প্রিয়োসিনী পর্ব ৩০

প্রিয়োসিনী পর্ব ৩০
নীরা আক্তার

নোহাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।মুহূর্তেই তিয়াশ হৃদয়ের আকাশে বিষাধ মেঘ হানা দিলো….
সন্ধ্যে হতে না হতেই তিয়াশ বাড়ি ফিরে আসে।হাসপাতালে মন টিকছে না তার।সারাদিন বড়জোর দুইটা তিনটা পেশেন্ট দেখেছে সে।ঘরে নতুন বউ রেখে কি আর কাজে মন বসে।

বাড়ি ফিরেই তিয়াশ সোজা ঘরে চলে যায়।তিশা ফিট লেগে ঘুমিয়ে আছে।মা বাবা কেউ বাড়িতেই।তিয়াশের মা ভদ্রমহিলা পোশায় একজন অধ্যাপক। একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে গিয়েছেন তিনি।ফিরতে দেরী হবে।
বাসায় এই সময় তিশা আর নোহার থাকার কথা।
তিয়াশ গুটি গুটি পায়ে তার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।হুট করে ঘরে ঢোকা যাবে না।বউ যদি রাগ করে….।
তিয়াশ আস্তে আস্তে নোহার নাম ধরে ডাকে।
নোহার কোনো সাড়া নেই।এবার দরজা ধাক্কা দেয়….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই।তিয়াশ কিছু একটা ভেবে দরজা ধাক্কা দিতেই কড় কড়শব্দ করে খুলে যায়…
তিয়াশ ভেতরে ঢুকে এদিক সেদিক তাকায়।নোহা ঘরের কোথাও নেই।তিয়াশ ব্যাগ বিছানায় ছুড়ে দিয়ে ঘর থেকে বার হয়।একে একে সব গুলো ঘর খুঁজে দেখে নোহা ঘরের কোথাও নেই।
তিয়াশে বুক কেঁপে উঠে,তিশা বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে তাকেও জিঙ্গেস করতে পারছে না নোহার কথা।বোনকে জাগাতে মন চাইছে না তার,
সকালের ঘটনায় কি নোহা রাগ করেছে?
তিয়াশের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়,

[সকালের ঘটনা মাথায় ঘুরতে থাকে,
সকালে তিয়াশ সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে বার হতেই নোহা তার দিকে এগুতে থাকে।তিয়াশ নিজের দিকে তাকায়।খালি গা কোমরে সাদা টাওয়াল পেচানো,চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
তিয়াশ নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নোহার দিকে তাকায়,

-বউ আমাকে এভাবে দেখে কি নিজেকে সামলাতে পারছো না?প্লিজ সকাল সকাল আমার সর্বনাশ করো না…তুমি চাইলে আমরা রাতে ট্রাই করতে পারি।এখন ছেড়ে দাও প্লিজ
নোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তিয়াশের দিকে,
রাগে কট মট করতে করতে বলে উঠে
-অসভ্য একটা।

নোহা তাকে ক্রস করে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
-ধ্যাত বউটা আমার বড্ড আনরোমান্টিক…কিন্তু তাতে কি আমি তো রোমান্টিক!
তিয়াশ বাঁকা হেসে তৈরী হয়ে নেই
এরই মাঝে নোহা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।কোনো রকমে শাড়ি পেঁচিয়ে রেখেছে সে।
তিয়াশ নোহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়,
নোহা ভীষন লজ্জায় পরে যায়,

-বাবা তুমি তো দেখছি লজ্জাও পাও।
-আমি আপনার মতো নির্লজ্জ নই।
তিয়াশ একটু শুকনা কাশি দেয়,
-এটা কি পড়েছো?তুমি না শাড়ি পড়তে পারো।কালই তো বললা
-দেখুন ওয়াশরুমে কি শাড়ি পড়া যায়?
-আচ্ছা এখানে পড়।
-বের হয়ে যান।আপনার সামনে পড়বো নাকি!
তিয়াশ চলে যায়….

