প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ গল্পের লিংক || Mahfuza Akter

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ১
Writer Mahfuza Akter

“তরী, তোর মা আত্ম*হ’ত্যা করেছে। সিলিং ফ্যানে তোর মায়ের লা*শ ঝুলছে রে, তরী! তাড়াতাড়ি চল!”
তরী স্তব্ধ নয়নে তাকালো। মধুর বলা কথাটা কানে ঝংকার দিয়ে উঠতেই মাথাটা ভনভন করে উঠলো তার! ক্ষণিকের জন্য যান্ত্রিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো শূন্যে দৃষ্টি মেলে। মধু তরীর দুই কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,

“তরী, আমি কী বললাম শুনেছিস? তোর মা…..”
মধুর কথা ওর কানে প্রবেশ করলো কি না, জানা নেই। অস্ফুটস্বরে শুধু মুখ থেকে নিঃসৃত হলো,
“মা!”
হঠাৎ প্রকৃতস্থ হওয়ার মতো চকিতে তাকালো সে মধুর দিকে। মধুর চোখে জল! তরী অবাক চোখে চেয়ে বললো,
“মা! আমার মা? মায়ের কী হয়েছে? মায়ের কিছু হয়নি! কিচ্ছু হয়নি আমার মায়ের। কিচ্ছু না!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মধুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ঝড়ের গতিতে কলেজের মাঠ পেরিয়ে ছুটে গেল তরী। হঠাৎ আবার ফিরে এসে নিজের সাইকেলটা নিয়ে গেল। হেঁটে বা দৌড়ে তো এতোটা পথ যাওয়া যাবে না। তরীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মধু। আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো একবার। কলেজ মাঠের ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ছিল তারা। অনেকেই ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল, এখনও তাকিয়ে আছে।

তরী আর মধু দুজনেই এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তরী পড়াশোনায় বেশ মনযোগী হলেও মধু তার একেবারেই বিপরীত। ক্লাসেও নিয়মিত নয় সে। টেস্ট পরীক্ষার পর এখন এক্সট্রা ক্লাস হচ্ছে। বরাবরের মতো তরী ক্লাসে এলেও মধু আসেনি। একটানা চারটা ক্লাস শেষে টিফিন টাইমেই ওদের ছুটি হয়ে যায়। তরী ব্যাগ নিয়ে নিজের সাইকেলের কাছাকাছি যেতেই মধু কোথা থেকে যেন ছুটে আসে! মুলত সে নিজের বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটেছে দেখেই ছুটে এসেছে তরীকে জানাতে।

কুঞ্জনগর গ্রাম। দুরন্ত পায়ে সাইকেল চালাচ্ছে তরী। রাস্তার দু’পাশে ধানের ক্ষেত। সূর্য এখন মাথার ওপরে। কাঠফাটা রোদে তরীর কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। গায়ের উজ্জ্বল শুভ্র চামড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আশেপাশে কৃষকেরা ধান কাটায় ব্যস্ত।
“কী রে, তরী! কী হুনলাম একটু আগে? এমন পাপকাজ কেউ করে?”
পাশের ক্ষেত থেকে এক লোক ধান কাটতে কাটতে তরীকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। তরীর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল যেন! দ্রুত গতিতে নিজের বাড়ির দিকে এগিয়ে চললো সে।

পনের মিনিটের মধ্যে নিজের বাড়ির আঙিনায় পৌঁছালো তরী। বড় দরজাটা লাগানো। সাইকেলটা পাশে দাঁড় করিয়ে তরী দরজায় কয়েকবার কড়া নাড়লো। উত্তেজনায় গলা শুকিয়ে গেছে, হাত-পা ক্রমাগত কাঁপছে। ভেতরে ঢুকে কি সত্যিই নিজের মাকে সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পাবে সে? ভাবতেই গাল বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো তরীর।

