প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২
Writer Mahfuza Akter

তরীর চোখ অদূরে দাঁড়ানো অর্ণবের ওপর পড়লো। অর্ণব তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সপ্রতিভ চোখে অর্ণবের দিকে এগিয়ে এলো,
“অর্ণব ভাই, তুমি আমায় এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে?”
“তুই চাইলে সারাদিনই তোকে নিয়ে ঘুরতে পারি।”
অর্ণবের চোখ দুটো আনন্দে চকচক করছে। তরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“সদরের হাসপাতালে ছোটমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাকে নিয়ে যাবে?”
“হ্যাঁ, চল যাই! সমস্যা নেই কোনো।”

এতক্ষণে লোকমুখে সবটাই শুনেছে অর্ণব। মালিহা আর তরীর মধ্যে গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ ধারণাও তার আছে। তরী এমনিতেই আদুরে। ওকে ভালো না বেসে পারাই যায় না! মালিহার মনে তরীর জন্য মাত্রাতিরিক্ত মায়ার উপস্থিতি অবাক করে না অর্ণবকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তরী আর অর্ণব দেখতে দেখতে মধুর দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল। তরীর হাবভাব দেখেই সে বুঝতে পেরেছে যে, তরী মালিহাকে দেখতে যাবে। তরীর আচরণে মাঝে মাঝে বড্ড অবাক হয় মধু!
মোড় থেকে একটা রিকশা নিয়ে সেটায় উঠে বসেছে তরী আর অর্ণব। গ্রামে রিকশা ছাড়া যাতায়তের কোনো মাধ্যম নেই। বড় বাজারে অটো, ক্যাব পাওয়া যায়। আপাতত সেদিকেই যাচ্ছে ওরা। তরী বিচলিত কন্ঠে বললো,

“আমাদের পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে, অর্ণব ভাই?”
“আমার গাড়িটা বড় বাজারের কাছেই রেখে এসেছি। ওখান থেকে গাড়িতে করে গেলে দশ মিনিটও লাগবে না।”
হঠাৎ তরী অর্ণবের হাত খামচে ধরে বললো,
“আমার অনেক টেনশান হচ্ছে ছোটমায়ের জন্য, জানো?”

অর্ণব থমকানো চোখে হাতের বন্ধনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তরীর চোখ দুটো ছলছল করছে, এখনই কেঁদে দিবে এমন অবস্থা। বুঝ হওয়ার পর এই প্রথম তরী স্বেচ্ছায় ওর হাত ধরলো। হয়তো মনের অজান্তেই ধরে ফেলেছে মেয়েটা! কিন্তু ব্যাপারটা অর্ণবের হৃদয় স্পর্শ করেছে। সে হাসি হাসি মুখে তরীর হাতটা আলগোছে আগলে নিলো। এতে তরী সপ্রতিভ হলো। চকিত চোখে তাকিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। অর্ণবও হালকা হেসে আশেপাশে তাকালো।

তরী কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
“তুমি বলেছিলে যে, তুমি আজকে আমার জন্য এসেছো!”
“হ্যাঁ, তোর জন্যই তো!” অর্ণবের অকপট স্বীকারোক্তি।
“কেন?”

“অনেক কিছু বলার ছিলো। কিন্তু এসব আনএক্সপেক্টেড সিচুয়েশনে বলার স্কোপ তো নেই!”
“বলো, শুনছি আমি।”
অর্ণব তরীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তরী ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব সময় নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“আজ নয়! অন্য দিন।”

“এতো দূর থেকে এসেছো! আবার কবে না কবে আসবে ঠিক আছে কোনো?”
“এখন থেকে প্রায়ই আসবো। বিনা কারণেও আসবো। অকারণে আসা-যাওয়ার লাইসেন্স পাচ্ছি শীঘ্রই!”
তরী অর্ণবের কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারলো না। বিপরীতে প্রশ্নও করলো না। সে বুঝে গেছে, অর্ণব এখন কিছু বলবে না। গাড়িতে উঠে বসতেই অর্ণব চোখের পলকে তরী হাসপাতালে নিয়ে এলো। তরী তাড়াহুড়ো করতেই অর্ণব ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

“আমার সাথে সাথে চল। এটা কোনো ছোটোখাটো হাসপাতাল না যে, ঘুরে ঘুরে খুঁজবি।”
অর্ণব ওকে সাথে নিয়ে রিসিপশন থেকে কেবিন নাম্বার জেনে নিলো। কেবিনে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরোটা সময় অর্ণব তরীর হাত ধরে রেখেছে, এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়েনি। বিষয়টা তরীর ভীষণ ভালো লাগলো।

