প্যারাময় লাভ পর্ব ৪+৫+৬

প্যারাময় লাভ পর্ব ৪+৫+৬
written Nurzahan akter Allo

রুহি চকলেট পেয়ে এত খুশি যে চড়ের খাওয়ার কথা ভুলে গেছে!এটা তো রোজকারে কাহিনী এজন্য রুহিও আর কিছু মনে করে না।মুগ্ধের হাত মার খায় আর চকলেট পেলে সব ভুলে যায়।রুহি চকলেট খেতে ভালবাসে বলে মুগ্ধও বাইরে গেলে চকলেট আনতে ভুল করে না।মুগ্ধর রুম থেকে রুহি বের হয়ে চকলেট খেতে খেতে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে নিচে চলে গেল।

রাতের বেলায় সবাই এক সাথে ডিনার করতে বসে!রুহি বকবক করছে আর বাকিরা শুনছে।মুগ্ধ ভেবে পায় না একটা মানুষ এত কথা বলে কি করে?মুগ্ধ এতক্ষণ চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছিলো!মুগ্ধ এবার মুখ তুলে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো…
মুগ্ধঃএখন তো তুই খেতে বসেছিস তাই না!এবার তো দয়া করে মুখটা বন্ধ কর!এখন যদি তুই মুখটা বন্ধ না করিস তো তোরে ১৮০’ ডিগ্রি এংগেলে এমন থাটিয়ে থাপ্পড় দিবো যে তোর মুখটা বামদিকে বাঁকা হয়ে যাবে।এবার বল তুই থাপ্পড় টা খাবি নাকি মুখটা বন্ধ রাখবি….
রুহিঃ আসলে আমি কথা না বলে থাকতে পারি না!কথা না বললে আমার পেট কামড়ায় আর কথাগুলো পেটের মধ্যে খিচমিচ করে।
মুগ্ধঃ ওহহ্!তাহলে এদিকে আয় থাপ্পড়টা খেয়ে যা।
রুহিঃ না থাক!আমি কষ্ট করে চুপ করেই থাকবো।

তারপর চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো!রুহির খেতে খেতে বিষম লাগে! মুগ্ধ তারাতারি করে রুহিকে পানি এগিয়ে দেয়!রুহি বিশ্বকরা জয় করা হাসি দিয়ে মুগ্ধকে ধন্যবাদ দেয়!তারপর খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়।

পরেরদিন সকালে রুহির আম্মু বাসায় চলে আসে!রুহির বাসা রাস্তার এপাশে আর মুগ্ধদের বাসা রাস্তার ওপাশে। রুহি মুগ্ধর আম্মুকে বলে ওর বাসায় চলে আসে!রুহি বাসায় এসে উরাধুরা গান বাজিয়ে নাচানাচি শুরু করছে!রুহি ওর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে গান গাইছে…

ও কাউয়া রে কাউয়া রে তুই অপরাধী রে
আমার যত্ন গড়া গাল দুটোই লাল করে দিলি রে….
একটা সময় তোরে আমি মানুষ ভাবিতাম
কিন্তু তুই তো মানুষ না আস্ত একটা খাটাশ পোলা রে…আগে না জানিতাম।

পুরো গান না শেষ করতেই ঠাস্ কেউ ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়!রুহি গালে হাত দিয়ে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে!কারন থাপ্পড়টা দিয়েছে মুগ্ধ… মুগ্ধর দিকে রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জানতে চাইলো! যে এবার কেন মুগ্ধ তাকে মারলো!ও তো এবার কিছু করে নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুহিঃ আমি এবার কি করছি??এখন তো বিনা দোষে আমাকে মারলে…আমার গাল টা কি তোমার সরকারি মনে হয়??যখন ইচ্ছা হয় দুম করে মেরে দাও…
মুগ্ধঃ তোর গাল সরকারি না বেসরকারি জানার প্রয়োজন মনে করিনি। শুধু জানি আমার সাথে যতদিন ছ্যাচড়ামি করবি তুই দিন আমার সাথে মার খাবি…
রুহিঃকখন ছ্যাচড়ামি করলাম??সকাল সকাল মারলে বাট কি জন্য মারটা খেলাম যদি বলতে,তাহলে মনে একটা শান্তি বিরাজ করতো।কারন আমার মত নিরীহ আর ভদ্র মেয়ে কে তুমিই শুধু বিনা দোষেই মারো।
মুগ্ধঃতুই ভদ্র মেয়ে????? তোর এই গানের মানে কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝি।(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ কি বুজলে আমি তো ওই কাউয়াকে গান শুনাচ্ছিলাম।
(মা গো মা খাটাশটার মাথায় কত ব্রেণ!বুঝে ফেলছে রে…)
মুগ্ধঃআমি কালো ড্রেসআপ পড়ে আছি এজন্য তুই আমাকে কাউয়া বলছিস?আমি বুঝতে পারবো না মনে করছিস।নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ…..ইয়ে ম ম মা মানে আসলে তা না
(হারামজাদা, কুওা,খাটাশ তোর এত বুঝতে কে বলছে!নরম গালে পেয়ে বার বার গরম থাপ্পড় দিতে ভালোই লাগে তাই না।দাড়া আমি তোর সাঁতার কাটার ব্যবসথা করছি। মনে মনে)
মুগ্ধঃঅসভ্য মেয়ে একটা!সব সময় দুষ্টু বুদ্ধি ছাড়া একটাও ভাল বুদ্ধি নাই।
রুহিঃ ভাইয়া তবে গানটা কিন্ত দারুন হয়েছে তাই না।আমি অনেক বুদ্ধি দিয়ে বানিয়েছি
মুগ্ধঃ চুপ কর নইতো থাটিয়ে আর একটা থাপ্পড় দিবো।সারাটাদিন বকবক করতে করতে কানের পোকা বের করে দেয়…বাঁচাল একটা।
রুহিঃভাইয়া আমি কথা বলে, তোমার কানের পোকা বের করে দেওয়ার পর কি! তুমি আবার ওদের তোমার কানের ভেরত ঢুকতে দাও!না মানে তুমি কি কানের ভেতর পোকার চাষ করো..
মুগ্ধঃরুহি আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে! সত্যি বলছি তোকে কিন্ত আমি মেরেই ফেলবো এবার…..অসভ্য, ফাজিল মেয়ে (কথাটা বলে চলে গেল)