ভাবনার মাঝেই তরীর ছোট ভাই তরুণ এসে দরজা খুলে দিলো। ভেতর থেকে মোহনার কর্কশ চিৎকার ভেসে এলো,
“কে এসেছে রে এই অসময়ে?”
তরী ভ্রু কুঁচকালো। আড়ালে চোখ মুছে অবাক চোখে তরুণের দিকে তাকালো। তরুণ প্রাণখোলা হাসি দিয়ে ব্যাগ কাধে নিয়ে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেল। যেতে যেতে উচ্চস্বরে মাকে বললো,
“আপা এসেছে কলেজ থেকে। আমি গেলাম।”

মোহনা একথা শুনে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। মোহনাকে এমন সুস্থ-স্বাভাবিক দেখে হতভম্ব হয়ে গেল তরী। বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,
“মা! তুমি ঠিক আছো?”
“আমি ঠিকই আছি। কিন্তু তুই কতক্ষণ ঠিক থাকবি, সেটাই ভাবার বিষয়!”

মোহনা রোষিত চোখে তাকিয়ে আছেন। এমন কথা শুনে তরী চমকে উঠলো। এতক্ষণের সকল ভাবনা যেন মাথা থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল! ভয়েরা এসে হানা দিলো মস্তিষ্ক জুড়ে। ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঢোক গিললো তরী। মোহনার এমন কথার মানে জানে সে। তাই মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন মা? আমি কী করেছি?”

অকস্মাৎ মোহনা তেড়ে এসে তরীর চুলের গোড়া আঁকড়ে ধরলো। রাগী কন্ঠে বললো,
“তোকে বলেছিলাম না সব কাজ ঠিক মতো করতে? কিন্তু মার খেতে খেতে তোর এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই এমন সব কাজ করিস যে, আমার ইচ্ছে হয় তোকে মেরে পুঁ*তে ফেলি, হা*রা*মি!”
তরী ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। চোখ ছিটকে পানি বেড়িয়ে এলো। মোহনার হাত চুল থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“মা! মা!! ছাড়ো আমাকে। ব্যথা পাচ্ছি! আহ্! মা, দোহাই লাগে।”

মোহনা ছাড়লো না। আরো শক্ত মুঠো করে আঁকড়ে ধরলো তরীর চুল। টেনে তরীকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। বিছানার ওপর দু’টো শাড়ি পড়ে আছে। বিবর্ণ শাড়ি দু’টো দেখিয়ে মোহনা গর্জে উঠে বললো,
“এই যে! এই শাড়িগুলো কালকে নষ্ট করে দিয়েছিস তুই। তোর সাহস কী করে হলো আমার শাড়ি নষ্ট করার? কত শখ করে শহর থেকে শাড়িগুলো কিনেছি আমি!”

তরী অবাক চোখে শাড়ি দু’টোর দিকে তাকালো। কালকে এই শাড়ি দু’টো ধুয়ে দিতে বলেছিলো ওকে মোহনা। ধোয়ার সময়ই অনেক রঙ চলে গেছে। এখানে তরী নিজের কোনো দোষ পেল না। তাই বললো,
“মা, আমার কোনো দোষ নেই। আমি কিছু করিনি। কালকে ধোয়ার সময়ই রঙ গেছে। হয়তো কাপড় ভালো ছিল না।”
মোহনা তরীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। তরী পড়তে গিয়েও খাটের কিনারা ধরে কোনোমতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। মোহনা ক্রোধান্বিত চোখে তাকিয়ে বললো,

“ইচ্ছে তো করে তোকে মেরেই ফেলি! শুধু তোর বাবার জন্য কিছু করতে পারি না তোকে। কী পাপ করেছিলাম কে জানে? নয়তো তোর মতো মেয়ে আমার ঘাড়ে এসে জুটলো কেন? অসহ্য!”
মোহনা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তরী শূন্যে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। চোখ দুটো থেকে অঝোরে পানি পড়ছে তার। কিন্তু তরী সেটা মুছলো না। ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। উঠোনের ওপর ওর ব্যাগটা পড়ে আছে। সেটা হাতে নিয়ে এককোণায় থাকা কাঠের সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে এলো তরী।