কেবিনের কাছাকাছি পৌঁছতেই তরী পরিচিত মুখ দেখতে পেল। অর্ণবও তরীর হাত ছেড়ে দিলো। রায়হান সাহেব করিডোর জুড়ে পায়চারি করছেন। আফনাদ হক চেয়ারে অবসন্ন হয়ে বসে আছেন। তরীকে ছুটে আসতে দেখে রায়হান প্রথমে সেদিকে তাকালেন। রায়হানের দেখাদেখি আফনাদও দৃষ্টি ছুঁড়লেন সেদিকে। তরীকে দেখে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো তাদের মুখে।

রায়হান সাহেব তরীকে একহাতে আগলে নিতেই তরী উৎসুক চোখে তাকিয়ে বললো,
“ছোটমা! ছোটমা কেমন আছে, বড়আব্বু?”
“ছোটমায়ের জান চলে এসেছে। এখন তো সে সুস্থ হয়ে উঠতে বাধ্য!” রায়হান সাহেবের চোখে উচ্ছ্বাস।
আফনাদ অনেক দিন পর মেয়েকে দেখে কিছুটা আবেগান্বিত হয়ে গেলেন। এগিয়ে এসে বুকে আগলে নিলেন তরীকে। তরী বাবার বুকে চুপচাপ লেপ্টে রইলো কিছুক্ষণ। পরপরই বললো,
“ছোটমাকে দেখবো।”

রায়হান সাহেব হেসে তরীকে নিয়ে কেবিনের ভেতর ঢুকলেন। কিছুক্ষণ আগেই মালিহার জ্ঞান ফিরেছে। তরী মালিহার পাশে বসতেই রায়হান সাহেব বলে উঠলেন,
“চোখ মেলে দেখো, মালিহা! কে এসেছে দেখো?”
মালিহার মুখটা নড়ে উঠলো খানিকটা। বুজে থাকা চোখ দুটো খুলে গেল সময় নিয়ে। ফ্যাকাসে মুখ, কালচে নেত্রপল্লব, দূর্বল চাহনির আড়ালে যেন সেই অপরূপ মালিহা হারিয়ে গেছেন। তরীর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, গাল ভিজে উঠলো। মালিহা ঝাপসা চোখে নিজের প্রাণপাখিকে দেখে অজান্তেই হেসে দিলো। দূর্বল হাত বাড়িয়ে তরীর গাল ছুঁয়ে বললো,

“আমার মা এসেছে!”
“অথচ এরকম একটা কাজ করার আগে মায়ের কথাটা একবারও ভাবলে না?”
তরীর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট। মালিহার নিভু নিভু চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পড়লো দু’ফোঁটা। নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,
“আমার চিন্তাজগতে তখন কিছুই আসছিল না, মা। প্রতিটা মুহূর্ত বিষাক্ত লাগছি।”
তরীর ঠোঁট ভেঙে এলো। কান্নাগুলো এখনই সব বেরিয়ে পড়তে চাইলো। কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। মাথা ঝুঁকে মালিহার কপালে শব্দ করে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি কি তোমার বেঁচে থাকার কারণ হিসেবে যথেষ্ট না?”
মালিহার মুখ জুড়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেল। বারকয়েক অনবরত মাথা দুলালো সে। তরী তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরো। আমার সামনে পরীক্ষা। তোমার মুখ না দেখে তো পরীক্ষা দিতে পারবো না আমি!”
তরীকে সাথে নিয়ে রায়হান বেরিয়ে গেলেন। তরীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মালিহা। নাহ্, এতো তাড়াতাড়ি পৃথিবী ত্যাগ করতে পারবেন না তিনি। তার যে আরো অনেক কাজ বাকি!

