তোমার সোয়ামিকে পানি খাইতে দিবা না!চুরি ছাড়া সোয়ামিকে পানি দিতে হয় না!অমঙ্গল হয়।
রুহিঃ সব বুঝলাম বাট আন্টি আমি যদি সামনে চুল ফুলিয়ে চুল বাঁধি তো! তাহলে কি আমার বরের ডিকবাজি দিতে দিতে রাস্তা পার হবে!না মানে সোজা সিথিতে যদি রাস্তা সোজা হয় তো চুল ফুলালে তো সেই রাস্তা ঢিপি থাকার কথা! তাই বলছি আর কি… (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
মহিলাঃএত কিছু জানিনা!যা কইতাছি তাই করবা।
মুগ্ধঃআমরা তাহলে এখন আসি!আপনাদের তো কাজ শেষ তাই না।
মুরব্বীঃহ! ভালো থাইকো আর সুখে থাইকো।মাইয়া টা আবার ছাইড়া পালাই যাইও না।
মুগ্ধঃআংকেল আমি এত নিম্ন রুচি নিয়ে চলি না!যাকে একটা ভালবাসি আর দুইবার বিয়ে করা বউকে রেখে পালানোর মানেই হয় না।তবে আপনারা এই কাজ আর কারো সাথে করবেন না কারন আমরা যদি খারাপ মূহুর্তে ধরা পড়তাম! তখন আমাদের বিয়ে দিলে মানতাম!বাট আমরাই এই বাসায় পা ধোঁয়ার জন্য একটু পানি চাইতে আসলাম! আর আপনারা না জেনে না বুঝে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলেন।এটা ঠিক না….(কথাটা বলে মুগ্ধ ওই বাসা থেকে বের হয়ে যায়)

পেছনে মহিলাটি রুহিকে কি কি যেন বলতে বলতে আসছিলো?? আর মুগ্ধ রাগে গজগজ করতে করতে আগে আগে হেটে এসে বাইকের উপর এসে বসলো!ওই দিকে মহিলাটি রুহিকে বলছে…
মহিলাঃব্যাডা মানুষ গুলান রে এ্যাক্কেরে বিশ্বাস নাই!এবার জলদি কইরা ছালপাল লইয়া লইবা!ছালপাল হইলে ব্যাডা মানুষের ঘরে মন টিকবো!
রুহিঃনা না আন্টি আমার বরটা ওইরকম না!ওহহ যথেষ্ট ভাল ছেলে।আমাকে খুব ভালোবাসে…
মহিলাঃব্যাডা মানুষ যতই ভালো হোক না ক্যান! শুধু একখান কথা মনে রাখবা।ব্যাডা মানুষের একটু ছুঁকছুঁকানি স্বাভাব থাকবোই সে যতই ভালা ব্যাডা হোক না কেন!!!
রুহিঃওহহ!!
(ওহহ আমরা বরের দোষ আমার জানু উপর দিচ্ছেন তাই না!আমি বুঝে ফেলছি…মনে মনে)
মুগ্ধঃরুহি তুই কি আসবি নাকি আমি চলে যাবো?রাত আটটা বাজে অলরেডি…
রুহিঃহুমম আসছি!ওকে আন্টি আপনি ভালো থাকবেন।
মহিলাটিঃহ তুমি…

মুগ্ধ বাইক থেকে নেমে!ওই মহিলার কাছে যায় আর ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে দিয়ে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে বলে!সবাই ওদের জন্য দোয়া করলো এটাই বা কম কিসের।তারপর মুগ্ধও মুচকি হেসে মহিলার থেকে বিদায় নিলো।মুগ্ধ আর রুহি বাসার উদেশ্যে রওনা দিলো!রুহি মুগ্ধকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে!আজকে রুহি তো খুব খুশি….মুগ্ধ রুহিকে উদেশ্য করে বললো..

