প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৩

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৩
Writer Mahfuza Akter

বহুদিন পর আজ নিজের বইগুলোতে মগ্ন হতে ইচ্ছে করছে তরীর। মেডিক্যাল সায়েন্সের মোটা মোটা বইয়ের পাশে নিজের বইগুলোকে দেখছে সে। সৌহার্দ্যের কথাগুলো তার ভেতরে তীব্র এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, ম*রে শুকিয়ে যাওয়া ইচ্ছেগুলো যেন নতুন উদ্যমে বেঁচে ওঠার প্রয়াস চালাচ্ছে! সৌহার্দ্য ডিউটিতে যাওয়ার আগে আরও একবার দেখা করতে এসেছিল। সৌহার্দ্যের মুখে হাসি দেখে তরীর মনে অন্যরকম এক প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছিল। তরী বুঝতে পারে যে, সৌহার্দ্য তার একমাত্র ভরসার জায়গা।

“বইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কী এতো ভাবছিস রে? তোর মাথায় কি এখনও পড়াশোনা ঘুরছে? বিয়ের পর পড়াশোনা করে কেউ?”
হঠাৎ এমন কথা শুনে তরী চমকে উঠলো। চোখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। মধু কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে সরু দৃষ্টি তাক করে রেখেছে মধু। তরী মুখ ঘুঁচে বিরক্তি প্রকাশ করলো। বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এভাবে হুটহাট চিল্লিয়ে ওঠে কেউ? তোর এই বদ অভ্যাসটা কবে ঠিক হবে? হ্যা?”
মধু মুখ গোমড়া করে তরীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“নিজের একমাত্র ননদের সাথে এভাবে কথা বলে কেউ? আমার ভাইয়ের মতো বর আর আমার মতো ননদ পাওয়া কত বড় সৌভাগ্যে ব্যাপার, জানিস তুই?”
তরী মুখ বাঁকিয়ে বললো,

“হ্যাঁ, আমার এতো সৌভাগ্য দেখেই তো আর আমার ধারেকাছে ঘেঁষার চেষ্টা করছিস না! ভুলেই গিয়েছিস আমাকে।”
মধু চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“আসলে তোদের সুবিধার কথা ভেবেই তোকে আর বিরক্ত করিনি। নতুন নতুন বিয়ে হলে নাকি দম্পতিদের ডিস্টার্ব করতে নেই! এজন্য ভাবলাম তোকে কয়েকদিন ভাইয়ার দখলেই দিয়ে দেই।”
তরী হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মধুর দিকে। বিস্মিত গলায় বললো,

“তোর মতো অভদ্র আর ঠোঁটকাটা মানুষ আমি দু’টো দেখিনি! নিজের বড় ভাইয়ের ব্যাপারে এসব বলে কেউ?”
“ভুল কিছু তো বলিনি! যা-ই হোক! সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকিস কেন তুই? বিয়ে হয়ে গেছে বলে এভাবে একঘরে বন্দী থাকার কোনো কারণ দেখি না আমি। চল, আমার সাথে! একসাথে ঘুরতে যাবো।”
তরী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পা ঘুরিয়ে গিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। মধুর দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,

“মানুষের কটাক্ষের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে করছে না আপাতত। আরেকটু মনোবল দরকার আমার।”
মধু সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কে কটাক্ষ করবে তোকে? আমি ওদের মুখ ভেঙে দেবো। চল তুই!”
তরী হেসে বললো, “আজ না। কাল যাবো না-হয়!”

মধু হতাশ চোখে তরীকে দেখলো কিছুক্ষণ। মেয়েটা আগে তো এমন ছিল না! সেই পুরনো তরীকে যে বড্ড মনে পড়ে মধুর! ছোট বেলা থেকে একসাথে সাইকেলে করে স্কুল কলেজে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটা দিনের বেশিরভাগ মুহুর্ত একসাথে কাটানোর স্মৃতিগুলো মধুর মস্তিষ্কে সারাক্ষণ বিচরণ করে। তরীর কি সেসব কিছু একটুও মনে পড়ে না?
তরীর নির্লিপ্ত মুখশ্রী থেকে চোখ সরিয়ে মধু বেরিয়ে গেল। সিঁড়ির কাছাকাছি যেতেই প্রহরের ঘর থেকে প্রহরের গলা মধুর কানে ভেসে এলো। মধুর পা থেকে গেল, দৃষ্টি সচেতন হলো, ভ্রুদ্বয় একত্রিত করে প্রহরের কথাগুলো ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করলো সে।