মুগ্ধ অাজকে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট,কাল ব্লেজার,কালো সু, আর কাল সানগ্লাস পড়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলো!তখন রুহি মুগ্ধকে দেখে ওই গানটা গাইছিলো।তাই মুগ্ধ একটা থাপ্পড় দিয়ে রুহির গানের পারিশ্রমিক টা হাতে নাতে দিয়ে দিলো।মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর রুহি নিচে এসে ড্রয়িংরুমের সোফাতে দুই পা তুলে গালে হাত দিয়ে গাল একা একা টিপছিলো!রুহির আম্মু এসে রুহিকে বললো..

আম্মুঃকি রে মুগ্ধ কে বেরিয়ে যেতে দেখলাম।দিতে এসেছিলো নাকি?তা কয়টা দিলো?
রুহিঃএকটা দিসে.. (গালে হাত বুলাতে বুলাতে)
আম্মুঃওহহ্!আর একটা দিতে পারলো না।
রুহিঃ ওই কুওাটা তোমার মেয়েকে মেরে যায় আর তুমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখ। (কাঁদো কাঁদো মুখে)
আম্মুঃ মুগ্ধ হুটহাট করে বাসায় আমাদের বাসায় আসে না!আর আসলে তোকে চড় দিতে আসে।আর তুই মার খাস তোর দুষ্টুমির কারনে আর মুগ্ধ যে ছেলে বিনা দোষে কাউকে মারবে না।
রুহিঃহুমম তোমার মুগ্ধ তো বিশ্বের সব চেয়ে ভাল ছেলে!ওরে ভাল ছেলের নোবেল টা দিয়ে দাও….নোবেল না পেলে একটা RFL বদনা উপহার দাও।এত চড় খেয়ে আমার মনে হচ্ছে দিন দিন আমার গালটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। তোমার মুগ্ধর যে হারে আমাকে মারে একদিন দেখবে আমার গাল সত্যি সত্যি বাঁকা হয়ে গেছে…

রুহি সোফা থেকে উঠে মুগ্ধদের বাসায় যায়!তারপর রান্না গিয়ে দেখে মুগ্ধর আম্মু বরইয়ের আচার বানিয়েছে এখনো বয়ামে রাখে নি!কিছুক্ষণ আগেই করছে মনে হয়!রুহি আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে পুরো এক কড়াই আচার নিয়ে মুগ্ধর রুমে চলে যায়!তারপর মুগ্ধ রুমে বসে বসে মনের সুখে আচার খেয়ে চলে আসে!বিকাল ৪টার দিকে রুহির কোচিং আছে এজন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে!রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সামনে তাকিয়ে দেখে দুইটা ছেলে মেয়ে দুজন দুজনার হাত ধরে কথা বলতে বলতে বলতে আসছে আর হাসছে…..

রুহি দুষ্টু হেসে ওই ছেলে আর মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে…
রুহিঃভাইয়া এই আপুটা মোটেও ভাল দেখতে না!আগের দুইটা আপু দেখতে পুরাই জখাম ছিলো।এই আপুটার চোখ টা একটু ট্যারা…

রুহি এই কথাটা বলে মুচকি হেসে চলে যায়!আর একবার পেছনে তাকিয়ে দেখে ওদের মাঝে ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে!রুহি মুচকি এসে মনে মনে বলে….
রুহিঃ এসব ঠুনকো ন্যাকামির নাম দিসে ভালবাসা!কি কি বললো পরখ না করে ভুল বুঝাবুঝি শুরু।ভালবাসার মানে বুঝে না আর ভালবাসি ভালবাসি করে চিৎকুর দেয়!আমার জানেমান টা কে যে কবে পাবো!আমার জানুটা এমন হবে না মে বি।

রুহি, সুমি আর ইরা কোচিং ক্লাসে বসে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই বাট ওদের কানে ইয়ারফোনে কোকা কোলা তু গানটা বাজছে।কেউ ধরতে পারবে না যে এরা তিনজন টিচারকে এভাবে ঢপ মারছে।এভাবে তিনটা ক্লাস শেষ করে তিনজন হাঁটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। রুহি পার্কের মত একটা জায়গাতে এসে বসে পড়ে!সুমি আর ইরাও বসে পড়ে… হুট করে সুমি রুহির দিকে তাকিয়ে বলে।