মুগ্ধঃএবার কি তোর বিয়ে করা শখ মিটছে???নাকি আর কয়েকবার করবি??
রুহিঃ তুমি করলে আমিও রাজি!তবে কত লাকি আমি দেখছো???
মুগ্ধঃযেমন…
রুহিঃ যাকে পাওয়ার জন্য এত কিছু আজকে একই দিনে তাকেই দুইবার বিয়ে করলাম।আমার মত লাকি একটা মেয়েকে দেখাও তো।তবে…
মুগ্ধঃতবে কি???
রুহিঃ আমার না তোমাকে বিয়ে করে হ্যাট্টিক করার ইচ্ছা আছে!
মুগ্ধঃ চিন্তা করিস না! বিয়ে করেই আমরা হ্যাট্টিক করবো কারন এবার আমাদের বড়রা মিলে আমাদের বিয়ে দিবে।
রুহিঃওহহ তাই তো!ইসসস সেই খুশি লাগছে(মুগ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
মুগ্ধঃআর ওই মহিলাটি তোকে কি বলছিরো রে??
রুহিঃবলছে ওরা আমাদের তো বিয়ে দিয়েছে! বাট আমরা যেন এখন নিজ দায়িত্বে বাসর টা করে নেই।(দুষ্টু হেসে)
মুগ্ধঃ……..
(মহিলাটার কাজ নাই দুষ্টুকে আরো দুষ্ট বুদ্ধি দিয়েছে!)
রুহিঃ আচ্ছা আমরা তো একদিনে দুইবার বিয়ে করলাম তাহলে আমরা বাসর করবো কয়বার।
মুগ্ধঃ…….
রুহিঃ বলো না!আর শোনে আমি খুব তারাতারি বেবি নিবো কেমন!ওই আন্টি বলছে ছেলেদের নাকি ছুঁকছুঁকানি বলে কি একটা স্বভাব আছে!
মুগ্ধঃ এসব কেমন ভাষা রুহি!এসব কথা যেন আর না শুনি….
রুহিঃচলো আমরা বাসরটাও সেরে ফেলে!বিয়ের তো হয়েই গেছে! তাহলে আর কোন সমস্যা নাই(মুগ্ধ পিঠে কামড় বসিয়ে)
মুগ্ধঃউফফ!এসব কি করছিস তুই??জোর করে বিয়ে করছিস বাসরটাও কি….
রুহিঃহুমম তো!বর আন রোমান্টিক হলে বউকেই তো হাল ধরতে হবে।
মুগ্ধঃওকে চল তাহলে একটা আবাসিক হোস্টেলে যাই।তুই যেহেতু বলছিস তাহলে তোর শখটাই পূরণ করি। আজকে তাহলে বাসায় আর যাবো না…একেবারে বাসর টা সেরেই যায়।
রুহিঃ নাআআআআআ!আমি তো মজা করছিলাম।তুমি সত্যি সত্যি সিরিয়াস হচ্ছো কেন???
মুগ্ধঃআমি তোর হাজবেন্ড হয়ে তোর সব আবদার পূরণ করার টা এখন আমার দায়িত্ব। আর বৈধ অধিকারটা তো পেয়ে গেছি তাই না।তাহলে ওয়েট করে কি হবে??(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃ আরে না!আ আম আমি ম ম মজা করছি।আমি কিছু খাবো! আমার খুধা লাগছে?? (কথা কাটানোর জন্য)
মুগ্ধঃহুমমম!
(রুহি ম্যম তাহলে রেডি থাকবেন।আপনি আমাকে অনেক জ্বালিয়েছেন!এবার আমার পালা….(মনে মনে)

রুহি মুগ্ধকে কাঁধে মাথা রেখে ভাবছে!
রুহিঃ জানু বৈধ অধিকার টা আমিও পেয়ে গেছি! এবার তোমাকে উপর এত অত্যাচার করবো! তুমি কল্পনাও করবে না।তবে কষ্টের অত্যাচার না গো জানেমান তোমাকে তো দিবো রোমান্টিক অত্যাচার!দেখি কতদিন এত সাধু সেজে থাকো।
ওইদিকে মুগ্ধ মনে ভাবছে….
মুগ্ধঃআজকে একটা শান্তি লাগছে যা বলে বোঝাতে পারবো না!অবশেষে আমি তোকে নিজের করে পেলাম!আর কোন ভয় নেই।এবার তারাতারি বাসায় বলে তোকে আমার কাছে আনবো।আজকে থেকে আর কোন ভয় হারানোর ভয় নেই! (মুচকি হেসে)

