প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৪

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৪
ইলমা বেহরোজ

শপে প্যান্ট নেই।মণিপুরি কাপড়ের লুঙ্গি শুধু রয়েছে।নিঝুম লুঙ্গি এনেছে।বাথরুমে ঢুকে প্যান্ট, শার্ট খুলে লুঙ্গি পরে।এরপর তিতলিকে ডাকে,
— “তিতলি?”
তিতলি দ্রুত হেঁটে এসে বললো,
— “কিছু লাগবে?”
নিঝুম প্যান্ট, শার্ট তিতলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— “টিস্যু দিয়ে কাদা লেগে থাকা জায়গাগুলো মুছে দাও।”
— “আপনার কাপড় নেই এখানে?”
— “থাকলে কি আনতাম না?”
তিতলি হাত বাড়িয়ে নেয়।নিঝুম দরজা বন্ধ করে আবার খুলে বললো,
— “তোয়ালেটা দাও?”
তিতলি ভারী ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,
— “এটাতো আমার ব্যবহার করা।”
— “আমার জানামতে তোমার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নেই।”

কথা শেষ করে নিঝুম হালকা হাসে।তিতলির কাঁধ থেকে তোয়ালে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।তিতলি অনেখানি বেশি অবাক হয়।তারপর,লাজুক হেসে ব্যালকনিতে চলে আসে।মন দিয়ে নিঝুমের শার্ট-প্যান্ট থেকে কাদা মুছতে থাকে।দিনটা কি ভয়ংকর সুন্দর মনে হচ্ছে।প্রতিটি সেকেন্ড সুন্দর।
নিঝুম বাথরুমে ঢুকে একটা স্মেল পায়।পুরোটা জায়গা জুড়ে মেয়েলি স্মেল!তোয়ালে থেকেও মেয়েলি স্মেল আসছে।এমন রোমাঞ্চকর ব্যাপার তাঁর জীবনে আর ঘটেনি।এটাই প্রথম!
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে তিতলি নিঝুমকে এসে ডাকে,
— “শুনছেন?কে জানি এসেছে।আমিকি দরজা খুলবো?”
ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,
— “ওয়েটার এসেছে।খুলে দাও।”
— “আচ্ছা খুলছি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিতলি দরজার আড়ালে নিজেকে রেখে উঁকি দেয় দরজার বাইরে।খাবার সার্ভিং ট্রলি নিয়ে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।পরনে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট।
— “ম্যাডাম আপনাদের দুপুরের লাঞ্চ।”
— “জ্বি।আসুন।”
তিতলি দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়।লোকটি সার্ভিং ট্রলি সোফার সামনে রেখে বেরিয়ে যায়।তিতলি দরজা লাগিয়ে সার্ভিং ট্রলি থেকে খাবার গুলো নামিয়ে নেয়।
নিঝুম বাথরুম থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে যায়।পরনে লুঙ্গি।তিতলি শার্ট-প্যান্ট দিয়ে আসে।আসার সময় বলে আসে,
— “ছেলে মানুষের এতক্ষণ লাগে গোসল করতে?”

জবাবে নিঝুম কিছু বলেনি হাসি ছাড়া।তিতলি রুম থেকেই বেলকনিতে তাকায়।নিঝুমকে লুঙ্গি পরেও কি ভালো লাগছে।তবে লুঙ্গিটা নিঝুমের ছোট হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।তিতলি নিজের দিকে তাকায়।আবার নিঝুমের দিকে তাকায়।এরপর নিজে নিজেই আফসোস করে বিড়বিড় করে,আমি এতো ছোট!
নিঝুম রুমে এসে দেখে তিতলি নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে আছে ব্যালকনিতে।নিঝুম ডাকে,
— “তিতলি?”
তিতলি নিঝুমের দিকে তাকায়।দেখে নিঝুম উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।কারণ ছাড়াই হুট করে তিতলির হেঁচকি উঠে।নিঝুম নিজের কপাল চাপড়ে।এরপর গ্লাসে করে পানি এগিয়ে দেয়।তিতলি পানি খেয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলে,
— “আমার এই হেঁচকি সারানোর ঔষধ আছে আপনার কাছে?”
— “পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণে হেঁচকি আসে।তবে এতদিন তোমাকে দেখে আমার যা মনে হলো এটা তোমার রুলস হয়ে দাঁড়িয়েছে।কোনো সমস্যা তো হয়না?”

