প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৭

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৭
Writer Mahfuza Akter

বিবর্ণ নীলাম্বরের কোলে এক ফালি চাঁদ। সেই চাঁদের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরুণী। চোখ দু’টো পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে। মন খারাপেরা জড়ো হয়েছে অন্তর্জগতে। মন খারাপের কারণটা সৌহার্দ্য ছাড়া আর কে-ই বা হতে পারে?

“এক্সকিউজ মি, সিনিয়ার আপু! আমার এসাইনমেন্টে একটু হেল্প করবেন কাইন্ডলি!”
অনুরোধ মিশ্রিত আবেদনে হালকা নড়েচড়ে উঠলো অরুণী। আড়ালে চোখ মুছে জানালার বাহির থেকে দৃষ্টি সরালো। মুখ ঘুরিয়ে তাকালো হুট করে পেছনে এসে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে। ঠোঁটে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে রাখা মুগ্ধকে দেখে অরুণীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ল্যাবের ফকফকে আলোয় মুগ্ধ অরুণীর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অরুণীর রক্তিম চোখ দুটো দেখে মুগ্ধর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটুকু বিলীন হয়ে গেল। মেয়েটা কি কাঁদছিল? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই বুকের বাঁ পাশে কেমন যেন ধক করে উঠলো মুগ্ধর। অরুণী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। ক্রোধিত গলায় প্রশ্ন করলো,
“আবার বিরক্ত করতে চলে এসেছো?”

মুগ্ধ হয়তো অরুণীর প্রশ্নটা শুনলো না। আগে অরুণীর রাগ আর বিরক্তি দেখে মুগ্ধ হাসতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। মুগ্ধ হতে পারছে না। কৌতূহলী কন্ঠে সে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“আপনি কাঁদছিলেন?”

ধরা পড়া চোরের মতো হাসফাস করে উঠলো অরুণী। মুগ্ধ এবার নিশ্চিত হলো। মেয়েটা আসলেই কাঁদছিল। তাই অকপটে দ্বিতীয় প্রশ্নটাও করে ফেললো,
“কেন কাঁদছেন?”
“মাইন্ড ইয়র ওউন বিজনেস। আমার সামনে ফারদার কখনো আসবে না।”

শক্তপোক্ত গলায় কথাটা বলেই অরুনী মুগ্ধর পাশ কাটালো। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলো না। মুগ্ধ তার হাত আঁকড়ে ধরেছে। মুগ্ধর কাঠিন্য মিশ্রিত সুর ভেসে এলো,
“আপনার সামনে তো আমিই থাকবো! আজীবন থাকবো।”

অরুণী বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে। কথার চেয়ে মুগ্ধর স্পর্শে অরুণীর মস্তিষ্ক ধপ করে জ্ব*লে উঠলো। ঠাটিয়ে এক চড় বসানোর জন্য হাত তুললো অরুণী। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা কাজ করলো তার মধ্যে। তাই চড়টা আর মুগ্ধর গালে বসাতে পারলো না। অরুণীর এই ব্যর্থতায় মুগ্ধ হয়তো বেশ মজা পেল! মিটমিট করে হাসতে লাগলো অরুণীর দিকে তাকিয়ে। অরুণী সেটা দেখে বিরক্ত হয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো,

“মিনিমাম লজ্জাবোধটুকুও কি নেই তোমার?”
“ভালোবাসা আর লজ্জার মধ্যে বিপরীত ধর্মী একটা সম্পর্ক আছে। ভালোবাসা যত বাড়ে, লজ্জা তত কমে। এজন্যই তো প্রেমে পড়লে মানুষ বেহায়া হয়ে যায়!”
মুগ্ধর যুক্তি শুনে অরুণী রাগী চোখে তাকালো। মুগ্ধ যেন অসাধারণ আনন্দ পেল! নিঃশব্দে হেসে তাকিয়ে রইলো অরুণীর দিকে। অরুণী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমি এখনই এইচওডি-এর কাছে কমপ্লেইন করছি, ওয়েট! আজই এই কলেজে তোমার শেষদিন।”

