প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১০

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১০
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

‘পূর্ব?’
সকাল সাতটা বেজেছে কি বাজেনি। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে পূর্ব অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলো। আমি সারারাত খাটে হেলান দিয়ে বসে বসেই ঘুমিয়েছি, পূর্বের ডাকে ঘুম ভাঙল আমার। উনি আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছেন দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।কি এমন করেছি যে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে?

‘ স্যার,কি কিছু হয়েছে কি?’
‘ একটা ছেলে বাচ্চা আর একটা মেয়ে বাচ্চা হয়েছে আমাদের।আর কিছু শুনবে?’
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে।কি ফাজিল প্রো ম্যাক্স ইনি?বিয়েই হলো কালকে তা-ও আবার নাটকীয় ভাবে,আর উনি বলছেন আমাদের কিনা ছেলে আর মেয়ে বাচ্চা হয়েছে।গলা খাঁকারি দিয়ে কিছু বলতে যাবো তখনই রুমের দরজা খুলে গেল।প্রায় চিৎকার করে উঠলো কেউ একজন,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ পূর্ব?’
পূর্ব আমার থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেছে রাগে, ফোঁস ফোঁস করছে সাপের মত। অপ্রস্তুত হয়ে পূর্ব দূরে সরে গেল আমার থেকে। মেয়ে টা ধীর পায়ে রুমের ভিতরে এলো। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ের শাড়ীটা ঠিক করে নিলাম, বসে থাকার কারণে কুঁকড়ে গেছে কিছুটা। মেয়ে টা সোজা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি না পারছি পূর্ব স্যার কে কিছু জিজ্ঞেস করতে মেয়েটার বিষয়ে না পারছি নিজেই সহজ হয়ে যেতে।

‘ তোমার সাহস হলো কি করে আমার উডবির রুমে রাত কাটানোর?’
বলেই ঠা’স করে আমার গালে একটা চ’ড় বসিয়ে দিল মেয়েটা। আমি চ’ড় খেয়ে পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এমন অতর্কিত আ’ক্র’ম’ণে’র জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না ।কি বললো মেয়েটা আমি তার উডবির রুমে রাত কাটিয়েছি?

‘ আর ইউ কিডিং উইথ মি পূর্ব?সী ইজ ইউর ওয়াইফ?'(ফাইরুজ)
বেশ রেগে গিয়ে পূর্ব কে কথাটা বললো ফাইরুজ। রাগে শরীর কাঁপছে তার, কোনোরকমে নিজেকে সামাল দিচ্ছে। আমেরিকার বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আবির মাহমুদের একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ মাহমুদ। আমেরিকাতেই সেটেল্ড ওরা। পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস হ্যান্ডেল করছে ফাইরুজ।

আবির মাহমুদের কোনো ছেলে নেই, একমাত্র মেয়েই তার কাছে সবকিছু।তাই সবকিছুর দায়িত্ব মেয়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন নিশ্চিন্তে।মাস দুয়েক আগে পূর্বের বাবা আনোয়ার চৌধুরীর আর ফাইরুজের একটা বিজনেস ডিল হয়েছিল।যেখানে বলা হয়েছে যে ফাইরুজ আনোয়ার চৌধুরীর কোম্পানির শেয়ার পার্টনার হতে পারে যদি আনোয়ার চৌধুরী তার ছেলের সাথে ফাইরুজের বিয়ে দেয়। আনোয়ার চৌধুরী টাকার চিন্তায় মত্ত হয়ে বিনা বাক্য ব্যয়ে তার শর্তে রাজি হয়ে যায়। একবার ও পূর্বের মতামত জানতে চান নি, এমনকি পূর্ব এখনও জানে না যে ফাইরুজ ঠিক কি কারণে ওদের কোম্পানির সাথে কাজ করছে।

পূর্বের হাত ধরে ঝাঁকি দিলো ফাইরুজ। রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে এখন তার। এতো আশা নিয়ে দেশে এসেছে পূর্ব কে নিজের করে পাওয়ার জন্য, আর এসেই শুনলো পূর্ব নাকি কালকেই বিয়ে করেছে তা-ও আবার তার পি এ কে। কাঁদতে কাঁদতেই ওকে জিজ্ঞেস করল,,,

‘ প্লিজ টেল মি পূর্ব! রিয়েলি সী ইজ ইউর ওয়াইফ?'(ফাইরুজ)
‘ পূর্ব হাসি মুখে হ্যা বললো।যদিও সে ফাইরুজের এমন অদ্ভূত ব্যবহারে বেশ অবাক হয়েছে কিন্তু ওকে সেটা বুঝতে দিলো না।ফাইরুজের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। শার্টের হাতা ফোল্ড করা নেই তাই হাতা ফোল্ড করতে করতে ফাইরুজ কে বললো,,,,

‘ এতে এতো কান্না করার কি আছে মিস. ফাইরুজ? আমার বিয়েটা এমন হুট করেই হয়ে গেছে যে কাউকে ইনভাইট করতে পারিনি। তবে আপনি আমাদের কোম্পানির শেয়ার পার্টনার, আপনাকে রিসিপশনে অবশ্যই ইনভাইট করবো আমি। চলুন, অফিসে যাওয়া যাক।’

পূর্ব হেলেদুলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।ফাইরুজের এসিস্ট্যান্ট প্লাস বেস্ট ফ্রেন্ড সিয়া ওর পাশে এসে দাঁড়াল, ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,,, ‘ যেভাবেই হোক তুমি নিজের অধিকার কেড়ে নাও ফাইরুজ।ওর সাথে তোমার আগে থেকেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেখানে থার্ড ক্লাস একটা মেয়ে ওকে নিয়ে চলে যাবে আর তুমি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে। এটা কি কখনো হয় বলো?’