— “না।”
— “হুটহাট উদাসীন হয়ে কি ভাবো?”
তিতলি বিভ্রম নিয়ে বলে,
— “ভালোবাসার কথা।”
নিঝুম তিতলির সামনে থেকে সরে সোফায় বসে বললো,
— “বয়ফ্রেন্ড ও আছে?”
— “কে…কেনো আমার কি থাকতে পারেনা।”
— “অবশ্যই থাকতে পারে!এখনতো প্রেম করারই বয়স।”
— “আপনার ও তো আছে গার্লফ্রেন্ড।আপনার আগের কথা আমি বিশ্বাস করিনি।”
নিঝুম হাসলো।প্লেটে খাবার নিতে নিতে বললো,
—- “মিথ্যে বলতে যাব কোন দুঃখে।আমার গার্লফ্রেন্ড নাই।আমি প্রেমে ছ্যাকাপ্রাপ্ত আসামী।”
কথা শেষ করেই নিঝুম দাঁত বের করে হাসে।যেন কোনো কৌতুক বললো মাত্র।তিতলি চমকায় খুব।ভাবে,এমন একজন মানুষকে ছেড়ে কে যেতে পারলো? এরপর পরই হেসে ভাবে, ভালোই হলো ছেড়ে গেছে।এখন আমার চান্স।একেবারে কব্জা করে নিবো। তিতলিকে হাসতে দেখে নিঝুম বললো,

— “বয়ফ্রেন্ডের কথা ভেবে হাসছো?”
— ” ছ্যাকা খেয়েছেন তো খেয়েছেন আবার হেসে বলছেন।এটা দেখেই হাসলাম।”
নিঝুম এবার আওয়াজ করে হাসে।তিতলির দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
— “তোমাদেরই কপাল।আমাদের ছ্যাকাই ভালো।”
তিতলি করুণ স্বরে বলে,
— “আপনার চেয়েও আমার কপাল খারাপ।”
— “কীরকম?”
— “আমি যাকে বয়ফ্রেন্ড ভাবি সে তো আমাকে গার্লফ্রেন্ড ভাবেনা!”
নিঝুম অবাক চাহনি নিয়ে তাকায়।
— “একপাক্ষিক ভালবাসা নাকি?”
— “হুম।আমি কিন্তু তাকে খুব ভালবাসি।'”
— “প্রপোজ করো।”
— “আমি বলবনা।আমি চাই উনি এসে প্রপোজ করুক।”
— “আচ্ছা,পরিচয় বলো ঠিকানা দাও আমি বলে দেবো তোমাকে প্রপোজ করতে।”
— “না,উনার যখন ইচ্ছে হবে করবে।”

— “আচ্ছা এসব ভেবে মন খারাপ করোনা।খেয়ে নাও।সুরমা নদীর গলদা চিংড়ি আর মুরগি আছে।সাথে টক-ডাল।”
নিঝুম রুমে এসে অবাক হয় খুব।বাইরে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে এসেছে রাতারগুল যাওয়ার জন্য। তিতলিকে বার বার বলে গেল,রেডি থাকতে।আর এসে দেখে তিতলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!বাচ্চাদের মতো চিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছে।প্রায় সব চুল মুখে ছড়িয়ে।
নিঝুম কাঁপা হাতে তিতলির মুখ থেকে চুল সরিয়ে দেয়।তৈলাক্ত মুখ!তেলতেলে হয়ে আছে।এরপর মৃদু কণ্ঠে ডাকে,
— “তিতলি? তিতলি?এই তিতলি?আমাদের তো বের হতে হবে।”
নিঝুম তিতলির হাতে ধাক্কা দেয়।তিতলির ঘুম পাতলা।তাই আলতো ছোঁয়াতে ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বললো,
— “আপনি কেনো এতো জ্বালান।”
— “উঠে পড়ো।পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেউ ঘুমিয়ে পড়ে?”
তিতলি ছোট ছোট করে চোখ খুলে বলে,