রায়হান আহমেদ আর আফনাদ হক আজ গ্রাম থেকে শহরে চলে যাবেন। তাদের ছুটি শেষ আজ। কাল থেকে কর্মদিবস শুরু বিধায়, নিজেদের কর্মক্ষেত্রে আজই পৌঁছে যাবেন। বাবার চলে যাওয়ার খবর শুনে তরীর মন খারাপ হয়ে গেল। আফনাদ গাড়িতে উঠার আগে তরীর কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তরীর ঠোঁট ভেঙে এলো। চোখ দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত জলকণা গড়িয়েই পড়লো অবশেষে।

আফনাদ হক মেয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
“পড়াশোনা ঠিক মতো করতে বলবো না। কারণ আমি না বললেও তুই পড়াশোনায় কখনো অমনোযোগী হবি না। শুধু নিজের প্রতি একটু খেয়াল রাখিস। এখন বড় হয়েছিস তুই। তোর প্রতি আমার দায়িত্ব বরাবরই বেশি।”
তরী মাথা দুলিয়ে বাবার কথায় সম্মতি জানালো,

“আমি জানি, বাবা! কিন্তু তুমি আবার কবে আসবে?”
“এলে একেবারে তোর কাছাকাছি চলে আসবো! ট্রান্সফারের জন্য এপ্লিকেশন করেছি আমি আর রায়হান।”
তরীর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো মুহুর্তেই। তার মানে আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা! তারপরই আফনাদ তার কাছাকাছি চলে আসবে। হৃষ্টচিত্তে বাবাকে বিদায় জানালো তরী।

অন্য দিকে, রায়হান সাহেব ফোন কানে গুঁজে বিরক্তি নিয়ে পায়চারি করছেন। বিরবির করে বলছেন,
“ছেলেটার এ জীবনে আর আমার কথা শুনবে না। এখন ফোনও ধরছে না। অসহ্য!”
আফনা বেগম পালঙ্কে আয়েসী ভঙ্গিতে বসে পান চিবোচ্ছেন। রায়হান সাহেবকে এমন ব্যস্ত দেখে বললেন,
“আহা! তুই ওকে এভাবে বারবার কল দিতেছিস ক্যান? ডাক্তার মানুষ! হইবো ব্যস্ত কোনো কামে!”
সুজাতাও মিনমিনে গলায় বললেন,

“মা তো ঠিকই বলছে! আপনি আমার ছেলেটার ওপর শুধু শুধু অসন্তুষ্ট হচ্ছেন!”
রায়হান সাহেব মুখে রাজ্যের বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন,
“তোমাদের সৌহার্দ্য অনেক ভালো। তার কোনো দোষ নেই। সব দোষ শুধু আমার! আমারই উচিত হয়নি গ্রাম ছাড়ার আগে ওর সাথে কথা বলাটা।”

রায়হান সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে সৌহার্দ্যের নাম দেখে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সময় নিয়ে কল রিসিভ করে কানে গুঁজলেন,
“কী হয়েছে, বাবা? এতোবার কল দিয়েছো কেন?”
সৌহার্দ্যের কথার ধরনেই বোঝা যাচ্ছে যে, সে ভীষণ ব্যস্ত। রায়হান সাহেব থমথমে গলায় বললেন,
“আজ যে তোমার বাবার ছুটি শেষ আর তিনি যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সেটা কি তোমার মনে আছে?”
“আছে তো!” সৌহার্দ্যের সোজাসাপ্টা উত্তর।

“তাহলে আমাকে একবার বিদায় দেওয়াটা কি তোমার কর্তব্য না?”
“হয়তো! কিন্তু এসব ফর্মালিটির সময় তো আমার হাতে নেই আপাতত! দু’টো সার্জারি আর একটা ইমার্জেন্সি হ্যান্ডেল করেছি এতোক্ষণ। আজকে রাতটা হসপিটালেই থাকবে। সকালে ফ্রেশ মুডে তোমায় কল দিবো না-হয়! তুমি যত ইচ্ছে বকাঝকা, গালাগালি করো। হ্যাভ আ সেইফ জার্নি। রাখছি। বায়!”

