প্যারাময় লাভ পর্ব ২২+২৩+২৪

প্যারাময় লাভ পর্ব ২২+২৩+২৪
written Nurzahan akter Allo

রুহি পাশে তাকাতেই দেখে মুগ্ধ বাইক থেকে নামছে!মুগ্ধকে দেখে রুহি ভৌ দৌড় দেওয়া শুরু করলো!সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,মুগ্ধ আবার বাইকে উঠে আবার বাইক স্টাট দিলো!রুহি দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে যায়।রুহি রাস্তা বসে পড়ে আর হাঁপাতে থাকে!তারপর মুগ্ধ রুহির পাশে এসে রুহির ধরে টেনে বাইক বসায় আর বাইক স্টাট দেয় আর
বলে…

মুগ্ধঃ এবার ড্রামা করা ছাড়!অনেক তো হলো তাই না।আচ্ছা কান ধরছি আর কোনদিন কোন মেয়েকে বাইকে তুলবো না।এবারের মত মাফ করে দে..আর এমন হবে না। ইভাকে বসিয়েছি তাই এমন করছিস নাকি অন্য কোন কাহিনী আছে! সত্যি করে বল…
রুহিঃ তোমার পাশে কোন মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারি না!যদি বলো আমি হিংসুটে,নিচু মাইন্ডে তাহলে আমি তাই! তাও আমি তোমাকে কোন মেয়ের পাশে সহ্য করবো না।ইভা তোমাকে পছন্দ করে সেটা তুমিও জানো আর আমিও জানি…মুগ্ধ আমি যতদিন বেঁচে আছি কোন মেয়েকে তোমার পাশে আসতে দিবো না।কারন কি জানো??ভালবাসি এত বেশি ভালবাসি যে হারানোর ভয়টা বেশি! সত্যি কথা বলতে কোন মেয়েকে তোমার পাশে দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়!আমার বুকের বাম পাশে খুব কষ্ট হয়….(পেছন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
মুগ্ধঃ……

মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে নদীর পাড়ে আসে!এটা জায়গাটা রুহির খুব পছন্দের। নদীর ধার টা সিমেন্টের ব্লক দিয়া বাঁধানো!আর পানির মধ্যে কয়েকটা ব্লক রাখা পানিতে পা ঢুবিয়ে বসার জন্য! রুহি আর মুগ্ধ জুতা খুলে !নদীর পানিতে পা ঢুবিয়ে ব্লকের উপর বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই!রুহি পানির নিচে বালি গুলোকে ঘোলা করছে আর মুগ্ধ রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!

মুগ্ধ আকাশের দিকে তাকাতেই পশ্চিম দিকে চোখ যায় সূর্য টা ডুবে যাবে এজন্য রক্তিম আভা ছড়িয়েছে…পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড় টা খুব ভালো লাগছে!বাতাসের সাথে সাথে টেউ আসছে ছোট্ট ছোট!আর মাঝে মাঝে কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে! মুগ্ধ ওর জিন্স প্যান্টটা তুলে জড়িয়েছে যাতে প্যান্টটা ভিজে না যায়।মুগ্ধর পায়ের পশম গুলো পানিতে ভিজে আছে! আর রুহি সেটার দিকেই আড়চোখে তাকিয়ে আছে।রুহিও সূর্যটার দিকে তাকিয়ে বললো…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুহিঃ আমি কিন্তু রাগ করছি..??
মুগ্ধঃ…
রুহিঃআমার সাথে কথা বলবে না!আমি কিন্তু রাগ করছি। (শুনিয়ে শুনিয়ে)
মুগ্ধঃ এত গুলো কামড় দিলি,এতক্ষণ কষ্ট দিলি,তারপরেও যদি রাগ না কমে তাহলে আর কি করবো?? (শান্ত কন্ঠে)
রুহিঃ কামড় তো আস্তে দিসি!আমি তো বাচ্চা মেয়ে তোমার মত জলহস্তী’কে কামড় দিলে তুমি ব্যাথা পাবে না আমি জানি???
মুগ্ধঃতুই বাচ্চা বুঝি!বাচ্চারা কি এভাবে কামড় দেয় (শার্টের বোতাম খুলে গলা দেখিয়ে)
রুহিঃ এইটা আমি কখন করলাম?এটা আমি করি নি…
মুগ্ধঃতাহলে কে করলো শুনি??
রুহিঃতুমি একা একাই করে এখন আমার দোষ দিচ্ছো।একদম মিথ্যে অপবাদ দিবে না আমাকে বলে দিলাম…
মুগ্ধঃ ওহহ হো আমার তো মনেই নাই আমি তো নিজেই নিজের গলা কামড় দিচ্ছিলাম।সরি সরি আমার মনে ছিলো না! তাই তোর দোষ দিচ্ছিলাম(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃমনে পড়লেই ভালো!আমি কিন্তু রাগ করছি…
মুগ্ধঃ হুমম জানি তো!তা কি করলে আপনার রাগ কমবে! আমি কি জানতে পারি??
রুহিঃ আপাতত কিছু করতে হবে না! শুধু একটা কথা মনে রাখবে!আমি রাগ করলে তুমি আমার রাগ ভাঙাবে! আর তুমি রাগ করলে তুমিই আমাকে সরি বলবে…
মুগ্ধঃআমি রাগ করলে তোকে সরি বলবো কেন??এটা কেমন হিসাব…
রুহিঃ আমি রাগ করে থাকলে মনে করবে সব তোমারই দোষ! কারন আমি নিষ্পাপ বাচ্চা আমি ভুল করতেই পারি না!তাই আমাকেই সরি বলবে…
মুগ্ধঃওহহহহ!বাহ দারুন তো।নিজের বেলায় ষোল আনা আর আমার বেলায় কানা কড়িও না।সময় আসুক…
রুহিঃ টাওয়াল ভিজিয়ে কিছু সময় কামড়ের দাগ গুলোর উপরে রাখলেই হয়!এভাবে সবাইকে দেখানোর মানে কি!!!
মুগ্ধঃ ভাবছিলাম যে রুম থেকে বের হবো না!কিনতু তুই তো…