ডাইনিং টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে তিয়াশ।পাশে বাবা বসা।আর মা খাবার সার্ভ করছে ।তিশা নোহাকে ডাকতে গেছে।নোহা এলে একসাথে খাবে।
তিয়াশ বার বার ঘড়ি দেখছে।তার অলরেডি অনেক দেরী হয়ে গেছে।নোহার কোনো খবর নেই।এরই মাঝে তিশা এসে উপস্থিত হয়।

“ভাবি এখন খাবে না…সবে কফি হাতে বসলো।তুই খেয়ে নে ভাইয়া আমি আর ভাবি পরে খাবো”
রাগে তিয়াশের গা জ্বলে উঠলো।বেশি কিছু তো সে চায় নি।শুধু একটু খেতে চেয়েছিলো একসাথে,বউয়ের সাথে খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে…আর এক প্লেটে খেলে তো ভালোবাসা বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁইয়ে যায়। বউ আর তা হতে দিলো না। ভালোবাসা বাড়বে কি করে শুনি!
তিয়াশ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে খাবার দুইবার মুখে পুড়ে নিয়েই ঘরে চলে যায়।হাতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায়,

নোহার দিকে ফিরে তাকায়,
নোহা আয়েসি ভঙ্গিতে বিছানায় বসে কফি খাচ্ছে।
তিয়াশকে দাঁড়াতে দেখে নোহা কফির মগটা নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়।
-কিছু বলবেন?
তিয়াশ নোহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দুম করে উড়ে এসে নোহার ঠোঁটে গভীর চুমু খায়।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নোহাকে।তারপর আবার আগের মতোই দুম করে উড়ে চলে যায়।
নোহা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।ব্যাপ্যারটা তার কল্পনাকেও হার মানালো]

তিয়াশ ভ্রু কুচকে তাকায়।বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে থাকে,
-নোহাকি তবে রাগ করলো?তাকে ছেড়ে চলে গেলো?এমন করা হয়তো ঠিক হয় নি।কিন্তু একটা চুমুই তো খেয়েছি।তাও আবার নিজের বউকে….!চুমু খাওয়ার দোষে যদি বউ স্বামীকে ত্যাগ করে তাহলে বাচ্চা হবে কি করে….?
তিয়াশ একটু বিরক্ত নিয়ে টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়।
হটাৎ কি মনে করে ছুট লাগায় ছাদের দিকে।নোহা ছাদে থাকতে পারে….

ছাদে যেতেই দেখে নোহা কানে এয়ারফোন গুজে দোলনায় দুলছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।
তিয়াশের কলিজায় পানি ফিরে আসে।
নোহার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে।
নোহা একটু ভয় পেয়ে যায়,
-এভাবে কেউ আসে?
-বুকে থুতু দাও।ভায় পাইছো মনে হয়
-ধ্যাত।কখন এলেন?
-অনেকক্ষন।
তিয়াশ একটু থেমে বলে উঠে,

-তোমায় না দেখে কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো!ভাবলাম রাগ করে বনে জঙ্গলে চলে গেলে নাকি!
-আশ্চর্য জঙ্গলে যাবো কেন
তিয়াশ একটু মুচকি হেসে উওর দেয়,
-আমি তো মানুষ বিয়ে করি নি।আমি তো বিয়ে করেছি এক ভয়ংকর বাঘিনীকে।সে যেকোনো রূপেই আমাকে ঘায়েল করতে পারে।
-তাই? চলে যাই তাহলে..?
-কোই
-বনে-জঙ্গলে!
নোহা হেসে দেয়,তিয়াশের মুখ ভার,

-হারানোর ভয় তখনই বুঝবে যখন কাউকে ভালোবাসবে।সত্যিকারের ভালোবাসা।আমি খুব ভয় পাই নোহা তোমাকে হারানোর ভয়।রোজ এতো অপমান সহ্য করেও তোমার কাছে ছুটে যেতাম…কেন জানো…আমি তোমায় হারাতে পারব না তাই।ঘরে এসো নোহা।একা থাকো না, আমি নিচে যাচ্ছি, চেন্জ করে নিই ভীষন ক্লান্ত লাগছে!
কথা বলতে বলতে তিয়াশ দাড়িয়ে নোহার থেকে দুকদম পিছিয়ে যায়,
নোহা হটাৎ করেই ছুটে এসে তিয়াশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,

-আমি যা করেছি তার শাস্তি দিন আমাকে।কথা দিচ্ছি সব মাথা পেতে নেবো…কখনো ছেড়ে যাবো না!
তিয়াশ নোহাকে ছাড়িয়ে পেছন ফিরে। নোহার থুতনিতে হাত রেখে তার মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে,
-শাস্তি নেবো?সত্যিই পরে আবার কান্না করবে না তো?
তিয়াশের মুখে বাঁকা হাসি,
নোহা তিয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,তিয়াশের বুকে মুখ লুকায়।
-জানি না!
তিয়াশ মুচকি হেসে নোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,