তরী আর মধুর এইচএসসি পরিক্ষা চলছে এখন। মেয়েদের পরীক্ষার কথা ভেবে রায়হান আর আফনাদ লম্বা ছুটি নিয়ে এখন বাড়িতেই আছেন। তরী এখন বাবার ছায়ায় একটু স্বস্তিতে আছে। তারওপর এখন মালিহাও তরীর ওপর নজর বাড়িয়ে দিয়েছে। মোহনা এসবে ভীষণ বিরক্ত।

সারাদিন একহাতে সব কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। তরীকে হয়তো হাতের নাগালে এখন খুব বেশি পাওয়া যাবে না। মোহনা অনেক ভেবেচিন্তে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। অর্ণবের মা আসমা বেগম অনেক আগে থেকেই তরীকে প্রচন্ড পছন্দ করেন। তরীর মতো রূপবতী ও গুণবতী মেয়েই তিনি নিজের ছেলের জন্য চান। তাই মোহনাকে আগেই বলে রেখেছেন এ ব্যাপারে। মোহনা সিদ্ধান্ত নিলো, পরীক্ষার পরপরই বিয়ে দিয়ে এই মেয়েকে সে এই বাড়ি থেকে বিদায় করবেন।

ইদানীং অর্ণব গ্রামে আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। আসলেই তরীর জন্য এটা-সেটা নিয়ে আসে। তরীর ব্যাপারটা তেমন পছন্দ না হলেও কিছু বলে না সে! আপাতত বইয়ে নাক ডুবিয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত সে। এতো সময় আছে নাকি তার! তরী পরীক্ষার দিন সকালে আহমেদ ভবনে আসে। মালিহার সাথে দেখা না করে পরীক্ষা দিতে যায় না সে।
আজ শেষ পরীক্ষা। আহমেদ ভবনের দরজা দিয়ে বেরিয়েছে তরী। মধু আগেই চলে গেছে সাইকেল নিয়ে। তরীও সাইকেলে পা রাখবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ ওর নামে ডাকলো। তরী পেছনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব দাঁড়িয়ে। গাড়িও এনেছে সাথে। তরী অবাক হয়ে এগিয়ে এলো,

“তুমি এখানে?”
“চল আজ আমি তোকে হলে পৌঁছে দেই।”
তরীকে চিন্তিত দেখালো। অর্ণব বুঝতে পেরে বললো,
“সমস্যা নেই! তোর সাইকেল বাড়ির গেইটের ভেতরে রেখে আয়।”
তরী মাথা দুলিয়ে সাইকেল ভেতরে রেখে এলো। অর্ণব তরীকে পৌঁছে দিলো কলেজের গেইট পর্যন্ত। বললো,
“আমি অপেক্ষা করবো তোর জন্য!”

“কিন্তু আমার পরীক্ষা শেষ হতে তো তিন ঘন্টা লাগবে। এতোক্ষণ থাকবে তুমি?”
“এখানেই এসে দাঁড়াবো। পরীক্ষা শেষে এদিকে তাকাস!”
“ঠিক আছে।” তরী মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। দ্রুত পায়ে গেইটের ভেতরে প্রবেশ করলো।
পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুপুর একটায়। তরী বেরিয়ে এসে দেখলো, অর্ণব নেই। আশে পাশে কোথাও নেই। অর্ণবের গাড়িটাও দেখা যাচ্ছে না। তরীকে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে মধু বললো,

“কাউকে খুঁজছিস?”
“হুম, অর্ণব ভাই তো বলেছিল, সে আসবে আমাকে নিতে!”
মধু বিরক্ত হলো। এই অর্ণব ছেলেটা তরীর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে। ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দ না। তাই বিরস কন্ঠে বললো,
“বাদ দে! চল আমরা কিছু খাই। পরীক্ষা দিয়ে আমার বেশ খিদে লেগে গেছে।”

তরী মাথা নাড়িয়ে মধুর সাথে সায় জানালো। দু’জনে ফুচকা আর আইসক্রিম খেলো। বাসার দিকে রওনা দিবে এখন দুজন। তরী সাইকেল আনেনি। কিন্তু মধু তো এনেছে। তাই দুজন এক সাইকেলে যাবে। সাইকেলে মধুর পেছনে উঠে বসতেই তরী দেখতে পেল, অর্ণব দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে। মঊু মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে বললো,
“ধুর! তুই যা ওনার সাথে। আমি বাসায় গেলাম।”

মধু সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে অর্ণবের দিকে চোখ রাঙিয়ে গেল। অর্ণব বোকার মতো মধুর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তরীর দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“সরি রে! দেরি হয়ে গেল। আসলে কাছের মার্কেটে তোর জন্য কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। সময়ের দিকে খেয়ালই ছিলো না।”

তরী দেখলো, অর্ণবের হাতে তিনটা শপিং ব্যাগ। তরী হতাশ গলায় বললো,
“এসবের কোনো দরকারই ছিল না।”
বলেই তরী হনহন করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। অর্ণব ওর পিছু পিছু যেতে যেতে বললো,
“আজ হেঁটে যাবো বলে গাড়ি তোদের বাসার সামনে রেখে এসেছি।”