“কাল আমার ছুটি শেষ। আমি আর ছুটি বাড়ানোর জন্য এপ্লিকেশন করছি না। আজই আমরা ঢাকায় ফিরছি।”
প্রহরের কথা শুনে মুগ্ধ হতাশ হলো। বিরক্ত হয়ে বললো,
“আরো কিছুদিন থাকি না, ভাইয়া! গ্রামে এই প্রথম এসেছি আমি। এখনো কিছু ঘুরে দেখলাম না।”
প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

“তোমার এখানে থাকতে চাওয়ার কারণ ভালো করেই জানি আমি। তুই থাকতে চাইলে থাকতে পারিস। আমি আজই চলে যাবো।”
“তুমি চলে গেলে আমি একা একা এখানে কীভাবে থাকবো? এটা তোমার বন্ধুর বাড়ি। আমি একা থাকলে খারাপ দেখায়।”
“তাহলে তুইও আমার সাথে চল। এখানে থেকে কোনো কাজ নেই। ব্যাগপত্র গোছগাছ কর। আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি।”
প্রহরের কথা শুনে মধু মুখ বাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “শাওয়ার? নেওয়াচ্ছি তোমায় শাওয়ার? তোর যদি বারোটা না বাজিয়েছি আজ, তাহলে আমার নাম করলার ভর্তা রাখবো আজকে। হুহ্!”

মুগ্ধ মুখ গোমড়া করে নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছে। প্রহর সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“শুধু নিজেরটা-ই গোছাবি? আমার ব্যাগটাও গুছিয়ে দে!”
“নিজের ব্যাগ নিজে গুছিয়ে নাও।”

প্রহর মনে মনে হাসলো মুগ্ধর কথা শুনে। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে। মুগ্ধর ভীষণ মন খারাপ হলো। যাওয়ার আগে একবার অরুণীর সাথে দেখা হলো না। মেয়েটা নিজেকে একঘরে বন্দী করে রেখেছে। দরজার বাইরে পা রাখে না একবারও। তাই মুগ্ধর সাথেও দেখা হয় না অরুণীর। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে অরুণীকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে মুগ্ধর। বিমর্ষ ভঙ্গিতে অরুণীর ঘরের উদ্দেশ্য কয়েক পা এগোতেই প্রহরের গলা ভেসে এলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে প্রহর বললো,

“কলে তো পানি নেই! তুই শাওয়ার নেওয়ার সময় কি পানি ছিল?”
“হ্যাঁ। তখন তো পানি ছিল! আবার চেক করে দেখো তো!”
“অনেকবার চেষ্টা করেছি। পানি আসছে না। দেখি, আন্টি বা দাদীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা!”
প্রহর বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মুগ্ধও তার পিছু পিছু গেল। সিঁড়ির পাশে থাকা সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছেন আফনা বেগম। তাঁর পাশে বসে মধু ওনার পা টিপে দিচ্ছে। প্রহর মধুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই মধু মুখ ভেঙিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলো। প্রহর চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে আফনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,

“দাদী! কলে পানি আসছে না কেন বলো তো? সকাল থেকে এখন পর্যন্ত গোছল করিনি আমি।”
আফনা বেগম পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালেন। প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কী কও, নাতি? পানি তো আছেই! মধু গিয়া দেখ তো কী সমস্যা হইছে!”
মধু অবুঝের মতো তাকিয়ে বললো,
“জানি না, দাদী! কিছুক্ষণ আগে আমিও দেখলাম বাড়ির কোনো কলেই পানি আসছে না৷ মেইন লাইনেই সমস্যা হয়েছে বোধ হয়।”

মুগ্ধ অবাক হয়ে বললো,
“এখন কী হবে? ভাইয়া শাওয়ার নিবে কীভাবে তাহলে?”
মধু মুখ বাকিয়ে বললো,
“একদিন গোছল না করলে দুনিয়া উল্টে যাবে না। বাবা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত কীভাবে পানির সমস্যার সমাধান হবে?”
প্রহরের বিরক্তির মাত্রা দ্বিগুণ হলো। সে আফনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
“দাদী! আমি গোছল ছাড়া থাকতে পারি না। দিনে দুই-তিন বার শাওয়ার নেওয়ার অভ্যাস আমার।”
আফনা বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,

“এখন কী যে করমু আমি! মানুষ ডাকাইয়া সব ঠিক করাইলেও সময় লাইগা যাইবো অনেক। তার চেয়ে বরং তুমি পুকুরের পানিতে গোছল কইয়া ফালাও। মধু, যা তো! নাতিরে নিয়া পুকুর পাড়ে যা!”
প্রহর চোখ বড় বড় করে বললো,
“হোয়াট? আমি আর পুকুর! ইম্পসিবল! আমার গোছল করা লাগবে না। থাকুক! ঘরে যাচ্ছি আমি।”
প্রহর নিজের ঘরে যেতে উদ্যত হতেই মুগ্ধ ওকে বাঁধা দিলো। উৎফুল্ল চোখে তাকিয়ে বললো,
“ভাইয়া, চলো না পুকুরপাড়ে যাই! আমি কখনো পুকুরে গোসল করিনি।”