-ভালোবাসার মানুষ চাইলে তোমাকে দুনিয়াতেই বেহেস্তের একাংশ দেখিয়ে দিতে পারে…আবার সেই ভালোবাসার মানুষই চাইলেই তোমাকে দুনিয়াতেই নরকযন্ত্রণার সাক্ষী বানিয়ে রাখতে পারে।
সঠিক মানুষকে কখনো অবহেলা করতে নেই নোহা।তাকে যত্ন করে আগলে রাখতে হয়।আর ভুল মানুষটাকে যত দ্রুত সম্ভব জীবন থেকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
তিয়াশ কথা বলতে বলতে নোহাকে কোলে তুলে নেয়।

-কি করছেন?
-নিচে নামছি দেখো না!
-এভাবে নামার কি আছে
-মুভিতে দেখো না?রোমান্সের শুরু টা তো এভাবেই হয়।আমি তোমাকে শাস্তি দিতে নিয়ে যাচ্ছি।তুমিও তো বললা নিবা!
-কিহ?
নোহা চোখ বড়বড় করে তাকায়,

-হুম্ম।আপাতোতো তোমায় আমি কিছু মুভি প্রেসক্রাইভ করছি।সেগুলো দেখে শিখবা।প্রাক্টিক্যাল না হয় আমি হানিমুনে গিয়ে তোমাকে শিখাবো….হাতে কলমে যাকে বলে
নোহা হেসে দেয়।লজ্জা লাগছে ভীষন।লজ্জা,ভালোলাগা ভালোবাসা মিশ্রিত অনুভূতি।তিয়াশ নোহাকে কোলে নিয়ে সোজা ঘরে চলে যায়,
তিশা চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে তাদের দেখে হেসে দেয়।

আজ সারাদিন সে নোহাকে তিয়াশের দুনিয়া দেখিয়েছে।তিয়াশ নোহার জন্য যেই ভালোবাসার দুনিয়া তৈরী করেছিলো সেই দুনিয়ার একাংশ সে নোহাকে দেখিয়েছে।তাতেই নোহা কুপকাত।বাঁকিটা যখন দেখবে তখন সে সব দ্বিধা কাটিয়ে উঠে ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে পড়বে।তিয়াশের ভালোবাসায়।বাকিঁটা দেখানোর দায়িত্ব তিয়াশের।
তিশা মুচকি হেসে বলে উঠে
-আমার ক্ষুধা লাগছে।ফ্রস হয়ে বাহিরে আয় খেয়ে তারপর যা খুশি কর।
তিয়াশ রুম থেকে মাথা বর করে বলে উঠে

-সব সময় কাবাব মে হাড্ডী না হলে তোর হয় না।দিব্যি তো ঘুমিয়ে ছিলি।উঠলি কেন?বয়সে আমি তোর চেয়ে বড়।একটু তো সন্মান কর!
-তুই আগে একটু লজ্জা পাওয়া শেখ তারপর।
-ধুর….ভালো লাগে না
তিশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে
-বাবুর মামা বাবু কিন্তু পেটের মধ্যে কান্না করে।ওর আবার একটু পর পর ক্ষুধা লাগে।খেতে না পেলে বাবু শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে।তখন গলুমুলু বাবু কোই পাবি শুনি?
তিয়াশ মুচকি হেসে উওর দেয়,

-আসছি।পাঁচ মিনিট… বাবুদের একদম শুকাতে দেবো না।
তিশা হাসতে হাসতে সোফা থেকে উঠে দাড়ায়…..
চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-মা বাবা দুজনই আজকে ফিরবে না।বলে দিয়েছে।নিবিড় আসবে কিন্তু পরে।
আজকে তোদের জ্বালানোর জন্য আমি ছাড়া কেউ নেই আমাকে তারাতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে তারপর যা খুশি কর।কেউ কিছু বলবে না…আমি তো ভুলেও এমুখো হবো না।
তিশা মুখ টিপে হাসতে থাকে…..
মনে মনে দোয়া করতে থাকে,
তাদের নতুন জীবন সুখের হোক।

