প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৪

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৪
তানজিলা খাতুন তানু

– আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
অতসীর শান্ত কন্ঠে বলা কথাটা শুনে আদৃত চমকে উঠল।
– কি বলছো তুমি এইসব।
– আমি ঠিকই বলছি, প্লিজ।
আদৃত কি করবে সেটা বুঝতে পারল না। চুপ করে থাকল।

– আপনি ভেবে চিন্তে আমাকে সিদ্ধান্তটা জানাবেন। আর আশা করব উত্তরটা যেন হ্যাঁ হয়।
আদৃত দূরে সমুদ্রের দিকে তাকাল। কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না।
– এইখানেই কি সারারাত কাটানোর ইচ্ছা আছে নাকি?
– না। চলো।
আদৃত অতসী কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। খাবার সময়েও আনমনা হয়েছিল। আদৃতকে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– বাবু কিছু হয়েছে, তোকে আনমনা লাগছে কেন?
– হুমম।
– কি বল।
আদৃত আরুর দিকে ইশারা করল। উনি বুঝছেন আরুর সামনে আদৃত কথাটা বলতে চাইছে না,তাই চুপ করে গেলেন। খাওয়া শেষ করার পর আদৃত আরুকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে লাগল।
– বাবা একটা কথা বলব।
– হুম সোনা বলো।

– আমার না আন্টিকে খুব ভালো লাগে। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় আন্টি যদি আমার মা হতো খুব ভালো হতো।
আরুর কথা শুনে আদৃত থমকে গেল। আরুর কথাগুলো বারবার নিজের কানে বাজতে লাগল। নিজের সাথে নিজের লড়াই আরো কিছুটা বেড়ে গেল। আরু অতসীর সাথে কাটানো আরো অনেক গল্প আদৃতের সাথে করতে লাগল।
আরু ঘুমিয়ে যেতে আদৃত ওর মায়ের ঘরে গিয়ে টোকা মারল।
– মা আসব।
– হুম,তোর জন্যেই জেগে আছি।
– হুমম।
আদৃত মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল, আদৃতের মা আদর করে ছেলের মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
– কি হয়েছে, কোনো সমস্যা।
– মা, আজকে অতসী আমাকে ডেকেছিল।
– কি বলল।
– আমাকে বিয়ে করতে চাই।

আদৃতের মায়ের মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠল আবার পরক্ষনেই খুশিতে চকচক করে উঠল।‌ অতসীকে দেখার পর থেকে তিনি মনে মনে এটাই চাইতেন যাতে অতসী তার বাড়ির বউ হোক। রুহির বোন এই কথাটা জানার পর একটু দোটানায় পড়ে গিয়েছিলেন,তবে আজকের কথাটা শুনে খুব খুশি হলেন।
– এটা তো খুব ভালো কথা।

মায়ের কথা শুনে আদৃত চোখ খুলে চট করে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল,মায়ের মুখে খুশির ঝলক। আদৃত ভ্রু কুঁচকে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করল, নিজের মাথাটা একটু খাটাতেই বুঝে গেল তার মাও চাই এই বিয়েটা হোক।
– দ্যাখ বাবা অতসী নিজে থেকে যখন সবকিছু জেনে তোকে বিয়ে করতে চাইছে। তখন আমার মনে হয় তোর রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। আর এটা তো অস্বীকার করতে পারবি না, তোর মনে কোথাও না কোথাও অতসীর জন্য একটা জায়গা আছে।

আদৃত ভাবুক হয়ে পড়ল। কথাটা মিথ্যা নয়, সত্যি অতসী কে প্রথম থেকেই ওর ভালো লাগত। আরুর প্রতি অতসীর কেয়ার,ভালোবাসা গুলোই আদৃতের মনে অতসীর জন্য জায়গা করে নিতে বাধ্য করেছিল।
– আমি শুধু নিজের কথাটা বললাম বাকিটা তোর সিদ্ধান্ত।
– আচ্ছা মা অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আমি গেলাম।
আদৃত মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।‌ আদৃতের মা ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– কথাগুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছিস, কিন্তু সেটা কি আদৌ পারবি?

সত্যি আদৃত কথাগুলো থেকে পালিয়ে যেতে চাইলেও পারল না। মাথাতে ঘুরপাক খেতেই লাগল, কি করবে না করবে সবকিছুর চিন্তাতে ঘুম আসছে না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে, হঠাৎ করেই মনে একটা অদ্ভুত চিন্তা ধরা দিলো। আদৃত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দোটানায় ভুগতে ভুগতে কি যেন মনে করে অতসী কে কল লাগিয়ে দিয়ে ফোনটা নিজের কানে চেপে ধরল।
ফোনটা কিছুক্ষণ বাজার পর অতসী ঘুম ঘুম গলাতে কথা বলে উঠল,
– হ্যালো কে?
– আমি।

চেনা কন্ঠস্বর শুনে অতসীর ঘুম পালিয়ে গেল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল, আরুর বাবা নামে সেভ করা ব্যক্তি ফোন করেছে। অতসীর বুঝতে অসুবিধা হলো না ব্যক্তিটি কে। বোঝার সুবিধার্থে আদৃতের নামটা আরুর বাবা বলে সেভ করেছিল, সেটা আর পরির্বতন করা হয়ে উঠে নি।
– হ্যালো আছো?
ওপাশ থেকে আবারো আদৃত কথা বলে উঠতে অতসী নড়েচড়ে বসে বলল,
– হ্যাঁ বলুন। এত রাতে কল করলেন সব ঠিক আছে তো।
– সব ঠিক আছে কিন্তু আমি ঠিক নেই।
– মানে?

