প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৯

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৯
তানজিলা খাতুন তানু

আদৃত আর রুহির বাড়িটা দুটো আলাদা জেলায়। আদৃত পড়াশোনার সূত্রে অন্য‌ শহরে থাকত, রুহির সাথে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায়। তারপরে বন্ধুত্ব, প্রনয়ের সৃষ্টি হয়।
অন্য জেলা। আদৃতর আসতে অনেকটা সময়ে লাগল, রুহি অপেক্ষা করে আছে।
২ঘন্টা পর…

– রুহি রুহি। কি হয়েছে এত রাতে তুমি আমাকে ডেকে পাঠালে কেন? কি হয়েছে।
– আজকেই আমাকে বিয়ে‌ করতে হবে আদৃত।
– কি বলছো তুমি এসব।
– হ্যাঁ ঠিক বলছি। বাবা আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছে, প্লিজ আদৃত আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।
– আমাকে বিয়ে করলে তুমি ভালো থাকবে না, তুমি ফিরে যাও রুহি।
– আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না। বিয়ে করব না। আমি নিজেকে শে*ষ করে দেব।
আদৃত রুহির গালে একটা থাপ্পর মারল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– একদম এইসব কথা বলবে না। আমি ভালোবাসি তোমাকে।
– হুমম। চলো দেরি হয়ে যাবে।
– হুমম।
আদৃত আর রুহির ইসলাম মতে বিয়ে হয়ে যায়। রেজিস্ট্রি করতে অনেক ডকুমেন্টস দরকার, এখন এইসব কিছু নেয়। একপ্রকার জোর করে বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
– আদৃত তুমি আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে চলো।এই শহরে থাকলে বাবা ঠিক আমাদের খুঁজে বের করে নেবে।
– আচ্ছা।

আদৃত আর রুহি রওনা দিলো। ওইদিকে গোটা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রুহির দেখা মিলল না। রুহির বাবা আকরাম খাঁন প্রচন্ড পরিমানে রেগে উঠলেন…
– রুহি কাজটা তুমি ঠিক করলে না। এর পরি*নাম তোমাকে ভো*গ করতেই হবে। যেদিন তোমার দেখা আমি পাবো, সেইদিনই তোমার শে*ষদিন হবে।
আকরাম খাঁনের রাগ ক্ষোপ দেখে রুহির মা ঢোক গিললেন। আকরাম খাঁন প্রচন্ড হিং*সা পরা*য়ন, প্রতি*শোধ পরা*য়ন। ওনার আত্মসম্মানে আ*ঘাত লাগলে তার পরি*নাম কি ভয়া*নক হতে পারে সেটা ভেবেই উনি ভয় পাচ্ছেন।

আদৃত রুহিকে নিয়ে বাড়ি যায়। আদৃতের মা ছেলের বিয়েটা সহজেই মেনে নিলেন, জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে শুরু করলেন। আর তার পরেই তাদের জীবনে আরোহীর আগমন ঘটলো তার রুহি ওদেরকে ছেড়ে চলে গেল..
আদৃত নিজের অতীত ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল নিজেরই খেয়াল নেয়। সকালে ঘুম ভাঙল মিতুর ডাকে।

– দাদাভাই। তুই এইখানে ঘুমিয়ে আছিস কেন?
– এমনিতেই। মিষ্টি উঠেছে।
– হুমম। তিনি তো রেডি হয়ে স্কুলেও চলে গেছে।
– এত ফার্স্ট।
– তোর মেয়ে তো।
– হুমম।
অতসী সকালে টিউশনি পড়িয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। যদিও কলেজে যাবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু কলেজের এক্সাম সামনেই তাই যেতেই যে হবে। কলেজে ঢুকে ক্যান্টিনে গিয়ে বসতেই ছোট্টু ওর‌ কাছে আসলো।

– অতসী দিদি, তুমি এতদিন পর।
– হুমম, এক কাপ চা দিবি।
– আচ্ছা আনছি।
অতসী নিজের ফোনটা বের করে নিয়ে বসলো। ফোনটা পড়াশোনা বাদে আর কোনো কিছুতেই কাজে লাগে না। আপন বলতে কেউই নেয়, কেউই ফোন করে না। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অতসী।
– অতসী।
চেনা কন্ঠস্বর শুনে অতসী মাথা তুলে তাকালো। সামনে মিতু দাঁড়িয়ে আছে দেখে, অতসী বলল…

– তুমি?
– হ্যাঁ। প্রশ্নের উত্তরটা জানতে আসলাম।
– কি প্রশ্ন।
– আরুকে পড়ানোর‌ কথাটা।
অতসী সবকিছুর মাঝে এইসব কথা ভুলেই গিয়েছিল।
– আমার অনেকগুলো টিউশনি আছে, এর মাঝে আরুকে পড়ানোটা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই যদি ওর জন্য তুমি অন্য কাউকে টিউটর হিসেবে নাও,সেটাই ভালো হবে।
মিতু আশাহত হয়ে পড়ল।

