প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১২

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১২
তানজিলা খাতুন তানু

মিহানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অতসী কলেজের গেট দিয়ে প্রবেশ করল। অতসী কে এই প্রথম শাড়িতে দেখল মিহান, নিজে মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসলো…
– বিউটিফুল।
মিহান অতসীর দিকে এগিয়ে আসতে যাচ্ছিল,তখনি জিনিয়া ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
– কেমন লাগছে আমাকে।

মিহান জিনিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে দেখল, শাড়িতে ওকেও খুব সুন্দর লাগছে। তবে অতসীর থেকে সুন্দর না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– সুন্দর।
– শুধু সুন্দর! চলো দুজনে একটা সেলফি তুলি।
মিহান জিনিয়ার কাজে বিরক্ত হলো। সামনে তাকিয়ে অতসী কে দেখতে না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, জিনিয়ার কথাতে রাজি হয়ে গেল। অতসী স্টেজের কাছে যেতে মিতুর সাথে দেখা হয়ে গেল।
– অতসী। তোমাকে না কি সুন্দর লাগছে, আমি ছেলে হলে আজকেই তোমাকে তুলে নিয়ে চলে যেতাম।
– তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে।
– হুমম, পেত্মীর আবার সুন্দর।
মিতুর কথাতে অতসী হেসে উঠল। অতসীর মুখের মিষ্টি হাসিটার দিকে মিতু একনজরে তাকিয়ে থাকল।

– কি দেখছ?
– তোমার হাসিটা তোমার মতোই মিষ্টি।
– তাই।
– হুমম।
অতসী আর মিতুকে হাসি,গল্প সবটাই খেয়াল করছিল জিনিয়া। মিহান একটা ছবি তোলার পরেই নিজের বন্ধুদের কাছে চলে যায়,ফলে জিনিয়া একা হয়ে যায়। স্টেজের দিকটাই যেতেই দেখল অতসী আর একটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, আবার মাঝে মধ্যে হাসছে ওহ। দূর থেকে অতসী কে ভালো করে লক্ষ্য করতে থাকে জিনিয়া।
মিতুর কিছু দরকার পড়াতে ওহ একটু চলে যায়। অতসী একাই দাঁড়িয়ে থাকে, তখনি এন্ট্রি নেয় আমাদের শাহানা।

– কিরে ভিখারীনি, এত দামী শাড়ি কোথা থেকে পেলি তুই। তোর কাছে তো একটা ৫০০ টাকা দামী শাড়ি কেনার ওহ পয়সা নেয়।
শাহানার কথাতে বিরক্ত হয় অতসী। মেয়েটা একটু সুযোগ পেলেই ওর সাথে ঝামেলা করতে শুরু করে দেয়।
– আজকে অনুষ্ঠানের দিন আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ কোনো সিনক্রিয়েট করো না।
– তোর ভালো লাগা, খারাপ লাগাতে তো কিছুই যায় আসে না। তোর জন্য আমাকে সেইদিন অনেকগুলো কথা শুনতে আমি তোকে কিছুতেই ছে*ড়ে দেব না।

– এই তুমি কি চাও বলো তো?
– তোমার স*র্ব*নাশ।
শাহানার কথা শুনে অতসী ওর দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা কেন যে অতসী কে নিজের চরম শ*ত্রু মনে করে কে জানে।
কলেজের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। সকলেই খুব আনন্দ করছে, অতসী দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে। ইশ্ সকলে কত আনন্দ করছে, কিন্তু অতসী কোন একটা কারনে করতে পারছে না।
অতসী আনমনা হয়ে কিসব ভেবে চলেছে তখনি ওর হাতে টান পড়ল।

– আন্টি।
অতসী আরোহীর গলা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল, আরু দাঁড়িয়ে আছে। অতসীর মুখে আনমনেই হাসি ফুটে উঠল, নিচু হয়ে বসে আরুকে জিজ্ঞেস করল…
– আরে মিষ্টিবুড়ি তুমি।
– হুমম। আন্টি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। একেবারে মা মা।
অতসী চমকে উঠল। আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হলো, আরুর গালে চুমু দিয়ে বলল…

– তাই।
– হুমম।
– তা তুমি এইখানে,কার সাথে এসেছ।
– বাপি এসেছে আমার সাথে। ওই তো…

অতসী আরুর ইশারা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখল, আদৃত দাঁড়িয়ে আছে ওদের দিকে তাকিয়ে। অতসী আদৃতের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে নিল। আদৃত আরোহীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে কথা বলতে লাগল ওর সাথে।
আদৃত দূর থেকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন ওদের দেখল।
তারপরে একটু এগিয়ে এসে বলল…

– শুনুন একটু।
– হ্যাঁ বলুন।
– আমার একটু কাজ পড়ে গেছে। আমাকে একটু বের হতে হবে, আপনার কাছে মিষ্টি একটু থাকলে কি আপনার সমস্যা হবে!
– আরে না। আপনি যান, মিষ্টি থাকলে আমার ভালোই লাগবে।
– আচ্ছা আসছি।

অতসীর কাছে আরুকে রেখে আদৃত চলে গেল। অতসী আরুর সাথে কথা বলতে লাগল। শাহানা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই লক্ষ্য করছিল, মেয়েটা কে সেটা জানতে বড্ড আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এগিয়ে গেল। আরুর পাশে বসে বলল…