আমান ড্রইং রুমের সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে।সামনে তার মা প্রিয়োতা ইয়াসমিনের বেস্ট ফ্রেন্ড বসা।তিনি মূলত বিদেশে থাকতেন।প্রিয়োতার মৃত্যুর পর প্রথমবার তিনি দেশে এসেছেন।দেশে এসেই আমানকে একবার দেখার জন্য ছুটে এসেছেন তিনি।তাদের ফ্রেন্ডস গ্রুপে আমানই প্রথম বাচ্চা ছিলো।ছোটবেলায় আমানকে প্রচুর ভালোবাসতেন তিনি।
ভদ্রমহিলা বার বার আমানের মায়ের এই কথা সেই কথা বলছেন।আমানকে মায়ের শত শত গল্প শুনাচ্ছেন।
মায়ের আদর পাওয়ার সাধ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।

আমান বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে।ভদ্রমহিলা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে নিজে থেকেই থেমে যান,
একটা ঢোক চিপে বলে উঠেন,
-আমান তুমি একদম তোমার বাবার মতো হয়েছো হ্যান্ডসাম হ্যাঙ্ক….
আমান একটু মুচকি হাসে,
-কিন্তু তোমার গায়ের রং আর চোখের নীল রংটা মায়ের মতো।
-আমার মা অনেক সুন্দর ছিলো?
তিনি একটু হেসে উওর দেয়,

-তোমার মা তো রূপকথার নীল পরী ছিলো।তবে তোমার বাবা সিকদার বাড়ির রাজকুমার। গোটা এলাকার ক্রাশ ছিলো।আমরা তো তোমার মাকে হিংসে করতাম আমাদের ক্রাশকে পটিয়ে বিয়ে করার জন্য।
আমানের চোখের কোণ বেয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরে,
-বাবা মায়ের চেহারাটা মনে নেই…ছবি দেখেছি।কিন্তু ছবিতো আত্মাকে শান্তি দেয় না অ্যান্টি….
তিনি আমানের কাছে দুকদম এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,

-তোমার মায়ের স্বপ্ন ছিলো তোমার বাবাকে বিয়ে করা।সব স্বপ্নের মতোই ছিলো মাঝে কি হয়েছে জানি না। সব কিছু শেষ হয়ে গেলো।তোমার মায়ের সাথে শেষ কথা হয়েছিলো আমার তেরো তারিখ। তোমার মায়ের মৃত্যুর আগের দিন…খুব ভেঙ্গে পরেছিলো। ঘায়েল বাঘিনীর মতো সব কিছু ধ্বংস করে দিতে চাইছিলো।সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতে চাইছিলো।
আমান গভীর কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,

-কেন?কি হয়েছিলো মায়ের?
তিনি একটু ভেবে উওর দেন,
-জানি না বাবা।সত্যিই জানি না…
জিনাত সিকদার তাদের কথার মাঝে বা হাত ঢুকিয়ে দেন।তিনি একরাশ খাবার এনে তাদের মাঝে রেখে দেন।তিনি অবশ্য বুঝে উঠেন নি তারা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মশগুল ছিলো।
খাবার রেখে তিনি উঠে যান…

ভদ্র মহিলা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়েন।এয়ারপোর্ট থেকে তিনি সোজা এই বাড়িতে এসেছিলেন আমান কে দেখার জন্য।
যাওয়ার আগে তিনি আমানকে একটা হ্যান্ড মেইড পুরোনো ডায়েরি দিয়ে যান…
“তোমার মা লিখতে খুব পছন্দ করতো।এটা আমি বানিয়েছিলাম,নিজের হাতে দেওয়া হয় নি বাবা…তুমি রেখে দাও আমার শান্তি লাগবে।”

কথা বলতে বলতে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান।কিছু একটা
আমানের মাথায় আসায় সে ছুট লাগায় বাবা মায়ের ঘরের দিকে।এতোবছর বদ্ধ ঘরটায় বড় একটা তালা ঝুলানো।কিন্তু চাবি তো হারিয়ে গেছে।এতোবছর কি চাবি সামলে রাখা যায়…..