সুমিঃরুহি আমার মনে হয় মুগ্ধ ভাইয়া তোকে খুব ভালবাসে!এজন্য তোকে এত শাষণ করে।কেউ যদি কাউকে এমন ভালবাসে তাহলে এমন করেই শাষণ করে।
রুহিঃ ভাট বকা কম কর!ভুলভাল বকিস না তো।মুগ্ধ ভাইয়া যদি আমাকে ভালবাসতো তাহলে সারাদিনে এমন ভাবে মারতো না।কুওাটা আমাকে না মারলে মনে হয় ওই কুওাটাও শান্তি পায় না!আর তুই বলছিস আমাকে ভালবাসে!বালের ভালবাসা….
ইরাঃ আচ্ছা রুহি ভাইয়া তোকে থাপ্পড় মারে তুই কিছু বলিস না কেন??
রুহিঃকি বলবো??আমার অভ্যাস হয়ে গেছে বরং একদিন যে মুগ্ধ ভাইয়ার হাতে মার না খেলেই আমার গাল চুলকায়।
সুমিঃহা হা হা

রুহি, সুমি,ইরা ওখান থেকে সোজা শপিংমলে চলে যায়!তারপর হুদাই ঘুরে বেড়ায় আর ঘুরতে ঘুরতে রুহি একটা ছেলেদের ওয়াচ খুব পছন্দ হয়!রুহি কি মনে করে ওয়াচ টা নিয়ে নিলো।রুহি, ইরা আর সুমি তিনজনেই একই রকম চুরি নিলো।তারপর বাসায় যাওয়ার উদেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

ওদিকে মুগ্ধ অফিস থেকে বাসায় ফিরে ওর রুমে ঢুকেই চোখ ছানাবড়া!মুগ্ধ চিৎকার করে ওর আম্মুকে ডাকলে!মুগ্ধর ডাক শুনে ওর আম্মু দৌড়ে আসে। মুগ্ধ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো…
আম্মুঃকি রে কি হয়েছে?এমন চিৎকার করছিস কেন তুই??বাসায় ডাকাত পড়ছে নাকি…
মুগ্ধঃআমার বেড শীটে কে বরইয়ের আচার লেপ্টে রাখছে!আর পুরো রুমের এই অবস্থা কেন???(চিৎকার করে)

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_5

মুগ্ধঃআমার বেড শীটে কে বরইয়ের আচার লেপ্টে রাখছে!আর পুরো রুমের এই অবস্থা কেন???(চিৎকার করে)
আম্মুঃআমি জানবো কি করে?আমার শখের আচার গুলো কে এমন করলো ??
মুগ্ধঃওই ফাজিলটারই কাজ এটা!ওই ছাড়া কেউ এই কাজ করবে না।এত মার খায় তাও ওর শয়তানি কমে না।ওরে আজ আমি হাতের কাছে পেলে যে কি করবো আমি???(দাঁতে দাঁত চেপে)
আম্মুঃ ও ছোট বুঝে করে নি মনে হয়!যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে!আমি বুয়াকে বলে রুম পরিষ্কার করিয়ে দিচ্ছি।

মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাইরে বের হয়!আবির,রাহাতের সাথে আড্ডা দিতে যায়। রুহিও বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসার ভয়ে মাথা ব্যাথার বাহানা করে বেডে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে!রুহি ওর ফোনটা বের করে মুগ্ধকে ফোন দিলো!মুগ্ধ ফোনটা রিসিভ করলো না! তাই রুহিও ফোন দিতেই থাকলো যতক্ষণ না মুগ্ধ ফোন ধরে!সাত বারের বেলায় বিরক্ত হয়ে মুগ্ধ ফোন টা রিসিভ করলো।মুগ্ধকে কিছু বলতে না দিয়ে ফটাফট বলতে শুরু করলো….

রুহিঃ ভাইয়া তুমি যেখানেই থাকো!তারাতারি বাসার সামনে এসো খুব দরকার।
মুগ্ধঃনা এখন আমি যেতে পারবো না আমি একটা কাজে আছি।
রুহিঃ না না না এখন মানে এখনই তুমি আসবা!আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
মুগ্ধঃ আচ্ছা আমাকে না জালাতন করলে তোর শান্তি হয় না!
রুহিঃনা শান্তি হয় না!তারাতারি এসো না প্লিজ।
মুগ্ধঃহুমম

আবির আর রাহাতের থেকে বিদায় নিয়ে মুগ্ধ রুহির বাসার সামনে এসে মুগ্ধ রুহিকে কল দিলো।রুহি তো ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত তিরিং বিরিং করে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে মুগ্ধর সামনে দাড়ালো মুখে বিশ্বজয় করা হাসি!মুগ্ধ কিছু বলার আগেই রুহি মুগ্ধর হাত ধরে রাস্তার হাটতে শুরু করলো!মুগ্ধ ভ্রু কুচকে রুহির দিকে বললো…

