প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৫

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৫
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

তূর্যের বলা বাক্য গুলো গোচর হতেই বুকের ভেতর টা কেমন যেন চিনচিন করে উঠলো পূর্বের, নিঃশ্বাস নিতে কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভব করল। হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলো চুপচাপ, কোনো কথা বললো না। তূর্য ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, না জানি পূর্ব কেমন রিয়েকশন দেয় ওর প্রপোজাল শুনে। কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,,,

‘ দোস্ত, তুই কিছু মনে না করলে আমি আর তাহমিমা দু’জন মিলে তাসনিয়া কে বাঁচানোর একটা উপায় বের করেছি সেটা বলতে চাই। বলবো? শুনবি তুই?'(তূর্য )
‘ ব বল কি উপায় আছে তোর কাছে। আমি সেটাই একটু শুনি।'( তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল পূর্ব)
‘ না মানে বলছিলাম কি যে তুই আর আমি যদি এখন ওদের বাসায় যাই, গিয়ে ওর বিয়েটা যদি কোনোভাবেই আটকাতে পারি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এখানে ওকে ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে একটাই উপায় আছে আর সেটা হলো ওকে অন্য কেউ বিয়ে করা আর না হয় বউ পরিচয় দিয়ে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসা।আর দেখ আমি যদি এখন কিছু করতেও যাই তাহলে ও কিছু করতে পারবো না কারণ আমার তো ওর ছোট বোনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর এমন কেউ নেই যাকে বিশ্বাস করতে পারি।

তাই বলছিলাম যে তুই যদি আমার সাথে গিয়ে ওই ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে হওয়ার আগেই ওকে হয় নিজের বউ পরিচয়ে নিয়ে চলে আয় আর নাহলে ওকে বিয়ে করে অন্তত ওর সুন্দর জীবনটা বাঁচা। চাকরি টা দিয়ে ওকে একটা সুন্দর জীবন দিয়েছিলি তুই, এখন না হয় আরেকটু কর ওর জন্য।

তুই এই একটা ছোট্ট কাজ করলে, তোর ছোট্ট একটা সিদ্ধান্তে তাসনিয়ার জীবন টা সুন্দর হয়ে উঠবে, নষ্ট হবে না ওর জীবন টা। একটা নেশাগ্রস্ত লোককে ওকে বিয়ে করতে হবে না। পরে নাহয় তুই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিস, তাহলে তোকে আর কোনো সমস্যার মধ্যে পরতে হবে না।আর আমার যতোদূর মনে হয় তাসনিয়া তোর উপকারের কথা ভেবে ওও কোনো ঝামেলা করবে না এটা নিয়ে।’

(তূর্য)
তূর্যের কথা গুলো শুনে পূর্ব ওর দিকে রাগী চোখে তাকায়, দু’চোখ দিয়ে যেন আ’গু’ন ঝরছে তার। হাতের মুঠো পাকিয়ে শক্ত করে ধরে বেডের দিকে তাকিয়ে রইল। তূর্য ভয়ে বারবার ঢোক গিলতে লাগলো, এতোক্ষণ ধান্দায় পড়ে ওতো বড় কথা বলে ফেলেছে ও। এখন বুঝতে পারছে যে ভুল জায়গায় ভুল সময়ে ভুল প্রপোজাল দিয়ে ফেলেছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগল, ‘ এ যাত্রায় রক্ষা করো ইয়া আল্লাহ,আর কখনও এমন ভুল করবো না।’ ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে তূর্য, চোখ মুখ শুকিয়ে শেষ। কোনোরকমে সাহস সঞ্চয় করে আস্তে আস্তে ডাকলো পূর্ব কে,,,

‘ দোস্ত,ক্ষমা করে দে আমাকে।আ আর কখনও এমন হবে না।আমারই বোঝা উচিত ছিল যে এটা তোর দ্বারা সাজে না, কোথায় তুই আর কোথায় তাসনিয়া। আকাশ পাতাল পার্থক্য যেখানে সেখানে তো এই ড্রামা করাটা ও মানায় না।ক্ষ ক্ষমা করে দে প্লিজ!'(শুকনো গলায় বলল তূর্য)

তূর্যের কথা শুনে ভেজা চোখে ওর দিকে তাকালো পূর্ব। এতক্ষণ ধরে ও স্নিগ্ধার সাথে অন্য কারো বিয়ের দৃশ্য টা কল্পনা করছিল, তূর্যের ডাকে খেয়াল ভাঙে ওর। না এই মেয়েটাকে ছাড়া ওর চলবে না কোনোভাবেই। ‘হরিণীর মতো মায়াভরা চাহনিতে যেই মন হারিয়েছি আমি , সেই মন শুধু সেই চাহনিতেই শান্তি পাবে ‘ মনে মনে বললো পূর্ব। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে তূর্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,,