রুহি নদীর পানিতে ওর ওড়না ভিজিয়ে হালকা করে কামড় গুলোর উপর চেপে রাখলো!মুগ্ধ কিছু বলছে না শুধু রুহির কাজ কর্ম দেখছে!মুগ্ধ ওর শার্টের কলার তুলে রাখছিলো যাতে কামড় কেউ না দেখে!বাট বাসায় থেকে বের হওয়ার সময় ওর আম্মু জিজ্ঞাসা করছিলো মুগ্ধর ঠোঁটে কি হয়েছে?মুগ্ধ লাল পিঁপড়া কথা বলে কেটে পড়ছে!মুগ্ধর আম্মুও কি ভেবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।রুহি পানি হাত ভিজিয়ে ঠান্ডা হাত মুগ্ধর ঠোঁটে উপর রাখে..মুগ্ধ শিহরে উঠছিলো বাট মুখে কিছু বলে না।

দুইজন মান অভিমানের পালা শেষ করে বেশ কিছু সময় ঘুরা করে বাসায় ফিরলো।মুগ্ধ আর রুহিকে দেখে মুগ্ধর আম্মু দুইজনকে বসতে বললো।রুহির সোফা বসতে গিয়ে আবার উঠে পড়ে তারপর হনহন করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দই নিয়ে আসে!রুহি রান্না ঘরে চামচ আনতে গিয়ে দেখে মুগ্ধর আম্মু নুডলস রান্না করছে!মুগ্ধর আম্মু সবার জন্য সার্ভ করছে! তখন রুহি বলে ওকে আরো দিতে হবে।মুগ্ধর আম্মু একটা বাটিতে নুডলস দিলো আর রুহি দইয়ের কথা ভুলে! তিরি বিরিং করতে করতে সোফায় এসে বসে নুডলস খাওয়াতে মন দিলো…

মুগ্ধ, মুগ্ধর আম্মু, ইভা, রুহি সবাই খাচ্ছে আর টিভি দেখছিলো!ইভা ফট করে মুগ্ধকে উদেশ্য করে বললো..
ইভাঃ মুগ্ধ কালকে আমার সাথে একটু শপিং করতে যাবে! আমি কিছু জিনিস খুব দরকার…
মুগ্ধঃ না আমার সময় নেই!আম্মুর সাথে যা।
রুহিঃ…..
(হা হা হা আলাভু জানু!ইসস মন চাচ্ছে এক দৌড়ে গিয়ে চটাস করে একটা আদর দিয়ে আসি।ইভা, কুওী,ডায়নীর শখ কত আমার জানুর সাথে শপিং করবে!যা ভাগ হুশ হুশ,, মুগ্ধ বেটুয়া তোমাকে আজকে যা আদর দিসি আমি জানি তুমি ভুলেও আর ইভা সাথে কোথাও যাবে না।ইসস কি যে খুশি লাগছে মন চাচ্ছে উরাধুরা নাচতে!মনে মনে)
মুগ্ধর আম্মুঃওর অফিসে নাকি জুরুরি কি কাজ আছে??এজন্য বাসায় বসে কাজ গুলো করবে।মুগ্ধ তুই ফ্রি হবি কখন সেটা আমাকে আগে বল তো!আমার দরকার আছে…
মুগ্ধঃকেন কি করতে হবে আমাকে বলো??
মুগ্ধর আম্মুঃতোদের বিয়ের শপিং গুলো তো করতে হবে তাই না!তুই আর রুহি গিয়ে পছন্দ মত শপিং করবি কেমন!আমি একা হাতে সব সামলাতে পারবো না…
রুহিঃ বড় আম্মু বিয়ের আর কতদিন বাকি গো!দিন মনে হচ্ছে যাচ্ছেই না।(খেতে খেতে)
মুগ্ধর আম্মুঃ হা হা হা হা! পরশুদিনই তো গায়ে হলুদ রে পাগলি শুধু মাঝখানে শুধু একটা দিন।
মুগ্ধঃ কোথায় কি বলতে হয় তোকে কি হাতে ধরে নতুন করে শেখানো লাগবে নাকি???
ইভাঃএই অসভ্য মেয়ের মাঝে তুমি কি যে দেখছো জানে?না আছে কথা বলার ঢং আর না আছে কোন ভদ্রতা।সারাদিন শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে চলে।
মুগ্ধর আম্মুঃইভা এভাবে কথা বলছিস কেন??রুহি আমার সাথে ফ্রি এজন্য সব কথা আমাকে সহজে বলে দেয়।
ইভাঃবিয়ে বিয়ে করে যে হারে লাফাচ্ছে লজ্জা ল ও নাই সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। খালামনি তুমি দেখ একদিন খুব আফসোস করবে এই মেয়েটার জন্য…
মুগ্ধঃ ইভা প্রথমত আমার সামনে বসে আমার বউকে অপমান করার সাহস আর দেখাস না!রুহি কি আর কেমন সেটা তোর না জানলেও আমার চলবে।রুহি এখন চুপ করে আছে বলে মনে করিস না রুহি কথা জানেনা!আমি আর আম্মু এখানে আছি আর তোকে কিছু বললে আম্মু কষ্ট পাবে তাই রুহি কিছু বলছে না।তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণ দুই চারটা থাপ্পড় খেয়ে ফেলতি।আর রুহি চুপ আছে মানে যে আমিও তোর কথা গিলবো তাহলে তোর ভুল জানিস….আমি আমার বউকে বকবো,মারবো বাট অন্য কাউকে না বলতে দিবো আর না ওকে টিজ শুনতে দিবো ।কথাগুলো মনে রাখিস!এমন ভুল যেন আর না হয়…(কথাটা বলে উঠে চলে গেল)