মুগ্ধঃ রাস্তার মধ্যে এমন করে হাত ধরে হাটছিস কেন?রাস্তা মানুষ গুলো কি ভাববে??হাত ছাড় বলছি
রুহিঃ আমি আমার ভাইয়ার হাত ধরছি তাতে কার বাবার কি শুনি??আমার ভাইয়ার হাত ধরে আমি হাটবো নাকি আমার ভাইয়ার হাত ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো সেটা আমার ব্যাপার।
মুগ্ধঃ অযথা বকবক না করে বল কি বলবি??
রুহিঃআমার খুব নেশাগ্রস্ত লাগছে!আমার নেশা কাটিয়ে দাও।
মুগ্ধঃঠাটিয়ে এক থাপ্পড় মারবো তোকে!যা বলবি খোলাখুলি বল এত ন্যাকামি দেখার সময় নাই।
রুহিঃআমি আইসক্রিম খাবো!আমাকে আইসক্রিম কিনে দাও (মুখ ফুলিয়ে)
মুগ্ধঃপ্রথমে এটা বললে কি হতো!বেশি পাকামি তাই না।আর রাতের বেলায় আইসক্রিম খেতে হবে না।যা বাসায় যা…
রুহিঃ না না আমি এখনই খাবো…
মুগ্ধঃ আচ্ছা তুই বাসায় যা! আমি নিয়ে আসছি।
রুহিঃআমিও তোমার সাথে যাবো!এখন বাসায় গেলে আম্মু জোর করে পড়তে বসাবে।এখন আমার পড়তে ইচ্ছে করছে না।
মুগ্ধঃ পড়তে তো তোমার কোনদিনই ভালো লাগে না!পড়াচোর একটা…সারাদিন আকাম গুলো করতে ভালোই লাগে।শুধু কাজের কাজ করতে তোমার ভালো লাগে না।

মুগ্ধ আর রুহি পাশাপাশি হাঁটছে! রাতের বেলা ল্যাম্প পোষ্টের লাল,নীল,হলুদ লাইট গুলো খুব ভালো লাগে।মুগ্ধর পাশাপাশি রুহি আইসক্রিম খাচ্ছে আর বকবক করেই যাচ্ছে!রুহি হুট করে ওর এটো করা আইসক্রিমটা মুগ্ধর মুখের সামনে ধরলো!মুগ্ধ ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকালো!রুহি মুচকি হেসে বললো…

রুহিঃতুমি তো আমাকে শুধু মারো একটুও ভালবাসো না।তাই একটু এটো খাও… আমার এটো খেয়ে যাতে একটু ভালবাসা বাড়ে।
মুগ্ধঃ এমনি কি তোকে মারি?তোর দোষে তুই মার খাস..
রুহিঃসেদিন কফিটা এটো করছি বলে ঠাস করে থাপ্পড় মারলে!পরে তো সেই আমার এটো কফিটাই তো খেলে তাহলে শুধু শুধু মারলে কেন??
মুগ্ধঃ ক ক আমি তোর এটো করা কফি খেয়েছি।চোখের আজকাল বেশি দেখিস নাকি তুই…
রুহিঃআমি পর্দার আড়াল থেকে দেখছি।তুমি আমার এটো করা কফিটাই খেয়েছো।এখন স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছো বুঝি (মুচকি হেসে)
মুগ্ধঃ ওহহ হো তোর তো মার বাকি আছে!তুই আমার রুমটার এই অবস্থা করছিস কেন?? এবার বল কোন গালে থাপ্পড় খাবি…. (কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য)
রুহিঃ না না মারার আগে আমার একটা কথা শোনো।ভাইয়া আজকে তোমার জন্য একটা উপহার কিনসি!তাই আজকের মার টা মাফ করে দাও। এই দেখ এই ওয়াচটা তোমার জন্য কিনসি!খুব সুন্দর হয়েছে না। (হাতে পড়িয়ে দিয়ে)
মুগ্ধঃনা একটু ভালো হয় নি!তোর চয়েজ এত খারাপ কেন??
রুহিঃ সত্যি তোমার পছন্দ হয় নি!দাও তাহলে ফেরত দিয়ে আসবো দোকানদারকে। (মন খারাপ করে)
মুগ্ধঃ না থাক!তার দরকার হবে না।

দুজনে গল্প করছে আর হাঁটছে! রুহি মুগ্ধর কাছে এত মার খায় তাও মুগ্ধর সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না।সারাদিনের কোথায় কি করলো?সব মুগ্ধকে না বললে রুহির যেন পেটের ভাত হজম হয় না।মুগ্ধও জানে রুহি ওর কথা না শেষ করা অবধি মুগ্ধকে শান্তি দিবে না তাই মুগ্ধও নিরুপায় হয়ে রুহির বকবক শুনে।

মুগ্ধ এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটছে আর রুহির কথা শুনছে!রুহি হুট করে দুইপা পিছিয়ে গেল!রুহিকে দাঁড়ানো দেখে মুগ্ধ ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই রুহি দৌড়ে এসে মুগ্ধর পিঠে উঠে পড়লো!হুট করে এমন করাতে মুগ্ধ টাল সামলাতে না পেরে দুজনেই হুড়মুড়িয়ে রাস্তাতে পড়ে গেল!রুহি দুই গালে হাত দিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!মুগ্ধ রাগি চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো…

