প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১১

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১১
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

‘ তোমাকে আমি হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি ফাইরুজ, সময়মতো সব উসুল করে নেবো কিচ্ছুটি চিন্তা করো না।'(পূর্ব)
ফাইল দেখতে দেখতে মনে মনে বললো পূর্ব। সামনেই ফাইরুজ হাসি হাসি মুখ করে কম্পিউটারে কি যেন কাজ করছে, একটু পর পর পূর্বের দিকে হাসি দিয়ে আবার মনোযোগ দিচ্ছে কম্পিউটারে। পূর্ব কিছুক্ষণ পর একটা নাম্বারে ডায়াল করলো, কল রিসিভ হওয়ার পর তূর্য কে ওর কেবিনে পাঠিয়ে দিতে বললো।

‘ দোস্ত ডেকে,,,,,,,,ছিলি?’
যতটা হাসিখুশি ভাবে পূর্বের কেবিনে ঢুকছিল তূর্য,ফাইরুজ কে দেখে মন মেজাজ ঠিক ততটাই ড্যাম হয়ে গেল।গলার স্বর ওভাবে মিইয়ে যেতে শুনে ফাইরুজ তূর্য কে বললো,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কি ব্যাপার হ্যান্ডসাম?ভয়েজ ওভাবে ডাউন হয়ে গেল কেন তোমার,হোয়াই?'(ফাইরুজ)
‘ তোর মতো শা’ক’চু’ন্নী যেখানে পা রাখবে সেখানে যদি খো’ক্ক’স ও থাকে তার আওয়াজ ও ডাউন হয়ে যাবে। আমি তো কোন ছাড়,হাহ্ ‘

মনে মনে বললো তূর্য। মুখে বললে আর বাঁচার উপায় ছিল না,খ্যা’ক করে এসে কা’ম’ড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে শতভাগ। দৃশ্য টা একবার কল্পনা করে হালকা শিহরণ খেলে গেল তূর্যের গায়ে,কি ভ’য়া’ন’ক দৃশ্য বাপস্।
‘ কই কিছু হয়নি তো। পূর্ব ডেকেছিলি আমাকে?’
‘ হ্যা। এই প্রজেক্ট টা একটু হ্যান্ডেল করতে হবে তোকে। বিকাল পাঁচটায় মিটিং আছে, আমার হয়ে তুই মিটিং টা করবি। আমি ওদের সাথে কথা বলে নিয়েছি।'(পূর্ব)

‘ কিন্তু, আমি পারবো?'(তূর্য)
‘কেন? তুই আমার ফ্রেন্ড, তুই না পারলে আর কে পারবে বল তো?’
ভ্রু নাচিয়ে বলল পূর্ব। চোখে মুখে এক অদ্ভুত ভঙ্গি খেলে গেল ওর, সেটা বুঝতে তূর্যের অসুবিধা হলো না। ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সম্মতি দিল তূর্য, মিটিং টা ও করবে। পূর্ব এতে খুশি হলেও ফাইরুজ খুশি হতে পারলো না, মনটা ছোট হয়ে গেল ওর।ব্যস্ত হাতে কী বোর্ডের উপরে আঙুল চালিয়ে গেল।

কিছু করার নেই অফিসে আমার।এমডি স্যারের ওয়াইফ বলে কথা, সবাই বেশ সম্মান করছে আমাকে। একটু আগে একটা ফাইল দেখছিলাম নতুন প্রজেক্টের কিন্তু আমার কোন কাজ করার দরকার নেই বলে একটা ছেলে হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে চলে গেল।যাওয়ার আগে বলে গেল যদি কোন দরকার হয় তখনই যেন আমি রিসিপশনে একটা কল করে জানিয়ে দেই।

আমি বোকা বনে গেলাম এদের ব্যবহারে, আমি ও যে এই অফিসে ওদের মতোই চাকরি করতে এসেছি এটা বোধ হয় ওরা ভুলে গেছে।চেয়ারে এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে । উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ালাম।যেইমাত্র দরজা খুলে বের হতে যাবো তখনই পূর্ব স্যার কেবিনে ঢুকছিলেন হয়তো বা, ধাক্কা লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম স্যারের উপর।

কয়েক মুহুর্তের মধ্যে কি হয়ে গেল জানি না। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছি। মিনিট দুয়েক পর স্যারের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম,ভয় হচ্ছে আবার ধাক্কা খেয়ে স্যারের কিছু হয়ে গেল নাকি? পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি স্যার আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছেন, চোখের পলক ও পড়ছে না উনার।

‘ উফ্!!’
হালকা চিৎকার করে উঠলাম। মাটিতে পড়ে কোমর টা গেছে মনে হচ্ছে।চোখ মুখ খিচে আছি দেখে পূর্ব ভ্রু কুঁচকালো,,,
‘ স্নিগ্ধা!কি হয়েছে তোমার?'(পূর্ব)
‘ আরেহ, আপনি দেখে চলতে পারেন না স্যার? এমনভাবে কেবিনে ঢুকলেন, মাটিতে পড়ে এখন কোমরটা গেল রে আমার!’