– হাই পিচ্চি।
– হ্যালো।
– তোমার নাম কি পিচ্চি।
– আরোহী।
– খুব সুন্দর নাম। আচ্ছা তোমার বাড়িতে কে কে আছে।
– আমি মনি, বাপি আর দিদুন।
– ওহ। অতসী তোমার কে হয়।
– অতসী আন্টি তো আমার খুব ভালো আন্টি‌, আর আমাকে টিউশন ওহ পড়ায়।
– ওহ্।

অতসী শাহানা আর আরুর কথাবার্তায় কিছু বলল না। চুপচাপ শুনতে লাগল ওদের কথা। শাহানা ওকে অপছন্দ করলেও বাচ্চাদের তো ভালোবাসতেও‌ পারে।
ওদের কথাবার্তার মাঝে মিতু ওইখানে আসে।
– অতসী।
মিতুর কন্ঠস্বর শুনে তিনজনে ওর দিকে তাকাল। আরু দৌড়ে গিয়ে মিতুকে জড়িয়ে ধরল।

– মনি।
– আরে আরু সোনা তুমি কখন আসলে।
– একটু আগে।
– ওহ।
– মামনি দাদাভাই কোথায় গেল?
মনির প্রশ্ন শুনে অতসী নিজে থেকেই বলল…
– উনি একটু দরকারি কাজে বেড়িয়ে গেছেন। তাই আমার কাছে মিষ্টিকে রেখে গেছেন।
– ওহ্।

ওদের কথাবার্তা শুনে শাহানার ভ্রু কুঁচকে গেল। সবটাই কেমন জানো গন্ডগোল‌ লাগছে ওর কাছে। শাহানা সিদ্ধান্ত নিল, বিষয়টা আরো একটু খতিয়ে দেখবে।
আদৃত ফিরে এসে অতসীর‌ পাশে দাঁড়াল। অতসী পেছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, আদৃত ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি চলে এসেছেন।
– হুমম।

আদৃতকে আর কিছু বলতে না দেখে অতসী চুপ করে গেল। অতসী সামনের দিকে তাকিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আদৃত মৃদু স্বরে বলল…
– শাড়ি আর খোলা চুল বাঙালী মেয়েদের অন্যতম সাজ।
অতসী চমকে উঠল। আদৃতের দিকে তাকিয়ে দেখল আদৃত মুচকি হাসছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না, আদৃত ওকেই উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেছে। অতসী কিছু না বলে, চুপ করে রইল। আদৃত আবারো বলল…

– মেয়েদের কিন্তু কোনো অধিকার নেয়, তাদের শরীর দেখিয়ে ছেলেদের আকৃষ্ট করার।
– মানে?
– ব্লাউজটা…
আর‌ কিছু বলল না আদৃত। অতসী কিছু না ভেবে নিজের চুলটা খুলে দিল। নিজের ঘন কেশ গোটা পিঠ ছড়িয়ে কোমড় ছাড়িয়ে গেল।
– অসাধারণ।
আদৃত অতসীর চুলের প্রতি মুগ্ধ হলো। অতসী আদৃতের দিকে তাকিয়ে বলল…

– কি বলছেন এইসব আপনি।
– কিছু না। মিতু..
– আরে দাদাভাই তুমি ফিরে এসেছ।
– হুম বাড়ি যাবি।
– হুম।
– আচ্ছা চল।
আদৃত আরু আর মিতুকে নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর, অতসীও বেড়িয়ে যায়। শাহানা জিনিয়ার কাছে যায়।
– জিনিয়া।
– কি বলো।
– একটা কথা জানার ছিল বলব।

– বলো।
– অতসীর ব্যাপারে আমার কিছু তথ্য লাগবে।
– কিন্তু কেন?
– পড়ে বলব। প্লিজ‌ বলো।
– অতসীর‌ কে*উ নেয়, ওহ একাই একটা বাড়িতে ভাড়া থাকে। টিউশনি পড়িয়ে চালায়। এইটুকুই জানি ওর বিষয়ে আমি।
– আর কিছু জানো না।
– না।
শাহানা হতাশ হলো।

– ওই বাচ্চাটার সাথে অতসীর বিষয়টা কিরকম একটা যেন লাগছে। মিতুর বিষয়ে খোঁজ নিলেই কিছু একটা জানতে পারব।
শাহানা মিতুর বিষয়ে কিছু তথ্য কালেক্ট করার চেষ্টা করল। বেশি কিছু জানতে না পারলেও মোটামুটি কিছু তথ্য জানতে পারল।
শাহানার বান্ধবী তিস্তা বলল…
– শাহানা তুই হঠাৎ করে মিতুর বিষয়ে এতকিছু জানতে চাইছিস কেন?
– দরকার আছে খুব।
– কি দরকার।
– পড়ে জানতে পারবি সব।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১১

তিস্তার ভ্রু কুঁচকে গেল। শাহানা বাঁকা হেসে চলে গেল। তিস্তা নিজের মনে বিরবির করে বলল…
– শাহানা আবার কি করতে চলেছে। আবার কি ঝড় তুলবে কে জানে?
পরেরদিন সকালটা, একটু অন্যভাবেই শুরু হলো। অতসী কলেজে গিয়ে দেখল সকলে কিরকম একটা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অতসী ক্লাসে রুমে ঢুকতেই জিনিয়া বলে উঠল…
– ছিঃ অতসী। তোর এত লো*ভ, শেষে‌ তুই কিনা…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৩