তরীর বাবা আফনাদ হক সরকারি চাকরির কারণে ভিন্ন শহরে থাকেন। তরী হলো তার নয়নের মণি। নিজের মেয়েকে বড্ড ভালোবাসেন আফনাদ। যখন আফনাদ বাড়িতে থাকেন, তখন তরীর সময়গুলো ভালোই কাটে। কিন্তু আফনাদ শহরে ফিরে যাওয়ার পর থেকেই আবার মোহনার নিষ্ঠুর আচরণ সহ্য করতে হয় ওকে।

কী কারণে মোহনার এতো ক্ষোভ, জানা নেই তরীর! মোহনার জায়গায় অন্য কেউ হলে, এভাবে মুখ বুজে সহ্য করতে না সে। কিন্তু মোহনাকে কিছু বলতে পারে না। যতই হোক, মা তো! কিন্তু মায়েরা তো এমন পাষাণ হয় না! মায়ের কথা ভাবলেই চোখের সামনে একটা কোমল হৃদয়ের আদুরে, ভালোবাসাময় ও মায়াবী অবয়ব ফুটে ওঠে। মোহনার মধ্যে এর কিছুই দেখতে পায় না তরী।

কলেজ ড্রেস বদলে আসতেই মনে পড়লো মধুর বলা কথাটা। মধু কেন বললো যে, তরীর মা আত্ম*হ*ত্যা করেছে? মোহনা তো ঠিকঠাকই আছে! মধু কি ওর সাথে মজা করলো? কিন্তু ওর কথায় তো সেরকম কিছু মনে হলো না! তরী সিদ্ধান্ত নিলো, মধুদের বাড়িতে যাবে। এখান থেকে রিকশায় গেলে দশ মিনিট লাগবে।

তরী নিজের বড় ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। মোহনা রান্নাঘরে কাজ করছে হয়তো! আজ আর তার মারধরের কোনো ইচ্ছে নেই। তাই তরীকে ডাকাডাকিও করবে না আজ।
গেইট থেকে বেরিয়ে আসতেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির মুখোমুখি হয়ে গেল তরী। চমকে উঠে বললো,
“অর্ণব ভাই, আপনি?”

অর্ণব মোহনার বড় বোনের একমাত্র ছেলে। অর্ণবের বাবা বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় মোহনা বরাবরই অর্ণবের প্রতি ভালোবাসা দেখায়।
অর্ণব তরীর দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক। মুখে নিঃশব্দের হাসি বিদ্যমান। তরী বিরক্ত হয়ে অর্ণবের পাশ কাটিয়ে যেতেই অর্ণব বলে উঠলো,
“আরেহ্, দাঁড়া! কোথায় যাচ্ছিস?”
“সেটা তোমাকে কেন বলবো?”

“বেশ! বলিস না। কিন্তু তোর সাথে আমার কথা আছে।”
“আমি এখন তোমার কোনো কথা শুনতে পারবো না। কাজ আছে আমার।”
অর্ণব দ্রুত পায়ে তরীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“কী এমন দরকারি কাজ তোর? ঢাকা থেকে চার ঘন্টার পথ পেরিয়ে শুধু তোর সাথে দেখা করতে এসেছি আমি!”
তরী ভ্রু কুঁচকে বললো, “আমার সাথে? ”

“হ্যাঁ, শুধু মাত্র তোর জন্য এসেছি আমি।”
“কিন্তু আমি এখন মধুর কাছে যাবো।”
“চল আমিও তোর সাথে যাই!”
তরী নিরুপায় হয়ে বললো, “আচ্ছা, চলো।”