— “খুব ঘুম ডাক্তার।”
— “রাতারগুল যাবেনা?আমি কিন্তু রেখে চলে যাব।”
তিতলি উঠে বসে।চোখ বন্ধ রেখে বলে,
— “বিছানাসহ আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে পারবেন?”
— “তুমি খুব অদ্ভুত কথা বলো তিতলি।”
নিঝুম গ্লাস থেকে পানি ছিটিয়ে দেয় তিতলির মুখে।তিতলি চোখ-মুখ খিঁচে ফেলে।ডান হাতে মুখ মুছে বললো,
— “শাড়ি ভিজে গেলো তো।”
— “এতো পক পক না করে রেডি হও।”
তিতলি উঠে দাঁড়ায়।আঁচলটা আরেকটু টেনে তুলে খুব সহজ সরল গলায় বললো,
— “আমি তৈরি।শুধু চুলটা বাকি।চিরুনী হবে?”
— “আমি চিরুনি নিয়ে ঘুরি নাকি?”
— “সাথে মেয়ে থাকলে ছেলেদের চিরুনি আয়না নিয়ে ঘুরতে হয়।”
— “কোন বইয়ে এই বাণী পেয়েছো?”

তিতলি নিঝুমের দিকে তাকায়।এরপর হেসে ফেলে।শাড়ির সাথে আসা ব্যাগে আগের শাড়িটা রাখে।এরপর দুজন বেরিয়ে পড়ে। লোকাল সিএনজি চড়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া।রিজার্ভ করা হয়েছে ৬০০ করে।ঘন্টাখানেকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় পর সিএনজি এসে থামে শ্রীঙ্গি ব্রিজে।শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাওয়া যায়।
একটি ছোট নৌকায় ৪-৬ জন চড়া যায়।এমন একটি নৌকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।নৌকা ভাড়া করার পর নিঝুম তিতলিকে প্রশ্ন করে,

— “সাঁতার তো পারো।”
— “হুম পারি।সাঁতরাবেন?”
নিঝুম জবাব না দিয়ে ছাতা এবং মাঝির হ্যাট ভাড়া নেয়।তিতলির মাথায় হ্যাট পরিয়ে নিজেও পরে নেয়।মাথার উপর সূর্য উঠেছে।বেশ গরমই লাগছে।নৌকা ছাড়ে যথাসময়ে।
রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। এটি সিলেটের সুন্দরবন নামে খ্যাত।চারিদিকে পানি আর বন জঙ্গল।বড় বড় গাছ।গাছের অর্ধেক অংশ জলে ডুবে থাকে।পানি সবুজ।নৌকাটি ধীরে ধীরে গভীর জঙ্গলের দিকে এগোতে থাকে।নিঝুম ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত।তিতলি মুগ্ধ হয়ে সব দেখছে।মৃদু শীতল বাতাস চারিদিকে।মনোরম পরিবেশ।নিঝুম তিতলিকে ডাক দেয়,

— “তিতলি।”
তিতলি তাকাতেই নিঝুম ক্লিক করে।তিতলি ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “এটা কি হলো?”
সেটাও ক্লিক করে নিঝুম।মাঝি তখন বললো,
— “ভাই সাবধানে থাকবেন।জোঁকের উপদ্রব আছে।”
জোঁকের কথা শুনে নিঝুমের শরীর কেমন কথা করে উঠে।দুনিয়ার এই একটা জিনিস সে দেখতে পারে না।তিতলি জিজ্ঞাসা করে,
— “আপনি জোঁক ভয় পান?”
নিঝুম নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না।সে আসলে ভয় পায় না তবে সহ্য করতেও পারে না।ভাব নিয়ে নিঝুম বলে,
— “ভয় পাওয়ার কি আছে?”
বেশ কিছুক্ষণ পর মাঝি বলে উঠলো,
— ” আফা আপনের পিছনে জোঁক।”
তিতলির চেয়ে নিঝুম বেশি চমকায়।তিতলি পিছন ঘুরে জোঁকের দিকে তাকায়।মাঝিকে প্রশ্ন করে,