প্রহর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। মুখ কুঁচকে মুগ্ধর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“তোর শখ পূরণের জন্য আমি পুকুরে ডুব দিতে পারবো না৷ আমি জীবনে কোনোদিন পুকুরের পানিতে গোসল করিনি। আর আজ করবো? ইম্পসিবল! দেখি, সর সামনে থেকে!”
“ভাইয়া, চলো না! শুধু আজকের জন্য-ই তো!” বলেই মুগ্ধ প্রহরকে এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। মধুর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। মাথায় ভর করলো দারুন এক বুদ্ধি। আজ প্রহরকে বেশ ভালো একটা শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে সে।

তরী সৌহার্দ্যের একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছে। ছোট ছোট ইংরেজি হরফে লেখা কথাগুলোর মানে সে বেশ বুঝতে পারছে। তবে আজীবন বাংলা লেখা পড়তে পড়তে এখন ইংরেজি বই পড়ে অর্থোদ্ধার করায় একটু সময় লাগছে।

মালিহা খাবার নিয়ে এসে তরীর সামনে বসলো। তরী মালিহাকে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। মালিহার চোখে আজ অন্য রকম একটা আনন্দের আভাস দেখতে পাচ্ছে তরী। তরী ভ্রু কুঁচকে বললো,
“তুমি আজ হঠাৎ এতো খুশি কেন বলো তো?”
“আজকে তোকে আমার মেয়ের মতো লাগছে। আমার চাঁদ নিজের জন্য মুখ খুলতে শিখেছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই আমার জন্য!”

তরী মলিন হেসে মালিহার দিকে তাকালো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আমার আনন্দে তোমরা এতো খুশি হও কেন বলো তো?”
মালিহা কপাল কুঁচকে বললো,
“আমরা?”
“হ্যাঁ। তুমি আর সৌহার্দ্য।”

মালিহা প্রসন্নচিত্তে হেসে খাবার পরিবেশন করতে করতে বললো,
“সৌহার্দ্য-ই তোকে শিখিয়েছে নিজের জন্য নিজেকে মুখ খুলতে, না?”
তরী খাবার মুখে তুলতে তুলতে বললো, “হুম। উনি ছাড়া আর কে-ই বা শেখাবে আমায়?”
“সৌহার্দ্যকে তো বেশ কয়েকদিন কাছ থেকে দেখছিস! কেমন লাগে ওকে তোর কাছে?”
তরী স্নিগ্ধ মুখে হেসে বললো,

“খুব ভালো মানুষ। কল্পনাতীত ভালো মানুষ।”
মালিহা হতাশ হয়ে বললো, “শুধু এটুকুই?”
তরী মুখে খাবার তুলতে গিয়েও থেমে গেল। শূন্যে দৃষ্টি মেলে ভাবনায় মত্ত হলো তার হৃদয়। কিছুক্ষণ ভাবুক চোখে চেয়ে নীরবতা কাটানো শেষে হঠাৎ সে আনমনে বলে উঠলো,
“উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।”

মালিহার চোখ দুটো শীতল হলো। ‘ সৌহার্দ্য তরীকে ভালোবাসে’ ব্যাপারটা মালিহার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। সৌহার্দ্য কি শুধু-ই মানবতার খাতিরে তরীকে বিয়ে করেনি? অপলক চোখে তরীর দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি মেলে মালিহা প্রশ্ন করলো,
“সৌহার্দ্য তোকে কখনো বলেছে যে, ও তোকে ভালোবাসে?”

তরী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মলিন হেসে খাবারে মনযোগ দিয়ে বললো,
“সব কথা সবসময় মুখে বলে দিতে হয় না, ছোট মা! সৌহার্দ্য কোনোদিন আমায় ‘ভালোবাসি’ বলেনি।”
মালিহার মনপ্রাণ স্বস্তির এক শীতলতায় ছেয়ে গেল। ভালোবাসা সুন্দর! কিন্তু যেই ভালোবাসা মুখে না বলে প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করা যায়, সেটা ঠিক কতটা সুন্দর ধারণা করতে পারছে না মালিহা।

ভেজা শরীরে তোয়ালে পেঁচিয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রহর। মুগ্ধ পেছন পেছন আসছে, আর হুটহাট হেসে উঠছে। প্রহর রাগে দাঁত কটমট করছে। ঘরে ঢুকেই মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠলো,
“আর একবার তোর হাসির শব্দ শুনলে এক থাপ্পড়ে সবকটা দাঁত ফেলে দেবো।”
মুগ্ধ দাঁত বের করে হেসে বললো,
“আচ্ছা, এখন থেকে শব্দ ছাড়াই হাসবো।”