মুগ্ধর আম্মু রুহির হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে মুগ্ধর পেছন পেছন যাওয়ার জন্য ইশারা করলো।রুহি কফির মগ নিয়ে মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ রুমে নাই!রুহি বারান্দা গিয়ে দাড়াতেই মুগ্ধ ড্রেস বদলে আসলো!শুধু থ্রীকোয়াটার পড়ে!রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো তারপর আবার তাকালো।রুহি মুগ্ধর হাতে কফি ধরিয়ে দিলো আর ড্রয়ার থেকে মলম এনে কামড় গুলোর উপর আলতো করে দিতে শুরু করলো!মুগ্ধ কফির মগটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে রুহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো…

রুহিও মুগ্ধর উন্মুক্ত বুকে মুখ লুকালো!বেশ কিছু সময় পর রুহি মুগ্ধকে ছাড়তে চাইলো বাট মুগ্ধ ছাড়লো না খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।মুগ্ধ জড়িয়ে ধরে বললো…

মুগ্ধঃ যেদিন থেকে আমাদের বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে আমার মনে তোর উপর নতুন করে ভালবাসা জন্মেছে!আমি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি কারন আমি তো এই রকম ছিলাম না। এখন মন চাই সবসময় তোকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি!
রুহিঃ কবুল শব্দটা টা অক্ষরের! কিন্তু এর মাঝে আল্লাহর রহমত আছে! আর এই শব্দটা দিয়ে সবার মনে পবিএ ভালবাসার সৃষ্টি করে বুঝলেন মিঃ বর।
মুগ্ধঃহুমমম!
রুহিঃছাড়ো আমি বাসায় যাবো।
মুগ্ধঃআগে জড়িয়ে ধরতাম না তাই কত বাহানা করতি আর এখন একটু জড়িয়ে ধরতে চাই তো ছাড়ো ছাড়ো করিস কেন শুনি???
রুহিঃ আর দুইটাদিন তারপর এর উওর পেয়ে যাবে!গেলাম আমি…

রুহি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মুগ্ধ রুহির হাত ধরে টেনে আবার জড়িয়ে ধরে!তারপর মুগ্ধ রুহির হাত ছেড়ে দিয়ে রুহির কপালে আদর দেয়! আগের মত রুহি দুই গাল,নাক আর থুতনী দেখায়। মুগ্ধও মুচকি হেসে রুহির আবদার পূরণ করে!রুহি ওর বাসায় যাচ্ছে আর মুগ্ধ সেটা ওর রুমের বারান্দা থেকে দেখছে!রুহি বাসায় ঢুকে গেলে মুগ্ধও রুমে চলে আসে।তারপর রুহি বাসায় গেলে ওর আম্মু ওকে কয়েক দফা বকা দেয় আর ওর বাপি জোর করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

ভালবাসার মানুষ গুলো অদ্ভুত তাই না!যাকে আমরা ভালবাসি মন তো বলে সেই শুধু আমার আর কারো না!রুহি জায়গায় রুহি ঠিক আছে কারন ভালবাসার মানুষটির ভাগ আমরা কেউ কাউকে দিতে চাই না।তবে আমরা মেয়েরা বড্ড বেশি হিংসুটে কারন আমরা বাবা আর বরকে কারো সাথে ভাগাভাগি করতে পারি না। আর কেনই বা করবো?? কারন এরা দুইজনই তো আমাদের নিরাপদ স্থান।আর আম্মু তো সবার উপরে তাই আম্মুর কথা নাই বা বললাম। তবে আমরা প্রত্যেকটা মেয়ে ভাবি বাবার প্রতিচ্ছবি আমাদের বর!বিয়ের আগে বাবার ছায়াতলে আর বিয়ের পরে বরের!এই দুই জনকে আমরা শুধু আমাদের প্রোপার্টি ভাবি!আর যাকে নিজের চেয়ে ভালবাসি তার পাশে অন্য মেয়ে সহ্য করবো এটা মানা যায় না।

পরেরদিন সকালে মুগ্ধ আর রুহিকে পাঠানো হয় ওদের বিয়ের শপিং করতে!আর ওখানে গিয়ে রুহি আরেক কান্ড বাধিয়ে বসে থাকে!মুগ্ধ শুধু পারছে রুহিকে তুলে আছাড় দিতে!রুহি ওর কাজ করে যাচ্ছে আর মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে….