মুগ্ধ আর রুহি একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলো!আর দুই বাড়ির জন্য মিষ্টি নিয়ে নিলো!মুগ্ধ আর রুহি বাসায় পৌঁছে যায়!রুহি বাইকে থেকে নেমে মুগ্ধর দিকে তাকায়। রুহির চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে রুহি ঠিক কতটা খুশি! মুগ্ধ মুচকি হেসে রুহি কাছে গিয়ে রুহির কপালে আদর দিয়ে দেয়।রুহি অবাক হয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!এই প্রথম মুগ্ধ রুহিকে আদর দিলো সামনাসামনি!রুহিও চট করে মুগ্ধ গালে একটা আদর দিয়ে দৌড়!মুগ্ধ মুচকি হেসে মাথা চুলকে যে যার বাসায় চলে যায়।

পরেরদিন সকালে…
রুহিদের বাসায় আসে! মুগ্ধর বাবা তখন ড্রয়িং রুমে বসে পেপার পড়ছিলো।রুহি মুগ্ধর বাবার পাশে গিয়ে বসলো!তারপর নখ কামড়াতে শুরু করলো।মুগ্ধর বাবা একবার রুহির দিকে তাকিয়ে বললো..
মুগ্ধর বাবাঃ কি রে মা কি হয়েছে?
রুহিঃতোমার ছেলে আমার সাথে ঝগড়া করছে!ওরে কিছু বলো না কেন?বড় বাবা তোমার ছেলের তারাতারি বিয়ে দিয়ে দাও!যাতে বউ এসে মারতে পারে…. (ফিসফিস করে)
মুগ্ধর বাবাঃ ঠিক বলছিস!ওর তারাতারি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে ওর বেশি বাড় বেড়ে গেছে।(ফিসফিস করে)
মুগ্ধর আম্মুঃরুহি তারাতারি মুগ্ধকে এই কফিটা দিয়ে আয় তো মা!আমার তরকারি পুড়ে যাবে এখন উপরে গেলে।
রুহিঃ আমাকে দাও!

রুহি মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ মেরুন কালার থ্রীকোয়াটার প্যান্ট আর সাদা সেন্ডোগেঞ্জি পড়ে চোখের উপর একটা হাত রেখে জমপেশ ঘুমাচ্ছে! এবার রুহির মাথা একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো!রুহি……….

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_18

রুহি মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ কালো থ্রীকোয়াটার প্যান্ট আর সাদা সেন্ডোগেঞ্জি পড়ে ঘুমাচ্ছে! একদম বাচ্চাদের মত করে,একটা পা সোজা করে রাখছে আর আরেক পা ভাজ করে রাখছে।এবার রুহির মাথা একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসলো!রুহি মুগ্ধর দিকে এগিয়ে গেল!তারপর কফির মগ থেকে কফির নিলো! আর ওর মুখটা ধীরে ধীরে মুগ্ধর কাছে গিয়ে মুগ্ধর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে!কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে মুগ্ধ সাথে সাথে চোখ খুলে!মুগ্ধ চোখ বড় বড় তাকিয়ে থাকে।রুহি মুগ্ধর মুখে কফিটা দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখে!মুগ্ধ যতক্ষণ না কফিটা গিলছে ততক্ষণ পর্যন্ত রুহি মুগ্ধর ঠোঁটে আরো জোরে কামড়ে ধরে রাখে।মুগ্ধ উপায় না পেয়ে কফি টা গিলে নেয়।রুহির মুগ্ধর ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখে..

মুগ্ধ এতটা শক খেয়েছে যে কি বলবো বুঝতে না পেরে রুহির দিকে হাবলার মত তাকিয়ে আছে।রুহির মুখে দুষ্টু হাসি!মুগ্ধর ঠোঁটে রুহির দাঁত বসে গেছে!মুগ্ধ হুট করে রুহির কোমরে ধরে রুহিকে আরো কাছে টেনে নেয়! মুগ্ধ রুহিকে পাশ শুইয়ে দিয়ে রুহির উপর সব ভর ছেড়ে দেয় আর রুহির ঠোঁটে ঠোঁট বসায়!মুগ্ধ রুহির গালে হাত রেখে রুহির ঠোঁটে পাগলের মত কিস করতে থাকে!রুহি মুগ্ধকে সরাতে চেয়েও পারছে না!রুহি মুগ্ধর পিঠে কিস,ঘুষি, মারতে থেকে তাও মুগ্ধ সরছে না।রুহির হয়তো জানাছিলো না! সব জায়গায় সবাইকে চ্যাতানো উচিত না।হিতে বিপরীত কিছু হয়…

