প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১২

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১২
তানিশা সুলতানা

পূর্ণতা আজকে অনেক খুশি। ঠোঁটের কোণা থেকে তার হাসি সরছেই না। ক্ষণে ক্ষণে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। মমতা বেজায় বিরক্ত সাথে একটু চিন্তিতও। এই মেয়ে এতো খুশি মানে কোনো একটা কান্ড ঘটিয়েছেই। তবে আঁচ করতে পারছে না সেই কান্ডটা কি?

শিউলিরও খুব ভালো লাগছে পূর্ণতাকে হাসতে দেখে। কি সুন্দর হাসি মেয়েটার। মনে মনে বেশ কয়েকবার মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ বলে ওঠে।
রেশমা পান চিবচ্ছে। তার কোনো কিছুতেই যায় আসে না। তিন বেলা পেটপুরে খাবার আর পান খেতে পারলেই সে খুশি। বছর খানিক আগে তার স্বামী মামুন বিয়ে করে এনেছিলো। তখনো স্বাভাবিক ছিলো রেশমা। তার এক কথা আমাকে একটু থাকার জায়গা দিলেই হবে। তবে সন্তানকে নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। সে চায় তার ছেলে জমিদার বাড়িতে রাজত্ব করুক। আর তিনি এটা জানেও একদিন রাজত্ব তার ছেলের হাতেই আসবে। তাই আর মাথা ঘামায় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জমিদার বাড়ির দুই গিন্নি রান্না করছে। পূর্ণতা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে। আর মমতা মোড়া পেতে বসে হুকুমজারি করছে। কাজের লোকদের আজকে ছুটি। কোথায় পাঠানো হয়েছে তাদের পূর্ণতার অজানা। তবে জানতে হবে। আর কমলাকে কোথায় পাঠানো হয়েছে এটাও জানতে হবে।
রান্না প্রায় শেষের,দিকে সেই মুহুর্তে বাড়িতে অতিথির পা পড়ে। সোজা রান্না ঘরে এসেছে অতিথি। পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। যুবতী মেয়ে। জামাকাপড়ের হাল বেহাল। এরকম জানা পূর্ণতা আগে কখনো কাউকে পড়তে দেখে নি। তবে দেখতে বেশ। লম্বা ফর্সা। শরীরের বেশির ভাগ জায়গা দেখা যাচ্ছে।

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় পূর্ণতা।
মেয়েটি বলে ওঠে
“নানু আই এম কামিং
মমতা এক গাল হাসে। দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে।
” আমার মনা আসছে।

শুরু হয় দুজনের আলাপ আলোচনা। পূর্ণতা বুঝে নেয় এটা হচ্ছে জমিদারের নাতনী।মেয়ের মেয়ে। অবাক হয় পূর্ণতা। চোখের সামনে দুটো মামি বসে আছে অথচ তাদের সাথে কথা বললো না?
মনা তখন বলে ওঠে
“অভি কোথায়?

মমতা আড় চোখে তাকায় একবার পূর্ণতার দিকে। অতঃপর বলে
” অভি রুমেই আছে। যা তুই। সকাল থেকে ছেলেটা তোর কথা জিজ্ঞেস করতেছিলো।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে পূর্ণতা। মমতা মিথ্যে বলছে এটা সে জানে। অভি মোটেও এই ডাইনির কথা জিজ্ঞেস করে নি। শয়তান বুড়ি।

“আর কিছু মুহুর্ত অপেক্ষা করুন। আপনার মজা আমি দেখাচ্ছি”
বিরবির করে বলে পূর্ণতা।
মনা কোমর দুলাতে দুলাতে চলে যায় অভির কক্ষের দিকে। পূর্ণতাও যেতে নেয়। মমতা হাত টেনে ধরে
“তুই কোথায় যাসস?
কাজ কর।

পূর্ণতা মমতার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” সতীনকে বরণ করার প্রস্তুতি নিন বুড়ি। আমি আপনার মনাকে আপ্যায়ন করে আসি।
বলে এক গাল হেসে চলে যায় পূর্ণতা। মমতা হা করে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে কয়েক মিনিট সময় লেগে যায়। সতীন?
দ্রুত ছোটে নিজের কক্ষের দিকে। জমিদার কি ঘরেই আছে?

