প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৯

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৯
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

রাত এগারোটার দিকে খেতে ডাকলেন শাশুড়ি মা। এতক্ষণ ধরে আমি আর তাহমিমা গেস্ট রুমে বসে ছিলাম। তখন মরিয়মের বলা কথাগুলো বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল আমাকে।থাক কি হবে এতো চিন্তা করে, ওদের ইতিহাস ওরা বুঝবে আমার এতে কি?সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বসার রুমে এলাম তাহমিমা কে নিয়ে। আমাকে দেখে মহুয়া চৌধুরী ভ্রু কুচকালেন,,,

‘ কি ওই নাতবউ? এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কার মুখ দেখিস রে, বসে পড় আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো খাওয়ার জন্য?’
আমি আকাশ থেকে পড়লাম মহুয়া চৌধুরী ওরফে দাদীর কথা শুনে। এই মাত্র তো বাসায় ঢুকার সময় কি কান্ড টাই না করলেন তিনি আর এই কিছুক্ষণের মধ্যে কি এমন হলো যে আমাকে একেবারে নাতবউ বলে মেনে নিলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মনে মনে বেশ অবাক হলাম কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করলাম না। চুপচাপ চেয়ার টেনে বসলাম পূর্বের পাশে। আমার পাশে তাহমিমা ও বসলো। দুই বোনের দুই পাশে তূর্য আর পূর্ব, মনে হচ্ছে বর্ডার গার্ড ওরা।পূর্বের দিকে তাকালাম আমি, ও তখন আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো। সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নামিয়ে খাবার খেতে মনোযোগ দিতে লাগলাম, দাদী এতক্ষণ আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বোধহয়। পূর্বের ব্যাপারটা উনার নজরে এসে যায়, কটমট করে তাকিয়ে রইলেন তিনি। খাবার নাড়াচাড়া করছি শুধু কিন্তু কিছু খেতে পারছি না দেখে শাশুড়ি মা বললেন,,,

‘ কি হয়েছে রে মা,খাচ্ছিস না কেন?’
‘ না এমনিই,ক্ষিধে নেই আমার তাই আর কি,,,,,,,,’
‘ এই বাড়ির বউ হতে গেলে খাবার শেষ করে তারপর টেবিল থেকে উঠতে হবে, নতুবা না।'(দাদী)

নিচের দিকে তাকিয়ে আছি, এতো গুলো খাবার প্লেটে সাজিয়ে রাখা আছে। সারাদিনের সব ক্লান্তি এখন এসে ভর করেছে শরীরের মধ্যে, খাওয়ার এতো টুকু ও ইচ্ছে করছে না। জোর করে একরকম নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ই ভাত লোকমা পাকিয়ে মুখে তুলছিলাম তখন পূর্ব থামিয়ে দিল।

আমার সামনে থেকে প্লেট না টান দিয়ে নিয়ে নিল নিজের কাছে। উনার এমন আচরণে অবাক হয়ে গেলাম আমি,মানছি উনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা হয়েছে আমাদের তাই বলে খাবার নিয়ে উনি? অপমানে পানি চলে আসলো চোখে। শাশুড়ি মা সহ টেবিলে উপস্থিত শশুর বাবা, তূর্য,দাদী আর তাহমিমা সবাই বেশ অবাক হলো পূর্বের এমন ব্যবহারে। শশুর বাবা যিনি আমি এই বাড়িতে আসার পর একটা কথাও বলেন নি তিনি রেগে গিয়ে পূর্ব কে বললেন,,,

‘ এসব কি অসভ্যতামো হচ্ছে পূর্ব? তুমি বউমার প্লেট টা নিয়ে নিলে কেন, আমি কি তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি?আর ওকে তো তুমি নিজেই ভালোবেসে বিয়ে করেছো তাহলে এমন আচরণের কারণ টা কি তোমার?'(আনোয়ার চৌধুরী)
পূর্ব কিছু বললো না। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

