প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৩

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৩
তানজিলা খাতুন তানু

– ছিঃ অতসী। তোর এত লো*ভ।
জিনিয়ার এইরকম কথা শুনে অতসীর মেজাজ গরম হয়ে গেল। তবুও নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বলল…
– কি বলতে চাইছিস তুই।
– হ্যাঁ ঠিক বলছি। তোর এত লোভ। এখনো তুই মিহানের পেছনে পড়ে আছিস, তুই কি আমাদের সুখে থাকতে দিবি না।
– সুখে।
তাচ্ছিল্যের হাসল অতসী। তারপর জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে‌ বলে উঠল…

– আমি কারোর সুখে ভাগ বসায়নি জিনি। প্রতা*রনা তোরা করেছিস, তুই আর মিহান। তোর মিহান কে জিজ্ঞেস করবি, কে আমার পেছনে পড়ে ছিল। আমি নিজে থেকে মিহানের জীবনে আসিনি, মিহান ভালোবাসার জন্য আকুতি মিনতি করেছিল, পায়ে পর্যন্ত ধরতে গিয়েছিল। ক্ষনিক ওর মায়াতে পড়ে গিয়েছিলাম, রিলেশনে জড়িয়ে গিয়েছিলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমার ভাগ্য ভালো মিহানের মতো ছেলেকে মন থেকে ভালোবাসিনি, নয় তো কেঁদে কেঁদে জীবন শেষ হয়ে যেত। এইসব কথা বাদ দে, তখন কি যেন বললি আমার লোভী! জিনি তুই এতদিন আমার সাথে ছিলিস কিন্তু এখনো আমাকে চিনতে পারলি না। আমার যদি অর্থের লোভ থাকত না, তাহলে আজকে আমার জীবনে এইদিনটা আসত না, তোদের কারোর সাহস হতো না আমাকে অপমান করার। অর্থের লোভ নেয় বলেই তোরা সাহস পাচ্ছিস আমার সাথে এইভাবে কথা বলার।

– মানে!
– সবকিছুর মানে জানতে নেয়। কিছু কথা অজানাই থাকুক। আর একটা কথা, যে জিনিস আমি একবার ছেড়ে দিই সেটা কখনোই দ্বিতীয় বার নিজের জীবনে ফেরায় না। চিন্তা করিস না,তোর মিহান কে আমি তোর থেকে কেড়ে নেব না। আরে তুই যদি প্রথমেই বলে দিতি তাহলে আমি না মিহানের লাইফ থেকে অনেক দূ*রে চলে যেতাম। কিন্তু তোরা আমার সাথে প্রতারনা করলি,আমার বিশ্বাসকে নিয়ে খেলা করলি। আর তার ক্ষমা নেয়, আমি সব সহ্য করতে পারি, কিন্তু প্রতা*রকদের নয়।

জিনিয়া অতসীর কথাগুলো চুপ করে শুনতে থাকল। বরাবরই একটু চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে জিনিয়া, কিন্তু রাগ উঠলে কি করে নিজেই জানে না। আজকে শাহানার মুখে মিহান আর অতসীর নামে কিছু কথা শুনে সহ্য করতে পারিনি, অতসীকে রাগের চোটে দুকথা শুনিয়ে দিয়েছে। এখন নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে।
– জিনি আমি তোর খারাপ চাই না। আমি জানি তুই সত্যি মিহান কে খুব ভালোবাসিস। তাই তোকে একটা কথা বলতে চাই, হয়তো তুই বিশ্বাস করবি না,তবে একটু খোঁজ নিলেই সবটা জানতে পারবি।

– কি কথা।
– সকলের চোখের সামনে থাকা মিহান আর ভেতরে মিহান টা সম্পূর্ণ আলাদা। মিহানের অনেক খারাপ অভ্যাস আছে, যদি পারিস মানুষটাকে ভালো করে তুলিস। ভালো থাকিস।
অতসী কথাটা বলে কিছুটা চলে যেতে গিয়েও পিছিয়ে এসে জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরল। জিনিয়া হতভম্ব হয়ে গেছে অতসীর এই কাজে।
অতসী জিনিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলল…

– সরি রে। ভালো থাকিস।
জিনিয়া খেয়াল করল, অতসীর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। জিনিয়ার মনের মাঝে প্রশ্নের উদয় হলো…
– কি হয়েছে অতসীর। ওকে এইরকম লাগছিল কেন?
শাহানা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিল। ও ইচ্ছা করেই জিনিয়াকে অতসীর বিরুদ্ধে উ*স্কে দিয়েছিল, যাতে ওদের ঝামেলা হয়। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না,উল্টে অতসী জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরল কেন! সেটাও বুঝল না। এগিয়ে এসে জিনিয়াকে জিজ্ঞেস করল..