অর্ণব আর তরী পাশাপাশি একটা রিকশায় উঠে বসলো। কাঁচা রাস্তার ওপর দিয়ে রিকশা চলছে। রোদের তীব্রতা এখনো কমেনি। তবে হালকা বাতাস গায়ে অনুভব হচ্ছে। তরী চিন্তায় হাসফাস করছে। মধুর সাথে দ্রুত দেখা হওয়া জরুরি। অর্ণব তরীর অবস্থা বুঝতে পেরে কৌতুকের ভঙ্গিতে বললো,
“তোর টেনশান দেখে তো মনে হচ্ছে মধুকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে!”
তরী বিস্ফোরিত চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এজন্য তোমার সাথে কোথাও যেতে ভালো লাগে না আমার। সব পরিস্থিতিতে মজা করো তুমি!”
অর্ণব হেসে বললো, “আচ্ছা, যা! ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে। তুই ওর সাথে ফোনে কথাও তো বলতে পারতি! এখন যাওয়া-আসায় সময় নষ্ট হচ্ছে না?”
“ফোন কোত্থেকে পাবো আমি? মায়ের ফোন ধরার দুঃসাহস একবার দেখিয়ে আর দ্বিতীয়বার সে কাজ করিনি।”
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে বললো,

“কেন? কী করেছে খালামনি?”
তরী হকচকিয়ে গেল। তরীর প্রতি মোহনার আচরণ তেমন কেউ দেখেনি কখনো। অর্ণবও জানে না। তাই তরী আমতা আমতা করে বললো, “কিছুই না। এমনি কথার কথা বলছিলাম আর কি!”
“তা-ই বল! তুই আমাকে আগে বললেই পারতি যে, তোর ফোন দরকার। আমি নিয়ে আসতাম তোর জন্য।”
“লাগবে না। ফোন ছাড়াই ভালো আছি আমি।”

বলেই তরী রিকশা থেকে নেমে গেল। অর্ণব খেয়াল করলো, তারা মধুদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সদর দরজার কাছাকাছি এসে অনেক মানুষের ভীড় চোখে পড়লো অর্ণবের। ভেতর থেকে অনেকের ক্রন্দন-ধ্বনি ভেসে আসছে। তরী অবাক চোখে সবাইকে দেখতে দেখতে ভেতরে এগিয়ে গেল। পথিমধ্যে কয়েকজন মহিলা ওকে দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে,

“এই যে, এটাই তরী! এই মাইয়াডারে এত্তো আদর করতো মালিহা! নিজের মাইয়ারেও এতো ভালোবাসতো কিনা সন্দেহ আছে!”
“যা-ই বলো! বেঁচে গেছে ভালো হইছে। মরে গেলে দ্বীন-দুনিয়া সবই যাইতো।”
“ইশ! কম কষ্ট পাইয়া তো আর এই কাম করে নাই। আল্লাহ মালিহার কপালে এইবার যেন একটু সুখ দেয়!”
তরী তাদের কথার মানে বোঝার আগেই মধু ছুটে এসে তরীকে ঝাপটে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো,
“তুই এসে গেছিস? এতো দেরী করলি কেন? তোকে বলেছিলাম না ছোটমায়ের কথা?”

তরী অবুঝের মতো বললো, “ছোটমায়ের কথা মানে?”
“ছোটমা মরেই যাচ্ছিলো, তরী! আর একটু দেরী হলেই….. ”
আর কিছু বলতে পারলো না মধু। ডুকরে কেঁদে উঠলো। তরী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। মধু তো বললো, তরীর মায়ের কথা! কিন্তু আসলে তো মালিহা এই ঘটনা ঘটিয়েছে! তাহলে কি মধু মালিহাকে তরীর মা বললো? নাকি উত্তেজনায় ভুলবশত এমন কথা বলে ফেলেছে? কোনো উত্তর খুঁজে পায় না তরী।

মালিহাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গলায় গভীরভাবে চাপ লাগার আগেই তাকে নামানো হয়েছিল ঝুলন্ত দড়ি থেকে। কিন্তু ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিছুতেই জ্ঞান ফিরছিল না দেখে দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তরীর অনেক ইচ্ছে হলো, একবার হাসপাতালে গিয়ে মালিহাকে দেখে আসার। কিন্তু কাউকে নিজের ইচ্ছের কথা বলতে পারলো না।