এরপর চেয়ার টা আমার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আবার বসে পড়ল আমার ঠিক সামনেই। খাবারের প্লেট টা টেবিল থেকে হাতে তুলে নিয়ে নিজেই ভাত মেখে লোকমা পাকিয়ে আমার মুখের সামনে ধরল। আমি উনার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি শুধু, মুখে কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না আমি।

ভেবেছিলাম উনি হয়ত বা রেগে গিয়ে প্লেট টা নিয়ে নিয়েছেন কিন্তু এখন তো দেখছি উনি আমাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য,,,,,,,, চোখের পানি এতক্ষণ যাও বাঁধ মানছিল এরপর আর আটকাতে পারলাম না।আপনা থেকেই দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। তাহমিমা তূর্য কে আলতো করে একটা খোঁচা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,,, ‘ দেখেছো, আমার দুলাভাইয়ের কি প্রেম। খাবার টেবিলে ও ছাড়লো না।’

এইটুকু বলেই ফিক করে হেসে উঠলো তাহমিমা, সাথে তূর্য ও। পূর্ব আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে ইশারা করলেন খাবার টা মুখে নিতে। খাবার টা মুখে নিলাম। পূর্ব আবার খাবার মাখাতে মাখাতে বললো,,,
‘ আমি মুখে তুলে দেই খাবার টা,দেখিও খাওয়ার ইচ্ছা এমনিতেই করবে। হাজার হলেও বরের হাতে তুলে দেওয়া খাবার বলে কথা।তাই না বউ?’

বলেই আবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো পূর্ব। তূর্য আমাদের কান্ড কারখানা এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল কিন্তু পূর্বের শেষের কথা টা আর হা করে হজম করতে পারলো না।কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার, তাই খাবার ছেড়ে ওয়াশ রুমের দিকে দৌড় দিল। সাথে তাহমিমা ও হাসতে হাসতে উঠে চলে গেল,ওর খাওয়া ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে। শশুর বাবা কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন, সব কিছু না দেখে পূর্ব কে এভাবে বকা’বকি’র জন্য নিজের মনে নিজেই লজ্জিত হলেন বোধহয়।

সোফায় বসে বসে বই পড়ছিল পূর্ব এমন সময় আমাকে ঠেলে ধাক্কিয়ে রুমে নিয়ে এলো মরিয়ম আর তাহমিমা। এই দুটো আমাকে সেই তখন থেকে কি পেয়েছে কে জানে। রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা টা বন্ধ করে দিল, চেঁচিয়ে বললো এখন সারা রাত বন্দি থাকো তোমরা দুজনে,কাল সকালে দরজা খুলবে।

রুম থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় নেই আমাদের দুজনের কাছে।অগ্যতা বেডের এক পাশে বসে পড়লাম। পূর্ব আমার থেকে কয়েক ফুট দূরত্বে মাত্র। সারাদিন ধরে যেসব বিষয়ে কৌতুহল জমেছে পূর্বের প্রতি সেসব কৌতুহল এখন না মেটালেই নয়।স্যার আমার সাথে এতো ফ্রি, এতো সবকিছু কেন তা এখন আমাকে জানতেই হবে।

‘ স্যার আমি কিছু,,,,,’
আমার মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই পূর্ব স্যার বই থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন,,,

‘আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো। আমি তোমাকে এই মুহূর্তে কিছুই বলতে পারবো না স্নিগ্ধা।যখন সময় আসবে তখন তুমি নিজে থেকেই সব জানতে পারবে, সময়ের আগে কিছু জানার দরকার নেই তোমার।আর অনেক রাত হয়েছে এখন, ঘুমিয়ে পড়ো। সারাদিন অনেক প্রেশার পড়েছে তোমার উপর, এখন বিশ্রামের প্রয়োজন তোমার। টেনশন করো না আমি স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবো না।’

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৮

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে পূর্ব বেডের মাঝখানে কোল বালিশ দিয়ে এক পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি কিয়ৎক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম, এই মানুষ টাকে দেখেছি মাত্র কয়েক মূহুর্ত এতেই যতগুলো সারপ্রাইজ পেয়ে চলেছি আমি,,,,,,,,,,,

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১০