— “লবণ আছে?”
— “হ আছে সাথেই রাখি।এখানে তো জোঁকের আনাগোনা বেশি।”
— “দেন।”
নিঝুম চেঁচিয়ে উঠে,
— “তিতলি তোমাকে এসব করতে হবেনা।দূরে আসো তুমি।”
তিতলি নিঝুমকে দেখে।সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
— “আপনি জোঁক ভয় পান?”
নিঝুম তিতলির উত্তর না দিয়ে বললো,
— “তুমি দূরে সরে বসো।”
নিঝুমের হাব-ভাব বলছে সে জোঁক ভয় পায়।তিতলির মাথায় দুষ্টুমি চাপে।এতো বড় মানুষ জোঁক ভয় পায়!তিতলি হেসে মাঝিকে বলে,
— “লাঠি হবে?”

মাঝি ছোট লাঠি এগিয়ে দেন।তিতলি লাঠিটা জোঁকের সামনে ধরে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জোঁক লাঠিতে উঠে।তিতলি লাঠিটা নিঝুমের দিকে ধরতেই।নিঝুম আৎকে উঠলো।
— “তিতলি তুমি কি করতে চাইছো?”
— “আপনার উপর ফেলবো।”
— “তিতলি আমি কিন্তু নদীতে ঝাঁপ দেব।”
তিতলি কিটকিট করে হেসে উঠলো।সাথে হাসে মাঝি।মাঝি বেশ মজা পাচ্ছেন স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি দেখে।মাঝি ফোড়ন কাটে,
— “ভাই পানিতে বেশি জোঁক।”
তিতলি দু’পা এগোতেই নিঝুম হ্যাট ছুঁড়ে দেয় তিতলির হাতের দিকে।তিতলির হাত থেকে লাঠিসহ, হ্যাট পানিতে পড়ে যায়।নিঝুম হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।তিতলি ব্যর্থ হয়ে বসে পড়ে।নিঝুম মিনিট দুয়েক পর মাঝিকে বলে,

— “ভাই ডানদিক দিয়ে যান।”
— “ভাই এদিক দিয়া তো অনেক সাঁপ আছে।গাছের উপর থাকে।গুঁইসাপ।”
সাপের কথা শুনে তিতলির শরীর শিরশির করে উঠে।নিঝুম আড়চোখে তিতলির দিকে তাকিয়ে বলে,
— “এজন্যই তো বলছি ওদিক দিয়ে যেতে।যান আপনি।আপনাকে একশো টাকা বেশি দেব।”
তিতলি নিঝুমের দৃষ্টি দেখে সব হিসাবনিকাশ মিলিয়ে ফেলে।ভয়ার্ত কণ্ঠে নিঝুমকে বললো,
— “আপনি কি আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন?”
নিঝুম বাঁকা করে হাসে।মাঝিকে বলে,
— “ভাই যান আপনি।”
মাঝি ডানদিক নৌকা ঘুরাতেই তিতলি ধমকে বলে,
— “যাবেন না এদিক দিয়ে।”
নিঝুম বলে,

— “আপনাকে আরো পঞ্চাশ দেব।যান আপনি।”
মাঝি ডানদিকেই এগিয়ে যান।তিতলি হুমকি দেয় ভয়ে,
— “মাঝিভাই…আমি কিন্তু আপনার নামে মামলা করব।”
মাঝিসহ নিঝুম হেসে উঠে জোরে।তিতলির ভয়ে হৃদপিণ্ড কাঁপছে। সে সাপ যতবার দেখেছে ততবার অজ্ঞান হয়েছে।অজ্ঞান হওয়ার পূর্বে বমি করেছে।নিঝুমকে মিনতি করে বলে,
— “প্লীজ মাঝিকে বলুন এদিকে না যেতে।”
নিঝুম শুনেনি।তিতলি সামনে তাকায়।ঘন জঙ্গল সামনে।আর অনেক গাছ ঝুঁকে আছে।কেমন আবছা আবছা দেখতে গভীরটা।তিতলি ঢোক গিলে নিঝুমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।মাঝি আঙ্গুলের ইশারা কোনো এক গাছে করে বলেন,
— “ওইযে সাপ।যামুনি গাছটার নিচে?”
নিঝুম উৎসাহ নিয়ে বলে,

