প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১১

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১১
তানজিলা খাতুন তানু

আদৃত কফির মগটা তুলে এক চুমুক দেবার পর মুখ থেকে নিজে থেকেই বেড়িয়ে এলো..
– নাইস।
নিজের কান্ড দেখে আদৃত নিজেই অবাক হলো। নিত্য দিনের খাওয়া ব্ল্যাক কফি খেয়ে নাইস বলছে ওহ, ভূতে ধরেছে নাকি।
– আমি কি করছি এইসব!

ঘটনা এইখানেই শেষ নয়। দিনে দিনে অতসী আদৃতের পরিবারের সাথে মিশে যেতে থাকল। আদৃত অতসীর কথা‌তেই বাড়িতে একটা সার্ভেন্ট রাখে, ছেলের কাজে আদৃতের মা আপত্তি করলেও পরে কিছু বলেননি। সত্যিই হাঁটুর ব্যথা নিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয় খুব।
রাতে খাবার টেবিলে হঠাৎ করেই আদৃতের মা কথা তুললেন…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– অতসী মেয়েটা বড্ড লক্ষী। আমাদের আরুকেও বড্ড বেশি ভালোবাসে।
– মা শুধু তাই নয়। ডিপার্মেন্টে ফার্স্ট হয়েছে, অথচ মেয়েটা কোথাও টিউশনি পড়ে না। খুব মেধাবী ছাত্রী। আর স্বভাবও খুব ভালো।
মিতুর কথা শুনে আদৃতের মা হাসলেও আদৃতের মনে প্রশ্নের উদয় হলো…
– বোন, তুই কি ওনাকে আগে থেকে চিনতি?
– নারে দাভাই। ওর আর আমার ডির্পামেন্ট তো আলাদা। আরুর সূত্রেই ওর সাথে পরিচয়, তখনি জানতে পারি ও আমাদের কলেজেই পড়াশোনা করে।
– ওহ্।

মিতু আদৃতের থেকে সত্যিটা আড়াল‌ করে গেল। চাইলেই সবকিছু সত্যি বলতে পারত, কিন্তু বললো না। এর পেছনে কি কারন লুকিয়ে আছে?
ক্লাবে বসে একের পর এক ম*দ খেয়ে চলেছে মিহান। বাড়িতে বলে এসেছে, বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করবে আজকে। অথচ ক্লাবে বসে একের পর এক ম*দ খেয়ে চলেছে, টাকা উড়িয়ে যাচ্ছে।
মিহানের বন্ধু জিৎ বলল…

– কিরে ভাই আজকে এত খাচ্ছিস কেন?
– বুকের ভেতরে না খুব জ্বালা করছে।
– কিন্তু কেন?
– ওই অতসী।
– কেন রে ওই ভিখারী কে আবার ভালোবেসে ফেললি নাকি?
সুমন কথাটা বলে হেসে উঠল। মিহান সুমনের শার্টের কলারটা ধরে বলল…

– খবরদার ওকে কেউ ভিখারী বলবি না। সি আজ মাই কুইন। অতসী মিহানের রানি বুঝেছিস তোরা।
জিৎ আর সুমন হতভম্ব হয়ে যায় মিহানের কথা শুনে। জিৎ ওর দিকে তাকিয়ে বলল…
– কি বলছিস এইসব তুই মিহান। তুই তাহলে সত্যি অতসী কে ভালোবাসিস।
– ইয়েস আই লাভ অতসী। আমি অতসী কে খুব খুব ভালোবাসি। জানিস যেইদিন প্রথম ওকে দেখেছিলাম সেইদিনই ওকে ভালোবেসে ফেলি।

– তাহলে কেন ব্রেকাপ করলি ওর সাথে। কেন জিনিয়ার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লি তুই। ( সুমন)
– স্বার্থ। সবকিছুর পেছনে অনেক বড়ো স্বার্থ লুকিয়ে আছে, অনেক বড়ো স্বার্থ। একবার মিটে গেলেই আমি আমার অতসীকে নিজের করে নেব,নিজের করে নেব।
পাগলের প্রলাপ বকতে বকতে মিহান অচেতন হয়ে যায়। সবগুলো কথাই ছিল অতসী কে ঘিরে। জিৎ আর সুমন একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে।
– আগে চল ফিরে যায়। তারপর কথা বলছি।

জিৎ এর কথার‌ সাথে সুমন সহমত হলে দুজনে মিহান কে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। জিৎ আর সুমন মিহানের ছোটবেলার বন্ধু, অনেক ছোটবেলা থেকেই চেনে ওকে। মিহান আগে খুব ভালো‌ছিল, কিন্তু বড়ো হবার সাথে সাথে হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
জিৎ আর সুমন মিহানকে নিয়ে সুমনের বাড়িতে নিয়ে গেল। সুমনের বাড়িতে কেউ নেয়, ওর বাবা মা দাদুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। ওরা মিহান কে বিছানায় শুইয়ে দিল।
– জিৎ কি হচ্ছে বল তো‌। আজকে মিহান কিসব বলল।
– আমিও তো বুঝতে পারছি না। তবে মাতাল অবস্থায় কোনো মানুষ মিথ্যা বলে না, তাহলে কি সত্যিই মিহান অতসী কে ভালোবাসে?