‘ চল,যেতে হবে। নাহলে দেরি হয়ে যাবে আমাদের,যদি ওর বিয়েটা হয়ে যায় ওই ছেলেটার সাথে তাহলে আমার,,,,,,,,,,,,,'(পূর্ব)
তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পূর্বের দিকে।এ কোন পূর্ব কে দেখছে ও? এতো সহজে নিজের জীবনের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত ও নিয়ে নিল একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে। পূর্ব কে দেখে আজ ও গর্ব বোধ করছে। এইরকম বন্ধু পেয়ে তূর্যের জীবন ধন্য হয়ে গেছে।

‘ দাঁড়া,এক মিনিট, আমি তাহমিমা কে কল করে আপডেট দেই।’ নিজের অবাক তা কাটিয়ে উঠে বলল তূর্য।প্যান্টের পকেট থেকে ফোন টা বের করে তাহমিমার নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং হতেই রিসিভ হলো কল,,,,
‘ হ্যালো তূর্য, কোথায় তুমি আর পূর্ব ভাইয়া?প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো না, ওদের নাকি আপুকে পছন্দ হয়ে গেছে। আপুর বিয়েটা আটকাও তূর্য প্লিজ……'(কান্না ভেজা গলায় বলল তাহমিমা)

‘ ডোন্ট ওয়ারি তাহমিমা, আমরা এই বের হচ্ছি বাসা থেকে।'(তূর্য)
কল কেটে দিল। এরপর পূর্ব আর তূর্য নিজের গাড়ি টা নিয়ে তাসনিয়া দের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

এদিকে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে মা। আমি মার্বেল পাথরের মুর্তির মতো চুপ করে বসে আশপাশের মানুষগুলোর নিষ্ঠুরতা দেখছি। আমাদের যত আত্মীয় স্বজন আছে সবাই একে একে চলে আসছে বাসায়, সবাই কে মা কল করে আসতে বলেছে। হাজার হলেও বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা?বাবাও খুব ব্যস্ত হয়ে আছে। এতো এতো মানুষের খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করছে চারদিকে ছুটাছুটি করে।

কিছুক্ষণ পর আমার রুমে কয়েকটা মেয়ে এলো, এরা সব ছেলের বাড়ির লোকজন। তাহমিমা ওদের রুম থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যেতে বললো কিন্তু ওরা বললো আমাকে নাকি বউ রূপে সাজাতে এসেছে। তাহমিমা কিছু বলতে যাবে আমি হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলাম। ‘সাজাক ওরা আমাকে, আমার কোনো আপত্তি নেই। তাছাড়া জীবনে একবারই তো বিয়ে, এখন সাজবো না তো কবে সাজবো?’

আমার এমন উত্তর শুনে তাহমিমা দাঁত মুখ খিচে চুপ করে বসে রইল। পুতুলের মত বসে আছি আর ওরা সাজাচ্ছে আমাকে। সবাই জানে যার সাথে আমার বিয়ে টা হচ্ছে সে আগেও আরো দুটো বিয়ে করেছে। বিয়ের বছর খানিক পরে তালাক দিয়ে দেয় আগের বউ দের।কে জানে, আমাকে বিয়ে করেও হয়তো বা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তালাক দিয়ে দিবে আর আমার গায়ে ট্যাগ লাগবে তালাক প্রাপ্ত মহিলার। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আমার। তখনই একটা মেয়ে বলে উঠলো,,

‘ ভাবী, এখন কেঁদে কে’টে সাগর ভাসি ও না প্লিজ। তোমাকে সাজানো হচ্ছে, তুমি কান্না করলে এখন সাজ খারাপ হয়ে যাবে।’
আমি চোখ মুছে একটা মলিন হাসি দিয়ে বললাম, ‘ বাবা মা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে তো, সেটা ভেবেই কান্না পেল।’ ঘন্টা খানেক পর আমার সাজ শেষ হয়। সাজানোর পর ওরা আরো কয়েকজনকে আমার সাজ দেখাবে বলে বাইরে ডাকতে চলে গেল।

আমি তাহমিমা কে দরজা টা বন্ধ করে দিতে বলে ধীরে ধীরে ড্রেসিন টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। টুকটুকে লাল রঙের সিল্কের শাড়ি পড়ানো হয়েছে আমাকে , চুলে সামনে পাকিয়ে পাকিয়ে ডিজাইন করে বিনুনি করে তাতে লাল ক্লিপ। মুখে হালকা মেকআপ করে দিয়েছে, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল টুকটুকে লিপস্টিক।

নিজের মুখের দিকে নিজেই তাকিয়ে রইলাম, এই মুখটা আমি চিনতে পারছি না। মায়ের মতো চেহারা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু মায়ের মতো ভাগ্য আমার হয়নি।
‘ আপু, কি ভাবছিস?'( আমাকে হালকা করে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো তাহমিমা)

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৪

‘ ন না কিছু না। ভাগ্য নিয়ে ভাবছিলাম রে। এতো সুন্দর ভাগ্য নিয়ে কেউ পৃথিবীতে আসে বল?'(আমি)
তাহমিমা আমাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই বাইরে থেকে আওয়াজ শোনা গেল ‘ মেয়ে নিয়ে আসেন, এখন বিয়ে পড়ানো শুরু হবে ‘

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ৬