— “অবশ্যই যাবেন।”
তিতলি উঠে দাঁড়ায়।বড় বড় পা ফেলে নিঝুমের দিকে এগিয়ে আসে।নৌকা দুলতে থাকে।নিঝুম তিতলিকে সাবধান করে,
— “তিতলি আস্তে।পড়ে যাবে।”
তিতলি দ্রুত এসে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে চোখ খিঁচে কাঁদো কাঁদো হয়ে একনাগাড়ে বলতে থাকে,
— “আমি সাপ ভয় পাই।প্লীজ এমন করবেন না।আমি আপনাকে আর ভয় দেখাবোনা।আমি ভুল করেছি।আমি নত হলাম।আমাকে আপনি ক্ষমা করুন।প্লীজ নৌকা ঘোরাতে বলুন।প্লীজ,প্লীজ।”
তিতলির এহেন কান্ডে নিঝুম যতোটা না অবাক হলো তার চেয়েও বেশি অন্য কোনো অনুভূতি অনুভব করলো।বুকের মধ্যিখানে ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে।মুহূর্তে সময় থমকে যায়।মেয়েটা কি যেন।নিঝুমের চেনা দুনিয়া অচেনা কোনো আবরণে ঢেকে যাচ্ছে।নিঝুম কণ্ঠ স্বাভাবিক করে বললো,

— “আচ্ছা এদিক দিয়ে যাবোনা।ছাড়ো।”
তিতলি ছাড়ে। ভয়ার্ত চোখে তাকায়।নৌকার চেয়ে ৪ হাত দূরের গাছের ডালে একটা সাপ মুখ তুলে তাকিয়ে আছে।এই দৃশ্য দেখে তিতলির শরীরের পশম কাঁটা কাঁটা হয়ে আসে।ভয়ে হেঁচকি উঠে।পরক্ষণেই চোখ বুজে লুটিয়ে পড়ে নিঝুমের বুকে।নিঝুম দু’হাতে আগলে ধরে।মাঝিকে বলে নৌকা ঘুরিয়ে নিতে।তিতলি এতো ভয় পায় জানলে সে এরকম করতোনা।নিঝুম ভেবেছিল তার মতো শুধু ভয়।ভয়াবহ ভয় পায় বুঝতে পারেনি।কপাল কুঁচকে পানি ছিটিয়ে দেয় চোখে-মুখে। মাঝি চিন্তিত হয়ে বলেন,

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৩

— “ভাই বেশি সমস্যা? ”
— “না,ঠিক আছে।উঠে যাবে।”
তিতলির মাথাটা কোলে নিয়ে মাথার উপর ছাতা ধরে নিঝুম।এরপর অদ্ভুত চাহনি নিয়ে তাকায়।তিতলির চাপা নাক,গোলাপি ঠোঁটের আকৃতি, ভ্রু-জোড়া, মসৃণ গাল, চওড়া কপাল সব এক মিনিটে মুখস্থ করে নেয় নিঝুম।যখন বুঝতে পারে খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।একটা ঘুমন্ত মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক হচ্ছে না চোখ সরিয়ে নেয়।বার কয়েক দ্রুত নিঃশ্বাস নেয়।বুকে তোলপাড় হচ্ছে।ঝড় বয়ে যাচ্ছে।সিডর,ফণী,বুলবুল,সাইক্লোন সব… সব বড় বড় ঘূর্ণিঝড়কে টেক্কা দেওয়ার সাহস বোধহয় বুকে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ের আছে!

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৫