– বুঝতে পারছি না কিছু। যদি সত্যিই ভালোবাসে তাহলে অতসীর সাথে ব্রেকআপ করে জিনিয়ার সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পড়ল কেন?
– আমার ভয় লাগছে খুব সুমন। অতসীর জীবনের জন্য আমার খুব ভয় লাগছে, মেয়েটাকে আবার কি সমস্যায় পড়তে হয় কে জানে?
– হুমম।

জিৎ আর সুমন অতসীর জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ল।
অতসী আরুকে পড়াচ্ছে,তখনি মিতু উঁকি দিয়ে বলল…
– অতসী। যাবার আগে একবার আমার রুমে আসবে প্লিজ।
– আচ্ছা।
মিতু খুশি হয়ে চলে গেল। অতসী আরুকে পড়াতে লাগল। আদৃত মিতুর ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখনি দেখল মিতু অনেকগুলো শাড়ি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।

– কি রে কি করছিস এতগুলো শাড়ি নিয়ে।
– আরে দাভাই। আমাকে একটা শাড়ি পছন্দ করে দে না।
– কেন?
– আমি পারছি না। প্লিজ..
আদৃত মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে কয়েকটা শাড়ির মধ্যে থেকে একটা শাড়ি বেছে দিয়ে বলল.
– এই নে।
মিতু খুশি হয়ে শাড়িটা নিয়ে বলল…

– সত্যি তোর পছন্দের কোনো তুলনা হয় না। এইটা অতসী কে খুব মানাবে, থ্যাঙ্কু।
আদৃতের ভ্রু কুঁচকে গেল।
– অতসী কে মানাবে মানে?
– আরে দাভাই কালকে আমাদের কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান আছে। তাই ওকে একটা শাড়ি গিফট করবো।
– কিন্তু কেন, আর ওই বা তোর থেকে কেন নেবে বল তো?
– তোর কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
– বাদ দে। অতসী কে কেন শাড়ি দিতে চাইছিস।
– আসলে দাভাই, আমি অতসীর ব্যাপারে যেটুকু জানি তাতে আলাদা করে কিছু কিনতে যাওয়াটা ওর পক্ষে অসম্ভব। তাই ভাবছিলাম একটু…

– ওকে।
আদৃত ঘরের বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর, অতসী মিতুর দরজায় টোকা মারল।
– আসবো।
– হ্যাঁ আসো।
অতসী ভেতরে ঢুকে বিছানায় ছড়িয়ে থাকা শাড়িগুলোর দিকে একনজর তাকিয়ে বলল…
– কিছু দরকার।
– হ্যাঁ। আসলে কালকে তো নবীনবরণ অনুষ্ঠান, কি পড়বে তুমি?
– যাবার কোনো প্ল্যান নেয়। তুমি যাবে তো।
– হুমম। একটা শাড়ি পছন্দ করে দাও না প্লিজ।
অতসী একটা শাড়ি পছন্দ করে দিল।

– থ্যাঙ্কু।
– ওয়েলকাম।
– একটা কথা বলবো।
– বলো।
মিতু আদৃতের দেওয়া শাড়িটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল…
– কালকে এই শাড়িটা পড়বে প্লিজ।
– মাফ করো মিতু। আমি নিতে পারব না।
– প্লিজ।

মিতু অনেকবার অতসীকে রিকুয়েস্ট করল, শেষে বাধ্য হয়েই অতসী শাড়িটা নিতে রাজি হলো। তবে একটা শর্ত দিল…
– আমি তোমার এই শাড়িটা নিচ্ছি ঠিকই, তবে ফেরত নিতে হবে কিন্তু।
– আচ্ছা।
অতসী মিতুর দেওয়া শাড়িটা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
পরেরদিন…
কলেজটা নানান সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। নতুন রুপে সেজে উঠেছে। সকলেই নানা রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে সেজে উঠেছে। মিতু অতসীর পছন্দ করে দেওয়া শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে সাজল।

– মনি।
– বলো মামনি।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। আমার আন্টিও এইরকম সাজবে তাই না।
– হুম গো।
– আমি আন্টিকে দেখব মনি।
– আচ্ছা। আমি দাভাইকে বলব, তোমাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমাকে এখুনি চলে যেতে হবে, আমি গেলাম
– আচ্ছা।

মিতু চলে‌ যাবার পর থেকেই আরু আদৃতের কাছে বায়না করতে থাকল। আরুর বায়নার কাছে হার মেনে আদৃত যেতে রাজি হলো, তবে মনের মাঝে কোথাও একটা কাউকে একজনকে দেখতে চাওয়ার সুপ্ত বাসনা ছিল।
অন্যদিকে…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১০

অতসী মিতুর দেওয়া শাড়িটা পড়ে, চুলগুলোকে খোঁপা করে চোখে হালকা করে কাজল আর পিংক কালারের লিপষ্টিক পড়ে নিল। আয়নায় একপলক নিজেকে দেখে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
মিহান কলেজে যাওয়া থেকেই বারবার গেটের দিকে দেখছে, কখন অতসী আসবে সেই অপেক্ষায় আছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১২