হালকা ব্যথায় ককিয়ে উঠে বললাম।
‘ আরে আজব মেয়ে তো তুমি। মাটিতে পড়েছো কখন? তুমি তো আমার,,,,'(পূর্ব)
স্যারের কথা শুনে নিজের দিকে তাকালাম। তাকিয়েই জিভে কামড় দিলাম আমি। মাটিতে পড়িনি।স্যারের শার্টের কলার টেনে ধরে উনার উপর ঝুলে আছি। তাড়াতাড়ি করে কলার ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম। এখন কলার টা না ছেড়ে দিলে হয়তো বেচারা স্যার উপরে পৌঁছে যেতেন, যেভাবে টেনে ধরেছিলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু হয়ে বললাম,,

‘ সরি স্যার। হঠাৎ করেই ধাক্কা লাগল তো তাই বুঝতে পারিনি কি হয়ে গেল! কিন্তু স্যার বিশ্বাস করুন, আমি কোমরে ব্যথা অনুভব করেছিলাম তাই ওভাবে,,,,,'(আমি)
‘ হয়েছে,আর সাফাই গাইতে হবে না। ওটা তোমার কোমরের নয় মনের ব্যথা ছিল।আর যেই হারে আমার কলার টা টেনে ধরেছিলে তুমি, সেদিকে কোনো হুঁশ ছিল তোমার?প্রায় মে’রে’ই ফেলছিলে আমাকে।'(পূর্ব)

‘ এক্সট্রেমলি সরি।আর এমন হবে না।'(নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি)
উনার দিকে তাকালাম। উনি এখনও আমার দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম উনার চাহনিতে। একটু পরেই উনার হাতটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে একটু পিছিয়ে গেলাম আমি। উনি ও এগিয়ে আসতে লাগলেন আমার দিকে।

পিছনে যেতে যেতে একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল আমার,আর পিছিয়ে যাওয়ার জন্য এতটুকু জায়গা বাকি নেই। নিজেকে এখন তামিল মুভির অসহায় হিরোইন মনে হচ্ছে আর স্যার কে ভিলেন! শুকনো একটা ঢোক গিলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।স্যার আর আমার মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব, পূর্ব স্যারের হাতটা আমার দিকে উঠে এলো।চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম আমি।

গালে হঠাৎ কোনো কিছুর স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি স্যার আমার মুখের উপর লেগে থাকা চুল সরিয়ে দিচ্ছেন। চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললেন,,,
‘ এরপর থেকে চুল ঠিক করে বেঁধে তারপর অফিসে আসবে। এভাবে চুল মুখের উপর লাগিয়ে রেখে হার্ট বিট বাড়ানোর মতো কাজ করবে না একদম। মনে থাকবে?'(পূর্ব)

বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। তখনই স্যারের ফোনে বিকট শব্দে রিংটোন বেজে উঠলো।স্যার বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। এরপর ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন,কি মানুষ ইনি।চুল মুখের উপর লেগে থাকলে কারো হার্ট বিট বাড়ে? আগে জানতাম না,,,,,,,,,,

‘ভাবীঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈ ‘
বিকালের দিকে বাসায় ফিরেছি। বাসার দরজায় পা রাখতেই কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডেকে উঠলো। এতো জোরে ডেকেছে হঠাৎ করে, চমকে উঠলাম প্রায়। ঘুরে তাকিয়ে দেখি একটা আমার বয়সী মেয়ে, উজ্জ্বল ফর্সা মুখটা খুশিতে ঝলমলে করছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এলো।হ্যান্ড শেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে।

‘ হ্যালো ভাবীঈঈঈ! আমি তোমার ছোট ফুপি শাশুড়ির একমাত্র মেয়ে কেয়া। সবাই আমাকে কেয়া ফুল বলেই ডাকে, তুমি কি বলে ডাকবে?'(কেয়া )
আমি প্রতুত্ত্যরে কিছু বলবো কেয়া কে তখন শাশুড়ি মা এলেন।কেয়ার কান মলে দিয়ে বললেন, “মেয়েটাকে আগে বাসায় ঢুকতে দে। একটু ফ্রেশ হয়ে নিক, তারপর নাহয় তোর কেয়া ফুলের গল্প শুনবে।”
‘ ওফফফফ,মামি। তুমি ও না,কানে লাগছে তো আমার,ছাড়ো না, উহহু!'(কেয়া)

‘ তাসনিয়া মা তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। তুই বললাম বলে কিছু মনে করলি না তো আবার?'(শাশুড়ি মা)
‘ না মা। তুমি মা, মেয়েকে তুই করে বলবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।'(আমি)
ওদের পাশ কাটিয়ে রুমে চলে এলাম। এতো বড় বাড়িতে হাঁটতে গিয়ে পা ব্যথা হয়ে যাবে যে কারোর, আমি নিশ্চিত। পূর্বের রুমের বাইরে এসে দাড়িয়ে পরলাম। রুমের বাইরে দেয়ালে ইয়া বড় একটা পেইন্টিং ঝুলছে। এটা এখানে কিভাবে এলো? আগে এক মুহুর্তের জন্য কখনও চোখে পড়ে নি তো!!!

( স্লিভ লেস!!!!!! হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি পাঠক মহল আপনাদের কাছে।রি চেইক করিনি ব্যস্ততার কারণে,তাই অটো টাইপিং এর জন্য এতো বড় ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হয়ে যাবে আমার সত্যিই ভাবিনি বিশ্বাস করুন। আপনাদের মন্তব্য গুলো পড়ে আমি জাস্ট কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। অনেক কষ্ট করে এই পর্ব টা লিখেছি।

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১০

আরো কোনো ভুল করে থাকলে কিভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানান, আমি চেয়ে নিবো। আমি স্লিভ লেস কোম্পানির কোন মালিক না যে শার্ট অর্ডার দেবেন আপনারা।ক্ষমা ক্ষমা ক্ষমা করে দেবেন নিজ দায়িত্বে.রেসপন্স করার কথা বলতে পারিনা আর, পড়বেন কি পড়বেন না এখন থেকে এটা সম্পূর্ণ আপনাদের অভিমত ?)

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১২