মুগ্ধঃএসব কোন ধরনের অভদ্রতা!রাস্তায় মাঝখানে এসব করতে মানা করিনি তোকে।অসভ্য মেয়ে (রেগে গিয়ে)
রুহিঃ আমার পা ব্যাথা করছিলো!তোমাকে বললে তো কোলে নিতে না তাই ভাবছিলাম…
মুগ্ধঃতোকে আগ-বাড়িয়ে এত ভাবতে কে বলে বলতো।কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস?আর দুই গালে হাত দিয়ে আছিস কেন?? (ভ্রু কুচকে)
রুহিঃতুমি মারবে তাই গালে আগে থেকেই হাত দিয়ে আছি… মানুষের দেওয়া বাঁশ আর তোমার থাপ্পড় হুটাম করে কখন কোন দিয়ে চলে আসে!বোঝা তো যায় না তাই আগে থেকেই নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টা করছি…
মুগ্ধঃ মারের কাজ করিস তো মারবো না!এসব ফাজলামি রাস্তায় করলে মানুষ খারাপ বলে!আর রুহি এখন তুই বড় হয়েছিস। এগুলো আশে পাশের মানুষ দেখলে আমাদের নিয়ে কটু কথা বলবে।
রুহিঃ মানুষ কি বলবে এটা ভেবে কি আমি তোমার সাথে কথাও বলতে পারবো না।মানুষের খেয়ে কাজ নাই তাই এসব করে।যাই হোক ভাইয়া তুমি আর এই কালো টি-শার্ট টা আর পড়বে না!
মুগ্ধঃকেন?? (ভ্রু কুচকে)
রুহিঃকালো রং টা তোমাকে খুব বেশি ভালো দেখায়।এজন্য আর পড়বে না।
মুগ্ধঃহুমম ভালো দেখায় বলেই তো পড়ি!তোর কথা শুনবো কেন?আর আমি পড়লো তোর কি???
রুহিঃ আমি শুধু দেখবো তোমাকে!অন্য মেয়ে তাকালে আমার হিংসা হয়।আমি মানা করছি ব্যাস তুমি পড়বে না মানে কালো কোন জিনিস পড়বে না।
মুগ্ধঃ আমি যদি ভালো ড্রেস না পড়ি তাহলে কোন মেয়ে তো আমাকে পছন্দ করবে না!আর কেউ পছন্দ না করলে তো বিয়েও হবে না আমার।তোর কথা শুনলে তো আমাকে সারাজীবন কি চিরকুমার থাকবো??
রুহিঃ এতকিছু জানি না!বুঝিও না।তুমি কালো টি- শার্ট পড়বে না।

মুগ্ধ রুহির কথা শুনে মনে মনে হাসছিলো আর কিছু একটা ভাবছিলো!মুগ্ধ হুট করে পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি নাই!মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে দেখে রুহি একটা কুকুরকে একটা লাঠি দিয়ে গুতো মেরে এদিকেই দৌড়ে আসছে! আর পেছনে পেছন কুকুরটাও ঘেউ ঘেউ করছে।রুহি দৌড়ে এসে মুগ্ধকে বললো।

রুহিঃকুকুরটা রেগে গেছে…ভাইয়া পালাও!!!!!!!!!!!,

মুগ্ধ বুঝলো যে অবস্থা খুব খারাপ তাই মুগ্ধও রুহির সাথে দৌড়াতে শুরু করলো।মুগ্ধর মনে নাই শেষ কবে মুগ্ধ এমন ভাবে দৌড় দিসিলো।কুকুরটাও ওদের পেছন পেছন আসছে!মুগ্ধ রুহির হাত ধরে একটা গলিতে ঢুকে গেল আর ওখানে লুকিয়ে পড়লো।কুকুরটা ওদের খুজে না পেয়ে ঘেউ ঘেউ করে একদিক-ওদিক তাকিয়ে চলে গেল।মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো…

মুগ্ধঃতুই জানিস আমি ওয়াশরুমেও কোন দিন এভাবে দৌড়ে যায় না!আর তোর জন্য আজকে আমাকে প্রানপণে কুকুরে ভয়ে এভাবে দৌড়াতে হলো।(হাঁপাতে হাঁপাতে)
রুহিঃতুমি চাইলে আমি প্রতিদিন তুমি যাতে ওয়াশরুমে দৌড়ে যাও সেই ব্যবসথা করে দিতে পারি।
মুগ্ধঃঠাস্!অসভ্য মেয়ে আবার মুখে মুখে কথা বলিস।যত ভাবি আর মারবো না ততই তুই বেশি করে মার খাওয়ার কাজ গুলো করিস।(থাপ্পড় দিয়ে)
রুহিঃ থাপ্পড় টা খেয়ে আমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথেই আছি!এতক্ষণ মনে হয় নি যে আমি তোমার সাথে ছিলাম…আহ্ কি যে শান্তি।
মুগ্ধঃ আচ্ছা রুহি তুই কি নিজেকে কখনোই শুধরাবি না!আচ্ছা একটা কথা বলতো???হুট করে তুই কুকুরটাকে গুতো দিতে গেলি কেন??(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃআসলে আমি একটা জিনিস পরীক্ষা করছিলাম??
মুগ্ধঃ পরীক্ষা করার আর জিনিস পেলি না!তা বলতো তুই কুকুরকে গুতো দিয়ে কি এমন জিনিস পরীক্ষা করলি.??