নওরিন কলেজ থেকে ফেরার পর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।হাজার ডাকাডাকির পরও সে দরজা খুলছে না।
বাহিরে সাগর,নওরিনের মা,বড় ভাবি বাবা সবাই দাঁড়ানো।
তারা বার বার নওরিনকে ডাকছে।

-সাগর কি চাই এখানে?কেন ডাকা হয়েছে তাকে?উদ্দেশ্য কি?
সবাই চুপ….সাগরের আগমনে তারা যে খুব খুশি এমন ভাবা ভুল।কিন্তু নিবিড় কেন সাগরকে ডেকে পাঠিয়েছে তা তারাও জানে না।
নওরিন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,নিবিড় ভাই এসে তার প্রশ্নের উওর দেবে তারপর সে দরজা খুলবে তার আগে নয়,
সবার কপালে চিন্তার ভাজ।প্রায় ঘন্টা খানিক ডাকা ডাকির পরও যখন নওরিন দরজা খুলে না তখন যে যার নিজের কাজে চলে যায়।

এই যে নওরিন এখন দরজা বন্ধ করলো…এই দরজা একমাত্র তখনই খুলবে যখন নওরিন চাইবে।
দুপুর পেরিয়ে বিকেল বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হতে চললো নওরিন না দরজা খুলেছে না কিছু খেয়েছে।
গোধুলী লগ্নের শুরুতেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইসরাক এসে উপস্থিত হয়,
সজোরে নওরিনের দরজার দুইটা বারি দেয়,
নওরিন ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।বসে থাকতে থাকতে সে কখন ঘুমিয়েছে তার হুদিস নেই,
-তুমি কি নিজে থেকে দরজা খুলবে নাকি আমি ভাঙ্গবো….??
নওরিন মুখ বাকিয়ে মনে মনে কয়েকটা গালি দেয়,

-এই বদলোকটা আবার এসেছে…সঙ্গে তার সেই পুরানো ডায়ালগ।ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো।
উঠবে না সে।দরজাও খুলবে না
-খুলবে না তো ঠিক আছে ভাঙ্গছি আমি।
ইসরাক দরজায় একটা লাথি দিতেই নওরিন চেচিয়ে উঠে,
-খুলছি খুলছি
নওরিন দরজা খুলে দেয়,ইসরাক মুচকি হাসি দেয়,
-চলো

ইসরাক কথাটা বলেই নওরিনকে টানতে থাকে
নওরিনের বাবা মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইসরাকের দিকে।আর সাগর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-আশ্চর্য কোথায় যাবো?
নওরিনের তালে তাল মিলিয়ে নওরিনের মাও বলে উঠে,
-কোথায় নিয়ে যাবে আমার মেয়েকে?
ইসরাক সাগরের দিলে তাকিয়ে দাঁত কড়মড় করে উওর দেয়,
–আমি আমার ছাগলকে কখনোই শেয়ালের কাছে রেখে যাবো না…!!

নওরিন চোখ মুখ লাল করে উওর দেয়,
-ছাগল কে?আপনি আমাকে ছাগল বললেন?
ইসরাক মাথা নাড়িয়ে উওর দেয়,
-কথার কথা বলেছি
সাগর দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,
-তার মানে আমি শেয়াল
ইসরাক এবার হোহো করে হেসে উঠে,
-এটাও কথার কথা।
নওরিন ইসরাকে দুইচরটা কিল গুতা লাথি মারে,
ইসরাক চোখ মুখ শক্ত করে উওর দেয়,

–আমার বউ এই বাড়িতে সিক্যুর না।এই ছেলেটা যদি এই বাড়িতে থাকে আমি আমার বউকে এই বাড়িতে রাখবো না।অতিথিকে তো আর তাড়িয়ে দেওয়া যায় না তাই আমি আমার বউকে আমার সাথে নিয়ে গেলাম আপনারা মন প্রাণ খুলে অতিথি আপ্যায়ন করুন শ্বশুর আব্বা।আমার আপত্তি নেই।খোদা হাফেজ।
ইসরাক কথাটা বলেই নওরিনকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরে।

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৯

এদিকে সবাই ভ্যাব্যাচ্যাক্যা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইসরাককে আটকানোর কথা তাড়া ভুলেই গেছে।
ইসরাক নওরিনকে কোলে তুলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে।নওরিনের বাড়ির সামনে জায়গার অভাব হওয়ার গাড়িটা একটু দূরে রাখতে হয়।গাড়ি পর্যন্ত তো যেতে হবে….
ইসরাক পকেট থেকে ফোন বারকে কাওকে একটা ফোন দেয়,
– ঘর সাজা আমার বউ আমি নিয়ে আসছি।

প্রিয়োসিনী পর্ব ৩১