ফাইরুজ স্লিভলেস শার্টের হাতায় নিজের চোখ মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেল।সিয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি একটা হাসি দিল, এরপর ও ও বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেল পূর্বের পিছু পিছু।

আটটা বাজছে। আমি চুপচাপ বসে আছি বেডে। সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার। চ’ড় খেয়েছি মেয়েটার হাতে সেটা আমাকে ভাবাচ্ছে না। ভাবাচ্ছে কে ছিল মেয়েটি,আর পূর্ব কে ও তার উডবি বললো ই বা কেন?তবে কি স্যারের অন্য কারো সাথে আগে থেকেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন তাহলে?

ওফফফফ আর নিতে পারছি না আমি, দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। একটু পরেই দাদী আমার রুমে এলেন, উনার হাতে বাটি একটা। আমার পাশে এসে বসলেন তিনি, এরপর বাটি থেকে কি একটা নিয়ে মাথায় দিলেন আমার। সঙ্গে সঙ্গেই বেশ ঠান্ডা অনুভব করলাম মাথার মধ্যে, চোখ তুলে উনার দিকে তাকালাম।দাদী সৌজন্যমূলক হেসে বললেন,,,

‘ নাতবউ ভাবিস না,এটা বরফের টুকরা। একটু আগে তোর রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছি তুই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস। বুঝতে পেরেছি তোর মাথা ব্যথা করছে,তাই একটু বরফের টুকরা লাগিয়ে দিচ্ছি মাথায়।দেখিস ব্যথা কমে যাবে তাড়াতাড়ি।’

আমি কিছু বলতে পারলাম না দাদী কে, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি উনার ব্যবহারে। এতো যত্ন করছেন আমার? অথচ কাল যখন এলাম,জানি না স্যার দাদী কে কি বুঝিয়েছেন,তবে এটুকু বুঝতে পারছি যে স্যার আমার সম্পর্কে ভালো কিছুই বলেছেন হয়তো বা দাদী কে। চোখ নামিয়ে নিলাম উনার থেকে। তখন তাহমিমা এলো রুমে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
‘ আপু চল,আন্টি খেতে ডাকছে। তাছাড়া তোর অফিস আছে তো একটু পরেই।যতোই বরের অফিস হোক,ডিউটি ইজ ডিউটি।কি বলো দাদী?’

দাদীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো তাহমিমা। দাদী তাহমিমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলেন, সাথে তাহমিমা ও হাসতে শুরু করলো। আমি কিছু না বলে সোজা ওদের থেকে উঠে বাইরে আসলাম।আন্টি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছেন। আন্টির হাতে হাতে কাজ করে দিতে চাইলাম কিন্তু আন্টি করতে দিলেন না।

‘ তুমি এখন এই চৌধুরী পরিবারের নতুন সদস্য,বুঝলে? এখনি কোনো কাজে হাত দেওয়ার দরকার নেই তোমার । তুমি বরং খেতে বসো দেখি,মা আর তাহমিমা কোথায় গেল আবার?(শাশুড়ি মা)
‘আচ্ছা মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
একটা চেয়ার টেনে বসে বললাম। শাশুড়ি মা খাবার সাজানো বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
‘ হ্যা বলো?’

‘ আচ্ছা মা, এই বাড়িতে আর কেউ থাকেনা কি?এতো বড় বাড়িতে মাত্র কয়েকজন মানুষ কেন?’
একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম উনাকে। কালকে মরিয়ম মানা করেছিল ঠিকই কিন্তু আমি আমার কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলাম না। প্রশ্নটা করে শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকালাম আমি। উনার মুখের ভাবভঙ্গি মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেছে যেন, কিছুটা রাগি চোখে তাকালেন আমার দিকে,,,

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৯

‘ তোমার এইসব জেনে কি দরকার? যেরকম আছো সেরকমই থাকো,এসব জেনে কোনো কাজ নেই তোমার।বুঝলে?’
প্রায় ধ’ম’ক দিয়ে বললেন মা। আমি হালকা কেঁপে উঠলাম মায়ের ধ’ম’ক শুনে, হঠাৎ করে উনার এমন ব্যবহার হজম করতে কষ্ট হচ্ছে আমার,কি এমন করেছি আমি যে উনি এভাবে ধ’ম’ক দিলেন আমাকে,,,,,

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১১