মুগ্ধ রাগি চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে!আর রুহি বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে মুগ্ধর দিকে একবার তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো…
রুহিঃআসলে আমি পরীক্ষা করছিলাম! কুকুরের কাতুকুতু আছে কি না??? (বএিশ পাটি দাঁত বের করে)

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_6

রুহিঃআসলে আমি পরীক্ষা করছিলাম! কুকুরের কাতুকুতু আছে কি না??? (বএিশ পাটি দাঁত বের করে)

রুহির কথা শুনে মুগ্ধ চোখ বড় বড় করে একবার তাকিয়ে! বাসার উদেশ্যে হাটা ধরলো!এই মেয়ের থাকা মানে নিজেকে এখন পাগল প্রমান করা!মুগ্ধ রুহির কথা শুনে কি বলবে সেটা খুঁজে না পেয়ে চোখ,মুখ খিচে হাঁটছে! মুগ্ধ এত জোরে হাটছে যে রুহি মুগ্ধর সাথে হাটতে পারছে না।
রুহিঃ দাঁড়াও ভাইয়া!!!!!! আমি তোমার সাথে হাঁটতে পারছি না।এত ছোট ছোট পা নিয়ে কেউ এত জোরে হাটে। (নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃ……
রুহিঃআমি তোমার সাথে এত জোরে হাটতে পারছি না বা*!একটু আমারে কোলে নাও না!আল্লাহ তোমার ভাল করবে।একবারেই ১০/১২ টা ছালপালের বাবা হওয়ার তৌফিক দান করবে। (হাঁপাতে হাঁপাতে)
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃযা বাবা এত রেগে গেলো কেন?আমি তো একটা ভালো জিনিসই পরীক্ষা করছিলাম।তবে হারামজাদা কুকুরটা ফলাফল বোঝার আগেই যে দৌড়ানি দিলো!আচ্ছা কুকুর মনে হয় রাগ করছে ওর ঘুমটা ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে!যাই হোক কুকুরের কাতুকুতু পরীক্ষা করছিলা এটা কালকে ইরা আর সুমিকে বলবো! ওরা যদি জিজ্ঞাসা করে যে কুকুরটাকে কুতুকুতু দেওয়ার পর কুকুরটা কি করলো?তখন বলবো খিলখিল করে হাসছিলো….আর আমি কুকুরের দাঁত দেখে ক্রাস খেয়েছি।

রুহি একপ্রকার দৌড়াচেছ..রুহি পেছন থেকে বার বার ডাকছে বাট মুগ্ধ কোন কথা না শুনে হনহন করতে করতে বাসায় ভেতর ঢুকে গেল।রুহিও ওর বাসায় চলে গেল…

পরেরদিন সকালে মুগ্ধ জগিং করতে গিয়ে রুহির বাবার সাথে দেখা হয়।মুগ্ধ রুহির বাবাকে দেখে বলে…
মুগ্ধঃমেজ বাবা আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন?
রুহির বাবাঃওয়ালাইকুম সালাম! আমি ভাল আছি! তা তুমি কেমন আছো প্রিন্স চামিং…
মুগ্ধঃজি!আমিও ভালো আছি।
রুহির বাবাঃ আব্বু সন্ধ্যার সময় কি তুমি খুব বিজি থাকো.???
মুগ্ধঃ না মেজবাবা!তেমন কোন কাজ থাকে না। কেন কোন দরকার??
রুহির বাবাঃআসলে রুহির জন্য যতটা টিচার রেখেছি রুহি কোন না কোন ভাবে টিচারকেই অত্যাচার করে ভাগিয়েছে।এই মেয়ের জন্য আমি অতিষ্ঠ। তুমি যদি ওকে সন্ধ্যার পর পড়াতে অনেক ভাল হতো!কারন একমাএ রুহি তোমাকেই একটু ভয় পায়।
মুগ্ধঃ আচ্ছা মেজবাবা তাই হবে!আজকে থেকে সন্ধ্যায় আমার বাসায় রুহিকে পাঠিয়ে দিবেন।আচ্ছা মেজ বাবা ভালো থাকবেন।আজকে আসি তাহলে আল্লাহ হাফেজ
রুহির বাবাঃ আল্লাহ হাফেজ

রুহির বাবা বাসায় গিয়ে রুহিকে বললো আজকে থেকে রুহিকে মুগ্ধর কাছে পড়তে যেতে!রুহি তো যায় যায় অবস্থা এমনিতেই থাপ্পড় খেয়ে গালটা এখন প্রায় সময় অবশ থাকে!আর পড়া না পারলে রুহিকে যে কি করবে মুগ্ধ সেটা রুহির ভাবলেই ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। রুহি ওর বাবাকে এত এত ভুজুংভাজুং দিয়েও মুগ্ধর কাছে পড়তে না যাওয়া থেকে বাঁচতে পারলো না।রুহি এজন্য রাগ করে সকালে কিছু না খেয়ে কলেজের উদেশ্যে বের হলো…