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_23

পরেরদিন সকালে মুগ্ধ আর রুহিকে পাঠানো হয় ওদের বিয়ে শপিং করতে!আর ওখানে গিয়ে রুহি আরেক কান্ড বাধিয়ে বসে থাকে!মুগ্ধ শুধু পারছে রুহিকে তুলে আছাড় দিতে!রুহি ওর কাজ করে যাচ্ছে আর মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে….

মুগ্ধ আর রুহি শপিংমলে এসে হেটে হেটে ভেতরে যাচ্ছে! আর রুহি মুগ্ধর হাত ধরে তিরিং বিরিং করে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে কারন রুহির বিয়ে বলে কথা এজন্য রুহির খুশির অন্ত নেই!রুহি গল্প করতে করতে পাশে তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো পুতুলকে জামা পড়িয়ে রাখা আছে!হাস্যকর কথা হলো রুহি ছোট বেলা থেকেই এই পুতুল গুলোকে কেন জানি খুব ভয় পায়!রুহি হুট করে পুতুল গুলোর দিকে চোখ পড়তেই গগন ফাটানো একটা চিৎকুর দিয়ে এক লাফে মুগ্ধর কোলে উঠে পড়ে।হুট করে এমন করাতে মুগ্ধও আবুল সেজে হা করে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।

মুগ্ধও তখন রুহির চিৎকুরে ভয় পেয়ে যায়!আশে পাশে লোক দাড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ রুহির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়!মুগ্ধ যদি পারতো তাহলে এখনি রুহি গিলে খেয়ে ফেলতো।রুহি মুগ্ধর তাকানো দেখে সুড়সুড় করে কোল থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে আর এমন ভাব করে যেন কিছুই হয় নি!তারপর ওরা একটা শাড়ির দোকানে যায়।মুগ্ধ পাশে বসে আছে আর রুহি শাড়ি দেখছে! এই পযন্ত রুহি ২২ টা শাড়ি দেখছে বাট একটাও চুজ করে পারে নি।মুগ্ধ বুঝে গেছে যা করার ওর নিজেরই করতে হবে তা না হলে ৬ মাসেও রুহির শপিং শেষ হবে কি না সন্দেহ!দোকানদার বেচারা রুহির দিকে তাকিয়ে বলছে…

দোকানদারঃম্যম আপনি তো দেখেই যাচ্ছেন এবার একটা তো চয়েজ করুন!আমার দোকানের এগুলো বেস্ট শাড়ি…
রুহিঃ পছন্দ না হলে কি করবো?? বকবক কম হবে! আর বিশ টা শাড়ি দেখান।আর বিশটা দেখলে একটা পছন্দ হবে সিওর..
দোকানদারঃআপনি কি কালারের মধ্যে নিতে চাচ্ছেন বলুন তো…আমি ওই কালারের শাড়ি দেখায় আপনাকে।
রুহিঃ পান্তা ভাতের মধ্যে গরুর মাংস ঢেলে দিয়ে! তার মধ্যে শসার পেষ্ট দিতে হবে।তারপর হলুদ ছাড়া পাস্তা মিশাতে হবে! তারপর হালকা পিংক কালার মেশাতে হবে!এবার একটু বাঙ্গি কালার একটু লাল আর একটু হালকা নীল কালার মেশাতে হবে।তারপর আমার রুমে যে বেডশীট আছে ওমন কালার টা মেশানো পর যে কালার আসে আমি ওই কালারের শাড়ি চাচ্ছি…. (অনেক খুশি হয়ে)

মুগ্ধ, সহ দোকানের উপস্থিত সবাই রুহির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে!আর দোকানদার হয়তো ভাবছে এই পাগলিটা কোন পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে ভুল করে মনে হয় এখানে ঢুকে পড়ছে!মুগ্ধ রুহি দিকে না তাকিয়ে রুহির বাপি_আম্মু, মুগ্ধর বাবা-আম্মু, ইভার জন্য ড্রেস পছন্দ করে প্যাক করতে বললো!তারপর রুহির জন্য চারটা শাড়ি কিনলো একটা কালো,একটা ব্লু,একটা মেরুন আর একটা গোলাপি….মুগ্ধ নিজের পছন্দ মত রুহির শাড়ি চয়েজ করছে!মুগ্ধ রুহির দিকে না তাকিয়ে দোকানদার বলছে ওর আর যা লাগবে! মুগ্ধর কথা অনুযায়ী তেমন ড্রেস বের করে দিচ্ছে! আর মুগ্ধ পছন্দ করে বলছে আর দোকানদার মুগ্ধর কথা অনুয়ায়ী সেগুলো প্যাক করছে!