মুগ্ধ রুহির ঠোঁট ছেড়ে গলাতে নামতেই রুহি মুগ্ধকে ধাক্কা দেয়!মুগ্ধকে রুহি সরাতে তো পারেই নি বরং মুগ্ধই রুহির দুইহাত বেডের সাথে চেপে ধরে বলে…
মুগ্ধঃতোর তো আদর চাই!তাহলে এখন আমাকে বাঁধা দিচ্ছিস কেন???একদম বাঁধা দিবি না….আমাকে আমার কাজ করতে দে।
রুহিঃআর এমন করবো না!এবারের মত ছেড়ে দাও প্লিজ! আমার ঠোঁট টা খেয়ে ফেলো না। (করুন সুরে)
মুগ্ধঃনা কোন ছাড় হবে না!তোকে না বলছি আমাকে তোর এত কাছে টানবি না! আমার মাথা ঠিক থাকে না।তাহলে এমন করলি কেন???আজকে তোর কোন ছাড় নাই…এখন তোকে আদর দিবো! তুই চুপ থাক! একদম নড়বি না…(দুষ্ট হেসে)
রুহিঃ আমার ঠোঁট জ্বালা করছে! আর এমন দুষ্টুমি করবো না এবারের মত ছেড়ে দাও।আমি আর আদরের কথা জীবনেও মুখে আনবো না!প্লিজ ছেড়ে দাও….
মুগ্ধঃকেন আদর লাগবে না???তুই না কালকে বললি দুইবার বিয়ের কতবার বাসর করতে হয়?এখন তোকে বুঝিয়ে দেই…. (দুষ্টু হেসে)
রুহিঃনা আর লাগবে না!আমার বাসর করার সব শখ মিটে গেছে।আর কোনদিন এমন করবো না। (কাঁদো কাঁদো মুখে)
মুগ্ধঃএকটা কথা মনে রাখিস! কোন খাবারের যদি টেস্ট জানা না থাকা তাহলে! সেই খাবারটি খাওয়ার এত আগ্রহ থাকে না!বাট কোন জিনিস খাওয়ার পর যদি বোঝার যায় সেই জিনিসের টেস্ট অসাধারণ! তখন বার বার সেই জিনিসটাই খেতে মন চাই।
রুহিঃমানে???এটার মানে কি বুঝবো?? (অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃযেমন ধর বিরিয়ানী!আর বিরিয়ানীটা এমন একটা জিনিস! এটা যে খাবে না সেই এটার কদর করতে জানবে না !বাট যে একবার এর টেস্ট পাবে সেই বার বার খেতে চাইবে।এবার কিছু বুঝলি…
রুহিঃ হ বুঝেছি!!!
মুগ্ধঃতা বুঝলি শুনি…
রুহিঃবুঝলাম আগের তুলনায় তুমি এখন বেশি বিরিয়ানী পছন্দ করো।আর এখন তুমি বিরিয়ানী
খাবে..
মুগ্ধঃহুম! আর এই বিরিয়ানীটা আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি তখনই খাবো।কারন এটার টেস্ট অমৃত!আগে না জানলেও এখন আমি বুঝে গেছি… (দুষ্টু হেসে)
রুহিঃ আমিও খাবো! রেস্টুরেন্টের নাম কি তাই বলো??চল এখনই যায়…(অনেক খুশি হয়ে)