মুগ্ধ তখন অফিসে যাচ্ছিল!রুহিকে কলেজে যেতে দেখে!মুগ্ধ বললো রুহিকে ওর গাড়িতে উঠতে বাট রুহি মুগ্ধর কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাচ্ছিলো!মুগ্ধ রুহিকে আবার ডাকলো। রুহি মুগ্ধ কাছে গিয়ে দাতে দাত চেপে রেগে গিয়ে বললো…

রুহিঃ শালা হাদারাম তুই আসলেই খাটাশ!কুওা একটা! তোর জন্য আমি একটুও শান্তি পায় না আমি।আর আমি তোর কাছে কিছুতেই পড়তে যাবো না! শালা নাইজেরিয়ার কালা হাতি!দেখতে তো পুরাই জলহস্তী’ আর কন্ঠ তো পুরাই ষাড়….
মুগ্ধঃ রুহি!!!!!!!!!!
রুহিঃকি রুহি!কে রুহি!চুপ! একদম চুপ! আর একটা কথা বললে তোর পেছনে বোম বেঁধে দিবো শালা কুওা ভাইয়া। আর আমি তোর কাছে কিছুতেই পড়তে যাবো না! যদি আমাকে ডাকতে আসিস তো তোর পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।যত্তসব আপদ আমার ঘাড়েই জুটে…. (কথাটা বলে চলে গেল)

রুহি রাগের মাথায় যা মুখে এসেছে তাই বলেছে!কি বলছে আর কাকে বলছে তার খেয়াল নেই।মুগ্ধকে রুহি এইসব বলে হনহন করতে করতে চলে গেল।মুগ্ধ রেগে চোখ লাল করে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো।

মুগ্ধঃতুই পড়বি না তোর বাপ পড়বে!দাড়া তোকে একবার বাগে পায় তারপর তোরে….. ফাজিল মেয়ে! আমার ষাড় বলার মজা তোকে এবার বোঝাবো….(দাঁতে দাঁত চেপে)

মুগ্ধ রাগে গজগজ করতে করতে অফিসে চলে গেল!মুগ্ধর রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে!ওদিকে রুহি রুহিও রাগে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটা টাইগারের ক্যান দেখে দিলো এক কিক!আর ক্যান টা গিয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের মুখে লাগলো আর বাচ্চাটি গগন ফাটানো চিৎকুর দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। রুহি আশ-পাশ না তাকিয়ে চোখ মুখ খিচে দৌড় দিল!তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে কলেজে এসে পৌঁছালো।

ইরা,সুমি আর রুহি তিন জন ক্লাসে বসে আছে! সামনের দিকে তাকিয়ে! আর jisam 2 মুভিটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে গল্প করেই যাচ্ছে। রুহির একটা কথা শুনে ইরা আর সুমি একটু শব্দ করেই হেসে দেয়।টিচার এসে ওদের তিনজনকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ওরা হাসছে কেন??রুহি ফট করে বললো…

রুহিঃস্যার আসলে আপনি যেটা বুঝাচ্ছেন ইরা আর সুমি বুঝতে পারেনি তাই আমি ওদের বুঝাচ্ছি
স্যারঃইরা, আর সুমি এবার বুঝতে পারছো তো!
সুমিঃহুমম! হুমমম স্যার আমরা বুঝি গেছে!কারন রুহি শুদ্ধ বাংলা ভাষায় যেভাবে বোঝালো তা না বুঝে আর কই যাবো (ইরাকে গুতো মেরে)
ইরাঃহুম! হুম! আমারও বুঝতে কোন সমস্যা নাই।আমি সব বুঝে গেছি স্যার। (হাসার চেষ্টা করে)
রুহিঃ আপনার আর কষ্ট করতে হবে না স্যার!আমি আছি তো..
(হুমম যদি একবার জানতেন ওদের কি বোঝালাম! তাহলে আমাকে আর কলেজে রাখতেন না ভাও সরি স্যার!সুন্দর করে টিসি ধরিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিতেন।মনে মনে)
স্যারঃহুম! সমস্যা থাকলে আমাকে জানিও

তারপর একটা ক্লাস করে ওরা কলেজের পেছন গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। রুহি ইরা,আর সুমিকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে ওর বাসায়! রুহির আম্মু ওদের দেখে বললো…
আম্মুঃকি রে তিন পড়াচোর? তোরা কি আজকেও কলেজ ফাঁকি দিলি…??
রুহিঃ আম্মু এভাবে বলো না! আমরা হলাম শিক্ষিত চোর বার বার মুখের উপর এভাবে বলে লজ্জা দিও না তো।
আম্মুঃ তা তিন পড়াচোর একসাথে হাজির!এবার বল তো চলে আসলি কেন??কাহিনী কি??
রুহিঃ আমাদের কলেজের যে প্রোফেসর আছে!উনার বউয়ের বাচ্চা হবে। এজন্য কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
আম্মুঃ তোর কলেজ প্রোফেসরকে তো আমি দেখছি!উনার বয়স পয়তাল্লিশ বছর তো হবেই।এই বয়সে বাচ্চার বাবা…(অবাক হয়ে)
রুহিঃ ম ম মানে হুমম ওই আর কি!মার খাওয়ার যেমন বয়স নাই তেমনি বাচ্চা নেওয়ারও সময় -সীমা নাই গো মাদার বাংলাদেশ।
আম্মুঃএক থাপ্পড় দিবো!যা জানিস না তা নিয়ে কথা বললে।
রুহিঃহুম আমার এত জানার দরকার নাই!যা সত্যি তাই বললাম।এখন যাও আমাদের খেতে দাও খুব খুধা লাগছে।
(ডাহা মিথ্যা কথা তো বলে দিলাম!এই কথা যদি বেচারা প্রোফেসর জানতো তাহলে এতক্ষণ দাঁত কেলিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যেত।বেচারা প্রোফেসরের অজান্তেই আবার উনাকে আবার বাবা বানিয়ে দিলাম।এই বয়সে বাবা হওয়া ফিলিংসটা কেমন জানতে পারলে মন্দ হতো না।যাই হোক আম্মু কে ঢপ মেরে এবারের মত বেঁচে গেলেই কেল্যাফতে। মনে মনে)