কুঞ্জনগর গ্রামের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী পরিবার হলো এই আহমেদ পরিবার। তাদের বাড়িটি পুরোনো আমলের তিনতলা জমিদার ভবনের মতো। পরিবারের কর্তা আহমেদ সাহেব মারা গেছেন দুই যুগেরও বেশি সময় আগে। আহমেদ সাহেবের স্ত্রী আফনা বেগম-ই এখন পরিবারের প্রধান। আফনা বেগমের দুই ছেলে। রায়হান আহমেদ এবং আরমান আহমেদ।

রায়হান আহমেদ সরকারি কর্মকর্তা। চাকরিসূত্রে তিনি ভিন্নশহরে থাকেন। তরীর বাবা আফনাদ এবং রায়হান ছোটবেলার বন্ধু। দুজনে একসাথে পড়াশোনা করে চাকরি নিলেও তাদের পোস্টিং আলাদা শহরে পড়েছে।
আরমান আহমেদ পেশাগতভাবে ডাক্তার হলেও রাজনীতির সাথেও জড়িত। গ্রামের চেয়ে শহরে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। সবাই জানে যে, কোনো এক কারণে দুই ভাইয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো না। কিন্তু সেই কারণটা সবারই অজানা।

সুজাতা আঁচলে মুখ গুজে কান্নাকাটি করছেন। পাশেই মধুর দাদী আফনা বেগম বসে দোয়াদরুদ পড়ে প্রার্থনা করছেন। সুজাতা রায়হান আহমেদের স্ত্রী এবং মধুর মা। আর মালিহা আরমান আহমেদের স্ত্রী। মালিহা ও আরমানের দাম্পত্য জীবন শুরু থেকেই অশান্তির। তাদের একমাত্র মেয়ে হলো অরুণী। অরুণী ঢাকায় এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছে।

বাড়ির ভেতরে এতো ভীড় দেখে তরী মধুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। মধু চোখের পানি মুছে বললো,
“কী হলো? বাইরে নিয়ে এলি কেন এভাবে?”
তরী ফিসফিসে কন্ঠে বললো,
“ছোটমায়ের এরকম কাজ কেন করলেন?”

মধুর চোখে মুখে আঁধার নেমে এলো। ভাঙা গলায় বললো,
“ছোট মায়ের জীবনে যেই একটা মানুষ আছেন, সে-ই যথেষ্ট ছোটমায়ের জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য।”
“তার মানে তোর ছোটআব্বুর জন্যই উনি এই কাজ করেছেন?”
মধু উপর-নীচ মাথা নাড়ালো। মুহুর্তেই তরীর চোখ দুটো জ্বলে উঠলো! মধু তরীর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। বুকটা লাফিয়ে উঠলো যেন ওর। এর আগে কখনো তরীর এমন হিংস্র চাহনি দেখেনি মধু।

★★যারা প্রথম সিজন পড়েননি, তারাও এটা পড়তে পারবেন। এখানে সকল চরিত্র নতুনভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে ফিরে আসবে। ★★
[আসসালামু আলাইকুম, পাঠকমহল। বিশাল বড় পর্ব দিয়ে গল্পের সূচনা করলাম। প্রথম পর্ব, তাই একটু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আইডিতে অনেক ঝামেলা হচ্ছে বলে গল্প শুধু আমার পেইজে-ই পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেমন লেগেছে প্রথম পর্ব, সবাই জানাবেন। পাঠকদের জন্য লিখি, তাই আপনাদের মন্তব্যকে সবকিছুর আগে গুরুত্ব দিয়ে লিখবো এবার। তাই সবাই অবশ্যই রেসপন্স করবেন। সূচনা পর্বে সব পাঠকের প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতি জানতে চাই! 😇
আর হ্যাঁ, ডক্টর সৌহার্দ্য রায়হান সারপ্রাইজ নিয়ে আসছে শীঘ্রই!]

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২

1 COMMENT

Comments are closed.