মুগ্ধ ওই দোকানের বিল পেমেন্ট করে শপিং ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে গাড়ি লকটা করে আসলো।তারপর রুহিকে নিয়ে মুগ্ধর কিছু ড্রেস,কিনে নিলো।গয়না কেনার দায়িত্ব মুগ্ধর আম্মুর তাই গয়না বাদে যতকিছু লাগে রুহি মুগ্ধকে দিয়ে সব কিনে নিয়েছে।মুগ্ধ আর রুহির বিয়ের আর রিসিপশনের ড্রেস মুগ্ধ আগের অর্ডার করে রাখছে…

মুগ্ধর জানা ছিলো না মেয়েদের এত কিছু লাগে। রুহির আজকে মুগ্ধ নাকানিচুবানি খাইয়েছে ছেড়েছে!সাজগোজ এর জিনিস থেকে শুরু করে পায়ের জুতা পযন্ত রুহি মুগ্ধর পছন্দ মত কিনেছে!মুগ্ধর জানা মতে রুহি সাজগোজ খুব একটা করে না!তারপরেও এত কিছু কেনার কি দরকার মুগ্ধর জানা নেই।রুহি তো বেশ খুশি কারন যা যা বলছে সব মুগ্ধ ওকে কিনে দিয়েছে!মুগ্ধ বেচারা রুহির দিকে তাকিয়ে বলছে…
মুগ্ধঃ রুহি আমার মাথা ঘুরছে!চল বাকিটা শপিং পরে এসে করবো।এখন চল বাসায় যায়!
রুহিঃ আর কিছু কেনার বাকি নেয় তো!ফুলের অর্ডার দিবো আর ব্লাউজের মাপ দিয়ে বাসায় যাবো।
মুগ্ধঃ আজকে না দিলে কি হবে??
রুহিঃ না না আজকেই দিতে হবে।
মুগ্ধঃ উফফ! তোকে নিয়ে আর পারি না।সব কাজ একসাথে করতে হবে।
রুহিঃ যেহেতু এই কাজটা আমাকে করতেই হবে তাহলে ফেলে রেখে কি হবে শুনি..??
মুগ্ধঃচল! চল…

মুগ্ধ আরো এক গাদা শপিং ব্যাগ এনে গাড়ির পেছনের সিটের উপর পালা দেয়!তারপর গাড়ি স্টাট করে!একটা টেইলার্সে এসে রুহি ওর কাপড় গুলো দেয় আর তারাতারি বানাতে বলে।দোকানদার রুহিকে মাপ দিতে বললে রুহি বলে কোন জামার মাপ তো আনেনি !এখন যেন নতুন করে মাপ টা নিয়ে নেয়।একটা ছেলে এসে যখনি রুহি শরীরে ফিতা ধরতে যাবে মুগ্ধ সাথে সাথে ছেলেটির হাত ধরে ফেলে!তারপর মুগ্ধ ওই ছেলেটিকে ডেকে বলে…

মুগ্ধঃএখানে কোন মেয়ে নেই??তুমি কেন ওর মাপ নিতে আসলে…
দোকানদারঃ মেয়ে আছে বাট এখন নেই ??আমি তো সবার মাপ নেই আর আমি তো আছি সমস্যা নেই ??
মুগ্ধঃ আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার আছে..??
দোকানদারঃ….
মুগ্ধঃআপনি ওই পর্দার আড়ালে গিয়ে দাড়ান আমি আপনাকে মাপ লিখে দিচ্ছি।
রুহিঃ এসবের মানে কি.???
মুগ্ধঃসব মানে তোকে বোঝাতে পারবো না।চুপ থাক.

তারপর মুগ্ধ নিজে পর্দা টেনে দেয়!তারপর ফিতা দিয়ে রুহির মাপ নিচেছ আর সেটা লিখছে।রুহি অবাক হয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ রুহিকে কিছু জিজ্ঞাসা করছে না বরং নিজের মনমত করে মাপ নিয়ে সেই মাপটা দোকানদারের হাত ধরিয়ে দেয়।আর কালকেই লাগবে বলে মুগ্ধ তারাতারি ওগুলো দিতে বলে।মুগ্ধ রুহির হাত ধরে নিয়ে ওরা ওখান থেকে বেরিয়ে যায়…মুগ্ধ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর বলছে।

মুগ্ধঃ এবার থেকে মেয়ে টেইলার্সে গিয়ে ড্রেস বানাতে দিবি!এমন ভুল যেন না হয়…
রুহিঃআমি তো জামার মাপ দিয়ে দেয় বাট আজকে তো কোন মাপ অনুযায়ী ড্রেস আনতে ভুলো গেছি।তাই আমার থেকে মাপ নিতে বলছি..
মুগ্ধঃএর আগে এটা হয়তো খেয়াল করি নি বাট এবার থেকে খুব এই ভুল যেন না হয়!
রুহিঃ কেন কি এমন হবে ন করে মাপ নিলে শুনি??একটু বেশি বুঝো কেন তুমি??সবাই তো এভাবে মাপ দেয়।

মুগ্ধ রুহির কথা শুনে সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। আর রাগী চোখে রুহির দিকে তাকায়।মুগ্ধ রুহি গাল চেপে ধরে বলে…
মুগ্ধঃ আমার বউকে আমি কাউকে টার্চ করতে দিবো না।আর আমি তো নিজেই তোকে এমন ভাবে টার্চ করিনি আর ওই ছেলেটাকে টার্চ করতে দিবো ভাবলি কি করে???
রুহিঃ….
মুগ্ধঃ তোকে জড়িয়ে ধরছি! বাট এমন ভাবে তোকে টার্চ করিনি যে তোর বুকের আর কোমরের মাপ আমি জানতে পারবো।আমি তো তোকে কোনদিন খারাপ ভাবেও তোকে টার্চ কথা চিন্তাও করিনি! তাহলে অন্য কাউকে তোর শরীরে মাপ নিতে দিবো ভাবলি কি করে???
রুহিঃ সবাই তো এই ভাবেই মাপ দেয়!
মুগ্ধঃকে কি করে আমি জানিও না আর বুঝিও না!মুগ্ধ মুগ্ধর মত চলতে পছন্দ করে।আমি এসব পছন্দ করি না…মাইন্ড ইট
রুহিঃহুমমম
মুগ্ধঃ আসলে তোরা মেয়েরা বড্ড বোকা জানিস তো!
রুহিঃ মানে??
মুগ্ধঃ কিছু না!