প্যারাময় লাভ পর্ব ১+২+৩।

রুহি ওর আম্মুকে ভুজুংভাজুং দিয়ে ম্যানেজ করে নিলো!রুহি, সুমি,ইরা সবাই ড্রয়িং রমের সোফায় বসে গল্প করা শুরু করলো!রুহি গল্প করতে করতে সামনে থাকা বরইয়ের আচারটা দেখে সাথে সাথে বয়ামের ভেতর হাত ঢুকিয়ে খেতে শুরু করলো!তিনজনে বসে বসে আচার খাচ্ছে হুট করে রুহির মুগ্ধর কথা মনে পড়লো!রুহির এটাও মনে পড়লো যে সকালে রুহি মুগ্ধকে ঠিক কি কি বলছে?রুহির তো এবার যায় যায় অবস্থা!রুহি মনে মনে মুগ্ধকে কি ভাবে ভুজুংভাজুং দিবে সেই পরিকল্পনা করতে থাকে।তারপর রুহি,সুমি,ইরা,আর ওর আম্মু মিলে বিরিয়ানী রান্না করলো! আর জমপেশ খেলো বাট রুহির মনে মনে মুগ্ধকে নিয়ে একটু ভয় কাজ করছে! আর রুহি ভাবছে আজকে মুগ্ধ ওকে পেলে কাচাই ছিঁড়ে খাবে….

সন্ধ্যার আজানের পর রুহি আজকে ভদ্র মেয়ের মত তারাতারি করে পড়তে বসেছে!রুহির বাপি রুহির মতলব বুঝতে পেরে! রুহির বাপি নিজে গিয়ে মুগ্ধদের বাসার গেট অবধি রেখে আসলো রুহিকে !ওদিকে মুগ্ধ অফিস থেকে ফিরে সাওয়ার নিয়ে বেডে আধাশোয়া অবস্থায় বসে কফি খাচ্ছিলো আর লেপটপে কিছু করছিলো।রুহি মুগ্ধধ বাসায় ড্রুয়িং রুমে ঢুকে! কাউকে না পেয়ে একটু জোরেই বললো…

রুহিঃ মুগ্ধ!ওইই মুগ্ধ!ওই মুগ্ধর বাচ্চা! ওহহহহহ মুগ্ধ ভাইয়া বাসায় আছো!?? ভাইয়া ও ভাইয়া!ও মুগ্ধ ভাইয়া আছো নাকি হিসু করতে গেছো… (জোরেই)
মুগ্ধ রুহির সব কথা ওর রুমে বসেই শুনতে পাচ্ছিলো বাট কোন কথা বলছিলো না।

কারে সাড়া শব্দ না পেয়ে রুহি মুগ্ধর রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে ভাবছে ঢুকবে নাকি উল্টো ঘুরে দৌড় দিবে!রুহি মনে সাহস নিয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় দেওয়ার আগেই মুগ্ধ ভেতর থেকে বলে উঠলো…
মুগ্ধঃরুমের বাইরে দাড়িয়ে কি করছিস?রুমে ঢুকার জন্য কি তোকে চিঠি পাঠাতে হবে। (গম্ভীর কন্ঠে)
রুহিঃ না না! এই তো আমি এসে গেছি।।মুগ্ধ ভাইস ভালো আছো!শরীর ভালো আছে!ঠান্ডা লাগিও না কেমন!কিছু খাবে আমি বানিয়ে দিবো।মন ভালো আছে তো???
(আল্লাহ গো এবারে মত বাঁচিয়ে দাও!আর কোনদিন এসব হাজিবাজি বলবো না।ভয়ে উল্টো পাল্টা বলে ঘেটে ঘ না করে ফেললেই হয়!মনে মনে)
মুগ্ধঃবেডে বস! আর বই বের কর। আচ্ছা রুহি তুই সকালে আমাকে ষাড় বললি কেন?? (শান্ত কন্ঠে)
রুহিঃ তোমাকে ষাড় বলছি বলে কি তুমি রাগ করছো ভাইয়া? আচ্ছা আর তোমাকে ষাড় বলবো না।তোমাকে এইবার থেকে বলবো রাম-পাঠা….এবার তো হাসো(বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
মুগ্ধঃ……

প্যারাময় লাভ পর্ব ৭+৮+৯