মুগ্ধ আবার দুষ্টু হেসে রুহি কানের পেছনে একটা হাত ঢুকিয়ে আবার রুহির ঠোঁটে ঠোঁট রাখে!রুহি ছটফট করতে থাকে!গাধী রুহি মুগ্ধর কথা বুঝতে না পেরে ওর বিপদ ওই ডেকে আনলো।রুহি পড়ছে এবার মাইনকার চিপায়! মুগ্ধকে চমকায় দিতে এসে নিজেই এখন চমকে চমকিত হয়ে গেছে।মুগ্ধও কম না সুযোগে সৎ করছে!আর মুগ্ধর রুহিকে ছাড়ার তো কোন নামই নেই।মুগ্ধ এমন ভাবে রুহির ঠোঁটে ডিপকিস করছে যেন মনে হচ্ছে কত বছর মুগ্ধ না খেয়ে ছিলো।প্রায় ৫মিঃ১৩ সেকেন্ড পর মুগ্ধ রুহি ছেড়ে হাঁফাতে থাকে।রুহিও হাঁফাতে হাঁফাতে বলে…
রুহিঃছাড়লে কেন???থাকো এভাবে থাকো!ছাড়তে কে বলছে শুনি !সারাজীবন এভাবেই লেপ্টে থাকতে!দরকার লাগলে ফেবিকল লাগিয়ে নাও।অসভ্য, লুচু পোলা একটা।
মুগ্ধঃআর খাবি বিরিয়ানী??? আর একটু খা!আমার তো আরো খেতে ইচ্ছে করছে…(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃ তোমার বিরিয়ানীর মায়েরে বাপ!তুমি খাও তোমার বিরিয়ানী। সাত সকালে আমার ঠোঁট ডাকাতি করতে একবারো লজ্জা করলো না তোমার…(রেগে গিয়ে)
মুগ্ধঃনা!এত দিন মিস করছি!তবে আর মিস করবো না! এবার থেকে এই ডাকাতি প্রতিদিন হবে রেডি থাকিস।অনেক ছাড় দিয়েছি আর না…

মুগ্ধ কথাটা বলে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেল!আর রুহি বেডের উপর বসে রাগে গজগজ করতে করতে বললো…
রুহিঃকেউ আমাকে তুলে আছাড় দাও রে!আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।এজন্য আম্মু ঠিকই বলে কোনকিছু অতিরিক্ত ভালো না।ইসসস রে আমার ঠোঁটটা অবস্থা খারাপ করে দিসে!শালা উগান্ডার বানর দেখিস! তোর ঠোঁটে ঠাডা পড়বে!তোর ঠোঁটে নিউমোনিয়া হবে!তোর নামে নামে কেস করবো তুই আমার ঠোঁটকে ধর্ষণ করছিস।

রুহি মুগ্ধর গুষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে ওর বাসায় চলে যায়!মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুহি নেই।মুগ্ধ মুচকি হেসে অফিসের জন্য রেডি হয়ে একেবারে নিচে নামে।মুগ্ধর আম্মু মুগ্ধকে বলে রুহিকেও ডাকতে ব্রেকফাস্ট করা জন্য…
মুগ্ধঃরুহি তো আমার রুমে নাই..
আম্মুঃবাসায় চলে গেল নাকি তাহলে
মুগ্ধঃহবে হয়তো
আম্মুঃওহ! আমি রুমে গেছি তখন মনে হয় তোকে কফি দিয়েই চলে গেছে।
মুগ্ধঃহুমমম!!!
(আর কি করছে তা তো তুমি জানো না আম্মু!আর কালকে থেকে আমাকে ঠিক কতটা চাপে রাখছে!সেটা আমিই জানি)
আম্মুঃ সামনে মাসের ২ তারিখে তোদের বিয়ের ডেট ঠিক করছি।
মুগ্ধঃ….
আম্মুঃশপিং শুরু করতে হবে!ইনভাইটের কার্ড দিতে হবে..এখন অনেক কাজ।
মুগ্ধঃ হুমমম
(এটাও ছিলো আমার কপালে!বিয়ে করা বউকে আবার বিয়ে করতে হবে।যদিও রুহির মত এমন বউ যার কপালে থাকে!তাহলে এরকম আরো আনকমন কিছু হবে! আর এটা কে কমন কিছু বলেই চালিয়ে দিতে হবে।আমি দোয়া করি এমন বউ যেন কোন ছেলের কপালে না ছুটে!কারন মুগ্ধ ছাড়া রুহিকে কেউ সামলাতে পারবে না।আর রুহিকে সামলানো সবার কাম্য নয়।মনে মনে)

তারপর মুগ্ধ বাসা থেকে বের হতেই দেখে!রুহি বারান্দায় কুট্টুশকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে!মুগ্ধকে দেখে রুহি মুখ ভেংচি দিলো!মুগ্ধ ফোন বের করে রুহিকে মেসেজ দিলো…
….রুহি বিরিয়ানী খাবি!অনেক টেস্ট… পুরাই অমৃত হা হা হা
রুহির রাগের কটমট করে বললো…..
আমার লাগবে না!তোমার বিরিয়ানী তুমিই গিলতে থাকো! অসভ্য …