তরী কোনো উত্তর দিলো না। নীরবে হাঁটতে লাগলো। অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেল৷ তরী আর অর্ণব পাশাপাশি হাঁটছে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে ওরা একসাথে মাটির রাস্তা ঊরে হাঁটছে। অর্ণব এতোক্ষণে অনেক কথা বললেও তরী একটা কথার উত্তর দেয়নি। কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি। ভাবলেশহীন ভাবে হাঁটছে। যেন সে ছাড়া আর কেউ নেই আশে পাশে! অর্ণবের কথাগুলো ওর কানেই ঢুকছে না যেন। অর্ণব পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো তরীর মুখে। সাদা কলেজ ড্রেস নেহাৎ-ই বাচ্চা মেয়ে মনে হচ্ছে ওকে। লম্বা চুলগুলো দুই বেনী করে কাঁধের সামনে দুই দিকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। সাদা মুখটা ঘেমে লাল হয়ে গেছে ওর। হতাশ কন্ঠে অর্ণব বললো,

“রেগে আছিস?”
তরী হাঁটা থামালো। তরীর সাথে সাথে অর্ণবেরও পা থেমে গেল। তরী অর্ণবের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
“কষ্ট পেয়েছি।”
“কেন?”
“কারণটা তোমার অজানা?”
“বললাম তো ইচ্ছে করে দেরী করিনি! আধঘন্টা লেইট করেছি শপিং করতে গিয়ে।”
তরী বিমর্ষ চোখে অদূরে তাকালো। চারপাশে শুধু ধানের ক্ষেত এখানে। আশপাশ নীরব কোনো মানুষের আনাগোনা নেই। তরী আনমনে বললো,

“আমার কাছে কথার মূল্য অনেক বেশি, অর্ণব ভাই! তুমি যখন বললে, ‘আমি তোর জন্য অপেক্ষা করবো’, আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার নিজেকে অনেক অবহেলিত মনে হয়। তাই কারো কাছে একটু গুরুত্ব পেলে, মনের ভেতরে ভালোলাগার ঝড় বয়ে যায়। তোমার কথায়ও সেরকম লেগেছে। কিন্তু আমি বেরিয়ে এসে দেখি তুই নেই। আমাকে অপেক্ষা করতে বলে তুমি নিজেই আমায় অপেক্ষায় ফেলে চলে গেলে! তোমার এসব শপিং আমায় কোনো আনন্দ দেয় না, অর্ণব ভাই। কিন্তু তুমি যদি আমার জন্য আজ একটু অপেক্ষা করতে, আমার ভীষণ ভালো লাগতো ব্যাপারটা।”

অর্ণব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে। এই মেয়েটাকে যে সে কতটা ভালোবাসে, কীভাবে প্রকাশ করবে সেটা! ভাষায় কি সেটা প্রকাশ করা সম্ভব? একদমই না!
অর্ণব কয়েক পা এগিয়ে তরীর কাছাকাছি দাঁড়ালো। আলগোছে ওর একহাত আগলে ধরে বললো,
“আর কখনো নিজের কথার মর্যাদা নষ্ট করবো না। শেষ বারের মতো বিশ্বাস করবি আমায়?”

তরী চমকে তাকালো। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল যেন! অর্ণবের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে। অর্ণবের চোখের ভাষা আজ অন্য রকম। তরীর বুঝতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কোনো মেয়েরই বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না। হঠাৎ গাড়ির হর্ণের শব্দে নড়েচড়ে উঠলো ওরা। এক পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো,
“আরেহ্! রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে প্রেম করে কেউ? একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে প্রেমালাপ করলে কেউ আপনাদের ডিস্টার্ব করবেও না আর ডিস্টার্বড্ হবেও না।”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ১

তরী ভ্রু কুঁচকে রাস্তার পাশে সরে গেল। গাড়িটাও ওদের সামনে দিয়ে সাঁ করে চলে গেল। গাড়ির ভেতরে এক ছেলে ছিল যাকে সে কোনোদিন এই গ্রামে দেখেনি। তরী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। এই গ্রামে গাড়ি নিয়ে শুধু অর্ণব আর রায়হান বা আরমান সাহেব আসেন। কিন্তু এই অপরিচিত ছেলেটা কে? গায়ের এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ দেখে তো মনে হলো ডাক্তার! কিন্তু একে তো তরী কোনোদিন দেখেনি!

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৩