– অতসী তোমাকে জড়িয়ে ধরল কেন?
জিনিয়া শাহানার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর কিছু একটা ভেবে বলল,
– তেমন কিছুই না। আর একটা কথা, আমার আর অতসীর মাঝে নতুন করে কিছু ঝামেলার সৃষ্টি করতে এসো না। আর অতসীর ক্ষ*তি করার চেষ্টাও করো না, করলে কিন্তু আমি তোমাকে ছে*ড়ে দেব না।
জিনিয়া কথাগুলো বলে চলে যায়। শাহানা তব্ধা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কি হলো কিছুই বুঝল না।
ওইদিকে…
অতসী ক্লাসরুমে না গিয়ে সোজা প্রিন্সিপ্যালের রুমে গেল।

– মে আই কাম ইন স্যার।
অতসী কে দেখে প্রিন্সিপ্যাল স্যার খুশি হয়ে যায়। ভেতরে আসতে বলে।
– কেমন আছো অতসী।
– ভালো আছি আপনি।
– ভালোই। কি খবর, তুমি এইখানে। কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি‌।
– না স্যার। একটা হেল্প লাগবে আমার।
– কি হেল্প?

– আসলে স্যার আমি অন্য কলেজে ট্রান্সপার হতে চাইছি।
অতসীর এইরকম সিদ্ধান্তে প্রিন্সিপ্যাল স্যার খুব অবাক হলেন।
– এনি প্রবলেম। কোনো প্রবলেম থাকলে বলতে পারো। আমি সমাধান করতে চেষ্টা করব।
– কোনো সমস্যা নয় স্যার। প্লিজ একটু হেল্প করুন।
প্রিন্সিপাল স্যার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

– কিন্তু অতসী সেটা যে পসিবল নয়। তুমি অলরেডি এডমিশন হয়ে গেছ, আর সব কলেজের এডমিশন ওহ মোটামুটি সব কমপ্লিট হয়ে গেছে। এখন অন্য কোনো কলেজে তো তুমি যেতে পারবে না।
অতসীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবুও স্যারের কাছে রিকুয়েস্ট করে আসে, যদি সম্ভব হয় উনি যেন অতসী কে বলেন।
অতসীর ক্লাস করার মতো মানসিকতা নেয়, তাই বেড়িয়ে পড়ল কলেজ থেকে। আনমনা হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে, কোনো কিছুই কানে আসছে না।

নিজের জীবনটাকে বি*ষা*ক্ত মনে হচ্ছে খুব। ভাবনায় ডুবে আছে, তখনি অনেকগুলো মানুষের চিৎকার শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখল, একটা ট্রাক তুমুল বেগে এগিয়ে আসছে। অতসী নিজের জীবনের মায়া ছেড়ে দিলো, চোখ বন্ধ করে উপর ওয়ালাকে স্মরন করতে লাগল। তখনি একটা হাত অতসী কে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অতসী মিটমিট করে সামনে তাকাল, পুরানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যেতে লাগল। চোখের সামনে স্মৃতিগুলো ভেসে উঠল, অতসী আর কিছু ভাবতে পারল না জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
অতসীর যখন জ্ঞান ফিরল, তখনি হসপিটাল বেডে নিজেকে দেখল। হাতে স্যালাইন চলছে,অতসী ওঠার চেষ্টা করল। তখনি নার্স এসে ওকে উঠতে বারন করল…

– আরে আপনি উঠছেন কেন?
– আমি এইভাবে কিভাবে আসলাম। আর এইখানে আমাকে কে আনলো।
– আমি..
চেনা কারোর কন্ঠস্বর শুনে অতসী সামনে তাকালো।
আদৃত দাঁড়িয়ে আছে, পরনে শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
– আপনি।
– হুম। নার্স ওনার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন। আমি ওনাকে নিয়ে যেতে চাই।
– ওকে।
নার্স বেড়িয়ে যায়। অতসী আদৃতকে কিছু প্রশ্ন করার আগেই আদৃত বলল…

– প্রশ্ন করার অনেক সুযোগ পাবেন। এখন চুপ করে থাকুন, আগে ঠিক করে সুস্থ হয়ে নিন,তারপরে সব প্রশ্নের উত্তর দেব ওকে।
আদৃত বেড়িয়ে যায়। রাস্তায় একটা ট্রাক তারপরে আর কিছুই মনে পড়ল না অতসীর। অতসী চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলল…
– কি হত, যদি সবকিছু মু*ক্তি দিয়ে চলে যেতাম।
মুক্তি বললেই মু*ক্তি মেলে না।জীবনে প্রতিটা ক্ষন, প্রতিটা সময়েই লড়াই করে বাঁ*চতে হয়।
আদৃত অতসীকে হসপিটাল থেকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। অতসী এতটাই নিজের ভাবনাই ব্যস্ত ছিল, যে কোথায় যাচ্ছে সেইদিকে খেয়াল করেনি।

– চলে এসেছি। নেমে পড়ুন।
অতসী বাইরে তাকিয়ে দেখল আদৃত ওকে ওদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
– এইখানে আনলেন কেন?
– থাকবেন বলে।
– কি?
– এত প্রশ্ন করা আমার পছন্দ নয়। চুপচাপ ভেতরে চলুন, নাহলে জোড় করতে বাধ্য হব।
অতসী কি করবে ভেবে পেল না। এখন জোড়াজুড়ি কিংবা তর্ক করার মতো ইচ্ছাশক্তি নেয় তাই আদৃতের কথা মেনে ভেতরে প্রবেশ করল। আদৃতের সাথে অতসী কে দেখে মিতু আর ওর মা একটু অবাক হলো।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১২

– অতসী তুমি এখন। (মিতু)
– আজকে থেকে অতসী এইখানেই থাকবে।
আদৃতের কথা শুনে সকলেই চমকে উঠে ওর দিকে তাকাল।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৪