মুগ্ধ একটা ডেভিল হাসি দিয়ে অফিসে চলে গেল!রুহিও আম্মুও রুহি জানালো যে মুগ্ধর সাথে ওর বিয়ে ঠিক করছে!রুহি মনে ভাবছে…
রুহিঃ ধুর ছাতার মাথা!সবাই ঠিকই বলে আমি একটু বেশি বুঝি!আর কয়েকদিন ওয়েট করলে সবার মতেই বিয়েটা হতো!বেশি বুঝলে যা হয় আর কি! সোনা বাঁধানো কপাল আমার! বিয়ে করতে চাইলাম একবার আর বিয়ে হয়ে গেল দুইবার।এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না।তবে যাই হোক খুব একটা খারাপ হচ্ছে না!এবার হ্যাট্টিক করে বিয়ে করে তারপর ইতিহাসের পাতায় নাম লিখাবো। আহ্ কি যে শান্তি….

রুহির আম্মু রুহিকে ডাকলো!রুহি চুপচাপ ওর আম্মুর কাছে বসলো!পরশুদিন সন্ধ্যায় মুগ্ধ সবার সামনে ঠিক কি বলছে রুহির আম্মু রুহিকে বললো।রুহি শুনে খুব খুশি হলো যে মুগ্ধ আর পাঁচটা ছেলের মত না!রুহি ওর আম্মু দিকে তাকিয়ে বললো…

রুহিঃএখনকার সিনেমা,নাটক, গলপ দেখে মনে করি সবাই এক রকম তাই না!সত্যি কথা কি জানো আম্মু? বাস্তবতা বিপরীতমুখী!গল্পে, নাটকে দেখা যায় নায়িকার বিয়ে হচ্ছে নায়ক এসে হাজির!আমাদের জীবনটা নাটক,গল্পের মত এত সাজানো গোছানো না!বাস্তবে কিন্তু না তা হয় না।আর মুগ্ধ তোমাদের সাথে যা বলছে একদম ঠিক বলছে!যদি মুগ্ধ না বলতো তো আমিই বলে দিতাম সবাইকে।যদিও আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব কিছু নষ্ট হতে দেওয়ার মত মেয়ে না আম্মু….
আম্মুঃ জানিস রুহি সত্যিকারে ভালবাসার সাথে সাহস টাও রাখতে হয়।মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসে যদি সাহস করে মুখ ফুটে কাউকে বলতে না তো পারিস তো সেই ভালবাসা জয় হয় না।সেটা অকালে হারাতে হয়….
রুহিঃহুমমম!আর বড় কথা জানো আম্মু।তোমরা বাবা-মায়েরা অনেক সময় অনেক কথা বুঝেও না বোঝার ভান করো।আর তোমাদের এই বিহিভটার জন্য ভেঙ্গে যায় ভালবাসার অসংখ্য ফুলের কলি!আজকে যদি সমবয়সী ভালবাসাগুলোকে তোমরা বড় রা একটু সাপোর্ট করতে তাহলে কাউকে ভালবাসার মানুষ টাকে পেয়েও, হারানোর ব্যাথা বুকে নিয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো না।আর সবথেকে কষ্টদায়ক ভালবাসা কোনটা জানো আম্মু….
কাউকে ভালবাসার চাদরে খুব যতন করে আগলে রাখার পর! তাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার ব্যাথাটা সব থেকে বেশি কষ্টদায়ক……!!!!!
#আলোমনি___❤