– অতসী আর একবার ভেবে দ্যাখো প্লিজ।
– আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আর কিছু বলার নেয় আমার।
অতসী ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেল। মিতু অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কিছু একটা বলল। জীবন আবারো কোন খেলা দেখাবে কে জানে!
অতসী ক্লাসে গিয়ে সবার আগে মুখোমুখি হলো জিনিয়ার। জিনিয়া ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল।
– জিনিয়া।

এতদিন পর অতসীর মুখে নিজের নাম শুনে কিরকম একটা আবেগ প্রবণ হয়ে উঠল জিনিয়া। তবুও নিজের জেদের কাছে হার মেনে চুপ করে রইল।
– তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।
‘তুমি’ ডাকটা শুনে জিনিয়া অতসীর মুখের দিকে তাকাল।
– মিহান, মিহানকে আগলে রেখো। না হলে দেখবে কোনদিন পাখি ফুরুত করে গায়েব হয়ে যাবে।
– কি বলতে চাইছিস তুই?
– কথাটা মাথাতে রেখো।

অতসী শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। জিনিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। অতসী বদলে গেছে অনেক। এই বদলের আসল কারন কি?
মাঝে কেটে যায় ১ টা মাস।
অতসী আরুর সাথে ফোনে কথা বললেও ওদের বাড়িতে যায়নি আর। কলেজের এক্সাম নিয়ে প্রচন্ড বিজি ছিল। পরীক্ষা শেষ হবার পর অতসী টিউশনি পড়াতে গিয়ে একটা খা’রাপ সংবাদ শুনল।

– অতসী। তোমাকে আর পড়াতে আসতে হবে না।
– কিন্তু কেন দিদি।
– ওর জন্য নতুন টিউটর ঠিক করা হয়েছে। এই নাও তোমার আগের মাসের মাইনে।
হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে সরাসরি চলে যেতে বললেন। অতসী আশাহত হয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল।একটা টিউশনি চলে যাওয়া মানে কিছু টাকা কমে যাওয়া। যেটা হলে অতসীকে প্রবলেমে পড়তে হবে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা টিউশনি জোগাড় করতেই হবে।
অতসী মন খারাপ করে রিকদের বাড়িতে পড়াতে গেল।

– কি ব্যাপার অতসী। তোমার মন খারাপ কেন? (রিকের মা।)
– আসলে ভাবি একটা টিউশনি চলে গেছে। আবার নতুন একটা টিউশনি জোগাড় করতে হবে।
– ওহ।
– আচ্ছা ভাবি তোমার চেনা কেউ আছে কি।
– আমি দেখছি। ঠিকাছে।
– হুমম।
অতসীর মনটা কিছুটা ভালো হয়ে যায়।
রাতে…

অতসী নিজের বন্ধ ডাইরির পাতা খুলে একটা ছবির উপরে হাত বোলাতে লাগল। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
– আমার জীবনটা এতটা দূর্বিষহ না হলেও হতো। আমার জীবনটাও অনেক সুখের হতো, যদি না স্বার্থপর মানুষগুলো নিজের প্রয়োজনে কাউকে প্রিয়জন করত।
অন্যদিকে..
খাঁন ভিলা…

জমজমাট হাসিখুশিতে ভরা পরিবার থেকে হারিয়ে গেছে সমস্ত হাসি। রাতে খাবার টেবিলে সকলেই খেতে বসল।
আকরাম খাঁন খেতে বসে প্রশ্ন করলেন…
– আজকের মেনু কি?
আকরাম খাঁনের বউমা উত্তর দিলো।
– রাইস, চিংড়ির মালাইকারি..
পুরোটা শেষ করার আগেই আকরাম খাঁনের স্ত্রী ঢুকরে কেঁদে উঠলেন। বউমা সামিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলেন…

– কি হলো মা। আপনি কাঁদছেন কেন?
উনি কিছু না বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলেন। আকরাম খাঁনের মুখটাও ফ্যাকাশে হয়ে আছে, সামিয়া কিছুই বুঝতে পারল না।
– আমার খিদে নাই। তোমরা খেয়ে নাও।
আকরাম খাঁন উঠে চলে গেলেন। সামিয়া নিজের স্বামীর দিকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকালেন। রুদ্রও মন খারাপ করে নিজের স্ত্রীকে বলে উঠলেন…

– তুমি তো তোমার বিয়ে হওয়া থেকেই দেখছ এই বাড়িতে কখনো চিংড়িমাছ রান্না হয়নি। তাহলে আজকে এত পাকামো করে রান্না করতে গেলে কেন?
– কেন কি সমস্যা।
– এই বাড়ির সকলের প্রিয় একজন চিংড়ি মাছ খেতে খুব ভালোবাসত। তার অনুপস্থিতিতে এই বাড়ি থেকে চিংড়ি খাওয়ায় উঠে গেছে সবার।
– কে সে?
রুদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়। সামিয়া বিরবির করে বলল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৮

– এই বাড়ির মানুষগুলো কিরকম একটা রহস্যে ভরপুর। কেউ কেউ হাসে না, যেন ওদের জীবনে আনন্দ বলেই কিছুই নেয়। সবার এত বিষন্নতার কারন কি?
সামিয়া কি কখনো জানতে পারবে, এই মানুষগুলোর না হাসার কারন!

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১০