– সন্ধ্যায় ফিরে আসার পর থেকে নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি, কখনো মনে হচ্ছে হ্যাঁ আবার কখনো মনে হচ্ছে না।
সহজ ভাবেই নিজের মনের কথাগুলো স্বীকার করে নিলো আদৃত। অতসী মৃদু হেসে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। এই বাড়িটা খুব সুন্দর, হয়তো ভাড়া দেবার জন্যই এতটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। প্রথম ৩মাস এই বাড়িতে অতসী বিনা ভাড়াতে থাকত তারপর থেকে প্রতিমাসেই ভাড়া দিয়ে দেয়, আগের তিন মাসের ভাড়াও দিয়ে দিয়েছে।

বাড়িওয়ালা কাকাবাবু অতসীর থেকে ভাড়া নিতে চাইনি, আর নিলেও অর্ধেক ভাড়া দিতে বলেছিল। আর্থিক সংকটের কারণে অতসী ১বছর পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়াই দিয়েছিল কিন্তু গত ১ বছর ধরে বাড়ির ভাড়ার তুলনায় কিছুটা বেশিই টাকা দেয়। ওই মানুষটার প্রতি অতসী কৃতজ্ঞ। বর্তমানে এই শহরে একটা বাড়ি ভাড়া কত সেটা ভালো করেই জানে অতসী। আর এই বাড়িতে সবকিছুই আছে, তাই ন্যায ভাড়াটাই দেয়।
অতসী দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

– যাকে এতরাতে কল করতে দ্বিধাবোধ করেন না, তাকে বিয়ে করতে এত দ্বিধা!
আদৃত থমকে গেল। কি বলবে কিছু বুঝতে পারল না।
– কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?
– কিছু না।
কিছুক্ষন দুজনে নিশ্চুপ। অতসী নিরবতা ভেঙে বলল,
– সারারাত কি এইভাবেই চুপচাপ ফোন করে বসে থাকবেন নাকি?
– না। সরি বিরক্ত করার জন্য রাখছি।
– একদম না।
– কি?

– কল করেছেন আপনি তাই কল কাটবেন আমার ইচ্ছাতে।
– আচ্ছা।
আবারো কিছুক্ষণ চুপচাপ। অতসী আবারো নিরবতা ভেঙে বলল,
– আরে চুপ করে আছেন কেন? কথা বলুন।
– কি বলব।
– প্রেম করুন। এমন রসকষহীন মানুষকে দিদিভাই কিভাবে বিয়ে করল কে জানে।
কথাটা বলে অতসী চুপ করে গেল। আদৃতও থমকে গেছে, অতসীর কথাটা শুনে। অতসী ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেছে, উশখুশ করতে করতে বলল,
– রাখছি আমার ঘুম পাচ্ছে।
উত্তরের আশা না করেই অতসী খট করে কলটা কেটে দিলো। আদৃত বুঝল অতসী হঠাৎ করেই কথাটা বলে অস্বত্বিতে পড়ে গেছে, আদৃতও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
অন্যদিকে..

জিনিয়া মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে আছে। এখনো পর্যন্ত মিহানের সাথে জিনিয়ার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি। জিনিয়া মানিয়ে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, আর ভালো লাগছে না কোনো কিছু।
– কি হলো এইভাবে শুয়ে আছো কেন?
– আমি আর পারছি না। এইরকম একটা সম্পর্কের থেকে বিয়ে না হওয়াটাই বেটার ছিল।
জিনিয়া অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো বলল। মিহান চুপ করে আছে, জিনিয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কি বলা উচিত সেটা বুঝতে পারছে না।
মিহানের মা ঘরের মধ্যে এদিক ওদিক পায়চারি করে চলেছেন। স্ত্রীকে অস্থির হতে দেখে মিহানের বাবা বললেন,

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৩

– কি হলো এইভাবে পায়চারি করছ কেন?
– সবকিছু হিসাব গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে।
– কিসের হিসাব।
– আরে যেটার জন্য জিনিয়ার সাথে মিহানের বিয়ে দিলাম সেই হিসাব।
কথাটা বলেই মিহানের মা জিভ কাটলেন। মিহানের বাবা কথাটার মানে বুঝতে না পেরে বললেন,
– মানে?

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৫