রায়হান সাহেবকে হতভম্ব করে দিয়ে সৌহার্দ্য কল কেটে দিলো। রায়হান সাহেব ফোঁস ফোঁস করে বললেন,
“অবাধ্য ছেলে! না আমার কথার কোনো মূল্য আছে ওর কাছে, আর না বাবা নামক মানুষটার! শুধু শুধু সময় নষ্ট করলাম এতোক্ষণ।”

বলেই তিনি লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আফনা বেগম বিছানায় বসে মিটমিট করে হাসছেন। এই বাপ-ছেলের কাহিনী দেখতে তার ভীষণ ভালো লাগে। এতোবছর এটা মিস করেছেন। এখন তাই মন ভরে উপভোগ করছেন। সুজাতা তড়িৎ গতিতে রায়হান সাহেবের পিছু পিছু গেলেন। এভাবে রাগীভাবেই চলে যাবে বোধ হয় রায়হান।

দরজার ওপর ইংরেজি বর্ণে লিখা,
Professor Dr. Shahriar Nawaz
Head of Department
Department of Pathology.
অরুণী কাঁপা কাঁপা হাতে দরজাটা কিছুটা ফাঁক করে উঁকি দিলো। ডক্টর শাহরিয়ার হয়তো কোনো রোগীর রিপোর্ট ঘাঁটছেন! গায়ে এখনো ওটি-এর এপ্রোন। কাঁচাপাকা চুল ও দাঁড়ির সংমিশ্রণে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ভাব ফুটে ওঠে ওনার মধ্যে। হয়তো অপারেশন থিয়েটার থেকে এসেছেন কিছুক্ষণ আগে। অপারেশন না থাকলে এতো রাত পর্যন্ত তিনি হসপিটালে থাকতেন না।

“কে ওখানে? ভেতরে এসো!”
অরুণী চমকে উঠলো। এতোক্ষণ সে ভাবনায় এতোটাই মশগুল ছিল যে, খেয়ালই করেনি ডক্টর শাহরিয়ার তাকে দেখে ফেলেছে। অরুণী শঙ্কিত মনে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। ডক্টর শাহরিয়ার তাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন,
“অরুণী, তুমি? কিছু বলবে? এনি প্রব্লেম?”

“ইয়েস, স্যার!” তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে কথাটা বলেই অস্বস্তিতে পড়ে গেল অরুনী। অস্থির চোখে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললো,
“একচুয়েলি আমার আপনাকে কিছু বলার ছিল, স্যার!”
ডক্টর শাহরিয়ার চেয়ার টেনে বসলেন। অরুণীকে সামনের চেয়ারটা ইশারায় দেখিয়ে বললেন,
“আগে বসো।”

অরুণী সময় নিয়ে বসলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। ডক্টর শাহরিয়ার ফাইলগুলো একত্রিত করে টেবিলের এক সাইডে রেখে অরুণীর দিকে তাকালেন। বললেন,
“এবার বলো। কী হয়েছে?”
“স্যার, আপনি তো এইচওডি! মানে আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড। আমাদের ডিপার্টমেন্ট রিলেটেড যেকোনো প্রব্লেম তো আমরা আপনার সাথে শেয়ার করতেই পারি! এম আই রাইট, স্যার?”