চিন্তিত অভি। ভীষণ চিন্তিত সে। এই সমাজে টিকে থাকতে হলে নিজের দুর্বলতা আড়ালে রাখতে হবে। ভেতরে ভেতরে মরে গেলেও বাইরে শক্ত থাকতে হবে। মানুষ বড্ড স্বার্থঃপর। তারা সব সময় দুর্বল জায়গায় আঘাত করে।
কপালে হাতে ঠেকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে অভি। সারা রাত অনেক পরিশ্রম করেছে। এবার একটু ঘুম দরকার।
হঠাৎ অভির মনে হয় কেউ একজন তাকে দেখছে। ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঘ্রাণ শুকেই অভি বুঝতে পারে এটা পূর্ণতা নয়। ধপ করে চোখ খুলে। উঠে বসে লাফিয়ে। মনা হাসে। জামার গলাটা নিচের দিকে টেনো আবেদনীয় ভঙিতে বসে অভির পাশে।

অভির উদাম বুকে হাত গলিয়ে জিজ্ঞেস করে
“কেমন আছো অভি?
অভি এক পলক তাকায় অতঃপর জবাব দেয়
” ভাবছি তোমায় অতিথিশালায় রেখে আসবো। খদ্দেরের চাহিদা বেশ মেটাতে পারবে। অভিজ্ঞ বে*…..শ্যার চাহিদাও বেশি।

থমথমে মুখে হাত সরিয়ে নেয় মনা। অভি ঠোঁট বাঁকায়।
“তুমি পুরোপুরি উ ল ঙ্গ হয়ে আমার সামনে নাচানাচি করলেও তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট জাগবে না৷ অভিরাজ কখনোই পঁচা জিনিসে নজর দেয় না।
দাঁড়িয়ে যায় মনা। রাগে তার শরীর জ্বলছে।

” এতো কিসের অহংকার তোমার? চিনো তুমি আমায়? আমাকে একটু টাচ করার জন্য কতো মানুষ পাগল।
খানিকটা চিল্লিয়ে বলে মনা।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নজর পড়ে পর্দায় আড়ালপ লুকিয়ে থাকা পূর্ণতার দিকে। হাসি পায় অভির। হাসি চেপে মনাকে জবাব দেয়

“তোমার এতো চাহিদা বলেই তো বলছি অতিথি আপ্যায়নে যেতে। তোমার নানা ভাইয়ের ব্যবসায় রমরমা হয়ে উঠবে।
মনা দাঁত কটমট করে। কিছু বলার জন্য আঙুল তুলে। কিন্তু কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তাই হনহনিয়ে চলে যায়।
অভি চলে যায় গোছল খানায়। পরনারীর হাতের ছোঁয়া যতখন ধুঁয়ে ফেলতে না পারবে গা ঘৃনঘৃন করবে।
পূর্ণতা খুশি হয়। হাসতে হাসতে চলে যায় জমিদার বাড়ির মূল ফটকে। এখনই ধামাকা হবে।

থমথমে মুখে বাসায় ফিরেছে জমিদার সাহেব। তার পাশে মধ্য বয়সী এক মহিলা। গায়ে তার মমতা বেগমের বিয়ে গহনা। পরণে মমতা বেগমের বিয়ের বেনারসি। চমৎকার দেখতে মহিলাটি। মমতা বেগমমের খুব চেনা এই মুখখানা। পতিতালয়ের দায়িত্বে রয়েছে মহিলাটি। এই মহিলাই পতিতালয়ের মহিলাদের দেখভাল এবং টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘ ১০ বছর যাবে এই কাজে তাকে নিয়োজিত করে রেখেছেন মমতা বেগম।

আবারও বৈঠক বসেছো জমিদার বাড়ির সকল সদস্য। এবার ছেলেরা নয়। স্বয়ং জমিদার বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। মমতা বেগম কেমন প্রতিক্রিয়া করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পঞ্চাশ বছরের সংসার তাদের। সাহেব দ্বিতীয় বিয়ে করে নি। নারীর শরীরের ঝোঁক ছিলো।
পূর্ণতা এক গাল হেসে এগিয়ে যায়। হাত তালি দিয়ে বলে ওঠে
” দাদাভাই আপনি তো ফাঁটিয়ে দিলেন। বাহহহ বাহহহ

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১১

এক পা কবরে চলে গিয়েছে তাতে কি? যৌবন তো আর শেষ হয় নি। মনের বয়সই বড় বয়স। মনে মনে দাদাভাইয়ের বয়স সবে ১৬ বছর। তাই না দাদাভাই?
সাহেব কটমট চোখো তাকায় পূর্ণতার দিকে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৩