প্রহর অতিষ্ঠ হয়ে মাথা দু’পাশে নাড়ালো। ‘অসহ্য’ শব্দটা বিড়বিড় করে বলে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল। আলমারি খুলতেই প্রহরের চক্ষু চড়কগাছ! পুরো আলমারি সম্পূর্ণ ফাঁকা! তবে একটা তাকে একটা লুঙ্গি ভাজ করে রাখা আছে। বড় বড় চোখে কিছুক্ষণ লুঙ্গিটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুগ্ধর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো প্রহর। প্রহরের প্রতিক্রিয়া দেখে মুগ্ধর মুখের হাসি ধীরে ধীরে সরে গেল।
প্রহর দাঁত কটমট করে বললো,

“আমার ব্যাগপত্র সব কোথায় গেল? তোর ব্যাগ-ই বা কোথায়? আর এই লুঙ্গিটা কার? আমি কি এখন লুঙ্গি পরবো?”
মুগ্ধ এগিয়ে এসে আলমারির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
“এ কি! আমি তো আমার সব জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে এখানেই রেখেছিলাম! আমাদের ব্যাগ পত্র কোথায় গেল?”
ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রহরের ভীষণ রাগ লাগছে। এখন ড্রেস চেঞ্জ করে সে কী পরবে? এই লুঙ্গি? প্রহর দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে বললো,
“ভাইয়া, তুই ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে আপাতত এই লুঙিটা-ই পর। আমি দেখি সৌহার্দ্য ভাইয়ার কাপড় নিয়ে আসতে পারি কিনা!”

“যে-ই এসব করেছে, বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে আমাকে হেনস্তা করার জন্য করছে। আমি তো জাস্ট ভাবছি যে, কার এতো সাহস?”
প্রহরের কথা শুনেও না শোনার ভান করে মুগ্ধ চলে গেল। প্রহর হতাশ মনে ভাবলো, সে কীভাবে লুঙ্গি পরবে? সে নিজে কখনো লুঙ্গি পরেনি, নিজের বাবাকেও কখনো পরতে দেখেনি। হতাশ চোখে কিছুক্ষণ লুঙ্গিটার দিকে তাকিয়ে থেকে সেটা কোনোরকমে কোমরে পেচিয়ে পরার চেষ্টা করলো। তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে ভেজা কাপড়গুলো ওয়াশরুমে রেখে এসে নিজেকে আয়নায় দেখলো। এতো অদ্ভুত কেন লাগছে? রাগে, বিরক্তে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো প্রহর। কিন্তু দরজার দিকে তাকাতেই মধুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। ক্রোধিত চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে বললো,

“তুমি? তুমি এখানে কী করছো?”
মধু ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। প্রহরের দিকে যতবারই তাকাচ্ছে, ততবারই ভেতর থেকে সব হাসি গড়গড় করে বেরিয়ে আসতে চাইছে। প্রহর ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“কী হলো? তুমি মুখে এভাবে তালা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
মধু ঢোক গিলে হাসি লুকানোর চেষ্টা করে বললো,

“আপনাকে দেখতে একদম আমাদের গ্রামের বিখ্যাত মেথর ঝিংকুর বাপের মতো লাগছে!”
বলেই মধু খিলখিল করে সশব্দে হাসতে লাগলো। প্রহর মধুর কথার আগামাথা বুঝতে পারলো না। অবুঝের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভ্রু কুঁচকে বললো, “হোয়াট?”
মধু হাসি থামিয়ে বললো, “কিছু না। বললাম যে, আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
“মজা করছো আমার সাথে?”

“একদমই না। আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। দাঁড়ান, আমি আপনাকে দেখাচ্ছি আপনাকে কতটা সুন্দর লাগছে!”
বলেই মধু হাতে থাকা ফোনটার ক্যামেরা অন করে হুট করে প্রহরের একটা ছবি তুলে প্রহরকে দেখিয়ে বললো,
“এই যে, দেখুন। আপনাকে পুরোই বাংলা সিনেমার বড়লোক নায়িকাদের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া গরিব নায়কদের মতো লাগছে!”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২২

প্রহর রাগী চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই মেয়ে! তুমি আমার ছবি তুললে কেন? এখনই ডিলিট করো বলছি।”
মধু ফোন নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
“কাভি নেহি। এই ছবি আমি বাঁধাই করে আমাদের মেথর চাচাকে দেখিয়ে বলবো, ‘দেখো, চাচা! এটা তোমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই’।”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৪