“ইয়েস, এবসোলিউটলি!”
ডক্টর শাহরিয়ারের আশ্বস্ত কন্ঠে অরুণী কিছুটা ভরসা পেল। তবুও কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে! এই প্রথম এমন একটা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে সে। একটা ছেলের নামে কমপ্লেইন করাটা যে কতটা অস্বস্তির, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে অরুণী। তাই ইতস্তত নিয়েই বললো,

“স্যার, আমার একটা ছেলেকে নিয়ে কিছু বলার ছিল আপনাকে। থার্ড ইয়ারে পড়ে ছেলেটা। মুগ্ধ ওর নাম!”
ডক্টর শাহরিয়ারের ভ্রু-জোড়া অতিমাত্রায় কুঁচকে গেল। তিনি কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ, তোমার জুনিয়র সে। ওকে নিয়ে কী বলার আছে তোমার?”
অরুণীর নিজের ফোনের কললিস্ট ডক্টর শাহরিয়ারকে দেখালো,
“এই যে দেখুন, স্যার! ছেলেটা রোজ আমায় কল দিয়ে ডিস্টার্ব করে। দেখা হলেই বিরক্ত করে। মানে আমি ওর চেয়ে বয়সে বড়। তবুও আমার প্রতি তার কোনো রেস্পেক্ট-ই নেই!”

ডক্টর শাহরিয়ার হতভম্ব হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পিয়নকে ডেকে বললেন, মুগ্ধকে তার সামনে নিয়ে আসতে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মুগ্ধ হাজির হলো তাদের সামনে।
ডক্টর শাহরিয়ার রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
“এখনো হসপিটালে আছো কেন?”
মুগ্ধ এক পলক অরুণীর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
“আব্ আমার ল্যাবওয়ার্ক ছিলো।”

“তুমি ওকে চেনো?” ডক্টর শাহরিয়ার অরুণীর দিকে চোখের ইশারা করে মুগ্ধর দিকে তাকালেন। মুগ্ধ অরুণীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“চিনি তো! খুব ভালো করে চিনি।”
“তুমি ওকে ডিস্টার্ব করো কেন? তুমি জানো না ও তোমার সিনিয়ার?”
“ডিস্টার্ব কখন করলাম? দরকার পড়লে কল দেই মাঝে মাঝে। আর দেখা হলে একটু কুশল বিনিময় তো সবাই-ই করে!”
ডক্টর শাহরিয়ার শক্ত গলায় বললেন,

“এখন থেকে আর করবে না!”
অরুণীর বেশ ভালো লাগছে মুগ্ধকে এভাবে ফাঁসাতে পেরে। হাসি হাসি মুখে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে সে। মুগ্ধ ডক্টর শাহরিয়ারের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“হ্যা? কী করবো না?”
“কিছুই করবে না। আজকের পর থেকে অরুণী তোমার কাছে অপরিচিত। কোনো দরকার পড়লে আমাকে কল দেবে। কিন্তু অরুণীকে নয়।”

“কিন্তু বাবা….”
“শাট আপ! এখানে আমি তোমার বাবা নই। আমার আন্ডারে থাকা প্রতিটা স্টুডেন্ট আমার কাছে সমান। আর এই প্রতিষ্ঠানে তুমি আমার সন্তান নও, আমার স্টুডেন্ট। তোমাকে ফার্স্ট এন্ড লাস্ট টাইম ওয়ার্নিং দিচ্ছি। এরপর যোন তোমার নামে কোনো কমপ্লেইন না শুনি আমি। গট ইট?”
মুগ্ধ বিরক্তি নিয়ে মাথা নাড়ালো। হনহনিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল মুহূর্তেই। অরুণী বিস্মিত, বিমূঢ়, হতভম্ব! চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সে। বিরবির করে আনমনে বললো, “বাবা!!”

গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে উৎফুল্ল মনে ড্রাইভিং করছে সৌহার্দ্য। সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া গা ছুঁয়ে দিচ্ছে বারবার। হাতের সিলভার রোল্যাক্স ওয়াচটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো সে। সকাল সাতটা সাতাশ বাজে এখন। এখন কেউ ঘর থেকে বের হয়নি বলে আশে পাশের মাঠঘাট সুনশান, নীরব। কাল সারারাত না ঘুমিয়ে কাটালেও এখন তেমন ক্লান্ত লাগছে না সৌহার্দ্যের। এসবে বেশ অভ্যস্ত সে। নির্ঘুম রাতের সাথে এতো বছরে বেশ ভালো সখ্যতা হয়ে গেছে তার।

সামনের রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় মাঝে মাঝে আশেপাশেও তাকাচ্ছে সৌহার্দ্য। আহমেদ ভবনে পৌছাতে আরও দশ মিনিটের মতো লাগবে। হঠাৎ অদূরে একটা পুকুরের কিনারায় একজোড়া তরুণ-তরুণীকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল সৌহার্দ্যের। পৃষ্ঠদেশ এখান দেখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে এই ছেলেমেয়ে দুটো তার বেশ চেনা। ভাবুক চোখে তাকিয়ে সৌহার্দ্য ব্রেক কষলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৃপ্ত পায়ে এগোতে লাগলো তাদের দিকে। কাছাকাছি যেতেই সৌহার্দ্য তাদের কথপোকথন স্পষ্ট শুনতে পেল।

“অর্ণব ভাই, তোমাকে সেই নজরে আমি কখনো দেখিনি।”
“কিন্তু আমি তো দেখেছি!”
“এসব কীভাবে সম্ভব? তোমার পরিবার আর আমার পরিবার তো কখনো রাজি হবে না!”
“সবাই রাজি। আমার মা তোর মায়ের সাথে কথা বলেছে। খালামনির কোনো আপত্তি নেই। আমার বাবা-মায়েরও কোনো আপত্তি নেই। এখন আমি তোর মতামত চাই। তুই রাজি থাকলেই বিয়েটা হবে। তোর অমতের বাইরে কিছু করতে চাই না আমি।”

“আমি একটু ভেবে দেখতে চাই।”
“কী ভেবে দেখবি তুই? তোর কি আদৌ মনে হয় আমার চেয়ে ভালো জীবনসঙ্গী কখনো পাবি তুই? সেই ছোটবেলা থেকে তোকে চিনি। তোর সঙ্গী হয়ে থেকেছি সবসময়। আমাকে যতটা সময় পাশে পেয়েছিস, অন্য কোনো ছেলেকে পেয়েছিস কখনো? আমি তোর ভবিষ্যতেরও সঙ্গী হতে চাই। তোর সুখ, দুঃখ, স্বপ্ন সবকিছুর সঙ্গ দিতে চাই। তুই আমাকে ফিরিয়ে দিস না।”

তরী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। অর্ণবের চোখ জুড়ে তীব্র আকুতি স্পষ্ট। অর্ণব আলগোছে তরীর হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় ভরে নিলো। দৃঢ় গলায় বললো,
“একবার আমার হাত ধর। আজীবন তোর পাশে থাকবো। জীবনের প্রতিটা মুহুর্তের সঙ্গী হবো। কখনো এই হাত ছাড়বো না। কথা দিলাম। ধরবি আমার হাত?”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৬

সৌহার্দ্য তাদের দুজনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের এতোক্ষণের প্রতিটা কথা শুনেছে সে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে সৌহার্দ্যের। সে কি এগোবে? নাকি চলে যাবে? ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। ভেতরটা আর্তনাদ করছে। তীব্র দহনে পুড়ছে। জীবনের সকল অর্জন ফিকে লাগছে। অসহায় চোখ দুটো তরীর ওপর নিবদ্ধ। তরী কি সত্যি সত্যিই রাজি হয়ে যাবে? অর্ণবের হাত আগলে ধরবে কি সৌহার্দ্যের সামনে? সৌহার্দ্য কি সহ্য করতে পারবে সেই দৃশ্য?

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৮