তারপর দুই রেস্টুরেন্ট খেয়ে একেবারে বাসায় ফেরে!রুহি ওর বাসায় চলে যায় আর মুগ্ধ দারোয়ানকে গাড়ির চাবি দিয়ে শপিং ব্যাগ গুলো ড্রয়িং রুমে রাখতে বলে আর নিজের রুমে চলে যায়।মুগ্ধ ওর রুমে গিয়ে ধপাস করে বেড়ে শুয়ে পড়ে ঠিক তখনই ওর ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে!মুগ্ধ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অফিসের স্যার ওকে ফোন দিয়েছে…

মুগ্ধঃআসসালামু আলাইকুম স্যার!কেমন আছেন??
স্যারঃওয়ালাইকুম সালাম!আমি ভালো আছি তা তুমি কেমন আছো??
মুগ্ধঃ আলহামদুলিল্লাহ স্যার আমিও ভালো আছি।
স্যারঃ তোমার তো কালকে গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে তাই না
মুগ্ধঃ জি স্যার!
স্যারঃহা হা হা! বিয়ের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে চলবে!আজকে রফিক আমাকে জানালো তুমি নাকি দুই দিনের ছুটি নিয়েছো অসুস্থ তাই…
মুগ্ধঃ জি স্যার..
স্যারঃএখন তুমি অসুস্থ তার উপরে আবার তোমার বিয়ে! তুমি কালকে অফিসে এসে আমার সাথে দেখা করো কেমন!কারন কয়েকদিন রেস্ট দরকার তোমার!
মুগ্ধঃ ধন্যবাদ স্যার!আমি কালকে আপনার সাথে দেখা করবো।
স্যারঃ ওকে!আল্লাহ হাফেজ..
মুগ্ধঃ আল্লাহ হাফেজ…

ওই স্যারের সাথে মুগ্ধ সম্পকটাও ভালো!আর মুগ্ধ খুব মিশুক তাই সবাই ওকে খুব ভালবাসে।ফোন রাখার পর মুগ্ধ হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলো!তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো।মুগ্ধ ওর বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে…
মুগ্ধঃআর মাএ একটা দিন! তাহলে আমি আমার দুষ্টু বউটাকে সারাজীবনের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারবো।কেউ কিছু বলতেও পারবে না আর না থাকবে কোন ভয়।আমি তখন আমি মিষ্টি বউটাকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্য লুকিয়ে রাখবো…(মুচকি হেসে)

তারপর মুগ্ধ এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।ওইদিকে রুহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে।রুহি কিছু সময় নিজের গাল টেনেটুনে বোঝার চেষ্টা করলো মটু হয়েছে নাকি শুকিয়ে গেছে!তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে পেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলো পেটে মেদ জমছে কি না??তার হাত -পা ছড়িয়ে দিয়ে দুম করে বেডে শুয়ে পড়লো।

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_24

মুগ্ধঃআর মাএ একটা দিন! তাহলে আমি আমার দুষ্টু বউটাকে সারাজীবনের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারবো।কেউ কিছু বলতেও পারবে না আর না থাকবে কোন ভয়।আমি তখন আমি মিষ্টি বউটাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখবো…(মুচকি হেসে)

মুগ্ধ এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।ওইদিকে রুহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে।রুহি কিছু সময় নিজের গাল টেনেটুনে বোঝার চেষ্টা করলো মটু হয়েছে নাকি শুকিয়ে গেছে!তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে পেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলো পেটে মেদ জমছে কি না??তার হাত -পা ছড়িয়ে দিয়ে দুম করে বেডে শুয়ে পড়লো।

রুহি বেড থেকে উঠে হাতে লিপস্টিক নিয়ে পড়া শুরু করলো!বাট লিপস্টিক দেওয়ার সময় এবরো থেবরো হয়ে যাচ্ছে। রুহি তিন বার মুছলো তারপর চার বারের বেলায় যখন একই অবস্থা তখন ওই লিপস্টিক টা হাতে নিয়ে ওর গোটা মুখে ঘষে দিলো!তারপর বিরক্তকর ভাব নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
রুহিঃনে নে আর দিবোই না লিপস্টিক। এবার খুশি বালের লিপস্টিকের মায়েরে বাপ… (লিপস্টিকটা ছুড়ে ফেলে)
তারপর রুহি ওয়াশরুমে গেল আর মুখটা সুন্দর করে ধুয়ে আসলো।তারপর আবারও চিন্তা করছে…