আম্মুঃএটা ঠিক বলছিস রুহি!আমরা বাবা মায়ের চাই আমাদের ছেলে-মেয়ে ভাল থাকুক।আর এই ভাল চাইতে গিয়ে মাঝে মাঝে খারাপ করে ফেলি।
রুহিঃ আর বিডি তে সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ছেলে নিজের পায়ে দাড়ায় নি এক কথায় যাকে বলে বেকার!তোমরা মা বাবারা বলো বিয়ের দেওয়ার কোন মানেই হয় না!ছেলেটার কি দোষ বলো আম্মু সে তো ধাপে ধাপে পড়া শেষ করে তারপর জব করবে তাই না।আর মেয়েটাকে কি করো কসমের দোহাই দিয়ে পায়ে শেকল আটকে দাও!আর আমাদের মেয়েদের সব দরজা বন্ধ করে দাও। বিয়ের আগে যদি বাবা মা মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারো বিয়ের পরের কেন নই!আমাদের সমাজে এত এত বানোয়াট নিয়ম বাট এমন নিয়ম কেন নেই যে বিয়ের পর ছেলে জব না পাওয়া পযন্ত মেয়েরা বাবার কাছেই থাকবে!এটা দ্বারা কি বোঝাও আমরা মেয়েরা বোঝা তাই না….বিয়ের আগে বাবার বোঝা আর বিয়ের পর বরের বোঝা।বড় রা যদি একটু সাপোর্ট করতে না তাহলে পালিয়ে বিয়ে নামক কিছু থাকতো না।আর আমরা মেয়েরা যখন বাবা মায়ের কসমের শেকল ভেঙে যেতে পারি না তখন ছেলেটা আমাদের গায়ে একটা ট্যাগ লাগায়!ঠিক কুরবানীর গরুকে যেমন ট্যাগ লাগানো হয় ঠিক তেমন।বাট আমাদের ট্যাগ টা কেমন জানো…..
আমরা লোভী!আমরা ভালাবাসা চিনি না আমরা টাকা চিনি!আমরা কষ্ট দিয়ে বুকে রক্ত ঝরাতে পারি!আমরা ছলনাময়ী, আমরা পাষাণ……..
আম্মুঃকোনটাই ভুল বলিস নি…
রুহিঃতবে আমি বা মুগ্ধ এমন না।আমরা জানি কি করে ভালবাসার জয় আনতে হয়।আমি খুব লাকি মুগ্ধর মত কাউকে পেয়ে…

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৩+১৪+১৫

রুহি আর ওর আম্মু বেশকিছু সময় গল্প করে!রুহি যতই দুষ্টুমি করুক ওর আম্মুকে কোন কিছু না বলে থাকতে পারে না।বাট বিয়ের কথা মুগ্ধ মানা করছে তাই রুহি ওদের বিয়ের কথা চেপে গেল।প্রতিটা ছেলের মেয়ের উচিত তার বাবা মাকে বেস্ট বন্ধু বানানো!যাতে মনের সব কথা বলা যায়।আর মাঝে মাঝে আমাদের বেস্ট বন্ধু গুলো বাঁশ দিতেও কম করে না!কিন্তু বাবা-মা আমাদের এমন একটি ছায়া যারা আমাদের দোষ গুলো বার ধরিয়ে দেয় বলে!এত বোঝায় আর সেটাকে মনে হয় বাবা মায়েরা বেশি ঘ্যান ঘ্যান করে!তাই আমরা সহজে বাবা মা কে কোন কথা শেয়ার করি না।তবে বিপদে পড়লে বাবা মা ছাড়া উদ্ধার হতে পারি না।

বেস্ট বন্ধুকে আমরা ছায়া ভাবি!আমরা আমাদের মনে কোনে জায়গা দেয়!তবে একটা কথা সবার জেনে রাখা উচিত,মনে করো….
তুমি তোমার বন্ধু কে সব কথা শেয়ার করো!তাকে না বলতে তুমি কিছুতেই শান্তি পাও না।যখন তোমার বয়/গফকে কিস করো! সেই কথা যখন তোমার বন্ধুকে বলো!তখন তোমার বন্ধু মনে মনে হাসে!তোমাকে খারাপ না ভাবলেও যাকে কিস করছো তাকে তোমার বন্ধু ভাবে সেই নোংরা!সত্যি কথা তিতা হলেও আসল সত্যি সেটা হলো, আমরা আমাদের বন্ধু কে বিলিভ করে যা বলি! সেই বন্ধুই একদিন তোমাকেই সেই কথা নিয়েই এমন ভাবে আঘাত করবে তখন উঠে দাড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না!তাই বন্ধুকে বিশ্বাস করো তবে অন্ধ বিশ্বাস নয়।আর বাবা মাকে বন্ধু বানাও ঠকবে না…..বাবা মায়েরা আর কিছু করুক তোমাদের ঠকাবে না, টিজ করবে না।
বন্ধুর মত আপন ছায়া যেমন আর কেউ হয়না তেমনি….!!!!
বন্ধুর মত মুখোশধারী বন্ধু!এর মতো অন্য কোন শএু রাও হতে পারে না…..!!!!!

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৯+২০+২১