রুহিঃ কালকে বার বার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে!কালকে বাদে পরশু বিয়ে এখন নিজেকে পরিপাটি রাখতে হবে।আচ্ছা কালকে তো আমার গায়ে হলুদ বাট আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না!আচ্ছা ওটা কোন সমস্যা না বেল্ট বুল্ট দিয়ে কোন রকম আটকে রাখলেই হলো।যাই হোক আচ্ছা কালকে তো অনেকে আমাকে হলুদ দিবে! আর মিষ্টিও খাওয়াবে! বাট আমি আগে কোন মিষ্টিটা খাবো।ধুরর তখন দেওয়া যাবে।আচ্ছা আমার তো বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো মুগ্ধর সাথে এক রুমে থাকবো!একই বেডে তখন মুগ্ধ বুকের উপর পা তুলে দিলে কি মুগ্ধ রাগ করবে!ধুর রাগ করলে করবে তাতে আমার বাবার কি?ওহহ হো একটা কথা তো ভাবতে ভুলে গেছি!যাক বাবা মনে পড়লো তাহলে এখন আসল কথাটা ভাবি….
আচ্ছা তুমুল যেমন কুট্টুশকে পেগনেন্ট করে দিসে মুগ্ধও কি আমাকে পেগনেন্ট করে দিবে নাকি।না না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।বাট ওই ষাড় টাকে আটকাবো কি করে?? দিস ইজ অনেক বিগ চিন্তার বিষয়। আচ্ছা এসব এখন আইডিয়া গুলো বাসি করা যাবে না।যা করবো সব টাটকা আইডিয়া দিয়ে কাজ চালাবো।এখন ঘুমায়…
তারপর রুহি ওর আনকমন ইচ্ছে গুলো র কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরেরদিন সকালে…
আজকে রুহি আর মুগ্ধ গায়ে হলুদ!মুগ্ধ খুব সকালে উঠে নামাজ পড়ে তারপর ব্রেক ফাস্ট করে কিছু কাজ সেরে নেয়!১০ দিকে মুগ্ধ অফিসে গিয়ে ওর স্যারের সাথে দেখা করে!মুগ্ধ যদিও স্যার সহ অফিসে ওর কলিগদের বিয়ের কার্ড দেয় তারপরে সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলে।তারপর হাসি মুখে বের হয়ে যায় অফিস থেকে…

দুই বাড়িতেই লোকজনের গমগম করছে!আর রুহি আরামশে ঘুমাচ্ছে। রুহির আম্মু চারবার ডেকেও রুহিকে উঠাতে পারে নি!রুহির বিয়ে বলে কথা এজন্য রুহি জান প্রান দিয়ে মনের সুখে ঘুমাচ্ছে। মুগ্ধর বড় মৌমি আর ওর হাজবেন্ডও চলে এসেছে!দুই বাড়িতে এখন মানুষে গিজগিজ করছে।মুগ্ধ ওর বাকি কাজ গুলো নিয়ে কেবল বাসায় ফিরলো!তারপর মৌমির সাথে কথা বলে ওর রুমে চলে গেল।মুগ্ধ ওর বারান্দায় গিয়ে রুহিকে দেখার চেষ্টা করলো বাট মহারানী যে কোন রাজকায্য তে বিজি আছে কে জানে?মুগ্ধ একেবারে সাওয়ার নিলো তারপর হালকা কিছু খেয়ে বেরিয়ে গেল…

দুপুর ১২ঃ৫৬ মিঃ রুহির ঘুম ভাঙে!রুহি মুগ্ধকে ফোন দেয়!মুগ্ধ তখন ড্রাইভ করছিলো এজন্য গাড়িটা সাইডে রেখে মুগ্ধ রুহির ফোন ধরে।মুগ্ধ কিছু বলার আগেই রুহি বলে উঠে…
রুহিঃ আমার কিউট হাবি টা কি করে??
মুগ্ধঃ আপনি কেবল ঘুম থেকে উঠলেন?? তা রাতে কি এমন কাজে করছিলেন যে লেট করে ঘুমিয়েছিলেন…
রুহিঃ ধুররর এসব বাদ দাও তো!আমার রুমে এসো তো..
মুগ্ধঃকেন??
রুহিঃ ঠোঁট খাবো!!!
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃ এসো না একটু আদর দিয়ে যাও
মুগ্ধঃআমি এখন বাইরে বিজি আছি!বাই
রুহিঃতোমার বিজির মায়েরে বাপ! শালা আধকানা…

রুহি মুগ্ধকে কয়েক দফা গালি দিয়ে সাওয়ার নিতে গেল!মুগ্ধ ফোন কেটে দেয় তারপর মুচকি হাসে!মুগ্ধ মনে মনে ভাবছে…
মুগ্ধঃএভাবে নেশা ধরা কন্ঠে আদর চাই রে গাধী!ইসস মন চাচ্ছে এক দৌড় গিয়ে আমার বউটাকে এত এত আদর দিয়ে আসি।এই পাগলিটা বোঝে না কেন এমন ভাবে আদর চাইলে আমার বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পাগলি একটা….

রুহি সাওয়ার নিয়ে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর চিৎকার করে ওর আম্মুকে ডাকছে।রুহি ওর আম্মুকে তারাতারি খেতে দিতে বলে। রুহি খাচ্ছে আর ওর আম্মু ওর চুল মুছে দিচ্ছে। রুহির নানুর বাসায় সবাই চলে এসেছে! বাচ্চারা হাউকাও করে চেচাঁমেচি করছে! আর এক জায়গায় কয়েকজন মহিলা বসে বসে ৩২ পাটি দাঁত বের হাসছে, পুরো বাড়িটা সাজানোর জন্য লোকজন খুব বিজি,রুহি খাচ্ছিলো আর এসব দেখছিলো।তারপর খেয়ে রুহি ওর বাপির রুমে গেল!ওর বাপি তখন কিছু একটা হিসাব করছিলো।

রুহি কিছু না বলে কাগজ পএ হাজিবাজি সরিয়ে রেখে ওর বাপির কোলে শুয়ে পড়লো।রুহির বাপি মুচকি হেসে রুহি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুহি কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে!রুহি ওর বাপিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।রুহির বাপি মুচকি হেসে বললো…
বাপিঃপাগলি মেয়ে কাঁদছিস কেন??আমি তো খুব খুশি কারন আমি আমার কলিজার টুকরোকে যোগ্য পাএের হাতে তুলে দিতে পারছি!আমি জানি মুগ্ধ তোকে খুব ভাল রাখবে।আমার জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই মা…
রুহিঃ……
বাপিঃ আম্মু কাঁদে না!এই বাসা আর ওই বাসা দুরে তো যাচ্ছো না তাই না।

বাবা মেয়ের অনেক কথা বললো তারপর রুহি ওর রুমে চলে গেল!রুহি ওর বারান্দায় গিয়ে দেখছে মুগ্ধদের আর রুহিরদের পুরো বাড়িই খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে!মুগ্ধ আর রুহির গায়ে হলুদ হবে একসাথে! রুহি বারান্দায় দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবে!ঠিক তখনই হঠাৎ পেছন থেকে সুমি আর ইরা এসে রুহিকে জাপটে ধরে।তারপর তিন আড্ডা দিতে শুরু করে!

বিকাল ৩ঃ৫৯ টার দিকে…
রুহির মনে হলো বিয়ের বাড়ি গান ছাড়া জমছে না!এজন্য উরাধুরা গান বাজিয়ে নিজেই নাচ শুরু করলো।রুহিদের বাগানে সুমি,ইরা,রুহি,বাচ্চারা সাথে বড়রাও নাচতে শুরু করছে।বিয়ে মানেই তো খুশির দিন আনন্দ না করলে হয়।এত জোরে গান বাজছে যে কেউ কারো কথা শুনতে পারছে না!মুগ্ধর আম্মু, মৌমি আর ওর হাজবেন্ড দেখার জন্য বাসায় থেকে বের হয়েছে!যে কে এত জোরে গান বাজাচ্ছে। যখন দেখলো এটা মিসেস মুগ্ধর কাজ! তখন সবাই কয়েক দফা হাসতে শুরু করলো।

প্যারাময় লাভ পর্ব ১৯+২০+২১

রুহি, মুগ্ধর আম্মু আর মৌমি কে দেখে ওদের হাত ধরে নাচতে শুরু করলো।ওদের নাচ দেখে রুহির বাবা মা থেকে শুরু করে মুগ্ধর বাবাও আরো যারা সবাই নাচতে শুরু করছে।মুগ্ধ গাড়ি নিয়ে বাসার আসছিলো তখন দেখে রুহিদের বাসায় ফুল ভলিউমে গান বাজছে!মুগ্ধ ওর বাসার গিয়ে গাড়িটা পার্ক করে ওর রুমে চলে গেল।মুগ্ধ ওর রুমে গিয়ে শার্টের দুইটা বোতাম খুলতে রুহির বাগানের দিকে চোখ পড়তেই মুগ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে….

মুগ্ধ রুম থেকে ওর বারান্দায় এসে তাকিয়ে বলছে…
মুগ্ধঃ আমার জীবনে এরকম একটা দৃশ্য দেখারও বাকি ছিলো?কোন মেয়ে যে তার বিয়ে এভাবে ইনজয় করতে পারে সেটা রুহিকে না দেখলে জানতাম না।রুহির কথা না হয় বাদ দিলাম!আমার বাবা-মা সাথে মেজ বাবা মেজ আম্মুকে দেখছি। আচ্ছা রুহির সাথে থেকে কি সবার মাথার তার ছিঁড়ে গেল নাকি???

রুহি মুগ্ধকে বারান্দায় দেখে একটু সাইডে এসে হাত নাড়িয়ে মুগ্ধর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো।রুহি মুগ্ধকে একটা ফ্রাইং কিস ছুড়ে দিলো!মুগ্ধ কিছু বলতে যাবে তার আগে হঠাৎ পেছনে কেউ এসে এক বালতি রং মুগ্ধ মাথায় ঢেলে দিলো।মুগ্ধর সাদা শার্ট লাল রংয়ের লাল হয়ে গেল।মুগ্ধ পেছনে তাকিয়ে দেখে সুমি ইরা রাহাত,আবির,আর আরিয়ান দাঁত কেলিয়ে হাসছে।

মুগ্ধকে রংয়ে ডুবানোর বুদ্ধিটা রুহির!রুহিই এদের পাঠিয়েছে কারন রুহির ভাষ্যমতে নিজের বিয়েতে নিজেই যদি ইনজয় না করি অযথা অনুষ্ঠান করে বিয়ের করার কোন মানেই হয় না।মুগ্ধ কিছু বলার আগেই সবাই মুগ্ধকে টানতে টানতে রুহির বাগানে নিয়ে গেল….

প্যারাময় লাভ পর্ব ২৫+২৬+২৭